৩.৪ মানো মাজরায় বেশি লোক ঘুমাতে পারল না

ঐ রাতে মানো মাজরায় বেশি লোক ঘুমাতে পারল না। তারা এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়িতে গেল। কথা বলল, কান্নাকাটি করুল, ভালবাসা ও বন্ধুত্বের প্রতিশ্রুতি দিল। একে অপরকে সান্ত্বনা দিল যে, এই অবস্থা বেশিদিন থাকবে না। তারা বলল, জীবন প্রবাহ আগের মতোই ফিরে আসবে।

নূরানের ঘরে ফেরার আগেই ইমাম বখশ গ্রামের মুসলমান বাড়ি ঘুরে ঘরে ফিরলেন। ঘরের কোন কিছুই তখনও গোছানো হয়নি। তিনি এতই হতাশ হয়ে পড়লেন যে, নূরানের ওপর রাগ করতে পারলেন না। এই পরিস্থিতি যুবক, বৃদ্ধ সবার জন্যই কষ্টদায়ক। সে হয়ত তার বন্ধুদের সাথে শেষ দেখা করতে গেছে। চটের বস্তা, টিনের পেট ও বাক্স কোথায় আছে তা খুঁজতে লাগলেন তিনি। কয়েক মিনিট পরেই নূরান ঘরে ঢুকল।

তোমার মেয়ে বন্ধুদের সাথে দেখা হয়েছে? ঘুমানোর আগে আমাদের সব গুছিয়ে রাখতে হবে, ইমাম বখশ বললেন।

আপনি শুতে যান। আমি সব গুছিয়ে রাখব। এমন বেশি কিছু গোছাবার নেই। আপনি ক্লান্ত, যান শুয়ে পড়ুন, নূরান জবাব দিল।

হ্যাঁ, আমি কিছুটা ক্লান্ত, চারপাই-এর ওপর বসতে বসতে তিনি বললেন। তুমি কাপড়-চোপড় এখন গুছিয়ে রাখ। সফরের জন্য কিছু রুটি সেঁকার পর সকালে রান্নার জিনিসপত্র গুছিয়ে নেয়া যাবে।

একথা বলার পর ইমাম বখশ বিছানার ওপর গা এলিয়ে দিলেন এবং একটু পরেই তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন।

নূরানের জন্য গুছিয়ে নেয়ার বিশেষ কিছু ছিল না। একজন পাঞ্জাবী চাষীর মালপত্র বলতে এক সেট বাড়তি কাপড়, একটা লেপ, একটা বালিশ, কয়েকটা কলসি, রান্নার জিনিসপত্র এবং বড়জোর পিতলের একটা থালা ও একটা বা দুটি দস্তার গ্লাস। এ সব কিছুই তাদের একমাত্র আসবাব-চারপাই-এর ওপর এক সাথে রাখা যায়। নূরান তার ও তার বাপের সব কাপড় একটা স্টিলের ট্রাঙ্কে রাখল। ধূসর রংয়ের রং চটা এই বাক্সটা সে ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছে। পরের দিনের জন্য কয়েকটা রুটি বানানোর জন্য সে চুলা জ্বালোল। আধা ঘণ্টার মধ্যে তার রান্নার কাজ শেষ হয়ে গেল। রান্নার জিনিসপত্র ধুয়ে সে একটা বস্তার মধ্যে রাখল। বাকী আটা, লবণ ও মসলা সে বিস্কুট ও সিগারেটের কীেটার মধ্যে রাখল। এ সব কিছুই সে আবার রাখল কেরোসিন রাখার একটা খালি টিনের মধ্যে। গোছানো শেষ। একমাত্র বাকি রইল বালিশের সাথে লেপটা জড়িয়ে রাখা এবং লেপের বাড়তি অংশ চারপাই-এর ওপর গুছিয়ে রাখা। এরপর চারপাইটা মহিষের পিঠের ওপর তুলে দেয়া। ভাঙ্গা আয়নাটা সে হাতে করেই নিয়ে যেতে পারবে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *