১৫. কুইডিচ ফাইনাল

১৫. কুইডিচ ফাইনাল

সে–সে আমার কাছে এটা পাঠিয়েছে, হারমিওন বলল চিঠিটা দেখিয়ে।

চিঠিটা হাতে নিল হ্যারি। পার্চমেন্টটা স্যাঁতস্যাঁতে, চোখের পানির অসংখ্য ফোঁটা চিঠির কালিটাকে জায়গায় জায়গায় লেপ্টে দিয়েছে, অসুবিধা হচ্ছে পড়তে।

প্রিয় হারমিওন,
আমরা হেরে গেছি। অবশ্য ওকে হোগার্টসে নিয়ে আসার অনুমতি দেয়া হয়েছে। মৃত্যু দণ্ডাদেশ করবার তারিখ পরে ঠিক হবে।
বিকি লন্ডন শহরে খুব মজা পেয়েছে।
তুমি যে সাহায্য করেছো কখনই ভুলব না।
হ্যাগ্রিড।

ওরা এটা করতে পারে না, বলল হ্যারি। ওরা পারে না। বাকবিক বিপদজনক নয়।

ম্যালফয়ের বাবা কমিটিকে এ ব্যাপারে ভয় দেখিয়েছে, বলল হারমিওন, চোখের পানি মুছতে মুছতে। তোমরা তো জান উনি কি রকম। এবং কমিটির লোকেরা সব বুড়ো হাবড়া, ভিতুর ডিম এক একটা। অবশ্য একটা আপিল হবে, সব সময়ই হয়। কিন্তু আমি কোন আশা দেখছি না… কোন কিছুরই পরিবর্তন হবে না।

হ্যাঁ, হবে,ক্ষিপ্ত হয়ে বলল রন। এবার একাই তোমাকে সব করতে হবে না হারমিওন, আমি সাহায্য করব।

ওহ্, রন!

রনের গলা জড়িয়ে ধরল হারমিওন এবং একেবারেই ভেঙে পড়ল। ভয় পেয়ে গেল রন, আস্তে আস্তে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল। অবশেষে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করল হারমিওন।

রন, সত্যিই আমি দুঃখিত স্ক্যাবার্স… ফুঁপিয়ে উঠল হারমিওন।

ওহ্–ঠিক আছে–ও বুড়ো হয়ে গিয়েছিল, বলল রন। এবং ওটা অকাজেরও হয়ে গিয়েছিল। তুমি হয়তো জান না মা এবং বাবা এবার হয়তো আমাকে একটা পেঁচা উপহার দেবে।

***

ব্ল্যাক-এর দ্বিতীয় বার অনুপ্রবেশের পর যে সমস্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাত্রদের উপর জারি করা হয়েছে তারপর, হ্যারি, রন এবং হারমিওনের পক্ষে সন্ধ্যায় হ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখা করা অসম্ভব হয়ে উঠছে। ওদের একমাত্র উপায় হচ্ছে কেয়ার অফ ম্যাজিকেল ক্রিয়েচার্স ক্লাসের সময় ওর সঙ্গে কথা বলে নেয়া।

রায়ের আঘাতে হ্যাগ্রিড যেন বোধশক্তিহীন হয়ে গেছে।

সবই আমার দোষ। আমিই কথা বলতে পারিনি। ওরা সব একসঙ্গে বসেছিল কালো পোশাক পরে এবং আমি নোটগুলো সব ভুলে গিয়েছিলাম, তারিখও মনে ছিল না, তুমি যেগুলো ঠিক করে দিয়েছিল হারমিওন। এবং তারপর লুসিয়াস ম্যালফয় উঠে দাঁড়িয়ে এক বক্তৃতা দিলেন। এরপর তিনি যা বললেন ঠিক তাই করল কমিটি…।

তারপরও তো একটা আপিল আছে! বলল রন। এখনই আশা ছেড়ে দিও না, আমরা এটা নিয়ে কাজ শুরু করেছি!

ক্লাসের বাকি সবার সঙ্গে ওরা প্রাসাদে ফিরে আসছে। সামনে দেখা যাচ্ছে ম্যালফয়, ক্রেব আর গয়ল হেঁটে যাচ্ছে। পেছন ফিরে তাকিয়ে হাসছে ম্যালফয়।

প্রাসাদের সিঁড়ির গোড়ায় পৌঁছে হ্যাগ্রিড বলল, সম্ভাবনা খুব নেই, রন। ওই কমিটিটা লুসিয়াস ম্যালফয়ের পকেটে। আমি এখন এটাই চেষ্টা করব যে বাকবিকের বাকি সময়টা যেন খুবই আনন্দে কাটে। আমার কাছে এটা ওর পাওনা…।

ঘুরে হ্যাগ্রিড ওর কেবিনের দিকে ফিরে গেল, রুমালে ঢাকল মুখ।

অঝোরে কাঁদছে কিভাবে দেখ!

ম্যালফয়, ক্রেব এবং গয়ল প্রাসাদের দরজায় দাঁড়িয়ে শুনছিল সব।

এরকম করুণ কিছু কি দেখেছো কখনও? বলল ম্যালফয়। এবং তিনি কি আমাদের শিক্ষক

হ্যারি এবং রন ক্ষিপ্তভাবে এগিয়ে গেল ম্যালফয়ের দিকে, কিন্তু ওখানে হারমিওন পৌঁছল প্রথমে

ঠাস!

যত শক্তি সম্ভব তত শক্তি দিয়ে ম্যালফয়ের গালে চড়টা মারল হারমিওন। কেঁপে উঠল ম্যালফয়। হ্যারি, রন, ক্রেব এবং গয়ল হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে, আবার হাত তুলল হারমিওন।

কখনই হ্যাগ্রিডকে করুণা বলবে না শয়তান–হতচ্ছাড়া কোথাকার।

হারমিওন! দুর্বল স্বরে বলল রন, ওর হাতটা ধরে ফেলার চেষ্টা করল।

সরে দাঁড়াও রন!

হারমিওন তার জাদুর কাঠি বের করল। ম্যালফয় পেছনে সরে গেল। ক্রেব এবং গয়ল ওর দিকে নির্দেশের জন্য তাকাল, ওরা নিজেরা একেবারেই হতভম্ব।

এসো, বিড়বিড় করল ম্যালফয়, পরমুহূর্তে তাদের তিনজনই অদৃশ্য হয়ে গেল একেবারে মাটির নিচে অন্ধকার কারাকক্ষের ভেতরে।

হারমিওন! আবার বলল রন, খুশিও হয়েছে অবাকও হয়েছে।

হ্যারি, কুইডিচ ফাইনালে ওটাকে হারাতেই হবে! তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলল হারমিওন। তোমাকে হারাতেই হবে, কারণ স্লিথারিনের বিজয় কিছুতেই মেনে নিতে পারব না!

চার্মস ক্লাসে যেতে হবে, বলল রন, হারমিওনের প্রতি এখন ও প্রীত। চল যাওয়া যাক।

মার্বেল সিঁড়ি টপকে প্রফেসর ফ্লিটউইক-এর ক্লাস রুমে পৌঁছল ওরা।

তোমাদের দেরি হয়ে গেছে! হ্যারি দরজাটা খোলা মাত্রই বললেন প্রফেসর নাখোশ হয়ে। জলদি এসো, জাদুর কাঠি বের কর, আজকে আমরা উল্লসিত চার্মস নিয়ে পরীক্ষা করছি। ইতোমধ্যেই জোড়ায় জোড়ায় ভাগ হয়ে গেছে।

হ্যারি এবং রন পেছনের দিকে একটা ডেস্কে দ্রুত এসে ব্যাগ খুলল। পেছনে তাকাল রন।

হারমিওন কোথায় গেল?

হ্যারিও চারদিক তাকাল, এখনও হারমিওন ক্লাসরুমে ঢোকেনি, কিন্তু হ্যারি জানে ও যখন দরজাটা খুলছিল তখনও সে ছিল ওর ঠিক পেছনে।

অদ্ভুত ব্যাপার তো, বলল হ্যারি, রনের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। হয়তো–বাথরুমে বা ওরকম কোথাও গিয়েছে?

কিন্তু ক্লাসের পুরো সময়টাতেই হারমিওন এলো না।

ও হয়তো নিজের উপরেই উল্লসিত চার্মস করতে পারে, বলল রন, লাঞ্চের উদ্দেশ্যে সবাই বেরিয়ে এলো, দাঁত বের করে হাসছে সবাই–উল্লসিত চার্মস ওদের মধ্যে একটা আত্মতৃপ্তির ভাব এনে দিয়েছে।

লাঞ্চেও নেই হারমিওন। লাঞ্চের শেষে অ্যাপেল–পাই খেতে খেতে উল্লসিত চার্মসের প্রভাব কেটে গেল, এখন হ্যারি ও রন উদ্বিগ্ন হচ্ছে।

তুমি নিশ্চয়ই মনে করো না ম্যালফয় ওকে কিছু করেছে? উদ্বেগের সাথে বলল রন, দ্রুত গ্রিফিন্ডর টাওয়ারের দিকে উঠতে উঠতে।

নিরাপত্তা প্রহরীদের টহল পেরিয়ে, স্থূলকায় মহিলাকে পাসওয়ার্ড বলে ওরা ছবির ফুটো দিয়ে কমনরুমের ভেতর ঢুকলো। হারমিওন টেবিলে বসে আছে খোলা অ্যারিথম্যান্সি বইয়ের উপরে মাথা রেখে ঘুমচ্ছে। ওরা দুজনে গিয়ে ওর দুপাশে বসল। ধাক্কা দিয়ে ওকে জাগাল হ্যারি।

কী–কী? হারমিওন ঘুম থেকে উঠে সচকিতভাবে বলল। চারদিকে বিহ্বলের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। যাওয়ার সময় হয়েছে এখন কোন ক্লাসে যেতে হবে?

ডিভাইনেশন, কিন্তু আরও বিশ মিনিট বাকি আছে, বলল হ্যারি। কিন্তু তুমি চার্মস ক্লাসে আসনি কেন?

কী? ওহ না! হারমিওন চিৎকার দিয়ে উঠল। আমি চার্মসে যেতে ভুলে। গিয়েছিলাম!

কিন্তু তুমি ভুললে কী করে? বলল হ্যারি। আমরা যখন ক্লাস রুমের বাইরে পৌঁছলাম তখন তো তুমি আমাদের সঙ্গেই ছিলে!

আমার কাছে এটা বিশ্বাসই হচ্ছে না! আর্তনাদ করল হারমিওন। প্রফেসর ফ্লিটউইক কী রেগে গেছেন? ওহ, ম্যালফয়ের কাণ্ড, ওর কথা আমি ভাবছিলাম এরপর সবকিছুর খেই হারিয়ে ফেললাম।

কী জান হারমিওন? বলল রন, হারমিওনের বালিশ হিসেবে ব্যবহৃত বিশাল বইটির দিকে তাকিয়ে। আমার মনে হয় তুমি ভেঙে পড়ছ। তুমি খুব বেশিকিছু করবার জন্য পরিশ্রম করছ।

না, আমি সেরকম কিছু করছি না! বলল হারমিওন চোখের উপর থেকে চুল সরিয়ে, চারদিকে ওর ব্যাগটা খুঁজছে। আমি শুধু একটা ভুল করলাম, এই যা! প্রফেসর ফ্লিটউইকের সঙ্গে দেখা করে ক্ষমা চেয়ে আসি… ডিভাইনেশনে তোমাদের সঙ্গে দেখা হবে!

বিশ মিনিট পরে ওদের সঙ্গে প্রফেসর ট্রিলনির ক্লাসরুমের বাইরে সিঁড়ির নিচে দেখা হলো, একেবারেই বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে ওকে।

আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না যে আমি চার্মস ক্লাসটা মিস করলাম। এবং আমি বাজি ধরে বলতে পারি আজকে যা পড়ানো হয়েছে সেটাই পরীক্ষায় আসতে পারে। অন্তত প্রফেসর সে রকমই ইঙ্গিত দিলেন!

এক সঙ্গে সিঁড়ি ভেঙ্গে আধো অন্ধকারে দম আটকানো টাওয়ার কক্ষে ঢুকল ওরা। প্রত্যেক টেবিলে একটা করে ক্রিস্টাল বল রয়েছে ভেতরে মুক্তার মতো সাদা কুয়াশা। হ্যারি, রন এবং হারমিওন একই টেবিলে বসল।

আমার ধারণা ছিল আগামী টার্মের আগে আমরা ক্রিস্টাল বল শুরু করছি না, আস্তে আস্তে বলল রন, চোখের কোণ দিয়ে দেখে নিল আশেপাশে কোথাও প্রফেসর ট্রিলনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিনা।

অভিযোগ করবে না, এর মানে হচ্ছে আমরা হস্তরেখার পাঠ শেষ করে ফেলেছি, নিম্নস্বরে বলল হ্যারি। যতবার আমার হাত তিনি দেখেছেন ততবারই আমার কেমন অস্বস্তি বোধ হয়েছে।

শুভদিন! পরিচিত রহস্যময় স্বরটা শোনা গেল। প্রফেসর ট্রিলনি স্বভাব মতো ছায়ার আড়াল থেকে নাটকীয়ভাবে সামনে এলেন। পার্বতী এবং ল্যাভেন্ডার উত্তেজনায় কেঁপে উঠল, ক্রিস্টাল বলে সাদা আভায় তাদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে গেল।

পরিকল্পনার একটু আগেই ক্রিস্টাল বলটা আমি তোমাদের পড়াতে চাচ্ছি, বললেন প্রফেসর আগুনের পাশে বসে তাকালেন চারদিকে। ভাগ্য আমাকে জানিয়েছে যে তোমাদের জুনের পরীক্ষায় এ সম্পর্কে কিছু থাকবে, এবং তার আগেই আমি তোমাদেরকে যথেষ্ট প্র্যাকটিস করাতে চাচ্ছি।

নাক টানল হারমিওন।

বেশ, সত্যিই… ভাগ্য তাঁকে জানিয়েছে… পরীক্ষার প্রশ্ন করে কে? উনিই করেন! কি একটা অবাক হওয়ার মতো ভবিষ্যদ্বাণী! বলল সে, গলার স্বর নামিয়ে রাখার ব্যাপারে কোন চেষ্টাই করল না।

প্রফেসর ট্রিলনি ওদের আলোচনা শুনেছেন কি না বলা মুশকিল, কারণ ওর মুখটা ছায়ায় ঢাকা। তবে, তিনি এমনভাবে পড়িয়ে চললেন যেন কিছুই শুনতে পাননি।

ক্রিস্টাল বলে ভবিষ্যৎ দেখা একটি বিশেষ সূক্ষ্ম শিল্প, স্বাপ্নিক স্বরে বললেন তিনি। আমি এমন আশাকরি না প্রথমবারেই তোমরা কিছু দেখতে পাবে। আমরা শুরু করব আমাদের সচেতন মন এবং বাইরের চোখকে শিথিল করার মধ্য দিয়ে বিদ্রুপাত্মক চাপা হাসি হাসছে রন, হাতের মুঠো মুখে পুরে দিয়ে আওয়াজ বন্ধ রাখার চেষ্টা করছে–যেন ভেতরের চোখ এবং অতি সচেতনতাকে পরিষ্কার করে নিতে পারি। সম্ভবতো, আমরা ভাগ্যবান, এবং তোমাদের কেউ কেউ ক্লাস শেষ হওয়ার আগেই ভবিষ্যতকে দেখতে পাবে।

শুরু করল ওরা। হ্যারি, বিশেষ করে, নিজেকে চূড়ান্তভাবে বোকা মনে করল, একটি ক্রিস্টাল বলের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা এবং নিজের মনকে ভাবনা শূন্য করা যখন মনের ভেতরে এটা একটা বোকামি ছাড়া কিছুই নয় এরকম একটা ভাবনা খেলে বেড়াচ্ছে, বোকামী ছাড়া আর কি। রন নীরবে হেসেই চলেছে আর হারমিওন ওকে চুপ করানোর চেষ্টা করছে।

এখন পর্যন্ত কিছু দেখা গেল? ওদেরকে জিজ্ঞেস করল হ্যারি, প্রায় পনের মিনিট তাকিয়ে থাকার পর।

ইয়ে, মানে টেবিলে খানিকটা পোড়া দাগ, বলল রন, আঙুল দিয়ে দেখিয়েও দিল। কেউ মনে হয় মোমবাতি ফেলে দিয়েছিল।

সময়ের যথেষ্ট অপচয় হচ্ছে, চাপা স্বরে বলল হারমিওন। আমি এর চেয়ে প্রয়োজনীয় কিছু প্র্যাকটিস করতে পারতাম। চিয়ারিং চার্মস-এর কিছুটা ধরে উঠতে পারতাম।

প্রফেসর ট্রিলনি পাশ ঘেঁষে চলে গেলেন।

তোমাদের মধ্যে কে তার ক্রিস্টাল বলের ভেতরের ছায়ার মতো উপসর্গগুলো ব্যাখ্যা করতে পারবে? চুড়ির রিমঝিম শব্দের মধ্যে প্রশ্নটা করলেন তিনি।

আমার কোন সাহায্যের দরকার নেই, ফিসফিস করে বলল রন। বোঝাই যাচ্ছে এর মানে কি। আজ রাতে অনেক কুয়াশা হবে।

হ্যারি এবং হারমিওন দুজনেই হাসিতে ফেটে পড়ল।

এই যে সত্যিই! বললেন প্রফেসর ট্রিলনি, সবগুলো মাথা ওদের দিকে ঘুরে গেছে। আহত মনে হলো পার্বতী এবং ল্যাভেন্ডারকে। তোমরা অন্তদৃষ্টির কম্পনগুলোকে ডিস্ট্রাব করছ! ওদের টেবিলের কাছে এসে প্রফেসর ওদের বলটার দিকে তাকালেন। হ্যারির মনটা দমে গেল। ও নিশ্চিত এরপরে ওকে কি শুনতে হবে…।

এইখানে কিছু আছে! প্রফেসর ট্রিলনি ফিসফিস করে বলল, মুখটা নিয়ে এসেছেন বলের কাছেই যেন তার বিশাল চশমায় ওটার দুটো প্রতিফলন পড়ে। কিছু একটা নড়ছে… কিন্তু কী ওটা?

হ্যারি বাজি ধরতে রাজি, এমনকি তার ফায়ারবোল্ট নিয়েই, যে, যা আসছে সেটা আর যাইহোক ভালো কোন খবর নয়। এবং সে নিশ্চিত…

মাই ডিয়ার… প্রফেসর ট্রিলনি শ্বাস ফেলে হ্যারির দিকে দৃষ্টি তুলে বললেন, এখানেই এটা রয়েছে, আগের যেকোন সময়ের চেয়ে পরিষ্কার… মাই ডিয়ার, তোমার দিকে অগ্রসর হচ্ছে, আরও কাছে… দ্য গ্রিম।

ওহ্, দোহাই আপনার! বলল হারমিওন জোরে, আবার সেই অদ্ভুত গ্রিমের কথা নয়!

বিশাল চক্ষু জোড়া দিয়ে হারমিওনের মুখের দিকে তাকালেন প্রফেসর ট্রিলনি। ল্যাভেন্ডরের কানে কানে কিছু বলল পার্বতী, ওরা দুজনেই হারমিওনের দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে রয়েছে। প্রফেসর ট্রিলনি উঠে দাঁড়ালেন, অভ্রান্ত ক্রোধে তাকালেন হারমিওনের দিকে।

দুঃখের সঙ্গে আমাকে বলতে হচ্ছে, মাই ডিয়ার, যে মুহূর্তে তুমি ক্লাসে এসেছে সেই মুহূর্ত থেকেই ডিভাইনেশন নামক শিল্পের জন্য যা প্রয়োজন সেটা তোমার ছিল না। সত্যিই, এমন একজন মামুলি মানের ছাত্রী আমি কখনও দেখেছি বলে মনে পড়ে না।

মুহূর্তের নীরবতা নেমে এলো ক্লাসরুমে। তারপর

বেশ! হঠাৎ হারমিওন উঠে দাঁড়িয়ে ওর ভবিষ্যতকে কুয়াশামুক্ত করা বইটা ব্যাগে ঠেসে ভরলো। বেশ! আবার বলল সে, কাঁধের উপর ব্যাগটা ঝুলিয়ে নিল, রনকে প্রায় চেয়ার থেকে ফেলে দিয়েছিল আর কি। আমি যাচ্ছি! ক্লাস ছেড়ে দিলাম!

পুরো ক্লাসের বিস্মিত চোখের সামনে দিয়ে মেঝের দরজাটা (ট্র্যাপ ডোর) লাথি মেরে খুলল হারমিওন, মই বেয়ে নিচে নেমে গেল।

ক্লাসটা আবার ঠিক হতে কয়েক মিনিট লেগে গেল। প্রফেসর ট্রিলনি গ্রিম সম্পর্কে মনে হয় ভুলেই গেছেন। হ্যারি এবং রনের টেবিলের কাছ থেকে ঘুরে গেলেন, গায়ের চাদরটা ঠিক করতে করতে গভীর একটা শ্বাস ফেললেন।

উউউউউউউউ! হঠাৎ চিৎকার করল ল্যাভেন্ডর, হকচকিয়ে গেল সবাই। উউউ, প্রফেসর ট্রিলনি, এইমাত্র মনে পড়ল! আপনি ওকে যেতে দেখলেন তাই না? ঈস্টারের কাছাকাছি সময়, আমাদের একজন চিরদিনের জন্য আমাদেরকে ছেড়ে যাবে! আপনি অনেক দিন আগে এ কথাটা বলেছিলেন প্রফেসর!

ওর দিকে তাকিয়ে প্রফেসর ট্রিলনি একটা শিশির সিক্ত হাসি দিলেন।

হ্যাঁ, আমি সত্যিই জানতাম মিস গ্রেঞ্জার আমাদের ছেড়ে যাবে। আশা করা যায়, হয়তো ইঙ্গিতগুলোকে ভুল বুঝেছে… অনেক সময়ই ভেতরের চোখ বোঝা হয়ে দাঁড়াতে পারে, বুঝতে পারছ…।

ল্যাভেন্ডর এবং পার্বতী ওর কথায় চমৎকৃত হলো, এগিয়ে গেল ওরা যেন ওদের টেবিলে যোগ দিতে পারেন প্রফেসর।

একদিন না একদিন হারমিওনের একটা কিছু হয়ে যেতে পারে? নিচুস্বরে বলল হ্যারিকে রন। ওকে হতভম্ব দেখাচ্ছে।

হু…

ক্রিস্টাল বলের দিকে তাকাল হ্যারি, সাদা কুয়াশা ঘুরছে এছাড়া আর কিছুই দেখতে পেল না। সত্যিই কী প্রফেসর ট্রিলনি আবার গ্রিম দেখতে পেয়েছেন? সেও কী পাবে? কুইডিচ ফাইনালের আগে আরেকটা প্রায় দুর্ঘটনায় পড়তে চায় না সে।

***

ঈস্টারের ছুটিটা আরামের হলো না। তৃতীয় বর্ষের ছাত্রদের এর আগে কখনও এত হোমওয়ার্ক করতে হয়নি। নেভিল লংবটম মনে হচ্ছিল নার্ভাস হয়ে ভেঙ্গেই পড়বে, এবং তার একারই এমন দশা হয়নি।

এটা কি একটা ছুটি হলো! এক দুপুরে কমনরুমে চিৎকার করে উঠল সিমাস সি ফিনিগান। পরীক্ষার অনেক দেরি, কিন্তু এখন আমাদের নিয়ে কী খেলা হচ্ছে?

কিন্তু হারমিওনের মতো কাউকেই এত পড়তে হচ্ছে না। ডিভাইনেশন ছাড়াই অন্য যে কারোর চেয়ে অনেক বেশি বিষয় সে পড়ছে। সাধারণত কমনরুম থেকে রাতে সবার শেষে বের হয় এবং পরদিন সকালে সবার আগে লাইব্রেরিতে আসে; প্রফেসর লুপিনের মতো তারও চোখের কোলে কালি পড়েছে, এবং মনে হয় সবসময় পানি পড়ছে চোখ থেকে।

বাকবিকের আপিল বিষয়ে দায়িত্ব নিয়েছে রন। যখন সে নিজের কাজ করছে, তখন ইয়া মোটা মোটা বই ঘাটছে। এত বেশি জড়িয়ে পড়েছে যে কুকশ্যাংকের উপর রাগ দেখাতেও ভুলে গেছে।

 প্রতিদিনকার কুইডিচ প্র্যাকটিসের পাশাপাশি হ্যারিকে হোমওয়ার্কের জন্য সময় বের করে নিতে হচ্ছে, অবশ্য এর সঙ্গে রয়েছে উডকে নিয়ে খেলার কৌশল সম্পর্কে অসংখ্য আলোচনা। ঈস্টার ছুটির পরের প্রথম শনিবারেই গ্রিফিন্ডর স্লিথারিন ম্যাচ। পুরোপুরি দুশ পয়েন্ট নিয়ে এগিয়ে রয়েছে স্লিথারিন। তার মানে হচ্ছে (উড যেমন তার টিমকে সবসময় মনে করিয়ে দিচ্ছে) গ্রিফিন্ডরকে ওর চেয়েও বেশি পয়েন্ট পেয়ে খেলায় জিততে হবে। তাহলেই কাপ জেতা যাবে। এর আরও মানে হচ্ছে হ্যারির উপরে বোঝাটা আরও বাড়ল, কারণ স্নিচ ধরার অর্থ হচ্ছে দেড়শ পয়েন্ট অর্জন করা।

তাহলে তোমাকে তখনই ওটাকে ধরতে হবে যখন আমরা পঞ্চাশ পয়েন্ট এগিয়ে থাকব, উড বারে বারে মনে করিয়ে দিচ্ছে হ্যারিকে। শুধুমাত্র পঞ্চাশ পয়েন্ট এগিয়ে থাকলে। তা না হলে আমরা হয়তো খেলায় জিতব কিন্তু কাপটা পাব না। বুঝতে পেরেছো? তোমাকে স্নিচটা ধরতে হবে যখন আমরা।

আমি জানি, অলিভার! চিৎকার করল হ্যারি।

পুরো গ্রিফিন্ডর হাউজ খেলাটা নিয়ে মানসিকভাবে জড়িয়ে পড়ল। বিখ্যাত চার্লি উইজলি (রনের মধ্যম ভ্রাতা) সিকার থাকার পর থেকে গ্রিফিন্ডর হাউজ কুইডিচ কাপ আর জেতেনি। কিন্তু হ্যারির মনে হচ্ছে সে যতটা চায়, এমনকি উডও, ততটা জিততে চায় না। হ্যারি এবং ম্যালফয়ের শত্রুতা চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে। হগসমিডে কাদা ছোঁড়ার ঘটনাটা তখনও ম্যালফয়ের মনের ভেতর খোঁচাচ্ছে, সে আরও ক্ষিপ্ত এ কারণে যে কিভাবে যেন হ্যারি শাস্তিটা এড়িয়ে গেল। র‍্যাভেনক্লদের বিরুদ্ধে খেলায় ম্যালফয় যে ওকে ভয় দেখাতে চেয়েছিল সেটা হ্যারিও ভুলে যায়নি। কিন্তু বাকবিকের প্রশ্নটাই ওকে পুরো স্কুলের সামনে ম্যালফয়কে পরাজিত করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছে।

এর আগে কোন ম্যাচ এমন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে বলে কারোরই মনে পড়ছে। ছুটি যখন প্রায় শেষ, তখন দুই টিম এবং তাদের হাউজের মধ্যে টেনশনটা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। করিডোরে ছোটখাটো ফ্যাসাদও হয়ে গেল। একটা বাজে ঘটনাও ঘটে গেল, চতুর্থ বর্ষের একজন গ্রিফিন্ডর ছাত্র আর ষষ্ঠ বর্ষের শ্লিথারিন ছাত্র হাসপাতালে ভর্তি হলো।

সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে হ্যারির। ও ক্লাসের ভেতরে হাঁটতে পারে না, স্লিথারিনরা পা বাড়িয়ে ওকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে; ও যেখানে যাচ্ছে ক্রেব আর গয়ল সেখানেই উপস্থিত হচ্ছে। ওকে অন্যদের দ্বারা পরিবেষ্টিত দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে। উড নির্দেশ দিয়েছে যে হ্যারিকে সবসময় সঙ্গে লোকজন নিয়ে চলাফেরা করতে হবে। স্লিথারিনরা ওকে আহত করার চেষ্টা করতে পারে। পুরো গ্রিফিন্ডর হাউজটাই এই চ্যালেঞ্জ উৎসাহের সঙ্গে গ্রহণ করেছে, এখন হ্যারির পক্ষে সময়মতো ক্লাসে যাওয়া কঠিন, কারণ সবসময় ওর চারদিকে থাকছে একজন ছাত্র। অবশ্য হ্যারি নিজের চেয়ে ফায়ারবোল্টের নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত। ও যখন ওটা ব্যবহার করছে না নিরাপদে ট্রাংকে তালা মেরে রাখে এবং প্রায়ই সময় পেলে ছুটে গিয়ে দেখে আসে ওটা জায়গায় রয়েছে কি না।

***

খেলার আগের রাতে নিয়ম মতো গ্রিফিন্ডর কমনরুমে পড়াশোনা হলো না। এমনকি হারমিওনও ওর বই ছেড়ে রইল।

আমি কাজ করতে পারছি না, মনোযোগ দিতে পারছি না, বলল সে।

অনেক চিৎকার শোনা যাচ্ছে। চিৎকার করে ফ্রেড আর জর্জ মানসিক চাপটাকে হালকা করার চেষ্টা করছে। কোণায় অলিভার উড কিডিচ পিচের একটা মডেলের উপরে ঝুঁকে আছে, জাদুর কাঠিটা দিয়ে পিচের উপর ছোট ছোট খেলোয়াড় তৈরি করে নিজের মনে বিড় বিড় করছে। অ্যাঞ্জেলিনা, অ্যালিসিয়া এবং ক্যাটি ফ্রেড আর জর্জের চুটকি শুনে হাসছে। হ্যারি বসে আছে রন আর হারমিওনের সঙ্গে, সমস্ত কর্মকাণ্ড থেকে দূরে। কালকের দিনটার কথা মনে করতে চাচ্ছে না ও কারণ যতবারই সে মনে করতে চেষ্টা করে ততবারই তার মনে হচ্ছে ভয়াবহ একটা কিছু যেন তার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য লড়াই করছে।

তুমি ঠিকই থাকবে, হারমিওন ওকে বলল, যদিও ওকেই অনেক ভীতসন্ত্রস্ত দেখাচ্ছে।

তোমার একটা ফায়ারবোল্ট রয়েছে। রন বলল।

হু  বলল হ্যারি, কিন্তু ওর পেটের ভেতরে কি যেন কিড়মিড় করছে।

উড চিৎকার করে উঠল, টিম! শুতে যাও! চারদিকে স্বস্তি নেমে এল।

***

হ্যারির ঘুমটা ভালো হলো না। প্রথমে ও স্বপ্ন দেখল যেন অনেক বেশি ঘুমিয়ে ফেলেছে, এবং উড চিৎকার করছে, কোথায় তুমি? তুমি না এলে আমাদেরকে নেভিলকে নামাতে হবে! তারপরে সে স্বপ্নে দেখল যে ম্যালফয় এবং স্লিথারিন টিমের সবাই ড্রাগনের পিঠে চড়ে খেলতে এসেছে। দম বন্ধ হওয়া গতিতে ও উড়ছে যেন ম্যালফয়ের ড্রাগনটার আগুনে–নিঃশ্বাস থেকে বাঁচতে পারে, তখন ওর মনে হলো যে ও ফায়ারবোল্টের কথা ভুলেই গেছে। শূন্য থেকে পড়ে গেল সে এবং হকচকিয়ে জেগে উঠল।

কয়েক মুহূর্ত লাগল হ্যারির বুঝতে যে খেলাটা এখনও হয়নি। এবং সে নিরাপদেই বিছানায় রয়েছে এবং স্লিথারিন টিমকে অবশ্যই ড্রাগনের পিঠে চড়ে খেলতে দেয়া হবে না। পানি পিপাসা পেল তার। যতটা সম্ভব নিঃশব্দে বিছানা থেকে উঠল জানালার নিচে রূপালী জগটা থেকে পানি ঢালতে গেল।

নিচের মাঠ এখনও নিঃশব্দ, শান্ত। নিষিদ্ধ বনের গাছগুলোকে কোন বাতাস এলোমেলো করছে না; হোমপিং উইলো দাঁড়িয়ে আছে স্থির নির্দোষ। মনে হচ্ছে খেলার উপযুক্ত পরিবেশই বটে।

পানি খেয়ে গ্লাসটা নামিয়ে বিছানায় ফিরে যাচ্ছিল হ্যারি, হঠাৎ কিছু দেখতে পেলে ও। কেমন যেন একটা জন্তু রূপালী লনটার উপর দিয়ে যাচ্ছে। দৌড়ে বিছানার পাশে টেবিল থেকে চশমাটা তুলে নিয়ে চোখে দিল। আবার ফিরে জানলার পাশে। এটা গ্রিম হতে পারে না-এখন না–খেলার ঠিক আগের রাতে নয়

আবার মাঠের দিকে তাকাল সে, পাগলের মতো কয়েক মুহূর্ত খুঁজে আবার দেখতে পেল ওটাকে। এখন ওটা বনের কিনারা ধরে যাচ্ছে… গ্রিম না… বিড়াল.. স্বস্তিতে জানালাটা খামচে ধরল হ্যারি যখন ও লেজটাকে চিনতে পারল। ওটা কুকশ্যাংকস…।

অথবা ওটা কি শুধু কুকশ্যাংকসই ছিল? চোখটাকে সরু করে কাঁচের গায়ে নাকটাকে ঠেসে ধরে দেখার চেষ্টা করল। মনে হচ্ছে কশ্যাংকস থমকে দাঁড়িয়েছে। হ্যারি নিশ্চিত গাছের ছায়ায় সে দেখতে পাচ্ছে আরও কি যেন নড়ছে।

পরমুহূর্তেই, বেরিয়ে এলো ওটা: একটা বিশাল দৈত্যাকার, মোটা লোমওয়ালা কালো কুকুর, লনের ওপর দিয়ে পা টিপে টিপে হাঁটছে, ওটার পাশে কশ্যাংকসও হাঁটছে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল হ্যারি। এর মানে কী? কুকশ্যাংকসও যদি কুকুরটাকে দেখতে পায় তাহলে ওটা হ্যারির মৃত্যুর লক্ষণ হয় কীভাবে?

রন! হ্যারি চাপা গলায় ডাকল। রন! ওঠ!

হাহ?

আমি তোমাকে একটা বিষয় বলতে চাই, যদি তুমি ওটা দেখতে পাও!

এখনও তো অন্ধকার, রন বিড় বিড় করে বলল। তুমি কী দেখছো?

ওই খানে নিচে।

দ্রুত আবার জানালা দিয়ে বাইরে তাকাল হ্যারি।

ক্রুকশ্যাংকস এবং কুকুরটা অদৃশ্য হয়ে গেছে। জানালার কপাটে উঠে একেবারে প্রাসাদের ছায়ায় তাকাল, কিন্তু ওখানেও নেই। কোথায় গেল?

বিকট একটা নাক ডাকার শব্দ ওকে জানিয়ে দিল যে রন আবার ঘুমিয়ে পড়েছে।

***

হ্যারি এবং গ্রিফিন্ডর টিমের সকলে পরদিন সকালে বিপুল করতালির মধ্যে গ্রেট হলে ঢুকল। র‍্যাভেনক্ল এবং হাফপাফ টেবিল থেকেও হাততালি আসছে। স্লিথারিন টেবিলের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় সিটি বাজাল। হ্যারি খেয়াল করল অন্যদিনের চেয়ে ম্যালফয়কে আরও বিবর্ণ দেখাচ্ছে।

পুরো সময়টা উড তার টিমের সবাইকে নাস্তা খাওয়ার জন্য বলল কিন্তু নিজে কিছুই খেল না। আবার কারো কারো শেষ করার আগে সবাইকে তাড়িয়ে পিচে নিয়ে গেল, যেন ওরা পিচ সম্পর্কে একটা ধারণা পায়। গ্রেট হল ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময়ও সবাই হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানাল।

গুড লাক, হ্যারি! বলল চো চ্যাং। হ্যারির মনে হলো ওর গালটা লাল হয়ে গেছে।

ঠিক আছে… সেরকম বাতাস নেই… উজ্জ্বল সূর্যের আলো, অবশ্য ওটা দৃষ্টিশক্তিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, খেয়াল রেখ… মাঠটা শক্ত, ভালো এবং এর ফলে আমরা দ্রুত লাফিয়ে উঠতে পারব…।

পিচটা ধরে দৌড়ে গেল উড, পেছনে পেছনে ওর টিম। অবশেষে ওরা দেখতে পেল প্রাসাদের সামনের দরজা খুলে গেছে এবং স্কুলের বাকি সবাই বেরিয়ে এসেছে। মাঠে।

জার্সি পরার জন্যে যাও, বলল উড হঠাৎ করে।

টকটকে লাল জার্সি পরার সময় ওরা কেউ কারো সঙ্গে কথা বলল না। হ্যারি ভাবছে ওদের সবারই কি ওর মতোই লাগছে: নাস্তায় সে এমন কিছু একটা খেয়েছে যেন ওর পেট কামড়াচ্ছে। মুহূর্ত পরেই উড বলল ঠিক আছে, চলো যাওয়া যাক…।

বিশাল শব্দের ঢেউয়ের মধ্যে বেরিয়ে এল ওরা পিচে। দর্শকদের চারভাগের তিন ভাগই রক্তাক্ত লাল পোশাক পরে আছে, গ্রিফিন্ডর–সিংহ খচিত লাল ফ্ল্যাগ ওড়াচ্ছে অথবা ব্যানার দোলাচ্ছে, তাতে লেখা এগিয়ে চল গ্রিফিন্ডর! এবং কাপের জন্য সিংহরা! অবশ্য স্লিথারিন গোলপোস্টের পেছনে শদুয়েক সমর্থক সবুজ রঙের পোশাক পরে রয়েছে; ওদের পতাকায় স্লিথারিনের রূপালী সাপটা চকচক করছে এবং প্রফেসর স্নেইপ একেবারেই সামনের সারিতে বসে রয়েছেন, পরনে সবুজ পোশাক সবার মতোই, এবং একটা গম্ভীর হাসি।

এবং এই যে গ্রিফিন্ডররা! চিৎকার করে উঠল লি জর্ডন। ও ধারা বিবরণী দিচ্ছে। পটার, বেল, জনসন, স্পিনেট, উইজলি, উইজলি এবং উড। গত কয়েক বছরের ভেতরে হোগার্টসের সেরা দল বলে অনেকে মনে করেন

লি-এর মন্তব্য স্লিথারিনের দিক থেকে ধুয়োর মুখে পড়ল।

এবং এই আসছে স্লিথারিন টিম, নেতৃত্ব দিচ্ছে ক্যাপ্টেন ফ্লিন্ট। টিমে কয়েকটা পরিবর্তন করেছে সে এবং মনে হচ্ছে দক্ষতার চেয়ে আকৃতিই বেশি স্থান পেয়েছে।

আবার ধুয়ে দিলো স্লিথারিনরা। হ্যারির অবশ্য মনো হলো লি-এর কথায় যুক্তি রয়েছে। ম্যালফয় হচ্ছে ওদের টিমের সবচেয়ে ছোট্ট ব্যক্তি, বাকিরা বিশালদেহী।

ক্যাপ্টেনরা, হাত মেলাও! বললেন মাদাম হুচ। ফ্লিন্ট এবং উড পরস্পরের দিকে এগিয়ে গেল হাত ধরল শক্ত করে; মনে হচ্ছে যেন একজন আরেকজনের আঙুল ভেঙে ফেলবে।

ব্রুমে চড়! বললেন মাদাম হুচ। তিন… দুই… এক…

চৌদ্দটা ব্রুম লাফিয়ে আকাশে উঠল, দর্শকদের চিঙ্কারে মাদাম হুচের হুইসেল এর শব্দ হারিয়ে গেল। হ্যারির মনে হলো কপাল থেকে চুলগুলো উড়ে গেল; ওড়ার উত্তেজনায় ওর নার্ভাস ভাবটা কেটে গেল; চারদিকে তাকিয়ে দেখল ওর ঠিক পেছনে ম্যালফয়, স্নিচের খোঁজে শা করে উড়ে গেল সে।

এবং গ্রিফিন্ডরের দখলে রয়েছে, গ্রিফিন্ডরের অ্যালিসিয়া স্পিনেট এর হাতে কোয়াল, সোজা এগিয়ে যাচ্ছে স্লিথারিন গোলপোস্টের দিকে, বেশ, অ্যালিসিয়া! আহ্, না–ওয়ারিংটন ধরে ফেলেছে কোয়াফলটা, স্লিথারিনের ওয়ারিংটন পিচ ভেদ করে যেন এগিয়ে যাচ্ছে–ধাম! জর্জ উইজলির চমৎকার ব্লাজার ছোঁড়া, কোয়াফলটা ছেড়ে দিল ওয়ারিংটন, ধরে ফেলল জনসন, আবার গ্রিফিন্ডরের দখলে, এই যে এগিয়ে আসছে অ্যাঞ্জেলিনা মন্টেগুকে এড়িয়ে গেল চমৎকারভাবে–নিচু হও, অ্যাঞ্জেলিনা, ওটা একটা ব্লাজারস!–স্কোর করেছে অ্যাঞ্জেলিনা! দশ–শূন্য গ্রিফিন্ডরের পক্ষে!

পিচের প্রান্ত দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় বাতাসে ঘুষি মারল অ্যাঞ্জেলিনা, নিচে টকটকে লালের সমুদ্র আনন্দে চিৎকার করে উঠল।

আউচ!

প্রায় ব্রুম থেকে উড়ে গিয়েছিল অ্যাঞ্জেলিনা, মার্কাস ফ্লিন্ট ওর উপরে গিয়ে পড়ল।

দুঃখিত! বলল ফ্লিন্ট, নিচের দর্শকরা ধুয়ে দিচ্ছে। দুঃখিত ওকে দেখতে পাইনি!

পর মুহূর্তেই, ফ্লিন্ট-এর মাথার পেছনে ফ্রেড উইজলির বিটার্স স্টিকের এক বাড়ি পড়ল। নিজের ব্রুমে গিয়ে সজোরে ধাক্কা লাগল ফ্লিন্টের নাক, ফেটে রক্ত বেরুলো।

হতেই হবে! চিৎকার করে উঠলেন মাদাম হুচ, উদ্বেগে ওদের মাঝখানে দাঁড়ালেন। গ্রিফিন্ডরকে পেনাল্টি করা হলো প্রতিপক্ষের ওপর বিনা উস্কানিতে আক্রমণের জন্য! স্লিথারিনকে পেনাল্টি করা হলো ইচ্ছা করে প্রতিপক্ষের ক্ষতি করার জন্য!

এটা হতে পারে না! চিৎকার করল ফ্রেড, কিন্তু মাদাম হু হুইসেল বাজিয়ে দিলেন, অ্যালিসিয়া সামনের দিকে উড়ে গেল পেনাল্টি নেয়ার জন্য।

শাবাশ অ্যালিসিয়া! দর্শকের নীরবতা ভাঙল লি-এর চিৎকারে। হ্যা! কিপারকে পরাজিত করেছে অ্যালিসিয়া! কুড়ি–শূন্য গ্রিফিন্ডরের পক্ষে!

ফ্লিন্ট-এর উপরে নজর রাখার জন্য দ্রুত ফায়ারবোল্ট ঘুরালো হ্যারি, তখনও নাক দিয়ে রক্ত ঝরছে, শ্লিথারিনের পেনাল্টি নেয়ার জন্য সামনের দিকে গেল। গ্রিফিন্ডর গোলপোস্টের সামনে ঘুরে বেড়াচ্ছে উড, ওর চোয়াল দুটো পরস্পরকে দৃঢ়ভাবে চেপে ধরে আছে।

অবশ্যই, উড একজন অসাধারণ কিপার! লি জর্ডন বলল দর্শকদের উদ্দেশ্যে, মাদাম হুচের হুইসেলের জন্য অপেক্ষা করছে ফ্লিন্ট। অপূর্ব! ওকে পরাজিত করা খুবই কঠিন, সত্যি–হ্যা! আমি বিশ্বাস করি না সত্যিই! অবিশ্বাস্য! ও বাঁচিয়ে দিয়েছে।

স্বস্তি পেল হ্যারি, উড়ে চলে গেল অন্যদিকে, মিচটাকে খুঁজছে, কিন্তু তখনও লির ধারা বিবরণী শোনার জন্য কান খাড়া রেখেছে। গ্রিফিন্ডররা পঞ্চাশ পয়েন্ট উপরে না যাওয়া পর্যন্ত ম্যালফয়কে মিচ-এর কাছ থেকে দূরে রাখতে হবে…

এখন গ্রিফিন্ডরদের দখলে রয়েছে, না, স্লিথারিনদের দখলে–না! আবার গ্রিফিন্ডরদের দখলে এবং কেটি বেল, গ্রিফিন্ডরের পক্ষে কেটি বেল কোয়াফলটা পিচের সামনে এগিয়ে যাচ্ছে–ওটা ইচ্ছাকৃত!

 স্লিথারিনদের এক চেসার মন্টেগু ঘুরেই কেটির সামনে দাঁড়ালো, এবং কোয়াফেলটা ছিনিয়ে নেয়ার বদলে ওর মাথা জড়িয়ে ধরল। বাতাসে পা ছুড়ছে কেটি, কোন রকমে ব্রুমের উপরে রয়েছে ঠিকই কিন্তু হাত থেকে পড়ে গেল কোয়াফল।

মন্টেগুর উপরে উঠে গেল কেটি চিৎকার করছে ওকে লক্ষ্য করে, বেজে উঠল মাদাম হুচের হুইসেল। এক মিনিট পর সিথারিনদের কিপারের পাশ দিয়ে আরেকটা পেনাল্টি স্কোর করল কেটি।

তিরিশ–শূন্য! ওটাই তোমার শাস্তি, চোট্টামি করার ফল

জর্ডন, তুমি যদি নিরপেক্ষভাবে ধারাবিবরণী দিতে না পার–!

ঘটনা যেরকম ঘটছে আমি তো সেরকম বলার চেষ্টা করছি প্রফেসর!

হঠাৎ নিজের ভেতরে কেমন যেন একটা উত্তেজন অনুভব করল হ্যারি। চিটাকে ও দেখতে পেয়েছে–গ্রিফিন্ডর গোলপোস্টের গোড়ায় চকমক করছে এখনও ওটাকে ধরা চলবে না। কিন্তু যদি ম্যালফয় দেখতে পায়।

হঠাৎ যেন মনোযোগ ফিরে পেল হ্যারি এমন একটি ভাব করে স্লিথারিন গোলপোস্টের দিকে দ্রুত চলে গেল। কাজ হলো এতে। ওর পেছনে পেছনে ছুটল ম্যালফয়, ও ভাবছে হ্যারি দেখতে পেয়েছে মিচটাকে…

হুউশ!

হ্যারির ডান কানের পাশ দিয়ে একটা ব্লাজার উড়ে চলে গেল, মেরেছিল স্লিথারিন-এর বিশাল দেহী বিটার ডেরিক। পর মুহূর্তেই

হুউশ!

দ্বিতীয় ব্লাজারটা হ্যারির কনুই আঁচড়ে গেল। অন্য বিটার বোল দ্রুত কাছে চলে এলো।

দ্রুত চোখ বুলিয়ে হ্যারি দেখতে পেল বোল এবং ডেরিক দুজনেই ব্যাট উঁচিয়ে ওর দিকে ধেয়ে আসছে

উপরের দিকে ঘুরে নিল ফায়ারবোল্ট একেবারে শেষ মুহূর্তে, এবং বোল ও ডেরিক মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত হলো বিশ্রি একটা শব্দ করে।

হা হা হা! চিৎকার করে উঠল লি জর্ডন, স্লিথারিন বিটারদেরকে পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়ে মাথা আঁকড়ে ধরতে দেখে। খুব খারাপ! ফায়ারবোল্টকে পরাজিত করতে হলে তোমাদেরকে আরো আগে উপরে উঠত হবে! এবং এখন আবার গ্রিফিন্ডরদের দখলে, জনসনের হাতে কোয়াফল–পাশে ফ্লেইড–ওর চোখে গুতা দিল, অ্যাঞ্জালিনা!–ওটা একটা তামাশা ছিল প্রফেসর, তামাশা–ওহ্ না–আবার ফ্লিন্ট-এর দখলে, উড়ে যাচ্ছে গ্রিফিন্ডর গোলপোস্টের দিকে, উড এগিয়ে যাও এবার গোল বাঁচাও!

কিন্তু এবার স্কোর করল ফ্লিন্ট। স্নিখারিন সমর্থকদের প্রান্ত থেকে উল্লাস ধ্বনি শোনা গেল এবং এমন একটা বাজে খিস্তি করল লি যে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ওর হাত থেকে ম্যাজিক মেগাফোনটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করল।

দুঃখিত, প্রফেসর দুঃখিত! আর হবে না! তাহলে গ্রিফিন্ডর এখনও এগিয়ে রয়েছে তিরিশ–দশ-এ, এবং আবার গ্রিফিন্ডরদের দখলে।

খেলাটা খুবই নোংরা হয়ে যাচ্ছে, অন্তত হ্যারি যত খেলা খেলেছে সেগুলোর বিচারে। গ্রিফিন্ডররা এগিয়ে যাওয়ায় ক্ষেপে গেছে স্লিথারিন দল এবং যেকোন উপায়ে কোয়াফল দখলের চেষ্টা করছে। হাতের ব্যাট দিয়ে বোল মারল অ্যালিসিয়াকে এবং বলার চেষ্টা করল যে, সে ভেবেছিল অ্যালিসিয়াই ব্লাজার। জর্জ উইজলি বোল-এর মুখে কনুই মারল। মাদাম হুচ দুই টিমের বিরুদ্ধে পেনাল্টি দিলেন এবং উড দর্শনীয়ভাবে আরেকবার গোল রক্ষা করল, স্কোর দাঁড়াল গ্রিফিন্ডরের পক্ষে চল্লিশ–দশ।

আবার হারিয়ে গেছে স্নিচটা। খেলার অনেক উপরে উঠে গেল হ্যারি, পেছনে তখনও লেগে রয়েছে ম্যালফয়, চারদিকে দেখছে ও-একবার গ্রিফিন্ডর পঞ্চাশ পয়েন্টে এগিয়ে গেলে

কেটি আবার গোল করল। পঞ্চাশ–দশ ফ্রেড এবং জর্জ উইজলি ওর চারদিকে ব্যাট উঁচিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, বলা তো যায় না, স্লিথারিনরা যদি প্রতিশোধ নিতে এগিয়ে আসে। ফ্রেড এবং জর্জের অনুপস্থিতিতে বোল এবং ডেরিক দুজনেই উডের দিকে তেড়ে গেল; ওর পেটে মারল একটার পর একটা, বাতাসে পাক খেল উড, আঁকড়ে ধরল ব্রুম, একেবারে ঘুরছে সে।

ক্ষিপ্ত মাদাম হুচ হুইসেল বাজালেন।

কিপারের কাছে যদি কোয়াফল না থাকে তাহলে গোলপোস্টের সামনে তাকে আক্রমণ করা যায় না! বোল এবং ডেরিক এর উদ্দেশ্যে চিষ্কার করে উঠলেন তিনি। গ্রিফিন্ডরের পক্ষে পেনাল্টি!

এবং স্কোর করল অ্যাঞ্জলিনা। ষাট–দশ। মুহূর্ত পরেই ফ্রেড উইজলি ওয়ারিংটনের দিকে একটা ব্লাজার ছুঁড়ে মারল, ওর হাত থেকে কোয়াফলটা পড়ে গেল; ওটা ধরে ফেলল অ্যালিসিয়া এবং স্লিথারিনের গোলপোস্টের মধ্যে দিয়ে পাঠিয়ে দিল সত্তর–দশ।

নিচে গ্রিফিন্ডর সমর্থকরা চিৎকার করে গলা ফাটাচ্ছে–গ্রিফিন্ডর এখন ষাট পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে, এখন যদি হ্যারি মিচটা ধরতে পারে তাহলে কাপটাও ওদের। উপরের দিকে উঠে গেল ও মনে হচ্ছে পেছনে পেছনে শত শত চোখ ওকে অনুসরণ করছে, সবার উপরে উঠে গেল, পেছনে ধেয়ে আসছে ম্যালফয়।

এবং তখন সে দেখতে পেল ওটা। ওর কুড়ি ফুট উপরে দ্যুতি ছড়াচ্ছে মিচটা।

প্রচণ্ড বেগে উপরে উঠতে শুরু করল হ্যারি, কানে যেন বাতাস গর্জন করছে; হাত মেলে দিল, কিন্তু হঠাৎ, ফায়ারবোল্ট-এর গতি কমতে শুরু করল

সন্ত্রস্ত হ্যারি চারদিকে তাকাল। সামনের দিকে লাফ দিয়ে ম্যালফয় ফায়ারবোল্টের লেজটা ধরে ফেলে পেছন দিকে টানছে।

তুমি!

ম্যালফয়কে মারার জন্য যথেষ্ট ক্ষেপে গেল হ্যারি কিন্তু ধরতে পারল না ওকে। ফায়ারবোল্ট আঁকড়ে ধরার ক্লান্তিতে ও তখন হাঁপাচ্ছে, কিন্তু ওর চোখ থেকে ঠিকরে পড়ছে বিদ্বেষ। ও যা চেয়েছিল তা করতে পেরেছে মিচটা আবার অদৃশ্য হয়ে গেছে।

পেনাল্টি! গ্রিফিন্ডরের পক্ষে পেনাল্টি! এরকম অপকৌশল আমি কখনও দেখিনি! তীক্ষ্ণ চিৎকার করে উঠলেন মাদাম হুচ, উড়ে গেলেন উপরে।

মেগাফোনে তখন চিৎকার করছে লি জর্ডন এই চোট্টা বদমাশ!, প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের নাগালের বাইরে গিয়ে নোংরা, চোট্টা।

প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আসলে ওকে নিয়ে মোটেই ভাবছিলেন না, ম্যালফয়ের দিকে মুঠো পাকিয়ে হাত ছুড়ছিলেন; ওর মাথা থেকে হ্যাট পড়ে গেছে এবং তিনিও জোরে চিৎকার করছিলেন।

গ্রিফিন্ডরের পক্ষে পেনাল্টি নিল অ্যালিসিয়া, কিন্তু এত ক্ষিপ্ত হয়েছিল সে, যে কয়েক ফুট দূর দিয়ে মারল। গ্রিফিন্ডর টিম যেন খেলায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে, এবং স্লিথারিনরা ম্যালফয়ের ফাউলের জন্য খুব খুশি।

এখন স্লিথারিনদের দখলে, গোলের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে–স্কোর করল মন্টেগু– লির আর্তচিৎকার। সত্তর–কুড়ি গ্রিফিন্ডারের পক্ষে…

হ্যারি এখন নিজেই খুব কাছে থেকেই ম্যালফয়ের উপর নজর রাখছে, এত কাছে যে ওদের হাঁটু পরস্পরের সঙ্গে প্রায় ছোঁয়া লাগছে। মিচের ধারেকাছে ম্যালফয়কে যেতে দেবে না হ্যারি

এখান থেকে দূরে সর পটার! হতাশায় চিৎকার করে উঠল ম্যালফয়, ঘুরল আবার হ্যারিকে পেল ওর পথ আটকে রয়েছে।

গ্রিফিন্ডরের পক্ষে অ্যাঞ্জালিনা জনসনের হাতে কোয়াফল, শাবাশ, অ্যাঞ্জলিনা, শাবাশ!

চারদিকে চোখ বুলালো হ্যারি প্রত্যেকটি স্লিথারিন প্লেয়ার, ম্যালফয় বাদে, এমনকি কিপার পর্যন্ত অ্যাঞ্জলিনার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে–সবাই মিলে ওকে আটকে দেবে।

হ্যারি ফায়ারবোল্টটাকে চট করে ঘুরিয়ে নিল, এত নিচু করে যে, সে হাতল বরাবর শুয়ে পড়ল প্রায় এবং সামনের দিকে বুলেটের মতো এগিয়ে গেল স্লিথানিরদের দিকে।

আআআআআরররঘ!

ওদের দিকে ফায়ারবোল্টটা এগিয়ে যেতেই ওরা সবাই ছড়িয়ে পড়ল; অ্যাঞ্জালিনার পথ পরিষ্কার।

স্কোর করেছে! স্কোর করেছে! আশি–কুড়ি গ্রিফিন্ডরের পক্ষে!

হ্যারি, গোলপোস্টের সঙ্গে ওর মাথার সংঘর্ষ হচ্ছিল প্রায়, হড়কে গিয়ে মধ্য আকাশে থামল, উল্টো দিকে ঘুরল এবং পিচের মধ্যখানে আবার উড়ে গেল।

এবং এর পর যা দেখল তাতে তার হৃৎপিণ্ডটা বন্ধ হয়ে গেল প্রায়। ডাইভ দিয়েছে ম্যালফয়, ওর চেহারায় বিজয়ীর ভাব–নিচে ঘাসের ফুটখানেক উপরে ছোট্ট একটি সোনালী বল চকচক করছে।

ফায়ারবোল্টটাকে নিচের দিকে ঘুরিয়ে নিল হ্যারি কিন্তু অনেক এগিয়ে আছে ম্যালফয়।

এগিয়ে যাও! আরও এগিয়ে যাও! ব্রুমটাকে নির্দেশ দিল হ্যারি। ম্যালফয়ের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে… ব্রুমের হাতলে শুয়ে পড়ল হ্যারি বোলের পাঠানো ব্লাজারটাকে… ম্যালফয়ের গোড়ালির কাছে পৌঁছে গেছে সে… এবার সমান সমান পাশাপাশি…।

সামনের দিকে নিজেকে ছড়িয়ে দিল হ্যারি, ব্রুম থেকে দুহাত তুলে নিয়েছে। ম্যালফয়ের হাতটাকে সামনে থেকে সরিয়ে দিল এবং

হ্যা!

ডাইভ থেকে সরে গেল হ্যারি, বাতাসে হাত, এবং ফেটে পড়ল গোটা স্টেডিয়াম। উপরে আকাশের দিকে উড়ে গেল কানের কাছে বাজছে অদ্ভুত শব্দ। ক্ষুদে সোনালী বলটা ওর মুঠোয় শক্ত করে ধরা, আঙুলের সঙ্গে বাড়ি মারছে ওটার পাখা।

ওর দিকে ছুটে আসছে উড, চোখ দিয়ে পড়ছে জল, প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে চোখ; হ্যারিকে জড়িয়ে ধরে কাঁধের উপরে মাথা রেখে কেঁদে ফেলল সে। ওদের উপরে গিয়ে পড়ল ফ্রেড এবং জর্জ, তারপরে অ্যাঞ্জালিনা, অ্যালিসিয়া এবং কেটির গলা শোনা গেল, আমরা কাপ জিতে নিয়েছি। আমরা কাপ জিতেছি! জড়াজড়ি করে নিচে নামল গ্রিফিন্ডর টিম, চিৎকার করে গলা ফাটাচ্ছে।

পিচের পাশের বাধা টপকিয়ে শত শত সমর্থক ওদের দিকে ছুটে আসছে।  হ্যারির মধ্যে বিভ্রান্ত একটা ভাব এল ও শুধু শব্দ শুনছে আর অনুভব করছে ওকে জাপটে ধরেছে অনেক মানুষ। এরপর, তাকে এবং টিমের সবাইকে কাঁধের উপরে তুলে নিল উফুল্ল সমর্থকরা। আলোয় এসে ও দেখতে পেল হ্যাগ্রিডকে, লাল গোলাপে মোড়া–তাহলে ওদেরকে হারালে হ্যারি, হারালে ওদের! বাকবিককে খবরটা দিচ্ছি! ওই যে পার্সি পাগলের মতো লাফাচ্ছে, ওর সব মর্যাদা ভুলে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল কাঁদছেন এবং উডের চেয়েও বেশি। গ্রিফিন্ডর পতাকা দিয়ে চোখ মুছছেন। ভিড় ঠেলে হ্যারির দিকে ছুটে আসছে রন এবং হারমিওন। ওদের মুখে কথা নেই। শুধু হাসি, হ্যারিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে স্ট্যান্ডের দিকে, ওখানে ডাম্বলডোর দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিশাল কুইডিচ কাপ নিয়ে।

যদি এখন আশেপাশে কোন ডিমেন্টার থাকত… কান্না ভেজা চোখে যখন উড কাপটা হ্যারির দিকে বাড়িয়ে দিল এবং সে ওটা উপরে তুলে ধরল, ভাবল বিশ্বের সবচেয়ে ভালো পেট্রোনাস তৈরি করতে পারত সে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *