ফটিকচাঁদ – অধ্যায় ১৩

ফটিকচাঁদ – অধ্যায় ১৩

শরদিন্দু সান্যাল তাঁর ক্লার্ক রজনীবাবুকে বললেন, ‘আজকাল কাগজ আর ছাপা যা হয়েছে—এ বলে আমায় দ্যাখ, ও বলে আমায় দ্যাখ।…বাবলুর এমন সুন্দর ছবিটাকে এইভাবে ছেপেছে?’

‘আপনি এইটে দেখেছেন স্যার?’—বলে রজনীবাবু একটা ইংরিজি কাগজ মিস্টার সান্যালের দিকে এগিয়ে দিলেন। ‘ওতে কিন্তু বাবলু বলে চিনতে অসুবিধে হয় না।’

শরদিন্দু সান্যালের সামনে ডাঁই করা খবরের কাগজ। রজনীবাবুকে বলাই ছিল উনি যেন আসার সময় কিনে আনেন। এমনিতে রজনীবাবু সাড়ে-আটটায় আসেন। আজ তাড়াতাড়ি আসার কারণ, সান্যাল সাহেবের বিশ্বাস, কাগজে বিজ্ঞাপন দেখেই যতসব আজেবাজে লোক টাকার লোভে যেখান-সেখান থেকে ছেলে ধরে এনে তাঁর সামনে হাজির করবে। তখন ব্যাপারটা যাতে বেসামাল না হয়ে পড়ে, তার জন্য সেজো ছেলে প্রীতীন আর বেয়ারা কিশোরীলাল ছাড়াও তিনি রজনীবাবু ও জুনিয়র ব্যারিস্টার তপন সরকারকে সকাল সকাল আসতে বলেছেন। সরকার এখনও আসেননি, আর প্রীতীনের এখনও ঘুম ভাঙেনি। সে রাত জেগে পরীক্ষার পড়া করেছে। আজই দুপুরে সে খড়্গপুর ফিরে যাবে।

বাইরে একটা ট্যাক্সি থামার আওয়াজ পেয়ে মিস্টার সান্যাল হাত থেকে কফির পেয়ালাটা নামিয়ে রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, ‘এই শুরু হল।’ শুরুতেই যে শেষ সেটা শরদিন্দু সান্যাল ভাবতে পারেননি।

‘বাবা!’

এ কী, এ যে বাবলুর গলা!

শরদিন্দু সান্যালের দৃষ্টি পরদাওয়ালা বাইরের দরজাটার দিকে চলে গেল। তার ঠিক পরেই পরদা ফাঁক করে বাবলু এসে ঢুকল ঘরে।

‘কী ব্যাপার? কোথায় ছিলি অ্যাদ্দিন? কে আনল তোকে? এ কী, তোর চুলের এ কী দশা?’

প্রশ্নগুলো এক নিশ্বাসে করে গেলেন শরদিন্দু সান্যাল; এবং করেই একটা পরম স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে তাঁর চেয়ারে গা এলিয়ে দিলেন—যেন উত্তরগুলো জানাটা বড় কথা নয়, ছেলে ফিরে এসেছে সেটাই বড়।

তারপরেই তাঁর চোখ গেল বাবলুর পাশে পরদার ফাঁক দিয়ে বাইরে বারান্দায় দাঁড়ানো লোকটার দিকে। ‘আপনি ভেতরে আসুন’, বললেন মিস্টার সান্যাল। যেই হোক না কেন, ভিতরে ডাকতেই হবে; একটা পুরস্কারের ব্যাপার আছে তো।

লোকটা দরজার দিকে এগিয়ে এল। মিস্টার সান্যাল রজনীবাবুর দিকে ফিরে বললেন, ‘দারোয়ানকে বলে দিন বাচ্চা ছেলে সঙ্গে করে কেউ এলে যেন ঢুকতে না দেয়। বলুন, যেন বলে দেয় যে ছেলে ফিরে এসেছে।’

রজনীবাবু হুকুম তামিল করতে চলে গেলেন। পরদা ফাঁক হতেই মিস্টার সান্যাল দেখলেন যে, লোকটা দরজার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

একে ভদ্রলোক বলা যায় কি? মিস্টার সান্যাল ভেবে স্থির করলেন—না, যায় না। শার্টটা সস্তা এবং ময়লা, পায়ের চটিটা ক্ষয়ে গেছে, সাদা সুতির প্যান্টটায় অজস্র ভাঁজ। আর ওরকম চুল আর ঝুলপি—অবশ্য না, ওগুলোকে অভদ্র বলা মুশকিল, কারণ তার নিজের সেজো ছেলে প্রীতীন্দ্রর চুল আর ঝুলপিও তো কতকটা ওইরকমই।

‘ভেতরে এসো।’

হারুন চৌকাঠ পেরিয়ে এল।

‘কী নাম তোমার?’

‘ও হারুনদা, বাবা। আর্টিস্ট। দারুণ খেলা দেখায়।’

শরদিন্দু সান্যাল তাঁর সদ্য-ফিরে-পাওয়া ছেলের দিকে একটু বিরক্তভাবেই চেয়ে বললেন, ‘তুমি থামো বাবলু। ওকে বলতে দাও। তুমি বরং ওপরে যাও। ঠামাকে গিয়ে বলো, তুমি ফিরে এসেছ—বড় কষ্ট পেয়েছেন এ ক’টা দিন। আর ছোড়দাও আছে। ঘুমোচ্ছে। ওকে তুলে দাও গিয়ে।’

বাবলুর কিন্তু এত তাড়াতাড়ি যাবার ইচ্ছে নেই। হারুনদাকে ফেলে সে যাবে কী করে? ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় গিয়ে বাবার চোখের আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে রইল বাবলু। ও হারুনদাকে দেখতে পাচ্ছে। ওর পিছন দিকটা।

শরদিন্দু সান্যাল আবার লোকটার দিকে চাইলেন।

‘শুনি তোমার ব্যাপার।’

‘ও খড়্গপুর থেকে আমার সঙ্গে এসেছে। চলন্ত ট্রেনে ওঠার চেষ্টা করছিল। আমি টেনে তুলি। তারপর থেকে এখানেই ছিল।’

‘এখানে মানে?’

‘কলকাতায় বেনটিং ইস্ট্রিটে। একটা চায়ের দোকানে।’

‘চায়ের দোকানে?’ মিস্টার সান্যালের চোখ কপালে উঠে গেছে। ‘কী করছিল চায়ের দোকানে?’

‘কাজ করছিল স্যার?’

‘কাজ? কী কাজ?’ মিস্টার সান্যাল যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করছেন না।

হারুন বলল। মিস্টার সান্যালের মাথায় চুল প্রায় নেই বললেই চলে, থাকলে বোধহয় বেশ কয়েক গাছা ছিঁড়ে ফেলতেন।

‘হোয়াট ইজ অল্ দিস!’ চেয়ার ছেড়ে চেঁচিয়ে উঠলেন মিস্টার সান্যাল—‘এ কি মগের মুল্লুক নাকি? ওকে দিয়ে চায়ের দোকানের বয়ের কাজ করিয়েছ? তোমার কাণ্ডজ্ঞান নেই? দেখে বুঝলে না, ও ভদ্রলোকের ছেলে?’

বাবলু আর থাকতে পারল না। ও বারান্দা থেকে দৌড়ে এসে ঘরে ঢুকে বলল, ‘আমার খুব ভাল লাগছিল কাজ করতে বাবা!’

‘চুপ করো!’—গর্জন করে উঠলেন মিস্টার সান্যাল। ‘তোমাকে বললাম না ওপরে যেতে?’

বাবলু আবার দরজার বাইরে চলে গেল। অ্যাদ্দিন পরে বাড়িতে ফিরে এসে যে এরকম একটা ব্যাপার হবে, সেটা ও ভাবতেই পারেনি।

হারুন এখনও শান্তভাবেই দাঁড়িয়ে আছে, আর শান্তভাবেই সে বলল, ‘আমি যদি জানতুম ও কোন বাড়ির—তা হলে কি আর আমার কাছে রাখতুম স্যার। ও যে বলতে পারলে না। ওর কিছু মনে ছিল না।’

‘আর আজ কাগজে বেরোনোমাত্র সব মনে পড়ে গেল?’

মিস্টার সান্যাল যে হারুনের কথা মোটেই বিশ্বাস করছেন না, সেটা তাঁর প্রশ্নের সুর থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল। হারুন কথাটা শুনে একটু অবাক হল।

‘কাগজের কথা কী বলছেন জানি না স্যার। ওর মনে পড়েছে কাল রাত্তিরে! কাল বাদলা ছিল তাই আর আনিনি। আজ নিয়ে এলুম, আপনার হাতে তুলে দিলুম—ব্যস্‌, আমার ডিউটি ফিনিশ। তবে, ইয়ে, ওর মাথার একটা জায়গায় দেখবেন একটু ফোলা আছে। মাঝে মাঝে ব্যথা হয়। যদি ডাক্তার-ফাক্তার দেখান, তাই জানিয়ে দিলুম।…চলি রে ফট্‌কে।’

ফটিকচাঁদ - অধ্যায় ১৩

হারুনদা চলে গেল। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাবলু ব্যাপারটা ভাল করে বোঝবার আগেই ওকে বাবা ডাকলেন। ‘বাবলু, একবার এদিকে এসো।’

ও এল। টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল। শরদিন্দু সান্যাল ছেলের মাথার দিকে হাত বাড়ালেন। ‘কোথায় ফোলা রে?’

বাবলু দেখাল। সত্যিই ফোলাটা এখনও পুরোপুরি যায়নি। পাছে ব্যথা লাগে, তাই মিস্টার সান্যাল আর সেখানে হাত দিলেন না।

‘খুব কষ্ট হয়েছে এ-ক’দিন?’

ও মাথা নাড়ল। না, হয়নি!

‘ওপরে যাও। হরিনাথকে বলো, গরম জলে বেশ করে চান করিয়ে দেবে। আজ তোমার ছুটি। আজ ডাক্তারবাবু এসে তোমাকে দেখবেন। যদি বলেন যে ঠিক আছে, তা হলে কাল থেকে তুমি আবার ইস্কুলে যাবে। এবার থেকে রোজ গাড়িতে। …যাও।’

ও চলে গেল।

মিস্টার সান্যাল সামনে টেবিলের উপর থেকে খবরের কাগজের স্তূপটা হাতের একটা বিরক্ত ঝাঁটে একপাশে সরিয়ে দিয়ে বললেন, ‘চায়ের দোকান! ফুঃ!’ তারপর রজনীবাবুর দিকে ফিরে বললেন, ‘চায়ের দোকান! ভাবতে পারো?’

রজনীবাবু কেবল একটা কথাই ভাবছিলেন—যদিও সেটা তাঁর মনিবকে বলা যায় না, কারণ কথাটা তাঁর সম্পর্কেই। তিনি ভাবছিলেন যে, যে-লোকটা বাবলুকে ফেরত দিয়ে গেল, তার খবরের কাগজ না-দেখার সুযোগটা নিয়ে মিস্টার সান্যাল তাকে পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করে কাজটা বোধহয় ভাল করলেন না।

ঘণ্টাখানেক পরে মিস্টার সান্যাল দারোগা মিস্টার চন্দর কাছ থেকে একটা ফোন পেলেন।

‘আপনার বিজ্ঞাপনের কোনও ফল পেলেন?’ জিজ্ঞেস করলেন দারোগা সাহেব।

উত্তরে মিস্টার সান্যাল যা বললেন তাতে তিনি খুশি তো হলেনই, সঙ্গে সঙ্গে অবাকও হলেন রীতিমতো। বললেন, ‘আশ্চর্য ব্যাপার স্যার!—একেকটা সময় আসে যখন মনে হয়, এগোবার বুঝি আর রাস্তা নেই। আবার তারপরেই হঠাৎ দেখবেন, ম্যাজিকের মতো সব রাস্তা খুলে গেছে। আপনার ছেলেও ফিরল, আর তার সঙ্গে সঙ্গে সেই গ্যাং-এর দুটি লোকও অ্যারেস্ট হয়ে গেল।’

‘সে কী!’ বললেন মিস্টার সান্যাল। ‘কী করে হল?’

‘একটা লোক ফোন করে তাদের ডেরার হদিস দিয়ে দেয়। আধঘণ্টাও হয়নি, ওদের ঘুম থেকে তুলে ধরে আনা হয়েছে। থানায় এসে ঘুম ছুটে গেছে। পুরো ব্যাপারটা স্বীকার করেছে।’

এই টেলিফোনের দশ মিনিটের মধ্যে বাবলু-চুরির পুরো ব্যাপারটা শরদিন্দু সান্যালের মন থেকে সম্পূর্ণ মুছে গেল।

বাবলুর ঠাকুরমা তাঁর নাতিকে ফিরে পেয়ে কিছুক্ষণ তাকে জড়িয়ে ধরে ‘ধন আমার মানিক আমার’ বলে পিঠে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, ওর ব্যথার জায়গাগুলোতে নতুন করে ব্যথা লাগিয়ে দিয়ে, আবার চলে গেলেন তাঁর পুজোর ঘরে। গোপালই তাঁর নাতিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। গোপালের উপর তাঁর ভক্তি তিনগুণ বেড়ে গেছে। বাবলু নতুন করে বুঝেছে যে ঠামার পুজোর ঘণ্টা ওর নিজের ঘর থেকে শোনা গেলেও, আসলে ঠামা থাকেন অনেক দূরে।

ছোড়দা আড়াইটের সময় খড়্গপুর চলে গেল। সে বলল, ‘ভাবতে পারিস, তুই রয়েছিস খড়্গপুরে, নিজের নাম বাপের নাম সব ভুলে রাস্তায় ফ্যা-ফ্যা করে বেড়াচ্ছিস, আর আমিও রয়েছি সেই একই শহরে মাইলখানেকের মধ্যে, অথচ কিছুই জানতে পারলাম না। স্কাউন্ড্রেল দুটোকে হাতের কাছে পেলে স্রেফ একটি করে কারাটে চপ—ব্যস্‌, ওদেরও বাপের নাম ভুলিয়ে দেওয়া যেত। …যাক‌, তোকে হোম টাস্ক দিচ্ছি—যা ঘটল তা বেশ গুছিয়ে লিখে ফ্যাল তো ইংরিজিতে। তুই তো “এসে-টেসে” বেশ ভাল লিখতিস। লিখে ফ্যাল। নেক্সট টাইম এসে দেখব।’

এ বাড়িতে বাবলুর নতুন করে দেখার কিছুই নেই। সবই ওর জানা, ওর দেখা। প্রতিটি ঘর, প্রতিটি বারান্দা, প্রতিটি সিঁড়ির ধাপ। ওর নিজের ঘরে দেওয়ালের উপর দিকে একটা জায়গায় ড্যাম্প লেগে নকশা ফুটে উঠেছিল যেটা দেখতে ঠিক যেন আফ্রিকার ম্যাপ। বাবলুর সেটা সম্বন্ধে একটা কৌতূহল ছিল। এবার ফিরে এসে ঘরে গিয়েই দাগটার দিকে চেয়ে দেখল সেটা বেড়ে ছড়িয়ে অনেকটা উত্তর আমেরিকার মতো হয়ে গেছে।

সাড়ে-তিনটের সময় গোলগাল নাদুস-নুদুস ডক্টর বোস এলেন। বাবলু দেখেছে, তার যখন একশো চার জ্বর হয়েছে, তখনও ডাক্তারবাবুর মুখে হাসি। ছোড়দা একবার বলেছিল, ওঁর মুখের মাস্‌লগুলোই নাকি ওই রকম, তাই হাসতে না চাইলেও মুখ হাসি-হাসি দেখায়। হরিনাথ ডাক্তারবাবুর ব্যাগ বয়ে নিয়ে এল। সঙ্গে রজনীকাকুও ছিলেন, আর চৌকাঠের বাইরে পরদা ফাঁক করে পুরু চশমার ভিতর দিয়ে দেখছিল ঠামা। বাবা তখনও কোর্ট থেকে ফেরেনি। ডাক্তারবাবু ঘরে ঢুকেই বললেন, ‘তোমার দাম কত জানো তো বাবলুবাবু? পাঁচটা তুমি হলেই একটা অ্যামবাসাডর হয়ে যায়—হ্যাঁ-হ্যাঁ!’

বাবলু তখন কথাটার মানে বুঝতে পারেনি। বুঝল, যখন ডাক্তারবাবু পরীক্ষা-টরীক্ষা শেষ করে তার পিঠে একটা চাপড় মেরে রজনীকাকুর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ভাগ্যবান পুরুষটি কে মশাই? পাঁচ হাজার ইজ নো জোক!’ —আর রজনীকাকু গলা খাক্‌রিয়ে ‘ওটা, ইয়ে—লোকটির নামটা…মানে…’ বলে থেমে গেলেন। ডাক্তার বোস আর ব্যাপারটা না ঘাঁটিয়ে ‘ওয়েল বাবলুবাবু—একদিন এসে তোমার গপ্‌পো শোনা যাবে, কেমন?’—বলে চলে গেলেন, আর হরিনাথ আর রজনীকাকুও ওঁর পিছন পিছন বেরিয়ে গেল।

বাবলু বুঝতে পারল, বাবা হারুনদাকে ফাঁকি দিয়েছেন। ও আজকাল মাঝে মাঝে খবরের কাগজ দেখে—খেলার খবর দেখে, কোথায় কী সিনেমা হচ্ছে দেখে। ও জানে কাগজে মাঝে মাঝে নিরুদ্দেশের খবর বেরোয়। তাতে যে হারিয়েছে তার ছবি থাকে, আর পুরস্কারের কথা থাকে। বাবাও কি বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন নাকি?

বাবলু নীচে গেল। বাবার আপিস ঘরে থাকে খবরের কাগজ। গিয়ে দেখল, দশটা খবরের কাগজে পাঁচরকম ভাষায় ওর সেই সিঞ্চল লেকের ধারে ছোড়দার তোলা ছবিটা দিয়ে বিজ্ঞাপনটা বেরিয়েছে। ‘হারানো ছেলে নিখিল (ডাকনাম বাবলু) সান্যালের সন্ধান দিতে পারলে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার।’

হারুনদা কাগজ পড়েনি, তাই হারুনদা টাকা চায়নি। এই টাকা হারুনদার পাওনা। না চাইলেও পাওয়া উচিত ছিল। বাবার দেওয়া উচিত ছিল। বাবা দেননি।

বাবলুর মনটা এত ভারী হয়ে গেল যে, সে কিছুক্ষণের জন্য বাগানে গিয়ে পেয়ারা গাছটার তলায় চুপ করে বসে রইল। বাবা হারুনদাকে ফাঁকি দিয়েছেন। টাকাটা পেলে হারুনদা নতুন খেলার জন্য নতুন জিনিস কিনতে পারত, ছোট ঘর ছেড়ে আর-একটু বড় ঘরে গিয়ে থাকতে পারত। হয়তো অনেকদিনের জন্য নিশ্চিন্ত হয়ে যেতে পারত। দিব্যি খেয়ে-পরে হেসে-খেলে গান গেয়ে কাটাতে পারত।

হয়তো ও এতক্ষণে কাগজ পড়ে বিজ্ঞাপনটা দেখে ফেলেছে, আর দেখে না জানি কী ভাবছে!

বাবলু বাগান থেকে বেরিয়ে এল। ওই যে বৈঠকখানা। প্রকাণ্ড বৈঠকখানা। চারদিকে ছড়ানো সোফা, টেবিল, বইয়ের আলমারি, মূর্তি, ছবি, ফুলদানি। কোনওটাতেই এমন রং নেই, যাতে মনটা খুশি হয়। সোফার ঢাকনাগুলো ময়লা হয়ে গেছে, নক্‌শাগুলো প্রায় বোঝাই যায় না। কেউ বদলায়নি, তাই এই দশা। দিদি থাকলে খেয়াল করে বদলে দিত। এখন কেউ করে না।

বাবলু বেশ কিছুক্ষণ একা একটা সোফায় পা তুলে বসে রইল। দেওয়ালের ঘড়িটায় ঢং ঢং করে চারটে বাজল। পাশের বাড়ি থেকে ডিউক কুকুরটা একবার ঘেউ করে উঠল। বোধহয় বারান্দা থেকে কোনও রাস্তার কুকুরকে দেখেছে। হারুনদা সেদিন ওকে বলেছিল রাস্তার কুকুর। বাবলুর মনে হল সেটা হলে তাও ভাল ছিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *