• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১৭. সজল এসে প্রণাম করে

লাইব্রেরি » শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় » উপন্যাস (শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়) » মানবজমিন - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় » ১৭. সজল এসে প্রণাম করে

সজল এসে প্রণাম করে হাসিমুখে দাঁড়াতেই মনটা স্নিগ্ধ হয়ে গেল দীপনাথের। সজলের মুখখানা ভারী মিষ্টি হয়েছে। দু’খানা বুদ্ধিদীপ্ত বড় বড় চোখ, জড়তাহীন ভাবভঙ্গি। চেহারাখানাও বেশ লম্বা এবং কাঠামোটাও মজবুত।

আমাকে চিনতে পারিস, সজল!

হুঁ-উ। বড়কাকা।

এখানে আসব বলে ঠিক ছিল না। তাই তোর জন্য কিছু আনতে পারিনি। বলে মানিব্যাগটা হিপ পকেট থেকে বের করে কুড়িটা টাকা সজলের হাতে দেয় দীপনাথ। বলে, জামাটামা কিছু একটা কিনে নিস।

শ্রীনাথ ধমক দিয়ে বলে, কেন? কোনও পালপার্বণ পড়েছে এখন! কিছু দিতে হবে না।

সজলও হাত গুটিয়ে নিয়ে বলে, না না, আমার এখন জামার দরকার নেই, কাকু। তুমি টাকা রাখো।

দীপনাথ শ্রীনাথকে ধমক দিয়ে বলে, তুমি থামো তো। সজল কি আমার কুটুম নাকি? বলে সজলের দিকে বড় বড় চোখে চেয়ে বলে, কাকার সঙ্গে ভদ্রতা হচ্ছে? এক চড় খাবি। নে!

সজল টাকাটা নেয়। খুব লজ্জার সঙ্গে হাসে।

দীপনাথ মানিব্যাগ পকেটে পুরতে পুরতে বলে, আজেবাজে ব্যাপারে খরচ করিস না। জামা কিনে নিস। লেখাপড়ায় কেমন হয়েছিস? ক্লাসে ফার্স্ট হোস নাকি?

শ্রীনাথ বলে ওঠে, আরে না না। কোনওরকমে পাসটাস করে যায় আর কী। লেখাপড়ায় মনই নেই। অতি বাঁদর।

দীপনাথের নিকট-আত্মীয় বলতে এরাই। বড়দা মল্লিনাথ বিয়েই করেনি। তবে দীপনাথ একবার এক গোপনসূত্রে খবর পেয়েছিল বৈধ সন্তান না থাকলেও নাকি এই রতনপুরেই মল্লিনাথের একজন বাঁধা মেয়েমানুষ ছিল এবং তার গর্ভে মল্লিনাথের এক অবৈধ সন্তানের জন্ম হয়। মল্লিনাথকে বাদ দিলে আর থাকে সে নিজে আর সোমনাথ। সোমনাথের এখনও ছেলেপুলে হয়নি। এখনও পর্যন্ত শ্রীনাথই যা বংশরক্ষা করছে।

বংশরক্ষা কথাটা এ যুগে প্রায় তামাদি হয়ে গেছে। তবু দীপনাথ এই কথাটার মধ্যে এক গভীর মায়া ও তীব্র আকাঙক্ষা বোধ করে।

সে উঠে পড়ে বলল, চল, তোদের বাড়িটা ঘুরে দেখি।

সজল খুব রাজি। বলল, চলো।

কাকাকে সজলের খুব পছন্দ হয়ে গেছে। সে শুনেছে এই কাকা নাকি খুব উদাস ধরনের। সংসারে মন নেই। আত্মীয়দের সঙ্গে তেমন সম্পর্কও নেই। ছোটকাকার মতো এই কাকা কোনওদিন জেঠুর সম্পত্তি দাবি করতে আসেনি।

সজল মুখ তুলে সকালের রোদে দীপনাথের মুখখানা ভাল করে দেখল। উদাস একরকম চোখ। একটু যেন ছটফটে ভঙ্গি। মুখখানা লম্বা ধরনের এবং খুবই সুশ্রী। সব মিলিয়ে কাকাটিকে তার ভীষণ পছন্দ হয়ে যায়।

খ্যাপা নিতাইয়ের ঝোপড়াটা দেখিয়ে দীপনাথ বলে, ওটা কী রে?

নিতাই খ্যাপার ঘর।

কোন নিতাই? সেই যে তান্ত্রিক?

সজল অবাক হয়ে বলে, তুমি চেনো?

চিনব না কেন? বহুকাল আগে বড়দার ফাইফরমাশ খাটত। তখন দেখেছি। তখন অবশ্য তান্ত্রিক হয়নি। এখন কী করে?

ওঃ, সে অনেক কিছু করে। বাণ মারে।

সর্বনাশ! কাকে বাণ মারে?

হি হি করে হাসে সজল। বলে, সবাইকেই মারে। যার ওপর যখন খেপে যায়। একদিন সরিৎমামাকেও বাণ মেরেছিল।

সরিৎ! কোন সবিৎ? বউদির এক ভাই ছিল সরিৎ, সেই নাকি?

হুঁ, সরিৎমামা এখন আমাদের এখানে থাকে।

ওকে বাণ মারল কেন?

সরিৎমামা ওকে মেরেছিল যে! মার নামে কী যেন সব বলেছিল, তাই মেরেছিল।

বউদির নামে?–ভ্রু কুঁচকে বিরক্তির ভাব প্রকাশ করে দীপনাথ বলে, তবে বউদি ওকে এখানে রেখেছে কেন? তাড়িয়ে দিলেই তো হয়।

সজল মাথা নেড়ে বালে, মা ওকে তাড়াবে না।

কেন?

নিতাইদাকে মা খুব ভয় পায়।

পুকুরধারে বিস্ময়ে প্রায় থেমে যায় দীপনাথ। বলল, বউদি ওকে ভয় পায়, বলিস কী রে? ওকে ভয় পাবে কেন?

বাণ মারে যে!

কথাটা দীননাথ হেসেই উড়িয়ে দেয়। তৃষা বউদি খ্যাপা নিতাইয়ের বাণকে ভয় খাওয়ার মেয়ে নয়।

পুকুরের গভীর ছায়াচ্ছন্ন জলের দিকে চেয়ে ছিল দীনাথ। চারদিকে গাছপালার নিবিড়তা। এত সুন্দর ছায়া আর গভীর জল যেন বহুকাল দেখেনি দীনাথ। কী নির্জনতা এখানে। বলল, এ পুকুরে বড়দা অনেক মাছ ছেড়েছিল।

এখনও অনেক মাছ।–সজল আগ্রহের সঙ্গে জবাব দেয়।

মাছগুলো তোরা কী করিস?

মাঝে মাঝে ধরা হয়। ধরলে কাকা? আমার হুইল আছে।

না রে, আজ সময় নেই।

তবে কবে আসবে বলো, সেদিন দুজনে মিলে ধরব।

আসব’খন একদিন।

তুমি রবিবারেরবিবারে আসতে পারো না?

ভারী স্নেহের হাতে সজলের মাথার এক টোকা চুল একটু নেড়ে দেয় দীপনাথ। বলে, তোর বুঝি খুব মাছ ধরার শখ?

খুব। তবে মাছ খাই না।

তা হলে ধরিস কেন?

ভাল লাগে। তুমি কখনও মুরগির গলা কেটেছ কাকু?

দীপনাথ ভ্রু কুঁচকোয় আবার। বলে, না তো! কেন রে?

মুরগি কাটতে খুব ভাল লাগে, না?

দীপনাথ একটু দুশ্চিন্তার দৃষ্টিতে ভাইপোর দিকে তাকায়। মুরগি কাটার মধ্যে ভাল লাগার কী আছে বুঝতে না পেরে মাথা নেড়ে বলে, আমার ভাল লাগে না। অবোলা জীবকে কাটতে ভাল লাগবে কেন? তুই কাটিস নাকি?

লুকিয়ে কেটেছিলাম। মা টের পেয়ে তিন দিন ঘরে বন্ধ করে রেখেছিল।

কাটতেই বা গেলি কেন?

নিতাই কাটে, সরিমা কাটে, লক্ষ্মণ কাটে, তবে আমি কাটলে কী দোষ?

ইতস্তত করে দীপনাথ বলে, দোষ নেই। তবে তোর বয়সে সবাই তো রক্ত দেখলে ভয় পায়।

আমিও পেতাম। এখন পাই না। জানো কাকু, বাবার কাছে একটা দারুণ জার্মান ক্ষুর আছে। সেইটে দিয়ে কাটতে যা ভাল না!

সর্বনাশ! ক্ষুরে হাত দিস নাকি? ভীষণ ধার যে, কখন হাত-ফাত কেটেকুটে ফেলবি।

কাটবে কেন? বাবা তো নিজেই ক্ষুরটা আমাকে দিতে চেয়েছিল। মা দিতে দিল না। তাই নিয়ে দু’জনের কী ঝগড়া! জানো, মা আর বাবার মধ্যে খুব ঝগড়া। কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে না।

দীপনাথ একটু মুশকিলে পড়ে যায়। কারও হাঁড়ির খবরে তার তেমন আগ্রহ নেই। তার ওপর। এই বাচ্চা ভাইপোটার মুখ থেকে পাকা পাকা কথা শুনতে তার ভাল লাগে না। কিন্তু এ বাড়ির আবহাওয়া যে খুব পরিশ্রুত নয় তা সে জানে। যদি এদের জন্য কিছু করা যেত!

দীপ বলল, ঝগড়া নয়। মা-বাবার মধ্যে ওরকম একটু-আধটু হয়েই থাকে।

সজল মাথা নেড়ে বলে, আমার বন্ধুদের মা-বাবার মধ্যে ওরকম হয় না তো।

কী নিয়ে তোর মা-বাবার এত ঝগড়া?

মুখে মুখে ঝগড়া হয় না। কিন্তু দু’জনের সম্পর্ক ভাল না। সবাই জানে। বাবা তো এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।

তোকে কে বলল?

আমরা জানি। বদ্রীকাকু আছে না, ওই যে লাইনের ওধারে থাকে, সে ই বলেছে।

বদ্রীটা আবার কে? যা হোক, হবে কেউ। ভাবে দীপ।

সজল বলে, মা একদিন বদ্রীকাকুকে ডাকিয়ে এনে খুব ধমকাল। বদ্রীকাকু নাকি বাবার জন্য চারদিকে জমি খুজছিল। জমি পেলেই বাবা চলে যাবে।

ও।

মা অবশ্য বদ্রীকাকুকে এমন ভয় দেখিয়েছে যে আর এদিকে আসে না। ছোটকাকুর মতোই অবস্থা।

কেন, ছোটকাকুর আবার কী হয়েছিল?

বাঃ, ছোটকাকুকে দুটো লোক মিলে মারল না? এখনও কেস চলছে তাই নিয়ে।

সে জানি। তার সঙ্গে তোর মায়ের সম্পর্ক কী?

সেই লোক দুটোকে যে আমি চিনি!

তারা কারা? কী নাম?

বললে মা আমাকে মেরে ফেলবে।

বিরক্তি চেপে দীপ বলে, তা হলে বলিস না।

সজল একটু দ্বিধায় পড়ে। আসলে এই বড়কাকুকে তার ভীষণ ভাল লেগে গেছে। একে সে সব কথা বলতে চায়। সে তাই চুপি চুপি বলল, এর পরের বার যখন তুমি আসবে তখন চিনিয়ে দেব। ওই ইটখোলার দিকে থাকে।

দীপ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, চিনেই বা কী করব? তুই বরং ওসব কাউকে বলিস না। সেই লোক দুটো কি তোর মায়ের লোক?

না তো কী? মদনজেঠুর লোক। মদনজেঠুকে বলে মা ওদের কাজে লাগিয়েছিল।

পুকুরপাড় ছেড়ে সবজিবাগানের ধার ঘেঁষে একটা কুলগাছের ছায়ায় এসে পড়েছিল দু’জন। সবজিবাগানে মুনিশ খাটছে। ভারী সুন্দর ফুলকপি বাঁধাকপি হয়ে আছে। এক ফালি জমি ঘন সবুজ ধনেপাতায় ছাওয়া। কঁঠালের ডালে মস্ত মৌচাকে গুন গুন শব্দ।

কিন্তু এই সুন্দর দৃশ্যের ওপর যেন এক বিষণ্ণতার পরদা ঠেলে দিয়েছে কে। দীপ আধখানা চোখে দেখছে। মন অন্যত্র।

সে জিজ্ঞেস করল, তুই খেলাধুলো করিস না?

খুব করি।

কী খেলিস?

ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, সিজনের সময় ফুটবল।

আবার যখন আসব তখন তোর জন্য কী নিয়ে আসব বল তো?

একটা এয়ারগান আনবে? যা দিয়ে পাখি মারা যায়?

পাখি মারবি কেন? টারগেট প্র্যাকটিস করবি?

সরিৎমামা বলেছে আর কিছুদিন পরেই আমাকে আসল বন্দুক চালাতে শিখিয়ে দেবে।

আসল বন্দুক পাবি কোথায়?

জেঠুর বন্দুক থানায় জমা আছে না? মা সেইটে আনাচ্ছে।

বন্দুক দিয়ে তোর মা কী করবে?

আমাদের নাকি অনেক শত্রু।

দীপনাথ হেসে ফেলে। বলে, তাই নাকি?

সজল হাসে না। গম্ভীর মুখ করে বলে, এ জায়গায় কেউ আমাদের দু চোখে দেখতে পারে না। বিশেষ করে মাকে।

কেন?

সবাই বলে, মা নাকি ভাল নয়।

দীপ গম্ভীর হয়ে বলে, ছিঃ সজল, ওসব কখনও মনে ভাববে না। বলবেও না কাউকে। তোমার মাকে আমি বহুকাল চিনি। উনি খুব ভাল।

আমি তো খারাপ বলিনি। লোকে বলে।

লোকে যা খুশি বলুক, কান দিয়ো না।

তুমি এখানে এসে থাকবে, কাকু? থাকো না, খুব মজা হবে তা হলো এখানে একটাও ভাল লোক নেই।

আমি যে ভাল তোকে কে বলল?

আমি জানি। মাও বলে।

মা কী বলে?

বলে ভাইয়েদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল হল বড় ঠাকুরপো। সাতে-পাঁচে থাকে না, নিজের মনে আছে।

বলে বুঝি?

তুমি থাকলে এখানকার লোকেরা আমাদের পিছনে লাগবে না।

এখন লাগে বুঝি?

ভীষণ। স্কুলেও আলোচনা হয়। সবাই বলে, আমরা নাকি জেঠুকে ঠকিয়ে সব সম্পত্তি নিয়ে নিয়েছি। এমনও বলে, মা নাকি জেঠুকে বিষ খাইয়ে মেরেছে।

যাঃ।— বলতে বলতে তারা একটা ডাঙা জমিতে উঠল।

সামনেই মেহেদির বেড়া। তারপর উঠোন। অন্তঃপুর।

আগড় ঠেলে উঠোনে পা দেওয়ার আগে সজল মুখ ফিরিয়ে বলল, আজ দাদুর আসার কথা, জানো?

জানি।

দাদু এলে খুব মজা হবে। আমি দাদুকে যা খ্যাপাই না!

খ্যাপাবি কেন? দাদু বুঝি বন্ধু?

তা নয়। ভাল লাগে। দাদু যে একটুতেই রেগে যায়।

রাগলেই বুঝি রাগাতে হবে?

কথা কইতে কইতে তারা উঠোনে ঢোকে।

মঞ্জু ছুটে এসে দীপনাথের হাত ধরে বলে, উঃ কাকু, ভদ্রমহিলা যা স্মার্ট না!

দীপ একটু হাসে। বলে, তা তো বুঝতেই পারছি। ভদ্রমহিলাকে পেয়ে কাকাকে একদম ভুলে গেছিস। একবার কাছেও গেলি না।

বড় বড় চোখে চেয়ে মঞ্জু বলে, আহা, তুমি তো আসবেই। উনি তো আর আসবেন না। এত সুন্দর কথা বলেন না, কী বলব!

খুব ভাব হয়ে গেছে তোদের?

ভীষণ। আর একটু থাকবে, কাকু?

উপায় নেই রে। লাঞ্চে ফিরে যেতে হবে।

আর কতক্ষণ?

দীপ ঘড়ি দেখে বলে, বড় জোর ঘণ্টাখানেক।

উনি কিন্তু যেতে চাইছেন না।

সে কী?

হ্যাঁ গো। বার বার বলছেন, তোমাদের বাড়িটা আমার খুব ভাল লেগে গেছে। ইচ্ছে হচ্ছে সারা দিনটা এখানেই কাটিয়ে যাই। থাকবে কাকু সারাদিন?

তাই হয় না কি? চারদিকে খোঁজ পড়ে যাবে। শোন, গাড়ির ড্রাইভারটা বসে আছে, ওকে একটু চা-টা পাঠিয়ে দিস শে।

ওঃ, সে কখন দিয়ে এসেছে মংলু! চা, পরোটা, ডিমভাজা। তোমাদের জন্য মা তাড়াতাড়ি কিমারি তৈরি করছে।

ওরে বাবা, এখন ওসব খেলে লাঞ্চ খাব কোন পেটে?

পারবে। এসো না আমাদের ঘরে। মণিদি কীরকম গল্প করছে দেখে যাও।

দীপনাথ হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে, দুর পাগলি। মেয়েমহলে পুরুষদের যেতে নেই। তুই বরং ওঁকে গিয়ে বল, হাতের ঘড়িটার দিকে যেন একটু নজর রাখে।

দাদুর সঙ্গে দেখা করে যাবে না? আজ ছোটকাকু দাদুকে নিয়ে আসবে যে!

আজ যদি দেখা না হয় তবে অন্য দিন আসব।

সজল গেল না। মঞ্জু দৌড়ে চলে গেল মণিদীপার গল্প শুনতে। দীপ আনমনে চিন্তা করে, মণিদীপা ওদেরও কমিউনিজম বোঝাচ্ছে না তোর

রান্নাঘরের দরজায় গিয়ে দীপনাথ ডাকল, বউদি!

তৃষা দারুণ সুন্দর গন্ধ ছড়িয়ে কিমা রান্না করছিল। দুটো বিশাল চোখে ফিরে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল, অন্যের বউ নিয়ে টানাটানি না করে নিজে একটা বউ জুটিয়ে নিলেই তো হয়।

ভীষণ বিব্রত বোধ করে লাল হয়ে গেল দীপনাথ। বলল, যাঃ, কী যে বলো!

অন্যের বউটি অবশ্য সাংঘাতিক স্মার্ট। সুন্দরীও।

তাতেই বা আমার কী?

তৃষা রান্নার ভার বৃন্দার হাতে ছেড়ে বেরিয়ে আসে। বলে, এসো, আমার ঘরে বসবে।

দীপনাথ তুমার পিছু পিছু এসে যে ঘরটায় ঢোকে সেটাতেই এক সময় বড়দা মল্লিনাথ থাকত। চমৎকার পাকা ঘর। আবলুস কাঠের দেয়াল-আলমারি, বন্দুকের স্ট্যান্ড থেকে এইচ এম ভি-র বাক্স গ্রামোফোনটি পর্যন্ত এখনও সযত্নে সাজানো। বিশাল একখানা চিত্র-বিচিত্র খাট। একপাশে টেবিল। হল্যান্ডের ফিলিপস রেডিয়ো।

দীপনাথ বহুকাল বাদে এই ঘরে এল। তৃষা বলল, অবশ্য রংটা আমার মতোই।

কার রং?–দীপ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।

মণিদীপার। তোমার বন্ধুর বউ নাকি?

বন্ধু নয়! বস। ওপরওয়ালা।

বস মানে জানি মশাই, বাংলা করে বলতে হবে না।

দীপ হাসে। বলে, আমি আনিনি। উনিই আসতে চাইলেন।

আজকালকার মেয়েদের কোনও জড়তা নেই। লজ্জা-উজ্জাও কম। আমরা হলে পাঁচটা কথা উঠে পড়ত।

কথা ওঠার ব্যাপার নয় বউদি। দিনের বেলায় সামান্য আউটিং। দোষের কিছু দেখলে নাকি?

তৃষা মাথা নেড়ে বলে, দোষের কী দেখব আবার, তবে একটা জিনিস দেখে একটু মজা পেয়েছি।

কী সেটা?

মেয়েটা দু’-পাঁচ মিনিট পর পরই তোমার খোঁজ করছে। উনি কোথায় গেলেন? দূরে যাননি তো? উনি যদি চা খান তা হলে আমিও খাব।

দীপনাথ আবার লাল হয়। বুকের মধ্যে এমন একটা শিবশিৱানি ওঠে যে গায়ে কাঁটা দিতে থাকে।

Category: মানবজমিন - শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
পূর্ববর্তী:
« ১৬. রবিবার দিনটা দীপনাথের নিরঙ্কুশ ছুটি
পরবর্তী:
১৮. তৃষা দীপনাথকে বসিয়ে রেখে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑