• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১৬. মেজর দুলছিলেন

লাইব্রেরি » সমরেশ মজুমদার » অর্জুন সমগ্র - সমরেশ মজুমদার » ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬) » ১৬. মেজর দুলছিলেন

মেজর দুলছিলেন। তাঁর ভয় হচ্ছিল খুব, পা শিরশির করছিল। গাছের ডাল বেশ সরু হয়ে এসেছে, আর এগোলে তাঁর ভার রাখতে পারবে বলে মনে হচ্ছিল না। অথচ ফুলটাকে তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন। এত বড় গাছে মাত্র একটি সাদা ফুল ফুটে আছে।

অর্জুনরা চলে যাওয়ার পর কী করে সময় কাটাবেন, ভেবে পাচ্ছিলেন না মেজর। তার ওপর একমাত্র অস্ত্রটি ওকে দিয়ে দেওয়ার পর বেশ অসহায় লাগছিল তাঁর। মনে হচ্ছিল, ওপরে বেশ রুদ্ধশ্বাস নাটক হচ্ছে এবং তিনি তার সাক্ষী হতে পারলেন না। এই সব ভাবতে ভাবতে দেখতে পেলেন দুটো লোক পাহাড় থেকে নেমে আসছে গল্প করতে করতে। ওরা এখানে এসেও বেশ ব্রেকফাস্ট করছে ভাবার পর তাঁর খুব রাগ হল। তবু তিনি নিজেকে লুকিয়ে বাখার জন্য জঙ্গলের ভেতরে চলে এলেন। খানিকটা হাঁটার পর তার চোখে পড়ল মাটিতে ঘাসের ওপর অনেক মৌমাছি মরে পড়ে আছে। খামোখা এত মৌমাছি দল বেঁধে এক জায়গায় মরতে গেল কেন, বোঝার চেষ্টা করতে তিনি পা মুড়ে বসলেন। আজ পর্যন্ত তিনি কখনওই শোনেননি মৌমাছিরা গণ-আত্মহত্যা করে। এই সব যখন ভাবছেন, ঠিক তখনই তাঁর দাড়িতে কিছু একটা ওপর থেকে পড়ে আটকে গেল। হাত দিয়ে দাড়ির জঙ্গল থেকে যে বস্তুটি টেনে বের করলেন, সেটি একটি মৌমাছির মৃতদেহ। সঙ্গে সঙ্গে ওপরে তাকালেন তিনি। ঘন পাতা এবং অনেক ডালের ওপরে ঠিক কী আছে তা ঠাহর করতে পারলেন না নীচ থেকে। মৌমাছির চাক থেকে মধু শেষ হয়ে গেলে এ রকম হতেও পারে। কিন্তু মেজরের মনে হয়েছিল ব্যাপারটা দেখা উচিত। তাঁর শরীর ভারী, গাছ বেয়ে ওপরে ওঠায় বেশ ঝুঁকি আছে। তবু মেজর উঠতে লাগলেন। তাঁকে বেশ পরিশ্রম করতে হচ্ছিল। প্রায় ঘোরের মধ্যে তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন। মোটা ডাল সরু হচ্ছে যখন, তখন তিনি দেখতে পেলেন। বেশ বড় গ্ল্যাণ্ডিফ্লোরার মতো একটা সাদা ফুল ফুটে আছে অনেক ওপরে। ফুলটা একদম একা, এই গাছে দ্বিতীয় কোনও ফুল ফোটেনি। তারপর তিনি আবিষ্কার করলেন, ওই ডালের কাছাকাছি কোনও পাখি বসেনি, মৌমাছিদের দেখা যাচ্ছে না আশেপাশে। একটা সুন্দর তরতাজা সাদা ফুল, বেশ গম্ভীর ধরনের। হঠাৎ তাঁর মনে হল এই ফুল সেই ফুল হয়তো, যার গল্প তিনি আমেরিকায় বসে শুনেছেন। হওয়া অসম্ভব নয়। মৌমাছিগুলো ঠিক ওর নীচে মাটিতে মরে পড়বে কেন? নিশ্চয়ই ওই ফুলের গন্ধে বিষ আছে।

মেজর যখন উত্তেজনায় অস্থির, ঠিক তখনই গাছের নীচে এসে দাঁড়াল নীল চ্যাটার্জি। পাহাড়ের ওপর থেকে গাছের ডালে ঝোলা লোকটিকে খুঁজে পেতে তার বিন্দুমাত্র অসুবিধে হয়নি। ওপরের দিকে তাকিয়ে মেজরকে তার ভাল্লুকের মতো মনে হল। হাতের অস্ত্রটি উঁচিয়ে সে চিৎকার করল, অ্যাই? কে তুই?

সঙ্গে-সঙ্গে মেজর স্থির হয়ে গেলেন। কোনও মতে মুখটা নীচের দিকে ফেরাতেই তিনি নীলকে দেখতে পেলেন। ওইটুকুনি একটা ছোকরা তাঁকে তুই বলে সম্বোধন করছে শুনেও নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারলেন না। কিন্তু তাঁর মনে হল, সঙ্গে কোনও অস্ত্র নেই, অমল সোম বলেছিলেন গা-ঢাকা দিয়ে থাকতে, সেটা ব্যর্থ হল।

মেজরের মুখ দেখামাত্র নীল তাঁকে চিনতে পারল। সে চিৎকার করল, ঝটপট নেমে এসো, নইলে গুলি চালাব। অজান্তেই তুই থেকে তুমিতে সরে এল সে।

মেজর বুঝলেন তাঁর আর কিছু করার নেই। ফুলটির দিকে তাকালেন তিনি। এখনও অনেকটা দূরত্বে রয়েছে সেটা। একটা আঁকশি থাকলে টেনে আনা যেত। তিনি ওই অবস্থায় বললেন, নেমে এলে ফুলটাকে পাওয়া যাবে না।

ফুল মানে? কী ফুল? নীচ থেকে নীল চ্যাটার্জি চেঁচাল।

মনে হচ্ছে ওটা বিষফুল!

নেমে না এলে ওই ফুল তোমাকে খাওয়াব চাঁদু।

অ্যাই, ওইভাবে কথা বলো না। তুমি আমার হাঁটুর বয়সী।

সঙ্গে সঙ্গে গুলি চালাল নীল। একটাই গুলি। সেটা মেজরের ডান দিক দিয়ে বেরিয়ে গেল। মেজরের শরীর কাঁপতে লাগল। ছেলেটা উন্মাদ। তিনি নামার চেষ্টা করলেন। কিন্তু গাছ বেয়ে ওপরে ওঠা যত সহজ, নামা ঠিক ততই কঠিন। দু-দুবার পড়তে-পড়তে সামলে নিয়ে তিনি আর্তনাদ করলেন, আমি নামতে পারছি না।

ওঠার সময় খেয়াল ছিল না? ট্রাই, ট্রাই এগেন। নীল চিৎকার করতেই দুটো লোক ছুটে এল। ওরা গুলির আওয়াজ পেয়েই এসেছে। নীলের দৃষ্টি অনুসরণ করে ওপরের দিকে তাকাতেই দুজনে হেসে উঠল। নীল বলল, লোকটাকে নামিয়ে আনো। জলদি।

অনেক কসরত করে ওরা মেজরকে মাটিতে নামাতে পারল। মেজর তখন থরথর করে কাঁপছিলেন। গাছে চড়া তাঁর অভ্যেস নেই। জামাকাপড়ের অবস্থা সঙ্গিন হয়ে গেছে।

নীল সামনে এসে দাঁড়াল, এখানে কেন এসেছ?

মেজর হঠাৎ স্মার্ট হয়ে গেলেন, ফুল, ফুল খুঁজতে।

কী ফুল?

বিষফুল।

প্রচণ্ড জোরে একটা আঘাত এসে পড়ল মেজরের গালে। তিনি টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যাচ্ছিলেন, লোকদুটো ধরে ফেলল।

নীল আবার জিজ্ঞেস করল, তোমার সেই দুই গোয়েন্দাসঙ্গী কোথায়?

মার খাওয়ামাত্র মেজর তাঁর স্বভাব ফিরে পেলেন। প্রচণ্ড রাগ হয়ে গেল তাঁর। তিনি চিৎকার করলেন, মেরে হাড় ভেঙে দেব বদমাশ ছোকরা। আমার গায়ে হাত তুলেছ? পাজি, বদমাশ, উল্লুক। বন্দুকটা রেখে খালি হাতে এসো।

সঙ্গে-সঙ্গে ঘুসির ঝড় উঠল। মেজর কাটা কলাগাছের মতো মাটিতে পড়ে গেলেন। তাঁর জামার কলার ধরে টেনে তুলল নীল, লোকদুটো কোথায়?।

মেজর কোনও রকমে বললেন, জানি না। তাঁর দাড়ি ততক্ষণে রক্তে ভিজে জবজব করছিল।

জানো না? আমার পেছনে গোয়েন্দাগিরি করা হচ্ছে! সে ক্ষিপ্ত হতেই মেজর মিনতি করলেন, বিশ্বাস করো, আমি ফুলের সন্ধানে এসেছি।

এবার কী মনে হতে মেজরকে মাটিতে ফেলে দিয়ে ওপরে তাকাল নীল। তারপর সঙ্গীদের বলল, লোকটাকে খাঁচায় ঢুকিয়ে রাখো। হাত পা বেঁধে রাখবে।

সঙ্গে সঙ্গে লোকদুটো ওঁকে চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে গেল।

গাছের ডালগুলো লক্ষ করতে করতে নীল মরা মৌমাছিদের কাছে চলে এসেছিল। ঠিক তখনই ওপর থেকে একটা মৌমাছির মৃত শরীর নীচে নেমে এল। সে মাটিতে তাকাতেই আগের মৃত মৌমাছিদের দেখতে পেল। এতক্ষণে সে অবাক হল। এক লাফে নীচের ডালটা ধরে বন্দুক নিয়ে সে কিছুটা ওপরে উঠতেই পায়ের শব্দ কানে গেল। শব্দটা আচমকা নেমে গেল। গাছের সঙ্গে নিজেকে মিশিয়ে ওপর থেকে লক্ষ করতে লাগল নীল। তারপর মনে হল ঘোষাল হয়তো নীচে নেমে এসেছে গুলির আওয়াজ শুনে।

অমল সোম স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। ওপর থেকেই তাঁর কানে গুলির আওয়াজ পৌঁছেছিল। কিন্তু নীচের জঙ্গলে এসে মেজর যে গাছটিতে উঠেছিলেন, সেই গাছটিকে তিনি চট করে খুঁজে পেলেন না। যখন মনে হল কেউ কাছাকাছি নেই, তখন গাছের আড়াল ছেড়ে পা বাড়ালেন। কিছুটা হেঁটে চাপা গলায় ডাকলেন, মেজর।

ডাকটা নীলের কানে পৌঁছল। সে বন্দুক সতর্ক হাতে ধরল। ওপর থেকে অমল সোমকে সে দেখতে পেল। এখন গুলি চালালে লোকটা ঘায়েল হবে। কিন্তু! নীল যা খবর পেয়েছে তাতে অমল সোমকে ভারত এবং ভুটান সরকার পাঠিয়েছেন সারাওদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে। এই রকম দায়িত্বশীল লোক মারা গেলে তোলপাড় হবে। মিছিমিছি ঝামেলায় যাওয়া ঠিক হবে না। সে দেখল, অমল সোম নিচু হয়ে কিছু কুড়োচ্ছন। তারপর বোতামটাকে দেখতে পেল। লোকটাকে খুব চিন্তিত দেখাচ্ছে বোম নিয়ে। ওটা মেজরের হতে পারে। মার খাওয়ার সময় জামা থেকে ছিড়ে যেতে পারে।

অমল সোম এগোচ্ছেন। তারপর চোখের বাইরে চলে গেলেন।

নিঃশব্দে গাছ থেকে নেমে পড়ল নীল। তারপর দ্রুত জঙ্গল পার হয়ে চলে এল তার ডেরায়। মেজরকে তখন খাঁচায় ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করছে তার লোক। সে হুকুম করল, কালো কাপড়টা দিয়ে খাঁচাটাকে ঢেকে দাও।

আদেশ মান্য করল ওরা।

একটা ফোল্ডিং চেয়ারে আরাম করে বসল নীল। সে ভেবে পাচ্ছিল না কী করবে। তিন-তিনটে মানুষকে মেরে ফেলা এমন কিছু শক্ত ব্যাপার নয়, কিন্তু ব্যাপারটা কত দিন চাপা থাকবে সেইটে ভাবার বিষয়। হঠাৎ তার সারাও ধরার ফাঁদটার কথা মনে এল। ওই পাহাড়ের ঠিক নীচে অন্তত কুড়ি ফুট গভীর গর্ত করে ওপরে লতাপাতা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। প্রথমবার একটা সারাও ওই গর্তে পড়েছিল। কিন্তু সে সময় তারা এখানে ছিল না। কয়েকদিন পরে এসে পচা গন্ধ পেয়েছিল। ওপর থেকে নীচে পড়ে ঘাড় মটকে মরে গিয়েছিল জন্তুটা। মরে পচে গিয়েছিল শরীর। ওটা আর কোনও কাজে লাগেনি, আর তারপর থেকে সারাওগুলো যেন ফাঁদটার কথা জেনে গিয়েছিল।

হঠাৎ সে সোজা হয়ে দাঁড়াল। তারপর কণ্ঠস্বর অনেকটা স্বাভাবিক করে একটু তুলে বলল, মিস্টার সোম, আমি জানি আপনি কাছাকাছি আছেন। আপনার সঙ্গে তো আমার কোনও শত্রুতা নেই। চলে আসুন, কথা বলা যাক।

অমল সোম প্রায় সেই মুহূর্তেই ক্যাম্পের কাছে পৌঁছে গিয়েছিলেন। নীলকে অত স্বাভাবিক গলায় তাঁর উদ্দেশে কথা বলতে শুনে তিনি খুব অবাক হলেন। ওই অল্পবয়সী ছেলেটি এত বুদ্ধিমান?

নীল আবার বলল, আপনাকে ভাল কফি খাওয়াব। বিদেশি কফি। কই, চলে আসুন। সময় নষ্ট করবেন না। আমি চাইলে আপনার ক্ষতি করতে পারতাম। এই জঙ্গলটাকে আপনার চেয়ে আমি ঢের বেশি জানি।

অমল সোম কথাটাকে মেনে নিলেন। তিনি গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন। সঙ্গে সঙ্গে নীল তাঁকে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানাল, আসুন, আসুন।

অমল সোমকে একটা চেয়ার দেওয়া হল। নীল বলল, কী ব্যাপার? আপনারা সবাই দল বেঁধে এখানে চলে এসেছেন?

হ্যাঁ। আপনি এখানে?

পিকনিক করতে। টানা কাজ করে করে ক্লান্ত। একটু রিল্যাক্স করতে না পারলে আর চলছিল না। নীল হাসল, কিন্তু এখানে এলেন কীভাবে?

হেঁটে।

মাই গড। এতটা পথ হেঁটেছেন?

প্রয়োজনে অনেক কিছু করতে হয়।

মিস্টার সোম, আপনার প্রয়োজন কি আমার পেছনে লাগা? হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল নীল। তার গলার স্বর শক্ত হয়ে গেল।

আমি আমার কাজ নিয়ে এসেছি। সেটা যদি আপনার ক্ষতি করে তা হলে আমার কোনও উপায় নেই। মেজর কোথায়?

কে মেজর?

যাঁকে গাছে উঠতে দেখে আপনি পাহাড় থেকে নেমে এলেন।

আচ্ছা! দেখুন গিয়ে, গাছে-গাছে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

আমি উত্তরটা আশা করছি।

মিস্টার সোম, আশা তো প্রত্যেক মানুষই করে। আশা পূর্ণ হয় কতজনের? আপনাকে আমি অনুরোধ করছি, এখনই এই জঙ্গল থেকে চলে যান। আপনাদের যাওয়ার ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থা আমি করে দিচ্ছি।

তাই? না ভাই, আগে সারাওদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ করি, তারপর ফিরে যাওয়ার কথা ভাবব। ওই নিরীহ প্রাণীগুলোকে বিদেশের বাজারে পাঠিয়ে যারা মুনাফা লুটবে, তাদের ছেড়ে দিই কী করে বলুন? মেজর কেথায়?

প্রায় কুড়ি সেকেন্ড অমল সোমের দিকে চুপচাপ তাকিয়ে থেকে নীল জবাব দিল, উনি বিষফুল খুঁজতে গিয়েছেন। বিষফুল বলে কিছু আছে বলে বিশ্বাস করেন?

আমার বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে কিছু এসে যায় না। কিন্তু মেজরকে আমি এখানকার কোনও গাছে উঠতে দেখেছি। এত তাড়াতাড়ি তিনি কোথাও যেতে পারেন না।

আপনি যখন সবই জেনে বসে আছেন, তখন আমাকে জিজ্ঞেস করছেন কেন?

অমল সোম চারপাশে তাকালেন। তাঁর চোখ সেই খাঁচার দিকে গেল, যেটা কালো কাপড়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। তিনি হেসে বললেন, কালো কাপড়ে ঢাকলেই কি আর আড়ালে রাখতে পারবেন নীলবাবু?

চেষ্টা করতে দোষ কী! নীল উঠে দাঁড়াল, দাঁড়িয়ে হাততালি দিল। সঙ্গে সঙ্গে দুটো লোক সামনে এসে দাঁড়াল। নীল জিজ্ঞেস করল, সাহেবকে পৌঁছে দিয়ে এসেছ?

জি সাব।

ঠিক আছে, যাও। নীল ঘুরে দাঁড়াল, সময় যদি নষ্ট করতে না চান, তা হলে আপনি আপনার বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারেন।

অমল সোম কালো কাপড়ে ঢাকা খাঁচাটার দিকে তাকালেন। এদের পক্ষে জন্তুটাকে অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলা সহজ, কিন্তু নীল নির্দেশ না দিলে নিশ্চয়ই সেটা করবে না। তাই আগে মেজরের দেখা পাওয়া দরকার। তিনি মাথা নাড়লেন, বেশ, চলুন।

নীল বন্দুক হাতেই এগোচ্ছিল। হঠাৎ দাঁড়িয়ে গেল, আপনি ওই পথ ধরে আগে চলুন। বুঝতেই পারছেন, এই মুহূর্তে আপনাকে আমি শত্রু ভাবছি। শত্রুকে কেউ পেছনে রাখে না।

অমল সোম হাসলেন এবং এগিয়ে চললেন।

সরু পথ। এখানে অবশ্যই আগে কোনও পথ ছিল না। হাঁটাহাঁটি করে সরু পথ তৈরি হয়ে গিয়েছে। অমল সোম ভাবছিলেন, হঠাৎ এই পথ দিয়ে ওরা যাওয়া-আসা করছে কেন?

নীল বলল, বিষফুল আছে বলে আপনার বন্ধু এদিকে এসেছেন, আপনি ওঁকে বিশ্বাস করেন? ওঁর আসার পেছনে অন্য কোনও কারণ নেই তো?

অমল সোম বললেন, থাকলে সেটা ভবিষ্যতে জানা যাবে।

কথাটা বলেই অমল সোম দাঁড়িয়ে গেলেন। পথটা নেই। পায়ের দাগ মিলিয়ে গিয়েছে অথচ মরা ঘাস রয়েছে সামনে। এবং তখনই তিনি পেছন থেকে প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন। নিজেকে সামলাতে না পেরে হুড়মুড়িয়ে চলে গেলেন সামনে। সঙ্গে-সঙ্গে ঘাসের গালিচা দুলতে লাগল। দুহাতে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন তিনি। তাঁর শরীরটা সরাসরি নীচে নেমে যেতে লাগল।

মাটিতে আছাড় খেয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে পড়ে রইলেন তিনি। কোমর এবং গোড়ালিতে আঘাত লাগায় যন্ত্রণা হচ্ছিল। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। শুধু অনেক ওপরে তাঁর পড়ে যাওয়ার গর্ত দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। নীল চ্যাটার্জির গলা শুনতে পেলেন তিনি, এখন কয়েক দিন ওখানেই থাকুন। বাতাস যাতে পান, তাই ফাঁকটা বন্ধ করছি না। কিন্তু কোনও সারাও যদি আপনার সঙ্গী হয়, তা হলে তার থেকে দূরে থাকবেন।

অমল সোম জবাব দিলেন না। নীলের গলা আর শোনা গেল না। তিনি বুঝতে পারলেন এই ফাঁদ পাতা হয়েছিল সারাও ধরার জন্য। গর্তটা গভীর। একটু নড়াচড়া করতে বুঝতে পারলেন চওড়া বেশি নয়। হাত লাগাতেই মাটি খসে পড়ল কিছুটা। এই দেওয়াল বেয়ে কী করে ওপরে ওঠা যায়! একবার ভাবলেন, চিৎকার করবেন। জোরে চিৎকার করলে নিশ্চয়ই সেটা অর্জুনদের কানে পৌঁছবে। যদি না পৌঁছয়, তা হলে খামোখা পরিশ্রম হবে।

খাঁচার মধ্যে তেমন অন্ধকার ছিল না। বাইরের কালো কাপড়ের আড়াল ঘন ছায়া ফেলেছিল মাত্র। হাঁটু মুড়ে পড়েছিলেন মেজর। জ্ঞান হওয়ামাত্র উঠে বসতে গেলেন। সর্বাঙ্গে যন্ত্রণা শুরু হতেই বুঝলেন তাঁর হাত-পা এখন বাঁধা। তিনি চিৎকার করলেন, অ্যাই, কে আছ এখানে? চটপট চলে এসো। আমাকে হাত-পা বেঁধে এখানে ফেলে রাখার মানে কী? হ্যাঁ! অ্যাই!

কিন্তু কেউ সাড়া দিল না। বরং খটখট আওয়াজ কানে এল। তিনি মুখ ফেবাতেই জন্তুটিকে দেখতে পেলেন। খাঁচার অন্য কোণে সিঁটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুখটা তাঁর দিকে ফেরানো। নিজের দুর্দশায় আর-একটি প্রাণীকে পড়তে দেখে বেশ অবাক হয়ে গেছে। মেজর কিছুক্ষণ তাকানোর পর যখন বুঝতে পারলেন প্রাণীটি সারাও, তখন বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। বিদেশে এর দাম এখন অনেক। যদিও প্রাণীটির শরীর এখনও বঙে ভেজা, তবু ওর গায়ে হাত বোলাতে খুব ইচ্ছে হ। তাঁর। একটু এগোতেই যেভাবে ওটা মাথা নামিয়ে শিং খাড়া করল, তাতে সাহস পেলেন না তিনি।

মেজর জিভ দিয়ে একটা শব্দ করলেন। সেটা শোনামাত্র সারাও অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে রাখল। একটু অপমানিত হয়ে চোখ বন্ধ করতেই আচমকা ফুলটার কথা মনে এল। বিষফুল। এখনও ফুটে রয়েছে। ওটা নিঘাত বিষফুল, নইলে মৌমাছিরা মরবে কেন? ওই গাছে দ্বিতীয় কোনও ফুল ফোটেনি। বৃষ্টি বা ঝড়ে যদি ফুলটা পড়ে যায়, তা হলে মহামূল্যবান জিনিস তিনি হারাবেন। তা ছাড়া ওই ফুলের আয়ু কতক্ষণ, তাও তো তাঁর জানা নেই।

মেজর চিৎকার শুরু করলেন। দুবারের পর একটা লোক কাপড় সরিয়ে উকি মারল, অ্যাই চোপ। পাঁঠার মতো চেঁচাচ্ছে। অথচ পাঁঠাটা চুপ করে আছে।

কাপড় আবার ঠিক হয়ে গেল। মেজর এত অবাক হয়ে গিয়েছিলেন যে, কয়েক সেকেন্ড তাঁর চিন্তাশক্তিও অসাড় হয়ে গেল। হঠাৎ তাঁর কানে গাড়ির শব্দ ঢুকতে তিনি নিজেকে ফিরে পেলেন। গাড়িটা এসে থামল একেবারে কাছে। দরজা খোলার শব্দ হল। তারপর একটা মহিলাকণ্ঠ কানে এল, নীল কোথায়?

Category: ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬)
পূর্ববর্তী:
« ১৫. জঙ্গলের আড়ালে শরীর রেখে
পরবর্তী:
১৭. গলা শুনে মেজর চমকে গেলেন »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑