• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • লেখক
  • My Account
  • লেখক
  • My Account
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা PDF ডাউনলোড

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

১৪. চারজনের খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল

লাইব্রেরি » সমরেশ মজুমদার » অর্জুন সমগ্র - সমরেশ মজুমদার » ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬) » ১৪. চারজনের খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল

চারজনের খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অর্জুন অন্ধকারে নড়াচড়া করতে দেখল প্রাণীটাকে। এই তা হলে ল্যাঙ্গো। পোড়া মাংসের গন্ধ পেয়ে চলে এসেছে।

অমল সোম বললেন, একাধিক দেখছি। ওপরে উঠে আসবে না তো!

সুন্দর বলল, অ্যাই! হ্যাট! ভাগ এখান থেকে। মুরগি খাবে! আমি কষ্ট করে ধরে আনলাম তোদের খাওয়াব বলে?

অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি এদের আগে দেখেছ?

কুকুর। বনে থাকে এই যা। খুব বদমাশ।

ওপরে উঠে আসবে না তো?

এতটা লাফাতে পারবে না। মাংস খেয়ে হাড়গুলো ফেলে দিন, তাতেই খুশি হবে।

ল্যাঙ্গোগুলো সম্ভবত নীচে বসে পড়েছে। এভাবে কোনও ভাল খাবারও আরাম করে খাওয়া যায় না। মাঝে-মাঝে যখন হাড় ছুড়ে দেওয়া হচ্ছিল তখন সেটার জন্য ওরা একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ছিল। চিৎকার, কামড়াকামড়ি শুরু হয়ে গেল।

খাওয়া শেষ হতে অর্জুন বুঝল পেট দারুণ ভরে গিয়েছে। এভাবে কোনও দিন সে শুধু ঝলসানো মাংস দিয়ে ডিনার করেনি। অমল সোমের ওয়াটার বটল থেকে সকলে তিন ঢোক জল রেশন হিসেবে পেল। অর্জুন তার ব্যাগ থেকে চাদর বের করে পাথরের ওপর বিছিয়ে শুয়ে পড়ল। পাশে বসা মেজর জিজ্ঞেস করলেন, এই অবস্থায় তোমার ঘুম আসবে?

আমরা তো বেশ নিরাপদেই আছি।

চোখ বন্ধ করলেই ওরা ওপরে উঠে এসে টুটি ছিড়ে ফেলবে।

তখন ঠিক জেগে যাব।

বাতাস বইছিল। মশার হাত থেকে বাঁচার জন্য অর্জুন মুড়ি দিয়ে শুল। ভগবান যদি আজকের রাতটায় বৃষ্টি না দেন, তা হলে বাঁচোয়া।

ঘুম ভেঙে যাওয়া মাত্র মনে হল, আর রক্ষে নেই। কুকুরগুলো ওপরে উঠে এসেছে। গজরাচ্ছে আক্রোশে, এখনই ঝাঁপিয়ে পড়বে। কিন্তু কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেও যখন কিছু হল না, তখন খেয়াল হল। ধড়মড়িয়ে উঠে বসে পাশে তাকাতেই বুঝল, ওটা মেজরের নাসিকাগর্জন। অঘোরে ঘুমোচ্ছেন ভদ্রলোক। ডান হাত থেকে কলমটা খসে পড়েছে পাশে। ওটা তুলে নিল অর্জুন।

ওপাশে অমল সোম এবং সুন্দর শুয়ে আছে। বিচিত্র সব আওয়াজ ভেসে আসছে জঙ্গল থেকে। এইসব শব্দাবলীর কোনও উৎস তার জানা নেই। সে নীচের দিকে তাকাল। ল্যাঙ্গোগুলো সম্ভবত হতাশ হয়ে চলে গিয়েছে। আকাশ এখন তেমনই ছাইরঙা মেঘে ছাওয়া। অর্জুন বাবু হয়ে বসল। তার খুব সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছিল, কিন্তু অমলদার সামনে সে সিগারেট খাওয়ার কথা ভাবতেই পারে না। যদিও উনি এখন ঘুমোচ্ছেন, টের পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তবুও। একবার মনে হল নীচে নেমে একটু আড়ালে গিয়ে সেবন করে আসে। কিন্তু এই রাত্রে সে-সাহস হল না। হঠাৎ তার চোখ পড়ল পাথরের। প্রান্তে। কালোমতো কিছু নড়ছে। ধীরে-ধীরে উঠে আসছে ওপরে। ওটা যে একটা সাপ সেটা বুঝতে সময় লাগল। সাপটা এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দরের দিকে। একটুও দেরি না করে সে মেজরের কলমের বোম টিপল। সঙ্গে সঙ্গে সাপটার মাথায় আগুনের শিখা আছড়ে পড়ল। পড়ামাত্র সাপটা মোচড় খেয়ে ঝটপটিয়ে নীচে পড়ে গেল।

কী হয়েছে? অমল সোমের গলা শোনা গেল।

সাপ উঠে আসছিল। অর্জুন তখন পাথরের কিনারে চলে গিয়ে নীচে তাকাচ্ছে। অন্ধকারে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। সে কলমটা আবার সক্রিয় করল। নীচের দিকে তাক করে। ঘাস এবং আগাছায় আগুন পড়ল এবং তারই আলোয় সে সাপটাকে দেখতে পেল। তখনও শরীর নড়ছে। এত মোটা এবং লম্বা সাপ সচরাচর দেখা যায় না। সে কলমের বোতাম অফ করা সত্ত্বেও আগাছার আগুন নিভতে সময় লাগল। ভাগ্যিস গতকালের বৃষ্টি মারাত্মক হয়েছিল, নইলে আগুন ছড়িয়ে পড়া অস্বাভাবিক ছিল না। সে ফিরে তাকাল। আকাশ একটু একটু করে মেঘমুক্ত হচ্ছে। যদিও খুব উঁচু করলে গাছের পাতার আড়াল, তবু চারপাশের আকাশ দেখতে অসুবিধে হচ্ছে না। ওপাশে পাহাড় উঠে গেছে। হঠাৎ অর্জুনের মনে হল, পাহাড়ের গায়ে কিছু নড়ছে। সে ভাল করে দেখার চেষ্টা করল। ঘন-ছায়া মাখা বলে কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না। কিন্তু সে নিঃসন্দেহে কিছু নড়তে দেখেছে ওখানে। বড়জোর একশো গজ দূরত্ব হবে। অর্জুন চুপচাপ তাকিয়ে রইল। মিনিট দেড়েক বাদে একটা জন্তু উঠে দাঁড়াল পাহাড়ের গায়ে গেঁথে থাকা পাথরের ওপর। এখন তাকে অনেকটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। জানোয়ারটা খুব চঞ্চল স্বভাবের। ঘাড় ঘুরিয়ে এপাশ ওপাশ দেখছে, মাঝে-মাঝেই লাফাচ্ছে।

প্রথমে মনে হয়েছিল হরিণ, কিন্তু তারপরেই খেয়াল হল, সেরাও নয় তো। সে নিঃশব্দে অমল সোমের কাছে পৌঁছে গিয়ে মৃদু ধাক্কা দিল। অমল সোম জেগেই ছিলেন, চুপচাপ উঠে বসলেন। অর্জুন তাঁকে আঙুল তুলে দেখাতে তিনি উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। তাড়াতাড়ি বাগ থেকে একটা দূরবিন বের করে চোখে লাগালেন। এই অল্প আলোয় দূরবিন কাজ করে কিনা অর্জুন জানে না। কিন্তু অমল সোম চাপা গলায় বললেন, ইয়েস। সেরাও। দ্যাখো।

অর্জুন দূরবিনটা নিল। জানোয়ারটা তখনও ফোটোগ্রাফারকে পোজ দেওয়ার ভঙ্গি করে দাঁড়িয়ে আছে। দূরবিনটা কিছুটা ঘুরিয়ে লক্ষ্যস্থলে নিয়ে যাওয়ামাত্র অনেকটা স্পষ্ট দেখতে পেল। ওর মন নিশ্চয়ই খুব ভাবুক প্রকৃতির, নইলে আকাশের দিকে মুখ করে কী দেখছে দু-চোখ ভরে। পাথর, গাছ ইত্যাদি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, যদিও একটা নীলের আস্তরণ সামনে ছড়ানো। এই দূরবিনটা তা হলে সাধারণ নয়। হঠাৎ কানের কাছে ক্লিক শব্দ হতে অর্জুন মুখ ফেরাল। ক্লিক ক্লিক ক্লিক। অমল সোম ছবি তুলে যাচ্ছেন। হঠাৎ লাফ দিয়ে উধাও হয়ে গেল সেরাও।

যাবেন?

পাগল! এই অন্ধকারে কোথাও খুঁজে পাবে না ওদের।

কিন্তু আলো নেই, আপনি ছবি তুললেন কেন?

এই ক্যামেরায় তোলা যায়। প্রিন্ট করার পর দেখাব। যাক, সুন্দর আমাদের ঠিক জায়গায় নিয়ে এসেছে। ও যখন ফিরে এসে বলল, এদিকে মানুষের আনাগোনা হয়েছে, তখনই মনে হয়েছিল লক্ষ্যস্থলে পৌঁছে গিয়েছি। নাও, শুয়ে পড়ো।

অর্জুন শুয়ে পড়ল। পাশে মেজর তখনও প্রবল বিক্রমে নাক ডেকে যাচ্ছেন। ওপাশে সুন্দর মড়ার মতো ঘুমোচ্ছে। ওরা দুজনেই জানল না এখন কী হয়ে গেল। অর্জুন পাশ ফিরে শুয়ে কলমটা হাতের মুঠোয় লাগাল। বলা যায় না, পোড়া সাপটার যদি কোনও সঙ্গী থাকে, সতর্ক থাকাই ভাল। হঠাৎ তার কানে অনেক ল্যাঙ্গোর ডাক ভেসে এল। ওরা ডাকছে পাহাড়ের গায়ে। কে জানে, সেরাওটাকে ওরা দেখতে পেয়েছে কিনা। কিন্তু এই সেরাও একা কেন? ওরা তো দল বেঁধে থাকে। দুরবিনে দেখে তার মনে হয়েছে ওরা খুব নিরীহ এবং অবলা। ঠিক ছাগলের মতো। ওর যে চাহিদা, তা কে বিশ্বাস করবে। বিদেশিরা কি ছাগল এবং সেরাও আলাদা করতে পারছে? নিশ্চয়ই পারে, নইলে এত দাম হয় কী করে?

ঠিক গালের মাঝখানে একটা বড় জলের ফোঁটা পড়ামাত্র অর্জুন উঠে বসল। বসে দেখতে পেল বৃষ্টি নেমে গেছে। যেহেতু ওরা একটা পাতায় ছাওয়া ঝাঁকড়া গাছের নীচে শুয়ে ছিল, তাই এতক্ষণ জল পড়েনি এখানে। কিন্তু বাকিরা উঠে পড়েছে আগেই।

মেজর বললেন, ওঃ, তোমার ঘুম বটে! বৃষ্টি পড়ছে টেরই পেলে না।

অর্জুন অবাক হয়ে তাকাল। তার ঘুম? মেজরই তো সারা রাত নাক ডেকে গেলেন।

অমল সোম বললেন, বয়স অল্প, একটু ঘুম তো হবেই। কিন্তু আমরা এখন কী করব?

সুন্দর বলল, এরকম বৃষ্টি হলে এখানেও জল পড়বে।

অর্জুন মুখ ফেরাল। ফোঁটা-ফোঁটা জল পড়ছে। বসে ভেজা ছাড়া কোনও উপায় নেই। অথচ মাঝরাত্রেও আকাশ দেখে মনে হচ্ছিল মেঘ সরে গেছে। বৃষ্টির জলের ফোঁটাগুলো খুব ঠাণ্ডা, শীত শীত করছিল।

সুন্দর বলল, বাবু, আপনার চাদরটা দিন।

কী করবে?

মাথার ওপর তুলে ধরি, তাতে কিছুটা রক্ষে হবে।

এখানে কোনও আড়াল পাওয়া যাবে না?

সেটা পেতে গেলে পাহাড়ে যেতে হবে। যাওয়ার আগেই ভিজে যাবেন। তা ছাড়া এখন ভোরের সময়। জানোয়াররা এখন জলটল খেতে বের হয়।

মেজর বললেন, ঠিক আছে। দাও তো, হে চাদরটা। হ্যাঁ, চারজনে চার কোণে ধরো। ঠিক চাঁদোয়ার মতো হবে ব্যাপারটা। চারটে লাঠি থাকলে অবশ্য হাত দিয়ে ধরে থাকতে হল না। বাঃ, গুড। আর জল পড়ছে না গায়ে। কী জিনিস কোন কাজে লেগে যায় কে বলতে পারে। এই যা। আমার কলম? ককিয়ে উঠলেন মেজর। পকেট দেখতে গিয়ে চাদর ছেড়ে দিলেন অজান্তে। সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর শরীরটা চাদরে ঢেকে গেল।

অর্জুন বলল, আপনার কলম আমার কাছে আছে।

ওঃ, বাঁচালে! কিন্তু কী করে গেল?

আপনি যখন ঘুমোচ্ছিলেন, তখন সাপ এসেছিল।

মাই গড। তবে জানো তো, সাপ মানেই বিষধর বা হিংস্র নয়। বেশির ভাগ সাপ আক্রমণ করে ভয় পেয়ে। সাপের কোনও স্মৃতিশক্তি নেই। আমাদের প্রাচীন সাহিত্যে সাপ সম্পর্কে যেমন মিথ চালু হয়েছিল, তার সঙ্গে বিজ্ঞানের কোনও সম্পর্ক নেই। একবার অতলান্তিকের নীচে ড়ুবোজাহাজে যেতে-যেতে সাপ দেখেছিলাম। সে সাপ যদি তুমি দেখতে? মেজর থামলেন। অর্জুন জানে এই থামার কারণ তিনি প্রশ্ন আশা করছেন। শ্রোতা প্রশ্ন করলেই গড়গড়িয়ে সেই সামুদ্রিক সাপের কাহিনী শোনাবেন। সে গম্ভীর গলায় বলল, আপনার মাথার ওপর থেকে চাদর পড়ে গেছে।

জানি হে। মনে হচ্ছে এইটে মোর কমফরটেল। গায়ে তো জল পড়ছে, দিব্যি মুড়ি দিয়ে বসে আছি। মেজর খুকখুক করে হাসলেন।

চাদরটা ভিজে সপসপ করছে। সুন্দর মাঝে-মাঝে সেটা চিপে জল বের করে আবার মাথার ওপর ধরছে। হাত টনটন করলেও এখন এ ছাড়া উপায় নেই।

বৃষ্টি থামল সকাল সাতটায়। তখনও জঙ্গলে পাতলা অন্ধকার মাখামাখি। ভিজে গিয়েছে চারজনেই। চাদরে মাথা মুছে অমল সোম বললেন, এবার একটু চা হোক। আমার ব্যাগটাকে বাঁচাতে পেরেছি। ওহে, সুন্দর, আগুন জ্বালো।

এখন জঙ্গলে শুকনো কাঠকুটো খুঁজে পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার। ভেজা ডালে আগুন জ্বলবে না। সুন্দর তবু নেমে গেল পাথর থেকে। মেজর বললেন, মুশকিল।

কী হল? অমল সোম জানতে চাইলেন।

ভোরবেলায় চা খেলেই আমাকে প্রকৃতি ডাকে। এখানে সেটা কী করে সম্ভব হবে, বুঝতে পারছি না।

কেন? এখানে সারি সারি গাছের আড়াল, অসুবিধে হওয়ার কোনও কারণ নেই। আফ্রিকার জঙ্গলে কী করতেন?

ওখানে টেন্ট ছিল। টেন্টের মধ্যে আলাদা টয়লেট।

এখানে গাছের পাতাকে টয়লেট পেপার হিসেবে ব্যবহার করুন।

জোঁক আছে যে। ডেঞ্জারাস জিনিস।

জিনিস নয়, পোকামাকড়। অর্জুন হাসল।

তোমার হাসি পাচ্ছে অর্জুন? করুণ গলায় বললেন মেজর।

অর্জুন বলল, এসব সমস্যা কখনও আটকে থাকে না। প্রাকৃতিক ডাক এলে দেখবেন ঠিক ম্যানেজ করে নিতে পারছেন। কাল রাত্রে ওখানে সেরাও দেখেছি।

সব ভুলে গেলেন মেজর, সেরাও? ওখানে? কখন?

মাঝরাত্রে।

আঃ! আমাকে ডাকোনি কেন?

আপনি ঘুমোচ্ছিলেন। অমলদা বেশ কয়েকটা ছবি তুলেছেন।

কীরকম দেখতে?

ঠিক ছাগলের মতো।

ছাগল। তা হলে সেরাও বলে মনে হল কেন? ওটা ছাগলও হতে পারে।

এই বনে ছাগল চরে বেড়ায় না।

ও। খুব মিস করেছি দেখছি। কেন যে ঘুমিয়ে পড়লাম।

অর্জুন নীচে নামল। সাপটা আছে এখনও। একটা ডাল ভেঙে সেটাকে তুলতে চেষ্টা করল সে। এত ভারী যে, ডালটা বেঁকে যাচ্ছিল। ওপর থেকে অমল সোম বললেন, সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। থ্যাঙ্ক ইউ অর্জুন।

মেজর বললেন, আমি ভেবেছিলাম জঙ্গলটা খুব নিরীহ, এখন দেখছি তা নয়। খুব ইন্টারেস্টিং। ল্যাঙ্গোগুলো মনে হয় ধারেকাছে নেই।

সুন্দরের ক্ষমতা অসাধারণ। এরই মধ্যে আধশুকনো কিছু ডালপালা জোগাড় করে এনে চা বানিয়ে ফেলল। মেজরকে দেখা গেল তার সঙ্গে ফিসফিস করে কথা বলতে। চা খেয়েই তিনি সুন্দরকে নিয়ে ছুটলেন।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আমরা কি পাহাড়ে উঠব?

অমল সোম মাথা নাড়লেন, না। ওই ডানহিলের প্যাকেটটা যেখানে পাওয়া গিয়েছে, সেখানে একবার যাব। সকালেই যাওয়া উচিত।

পাততাড়ি গুটিয়ে রওনা হতে আরও মিনিট পঁয়তাল্লিশ লাগল। এখন আলো স্পষ্ট, কিন্তু সূর্য ওঠেনি। জঙ্গলের মধ্যে হাঁটতে অসুবিধে হচ্ছিল। অমল সোম এবং সুন্দর আগে যাচ্ছিলেন। মেজর তার পাশে হাঁটতে-হাঁটতে বললেন, সকালের কাজটা যদি ভালভাবে সারা যায়, তা হলে তার মতো আনন্দ আর কিছুতেই নেই। কিন্তু তোমার দাদা এত বড় অভিযানে বেরিয়েছেন আমাদের কিছু না জানিয়ে, এটা ঠিক হয়নি। সঙ্গে খাবার, জল, বিছানা কিছুই আনা হয়নি। তোমার খিদে পাচ্ছে না?

এখনও পায়নি।

পেলে কী করবে?

দেখা যাক।

মেজরের কথায় অর্জুনেরও মনে হল, ওদের তৈরি হয়ে আসা উচিত ছিল। এখনই যদি বাংলোয় ফিরে যাওয়া হত, তা হলে সমস্যা ছিল না। কিন্তু কে জানে, আজকের রাতও এখানে কাটাতে হবে কি না!

অমল সোম হাত তুলে ইশারা করলেন। অর্জুন এবং মেজর নিঃশব্দে এগিয়ে গেল। সামনের কিছুটা জায়গায় জঙ্গল ফাঁকা। গাছের আড়াল থেকে ওরা জায়গাটা দেখল। একটা সরু পথ ওপাশ থেকে এসে ফাঁকা জায়গায় শেষ হয়েছে। মিনিট পাঁচেক আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকার পর সুন্দর ঘাড় নাড়ল। অমল সোম বললেন, অর্জুন, একবার গিয়ে দেখে এসো তো জায়গাটা। জঙ্গল কেটে জায়গাটা ন্যাড়া করা হয়েছে। সাবধান।

অর্জুন এগোল। পাশে সুন্দর। ফাঁকা জায়গায় পৌঁছে ওরা প্রথমে সরু রাস্তাটাকে দেখল। সন্দেহজনক কিছু নজরে পড়ল না। ফাঁকা জায়গার একধারে পাহাড়ের শুরু। সুন্দর অর্জুনকে আঙুল দিয়ে মাটি দেখাল। সেখানে জুততার ছাপ স্পষ্ট। আর এই জুতোর দাগ বৃষ্টির আগে পড়েনি। পড়লে তার ওপর শুভ জুতো নয়, পুণ্ডর কাছে পো

ওপর জল থাকত। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর কেউ এখান দিয়ে হেঁটে গিয়েছে। একজোড়া জুতো নয়, দুটো জুতোর ছাপ দেখতে পেল সে। সোজা পাহাড়ের দিকে এগিয়েছে। পাহাড়ের কাছে পৌঁছে সে ছাপগুলোকে খুঁজে পেল না। পাথরের ওপর কোনও চিহ্ন পড়েনি।

ওরা ফিরে এল। সব শুনে অমল সোম নিচু গলায় বললেন, তা হলে ওরা একটু আগেই এখানে এসেছিল। এত ভোরে ওই গাড়ির রাস্তায় কেউ এলে আমরা ইঞ্জিনের শব্দ পেতাম। ওরা এখানেই কোথাও রাত্রে থেকেছে। আমাদের খুব কাছাকাছি ওরা রয়েছে। হঠাৎ অমল সোম চুপ করে গেলেন।

দুটো লোক বড় বড় বাস্কেট আর ক্যান বয়ে নিয়ে এল সরু পথটা দিয়ে। এই লোকগুলো স্থানীয় মানুষ, কর্মচারী গোছের। ফাঁকা জায়গা পেরিয়ে ওরা পাহাড়ের খাঁজে পা রেখে-রেখে ওপরে উঠে মিলিয়ে গেল।

অমল সোম বললেন, সাহেবদের ব্রেকফাস্ট এল মনে হচ্ছে। তার মানে সরু রাস্তাটার ওপাশে ওরা বেস ক্যাম্প করেছে। জঙ্গলের আড়াল রেখে আগে চলো, ক্যাম্পটাই দেখে আসি।

Category: ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬)
পূর্ববর্তী:
« ১৩. ডুয়ার্সের বৃষ্টি সম্পর্কে
পরবর্তী:
১৫. জঙ্গলের আড়ালে শরীর রেখে »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑