• Skip to main content
  • Skip to header right navigation
  • Skip to site footer

Bangla Library

Read Bengali Books Online (বাংলা বই পড়ুন)

  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • নতুন সব বই
  • লেখক
  • সিরিজ
  • বইয়ের ধরণ
  • পুরানো সব ক্যাটাগরি
  • My Account →
  • বাংলা ডিকশনারি
  • বাংলা কৌতুক
  • বাংলা লিরিক
  • বাংলা রেসিপি
  • হেলথ টিপস এন্ড নিউজ

বাংলা নতুন/পুরাতন বইয়ের পিডিএফ ডাউনলোড/সন্ধান করতে আমাদের বাংলা পিফিএফ সাইটে ক্লিক করুন।

Bangla PDF

০৭. চা বাগানের শ্রমিক-পল্লীতে মাদল বাজে

লাইব্রেরি » সমরেশ মজুমদার » অর্জুন সমগ্র - সমরেশ মজুমদার » ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬) » ০৭. চা বাগানের শ্রমিক-পল্লীতে মাদল বাজে

সন্ধের পরেই চা বাগানের শ্রমিক-পল্লীতে মাদল বাজে। আজ হালকা জ্যোৎস্না উঠেছে। বাংলোর বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসে অমল সোম বললেন, পার্বতীকে কখনও দেখিনি, কিন্তু ওর বাবা লালজিকে আমি ভাল চিনতাম। ভানুবাবু, আপনার সঙ্গে নিশ্চয়ই পরিচয় ছিল?

ভানু ব্যানার্জি এখন পাজামা-পাঞ্জাবি পরে দিব্যি বাঙালি হয়েছেন, বললেন, হ্যাঁ। ভালই আলাপ ছিল। সারা জীবন জঙ্গলে ঘুরেছেন রাজবাড়ির ছেলে হয়েও, প্রচুর ইন্টারেস্টিং গল্প শোনা যেত। ওঁর মেয়ে এই পার্বতীটা অনেকখানি বাবার স্বভাব পেয়েছে।

অর্জুন চারপাশে তাকিয়ে দেখছিল। হালকা সরের মতো জ্যোৎস্নায় গাছপালায় ঘেরা বাংলোর চৌহদ্দিকে কী মনোরম মনে হচ্ছে। হঠাৎ অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন, অর্জুন, তুমি ওই সুন্দর নামের পাখি-চোরটার জন্য চাকরির চেষ্টা করেছ, তুমি কি মনে করেছ ও শুধরে যাবে?

অর্জুন মুখ ফেরাল, যেতে তো পারে। শুনলাম, জলপাইগুড়ি থেকে ফিরে এসে লোকটার প্রচণ্ড পরিবর্তন হয়েছে। ঘর থেকেই বের হয়নি। তারপর পুরনো লোকজন দেখা করতে চায় বলে সে বাড়ি ছেড়ে জঙ্গলে গিয়ে লুকিয়েছে। আমার তো মনে হয়, ওকে সাহায্য করা উচিত।

বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে চায় না বলে সে জঙ্গলে গিয়ে লুকোবে কেন?

হয়তো ওর সেই সব বন্ধু অন্যায় কাজকর্ম করে থাকে।

সেই কাজে যাদের ওকে প্রয়োজন, তাদের ছায়া এড়িয়ে সে কতদিন লুকোতে পারবে? হ্যাঁ, ওই যে নীলুবাবুর সঙ্গে দেখা করতে বলেছে লোকগুলো, তিনিই কি ব্যানার্জি টি গার্ডেন্সের পরবর্তী মালিক নীল চ্যাটার্জি? ওঁর যে আচরণ রাস্তায় তোমরা দেখেছ, তার সঙ্গে অবশ্য এই সুন্দরের মতো লোককে দেখা করতে বলা চমৎকার মানিয়ে যায়। অমলবাবু বললেন।

ভানু ব্যানার্জি বললেন, কিন্তু মিস্টার সোম, নীলের দিদি মিসেস ব্যানার্জি কিন্তু খুব ভালমানুষ। বরং ওঁর স্বামী অশ্বিনী ব্যানার্জি খুব কড়া ধাতের লোক ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় নীল দু-একবার দিদির কাছে এসেছে মাত্র, পাকাপাকিভাবে থাকতে পারেনি। অশ্বিনী ব্যানার্জির মৃত্যুর পর দিদিকে সাহায্য করতে এদিকে চলে আসে সে।

অর্জুন বলল, আমাদের সঙ্গে যে বৃদ্ধলোকটি কথা বলেছেন, তাঁর নাম হরপ্রসাদ সেন।

ভানু ব্যানার্জি মাথা নাড়েন, হ্যাঁ, মিস্টার সেন অনেক প্রবীণ মানুষ। একসময় চাবাগানের ম্যানেজারি করতেন। নীল তাঁকে পছন্দ না করলেও মিসেস ব্যানার্জির অনুরোধে উনি অফিসের কাজকর্ম দেখাশোনা করেন। আমি বলি কী, এদের সংস্পর্শ এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।

মেজর চুপচাপ শুনছিলেন। এবার মুখ খুললেন, কিন্তু মিস্টার ব্যানার্জি, চা বাগানের মালিকদের তো প্রচুর পয়সা। নীল চ্যাটার্জি মালিক হতে যাচ্ছেন, নীল মারুতিতে চড়েন। তিনি কেন সুন্দরের মতো একটা পাখিচোরের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন?

ভানু ব্যানার্জি বললেন, নীল কখন কী করবে তা প্রেডিক্ট করা মুশকিল। আমি ওকে হাইওয়ের ধারে পাঞ্জাবি ধাবায় বসে আড্ডা মারতে দেখেছি। ব্যানার্জি টি গার্ডেন্সে এখন কোনও শ্রমিক বিক্ষোভ নেই। গত বছরে বিক্ষোভ করতে পারে এমন তিনজন শ্রমিক নেতার মৃতদেহ তোসা নদীর চরে পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ খুনিকে ধরতে পারেনি, কিন্তু শ্রমিকরা বুঝে গিয়েছে বিক্ষোভ

জানালে তাদেরও একই অবস্থা হবে।

মেজর চেঁচিয়ে উঠলেন, এ যে দেখছি ডিক্টেটরশিপের চেয়েও খারাপ অবস্থা। পুলিশ কী জন্য আছে? আপনারা ওর এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন

কেন?

ভানু ব্যানার্জি উঠে দাঁড়ালেন, দেখুন, শহর, গ্রাম-গঞ্জের সঙ্গে চা বাগানের পার্থক্য হচ্ছে, এখানে গাছপালা বেশি, মানুষ কম। যে মানুষেরা থাকেন তাঁরা এক-একটা ছোট গোষ্ঠীতে, চাবাগানকে কেন্দ্র করে। কিছু দিন আগেও পুরো ড়ুয়ার্স, ম্যানেজারের শাসনে শাসিত হত। এখনও আমরা অন্য বাগানের সমস্যায় নাক গলাই না। তার জন্যে অ্যাসোসিয়েশন আছে। নীল চ্যাটার্জি যতক্ষণ আমাকে বিব্রত না করছে, ততক্ষণ আমি আমার বাগান নিয়েই ব্যস্ত থাকব। যাকগে, আপনারা কি কালই নীলপাড়া ফরেস্টে যেতে চান?

অমল সোম বললেন, সেই রকমই তো ইচ্ছে আছে।

আপনারা আমার এখানে থেকেও যাতায়াত করতে পারেন। একটু সময় লাগবে হয়তো…।

মধু চা বাগান কীরকম? এ পি রায় ওখানে বোধ হয় আমাদের জন্যে ব্যবস্থা করেছেন।

মধু থেকেও বেশ কিছুক্ষণ লাগবে। আপনারা ফরেস্টের ভেতরে থাকতে চান? একটা বাংলো আছে, কোচবিহার থেকে বুক করতে হয়। আমি সেই চেষ্টা করতে পারি।

মেজর বললেন, দ্যাটু গুড। জঙ্গলের ভেতর থাকার থ্রিলই আলাদা। তারপর এদিকে এসে যখন শুনলাম চিতা-টিতা আছে, তখন আমি ওই বাংলোয় থাকতে চাই।

কোচবিহার থেকে অনুমতি আনতে দুপুর হয়ে যাবে। ঠিক হল, লাঞ্চ সেরে ওরা এখান থেকেই জঙ্গলে চলে যাবে। ডিনার শেষ করে শুতে যাওয়ার সময় ভানু ব্যানার্জি তাঁর বাংলোর বেয়ারার হাত দিয়ে চিরকুট পাঠালেন। তাতে লেখা, তিনি কোচবিহারের ডি এফ ওর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। অমল সোমের কথা বলতেই ভদ্রলোক জানিয়েছেন, আগামিকাল সকালে তিনি নিজেই চলে এসে বাংলোর ব্যবস্থা করে দেবেন।

চিরকুটটা পড়া হলে মেজর সপ্রশংস গলায় বললেন, বাঃ, এদিকের কতারা দেখছি আপনাকে খুব খাতির করে। আপনার জন্যে গর্ব হচ্ছে মশাই।

অমল সোম কোনও কথা বললেন না।

সকাল সাড়ে দশটায় কোচবিহারের ডি এফ ও অনুপম ত্রিবেদী জিপ নিয়ে এলেন। অমল সোমের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর তিনি যে সেই ঘরে ঢুকেছেন, আর বেরনোর নাম নেই। ভদ্রলোকের এত কী কথা থাকতে পারে, বারান্দায় বসে মেজর ভেবে পাচ্ছিলেন না। অর্জুনকে তিনি বললেন, ব্যাপারটা কী, জানো?

কোন ব্যাপার?

জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার তোমার দাদার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। এখানে জেলার ফরেস্টের বড়কর্তা স্বয়ং এসে আলোচনায় বসেছেন, রহস্যময়।

অর্জুন বলল, অমলদা নিজে থেকে না বললে আপনাকে চুপচাপ অপেক্ষা করতে হবে, কখন রহস্যের সমাধান হয়। তবে ডি এফ ও সাহেব এসেছেন যখন, তখন ফরেস্ট বাংলোয় আরামে থাকা যাবে। এদিকের বাংলোর বাবুর্চিরা দারুণ মুরগির মাংস রান্না করে।

মুরগি? মেজর সোজা হয়ে বসলেন। তাঁর দাড়িগোঁফের আড়াল ভেদ করেও অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল, মুরগি খাওয়া আমি ছেড়ে দিয়েছি হে।

কিন্তু আপনি তো পাঁঠার মাংস খান।

খাই। কেননা ইন্ডিয়ান পাঁঠার মতো নির্বোধ প্রাণী পৃথিবী থেকে চলে গেলে কোনও ক্ষতি হয় না। তুমি কত বড় মুরগি দেখেছ?

বেশ বড়, দু-আড়াই কেজি হবে।

দুর! আমি অবশ্য ওজন নিতে পারিনি, দাঁড়িপাল্লা ছিল না। তবে চারজন পোটার বেশ কসরত করে ওকে তুলেছিল। ঘটনাটা বলি শোনো : সেবার আফ্রিকায় গিয়েছি বিশ্রাম নেব বলে। আমার বন্ধু লোপেজ থাকত জাইরে নদীর কাছে। সারা বছর বৃষ্টি হয় সেখানে। লোপেজের সঙ্গে আমি কিনসামা শহর থেকে আশি মাইল দূরে এক জঙ্গলে তাঁবু ফেলে তোফা ছিলাম। লোপেজ বলেছিল, বৃষ্টি বেশি হলেও সাপখোপ ছাড়া হিংস্র প্রাণী ওদিকে বড় একটা নেই। একদিন বৃষ্টি নেই দেখে জাইরে নদীর ধারে গিয়েছিলাম। চারপাশে মাথাসমান ঝোপ। হঠাৎ শব্দ শুনে দেখি একটা উটপাখির মতো প্রাণী আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। লোপেজ বলল, পালাও। এরা মাঝে-মাঝেই হিংস্র হয়। আমরা দৌড়তে লাগলাম। সঙ্গে সঙ্গে প্রাণীটা পেছনে ধাওয়া করল কঁক-কঁক করতে করতে। এমন বীভৎস গলা আর ডানার আওয়াজ আমি জীবনে কখনও শুনিনি! প্রাণ বাঁচাবার তাগিদে লোপেজ গুলি চালাল। দুটো গুলিতেই ওটা পড়ে গেল ধুপ করে। তখন কাছে গিয়ে দেখলাম উটপাখি নয়, মুরগি। মেজর চোখ বন্ধ করে বলে গেলেন।

মুরগি আপনাদের তেড়ে এসেছিল?

ইয়েস মাই বয়। পুঁচকে মুরগিগুলোকে দ্যাখোনি শত্রু দেখলে তেড়ে যেতে? তা লোপেজের লোকেরা কোনওমতে ওটাকে বয়ে নিয়ে এল তাঁবুতে। ধুমধাম করে মাংস রান্না করল। কিন্তু মুখে দিয়েই মন খারাপ হয়ে গেল। ওই বিশাল পাখির তেজস্বী ভঙ্গি মনে পড়ে যেতে আর খেতে পারলাম না। সেই থেকে আমার জীবনে মুরগি বন্ধ।

ওটা সত্যিই মুরগি, না অন্য কিছু?

মেজর পিটপিট করলেন, তুমি কখনও আফ্রিকায় গিয়েছ?

না।

বিবর্তনের নিয়ম মেনে পৃথিবীর সব প্রাণী ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। এই যে হাতি দেখতে পাও, এদের হাজার পুরুষ আগের চেহারাটা কল্পনা করো। পাহাড়ের মতো। সেইজন্যে হাতির সঙ্গে পাহাড়ের উপমা এখনও দেওয়া হয়। কিন্তু সময় ওদের ছোট করে দিয়েছে। একটা টিকটিকি কুমিরের চেয়ে বড় ছিল আকৃতিতে। মুরগির ক্ষেত্রে তাই হওয়া স্বাভাবিক। তা আফ্রিকায় এখনও কিছু প্রাণী অতীতের ছায়া ধরে রেখেছে। ওটা মুরগিই।

তা হলে তো আপনার ওখানে খাওয়ার কষ্ট হবে। ডালভাতের ওপর থাকতে হতে পারে।

মেজর হাসলেন, কুছ পরোয়া নেই। আমার স্টকে কিছু সার্ডিন আছে। তাই দিয়ে চমৎকার ভাত খাওয়া যায়—সার্ডিনের বাটিচচ্চড়ি আর ভাত।

সার্ডিন মাছ?

ইয়েস মাই বয়। টিনে প্যাক করা। সবসময় সঙ্গে রাখি। তবে ওরা যেভাবে খায়, সেভাবে নয়। মাছটাকে টিন থেকে বের করে দিশি প্রথায় বাটিচচ্চড়ি বানিয়ে নিয়ে ভাতের ওপর ঢালো। আহা। মেজর যেন এখনই তার স্বাদ পেয়ে গেলেন।

এই সময় অমল সোমের ঘর থেকে দুজনে বেরিয়ে এলেন।

অমল সোম অনুপম ত্রিবেদীর সঙ্গে ওদের আলাপ করিয়ে দিলেন। হ্যান্ডসাম শব্দটা চট করে মনে এল অর্জুনের। মিস্টার ত্রিবেদী বললেন, আপনার কথা আমি শুনেছি অর্জুনবাবু। পরিচয় হওয়ায় খুশি হলাম। আপনারা যে আমাদের জঙ্গলে থাকবেন, সেইজন্য গৌরবান্বিত বোধ করছি। শুনলাম এখানে আসার সময় নীল চ্যাটার্জির সঙ্গে আপনাদের আলাপ হয়েছে।

আলাপ? মেজর খেপে গেলেন, লোকটা আমাকে অপমান করেছে। একবার হাতের কাছে পেলে এমন শিক্ষা দিতাম যে, বাছাধন টাইট হয়ে যেত।

আপনারা বেড়াতে এসেছেন, ওসব না করাই ভাল। নীল আমাদের কাছেও সমস্যা। জঙ্গলের নিয়মকানুন মানছে না। অথচ ওর বিরুদ্ধে এমন কোনও সাক্ষী জোগাড় করতে পারিনি যে, আমরা ব্যবস্থা নেব। ওহে, আপনি যে ফুলের সন্ধানে এসেছেন, তার নাম কী?

মেজর বললেন, বুনো ফুল। বাংলা নাম জানি না। তবে আমি নাম রেখেছি বিষগন্ধা।

ত্রিবেদী বললেন, কয়েকটা মৃত্যুর খবর আমাদের কাছে অবশ্য এসেছে এবং সেই সব মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন নেই। আমরা এখনও পর্যন্ত কোনও কারণ খুঁজে পাইনি। জঙ্গলে মাঝে-মাঝেই সংক্রামক রোগ ছড়ায়, প্রাণীরা মারা যায়। তখন যে এলাকায় এটা ঘটে, সেই এলাকা থেকে বন্যপশুদের সরিয়ে দেওয়া হয়। যাদের সরানো সম্ভব হয় না, তাদের প্রতিষেধক দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু এই মৃত্যুগুলো ঠিক এক জায়গায় হয়নি আর ঘন-ঘন হয় না। আপনি

যদি কারণ আবিষ্কার করতে পারেন, তা হলে বিশাল উপকার হবে।

মেজর মাথা ঝুঁকিয়ে বললেন, আমি প্রাণপণে চেষ্টা করব। কী অর্জুন?

নিশ্চয়ই। অর্জুন সমর্থন করল।

সঙ্গে সঙ্গে উৎসাহিত মেজর বললেন, দেখুন মিস্টার ত্রিবেদী, একটা ছোট লাইটারকে যদি আমি, মানে আমরা, অতবড় আমেরিকা থেকে উদ্ধার করতে পারি, তা হলে এটাও সম্ভব হবে।

কী ব্যাপার? ত্রিবেদী কৌতূহলী হল।

অমল সোম বাধা দিলেন, ও-গল্প অন্য সময় শুনবেন।

 

লাঞ্চ সেরে ওরা ত্রিবেদীর জিপে উঠল না। ত্রিবেদী বললেন, আপনারা মিস্টার ব্যানার্জির জিপসিতে আসুন। আমার জিপটিকে জঙ্গলের সবাই চেনে। আমি নীলপাড়ার রেঞ্জারকে খবর পাঠিয়ে দিয়েছি। সে আপনাদের জন্যে বাংলোয় অপেক্ষা করবে। আমি আগামিকাল আমার রুটিন ভিজিটে ওখানে গিয়ে আপনাদের সঙ্গে দেখা করে আসব।

অর্জুনের খটকা লাগল। যাওয়া হচ্ছে একটি ফুলের সন্ধানে। ভুল করে তার কাছাকাছি চলে না গেলে বিপদ নেই। মেজর অবশ্য কয়েকটা মাস্ক নিয়ে এসেছেন, যা নাকে পরলে বিষ শরীরে ঢুকবে না। এই আবিষ্কারের সঙ্গে কোনও শত্রুপক্ষের সম্পর্ক নেই যে, তাদের সঙ্গে সংঘাতে যেতে হবে বলে এই লুকোচুরি দরকার। তার মনে পড়ল, জলপাইগুড়ি থেকে আসার সময় অমল সোম বলেছিলেন, এমনভাবে ঘটনাস্থলে পৌঁছতে চান, যাতে স্থানীয় মানুষ তাঁদের সম্পর্কে কৌতূহলী না হয়! ত্রিবেদীর সঙ্গে অমল সোমের কী কথা হয়েছে তা জানা না গেলেও, অর্জুন অনুমান করল অনেক বড় রহস্য তাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।

ভানু ব্যানার্জির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে ওরা সুহাসিনী চা বাগান ছেড়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে হাসিমারায় চলে এল। অমল সোম বসেছিলেন ড্রাইভারের পাশে, ওরা পেছনে। ভানু ব্যানার্জি কয়েকটা বড় বাজে চাল-ডাল-আনাজ দিয়ে দিয়েছেন, যদি প্রয়োজনে লাগে।

মেজর গম্ভীর গলায় বললেন, অর্জুন! তুমি বাইকটাকে নিয়ে এলে ভাল করতে।

অমল সোম বললেন, আমি নিষেধ করেছি। এদিকের রাস্তায় পাথর বেশি। তা ছাড়া জঙ্গলে বাইক চালালে ওখানকার বাসিন্দাদের বিরক্ত করা হবে।

মেজর কাঁধ ঝাঁকালেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, আমরা যে জঙ্গলে যাচ্ছি, তার কোনও চরিত্র, আই মিন বিশেষত্ব আছে?

অমল সোম মাথা নাড়লেন, । নীলগিরি খুব গভীর জঙ্গল। শোনা যায়, যারা ডাকাতি করে, তাদের জায়গাটা খুব প্রিয়। তবে এই সময় হাতিরা ওখানে বেশি পরিমাণে রয়েছে বলে আমরা তাদের দেখা নাও পেতে পারি। এ ছাড়া জন্তু আছে প্রচুর। নীলগিরিতে খঞ্জন নামে এক ধরনের পাখি পাওয়া যায়, সাদা বুকের ঠিক মাঝখানে কালো চিহ্ন রয়েছে। একসময় এখানকার মানুষ ওই চিহ্নটাকে শালগ্রাম শিলা অথবা বিষ্ণুর প্রতীক বলে মনে করত। এ ছাড়া পাইথন কোবরার জন্যে জঙ্গলটা বিখ্যাত।

মেজর বললেন, হুম্। কার্বলিক অ্যাসিড সঙ্গে আনা উচিত ছিল।

অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি সাপকে ভয় পান?

ঠিক ভয় নয়, ঘেন্না করি। কেমন কিলবিল করে চলে। সাবধানে পা ফেলল। জিপসির ভেতর বসেই পা সরিয়ে নিলেন মেজর।

অমল সোম বললেন, তোমরা কেউ সারাও বলে প্রাণীর নাম শুনেছ?

মেজর বললেন, সারাও? নো। অর্জুন শুনেছ? অর্জুন মাথা নেড়ে না বলল।

অমল সোম বললেন, ওর নেপালি নাম থর, আর বৈজ্ঞানিক নাম দিয়েছেন ক্যাপ্রিকরনিস সুমাত্রেনসিস্।

মেজর সঙ্গে-সঙ্গে পকেট থেকে ডায়েরি বের করে নামটা লিখে রাখলেন। অমল সোম বললেন, এটা ছাগল আর অ্যান্টিলোপের মাঝামাঝি গোছের প্রাণী। জিম করবেট যাকে গোরাল বলেছেন তার সঙ্গে এই সারাওয়ের কিছু মিল রয়েছে। এদের শরীরের তুলনায় মাথা বেশ বড়। মাথা ও মুখ গাধার মতো, কান বড়, চোয়ালের পাশে লম্বা লম্বা চুল, উচ্চতা তিন ফুটের মতো। গোল খাঁজকাটা শিং বাঁকানো মোচার মতো। বেশির ভাগের শরীরের রং হয় কালো আর পা মরচে-পড়া লাল। সারাও অদ্ভুত খাড়া পাহাড় বেয়ে স্বচ্ছন্দে ওঠানামা করতে পারে। এদের শ্রবণশক্তি তীব্র, খোলা জায়গায় আসে না। ১৮৩২ সালে ব্রায়ান হজসন এদের আবিষ্কার করেন। অমলদা নিবিষ্ট গলায় বলে যাচ্ছিলেন।

আপনি এই প্রাণীটি সম্পর্কে এত জেনেছেন কেন?মেজর প্রশ্ন করলেন।

জানতে তো সব সময় ইচ্ছে করে! তার ওপর সারাও লুপ্তপ্রায় না হলেও পশ্চিমবঙ্গে বিরল হয়ে এসেছে। হঠাৎ বিদেশে এর চাহিদা বেড়েছে। এক-একটি প্রমাণ সাইজের সারাও অন্তত এক লক্ষ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এমন খবরও আছে।

এক লক্ষ টাকা? তা হলে ওর মাংসের কেজি কত?

শুধু মাংস নয়, ওর শিং, লোম, ক্ষুর সব কিছুরই চাহিদা। জার্মানীর এক বৈজ্ঞানিক নাকি আবিষ্কার করেছেন, সারাওয়ের শিঙের গুড় খেলে বাত সেরে যায়। বাত হয় প্রৌঢ় অথবা বৃদ্ধদের। ওই বয়সী মানুষের হাতে টাকা থাকা স্বাভাবিক। সুস্থভাবে চলাফেরা করার জন্যে সেই সব মানুষ দুহাতে খরচ করতে রাজি। কথাগুলো বলে আচমকা চুপ করে গেলেন অমল সোম। একদৃষ্টিতে চা বাগান দেখতে লাগলেন।

এখন জিপসি যাচ্ছে পাথর-বিছানো পথ ধরে। এক দিকে চা-গাছগুলো গালচের মতো বিছানো, অন্য দিকে জঙ্গল। অর্জুনের মাথায় বিদ্যুৎ চলকে উঠল। অমল সোম কি এখানে সারাও-এর সন্ধানে এসেছেন না, তাঁর শিকারীর তল্লাশে? স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে মেজরের ফুলের ব্যাপারে তিনি তেমন উৎসাহী নন, হলে এ নিয়ে আলোচনা কতেন। জলপাইগুড়ির এস পি এবং কোচবিহারের ফরেস্ট ডিপার্টমেন্টের বড় কর্তা কি জানেন অমল সোমের আসার উদ্দেশ্য কী? অর্জুনের খুব খারাপ লাগছিল। আজকাল অমল সোম কোনও ব্যাপারেই তার সঙ্গে আলোচনা করেন না। যেদিন থেকে সে নিজে সত্যসন্ধানে নেমে পড়েছে, সেদিন থেকেই উনি তার সঙ্গে দূরত্ব রেখে চলেছেন। অথচ ওই মানুষটিকে সে তার গুরুদেব বলে মনে করে। সে ঠিক করল, নিজে থেকে না বললে একটা প্রশ্নও করবে না। বেড়াতে এসেছে, খাবেদাবে, বেড়িয়ে চলে যাবে। আর মেজর যদি সাহায্য চান, তা হলে ফুলের সন্ধান করবে।

ওপাশে গাড়ির আওয়াজ হচ্ছিল। অর্জুন দেখল একটা নীল মারুতি ধুলো উড়িয়ে আসছে। দেখামাত্রই তার মনে নীল চ্যাটার্জির মুখ ভেসে উঠল। কিন্তু মারুতিটা আসছে সোজা আর প্রচণ্ড জোরে। হঠাৎ অমলদা বললেন, ড্রাইভার ভাই, আপনি যেমন চালাচ্ছেন তেমন চালান, সাইড দেওয়ার জন্যে নীচে নেমে যাওয়ার দরকার নেই।

প্রায় মুখোমুখি ধাক্কা লাগতে লাগতে দুটো গাড়ি দাঁড়িয়ে গেল। উলটোদিকের গাড়ি এত জোরে ব্রেক কষেছিল যে, চাকার শব্দ হল মারাত্মক। গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে চালক জিজ্ঞেস করল, কী রে, মরার ইচ্ছে হয়েছে নাকি?

অমল সোম জবাব দিলেন, মৃত্যু তো আপনি ডেকে এনেছিলেন। এত ছোট রাস্তায় অত জোরে গাড়ি চালাচ্ছিলেন কেন, তার জবাব আগে দিন।

অর্জুন ততক্ষণে চালককে চিনতে পেরেছে। জলপাইগুড়ির শিল্পসমিতি পাড়ার বরেন ঘোষালের ছোট ভাই, যে হাবুকে প্রায় চাপা দিয়ে ফেলেছিল।

Category: ফলে বিষের গন্ধ (১৯৯৬)
পূর্ববর্তী:
« ০৬. দুটো হাতিকে সঙ্গী করে
পরবর্তী:
০৮. তুমি আমাকে গাড়ি চালানো শেখাচ্ছ চাঁদু »

Reader Interactions

Leave a Reply Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

বাংলা লাইব্রেরি : উল্লেখযোগ্য বিভাগসমূহ

লেখক ও রচনা

অনুবাদ সাহিত্য

সেবা প্রকাশনী

ডিকশনারি

কৌতু্ক / জোকস

লিরিক

রেসিপি

কোরআন

হাদিস

ত্রিপিটক

মহাভারত

রামায়ণ

পুরাণ

গীতা

বাইবেল

বিবিধ রচনা

বাংলা ওসিআর

Download Bangla PDF

হেলথ

লাইব্রেরি – ফেসবুক – PDF

top↑