০১. সাতসকালে হাবু এল

সাতসকালে হাবু এল।

অর্জুন তখন সবে চায়ের কাপে চুমুক দিয়েছে, দরজায় দাঁড়িয়ে একগাল হাসল হাবু। কোনও কোনও মানুষ, দেখতে যত খারাপই হোক, হাসলে এক ধরনের সুন্দর হয়ে ওঠে, হাবুও সেইরকম। পাজামার ওপর হাওয়াই শার্ট সোয়েটারে ঢেকে এই সময় ওর এখানে আসাটা অনর্থক হতে পারে না। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে হাবু অমল সোমের বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে পা বাড়ায় না। অমলদা যে দীর্ঘকাল জলপাইগুড়ির বাড়ি ছেড়ে বাইরে আছেন, তা শুধু হাবুর ভরসায়। অথচ মানুষটি কথা বলতে পারে না, বলতে চেষ্টা করলে মুখে অদ্ভূত যন্ত্রণার সঙ্গে অস্পষ্ট শব্দ বের হয়। কিন্তু ওর বুদ্ধি খুব। অমলদার সঙ্গে চমৎকার বোঝাপড়া আছে।

কী ব্যাপার হাবু? অর্জুন সোজা হয়ে বসল।

দুটো হাত শূন্যে কোনও ছবি আঁ, পর পর দুবার। অর্জুন অর্থটা বোঝার চেষ্টা করল। সে কিছুই বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করল, কোনও খবর আছে?

হাবু মাথা নাড়ল। হ্যাঁ।

অমলদার?

হাবু এবার দাঁত বের করে সম্মতি জানাল।

অমলদার চিঠি এসেছে?

দ্রুত মাথা নেড়ে না বলে একটা হাত শূন্যে ঘুরিয়ে মেঝের দিকে নামাল। অর্জুন চমকে উঠল, অমলদা ফিরে এসেছেন?

হাবু আবার দাঁত বের করে হেসে হাত নেড়ে অর্জুনকে ডাকল।

অর্জুন সঙ্গে সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। অমলদা ফিরে এসেছেন এটা একটা দারুণ খবর। এই মানুষটির কল্যাণেই সে আজ পরিচিতি লাভ করেছে। তার সত্যানুসন্ধান অভিযান শুরুই হত না যদি অমল সোম তাকে উৎসাহিত না করতেন। জলপাইগুড়ি শহরের হাকিমপাড়ায় চুপচাপ বসে থাকা ওই বিপত্নীক মানুষটির উপস্থিত বুদ্ধি এবং ক্ষমতা বড় শহরে গেলে শোরগোল ফেলে দিত অনায়াসেই। সমস্যায় পড়ে অনেকেই ওঁর কাছে আসত এবং সেগুলো অমলদা সমাধান করতেন অনায়াসে। কিন্তু হঠাৎই সংসার এবং স্থির জীবন সম্পর্কে বিতৃষ্ণা এসে যায় ওঁর। অর্জুন তখন ওঁর কাছে শিক্ষানবিশি করছিল। অমলদাকে পাশে না পেলে সে অথই জলে পড়বে বলে মনে হয়েছিল। কিন্তু অমলদা তাকে যে সাহস জুগিয়েছিলেন, তারই ওপর নির্ভর করে ও সত্যানুসন্ধানের কাজ একাই করে যাচ্ছে।

মাকে অমলদার ফিরে আসার খবরটা দিয়ে অর্জুন তার লাল বাইকে উঠে বসল। হাবু পেছনে উঠে অর্জুনের কোমর এমন করে জড়িয়ে ধরল যে বসতে অসুবিধে হচ্ছিল। অর্জুন যত তাকে আলগা করে ধরতে বলে তত তার বাঁধন শক্ত হয়। অর্জুন বাইক থামিয়ে মাটিতে নেমে হাবুকে দেখাল, কোথায় ওকে ধরতে হবে। হঠাৎ একটা নীল মারুতি প্রচণ্ড জোরে ছুটে এসে ওদের প্রায় গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেল। ভয়ের চোটে হাবু আছড়ে পড়ল বাইকটার ওপর। তারপরই উঠে দাঁড়িয়ে দৌড় লাগাল গাড়িটাকে ধরতে। রাগে অন্ধ হয়ে দু হাত মাথার ওপর তুলে চিৎকার করতে করতে ছুটে যাওয়া মানুষটিকে দেখে কষ্ট হল অর্জুনের। জলপাইগুড়ি শহরে এত বেপরোয়াভাবে কেউ গাড়ি চালায় না। চৌধুরী মেডিক্যালের রামদা সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন। বললেন, উৎপাত।

অর্জুন তাঁকে জিজ্ঞেস করল, চেনেন?।

রামদা বললেন, আলাপ নেই। যা শুনছি, তাতে আলাপ করার আগ্রহও নেই। শিল্পসমিতি পাড়ার বরেন ঘোষালের ছোট ভাই। বোম্বে না কোথায় থাকে। এখানে এসে নিজেকে খুব তালেবর ভাবছে। হবে একদিন অ্যাকসিডেন্ট।

হাবু দাঁড়িয়ে ছিল দূরে। অর্জুন বাইক নিয়ে কাছে এসে ওকে পেছনে তুলল।

গেট খুলে হাবুই ঢুকল প্রথম। দুটো শালিক লতিয়ে ওঠা মটরশুটি গাছে ঠোকর দিচ্ছে। হারু শব্দ করে তেড়ে যেতে তারা উড়ল। মাটি থেকে একটা ঢেলা তুলে শূন্যে ছুঁড়ল হাবু। রাগে তার চোখমুখ বিকৃত হয়ে গেছে। অর্জুনের মনে হল নীল মারুতির ওপর রাগটা হাবু এভাবেই মিটিয়ে নিল।

দরজা খোলাই ছিল। অমলদা ইজি-চেয়ারে বসে বাংলা কাগজ পড়ছিলেন। মুখ তুলে অর্জুনকে দেখে বললেন, এসো।

অমলদার চুলগুলো এখন একদম সাদা। ফরসা নোগা মানুষটিকে অন্যরকম দেখাচ্ছে। অর্জুন খুব খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করল, কখন এলেন?

এই তো! বসো। তারপর কাজকর্ম কীরকম চলছে?

মোটামুটি। ওঃ, কী ভাল লাগল আপনাকে দেখে। আপনি যে আবার ফিরে আসবেন, তা আমি ভাবতেও পারিনি। কথাগুলো না বলে পারল না অর্জুন।

কেন? তুমি কি ভেবেছিলে আমি সন্ন্যাসী হয়ে গিয়েছি? অমলদা হাসলেন।

অমলদার সঙ্গে কথা বলতে লাগল অর্জুন। ওর মনে হচ্ছিল, মানুষটি আবার আগের মতো সহজ হয়ে গেছেন। উধাও হওয়ার আগে ওঁর সঙ্গে কথা বলা আনন্দদায়ক ছিল না। পাঁচটা প্রশ্ন করলে হয়তো একটার জবাব পাওয়া যেত। কথা বলতে বলতে অর্জুন একটা আওয়াজ পাচ্ছিল। খুব গম্ভীর এবং রাগী আওয়াজ। একটানা, থামছে না। অর্জুনকে বারংবার মুখ ফেরাতে দেখে অমলদা বললেন, ওটা নাক ডাকার শব্দ।

নাক ডাকা? এত জোরে?

রাত্রে বাড়ির গেট থেকেও শুনতে পাবে। যাও, দেখে এসো।

এ বাড়িতে এতদিন হাবু একা ছিল। তা হলে অমলদার সঙ্গে কেউ এসেছে। ওরকম আওয়াজ হলে কারও চোখে ঘুম আসা খুব মুশকিল। অর্জুন উঠল। ভেতরের বারান্দায় পা দিতেই বুঝল আওয়াজ বের হচ্ছে পাশের ঘর থেকে, যার দরজা বন্ধ, কিন্তু বাগানের দিকের জানালা খোলা। অচেনা লোকের। যতই নাক ডাকুক, ঘুম ভাঙিয়ে দরজা খোলানোর কোনও যুক্তি নেই। অর্জুন বাগানে নেমে পড়ল। দেওয়ালের খাঁজে পা রেখে শরীর সামান্য তুলে জানালার শিক ধরে ভেতরে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেল সে। তার গলা থেকে চিৎকার ছিটকে এল, আরে! কী আশ্চর্য!

আওয়াজটা ঈষৎ কম হল। দাড়িগোঁফ ভর্তি বিশাল মুখোনা সামান্য নড়ল। তারপর আবার যা ছিল তাই হয়ে গেল। মনে হচ্ছিল জঙ্গলের মধ্যে টাইফুন বয়ে যাচ্ছে। অর্জুন চিৎকার করে উঠল আবার মেজর। মেজর?

আচমকা শব্দাবলী থেমে গেল। চোখ দুটো পিটপিট করে উঠল। মুখটা এবার জানালার দিকে ফিরল, কিন্তু বোঝা গেল স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছেন না বিশাল চেহারার মানুষটি। ডান হাত হাতড়ে আবিষ্কার করলেন বালিশের পাশে রাখা চশমা। সেটি নাকে গলিয়েই অত বড় শরীরটা লাফিয়ে উঠল, হের অর্জুন।

সঙ্গে সঙ্গে চওড়া হাতটা বেরিয়ে এল গরাদের ফাঁক দিয়ে। অর্জুন হাসতে হাসতে হাত মিলিয়ে বলে উঠল, উঃ।

সেটা গ্রাহ্য না করে মেজর বললেন, উঃ। কতদিন পর তোমার দেখা পেলাম ইয়ংম্যান। উম, একটু বড় দেখাচ্ছে, অ্যাডাল্ট হয়ে গেলে এর মধ্যে?

এর মধ্যে মানে? কতদিন পর দেখা হল হিসেব করুন।

তা ঠিক। আমাকে কেমন দেখাচ্ছে? বৃদ্ধ?

নো। নট অ্যাট অল।

ঠিক। এই কথাটা আমি সবাইকে বলি। সুস্থ যদি থাকতে চাও তা হলে নিজেকে তরুণ ভাবো। আচ্ছা, ড়ুয়ার্সে কি জন্তুজানোয়ার খুব কমে গেছে?

একেবারে প্রসঙ্গের বাইরে প্রশ্ন শুনে অর্জুন বুঝল মেজর একই রকম রয়ে গেছেন। সে মাথা নাড়ল, তেমন রিপোর্ট পড়িনি।

খোঁজ নাও। গতরাত্রে আমি মশারি টাঙাইনি অথচ কোনও মশা আমাকে কামড়ায়নি। মশারা কখনওই ভেজিটেরিয়ান হতে পারে না। তার মানে ওরা এখানে দুর্লভ।

মশাদের আপনি জন্তু-জানোয়ারের মধ্যে ফেলেছেন?

হোয়াই নট? মশা রক্তপায়ী জীব এবং শুধু পান করেই থেমে থাকে না, ম্যালেরিয়ার জার্মস ঢুকিয়ে দিয়ে যায়। একটা বাঘ তোমার রক্ত খাবে চেটে, চেটে কিন্তু তোমার শরীরে রোগ ঢোকাবে না। কারেক্ট? সিরিয়াস মুখে বললেন মেজর।

শিক ধরে আধঝোলা হয়ে কথা বলতে অসুবিধে হচ্ছিল কিন্তু মেজরের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই সেদিকে। বিছানায় বসে এমন ভঙ্গিতে কথা বলছেন যেন অর্জুনও সেই একই আরামে রয়েছে। সে বলল, এবার আমি নামছি।

নামছ মানে?

আমি আধঝোলা হয়ে কথা বলছি।

অ্যাঁ? তাই নাকি! দ্যাটস ব্যাড। জানালা দিয়ে কেউ কারও সঙ্গে কথা বলে? তোমার উচিত ছিল দরজায় নক করে আমাকে ডাকা। না, অর্জুন, এটা তোমার কাছে আমি এক্সপেক্ট করিনি।

অর্জুন মেনে নিল, আমি দুঃখিত কিন্তু।

না। কোনও অজুহাত নয়। এখানকার বাঙালিদের অনেক গণ্ডগোল। তোমার খুব প্রিয় বন্ধুর বাড়িতেও তুমি হুট করে যেতে পারো না। টেলিফোনে বা অন্য কোনওভাবে তাকে জানাবে যাওয়ার কথা। তার তত অসুবিধে থাকতে পারে। হয়তো সে ওই সময় একা থাকতে চাইছে, তুমি গায়ে পড়ে ডিস্টার্ব করছ। নিজের প্রয়োজনটাই ভাববা অন্যের কথা চিন্তা করো না। মেজর দাড়িতে হাত বোলালেন।

আমি দুঃখিত মেজর। অর্জুন নীচে নেমে পড়ল।

মেজরের এসব কথায় একটুও রেগে গেল না অর্জুন। উনি তো ভুল বলেননি। আমাদের আচার-আচরণে এমন অনেক গোলমাল আছে, যা নিয়ে আমরা ভাবিই না।

মেজরের সঙ্গে ওর আলাপ কালিম্পং-এ বিন্ধু সাহেবের বাড়িতে যাওয়ার সময়। বিষ্ণু সাহেবের বোনের দেওর উনি। লোকটি প্রকৃতিপাগল। প্রকৃতির মধ্যে বিরল কিছু খুঁজে বেড়ান। পৃথিবীর সব অদ্ভুত জায়গায় দিনের পর দিন অভিযান করেছেন। সাহারায় এক দিশি কুকুরের মধ্যে মেক্সিকান রক্ত দেখতে পেয়েছিলেন। কালিম্পং-এর একটা পপি দেখিয়ে ওঁর আমেরিকান বন্ধুকে চমকে দিয়েছিলেন। মেজর এখন থাকেন আমেরিকায়। নিউ ইয়র্ক শহরের ম্যানহাটানে ওঁর ফ্ল্যাটে অর্জুন থেকে এসেছে। অমল সোমের সঙ্গে নিশ্চয়ই বিষ্টু সাহেব ওঁর যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন।

হাবু চা নিয়ে এল। অর্জুন একটু আগে বাড়িতে চা খেয়ে এলেও আবার কাপ তুলে জিজ্ঞেস করল, এখন আপনি এখানে থাকবেন তো?

হাবুটার জন্যে এই বাড়িটা যখন বিক্রি করতে পারছি না, তখন মাঝে মাঝে এসে থাকতে হবে হে। কদিন থেকে মনে হচ্ছিল জলপাইগুড়ি জেলাটা ভাল করে দেখা হয়নি। মেজর আমেরিকায় বসে খবর পেয়েছেন জয়ন্তী অঞ্চলে এক ধরনের ফুল ফোটে, যার গন্ধে মানুষ কেন বড় প্রাণীও অজ্ঞান হয়ে যায়, উনি সেই ফুল দেখতে চান। আমি এখানে এতকাল থাকলাম অথচ জানতে পারিনি একথা। তাই নিজের জেলাটা ঘুরে-টুরে দেখতে চাই। তোমার এখন কাজের চাপ কীরকম?

কোনও চাপ নেই। অর্জুন মাথা নাড়ল।

বাঃ! তা হলে এই জেলায় কোনও ক্রাইম হচ্ছে না?

বলতে বলতে বাড়ির সামনে গাড়ির আওয়াজ এসে থেমে গেল। অমলদা বললেন, জিপে করে কেউ এল বলে মনে হচ্ছে।

অর্জুন চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বাইরের বারান্দায় এসে দেখল জিপ থেকে জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার ভট্টাচার্যসাহেব নামছেন। অর্জুনকে দেখে হাত নাড়লেন তিনি। এই মানুষটিকে একজন আই. পি. এস. বলে চট করে মনেই হয় না। বারান্দায় উঠে ভট্টাচার্যসাহেব বললেন, গুড মর্নিং। মিস্টার সোমের সঙ্গে দেখা করা যাবে?

নিশ্চয়ই। কিন্তু আপনি জানলেন কী করে উনি এসেছেন?

কলকাতা থেকে খবর এসেছে।

কথার মধ্যেই অমলদা বেরিয়ে এলেন। অর্জুন ওঁর সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল ভট্টাচার্যসাহেবের। ওঁকে ভেতরে নিয়ে গিয়ে বসানো হল। বোঝা যাচ্ছিল এস. পি. অমল সোম সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না। কলকাতা থেকে হুকুম এসেছে ওঁর সঙ্গে সহযোগিতা করতে। তিনি ধরে নিয়েছেন অমল সোম একজন কেউকেটা এবং সেই কারণেই সকাল সকাল চলে এসেছেন।

অমলদা হাসলেন, সত্যি, সরকারি কর্মচারীদের ব্যাপারই আলাদা। হয় ছাব্বিশ মাসে বছর, নয় ধরে আনতে বললে বেঁধে আনা। না মিস্টার ভট্টাচার্য, আপাতত কোনও সাহায্য চাই না। তেমন দরকার হলে নিশ্চয়ই জানাব। আপনি যদি অনুগ্রহ করে এখানকার ডি, এফ. ওকে আমার কথা জানিয়ে দেন, তা হলে খুশি হব।

ভট্টাচার্যসাহেব বললেন, অবশ্যই। কিন্তু আমার একটু কৌতূহল হচ্ছে। আপনার মিশনটা কী?

অমলদা বললেন, একটা বিষাক্ত ফুল খুজতে চাই। যার গন্ধে মানুষ তিরিশ সেকেন্ডের বেশি বাঁচতে পারে না। আপনি কি এরকম ফুলের কথা শুনেছেন?

ভট্টাচার্যসাহেব অবাক হয়ে বললেন, না। এরকম ফুল জলপাইগুড়ি জেলায় আছে? অদ্ভুত ব্যাপার! যদি থাকে তা হলে তো মানুষ মারা যেত এবং আমি খবর পেতাম।

হয়তো মারা যাওয়ার পর লোকে কারণটা বুঝতে পারেনি।

ওই ফুলের খবর আপনি কী করে পেলেন?

আমি পেয়েছি মেজরের কাছে। পৃথিবীর যাবতীয় রহস্যময় জিনিসের সন্ধান করাই ওঁর কাজ। হয়তো উনি যে খবরটা পেয়েছেন সেটা সত্যি নয়, কিন্তু অনুসন্ধান না করে তো সেটা জানা যাবে না।

এই সময় চিৎকার শোনা গেল। চিৎকার না বলে গর্জন বলাই ভাল। অর্জুন দ্রুত উঠোনের বারান্দায় ছুটে গেল। সে দেখল মেজর ঊর্ধ্বমুখী হয়ে সমানে হাত নেড়ে অদ্ভুত সব শব্দ উচ্চারণ করছেন। উচ্চারণের ধরনে সেগুলো যে গালাগাল, তা অনুমান করা যায়। অর্জুন জিজ্ঞেস করতে আঙুল তুলে আমগাছের ডাল দেখালেন। সেখানে বসে একটা কাক মুখে টুথব্রাশ নিয়ে ঘাড় বেঁকিয়ে মেজরকে দেখছে।

অর্জুন হেসে ফেলল, ও কী করে টুথব্রাশ পেল?

কাকটার গলার আওয়াজ শুনে মনে হয়েছিল ওটার গায়ে মঙ্গোলিয়ান রক্ত আছে। দেখতে এলাম। ছোঁ মেরে আমার হাত থেকে ব্রাশটা নিয়ে গেল!

ছোঁ মেরে? কাকের তো এত সাহস হয় না?

মঙ্গোলিয়ান কাক দেখেছ! পাজির পাঝাড়া।

আপনি এতক্ষণ কি ওই ভাষায় গালাগাল দিচ্ছিলেন?

গালাগাল কে বলল? আমি আদর করে ডাকছিলাম।

আদর? ওইভাবে ধমকানো কি আদর হতে পারে?

মেজর মাথা নাড়লেন হতাশায়, তোমাকে নিয়ে পারা গেল না। যে যা, তার বাইরে কিছু ভাবতে পারো না? তুমি যদি বোলপুরের স্টেশন মাস্টার হতে আর রবীন্দ্রনাথ যদি সেখানে দাড়ি কামিয়ে ট্রেন থেকে নামতেন, তা হলে তো তাঁকে চিনতেও পারতে না!