১২. মনুসংহিতা – দ্বাদশ অধ্যায়

মনুসংহিতা – দ্বাদশ অধ্যায়

১। চাতুৰ্ব্বর্ণ্যস্য কৃৎস্নোহয়মুক্তো ধর্মস্ত্বয়ানঘ।

কর্মণাং ফলনির্ব্বৃত্তিং শংস নস্তত্ত্বতঃ পরাম্॥

হে নিস্পাপ, চতুর্বর্ণের এই সমগ্ৰ ধৰ্ম আপনি বলেছেন। জন্মান্তরার্জিত কর্মফলপ্রাপ্তির বিষয় আমাদের যথার্থরূপে বলুন।

২। স তানুবাচ ধর্মাত্মা মহষীন্ মানবো ভৃগুঃ।

তস্য সৰ্ব্বস্য শৃণুত কর্মযোগস্য নির্ণয়ম্‌॥

মনুর অপত্য ধার্মিক ভৃগু সেই মহর্ষিগণকে বললেন—এই সকল কর্মফলের সিদ্ধান্ত শোন।

৩। শুভাশুভফলং কৰ্ম্ম মনোবাগ্‌দেহসম্ভবম্‌।

কর্ম্মজা গতয়ো নৃণামুত্তমাধমমধ্যমাঃ॥

শুভাশুভফলপ্রদ কর্ম কায়মনোবাক্যসম্ভুত। মানুষের উত্তম, মধ্যম ও অধম গতি কর্মজাত।

৪। তস্যেহ ত্রিবিধস্যাপি ত্র্যধিষ্ঠানস্য দেহিনঃ।

দশলক্ষণযুক্তস্য মনো বিদ্যাৎ প্রবর্ত্তকম্॥

সেই দেহসম্বন্ধী উৎকৃষ্ট মধ্যম ও অধম ভেদে মনোবাক্‌কায়াশ্রিত (বক্ষ্যমাণ) দশলক্ষণযুক্ত কর্মের মনকে প্রবর্তক বলে জানবে।

৫। পরদ্রব্যেষ্বভিধ্যানং মনসানিষ্টচিন্তনম্।

বিতথাভিনিবেশশ্চ ত্রিবিধং কর্ম মানসম্॥

অপরের ধন (অন্যায়রূপে গ্রহণের) চিন্তা, মনে (ব্রহ্মবধাদি) অনিষ্ট চিন্তা, (পরলোক নেই, দেহই আত্মা) এইরূপ অভিনিবেশ—এই ত্রিবিধ (অশুভফলদ) মানসিক কর্ম।

৬। পারুষ্যমনৃতঞ্চৈব পৈশুন্যঞ্চাপি সৰ্ব্বশঃ।

অসম্বদ্ধপ্রলাপশ্চ বাঙ্ময়ং স্যাচ্চতুর্ব্বিধম্॥

বাক্‌পারুষ্য, মিথ্যাবাক্য, পরদোষাবিষ্কার (রাজার, দেশের বা পুরসম্বন্ধীয়) নিষ্প্রয়োজন প্রলাপ—(অশুভফলজনক) এই চার প্রকার বাচনিক কর্ম।

৭। অদত্তানামুপাদানং হিংসা চৈবাবিধানতঃ।

পরদারোপসেবা চ শারীরং ত্রিবিধং স্মৃতম্‌॥

অদত্ত ধনগ্রহণ, অশাস্ত্রীয় হিংসা ও পরদারগমন—শারীর (অশুভলক্ষণ) কর্ম তিন প্রকার।

৮। মানসং মনসৈবায়মুপভুঙ্‌ক্তে শুভাশুভম্‌।

বাচা বাচাকৃতং কর্ম কায়েনৈব চ কায়িকম্॥

মানস কর্মের শুভাশুভ ফল মন দ্বারাই ভোগ করে, বাক্য দ্বারা কৃত কর্মের ফল বাক্য দ্বারা এবং শরীরের দ্বারা কৃত কর্মফল শরীরের দ্বারাই ভোগ করে।

৯। শরীরজৈঃ কর্মদোষৈর্যাতি স্থাবরতাং নরঃ।

বাচিকৈঃ পক্ষিমৃগতাং মানসৈরত্যজাতিতাম্‌॥

মানুষ শরীর দ্বারা কৃত কর্মের দোষে স্থাবরত্ব প্রাপ্ত হয়, বাচিক কর্ম দ্বারা পক্ষী ও পশু হয়,মানসিক কর্ম দ্বারা চণ্ডালাদি জাতি প্রাপ্ত হয়।

১০। বাগ্‌দণ্ডোহথ মনোদণ্ডঃ কায়দণ্ডস্তথৈব চ।

যস্যৈতে নিহিতা বুদ্ধৌ ত্রিদণ্ডীতি স উচ্যতে ॥

যার বাক্য, মন ও কায়ের দণ্ড (দমন) বুদ্ধিতে অবস্থান করে, সে ত্রিদণ্ডী বলে কথিত হয়।

১১। ত্রিদমেতন্নিক্ষিপ্য সৰ্ব্বভূতেষু মানবঃ।

কামক্রোধৌ তু সংযম্য ততঃ সিদ্ধিং নিযচ্ছতি ॥

এই ত্ৰিদণ্ড সর্বভূতে নিক্ষেপ করে কাম ক্রোধকে সংযত করে মানুষ সিদ্ধিলাভ করে।

১২। যোহস্যাত্মনঃ কারয়িতা তং ক্ষেত্রজ্ঞং প্রচক্ষতে।

যঃ করোতি তু কর্মাণি স ভূতাত্মাচ্যতে বুধৈঃ ॥

যে শরীরকে কার্য করায় তাকে ক্ষেত্রজ্ঞ বলা হয়, যে কর্মসমূহ করে সে পণ্ডিতগণ কর্তৃক ভূতাত্মা বলে কথিত হয়।

১৩। জীবসংজ্ঞাস্তরাত্মান্যঃ সহজঃ সৰ্ব্বদেহিনাম্‌।

যেন বেদয়তে সৰ্ব্বং সুখং দুঃখঞ্চ জন্মসু ॥

সকল দেহধারীর জীবসংজ্ঞক অন্য সহজাত অন্তরাত্মা আছে, যার দ্বারা জন্মে জন্মে সকল সুখ দুঃখ অনুভব করে।

১৪। তাবুভৌ ভূতসংপৃক্তৌ মহান্ ক্ষেত্র এব চ।

উচ্চাবচেষু ভূতেষু স্থিতং তং ব্যাপ্য তিষ্ঠতঃ ॥

(ক্ষিতি প্রভৃতি পঞ্চ) ভূত সংপৃক্ত ঐ মহত্তত্ত্ব ও ক্ষেত্রজ্ঞ উভয়ই উৎকৃষ্ট নিকৃষ্ট জীবে স্থিত (পরমাত্মাকে) ব্যাপ্ত হয়ে থাকে।

১৫। অসংখ্যা মূর্ত্তয়স্তস্য নিষ্পতন্তি শরীরতঃ।

উচ্চাবচেষু ভূতানি সততং চেষ্টয়ন্তি যাঃ ॥

তাঁর (ঐ পরমাত্মার) দেহ থেকে (উৎপন্ন) অসংখ্য জীব নিঃসৃত হয়ে বিবিধ ভূতসমূহকে সর্বদা কর্মে প্রেরণা দেয়।

১৬। পঞ্চভ্য এব মাত্রাভ্যঃ প্ৰেত্য দুষ্কৃতিনাং নৃণাম্‌।

শরীরং যাতনার্থীয়মন্যদুৎপদ্যতে ধ্রুবম্॥

দুষ্কর্মকারী লোকের পরলোকে যাতনা অনুভবের জন্য (ক্ষিতি আদি) পঞ্চ (ভূতের) অংশ থেকে অন্য (লিঙ্গ) শরীর নিশ্চয়ই জন্মে।

১৭। তেনানুভয় তা যামীঃ শরীরেণেই যাতনাঃ।

তাম্বেব ভূতমাত্রাসু প্রলীয়ন্তে বিভাগশঃ॥

সেই শরীরের দ্বারা যমনির্দিষ্ট সেই যাতনা ভোগ করে ঐ সকল ভূতের অংশেই ভাগে ভাগে বিলীন হয়ে থাকে।

১৮। সোহানুভূয়াসুখোদর্কান্‌ দোষান্ বিষয়সঙ্গজান্‌।

ব্যপেতকল্মষোহভ্যেতি তাবেবোভৌ মহৌজসেী॥

ঐ (লিঙ্গশরীরাবচ্ছিন্ন জীব) বিষয়াসক্তিজাত পরিণামে দুঃখজনক দোষ (হেতু) দুঃখ ভোগ করে (ভোগাবসানে) পাপমুক্ত হয়ে ঐ মহৎ ও ক্ষেত্রজ্ঞ এই উভয়কে আশ্রয় করে।

১৯। তৌ ধৰ্ম্মং পশাতন্তস্য পাপঞ্চাতন্দ্রিতৌ সহ।

যাভ্যাং প্রাপ্নোতি সংপৃক্তঃ প্রেত্যেহ চ সুখাসুখম্‌॥

ঐ দুইটি (মহৎ ও ক্ষেত্রজ্ঞ) অনলসভাবে (লিঙ্গশরীরাবচ্ছিন্ন জীবের) ধর্মাধর্ম বিচার করে,যে ধর্মাধর্মের সঙ্গে সংপৃক্ত হয়ে জীব ইহলোক ও পরলোকে সুখ দুঃখ অনুভব করে।

২০। যদ্যাচরতি ধৰ্মং স প্রায়শোহধর্মমল্পশঃ৷

তৈরেব চাবৃতো ভূতৈঃ স্বর্গে সুখমুপাশ্লুতে॥

ঐ (জীব) যদি প্রায়ই ধর্ম আচরণ করে ও অল্প পরিমাণে অধর্মাচরণ করে, তবে ঐ (ক্ষিতিআদি) ভুত দ্বারা (স্থূলশরীরী হয়ে) স্বর্গে সুখভোগ করে।

২১। যদি তু প্রায়শোহধর্মং সেবতে ধর্মমল্পশঃ।

তৈর্ভুতিঃ স পরিত্যক্তা যামীঃ প্রাপ্নোতি যাতনাঃ॥

যদি মানুষদশায় অধিক অধর্ম ও অল্প ধর্ম করে, তাহলে মানবদেহ ত্যাগের পরে কঠিন দেহ প্রাপ্ত হয়ে যমযাতনা ভোগ করে।

২২। যামীস্তা যাতনাঃ প্রাপ্য স জীবো বীতকল্মষঃ।

তান্যেব পঞ্চ ভূতানি পুনবপ্যেতি ভাগশঃ॥

ঐ জীব সেই যমযাতনা ভোগ করে পাপমুক্ত হয়ে পুনরায় সেই পঞ্চ ভূতের ভাগ (নির্মিত মানবাদি দেহ) প্রাপ্ত হয়।

২৩। এত দৃষ্‌ট্বাস্য তবস্য জীবস্য গতীঃ স্বেনৈব চেতসা।

ধৰ্ম্মতোধৰ্ম্মধর্তশ্চৈব ধৰ্ম্মে দধ্যাৎ সদা মনঃ॥

নিজের মনের দ্বারাই জীবের ধর্ম ও অধর্ম হেতু গতিসমূহ লক্ষ্য করে সর্বদা ধর্মে মন দিবে।

২৪। সত্ত্বং রজস্তমশ্চৈব ত্রীন্‌ বিদ্যাদাত্মনো গুণান্‌।

যৈর্ব্যাপ্যেমান্ স্থিতো ভাবান্মহান্ সর্ব্বানশেষতঃ॥

সত্ত্ব, রজঃ ও তমঃ—এই তিনটিকে আত্মার গুণ বলে জানবে, যাদের দ্বারা ব্যাপ্ত মহত্তত্ত্ব (স্থাবরজঙ্গমরূপ) সকল পদার্থে নিঃশেষে ব্যাপ্ত হয়ে থাকে।

২৫। যো যদৈষং গুণো দেহে সাকল্যেনাতিরিচ্যতে।

স তদা তদ্‌গুণপ্রায়ং তং করোতি শরীরিণম্॥

এই তিন গুণের মধ্যে যে গুণের আধিক্য যে দেহে থাকে, সেই দেহধারীকে গুণলক্ষণযুক্ত করে।

২৬। সত্ত্বং জ্ঞানং তমোছজ্ঞানং রাগদ্বেষৌ রজঃ স্মৃতম্‌।

এতদ্ব্যাপ্তিমদেতেষাং সৰ্ব্বভূতাশ্রিতং বপুঃ॥

সত্ত্ব জ্ঞান, তমঃ অজ্ঞান, রজঃ রাগ ও দ্বেষ বলে খ্যাত; এই গুণগুলির এই (জ্ঞানাদি দ্বারা) সর্বজীবের শরীর ব্যাপ্ত।

২৭। তত্র যৎ প্রীতিসংযুক্তং কিঞ্চিদাত্মনি লক্ষয়েৎ।

প্রশান্তমিব শুদ্ধাভং সত্ত্বং তদুপধারয়েৎ॥

সেই আত্মাতে যা কিছু প্রীতিযুক্ত প্রকাশরূপ যে শুদ্ধ প্রশান্তভাব অনুভব করা যায়, তাকে সত্ত্ব বলে জানবে।

২৮। যত্তু দুঃখসমাযুক্তমপ্রীতিকবমাত্মনঃ।

ভদ্রজোহপ্রতিপং বিদ্যাং সততং হারি দেহিনাম্॥

যা আত্মার পক্ষে দুঃখযুক্ত, অপ্রীতিকর ও শরীরধারিগণের সর্বদা বিষয়স্পৃহার উৎপাদক (তত্ত্বনিবারকত্ব হেতু) প্রতিকুল, সেই গুণকে রজঃনামে জানবে।

২৯। যৎ তু স্যাম্মোহসংযুক্তমব্যক্তং বিষয়াত্মকম্‌।

অপ্রতর্কমিবিজ্ঞেয়ং তমস্তদুপধারয়েৎ॥

যা মোহযুক্ত, অব্যক্ত, বিষাত্মক, যার স্বরূপ অননুমেয়, অবিজ্ঞেয়, তাকে তমঃ বলে জানবে।

৩০। ত্রয়াণামপি চৈতেষাং গুণানাং যঃ ফলোদয়ঃ।

অগ্র মধ্যে জঘন্যশ্চ তং প্রবক্ষ্যাম্যশেষতঃ॥

এই তিন গুণেরই উত্তম, মধ্যম ও অধমভেদে যে ফলোদয়, তা সম্পূর্ণভাবে বলব।

৩১। বেদাভ্যাসস্তুপো জ্ঞানং শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।

ধর্মক্রিয়াত্মচিন্তা চ সাত্ত্বিকং গুণলক্ষণম্‌॥

বেদাভ্যাস, তপস্যা, জ্ঞান, শুচিতা, ইন্দ্রিয়সংযম, ধর্মকার্য, আত্মচিন্তা—এইগুলি সাত্ত্বিক গুণের লক্ষণ।

৩২। আরম্ভরুচিতাহধৈৰ্য্যমসৎকাৰ্য্যপরিগ্রহঃ।

বিষয়োপসেবা চার্জস্রং রাজসং শুণলক্ষণম্॥

ফললাভের জন্য কর্মানুষ্ঠানশীলতা, অধৈর্য, অসৎকার্যের আচরণ ও (রূপাদি) বিষয়ে বারংবার প্রবৃত্তি রজোগুণের লক্ষণ।

৩৩। লোভঃস্বপ্নহধৃতিঃ ক্রৌর্য্যং নাস্তিক্যং ভিন্নবৃত্তিতা।

যাচিষ্ণুতা প্রমাণশ্চ তামসং গুণলক্ষণম্॥

লোভ, নিদ্রালুতা, কাতরতা, কুরতা, নাস্তিকতা, আচারভ্রষ্টতা, যাচকত্ব ও প্রমাদ তমোগুণের লক্ষণ।

৩৪। ত্রয়াণামপি চৈতেষাং গুণানাং ত্রিষু তিষ্ঠতাম্‌।

ইদং সামাসিকং জ্ঞেয়ং ক্রমশো গুণলক্ষণম্‌॥

(অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই) তিন কালে বিদ্যমান এই তিনগুণের ক্ৰমশঃ এই(বক্ষ্যমাণ) লক্ষণ সংক্ষেপে জ্ঞেয়।

৩৫। যৎ কর্ম কৃত্বা কুর্ব্বংশ্চ করিষ্যংশ্চৈব লজ্জতি।

তজ্‌জ্ঞেয়ং বিদুষা সৰ্ব্বং তামসং গুণলক্ষণম্‌॥

যে কর্ম করে, করতে করতে বা ভবিষ্যতে করতে লজ্জা বোধ হয়, সেই সব কর্ম তমোগুণলক্ষণযুক্ত বলে পণ্ডিতগণ জানেন।

৩৬। যেনাস্মিন্ কর্মণা লোকে খ্যাতিমিচ্ছতি পুষ্কলাম্।

ন চ শোচত্যসম্পত্তৌ তদ্বিজ্ঞেয়ংতু রাজসম্॥

যে কর্মদ্বারা এই পৃথিবীতে প্রচুর খ্যাতি (মানুষ) ইচ্ছা করে এবং ফললাভের অভাবে দুঃখ করে না, সেই কর্ম রজোগুণযুক্ত।

৩৭। যৎ সর্বেণেচ্ছতি জ্ঞাতুং যন্ন লজ্জতি চাচরন্।

যেন তুষ্যতি চাত্মাস্য তৎ সত্ত্বগুণলক্ষণম্॥

যে কর্ম জ্ঞানার্থে সর্বপ্রকাব যত্নে জানতে ইচ্ছা করে, যা করে লজ্জা হয় না, যার দ্বারা কার্যকারীর আত্মা তুষ্ট হয়, তা সত্ত্বগুণলক্ষণ।

৩৮। তমসো লক্ষণং কামো রজসস্তুর্থ উচ্যতে।

সত্বসা লক্ষণং ধর্মঃ শ্রৈষ্ঠ্যমেষাং যথোত্তরম্॥

তমোগুণের লক্ষণ কাম, রজোগুণের লক্ষণ অর্থ বলে উক্ত হয়, সত্ত্বগুণের লক্ষণ ধর্ম—এদের মধ্যে পর পরটি শ্রেয়।

৩৯। যেন বস্তু গুণেনৈষ্যং সংসারান্‌ প্রতিপদ্যতে।

তান্‌ সমাসেন বক্ষ্যামি সর্ব্বসাস্য যথাক্ৰমম্‌॥

এদের মধ্যে যে গুণের দ্বারা (মানুষ) এই জগতে যে গতি লাভ করে, সেইগুলি সব যথাক্রমে সংক্ষেপে বলব।

৪০। দেবত্বং সাত্ত্বিকা যান্তি মনুষ্যত্ব রাজসাঃ।

তির্য্যক্‌ত্বং তামসা নিত্যমিত্যেযা ত্রিবিধা গতিঃ॥

সত্ত্বগুণসম্পন্ন ব্যক্তিগণ দেবত্ব, রজ্যেগুণবিশিষ্ট লোকেরা মনুষ্যত্ব, তমোগুণযুক্ত জনগণ সর্বদা পশুপক্ষীর জন্ম প্রাপ্ত হয়; গতি এই ত্রিবিধ।

৪১। ত্রিবিধা ত্রিবিধৈষা তু বিজ্ঞেয়া গৌণিকী গতিঃ।

অধমা মধ্যমাগ্রা চ কর্মবিদ্যা বিশেষতঃ॥

এই গৌণগতি কর্ম ও বিদ্যা ভেদে তিন তিন প্রকার, (যথা) অধম, মধ্যম ও উত্তম।

৪২। স্থাবরাঃ কৃমিকীটাশ্চ মৎস্যাঃ সর্পাঃ সকচ্ছপাঃ।

পশবশ্চ মৃগাশ্চৈব জঘন্যা তামসী গতিঃ॥

স্থাবর পদার্থ, কৃমি, কীট, মৎস্য, সর্প, কচ্ছপ, পশু ও হরিণ১ এদের তমোণজনিত গতি।

৪৩। হস্তিনশ্চ তুরঙ্গাশ্চ শূদ্রা ম্লেচ্ছাশ্চ গর্হিতাঃ।

সিংহ ব্যাঘ্রা বরাহাশ্চ মধ্যমা তামসী গতিঃ॥

হাতী, ঘোড়া, শূদ্র, নিন্দিত ম্লেচ্ছ, সিংহ, বাঘ ও শুকর—মধ্যম তমোগুণজনিত গতি।

৪৪। চারণাশ্চ সুপর্ণাশ্চ পুরুষাশ্চৈব দাম্ভিকাঃ।

রক্ষাংসি চ পিশাচাশ্চ তামসীযুত্তমা গতিঃ॥

চারণ, পাখী, ছলপূর্বক ধর্মাচরণকারী, রাক্ষস ও পিশাচ—উত্তম তমোগুণজাত গতি ৷

৪৫। ঝল্লা মল্লা নটাশ্চৈব পুরুষাঃ শস্ত্রবৃত্তয়ঃ৷৷

দৃতপানপ্রসক্তাশ্চ জঘন্যা রাজসী গতিঃ॥

ঝল্ল, মল্প, নট, অস্ত্রজীবী লোক, দ্যুতক্রীড়া ও মদ্যপানে আসক্ত ব্যক্তি অধম রজোগুণজাত গতি।

৪৬। রাজানঃ ক্ষত্রিয়াশ্চৈব রাজ্ঞাংচৈব পুরোহিতাঃ।

বাদযুদ্ধপ্রধানাশ্চ মধ্যমা রাজসী গতিঃ॥

রাজা, ক্ষত্রিয়, রাজার পুরোহিত ও (শাস্ত্রার্থে) কলহপ্রিয় লোক মধ্যম রজোগুণজাত গতি।

৪৭। গন্ধৰ্ব্বা গুহ্যকা যক্ষা বিবুনুচরাশ্চ যে।

তথৈবাপ্সরসঃ সর্ব্বা রাজসীষুত্তমা গতিঃ॥

গন্ধর্ব, গুহ্যক, যক্ষ, দেবগণের অনুগামী (বিদ্যাধরাদি) ও সকল অপ্সরা উত্তম রজোগুণজাত গতি।

৪৮। তাপসা যতয়ো বিপ্রা যে চ বৈমানিকা গণাঃ।

নক্ষত্রাণি চ দৈত্যাশ্চ প্রথমা সাত্ত্বিকী গতিঃ॥

তপস্বী, সন্ন্যাসী, ব্রাহ্মণ, পুষ্পকাদিবিমানচারী, নক্ষত্র ও দৈত্য প্রথম সত্ত্বগুণজাত গতি।

৪৯। যজ্বান ঋষয়ো দেবা বেদা জ্যোতীংষি বৎসরাঃ।

পিতরশ্চৈব সাধ্যাশ্চ দ্বিতীয়া সাত্ত্বিকী গতিঃ॥

যজ্ঞকারী, ঋষি, দেবতা, জ্যোতিষ্কপদার্থ, বৎসর, পিতৃগণ ও সাধ্যগণ দ্বিতীয় সত্ত্বগুণজাত গতি।

৫০। ব্রহ্মা বিশ্বসৃজো ধমে মহানব্যক্তমেব চ।

উত্তমাং সাত্ত্বিকীমেতাং গতিমাহুর্মনীষিণঃ॥

ব্রহ্মা, মরীচিদি বিশ্বস্রষ্টাগণ, ধর্ম, মহত্তত্ত্ব, অব্যক্ত—মনীষিগণ একে উত্তম সত্ত্বগুণজাত গতি বলেছেন।

৫১। এষ সর্ব্বঃ সমুদ্দিষ্টস্ত্রিপ্রকারস্য কর্মণঃ।

ত্রিবিধন্ত্রিবিধঃ কৃৎস্নঃ সংসারঃ সাৰ্বভৌতিকঃ॥

(মানসিক, বাচিক ও দৈহিক এই) তিন প্রকার কর্মের (সত্ত্ব রজঃ ও তমোগুণভেদে) সকল প্রাণীব তিন তিন প্রকার এই সমগ্ৰ গতির উল্লেখ করা হল।

৫২। ইন্দ্রিয়াণাং প্রসঙ্গেন ধর্ম্মস্যাসেবনেন চ।

পাপান্‌ সংযান্তি সংসারানবিদ্বাসো নরাধমাঃ॥

ইন্দ্রিয়ভোগ্য বিষয়ে আসক্তি ও ধর্মাচরণের অভাবহেতু মূর্ব নরাধমগণ পাপযুক্ত গতি প্রাপ্ত হয়।

৫৩। যাং যা যোনিস্তু জীবোহয়ং যেন যেনেহ কর্মণা।

ক্রমশো যাতি লোকেস্মিংস্তত্তৎসৰ্ব্বং নিবোধত॥

এই জীব যে যে কাৰ্যদ্বারা ইহলোকে যে যে যোনি ক্রমে প্রাপ্ত হয়, সেই সব শোন।

৫৪। বহৃন্‌ বর্ষগণান্‌ ঘোরান্‌ নরকান্ প্রাপ্য তৎক্ষয়াৎ।

সংসারান্‌ প্রতিপদ্যন্তে মহাপাতকিনস্তমান্‌ ॥

বহু বৎসর ভীষণ নরকভোগ করে ভোগ শেষ হলে মহাপাতকীরা এই বক্ষ্যমাণ জন্মসমূহ লাভ করে।

৫৫। শ্ব-শূকর-খরোষ্ট্রাণাং গোহজাবি-মৃগ-পক্ষিণাম্‌।

চণ্ডাল-পুক্কসানাঞ্চ ব্ৰহ্মহা যোনিমৃচ্ছতি॥

ব্রহ্মহত্যাকারী কুকুর, শূকর, গাধা, উট, গাভী, ছাগ, ভেড়া, হরিণ, পক্ষী, চণ্ডাল ও পুক্কসের যোনি প্রাপ্ত হয়।

৫৬। কৃমিকীটপতঙ্গানাং বিড়ভুজাঞ্চৈব পক্ষিণাম্‌।

হিংস্ৰাণাঞ্চৈব সত্ত্বানাং সুরাপো ব্রাহ্মণো ব্রজেৎ৷৷

কৃমি, কীট, পতঙ্গ, বিষ্ঠাভোজী পক্ষী ও হিংস্র জন্তুর যোনি সুরাপায়ী ব্রাহ্মণ প্রাপ্ত হয়।

৫৭। লুতাহি-শরটানাঞ্চ তিরশ্চাঞ্চায়ুচারিণাম্‌।

হিংস্ৰাণাঞ্চ পিশাচানাং স্তেনো বিপ্রঃ সহস্রশঃ॥

স্বণপিহরী ব্রাহ্মণ মাকড়সা, সাপ, কাকলাস, জলচর পক্ষী, (কুমীরাদি) প্রাণী এবং পিশাচের যোনি সহস্রবার প্রাপ্ত হয়।

৫৮। তৃণ-গুল্ম-লতানাঞ্চ ক্ৰব্যাদাং দংক্ট্রিণামপি।

ক্রূরকর্ম্মকৃতাঞ্চৈব শতশো গুরুতল্পগঃ॥

গুরুদারগামী তৃণ, গুল্ম, লতা, কাঁচামাংসভোজী (গুধ্রাদি) পক্ষী, দস্তযুক্ত জন্তু, হিংসাদিক্রূরকর্মকারী (ব্যাঘাদি) পশুর যোনি শতবার প্রাপ্ত হয়।

৫৯। হিংস্র ভবন্তি ক্ৰব্যাদাঃ কৃময়োহভক্ষ্যভক্ষিণঃ।

পরম্পরাদিনঃ স্তেনাঃ প্রেতান্তাস্ত্রীনিষেবিণঃ॥

যারা প্রাণিহিংসারত, তারা (মৃত্যুর পরে) কাঁচামাংসভোজী (বিড়ালাদির) যোনিতে জন্মে, যারা অভক্ষা ভক্ষণ করে তারা কৃমি হয়, চোরেরা পরস্পরের মাংসখাদক হয়, চণ্ডালাদি স্ত্রীগামিগণ প্রেত হয়।

৬০। সংযোগং পতিতৈর্গত্বা পরস্যৈব চ ষোষিতিম্।

অপহৃত্য চ বিপ্রংস্বং ভবতি ব্ৰহ্মরাক্ষসঃ॥

পতিতের সংসর্গকারী, পরদারগামী, ব্রাহ্মণের ধনাপহারী ব্ৰহ্মরাক্ষস হয়।

৬১। মণি-মুক্তা-প্রবালানি হৃত্বা লোভেন মানবঃ।

বিবিধানি চ রত্নানি জায়তে হেমকর্তৃষু॥

মানুষ লোভবশে মণি, মুক্তা, প্রবাল ও নানাবিধ রত্ন হরণ করে স্বর্ণকার২-যোনিতে জন্মে।

৬২। ধান্যং হৃত্বা ভবত্যাখুঃ কাংস্যং হংসো জলং প্লবঃ।

মধু দংশঃ পয়ঃ কাকো রসং শ্বা নকুলো ঘৃতম্‌॥

ধান্য হরণ করে ইঁদুর, কাঁসা হরণ করে হাঁস, জল হরণ করে প্লবনামক পক্ষী, মধু হরণ করে দংশ (ডাঁশ), দুগ্ধ হরণ করে কাক, রস হরণ করে কুকুর, ঘৃত হরণ করে নেউল হয়।

৬৩। মাংসং গৃধ্রো বপাং মদ্‌গুস্তৈলেং তৈলপকঃ খগঃ।

চীরীবাকন্তু লবণং বলাকা শকুনির্দধি ॥

মাংস, বপা (চর্বি), তৈল, লবণ, দধি চুরি করলে (যথাক্রমে) গৃধ, মদ্‌গু (পানকৌড়ি), তেলাপোকা, চীরীবাক (কীট) ও বলাকা হয়।

৬৪। কৌশেয়ং তিত্তিরির্হৃত্ব ক্ষৌমং হৃত্বা তু র্দদ্দুদ্রঃ।

কার্পাসতান্তবং ক্রৌঞ্চো গোধা গাং বাগ্‌গুদো গুড়ম্॥

তসরের কাপড়, ক্ষৌমবস্ত্র, কার্পাসবস্ত্র, গাভী ও গুড় হরণে (যথাক্রমে) তিত্তিরি পক্ষী, ভেক, ক্রৌঞ্চ, গোসাপ ও বাগ্‌গুদ (পাখী—বাদুড়?) হয়।

৬৫। ছুচ্ছুন্দরিঃ শুভান্ গন্ধান্‌ পত্রশাকন্তু বর্হিণঃ।

শ্বাবিৎ কৃতান্নং বিবিধমকৃতান্নংতু শল্যকঃ ॥

(কর্পূরাদি) সুগন্ধি দ্রব্য, পত্ৰশাক, সিদ্ধান্ন, নানাবিধ অকৃতান্ন (ধান, যবাদি) হরণে (যথাক্রমে) ছুঁচো, ময়ূর, শাবিং (সজারু?) ও শল্যক হয়।

৬৬। বকো ভবতি হৃত্বায়িং গৃহকারী হুপস্করম্‌।

রক্তানি হৃত্বা বাসাংসি জায়তে জীবজীবকঃ ॥

অগ্নিহরণে বক হয়, গৃহ্যোপযোগী শূর্প মুষলাদি হরণে (ভিত্ত্যাদিতে মৃত্তিকাদি) গৃহকারী (সপক্ষ কীট) হয়, রক্তবস্ত্র হরণ করে চকোরপক্ষী রূপে জন্মে।

৬৭। বৃকো মৃগেভং ব্যাঘ্রোহশং ফলমূলস্তু মর্কটঃ।

স্ত্রীমৃক্ষঃ স্তোককো বারি যানাঃন্যুষ্ট্রঃ পশুনজঃ।

হরিণ বা হাতী, ঘোড়া, ফলমূল, স্ত্রীলোক, পানীয় জল, শকটাদি যান ও (পূর্বোক্ত পশু ভিন্ন অন্য) পশু হরণে (যথাক্রমে) বৃক (নেকড়ে বাঘ), বাঘ, বানর, ভালুক, চাতক, উট ও ছাগ হয়।

৬৮। যদ্বা তদ্বা পরদ্রব্যমপহৃত্য বলান্নরঃ।

অবশ্যংযাতি তিৰ্য্যকত্বং জগ্‌ধ্বা চৈবাহুতং হবিঃ॥

বলপূর্বক যে কোন পরদ্রব্য হরণ করে বা অহুত হবি ভক্ষণ করে সে নিশ্চয়ই পশুপক্ষীর যোনি প্রাপ্ত হয়।

৬৯। স্ত্রিয়োহপ্যেতেন কল্পেন হৃত্বা দোষমবাপ্লয়ুঃ।

এতেষামেব জন্তুনাং ভার্যইয়াত্বমুপন্তি তাঃ॥

স্ত্রীলোকেরাও এইভাবে চুরি করে দোষী হয়, তারা এই জন্তুদেরই ভার্যাত্ব প্রাপ্ত হয়।

৭০। স্বেভ্যঃ স্বেভ্যন্তু কর্ম্মভ্যশ্চুতা বর্ণা হ্যনাপদি।

পাপান্‌ সংসৃতা সংসারান্‌ প্ৰেষ্যতাংষান্তি শত্রুষু॥

(সব) বর্ণের লোকেরা অপদ্‌কাল ভিন্ন অন্য সময়ে নিজ নিজ কর্মভ্রষ্ট হয়ে কুৎসিত যোনি প্রাপ্ত হয়ে (জন্মান্তরে) শত্রুর দাসত্ব প্রাপ্ত হয়।

৭১। বাম্ভাশুল্কামুখঃ প্রেতো বিপ্রো ধৰ্মাৎ স্বকাচ্চ্যুতঃ।

অমেধ্যকুণপাশী চ ক্ষত্রিয়ঃ কটপূতনঃ॥

স্বকর্মভ্রষ্ট ব্রাহ্মণ বমিভক্ষক জ্বালামুখ প্রেত (অর্থাৎ আলেয়া) হয়, ক্ষত্রিয় শব ও বিষ্ঠাভোজী কটপূতন নামক প্রেত হয়।

৭২। মৈত্রাক্ষজ্যোতিকঃ প্রেতো বৈশ্যো ভবতি পুষভুক্‌।

চৈলাশকশ্চ ভবতি শূদ্ৰো ধৰ্ম্মাৎ স্বকাচ্যুতঃ॥

(দুষ্কর্মদ্বারা ভ্রষ্ট) বৈশ্য মৈত্রাক্ষজ্যোতিক (যার গুহ্যদেশে চক্ষুরিন্দ্রিয় আছে) নামক পূযভক্ষক প্রেত হয়। স্বকর্মভ্রষ্ট শূদ্র চৈলাশক (নামক বস্ত্রস্থ কীট বা ছারপোকা) ভক্ষণকারী প্রেত হয়।

৭৩। যথা যথা নিষেবন্তে বিষয়ান্ বিষয়াত্মকাঃ।

তথা তথা কুশলতা তেষাং তেষুপজায়তে॥

বিষয়াসক্ত ব্যক্তি যেমন যেমন (রূপাদি) বিষয়সমূহ ভোগ করে, তেমন তেমন তাদের ঐ বিষয়সমূহে কুশলতা জন্মে। (তাৎপর্য এই যে, যে যে ইন্দ্রিয়দ্বারা ইহলোকে সুখ ভোগ করে, সেই সেই ইন্দ্রিয়দ্বারা পরলোকে অতি দুঃখ ভোগ করে।)

৭৪। তেহভ্যাসাৎ কৰ্ম্মণাং তেষাং পাপানামল্পবুদ্ধয়ঃ।

সস্প্রাপ্লুবন্তি দুঃখানি তাসু তাস্বিহ যোনিষু ॥

সেই পাপিষ্ঠ, অল্পবুদ্ধি, লোকদের কর্মাভ্যাস হেতু ইহলোকে সেই সেই যোনিতে (জন্মগ্রহণ করে) দুঃখভোগ করে।

৭৫। তামিস্রাদিষু চোগ্রেষু নরকেষু বিবর্ত্তনম্‌।

অসিপত্রবনাদীনি বন্ধনচ্ছেদনানি চ॥

তামিস্র প্রভৃতি ভীষণ নরকে লুটোপুটি করে, ও বন্ধনছেদনাত্মক অসিপত্ৰবনাদি নরকপ্রাপ্ত হয়।

৭৬। বিবিধাশ্চৈব সম্পীড়াঃ কাকোলূকৈশ্চ ভক্ষণম্।

করম্ভবালুকাতাপান্‌ কুম্ভীপাকাংশ্চ দারুণান্॥

নানাপ্রকার ক্লেশ, কাক ও প্যাঁচা দ্বারা (দেহভক্ষণ), তপ্ত বালুকা দ্বারা দাহ ও ভয়ানক কুম্ভীপাক নরকে (যন্ত্রণা) ভোগ করে।

৭৭। সস্তুবাংশ্চ বিযোনীষু দুঃখপ্রায়াসু নিত্যশঃ।

শীতাতপাভিঘাংশ্চ বিবিধানি ভয়ানি চ॥

নিত্যদুঃখ বহুল পশুপাখীরূপে জন্মগ্রহণ করে, শীত ও আতপজনিত ক্লেশ ভোগ করে এবং নানারূপ ভয়ক্লিষ্ট হয়।

৭৮। অসকৃদ্‌গর্ভবাসেষু বাসং জন্ম চ দারুণম্‌।

বন্ধনানি চ কষ্টানি পরপ্ৰেষ্যত্বমেব চ॥

বারংবার গর্ভবস প্রাপ্ত হয়, অতিশয় দুঃখজনক জন্মগ্রহণ করে, বন্ধন-পীড়া অনুভব করে এবং অপরের দাসত্ব প্রাপ্ত হয়।

৭৯। বন্ধুপ্রিয়বিয়োগাংশ্চ সংবাসংচৈব দুর্জ্জৈনৈঃ।

দ্রব্যার্জ্জনঞ্চ নাশঞ্চ মিত্রামিত্রস্য চার্জ্জনম্॥

বন্ধু ও প্রিয়জনের বিরহদুঃখ ভোগ, দুষ্ট লোকের সঙ্গে একত্র বাস, ধনার্জন ও অর্জিত ধননাশ হেতু ক্লেশভোগ, কষ্টে বন্ধুলাভ ও শত্রুর প্রাদুর্ভাব হয়।

৮০। জরাঞ্চৈবাপ্রতীকারাং ব্যাধিভিশ্চোপপীড়নম্‌।

ক্লেশাংশ্চ বিবিধংস্তাংস্তান্ মৃত্যুমেব চ দুর্জ্জয়ম্‌॥

যার প্রতিকার নেই এমন জরা ভোগ করতে হয়। রোগে কষ্ট পেতে হয়, নানাবিধ ক্লেশ ভোগ হয় এবং দুর্নিবার (অকাল মৃত্যু হয়।

৮১। যাদৃশেন তু ভাবেন যদ্‌দ্যৎ কর্ম নিষেবতে॥

তাদৃশেন শরীরেণ তত্তফলুমুপাশ্লুতে॥

যেমন ভাব নিয়ে যে যে কর্ম করা হয়, তেমন শরীরের দ্বারা সেই সেই ফল ভোগ হয়।

৮২। এষ সর্ব্বঃ সমুদ্দিষ্টঃ কর্মণাং বঃ ফলোদয়ঃ।

নৈশ্রেয়সকরং কৰ্ম্ম বিপ্রস্যেদং নিবোধত ॥

কর্মসমূরে এইসব ফলপ্রাপ্তি উক্ত হল। ব্রাহ্মণের মোক্ষজনক এই (বক্ষ্যমাণ) কর্ম শোন।

৮৩। বেদাভ্যাসস্তপো জ্ঞানমিন্দ্রিয়াণাঞ্চ সংযমঃ।

অহিংসা গুরুসেবা চ নিঃশ্রেয়সকরং পরম্ ॥

বেদাভ্যাস, তপস্যা, জ্ঞান, ইন্দ্রিয়সংযম, অহিংসা ও গুরুসেবা পরম মোক্ষজনক কর্ম।

৮৪। সৰ্ব্বেষামপি চৈতেষাং শুভানামিহ কর্মণাম্‌।

কিঞ্চিৎ শ্রেয়ঙ্করতরং কম্মোক্তং পুরুষং প্রতি ॥

এই সকল শুভ কর্মের মধ্যে মানুষের জন্য সাতিশয় মোক্ষসাধন কিছু কর্ম উক্ত হয়েছে। (পরের শ্লোকে)।

৮৫। সৰ্ব্বেষামপি চৈতেষামাত্মজ্ঞানং পরং স্মৃতম্‌!

তদ্ব্যাগ্র্যাং সর্ব্ববিদ্যানাং প্রাপ্যতে হ্যমৃতং ততঃ ॥

এইসবগুলির মধ্যে আত্মজ্ঞান শ্রেষ্ঠ বলে খ্যাত। তাই হল সকল বিদ্যার মধ্যে শ্রেষ্ঠ; কারণ, তার থেকে অমৃতপ্রাপ্তি হয়।

৮৬। ষণ্ণ্যামেষাস্ত সৰ্ব্বেষাং কৰ্ম্মণং প্ৰেত্য চেহ চ।

শ্রেয়স্করতরং জ্ঞেয়ং সর্ব্বদা কৰ্ম্ম বৈদিকম্‌॥

এই সকল ছয়টি কর্মের মধ্যে পরলোক ও ইহলোকে সর্বদা অধিকতর মঙ্গলজনক বৈদিক কর্ম।

৮৭। বৈদিককর্ম্মযোগে তু সর্ব্বাণ্যেতান্যশ্যেতঃ।

অন্তর্ভবত্তি ক্রমশস্তস্মিংস্তস্মিন্ ক্রিয়াবিধৌ॥

বৈদিক কর্মানুষ্ঠানে বিভিন্ন ক্রিয়াবিধিতে এই (পূর্বশ্লোকোক্ত) সকল (ঐহিক পারত্রিক মঙ্গল) অন্তর্ভুক্ত।

৮৮। সুখাভ্যুদয়িকঞ্চৈব নৈঃশ্রেয়সিকমেব চ।

প্রবৃত্তঞ্চ নিবৃত্তঞ্চ দ্বিবিধং কৰ্ম্ম বৈদিকম্‌॥

বৈদিক কর্ম দুই প্রকার—প্রবৃত্ত ও নিবৃত্ত; প্রবৃত্ত (ইহলোকে) সুখ ও উন্নতিজনক এবং নিবৃত্ত (পরালোকে) মোক্ষজনক।

৮৯। ইহ চামুত্র বা কাম্যং প্রবৃত্তং কৰ্ম্ম কীর্ত্ত্যতে।

নিষ্কামং জ্ঞানপূর্ব্বন্তু নিবৃত্তমূপদিশ্যতে॥

প্রবৃত্ত কর্ম ইহলোকে (যথা বৃষ্টিকামনায় কারীরী যাগ) এবং পরলোকে (যথা স্বৰ্গকামনায় জ্যোতিষ্টোমাদি) কাম্য। নিবৃত্তকে বলা হয় নিষ্কাম ও (ব্রহ্ম) জ্ঞানপূর্বক।

৯০। প্রবৃত্তং কৰ্ম্ম সংলেব দেবনামেতি সাম্যতাম্‌।

নিবৃত্তং সেবমানস্তু ভূতান্যত্যেতি পঞ্চ বৈ॥

প্রবৃত্ত কর্ম করে (মানুষ) দেবগণের সমান হয়, নিবৃত্ত কর্ম করে (ক্ষিতি আদি) পঞ্চভূতকে অতিক্রম করে (অথং আর পাঞ্চভৌতিক দেহ ধারণ করতে হয় না)।

৯১। সৰ্ব্বভূতেষু চাত্মানং সৰ্ব্বভূতানি চাত্মনি।

সমং পশান্নাত্মযাজী স্বরাজ্যমধি গচ্ছতি॥

আত্মযাজী (ব্ৰহ্মাৰ্পণ দ্বারা জ্যোতিষ্টোমাদি করে) সকল সৃষ্ট বস্তুতে নিজেকে এবং নিজের মধ্যে সকল সৃষ্টপদার্থকে দেখে স্বর্গরাজ্য লাভ করেন।

৯২। যথোনপি কৰ্ম্মাণি পরিহায় দ্বিজোত্তমঃ।

আত্মজ্ঞানে শমেচ স্যাদ্বেদাভ্যাসে চ যত্নবান্ ॥

ব্রাহ্মণ শাস্ত্রোক্ত কর্মসমূহও পরিত্যাগ করে আত্মজ্ঞানে, ইন্দ্রিয়সংযমে ও বেদাভ্যাসে যত্নবান হবেন।

৯৩। এতদ্ধি জন্মসাফল্যং ব্রাহ্মণস্য বিশেষতঃ।

প্রাপৌতৎ কৃতকৃত্যো হি দ্বিজো ভবতি নান্যথা॥

জন্মের এই সার্থকতা, বিশেষতঃ ব্রাহ্মণের পক্ষে। এটি প্রাপ্ত হয়ে দ্বিজ কৃতকর্মা হয়, অন্য প্রকারে নয়।

৯৪। পিতৃদেবমনুষ্যাণাং বেদশ্চক্ষুঃ সনাতনম্‌।

অশক্যঞ্চাপ্ৰমেয়ঞ্চ বেদশাস্ত্রমিতি স্থিতিঃ॥

পিতৃপুরুষ, দেবতা ও মানুষের (কব্য হব অন্নপ্রদানে) বেদ শাশ্বত চক্ষু। বেদশাস্ত্র অশক্য (অর্থাৎ অপৌরুষেয় বলে মানুষ সৃষ্টি করতে পারে না) এবং অপ্রমেয় (মীমাংসান্যায়াদি ব্যতিরেকে) দুর্বোধ্য।

৯৫। যা বেদবাহ্যাঃ স্মৃতয়ো যাশ্চ কাশ্চ কুদৃষ্টয়ঃ।

সর্ব্বাস্তা নিষ্ফলাঃ প্ৰেত্য তমোনিষ্ঠা হি তাঃ স্মৃতাঃ ॥

যে সকল স্মৃতি বেদবহির্ভুত (অর্থাৎ বেদমূলক নয়) এবং (শুধু) দৃষ্টাৰ্থবোধক, সেইসব পরলোকে ব্যর্থ; কারণ, ঐগুলি তমোগুণে উৎপন্ন বলে খ্যাত।

৯৬। উংপদ্যন্তে চ্যবন্তে চ যানাতোহনানি কানিচিৎ।

তান্যর্ব্বাক্বালিকতয়া নিষ্ফলাননৃতানি চ॥

যে সকল শাস্ত্র বেদমূলক নয়, ঐগুলি উৎপত্তিমাত্রেই নষ্ট হয়; ঐগুলি অর্বাচীন বলে নিষ্ফল ও মিথ্যা।

৯৭। চাতুৰ্ব্বণ্যং ত্রয়ো লোকাশ্চত্বারশ্চাশ্ৰমাঃ পৃথক্‌।

ভুতং ভব্যং ভবিষ্যঞ্চ সৰ্ব্বং বেদাৎ প্রসিধ্যতি॥

চতুর্বর্ণ, ত্রিলোক (স্বর্গ, মর্ত, পাতাল) পৃথক্‌ পৃথক্‌ চার আশ্রম, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই বেদ থেকে সিদ্ধ।

৯৮। শব্দঃ স্পর্শশ্চ রূপঞ্চ বসো গন্ধ পঞ্চমঃ।

বেদাদেব প্রসূয়ন্তে প্রসূতির্গুণকৰ্ম্মতঃ॥

শব্দ, স্পর্শ, রূপ, রস ও পঞ্চম গন্ধ বেদ থেকেই প্রসূত; এদের উৎপত্তি (সত্ত্বাদি)গুণ ও (বেদোক্ত) কর্ম থেকে।

৯৯। বিভৰ্ত্তি সৰ্ব্বভূতানি বেদশাস্ত্ৰং সনাতনম্।

তস্মাদেতৎ পরং মনো যজ্জন্তোরস্য সাধনম্‌॥

সনাতন বেদশাস্ত্র সকল সৃষ্ট পদার্থকে ধারণ করে। সেই জন্য (বৈদিককর্মাধিকারী) পুরুষের পুরুষার্থসাধন একে শ্রেষ্ঠ মনে করি।

১০০। সৈনাপত্যঞ্চ রাজ্যঞ্চ দণ্ডনেতৃত্বমেব চ।

সৰ্ব্বলোকাধিপত্যঞ্চ বেদশাস্ত্রবিদর্হতি॥

বেদজ্ঞ লোক সেনাপতিত্ব, রাজ্য, দণ্ডপ্রণয়নোপায় ও সকল লোকের আধিপত্যের যোগ্য।

১০১। যথা জাতবলো বহ্নির্দহত্যার্দ্রানপি দ্রুমান্‌।

তথা দহতি বেদজ্ঞঃ কৰ্ম্মজং দোষমাত্মনঃ॥

যেমন শক্তিশালী (প্রবৃদ্ধ) অগ্নি শুষ্ক বৃক্ষসমূহকেও দগ্ধ করে, তেমন বেদজ্ঞ ব্যক্তি নিজের কর্মজাত দোষ দগ্ধ করে।

১০২। বেদশাস্ত্রার্থতত্ত্বজ্ঞো যত্র তত্রাশ্রমে বসন্‌।

ইহৈব লোকে তিষ্ঠন্‌ স ব্রহ্মভূয়ায় কল্পতে ॥

বেদশাস্ত্রের অর্থ ও তত্ত্বজ্ঞ ব্যক্তি যে কোন আশ্রমেই বাস করে ইহলোকে থেকেই ব্রহ্মে পরিণত হওয়ার দিকে যান।

১০৩। অজ্ঞেভ্যো গ্রন্থিনঃ শ্রেষ্ঠা গ্রন্থিভ্যো ধারিণো বরাঃ।

ধারিভ্যো জ্ঞানিনঃ শ্ৰেষ্ঠা জ্ঞানিভ্যো ব্যবসায়িনঃ॥

অজ্ঞদের অপেক্ষা (বেদ) গ্রন্থের পাঠক শ্রেষ্ঠ, গ্রন্থাধ্যায়ীর তুলনায় যে পঠিত বিষয় বিস্মৃত হয় না সে শ্রেষ্ঠ, যাঁরা বেদবিদ্যা ধারণ করেন তাদের চাইতে জ্ঞানিগণ শ্রেষ্ঠ এবং জ্ঞানিগণ অপেক্ষা বেদোক্ত কর্মানুষ্ঠানকারী শ্রেষ্ঠ।

১০৪। তপো বিদ্যা চ বিপ্রসা নিঃশ্রেয়সকরং পরম্।

তপসা কিল্বিষিং হন্তি বিদ্যয়ামৃতমশ্নুতে॥

ব্রাহ্মণের মোক্ষলাভের শ্রেষ্ঠ উপায় তপস্যা ও বিদ্যা। তপস্যাদ্বারা পাপ নষ্ট হয়, বিদ্যাদ্বারা অমৃতভোগ হয়।

১০৫। প্রত্যক্ষঞ্চানুমানঞ্চ শাস্ত্ৰঞ্চ বিবিধাগমম্‌।

এয়ং সুবিদিতং কার্যাং ধৰ্ম্মশুদ্ধিমভীপ্সতা॥

ধর্মের শুদ্ধিকামী ব্যক্তির পক্ষে এই তিনটি ভাল করে জানা দরকার—প্রত্যক্ষ, অনুমান ও বিবিধ বেদমূলক শাস্ত্র।

১০৬। আর্যং ধর্মোপদেশঞ্চ বেদশাস্ত্রবিরোধিনা।

যস্তর্কেণানুসন্ধত্তে স ধর্ম্মং বেদ নেতবঃ॥

আর্য (অর্থাৎ বেদ) ও (মানবাদি) ধর্মশাস্ত্র যে বেদশাস্ত্রের অনুকুল (মীমাংসাদি) যুক্তিদ্বারা বিচার করে, সে ধর্ম জানে, অপর কেউ নয়)।

১০৭। নৈঃশ্রেয়সমিদং কর্ম্মং যথোদিতমশেষতঃ।

মানবস্যাস্য শাস্ত্রস্য বহস্যমুপদিশ্যতে ॥

মোক্ষজনক এই সমগ্র কর্ম যথাবিধি উক্ত হল। এই মানবশাস্ত্রের রহস্য উপদিষ্ট হচ্ছে।

১০৮। অনাম্নাতেষু ধৰ্ম্মেষু কথং স্যাদিতি চেদ্ভবেৎ।

যং শিষ্টা ব্রাহ্মণ ব্রুয়ুঃ স ধর্ম্মং সাদশঙ্কিতঃ ॥

যা সাধারণভাবে উক্ত আছে, বিশেষরূপে নয় (সেই স্থলে সন্দেহ হলে) শিষ্ট বাহ্মণগণ যা বলবেন, তা নিঃসন্দিগ্ধ ধর্ম হবে।

১০৯। ধৰ্ম্মেণাধিগতো মৈস্তু বেদঃ সপরিবৃংহণঃ।

তে শিষ্টা ব্রাহ্মণা জ্ঞেয়াঃ শ্রুতিপ্রত্যক্ষহেতবঃ ॥

যাঁরা (ব্রহ্মচর্যাদি ) ধর্মাবলম্বনপূর্বক (অঙ্গ, মীমাংসা ধর্মশাস্ত্র, ইতিহাস, পুরাণ প্রভৃতিদ্বারা) বর্ধিত বেদ আয়ত্ত করেছেন, যাঁরা শ্রুতির প্রত্যক্ষীকরণ হেতু (অর্থাৎ বেদ পাঠ করে তার অর্থ বোঝান), তাঁরা শিষ্ট ব্রাহ্মণ বলে জ্ঞেয়।

১১০। দশাবরা বা পরিষদ্‌ যং ধর্ম্মং পরিকল্পয়েৎ।

ত্র্যবরা বাপি বৃত্তস্থা তং ধৰ্ম্মং ন বিচালয়েৎ ॥

অন্ততঃ দশজনের সভা অথবা অন্ততঃ তিনজন সদাচারী ব্রাহ্মণ যে ধর্ম নির্দেশ করবেন, তাকে বিচলিত করবে না।

১১১। ত্রৈবিদ্যো হৈতুকস্তর্কী নৈরুক্তো ধর্ম্মপাঠকঃ।

এয়শ্চাশ্রমিণঃ পূৰ্বে পরিষৎ স্যাদ্দশাবরা ॥

বেদত্রয়ের শাখাত্রয়াধ্যায়ী, (শ্রুতি স্মৃতির অনুকুল) ন্যায়শাস্ত্রজ্ঞ, মীমাংসাত্মক তর্কজ্ঞ, নিরুক্তজ্ঞ, (মানবাদি) ধর্মশাস্ত্রজ্ঞ, প্রথম তিন আশ্রমস্থ ব্যক্তি—এইরূপ অন্যূন দশজন নিয়ে হয় পরিষদ্।

১১২। ঋগ্বেদবিদ্‌ যজুর্বিচ্চ সামবেদবিদেব চ।

ত্রাবরা পরিষদ্‌জ্ঞেয়া ধর্মসংশয়নির্ণয়ে ॥

ঋগ্বেদজ্ঞ, যজুর্বেদজ্ঞ ও সামবেদজ্ঞ—অন্যূন এই তিনজনে, ধর্ম সম্বন্ধে সন্দেহ: নির্ণয়ে, পরিষদ্‌ হয়।

১১৩। ত্রকোহপি বেদবিদ্‌ধর্ম্মং যং ব্যবসেদ্দ্বিজোত্তমঃ।

স বিজ্ঞেয়ঃ পরো ধৰ্ম্মো নাজ্ঞানামুদিতোহষুতৈঃ ॥

একজনও বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণ যে ধর্ম আচরণ করেন, তা শ্রেষ্ঠ ধর্মরূপে জ্ঞেয়, অজ্ঞ অযুত লোক কর্তৃক উক্ত (ধর্ম) নয়।

১১৪। অব্ৰতানামমস্ত্রাণাং জাতিমাত্রোপজীবিনাম্‌।

সহস্রশঃ সমেতানাং পরিষত্বং ন বিদ্যতে॥

(ব্রহ্মচারীর) ব্ৰতহীন, বেদাধ্যয়নহীন ও ব্রাহ্মণের জাতিমাত্রধারী ব্যক্তিগণ হাজারে হাজারে সমবেত হলেও পরিষদ্‌ হয় না।

১১৫। যং বদন্তি তমোভুতা মুর্খা ধৰ্মমতদ্বিদঃ।

তৎ পাপং শতধা ভূত্বা তদ্বক্তৃননুগচ্ছতি ॥

তমোগুণসম্পন্ন, মুর্খ, ধর্মে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ যা বলে, সেই পাপ শতগুণ হয়ে বক্তাদের অনুগমন করে।

১১৬। এতদ্বাহভিহিতং সৰ্ব্বং নিঃশ্রেয়সকরং পরম্।

অম্মাদপ্রচ্যুতো বিপ্রঃ প্রাপ্নোতি পরমাং গতিম্ ॥

মোক্ষজনক এই সকল শ্রেষ্ঠ কর্ম তোমাদের বলা হল। এর থেকে ভ্রষ্ট না হয়ে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ গতি লাভ করেন।

১১৭। এবং স ভগবান্ দেবো লোকানাং হিতকাম্যয়া।

ধর্ম্যস্য পরমং গুহ্যং মমেদং সর্ব্বমুক্তবান্ ॥

এইরূপে সেই ভগবান (মনু) লোকদের মঙ্গল কামনা করে ধর্মের এই সকল পরম গুহ্য তত্ত্ব আমাকে বলেছিলেন।

১১৮। সৰ্বমাত্মনি সম্পশ্যেৎ সচ্চাসচ্চ সমাহিতঃ।

সৰ্ব্বং হ্যাত্মনি সম্পশ্যন্ নধৰ্ম্মে কুরুতে মনঃ ॥

সংযতচিত্তে সৎ অসৎ সবকিছু আত্মাতে দেখবে; কারণ, সব কিছু আত্মাতে দেখে (কেউ) অধর্মে মনোনিবেশ করে না।

১১৯। আত্মৈব দেবতাঃ সর্ব্বাঃ সৰ্বমাত্মন্যবস্থিতম্‌।

আত্মা হি জনয়ত্যেষাং কৰ্ম্মযোগং শরীরিণাম্॥

আত্মাই সকল দেবতা, সবই আত্মায় অবস্থিত, আত্মাই এই শরীরধারিগণের কর্মসম্বন্ধ জন্মিয়ে দেয়।

১২০। খং সন্নিবেশয়েৎ খেযু চেষ্টনস্পর্শনেহনিলম্‌।

পক্তিদৃষ্ট্যোঃ পরং তেজঃ স্নেহ্যেপো গাঞ্চ মূৰ্ত্তিষু ॥

শরীরাকাশে বাহ্যাকাশ লীন, চেষ্টা ও স্পর্শের কারণস্বরূপ দৈহিক বায়ুতে বাহ্যবায়ু লীন, শারীরিক তেজে বাহ্যঅগ্নি, সূর্যের প্রকৃষ্ট তেজ ও দৈহিক বাহাজল শারীরিক পার্থিবাংশে বাহ্যপৃথিবী লীন বলে ভাববে।

১২১। মনসীন্দুং দিশঃ শ্রোত্রে ক্রান্তে বিষ্ণুং বলে হরম্।

বাচ্যগিং মিত্রমুৎসর্গে প্রজনে চ প্রজাপতিম্ ॥

মনে চন্দ্রকে, কানে দিক্‌মূহকে, পদে বিষ্ণুকে, বলে শিবকে, বাক্যে অগ্নিকে, গুহ্যদ্বারে সূর্যকে, জননেন্দ্রিয়ে প্রজাপতিকে (লীন মনে করবে)।

১২২। প্রশাসিতারং সর্ব্বেমণীয়াংসমণোরপি।

রুক্সাভং স্বপ্নধীগমাং বিদ্যাত্তং পুরুষং পরম্ ॥

সেই পরম পুরুষ (পরমাত্মাকে) এইরূপ জানবে—তিনি সকলের শাসক, অণু থেকেও সুক্ষ্ম, স্বর্ণাভ (অর্থাৎ জ্ঞানময়), স্বপ্ন ও বুদ্ধিগম্য।

১২৩। এতামেকে বদন্ত্যমিং মনুন্যে প্রজাপতিম্‌।

ইন্দ্রমেকে পরে প্রাণমপরে ব্রহ্ম শাশ্বতম্ ॥

এঁকে কেউ বলে অগ্নি, কেউ প্রজাপতি, কেউ ইন্দ্র, কেউ প্রাণ, কেউ বা শাশ্বত ব্রহ্ম।

১২৪। এয সর্ব্বাণি ভূতানি পঞ্চভিব্যাপ্য মূৰ্ত্তিভিঃ।

জন্মবৃদ্ধিক্ষয়ৈনিত্যং সংসারয়তি চক্রবৎ ॥

ইনি (ক্ষিতি আদি) পাঁচটি মূর্তিদ্বারা সকল সৃষ্ট পদার্থে ব্যাপ্ত হয়ে জন্ম, বৃদ্ধি ও ক্ষয়ের দ্বারা সর্বদা চক্রের ন্যায় পুনর্জন্মাধীন করেন।

১২৫। এবং যঃ সৰ্ব্বভূতেষু পশ্যত্যাত্মানামাত্মনা।

স সর্বসমতামেত্য ব্রক্ষাভ্যেতি পরং পদম্ ॥

এইভাবে যে সকল সৃষ্ট পদার্থে আত্মাকে আত্মদ্বারা দেখে, সে সর্বসমতা প্রাপ্ত হয়ে শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মপদ লাভ করে।

১২৬। ইত্যেতন্মানবং শাস্ত্ৰং ভৃগুপ্ৰোক্তং পঠন্‌ দ্বিজঃ।

ভবত্যাচারবান্নিত্যং যথেষ্টাং প্রাপলুয়াদ্‌গতিম্ ॥

ভৃগুকর্তৃক উক্ত এই মানবশাস্ত্র পাঠ করে দ্বিজ সর্বদা আচারনিষ্ঠ হন এবং ঈপ্সিত গতি লাভ করেন।

মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় দ্বাদশ অধ্যায় সমাপ্ত।

মনুসংহিতা সমাপ্ত।

পাদটীকা

 ১ এর পৃথক উল্লেখের কারণ স্পষ্ট নয়।

 ২ মূলে আছে হেমকর্তা। কেউ কেউ এই শব্দে হেমকার নামে পক্ষী বুঝেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *