১০. মনুসংহিতা – দশম অধ্যায়

মনুসংহিতা – দশম অধ্যায়

১। অধীয়ীরংস্ত্রয়ো বর্ণাঃ স্বকৰ্মস্থা দ্বিজাতয়ঃ।

প্রব্রূয়াদ্ ব্রাহ্মণত্ত্বষোং নেতবাবিতি নিশ্চয়ঃ ॥

তিন বর্ণের দ্বিগণ নিজকর্মে রত হয়ে বেদ অধ্যয়ন করবেন, এদের মধ্যে শুধু ব্রাহ্মণ অধ্যাপনা করবেন, অন দুই বর্ণ নয়—এই সিদ্ধান্ত।

২। সর্ব্বেষাং ব্রাহ্মণো বিদ্যাদ্‌বৃত্তপায়ান্‌ যথাবিধি।

প্রব্রুয়াদিতরেভ্যশ্চ স্বয়ঞ্চৈব তথা ভবেৎ ॥

সকল বর্ণের শাস্ত্রীয় জীবিকার উপায় ব্রাহ্মণ জানবেন এবং অন্যদের উপদেশ দিবেন ও নিজে শাস্ত্রানুসারী কর্ম করবেন।

৩। বৈশেষ্যাৎ প্রকৃতিশ্রৈষ্ঠ্যানিয়মস্য চ ধারণাৎ।

সংস্কারস্য বিশেষাচ্চ বর্ণানাং ব্রাহ্মণঃ প্রভুঃ ॥

বৈশিষ্ট্য, প্রকৃতির শ্রেষ্ঠত্ব, বেদের (অধ্যয়ন অধ্যাপনাদি দ্বারা) ধারণ হেতু ও সংস্কারের বৈশিষ্ট্যহেতু ব্রাহ্মণ বর্ণসমূহের প্রভু।

৪। ব্রাহ্মণঃ ক্ষত্রিয়ো বৈশ্যস্ত্রয়ো বর্ণা দ্বিজাতয়ঃ।

চতুর্থ একজাতিস্তু শূদ্রো নাস্তি তু পঞ্চম ॥

ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য এই তিন বর্ণ দ্বিজ। চতুর্থ শূদ্রের একজন্ম (দ্বিজত্ব নেই) ; পঞ্চম বর্ণ নেই।১

৫। সৰ্ব্ববর্ণেষু তুল্যাসু পত্নীস্বক্ষতযোনিষু।

আনুলোম্যেন সস্তূতা জাত্যা জ্ঞেয়াস্ত এব তে ॥

সকল বর্ণেই সবর্ণ অক্ষতযোনি স্ত্রীতে অনুলোমক্রমে জাত সন্তান সেই সেই বর্ণে পরিচিত হবে। (যেমন ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণী পত্নীতে উৎপাদিত পূত্র ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়াপত্নীতে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যের বৈশ্যাস্ত্ৰীতে বৈশ্য হবে।)

৬। স্ত্রীস্বনস্তরজাত্যসু দ্বিজৈরূৎপাদিতান্‌ সুতান্।

সদৃশানেব তানাহর্মাতৃদোষবিগর্হিতান্‌ ॥

দ্বিজগণের অনুলোমক্রমে অব্যবহিতবর্ণের স্ত্রীতে উৎপাদিত, মাতার হীনজাতীয়ত্ব দোষে গর্হিত পুত্রগণকে পিতৃসদৃশ বলে (কিন্তু পিতৃসজাতীয়নয়)। (যেমন ব্রাহ্মণের ক্ষত্রিয়াতে জাত সন্তান মৃধাবসিক্ত জাতি হবে)।

৭। অনন্তরাসু জাতানাং বিধিরেষ সনাতনঃ।

দ্ব্যেকান্তবাসু জানাং ধৰ্মং বিদ্যাদিমং বিধিম্‌ ॥

পিতার অব্যবহিত পরের বর্ণেব স্ত্রীতে জাত সন্তানদের এই সনাতন বিধি। এক থেকে দুই বর্ণেল ব্যবধানে স্ত্রীতে জাত সন্তানদের এই (বক্ষ্যমাণ) ধর্মসম্মত বিধি জানবে।

৮। ব্রাহ্মণদ্বৈশ্যকন্যায়ামম্বষ্ঠো নাম জায়তে।

নিষাদঃ শূদ্রকন্যায়াং যঃ পারশব উচ্যতে ॥

ব্রাহ্মণ দ্বারা বৈশাতে উৎপাদিত অম্বষ্ঠ নামে সন্তান জন্মে এবং শুদ্ৰাতে উৎপাদিত নিদসংজ্ঞক সন্তান পারশব নামে কথিত হয়।

৯। ক্ষত্রিয়াচ্ছ্‌দ্রকন্যায়াং ক্রুরাচারবিহারবান্।

কত্রশূদ্রবপুর্জন্তুরুগ্রো নাম প্রজায়তে ॥

ক্ষত্রিয় থেকে শূদ্ৰাতে উৎপন্ন সন্তান ক্রুরাচার ও ক্ররকর্মরত ক্ষত্রিয় ও শূদ্রস্বভাব উগ্র নামক পুত্র জন্মে।

১০। বিপ্রস্য ত্ৰিষু বর্ণেষু নৃপতের্বর্ণর্য়োদ্ধয়োঃ।

বৈশ্যস্য বর্ণে চৈকস্মিন্ ষড়েতেহপসদাঃ স্মৃতাঃ ॥

ব্রাহ্মণের (ক্ষত্রিয়াদি) তিন বর্ণে, ক্ষত্রিয়ের দুই (বৈশ্য ও শূদ্রে) বর্ণে ও বৈশ্যের এক (শূদ্র) বর্ণে জাত—এই ছয় জন অপসদ নামে স্মৃত।

১১। ক্ষত্রিয়াদ্বিপ্রকন্যায়াং সুতো ভবতি জাতিতঃ।

বৈশান্মগধবৈদেহৌ রাজবিপ্রাঙ্গনাসুতৌ ॥

ব্রাহ্মণীতে ক্ষত্রিয় দ্বারা উৎপাদিত পুত্ৰ জাতিতে হয় সূত, বৈশ্য দ্বারা ক্ষত্রিয়াতে হয় মাগধ, বৈশ্য দ্বারা ব্রাহ্মণীতে হয় বৈদেহ.

১২। শূদ্রাদায়োগবঃ ক্ষত্তা চাণ্ডালশ্চধমো নৃণাম্‌।

বৈশ্যরাজন্যবিপ্রাসু জায়ন্তে বর্ণসঙ্করাঃ ॥

শূদ্রদ্বারা বৈশ্যাজাত সন্তান হয় আয়োগব, ক্ষত্রিয়াজাত হয় ক্ষত্তা, ব্রাহ্মণীজাত হয় মানুষের মধ্যে অধম চণ্ডাল। শূদ্র দ্বারা বৈশ্যা, ক্ষত্রিয়া ও ব্রাহ্মণীতে যে সন্তান হয় তারা (প্রতিলোম) বর্ণসংকর জাতি হয়।

১৩। একান্তরে ত্বানুলোম্যাদস্বষ্ঠোগ্রেী যথা স্মৃতৌ।

ক্ষওৃবৈদেহকৌ তদ্বৎ প্রাতিলোম্যেহপি জন্মনি ॥

অনুলোমক্রমে এক বর্ণের ব্যবধানে অম্বষ্ঠ ও উগ্র যেমন (স্পর্শাদিযোগ্য) হয়, তেমনই প্রতিলোমক্রমে জাত ক্ষত্তৃ ও বৈদেহক হবে।

১৪। পুত্রা যেইনস্তরস্ত্রীজাঃ ক্ৰমেণণাক্তা দ্বিজন্মনাম্‌।

তাননস্তরনাম্নস্তু মাতৃদোষাৎ প্রচক্ষতে ॥

দ্বিজগণের ক্রমশঃ অনন্তরবর্ণের স্ত্রীগণে জাত পুত্রগণ মাতৃদোযহেতু মাতৃজাতির ন্যায় হবে। (অর্থাৎ মাতার যে জাতি তার সংস্কারের যোগ্য হবে)। (যেমন ব্রাহ্মণ দ্বারা ক্ষত্রিয়াতে জাত পুত্র মুধাবসিক্ত সংজ্ঞক হবে, তার ক্ষত্রিয়ের ন্যায় সংস্কার হবে)।

১৫। ব্রাহ্মণাদুগ্রকন্যায়ামাবৃতো নাম জায়তে।

আভীররাহম্বষ্ঠকন্যায়ামায়োগব্যাস্তু ধিন্বণঃ ॥

ব্রাহ্মণদ্বারা উগ্ৰাতে আবৃত নামক সন্তান, অম্বষ্ঠায় আভীর ও আয়োগবীতে ধিগ্‌বণ সংজ্ঞক পুত্র জন্মে।

১৬। আয়োগবশ্চ ক্ষত্তা চ চণ্ডালশ্চাধমো নৃণাম্‌।

প্রতিলোম্যেন জায়স্তে শূদ্ৰাদপসদায়ঃ ॥

শূদ্ৰদ্বারা প্রতিলোমক্রমে (অর্থাৎ বৈশ্যা, ক্ষত্রিয়া ও ব্রাহ্মণীতে যথাক্রমে) আয়োগব, ক্ষত্তা ও নরাধম চণ্ডাল, এই তিনটি অপসদ জন্মে।

১৭। বৈশ্যান্মাগধবৈদেহৌ ক্ষত্রিয়াৎ সূত এব তু।

প্রতীপমেতে জায়ত্তেহপরেইপ্যপসদাস্ত্রয়ঃ ॥

বৈশ্যদ্বারা ক্ষত্রিয়াতে জাত মাগধ, ব্রাহ্মণীতে বৈদেহ ও ক্ষত্রিয়দ্বারা ব্রাহ্মণীতে সূত এই তিনটি অপসদ প্রতিলোমক্রমে জন্মে।

১৮। জাত্যে নিষাদাচ্ছুদ্রায়াং জাত্যা ভবতি পুক্কসঃ।

শূদ্ৰাজ্জাতো নিষাদ্যান্তু স বৈ কুক্কুটকঃ স্মৃতঃ ॥

নিষাদদ্বারা শুদ্ৰাতে জন্মে পুক্কস জাতি, শূদ্র দ্বারা নিষাদীতে জাত সন্তান কুক্কুটক নামে অভিহিত।

১৯। ক্ষত্তুর্জাতস্তথোগ্রায়াং শ্বপাক ইতি কীরর্ও্যতে।

বৈদেহকেন ত্বম্বষ্ঠ্যামূৎপন্নে বেণ উচ্যতে ॥

ক্ষাত্তদ্বারা উগ্ৰাতে জাত সন্তান শ্বপাক, বৈদেহক দ্বারা অম্বষ্ঠাতে জাত বেণ নামে অভিহিত হয়।

২০। দ্বিজাতয়ঃ সবর্ণাসু জনয়ন্ত্যব্রতাংস্তু যান্‌।

তান্ সাবিত্রী পরিভ্ৰষ্টান্ ব্রাত্যা ইতি বিনির্দ্দিশেৎ ॥

দ্বিজগণ সবণস্ত্রিীগণে যে সন্তান উৎপাদন করেন, তারা উপনয়নসংস্কাবহীন হলে সাবিত্রীভ্রষ্ট হয়া ; তাদের ব্রাত্য সংজ্ঞায় অভিহিত করবে।

২১। ব্রাত্যাৎ তু জায়তে বিপ্ৰাৎ পাপাত্মা ভূর্জ্জকণ্টকঃ।

আবস্ত্যবাটধানৌ চ পুষ্পধঃ শৈখ এব চ ॥

ব্রাহ্মণব্রাত্য থেকে জন্মে পাপিষ্ঠ ভূর্জকণ্টক, আবন্ত্য, বাটধান, পুষ্পধ ও শৈখল।

২২। ঝল্লো মল্লশ্চ রাজন্যাদ্‌ব্রাত্যান্নিচ্ছিবিরেব চ।

নটশ্চ করণশ্চৈব খসো দ্রবিড় এব চ ॥

ক্ষত্রিয় ব্রাত্য থেকে জন্মে ঝল, মল্ল, নিচ্ছিবি, নট, করণ, খস ও দ্রবিড়।

২৩। বৈশ্যাৎ তু জায়তে ব্রাত্যাং সুধন্বচাৰ্য্য এব চ।

কারুষশ্চ বিজন্মা চ মৈত্রঃ সাত্বত এব চ ॥

বৈশ্য ব্রাত্য থেকে জন্মে সুধন্বাচার্য, কারুষ, বিজন্মা, মৈত্র ও সাত্বত।

২৪। বভিচারেণ বর্ণানামবেদ্যাবেদনেন চ।

স্বকৰ্ম্মণাঞ্চ ত্যাগেন জায়ন্তে বর্ণসঙ্করাঃ ॥

বর্ণসমূহের (পরম্পর স্ত্রীগমনরূপ) ব্যভিচার, অবিবাহ্যস্ত্রীবিবাহ ও স্বকর্মত্যাগ হেতু বর্ণসংকর হয়।

২৫। সঙ্কীর্ণযোনয়ো যে তু প্রতিলোমানুলোমজাঃ।

অনন্যান্যব্যতিষক্তাশ্চ তান্‌ প্রবক্ষ্যাম্যশেষতঃ ॥

যে সকল বর্ণসংকর অনুলোম ও প্রতিলোম ক্ৰমে পরস্পরসম্বন্ধ হেতু জন্মে, তাদের সম্বন্ধে সম্পূর্ণরূপে বলব।

২৬। সূতো বৈদেহকশ্চৈব চণ্ডালশ্চ নরাধমঃ।

২৭-। মাগধঃ ক্ষত্তৃজাতিশ্চ তথায়োগব এব চ ॥

এতে ষট্‌ সদৃশান্ বর্ণান্ জনয়ন্তি স্বযোনিষু।

মাতৃজ্যাত্যাং প্রসূয়ন্তে প্রবরাসু চ যোনিষু ॥

সূত, বৈদেহক, নরাধম চণ্ডাল, মাগধ, ক্ষত্তা ও আযোগব—এই ছয়জন নিজ নিজ জাতীয় স্ত্রী এবং বৈশ্যা, ক্ষত্রিয়া, ব্রাহ্মণীরূপ উৎকৃষ্টজাতীয় স্ত্রীতে যে সন্তান উৎপাদন করে, তারা মাতৃজাতিসদৃশ হয়।

২৮। যথা ত্রয়াণাং বর্ণানাং দ্বগোত্মাস্য জায়তে।

আনন্তৰ্য্যাৎ স্বযোন্যান্তু তথা বাহ্যেন্বপি ক্ৰমাৎ ॥

যেমন তিন বর্ণের মধ্যে দুইটিতে (ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যাগমনে) ব্রাহ্মণের আনুললাম্য হেতু দ্বিজ উৎপন্ন হয়, জাতীয় স্ত্রীতেও দ্বিজ জন্মে, তেমন বৈশ্য-ক্ষত্রিয়া সন্তান এবং ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণীর সন্তানে উৎকাপক্রম হয়।

২৯। তে চাপি বাহান্ সুবহূংস্ততোহপ্যধিকদূষিতান্।

পরম্পরস্য দারেষু জনয়ন্তি বিগর্হিতান্ ॥

সেই (সূত প্রভৃতি ছয়টি) ও পরস্পরের স্ত্রীতে বহু (আনুলোম্য সত্ত্বেও) অধিকদুষ্ট বিগর্হিত সন্তান উৎপাদন করে।

৩০। যথৈব শূদ্ৰো ব্রাহ্মণ্যাং বাহ্যংজন্তুং প্রসূয়তে।

তথা বাহাতরং বাহ্যশ্চাতুর্ব্বর্ণ্যে প্রসূয়তে ॥

যেমন শূদ্র ব্রাহ্মণীতে চণ্ডাল পুত্ৰ উৎপাদন করে, তেমন ঐ চণ্ডালাদি বাহ্যজাতি ব্রাহ্মণাদি বর্ণের স্ত্রীতে চণ্ডালাদি অপেক্ষা আরও নিকৃষ্ট সন্তান উৎপাদন করে।

৩১। প্রতিকুলং বর্ত্তমানা বাহ্যা বাহ্যতরান্‌ পুনঃ।

হীনা হীনান্‌ প্রসূয়ন্তে বর্ণান্ পঞ্চদশৈব তু ॥

প্রতিলোমজ বাহ্য দ্বিজ প্রতিলোমজ অপেক্ষা) নিকৃষ্টত্বহেতু শূদ্ৰপ্ৰভব আয়োগর প্রভৃতির প্রত্যেকে নিজ নিজ অপেক্ষা বাহ্যতর পনেরোটি পুত্র উৎপাদন করে।

৩২। প্রসাধনোপচারজ্ঞমদাসং দাসজীবনম্।

সৈরিন্ধ্রং বাগুরাবৃত্তিং সূতে দস্যুরায়োগবে ॥

দস্যু জাতি আয়োগবী স্ত্রীতে কেশরচনাদি কার্যক্ষম, উচ্ছিষ্ট ভক্ষণাদিদাসকর্মরহিত অঙ্গসংবাহনাদিদাসকর্মজীবী এবং পাশবন্ধন দ্বারা মৃগবধজীবী সৈরি নামক সন্তান উৎপাদন করে।

৩৩। মৈত্রেয়কন্তু বৈদেহো মাধুকং সংপ্রসুয়তে।

নৃন্‌ প্রশংসত্যস্রং যো ঘণ্টাতাড়োহরুণোদয়ে ॥

বৈদেহ (পূর্বোক্ত আয়োগবীতে) মৈত্রেয়নামক মধুরভাষী সন্তান উৎপাদন করে, যে অরুণোদয়ে ঘন্টা বাজিয়ে (রাজাদির) সর্বদা স্তব করে।

৩৪। নিষাদো মার্গবং সূতে দাশং নৌকর্মজীবিনম্।

কৈবৰ্ত্তমিতি যং প্রাহুরার্য্যাবৰ্ত্তনিবাসিনঃ ॥

নিষাদ (আয়োগবীতে) নৌকর্মজীবী মার্গব (নামক সস্তান) উৎপাদন করে, যাকে আযাবর্তবাসিগণ কৈবর্ত নামে অভিহিত করে।

৩৫। মৃতবস্ত্রভৃৎসু নারীষু গর্হিতান্নাশনাসু চ।

ভব্যায়োগবীম্বেতে জাতিহীনাঃ পৃথক ত্রয়ঃ ॥

উক্ত তিন হীনজাতি শববস্ত্র পরিহিতা উচ্ছিষ্টভক্ষক আয়োগবী স্ত্রীতে যে সন্তান উৎপাদন করে, তারা পিতৃভেদে ভিন্নজাতীয় হয়।

৩৬। কারাবরো নিষাদাত্তু চর্মকারঃ প্রসূয়তে।

বৈদেহিকাদন্ধ্রমেদৌ বহির্গ্রামপ্রতিশ্রয়ৌ ॥

নিষাদ থেকে বৈদেহী স্ত্রীতে জাত কারাবর নামক চর্মকার উৎপন্ন হয়। বৈদেহক থেকে বৈদেহীতে জাত হয় অস্ত্র ও মেদ ; এরা গ্রামের বাইরে থাকে।

৩৭। চণ্ডালাৎ পাণ্ডুসোপাকাস্ত্বরব্যবহারবান্।

আহিণ্ডিকো নিষাদেন বৈদেহ্যামেব জায়তে ॥

চণ্ডাল থেকে বৈদেহী স্ত্রীতে বেণু ব্যবসায়জীবী পাণ্ডুসোপাক নামক সন্তান জন্মে এবং নিষাদ দ্বারা বৈদেহীতে আহিণ্ডিক জাত হয়।

৩৮। চাণ্ডালেন তু সোপাকো মুলব্যসনবৃত্তিমান্‌।

পুক্কস্যাং জায়তে পাপঃ সদা সজ্জনগর্হিতঃ ॥

চণ্ডাল থেকে পুক্কসীতে জাত সোপাক নামক বধ্যের হননবৃত্তিসম্পন্ন সজ্জননিন্দিত পাপী জন্মে।

৩৯। নিষাদস্ত্রী তু চাণ্ডালাৎ পুত্রমন্ত্যাবসায়িনম্।

শ্মশানগোচরং সুতে বাহ্যানামপি গর্হিতম্ ॥

নিষাদস্ত্রীতে চণ্ডাল থেকে অত্যাবসায়ী নামক শ্মশানবাসী চণ্ডাল থেকেও নিকৃষ্ট জাতি উৎপন্ন হয়।

৪০। সঙ্করে জাতয়ত্ত্বেতাঃ পিতৃমাতৃপ্রদর্শিতাঃ।

প্রচ্ছন্না বা প্রকাশা বা বেদিতব্যাঃ স্বকৰ্ম্মভিঃ ॥

মাতা-পিতার নাম নির্দেশপূর্বক এই সকল সংকর জাতি (উক্ত হল)। গূঢ় বা প্রকাশ্য জাতির কর্মদ্বারা জাতিনির্ণয় জ্ঞেয়।

৪১। সজাতিজানন্তরজাঃ ষট্‌ সুতা দ্বিজধর্স্মিণঃ।

শূদ্ৰাণান্তু সধর্ম্মাণঃ সৰ্ব্বেহপধ্বংসজাঃ স্মৃতাঃ ॥

(তিন উচ্চবর্ণের) সবর্ণা স্ত্রী ও অব্যবহিত পরের বর্ণের স্ত্রী থেকে জাত ছয়টি২ পুত্র দ্বিজধমাবলম্বী হয়। দ্বিজ থেকে উৎপন্ন প্রতিলোমজ সন্তান শূদ্রধর্মী, তারা সকলে অপধ্বংসজ নামে খ্যাত।

৪২। তপোবীজপ্রভাবৈস্তু তে গচ্ছন্তি যুগে যুগে।

উৎকর্ষঞ্চাপকর্ষঞ্চ মনুয্যেম্বিহ জন্মতঃ ॥

(পূর্বোক্ত) ছয় প্রকার জাতি তপোবলে (বিশ্বামিত্রাদির ন্যায়) ও বীজপ্রভাবে (ঋষ্যশৃঙ্গাদি মুনির ন্যায়) মানুষের মধ্যে ইহলোকে জাত্যুকর্ষ প্রাপ্ত হয় এবং (বক্ষ্যমাণ কারণে) অপকর্ষও প্রাপ্ত হয়।

৪৩। শনকৈন্তু ক্ৰিয়ালোপাদিমাঃ ক্ষত্রিয়জাতয়ঃ।

বৃষলত্বং গতা লোকে ব্রাহ্মণাদর্শনেন চ ॥

এই (বক্ষ্যমাণ) ক্ষত্রিয়গণ ক্রমে (উপনয়নাদি) সংস্কারলোপ হেতু এবং বেদাংশ রূপ ব্রাহ্মণ গ্রন্থের দর্শনাভাবে শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়।

৪৪- পৌন্ড্রকাশ্চৌড্ৰদ্ৰবিড়াঃ কাম্বোজা যবনাঃ শকাঃ।

৪৫। পারদাঃ পহ্লশ্চীনাঃ কিরাতা দরদাঃ খশাঃ ॥

মুখবাহূরুপজ্জানাং যা লোকে জাতয়ো বহিঃ।

ম্লেচ্ছবাচশ্চাৰ্য্যবাচঃ সর্ব্বে তে দস্যবঃ স্মৃতাঃ॥

পৌন্ড্রক, ঔড্র, দ্রবিড়, কাম্বোজ, যবন, শক, পারদ, পহ্লাব, চীন, কিরাত, দরদ, খশ, (ব্রহ্মার) মুখ, বাহু, ঊরু ও পদ থেকে জাত (ব্রাহ্মণাদি চতুর্বর্ণের) বহির্ভূত যে সকল জাতি, তারা সকলে, ম্লেচ্ছভাষাভাষী বা আর্যভাষাভাষীই হোক, দস্যু নামে খ্যাত।

৪৬। যে দ্বিজানানপসদা যে চাপধ্বংসজাঃ স্মৃতাঃ

তে নিন্দিতৈর্বর্ত্তয়েয়ুর্দ্বিজানামেব কৰ্ম্মভিঃ॥

দ্বিজগণের (আনুলোম্য উৎপন্ন) অপসদাখ্য ব্যক্তিগণ ও (প্রাতিলোম্যে উৎপন্ন) অপধ্বংসজ নামে যারা খ্যাত, তারা দ্বিজগণের উপকারক নিন্দিত কর্মদ্বারাই জীবিকানির্বাহ করবে।

৪৭- সূতানামসারথ্যমন্বষ্ঠানাং চিকিৎসিতম্‌।

৪৯। বৈদেহকানাং স্ত্রীকাৰ্য্যং মাগধানাং বণিক্‌পথঃ।

মৎস্যঘাতো নিষাদানাং ত্বষ্টিস্ত্বায়োগবস্য চ।

মেদান্ধ্রচুঞ্চুম্‌গূনামারণ্যপশুহিংসনম্॥

ক্ষত্র্যুগ্রপুক্কসানান্তু বিলৌকোবধবন্ধনম্।

ধিণ্বণানাং চর্ম্মকাৰ্য্যং বেণানাং ভাণ্ডবাদনম্‌॥

সূতদের জীবিকা অশ্বসারথির কাজ, অম্বষ্ঠদের চিকিৎসা, বৈদেহকদের অন্তঃপুর রক্ষারূপ স্ত্রীকার্য, মাগধগণের বাণিজ্য, নিষদগণের মৎস্যমারা, আয়োগবের কাষ্ঠতক্ষণ (কাঠ চাঁছা, অর্থাৎ ছুতোরের কাজ), মেদ, অস্ত্র, চুঞ্চু ও মদগুদের বন্যপশুবধ, ক্ষত্তা, উগ্র ও পুক্কসদের গর্তবাসী (গোধাদির) ব ও বন্ধন, ধিন্বণদের চর্মকাৰ্য, বেণদের বাদ্যযন্ত্রবান বৃত্তি।

৫০। চৈত্যদ্রুমশ্মশানেষু শৈলেষূপবনেষু চ।

বসেয়ুরেতে বিজ্ঞানা বর্ত্তয়ন্তঃ স্বকৰ্ম্মভিঃ॥

এরা চৈত্যবৃক্ষ (গ্ৰামাদির নিকটে প্রধান বৃক্ষ অর্থাৎ তার মুলে), শ্মশানে বা উপবনে নিজ নিজ কর্ম দ্বারা প্রকাশ্যে জীবিকানির্বাহ করবে।

৫১। চণ্ডালশ্বপচানান্তু বহির্গ্রামাৎ প্রতিশ্রয়ঃ।

অপপাত্রাশ্চ কর্ত্তব্যা ধনমেষাং শ্বগর্দ্দভম্ ॥

চণ্ডাল ও শ্বপচদের আশ্রয় গ্রামের বাইরে। তাদের অপপাত্র করবে (অর্থাৎ জলপাত্রাদি দিবে না), এদের ধন কুকুর ও গাধা।

৫২। বাসাংসি মৃতচেলানি ভিন্নভাণ্ডেষু ভোজনম্।

কার্ঞ্চায়সমলঙ্কারঃ পরিব্রজ্যা চ নিত্যশঃ॥

এদের পরিধেয় হল শববস্ত্র, ভোজন ভগ্নপাত্রে, অলংকার লোহার তৈরি ও সর্বদা ঘুরে। বেড়ান (এদের কাজ)।

৫৩। ন তৈঃ সময়মন্বিচ্ছেৎ পুরুষো ধৰ্ম্মমাচরম্।

ব্যবহারো মিথস্তেষাং বিবাহঃ সদৃশৈঃ সহ॥

ধর্মানুষ্ঠানকারী লোক তাদের সঙ্গে (দর্শনাদি) ব্যবহার করবেন না। তাদের ঋণাদানাদি ব্যবহার পরস্পর (নিজেদের মধ্যে) হবে (এবং) বিবাহ হবে স্বজাতীয়দের সঙ্গে।

৫৪। অন্নমেষাং পরাধীনং দেয়ং স্যাদ্ভিন্নভাজনে।

রাত্রৌ ন বিচরেয়ুস্তে গ্রামে নগরেষু চ ॥

এদের অন্ন পরাধীন (অর্থাৎ সজ্জন সরাসরিভাবে এদের অন্ন দিবেন না, ভৃত্যের মাধ্যমে দিবেন), ভগ্নপাত্রে (অন্ন) দেয়; তারা রাত্রিবেলা গ্রামে ও শহরে বিচরণ করবে না।

৫৫। দিবা চরেয়ুঃ কায্যার্থং চিহ্নিতা রাজশাসনৈঃ।

অবান্ধবং শবঞ্চৈব নির্হরেয়ুরিতি স্থিতিঃ॥

(এরা) দিনে কাজের জন্য রাজার অনুমতিতে কোন চিহ্নে চিহ্নিত হয়ে বিচরণ করবে এবং অনাথ শব গ্রাম থেকে বাইরে বহন করে নিবে—এই নিয়ম।

৫৬। বধ্যাংশ্চ হন্যুঃ সততং যথাশাস্ত্রং নৃপাজ্ঞয়া।

বধ্যবাসাংসি গৃহ্ণীয়ুঃ শয্যাশ্চাভরণানি চ॥

রাজাদেশে শাস্ত্রানুসারে সর্বদা (রাজদণ্ড) বধ্য ব্যক্তিগণকে হত্যা করবে এবং বধ্য ব্যক্তির বস্ত্র, শয্যা ও অলংকার গ্রহণ করবে।

৫৭। বাপেতমবিজ্ঞাতং নরং কলুষযোনিজম্‌।

আৰ্য্যরূপমিবানার্যাং কৰ্ম্মভিঃ স্বৈর্বিভাবয়েৎ॥

বর্ণবহির্ভূত (সংকরজাতি), বিশেষরূপে যা নিশ্চিত নয়, আর্য সদৃশ অনার্য ও পাপযোনিতে জাত তাদের নিজেদের কর্মদ্বারা নির্ণয় করবে।

৫৮। অনাৰ্য্যতা নিষ্ঠুরতা ক্রুরতা নিষ্ক্রিয়াত্মতা।

পুরুষং ব্যঞ্জয়ন্তীহ লোকে কলুষযোনিজম্॥

অসভ্যতা, নিষ্ঠুরতা, হিংস্রতা ও শাস্ত্রবিহিত কর্মের অনুষ্ঠান জগতে মানুষের নিন্দিত জাতি প্রকাশ করে।

৫৯। পিত্র্যং বা ভজতে শীল মাতুর্ব্বোভয়মেব বা।

ন কথঞ্চন দুর্যোনিঃ প্রকৃতিং স্বাং নিযচ্ছতি॥

(নিন্দিত জাতির লোক) পিতার, মাতার বা উভয়ের চরিত্র প্রাপ্ত হয়। নিন্দিত যোনিতে জাত কোনপ্রকারে নিজের স্বভাব গোপন করতে পারে না।

৬০। কুলে মুখ্যেহপি জাতস্য যস্য স্যাদ্‌যোনিসঙ্করঃ।

সংশ্রয়ত্যেব তচ্ছীলং নয়োহল্পমপি বা বহু॥

উচ্চকুলে জাত ব্যক্তিরও যদি মাতার ব্যভিচারদোষ থাকে তাহলে সে অল্প বা বহুলভাবে জনকের স্বভাব প্রাপ্ত হয়।

৬১। যত্র ত্বেতে পরিধ্বংসাজ্জায়ন্তে বর্ণদূষকাঃ।

রাষ্ট্রিকৈঃ সহ তদ্ৰাষ্ট্রংক্ষিপ্রমেব বিনশ্যতি॥

যে রাজ্যে বর্ণদূষক বর্ণসংকরজাতি উৎপন্ন হয়, সেই রাজ্য রাজ্যবাসী সকলের সঙ্গে শীঘ্রই নষ্ট হয়।

৬২। ব্রাহ্মণার্থে গবার্থে বা দেহত্যাগোহনুপস্কৃতঃ।

স্ত্রীবালাভূপপত্তৌ চ বাহ্যানাং সিদ্ধিকারণম্॥

ব্রাহ্মণ, গাভী, স্ত্রীলোক বা বালকের রক্ষাৰ্থ ধন গ্রহণ না করে দেহত্যাগ প্রতিলোমজ বাহ্যজাতির স্বর্গপ্রাপ্তির কারণ।

৬৩। অহিংসা সত্যমস্তেয়ং শৌচমিন্দ্রিয়নিগ্রহঃ।

এতং সামাসিকং ধৰ্ম্মং চাতুর্ব্বর্ণ্যেহব্রবীন্মনুঃ ॥

অহিংসা, সত্য, চৌর্যাভাব, শুচিতা, ইন্দ্রিয়সংযম— চতুর্বর্ণের এই সংক্ষিপ্ত ধর্ম মনু বলেছেন।

৬৪। শূদ্রায়াং ব্রাহ্মণাজ্জাতঃ শ্রেয়সা চেৎ প্রজায়তে।

অশ্রেয়ান্‌ শ্রেয়সীং জাতিং গচ্ছত্যাসপ্তমাদ্‌যুগাৎ॥

(বিবাহিতা) শূদ্রাতে ব্রাহ্মণ থেকে জাতা কন্যা যদি ব্রাহ্মণকর্তৃক বিবাহিত হয়ে কন্যাজন্ম দেয়, সেই কন্যাকে যদি অপর ব্রাহ্মণ বিবাহ করে, আবার তাতে জাতা কন্যাকে যদি অপর ব্রাহ্মণ বিবাহ করে— এভাবে সপ্ত জন্মে ঐ (পারশব নামক) জাতি (বীজের উৎকর্ষহেতু)। ব্রাহ্মণ হয়।

৬৫। শূদ্ৰো ব্রাহ্মণতামেতি ব্রাহ্মণশ্চৈতি শূদ্রতাম্‌।

ক্ষত্রিয়াজ্জাতমেবস্তু বিদ্যাদ্বৈশ্যাৎ তথৈব চ॥

শূদ্র ব্রাহ্মণত্ব প্রাপ্ত হয়, ব্রাহ্মণ শূদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়। ক্ষত্রিয় থেকে শূদ্রাতে জাত পুত্ৰ শূদ্র হয়, ক্ষত্রিয়ের দ্বারা বৈশ্যাতে জাত পুত্র বৈশ্য হয়।

৬৬। অনার্য্যায়াং সমুৎপন্নো ব্রাহ্মণাত্তু যদৃচ্ছয়া।

ব্রাহ্মণ্যামপ্যনাৰ্যাতু শ্ৰেয়স্ত্বং ক্বেতি চেদ্ভবেৎ॥

(অনূঢ়া) শূদ্ৰাস্ত্ৰীতে ব্রাহ্মণ থেকে জাত সন্তান এবং ব্রাহ্মণীতে শূদ্র থেকে উৎপন্ন সন্তান— এদের মধ্যে কে উত্তম— এই প্রশ্ন হলে (বলব)।

৬৭। জাতো নার্য্যামনার্য্যায়ামার্যাদার্যো ভবেদ্‌গুণৈঃ।

জাতোহপ্যনাৰ্য্যাদাৰ্য্যায়ামনাৰ্য্য ইতি নিশ্চয়ঃ॥

ব্রাহ্মণ থেকে শূদ্রাতে জাত সন্তান (স্মৃতি বিহিত পাকযজ্ঞাদি) গুণ হেতু আর্য হয়, শূদ্র থেকে ব্রাহ্মণীজাত সন্তান নিকৃষ্ট হয়— এই সিদ্ধান্ত।

৬৮। তাবুভাব্যসংস্কাৰ্য্যাবিতি ধৰ্ম্মো ব্যবস্থিতঃ।

বৈগুণ্যাজ্জন্মনঃ পূর্ব্ব উত্তরঃ প্রতিলোমতঃ॥

ঐ উভয় ব্যক্তি উপনয়ন সংস্কারের অযোগ্য— এই ধর্মব্যবস্থা আছে; প্রথমটি জন্মের বৈশুণ্যহেতু, শেষেরটি প্রাতিলোম্য হেতু (অনুপনেয়)।

৬৯। সুবীজঞ্চৈব সুক্ষেত্রে জাতং সম্পদ্যতে যথা।

তথাৰ্য্যাজ্জাত আৰ্য্যায়াং সৰ্ব্বং সংস্কারমর্হতি॥

যেমন উত্তম বীজ উত্তম ক্ষেত্রে জন্মে, তেমন দ্বিজ থেকে দ্বিজনারীতে উৎপন্ন সন্তান সকল সংস্কারের যোগ্য।

৭০। বীজমেকে প্রশংসন্তি ক্ষেত্রমন্যে মনীষিণঃ।

বীজক্ষেত্রে তথৈবান্যে তত্রেয়ন্তু ব্যবস্থিতিঃ॥

কেউ বীজকে প্রশংসা করে, অন্য মনীষিগণ ক্ষেত্রকে প্রশংসা করেন, অপর ব্যক্তিগণ বীজ ও ক্ষেত্রকে প্রশংসা করে; এই ব্যাপারে বক্ষ্যমাণ ব্যবস্থা আছে।

৭১। অক্ষেত্রে বীজমুৎসৃষ্টমন্তরৈব বিনশ্যতি।

অবীজকমপি ক্ষেত্রং কেবলং স্থণ্ডিলং ভবেৎ॥

মন্দক্ষেত্রে উপ্ত বীজ ফল না দিয়েই নষ্ট হয়, ক্ষেত্ৰ বীজরহিত হলে শুধু স্থন্ডিল (নিষ্ফল) হয়।

৭২। যম্মাদ্বীজপ্রভাবেণ তির্য্যগ্‌জা ঋষয়োহভবন্‌।

পূজিতাশ্চ প্রশস্তাশ্চ তস্মাদ্বীজং প্রশস্যতে॥

যেহেতু বীজের প্রভাবে (হরিণী আদি) তির্যক্‌প্রাণীজাত (ঋষ্যশৃঙ্গ প্রভৃতি) ঋষিগণ পূজিত। ও প্রশংসিত হয়েছিলেন, সেইজন্য বীজ প্রশংসিত হয়।

৭৩। অনার্য্যমাৰ্য্যকৰ্ম্মাণমাৰ্য্যঞ্চানাৰ্য্যকর্মিণম্‌।

সম্প্ৰধার্যাব্রবীদ্ধাতা ন সমৌ নাসমাঝিতি॥

দ্বিজকর্মকারী শূদ্র ও শূদ্রকর্মকারী দ্বিজকে বিচার করে বিধাতা বলেছিলেন, এরা সমানও নয়, অসমানও নয়।

৭৪। ব্রাহ্মণা ব্রহ্মযোনিস্থা যে স্বকর্মণ্যবস্থিতাঃ।

তে সম্যগুজীবেয়ুঃ ষট্‌ কৰ্ম্মাণি যথাক্ৰমম্॥

যে ব্রাহ্মণগণ ব্ৰহ্মপ্রাপ্তির কারণ ব্রহ্মধ্যানে নিষ্ঠ ও স্বকর্মনিরত, তাঁরা (বক্ষ্যমাণ) ছয় কর্ম ক্রমানুসারে করবেন।

৭৫। অধ্যাপনমধ্যয়নং যজনং যাজনং তথা।

দানং প্রতিগ্ৰহশ্চৈব ষট্‌ কৰ্ম্মাণ্যগ্রজন্মনঃ॥

অধ্যাপন, অধ্যয়ন, যজন, যাজন, দান ও প্রতিগ্ৰহ, এই ছয়টি ব্রাহ্মণের কর্ম।

৭৬। যণ্ণান্তু কৰ্ম্মণামস্য ত্রীণি কর্ম্মাণি জীবিকা।

যাজনাধ্যাপনে চৈব বিশুদ্ধাচ্চ প্রতিগ্রহঃ॥

ছয়টি কর্মের মধ্যে তিনটি এঁর জীবিকা— যাজন, অধ্যাপন ও সৎলোক থেকে প্রতিগ্রহ।

৭৭। ভ্রয়ো ধর্ম্মো নিবৰ্ত্তন্তে ব্রাহ্মণাৎ ক্ষত্রিয়ংপ্রতি।

অধ্যাপনং যাজন তৃতীয়শ্চ প্রতিগ্রহঃ॥

ব্রাহ্মণ অপেক্ষা ক্ষত্রিয়ের তিনটি কর্ম কম, (যথা) অধ্যাপন, যাজন ও (তৃতীয়টি) প্রতিগ্রহ।

৭৮। বৈশ্যং প্রতি তথৈবৈতে নিবৰ্ত্তেরন্নিতি স্থিতিঃ।

ন তৌ প্রতি হি তান্ ধৰ্ম্মান্‌ মনুরাহ প্রজাপতিঃ॥

বৈশ্যের পক্ষেও এই (তিনটি) নিষিদ্ধ— এই ব্যবস্থা। ঐ দুই জনের পক্ষে ঐ সকল ধর্ম (বিহিত) নয়, মনুপ্রজাপতি এই কথা বলেছেন।

৭৯। শস্ত্ৰাস্ত্ৰভৃত্বং ক্ষত্রস্য বণিক্‌পশুকৃষির্বিশঃ।

আজীবনার্থং ধর্ম্মস্তু দানমধ্যয়নং যজিঃ॥

ক্ষত্রিয়ের জীবিকা অস্ত্রশস্ত্রধারণ, বৈশ্যের বাণিজ্য, পশুপালন ও কৃষি; তাদের ধর্ম দান, অধ্যয়ন ও যজন।

৮০। বেদাভ্যাসো ব্রাহ্মণস্য ক্ষত্রিয়স্য চ রক্ষণম্।

বার্ত্তা কৰ্ম্মৈব বৈশ্যস্য বিশিষ্টানি স্বকৰ্ম্মসু॥

নিজেদের কর্মসূহের মধ্যে ব্রাহ্মণের বেদাধ্যয়ন; ক্ষত্রিয়ের (লোক) রক্ষণ এবং বৈশ্যের বার্তা (কৃষি, পশুপালন ও বাণিজ্য) বিশিষ্ট কর্ম।

৮১। অজীবংস্তু যথোক্তেন ব্রাহ্মণঃ স্বেন কণা।

জীবেৎ ক্ষত্রিয়ধৰ্ম্মেণ স হস্য প্রত্যনত্তরঃ॥

ব্রাহ্মণ উক্ত স্বকর্মদ্বারা জীবনধারণে অক্ষম হলে ক্ষত্রিয়ধর্ম দ্বারা জীবিকানির্বাহ করবেন; কারণ, সেই ধর্ম তাঁর অব্যবহিত।

৮২। উভাভ্যামপ্যজীবংস্তু কথং স্যাদিতি চেদ্ভবেৎ।

কৃষিগোরক্ষমাস্থায় জীবেদ্বৈশস্য জীবিকাম্‌॥

(ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়) উভয়ের বৃত্তিদ্বারা জীবনধারণ করতে না পারলে কি করে হবে? (তাহলে) কৃষি ও গোপালন অবলম্বন করে বৈশ্যের জীবিকাদ্বারা (ব্রাহ্মণ) জীবন ধারণ করবেন।

৮৩। বৈশবৃত্তাপি জীবংস্তু ব্রাহ্মণঃ ক্ষত্রিয়োহপি বা।

হিংসাপ্রয়াং পরাধীনং কৃষিং যত্নেন বর্জ্জয়েৎ॥

ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় বৈশ্যবৃত্তি দ্বারা জীবনধারণ করলেও (ভূমিস্থ প্রাণীর) হিংসাকর ও (বৃষাদির) অধীন কৃষিকার্য সযত্নে বর্জন করবেন।

৮৪। কৃষিং সাধ্বিতি মন্যন্তে সা বৃত্তিঃ সদ্বিগর্হিত।

ভুমিং ভূমিশয়াংশ্চৈব হস্তি কাষ্ঠময়োমুখম্‌॥

কৃষিকে কেউ কেউ ভাল মনে করেন। ঐ বৃত্তি সজ্জনকর্তৃক নিন্দিত। যে কাঠের মুখে লোহা আছে, তা জমিকে এবং জমিতে যে সকল প্রাণী আছে, তাদের নষ্ট করে।

৮৫। ইদস্তু বৃত্তিবৈকল্যাৎ ত্যজতো ধর্ম্মনৈপুণম্‌।

বিট্‌পণ্যমুদ্ধৃতোদ্ধারং বিক্ৰেয়ং বিত্তবৰ্ধনম্॥

আত্মবৃত্তি সম্ভবপর না হলে ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য ধর্মের প্রতি সম্যক্‌নিষ্ঠা রাখতে না পারলে বৈশ্যের বিক্রেয়দ্রব্য-সমুহের মধ্যে (বক্ষ্যমাণ নিষিদ্ধ দ্রব্য) ব্যতিরিক্ত দ্রব্যের বিক্রয়াদি দ্বারা জীবিকা নির্বাহ করবে।

৮৬- সর্ব্বান্‌ রসানপোহেত কৃতান্নঞ্চ তিলৈঃ সহ।

৮৯। অশ্মনো লবণঞ্চৈব পশবো যে চ মানুষাঃ॥

সৰ্ব্বঞ্চ তান্তবং রক্তং২ শাণকৌমাবিকানি চ।

অপি চেৎ স্যুররক্তানি ফলমূলে তথৌষধীঃ॥

অপঃ শস্ত্রংবিষং মাংসং সোমং গন্ধাংশ্চসৰ্ব্বশঃ।

ক্ষীরং ক্ষৌদ্রংদধি ঘৃতং তৈলংমধু গুডং কুশান্ ॥

অরণ্যাংশ্চ পশূন্‌ সর্ব্বান্‌ দংষ্ট্রিণশ্চ বয়াংসি চ।

মদ্যং নীলীঞ্চ লাক্ষাঞ্চ সর্ব্বাংশ্চেকশফাংস্তথা॥

সকল প্রকার রস, সিদ্ধান্ন, তিল, পাথর, লবণ, পশু, মানুষ, সকল প্রকার রক্তবর্ণ বস্ত্র, রক্তবর্ণ না হলেও শণ, ক্ষৌম বস্ত্র ও মেষলোমনির্মিত (কম্বলাদি), ফল, মূল, ওষধি, জল, অস্ত্র, বিষ, মাংস, সোমরস, সকল গন্ধদ্রব্য, ক্ষীর, মক্ষিকা-মধু, দধি, ঘৃত, অন্যপ্রকার মধু, গুড়, কুশ, সকল বন্য পশু, (সিংহাদি) বৃহদ্দস্তবিশিষ্ট পশু, পাখী, মদ, নীলী, গালা, সকল একক্ষুরবিশিষ্ট পশু।

৯০। কামমুৎপাদ্য কৃষ্যান্তু স্বয়মেব কৃষীবলঃ।

বিক্রীণীত তিলান্ শুদ্ধান্ ধর্ম্মার্থমচিরস্থিতান্॥

স্বয়ং কর্ষণ দ্বারা উৎপন্ন তিল অন্যদ্রব্যের সঙ্গে অমিশ্রিত অবস্থায় (লাভের জন্য) দীর্ঘকাল না রেখে কৰ্ষক বিক্রয় করতে পারেন।

৯১। ভোজনাভ্যঞ্জনাদ্দানাদ্‌ যদন্যৎ কুরুতে তিলৈঃ।

কৃমিভুতঃ শ্ববিষ্ঠায়াং পিতৃভিঃ সহ মজ্জতি॥

ভোজন, মর্দন ও দান ব্যতিরিকে তিল দ্বারা অন্য কিছু (নিষিদ্ধ বিক্রয়াদি) করলে কুকুরের বিষ্ঠায় কৃমি হয়ে পিতৃপুরুষগণ সহ নিমগ্ন হয়।

৯২। সদ্যঃ পততি মাংসেন লাক্ষয়া লবণেন চ।

ত্রাহেণ শূদ্রো ভবতি ব্রাহ্মণঃ ক্ষীরবিক্ৰয়াৎ॥

মাংস, গালা ও লবণ বিক্রয়ে ব্রাহ্মণ সদ্য দুগ্ধবিক্রয় হেতু তিন দিনে পতিত হয়।

৯৩। ইতরে পণ্যানাং বিক্রয়াদিহ কামতঃ।

ব্রাহ্মণঃ সপ্তরাত্রেণ বৈশ্যভাবং নিযচ্ছতি॥

অন্য পণ্যদ্রব্যের ইচ্ছাপূর্বক বিক্রয় হেতু ব্রাহ্মণ সাত রাত্রে বৈশ্যত্ব প্রাপ্ত হয়।

৯৪। বসা রসৈর্নিমাতব্যা ন ত্বেবং লবণং রসৈঃ।

কৃতান্নাঞ্চাকৃতান্নেন তিলা ধানেন তৎসমাঃ॥

রসদ্রব্যের বিনিময়ে রসদ্ৰব্য হতে পারে, রসদ্রব্যের সঙ্গে লবণের বিনিময় হয় না, সিদ্ধান্নের বিনিময়ে আমান্ন হতে পারে, ধানের সঙ্গে সমপরিমাণ তিলের বিনিময় হতে পারে।

৯৫। জীবেদেতেন রাজন্য সর্বেণাপ্যনয়ংগতঃ।

ন ত্বেব জ্যায়সীং বৃত্তিমভিমন্যত কর্হিচিৎ॥

বিপন্ন ক্ষত্রিয় এই সব উপায়ে জীবনধারণ করতে পারে, কখনও উচ্চতর (ব্রাহ্মণের) বৃত্তি দ্বারা জীবনধারণ করবে না।

৯৬। যো লোভাদধমো জাত্যা জীবেদূৎকৃষ্টকর্মভিঃ।

তং রাজা নিৰ্দ্ধনং কৃত্বা ক্ষিপ্রমেব প্রবাসয়েৎ॥

যে অধম জাতির লোক উৎকৃষ্টজাতির কর্মদ্বারা জীবনধারণ করে, তাকে রাজা নির্ধন করে শীঘ্র নির্বাসিত করবেন।

৯৭। বরংস্বধর্মো বিগুণো ন পারক্যঃ স্বনুষ্ঠিতঃ।

পরধৰ্ম্মেণ জীবন্‌ হি সদ্যঃ পততি জাতিতঃ॥

নিজধর্ম গুণবর্জিত হলেও ভাল, পরের ধর্ম সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হলেও ভাল নয়, অপরের ধর্মানুসারে জীবনধারণ করলে (মানুষ) তৎক্ষণাৎ জাতিভ্রষ্ট হয়।

৯৮। বৈশ্যোহজীবন্‌ স্বধৰ্ম্মেন শূদ্ৰবৃত্ত্যাপি বর্ত্তয়েৎ।

অনাচরন্নকার্যাণি নিবৰ্ত্তেত চ শক্তিমান্॥

শক্তিমান্ বৈশ্য স্বধর্মদ্বারা জীবিকানির্বাহে অক্ষম হলে (ব্রাহ্মণের উচ্ছিষ্ট ভোজনাদি অকর্ম না করে) শূদ্ৰবৃত্তি অবলম্বনেও জীবনধারণ করবে।

৯৯। অশক্লুবংস্তু শুশ্রূষাং শূদ্রঃ কর্ত্তুং দ্বিজন্মনাম্।

পুত্ৰদারাত্যয়ং প্রাপ্তো জীবেৎ কারুককর্ম্মভিঃ॥

শূদ্র দ্বিজগণের শুশ্রূষা করতে অক্ষম হলে এবং তার স্ত্রীপুত্র বিপন্ন হলে (সৃপকারাদি) কারুকের কর্মদ্বারা জীবনধারণ করবে।

১০০। যৈঃ কর্ম্মভিঃ প্রচরিতৈঃ শুশ্রূষ্যন্তে দ্বিজাতয়ঃ।

তানি কারুককম্মাণি শিল্পানি বিবিধানি চ॥

সে সকল কর্মদ্বারা দ্বিজগণের শুশ্রূষা হয়, সেই বিবিধ কারু কর্ম ও শিল্প (ছুতোর, চিত্রকরাদির কাজ) সে করবে।

১০১। বৈশ্যবৃত্তিমনাতিষ্ঠন্‌ ব্রাহ্মণঃ স্বে পথি স্থিতঃ।

অবৃত্তিকর্ষিতঃ সীদন্নিমং ধৰ্মং সমাচরেৎ॥

ব্রাহ্মণ জীবিকার অভাবে কষ্ট পেলে (ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যবৃত্তি) অবলম্বন না করে নিজের বৃত্তিতে থেকে এই (বক্ষ্যমাণ) ধর্ম আচরণ করবেন।

১০২। সর্বতঃ প্রতিগৃহ্ণীয়াদ্‌ব্রাহ্মণশুনয়ং গতঃ।

পবিত্ৰংদুষ্যতীত্যেতদ্‌ ধর্মতো নোপপদ্যতে॥

বিপন্ন ব্রাহ্মণ সকলের থেকে প্রতিগ্রহ করবেন; পবিত্র (অপবিত্র সংসর্গে) দূষিত হয়— এই কথা শাস্ত্রসম্মত নয়।৩

১০৩। নাধ্যাপনাদ্‌যাজ্ঞনাদ্বা গহিতাদ্বা প্রতিগ্ৰহাৎ।

দোষো ভবতি বিপ্রাণাং জ্বলনাম্বুসমা হি তে॥

নিন্দিত ব্যক্তির অধ্যাপনা, যাজন বা তার থেকে প্রতিগ্রহহেতু ব্রাহ্মণদের দোষ হয় না; কারণ, তাঁরা আগুন ও জলের তুল্য।

১০৪। জীবিতাত্যয়মাপন্নো যোহন্নমত্তি যতস্ততঃ।

আকাশমিব পঙ্কেন ন স পাপেন লিপ্যতে॥

যেমন আকাশ পঙ্কদ্বারা দূষিত হয় না, তেমনই জীবনসংশয়ে (ব্রাহ্মণ) যার তার কাছ থেকে অন্নভক্ষণ করলে পাপলিপ্ত হন না।

১০৫। অজীগর্ত্তং সুতং হন্তমুপাসর্পদ্‌বুভুক্ষিতঃ।

ন চালিপ্যত পাপেন ক্ষুৎপ্রতীকারমাচরন্‌॥

(ঋষি) অজীগর্ত ক্ষুধার্ত হয়ে (শুনঃশেফ নামক) পুত্রকে (বিক্রয় করে এক শত গোলাভের জন্য তাকে) হত্যা করতে অগ্রসর হয়েছিলেন; তিনি ক্ষুধানিবৃত্তির চেষ্টা করে পাপলিপ্ত হননি।

১০৬। শ্বমাংসমিচ্ছন্নার্ত্তোহত্তুং ধৰ্ম্মাধর্ম্মবিচক্ষণঃ।

প্রাণানাং পরিরক্ষার্থং বামদেবো ন লিপ্তবান্॥

ক্ষুধার্ত, ধর্মাধর্ম সম্বন্ধে অভিজ্ঞ বামদেব প্রাণরক্ষার জন্য কুকুরের মাংস ভক্ষণে ইচ্ছুক হয়ে পাপলিপ্ত হননি।

১০৭। ভরদ্বাজঃ ক্ষুধার্তস্তু সপুত্রো বিজনে বনে।

বহ্বীর্গাঃ প্রতিজগ্রাহ বৃধোস্তক্ষ্ণো মহাতপাঃ॥

মহাতাপস ভরদ্বাজ নির্জন বনে পুত্রসহ ক্ষুধার্ত হয়ে বৃধুনামক সূত্রধরের নিকট থেকে বহু গাভী প্রতিগ্রহ করেছিলেন।

১০৮। ক্ষুধার্ত্তশ্চাত্তুমভ্যগাদ্বিশ্বামিত্রঃ শ্বজাঘনীম্।

চণ্ডালহস্তাদাদায় ধর্ম্মাধর্ম্মবিচক্ষণঃ॥

ক্ষুধার্ত, ধর্মাধর্মে অভিজ্ঞ বিশ্বামিত্র চণ্ডালের হাত থেকে কুকুরের জঘনমাংস নিয়ে খেতে গিয়েছিলেন।

১০৯। প্রতিগ্ৰহাদ্‌ যাজনাদ্বা তথৈবাধ্যাপনাদপি।

প্রতিগ্ৰহঃ প্রত্যবরঃ প্ৰেত্য বিপ্রস্য গর্হিতঃ॥

ব্রাহ্মণের পক্ষে নিন্দিত ব্যক্তির থেকে প্রতিগ্ৰহ, নিন্দিত ব্যক্তির যাজন ও অধ্যাপনা— এইগুলির মধ্যে প্রতিগ্ৰহ নিকৃষ্ট, পরলোকে গর্হিত (অর্থাৎ নরকজনক)।

১১০। যাজধ্যাপনে নিত্যং ক্রিয়েতে সংস্কৃতাত্মনাম্।

প্রতিগ্রহস্তু ক্ৰিয়তে শূদ্ৰাদপ্যন্ত্যজমনঃ॥

উপনয়ন সংস্কারে সংস্কৃত (দ্বিজগণের) যাজন ও অধ্যাপন করা হয়, প্রতিগ্ৰহ কিন্তু অন্ত্যজ শূদ্রের থেকেও করা হয়।

১১১। জপহোমৈরপৈত্যেনো যাজনাধ্যাপনৈঃ কৃতম্।

প্রতিগ্ৰহনিমিত্তস্তু ত্যাগেন তপসৈব চ॥

(শুদ্ৰাদির) যাজন অধ্যাপন (দ্বারা উৎপন্ন) পাপ জপ ও হোমের দ্বারা দূরীভূত হয়, (অসৎ) প্রতিগ্ৰহজনিত পাপ (প্রতিগৃহীত দ্রব্যের ত্যাগ ও কৃচ্ছ্রসাধন দ্বারা (অপগত হয়)।

১১২। শিলোঞ্ছমপ্যাদদীত বিপ্রোহজীবন্‌ যতস্ততঃ।

প্রতিগ্রহাচ্ছিলঃ শ্রেয়াংস্ততোহপ্যুঞ্ছঃ প্রশসাতে॥

ব্রাহ্মণ (স্বকর্মদ্বারা) জীবনধারণে অক্ষম হলে যেখানে সেখানে শিলোঞ্ছও গ্রহণ করবেন। প্রতিগ্রহ অপেক্ষা শিল,৪শিল অপেক্ষা উঞ্ছ৫ প্রশস্ত।

১১৩। সীদদ্ভিঃ কৃপামিচ্ছদ্ভির্ধনে বা পৃথিবীপতিঃ।

যাচ্যঃ স্যাৎ স্নাতকৈর্বিপ্রৈরদিৎসংস্ত্যাগমর্হতি॥

স্নাতক ব্রাহ্মণ (ধনাভাবে) কষ্ট পেলে (সোনারূপা ছাড়া ধান, কাপড় প্রভৃতি) কুপ্য দ্রব্য অথবা (যাগাদির উপযুক্ত) ধন (শাস্ত্রবিধি লঙ্ঘনকারী) ক্ষত্রিয়ের কাছে যাচ্‌ঞা করবেন; যে দিতে না চায় সে ত্যাগযোগ্য।

১১৪। অকৃতঞ্চ কৃতাৎ ক্ষেত্রাদ্‌গৌরজাবিকমেব চ।

হিরণ্যং ধানমন্নঞ্চ পূৰ্ব্বং পূর্ব্বমদোষবৎ॥

যে ক্ষেত্রে শস্য বপন করা হয়েছে, তার থেকে যাতে বপন করা হয়নি (তা প্রতিগ্রহে শ্রেয়)—(ঐ ক্ষেত্র), গাভী, পাঁঠা, ভেড়া, সোনা, ধান, অন্ন— এইগুলির মধ্যে (প্রতিগ্রহের ব্যাপারে) পূর্ব পূর্বটি অদুষ্ট।

১১৫। সপ্ত বিত্তাগমা ধৰ্ম্মা দায়ো লাভঃ ক্রয়ো জয়ঃ।

প্রয়োগঃ কর্মযোগশ্চ সৎপ্রতিগ্রহ এব চ॥

সাত প্রকার ধনাগমেব উপায় ধর্মসম্মত— দায় (উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত), লাভ, ক্রয়, জয়লব্ধ, বিনিয়োগ (থেকে প্রাপ্ত বৃদ্ধি বা সুদ) ও সংপ্রতিগ্রহ।

১১৬। বিদ্যা শিল্পং ভৃতিঃ সেবা গোরক্ষ্যংবিপণিঃ কৃষিঃ।

ধৃতির্ভৈক্ষ্যংকুসীদঞ্চ দশ জীবনহেতবঃ॥

বিদ্যা, শিল্প, ভৃত্যভাবে বেতন গ্রহণ, সেবা, গোপালন, বাণিজ্য, কৃষি, সন্তোষ (এতে অল্পের দ্বারা বাঁচা যায়), ভিক্ষা, সুদ— এই দশটি জীবিকা।

১১৭। ব্রাহ্মণঃ ক্ষত্রিয়ো বাপি বৃদ্ধিংনৈব প্রযোজয়েৎ।

কামন্তু খলু ধর্ম্মার্থং দদ্যাং পাপীয়সেহল্পিকাম্॥

ব্রাহ্মণ বা ক্ষত্রিয় সুদে টাকা খাটাবেন না, অবশ্য ধর্মকার্যের জন্য নিকৃষ্ট কর্মকারীকে অল্প সুদে (ধার দিতে পারেন)।

১১৮। চতুর্থমাদদানোহপি ক্ষত্রিয়ো ভাগমাপদি।

প্রজা রক্ষন্ পরং শক্ত্যা কিল্বিষাৎ প্রতিমুচ্যতে॥

আপদ্‌কালে যথাশক্তি প্রজাবক্ষণকারী ক্ষত্রিয় (রাজা) (ধানের) চতুর্থভাগ গ্রহণ করেও (অধিককরগ্রহণ রূপ) পাপ থেকে মুক্ত হন।

১১৯। স্বধৰ্ম্মো বিজয়স্তস্য নাহবে স্যাৎপরাঙ্মুখঃ।

শস্ত্ৰেণ বৈশ্যান্‌ রক্ষিত্বা ধর্ম্ম্যমাহারয়েদ্বলিম্॥

(যুদ্ধে) জয়লাভ তাঁর নিজধর্ম, যুদ্ধে তিনি পরাঙ্মুখ হবেন না। অস্ত্রদ্বারা বৈশ্যদের রক্ষা করে তিনি ধর্মসম্মত কর আদায় করবেন।

১২০। ধান্যেহষ্টমং বিশাং শুল্কং বিংশং কার্ষাপণাবরম্‌।

কর্ম্মোপকরণাঃ শূদ্ৰাঃ কারবঃ শিল্পিনস্তথা॥

(আপদ্‌কালে) বৈশ্যদের ধানের অষ্টমভাগ, স্বর্ণাদিকার্ষাপণ পর্যন্ত বস্তুর বিভাগের এক ভাগ কর হবে। (আপদে অনাপদে শূদ্র, কারুক ও শিল্পীরা কর্মদ্বারা (রাজার উপকার করে, অর্থাৎ তারা কর না দিয়ে বিনা বেতনে, রাজার কিছু কাজ করে দেয়।

১২১। শূদ্ৰস্তু বৃত্তিমাকাংক্ষন্‌ ক্ষত্রমারাধয়েদ্‌ যদি।

ধনিনং বাপ্যুপারাধ্য বৈশ্যং শূদ্রো জিজীবিষেৎ॥

শূদ্র (ব্রাহ্মণসেবার অভাবে) জীবিকা চাইলে ক্ষত্রিয়সেবা করবে, তদভাবে ধনী বৈশ্যের সেবা করবে।

১২২। স্বর্গার্থমুভয়ার্থং বা বিপ্রানারাধয়েত্তু সঃ।

জাতব্রাহ্মণশব্দস্য সা হস্য কৃতকৃত্যতা॥

সে স্বর্গের বা স্বর্গ ও স্ববৃত্তি উভয়ের জন্য ব্রাহ্মণের সেবা করবে। সে ব্রাহ্মণাশ্রিত—এই শব্দদ্বারা তার কৃতার্থতা হয়।

১২৩। বিপ্রসেবৈব শূদ্রস্য বিশিষ্টংকৰ্ম্ম কীর্ত্ত্যতে।

যদতোহন্যদ্ধি কুরুতে তদ্ভবত্যস্য নিষ্ফলম্॥

ব্রাহ্মণের সেবাই শূদ্রের বিশিষ্ট কর্ম বলে কথিত হয়। এ ছাড়া সে যা করে, তা নিষ্ফল হয়।

১২৪। প্রকল্প্যা তস্য তৈর্বৃত্তিঃ স্বকুটুম্বাদ্যযথার্হতঃ।

শক্তিঞ্চাবেক্ষ্য দাক্ষ্যঞ্চ ভৃত্যানাঞ্চ পরিগ্রহম্‌॥

ব্রাহ্মণ শূদ্রের সেবাসামর্থ্য, দক্ষতা ও পোষ্যবর্গের সংখ্যা বিবেচনা করে তার যোগ্য জীবিকা স্থির করবেন।

১২৫। উচ্ছিষ্টমন্নং দাতব্যং জীর্ণানি বসনানি চ।

পুলাকাশ্চৈব ধান্যানাং জীণাশ্চৈব পরিচ্ছদাঃ॥

(ব্রাহ্মণ কর্তৃক শূদ্রকে) উচ্ছিষ্ট অন্ন, জীর্ণবস্ত্র, অসার ধান ও জীর্ণ পরিচ্ছদ দেয়।

১২৬। ন শূদ্রে পাতকংকিঞ্চিন্ন চ সংস্কারমর্হতি।

নাস্যাধিকারো ধৰ্ম্মেহস্তি ন ধর্ম্মাৎ প্রতিষেধনম্॥

শূদ্রের (নিষিদ্ধদ্রব্যভক্ষণে) কোন পাপ নেই, সে (উপনয়নাদি) সংস্কারের যোগ্য নয়, ধর্মে তার অধিকার নেই, (শূদ্রের জন্য বিহিত পাকযজ্ঞাদি) ধর্ম থেকে তার নিষেধ নেই।

১২৭। ধর্মেন্সবস্তু ধর্মজ্ঞাঃ সংবৃত্তমনুষ্ঠিতাঃ।

মন্ত্রবর্জ্জং ন দুষ্যন্তি প্রশংসাং প্রাপ্লুবন্তি চ॥

ধর্মকামী ধর্ম সজ্জনের আচারপরায়ণ শূদ্রগণ (নমস্কারমন্ত্র ব্যতীত) মন্ত্র ছাড়া (পাকযজ্ঞাদি করে) অপরাধী হয় না বরং প্রশংসা পায়।

১২৮। যথা যথা হি সদ্‌বৃত্তমাতিষ্ঠত্যনসূয়কঃ।

তথাতথেমং চামুং চ লোকং প্রাপ্নোত্যনিন্দিতঃ॥

পরজনের অনিন্দুক শূদ্র যেমন যেমন সদাচার অবলম্বন করে, অনিন্দিত হয়ে সে তেমন তেমন ইহলোকে প্রশংসা ও পরলোকে স্বর্গাদিলোক প্রাপ্ত হয়।

১২৯। শক্তেনাপি হি শূদ্রেণ ন কার্য্যো ধনসঞ্চয়ঃ।

শূদ্রো হি ধনমাসাদ্য ব্রাহ্মণনেব বাধতে॥

শূদ্ৰ সক্ষম হলেও ধনসঞ্চয় করবে না। কারণ, শূদ্ৰ ধন লাভ করে (গর্ব্বশে) ব্রাহ্মণদেরই পীড়া দেয়।

১৩০। এতে চতুর্ণাং বর্ণানামাপদ্ধর্ম্মঃ প্রকীর্ত্তিতাঃ।

যান্ সমগতুতিষ্ঠত্তো ব্রজন্তি পরমাংগতিম্॥

চার বর্ণের এই আপদ্ধর্মসমূহ বলা হল, যেগুলি যথাযথভাবে আচরণ করে তারা শ্রেষ্ঠ গতি (মোক্ষ) লাভ করে।

১৩১। এষ ধর্ম্মবিধিঃ কৃৎস্নশ্চাতুর্ব্বর্ণ্যস্য কীৰ্ত্তিতঃ।

অতঃপরংপ্রবক্ষ্যামি প্রায়শ্চিত্তবিধিং শুভম্‌॥

চার বর্ণের এই সমগ্র ধর্মবিধি উক্ত হল। এর পরে মঙ্গলকর প্রায়শ্চিত্তবিধি বলব।

মানবধর্মশাস্ত্রে ভৃগুপ্ৰোক্ত সংহিতায় দশম অধ্যায় সমাপ্ত।

পাদটীকা

১অম্বাষ্ঠাদি সংকর জাতি, বর্ণ নয়।

২ব্ৰাহ্মণ-ব্রাহ্মণীর সন্তান, ক্ষত্রিয়ের ক্ষত্রিয়াজাত সন্তান, বৈশ্যের বৈশাজাত সন্তান— তিনটি, ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়ার, ব্রাহ্মণ-বৈশ্যার এবং ক্ষত্রিয়-বৈশ্যার সন্তান—তিনটি।

৩তাৎপর্য— যেমন পবিত্র গঙ্গাদির জল অপবিত্র হলের বারা দূষিত হয় না, তেমনই স্বভাবতঃ পবিত্র ব্রাহ্মণ নিশ্চিত ব্যক্তিব থেকে প্রতিগ্ৰহদ্বারা দূষিত হয় না।

৪শব্দকোষ দ্রঃ।

৫ঐ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *