2 of 2

রামচন্দ্র রায় (আন্দুলের রাজপরিবার)

রামচন্দ্র রায় (আন্দুলের রাজপরিবার )

বাংলার বনেদী ও সম্মানিত এই কায়স্থ পরিবারের আদি পদবী ছিল ‘কর’; মুসলমান শাসনকালে তাঁরা রায় পদবী লাভ করেছিলেন। এই বংশের রামলোচন রায় সম্ভবত ইংরেজ সরকারের কাছ থেকে রাজা বাহাদুর খেতাব লাভ করেন। তখন থেকে পরিবারটিকে রাজপরিবাররূপে গণ্য করা হয়।

রাজা রামলোচন রায় ও তাঁর ভাই রাজচন্দ্র রায়ের পিতা রামচন্দ্র রায় ছিলেন শোভাবাজার রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা নবকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের সমসাময়িক। রামচন্দ্র প্রথম জীবনে ছিলেন কর্নেল ক্লাইভের সরকার (উল্লেখ করা যায় সে-সময় সরকার পদটি ছিল বিশেষ মর্যাদার)। পরবর্তীকালে তিনি গভর্নর এইচ ভান্সিটর্টের ও জেনারেল স্মিথের দেওয়ান হন। তিনি বাস করতেন পাথুরিয়াঘাটায়। প্রচুর অর্থ তিনি ব্যয় করেন। তবে, তার একটা বড় অংশ তিনি দান ও ধর্মকর্মে ব্যয় করেন। তাঁর পুত্রদ্বয় রাজা রামলোচন ও রাজচন্দ্র ছিলেন প্রভাবশালী, শিক্ষিত ও দয়ালু প্রকৃতির মানুষ। রাজা রামলোচনের দুই পুত্র : কুমার কাশীনাথ ও কুমার শিবচন্দ্র। এঁরা উভয়েই ছিলেন সংস্কৃত, বাংলা ও ফার্সী ভাষায় সুশিক্ষিত। এঁরা কিছু ইংরেজিও জানতেন; সর্বোপরি, এঁরা ছিলেন ব্রিটিশ রাজশক্তির অনুগত।

কুমার কাশীনাথের দুই পুত্র : রাজনারায়ণ ও তারকনাথ। এঁরা হাওড়ার আন্দুলে বসবাস করতে চলে যান। রাজনারায়ণের উচ্চ সামাজিক মর্যাদা, রাজভক্তি এবং নিষ্কলঙ্ক চরিত্রের জন্য ব্রিটিশ সরকার তাঁকে রাজাবাহাদুর খেতাবে সম্মানিত করেন।

রাজা রাজনারায়ণ রায় বাহাদুর শিক্ষালাভ করেন হিন্দু কলেজে; তিনি সংস্কৃত ভাষায় বিশেষ পান্ডিত্য অর্জন করেন। কায়স্থদের সকল সামাজিক আন্দোলনে তিনি অগ্রণীয় ভূমিকায় থাকতেন; তাঁর মতে কায়স্থগণ ব্রাহ্মণ জাতি ব্যতীত কারও চেয়ে নিম্নস্থানীয় নয়। বহু সংস্কৃত শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি সহকারে রাজা রাজনারায়ণ অভ্রান্তভাবে প্রমাণ করেন, কায়স্থ জাতি প্রকৃতপক্ষে ক্ষত্রিয় জাতির অন্তর্ভুক্ত; প্রাচীনকালে এই জাতিরও পবিত্র উপবীত ধারণের অধিকার ছিল। আন্দুল রাজবাড়ীতে তাঁর পুত্রের বিবাহের সময় তিনি ক্ষত্রিয়দের মতই কুশণ্ডিকা অনুষ্ঠান করান। রাজা স্যার রাধাকান্ত দেব বাহাদুর, কে সি এস আইও তাঁর পৌত্রের বিবাহের সময় এই অনুষ্ঠানটি করিয়েছিলেন।

জীবিতকালে রাজা রাজনারায়ণ পন্ডিত সমাজের বিশেষ শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন; তাঁর মৃত্যুতে বেশ কয়েকজন ইউরোপীয় ও এদেশবাসী শোক প্রকাশ করেন। মৃত্যুকালে তিনি পুত্র কেশববিজয় রায়কে রেখে যান। কেশববিজয়ের মৃত্যুতে তাঁর দুই বিধবা এক এক জন করে দত্তক গ্রহণ করেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *