2 of 2

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর

দেবেন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করেন ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে। তাঁর শিক্ষা আরম্ভ হয় রাজা রামমোহন রায়ের বিদ্যালয়ে; এর পর তাঁকে হিন্দু কলেজে ভর্তি করা হয়। দ্বারকানাথ তাঁকে নিজ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ‘কার টেগোর অ্যান্ড কোম্পানি’ ও ‘ইউনিয়ন ব্যাঙ্কে’ কাজ শেখানোর উদ্দেশ্যে নিযুক্ত করে নেন। বিশেষ যত্ন সহকারে তিনি সংস্কৃত শিক্ষা করেন; বাল্যকাল থেকেই তিনি ধর্মভাবাপন্ন ছিলেন। বাইশ বছর বয়সেই তিনি তত্ত্ববোধিনী সভা প্রতিষ্ঠা করেন–এখানে সত্য, ধর্ম ও ভক্তি সম্বন্ধে আলোচনা হত। এই সভাকে পরবর্তীকালে ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গে একীভূত করা হয়––রাজা রামমোহন রায়ের মৃত্যুর পর ব্রাহ্মসমাজের তখন পতনোম্মুখ অবস্থা। এই সময়ে দেবেন্দ্রনাথ ব্রাহ্মসমাজে যোগদান করেন; তাঁর আন্তরিকতা ও ভক্তির জন্য ব্রাহ্মসমাজে আবার প্রাণসঞ্চার হয়। বেদের বহু শিক্ষা সমাজের আদর্শসম্মত নয় দেখে তিনি বেদের বহু অংশ ত্যাগ করে, গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মন্ত্র গ্রহণ করেন। হিমালয়ে তিনি কয়েক বছর ধ্যান করে কাটান। তত্ত্ববোধিনী সভা বিলুপ্ত হবার পর, তিনি কলকাতায় একটি ব্রাহ্ম বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। ১৭৯২ শকাব্দে দূর্গাপূজার সময় তিনি সমুদ্রপথে কতিপয় বন্ধুবান্ধবসহ সিংহল যাত্রা করেন। ‘ইণ্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকাখানি তাঁরই সাহায্য ও উৎসাহে প্রকাশিত হয়–পত্রিকাটির প্রথম সম্পাদক ছিলেন মনোমোহন ঘোষ; তিনি ইংল্যাণ্ড চলে গেলে, এর সম্পাদক হন কেশবচন্দ্র সেন। সমাজে আচার-অনুষ্ঠান বিষয়ে দেবেন্দ্রনাথ ও কেশবচন্দ্রের মধ্যে মনান্তর হলে, একমাত্র দেবেন্দ্রনাথের ব্যয়েই ‘ন্যাশনাল পেপার’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

উপবীত ত্যাগ ও ব্রাহ্মমতে কন্যার বিবাহ দেবার ব্যাপারে তিনিই প্রথম ব্রাহ্ম। কিছুকালের জন্য তিনি ব্রিটিশ ইণ্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের অবৈতনিক সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু ধর্মবিষয়ে মগ্ন থাকায় তিনি এই পদ ত্যাগ করেন; তিনি অত্যন্ত আড়ম্বর সহকারে তাঁর বাড়ীতে ৭(১১) মাঘ ব্রাহ্মসমাজের বার্ষিক (প্রতিষ্ঠা) দিবস উপলক্ষে উৎসব করতেন। বক্তৃতা ও রচনা দ্বারা তিনি বাংলা সাহিত্যেরও সমৃদ্ধি সাধন করেছেন। তিনি পাঁচ পুত্রের পিতা। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র দ্বিজেন্দ্রনাথও নিষ্ঠাবান ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী। তাঁর মধ্যম পুত্র সত্যেন্দ্রনাথ প্রথম ভারতীয় আই সি এ। দেবেন্দ্রনাথের সকল পুত্রই কাব্যপ্রেমী।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *