1 of 2

দ্য পাওয়ার অব ওয়ার্ডস

দ্য পাওয়ার অব ওয়ার্ডস

ওইনোস বলল–আগাথস, অমৃতময় জীবনের সর্বশক্তিতে শক্তিমান এ আত্মার দুর্বলতাকে মার্জনা করার জন্য তোমার কাছে প্রার্থনা করছি।

আগাথস বলল–আরে ওইনোস, তুমি এমন করে ভেঙে পড়ছ কেন, বুঝছি না তো! তুমি তো এমন কোনো অসঙ্গত কথাই বলনি, যার জন্য তোমাকে এমন করে মার্জনা ভিক্ষা করতে হবে।

আগাথস অস্তিত্বের এ অবস্থায় আমি কিন্তু স্বপ্ন দেখেছিলাম। ওইনোস বলল– আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, সব ব্যাপারই জানব এবং সচেতন থাকব। আর সর্বজ্ঞ। হওয়ায় আমি হঠাৎই সুখি হব।

আগাথস বলল–জ্ঞান আর সুখ এক নয়। জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে সুখ আসে। জ্ঞান আহরণের মধ্য দিয়ে চিরটাকাল কাটাতে পারছি বলেই তো সুখভোগ করা সম্ভব হচ্ছে, তাই না? সবকিছু জেনে বুঝে ফেলা তো শয়তানের অভিশাপ ছাড়া কিছু নয়।

একটা কথা, ঈশ্বর কি তবে সর্বজ্ঞ নন? সবকিছু কি তার নখদর্পণে নয়?

তার কাছে সেটা আজ অবধি অজানা রয়ে গেছে। কারণ কি? আরে তিনি যে চিরসুখি।

একটা কথা–

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই আগাথস বলে উঠল–কী কী বলতে চাইছ?

আমরা যখন ঘণ্টায় ঘণ্টায়, প্রতি মিনিটে মিনিটে জ্ঞান আহরণ করে চলেছি তখন এমন এক সময় আসবে সবকিছুই আমাদের জানা হয়ে যাবে।

আগাথস বলল–ভালো কথা, ওই পাতালস্পর্শী দূরত্বের দিকে একবার দৃষ্টি নিক্ষেপ কর। লক্ষ-কোটি নক্ষত্রের মধ্য দিয়ে আমরা পাড়ি দিচ্ছি–যাচ্ছি, ওই বিপুল অনাবিল সৌন্দর্যরাশির দিকে দৃষ্টিপাত কর। নির্মল বিশ্বের নিরবচ্ছিন্ন সুবর্ণ প্রাচীর আত্মিক দিব্যদৃষ্টিকেও কী পদে পদে ব্যাহত করছে না? লক্ষ-কোটি বস্তু অগণিত হওয়ার জন্যই কী একসময়ের একত্ব হয়ে যাচ্ছে না?

ওইনোস এবার বলল–বস্তুর অসীমতা যে স্পষ্ট উপলব্ধি করতে পারছি, সে যে স্বপ্ন নয়, সম্পূর্ণ সত্য।

শোন আইডেন-এ স্বপ্নের কোনো অস্তিত্বই নেই। তবে এর-ওর মুখে শুনতে পাই, অসীম ফোয়ারাবাদের জন্যই বস্তুর এ অসীমতা সৃষ্টি করা হয়েছে। আত্মা সে ফোয়ারার পানিতে তৃষ্ণা নিবারণ করতে সক্ষম হবে। কারণ, আত্মার জ্ঞানের তৃষ্ণা কোনোদিনই মেটে না। তৃষ্ণা মিটে যাওয়ার অর্থই তো আত্মা নিভে যাবে।

আত্মা নিভে যাবে?

অবশ্যই। হ্যাঁ যা বলছিঝলাম, এখন নির্ভয়ে তোমার যা-কিছু জিজ্ঞাস্য জিজ্ঞেস করতে পার। এবার চল, এক কাজ করা যাক–

ওইনোস বলল–কী? কীসের কথা বলতে চাইছেন?

আগাথস এবার বলল–এবার চল, বাঁদিকে বাঁক নিয়ে আখ খেতের এলাকা ছাড়িয়ে নক্ষত্রখচিত অঞ্চলে যাই। ওদিকে তিন রঙবিশিষ্ট তিন সূর্যময় জগতের অস্তিত্ব বর্তমান।

পথ পাড়ি দিতে দিতে পৃথিবীর চেনা-সুরে সবকিছু চিনিয়ে, শিখিয়ে যাও। যেভাবে সারাজীবনের স্রষ্টাকে একদিন আমার পক্ষে চেনা সম্ভব হয়েছিল। সে উপায়ে আমি কিন্তু তোমার কথার মারপ্যাঁচ বুঝতে পারলাম না, কী বল? ঈশ্বরই কী স্রষ্টা নন?

আমার কথার অর্থ হচ্ছে, ঈশ্বর সৃষ্টি করেন না। তিনি– আগাথসকে থামিয়ে দিয়ে ওইনোস বলে উঠল–এ কী ধন্ধে ফেলে দিলে, বুঝছি তো! ব্যাপারটা খোলসা করে বুঝিয়ে দাও তো।

শোন, গোড়াতেই তিনি শুধুমাত্র সৃষ্টি করেছিলেন। এখন যে অগণিত প্রাণী নিখিল বিশ্বজুড়ে অবস্থান করছে এরা কিন্তু ঈশ্বরের সৃজনীশক্তির মাধ্যমে সরাসরি সৃষ্ট নয়। বরং বলতে পার ঈশ্বর কেবলমাত্র মধ্যমা।

মানবকূল কিন্তু এরকম ধারণাকে বংশগতি আখ্যা দেবে।

দেবতাকুল বলবেন, এই তো পরম সত্য।

ওইনো স্বস্তির নিকাস ফেলে বলল–তোমার কথা এ-পর্যন্ত বুঝতে আমার আর কোনো অসুবিধা নেই। ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি। প্রকৃতি কিছু পদ্ধতি সৃষ্টির রূপ ধারণ করেছে। পৃথিবী ধ্বংস্তূপে পরিণত হয়ে যাওয়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে সকল পরীক্ষা নিরীক্ষার পর কিছু সংখ্যক জ্ঞানী গুণীজন জীবকণা সৃষ্টি করার ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। সে-সব ব্যাপার-স্যাপার কিন্তু দ্বিতীয় স্তরের সৃষ্টি। প্রথমত, প্রথম যে বিধান সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর সে সৃষ্টি অব্যাহত আছে। দ্বিতীয় স্তরের ওই সৃষ্টিগুলো তার অন্তর্ভুক্তই বটে।

এবার একটা কথা হচ্ছে, অস্তিত্ব থেকে কী নক্ষত্রময় এ বিশ্বের সৃষ্টি হচ্ছে না, কী বল?

হ্যাঁ, তা তো বটেই। আগাথস বলে উঠল।

আর একটা কথা, নক্ষত্রগুলো কী সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট নয়!

আগাথস বলল–আমার ধারণাকে একের পর এক ধাপের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করি। তোমার তো ভালোই জানা আছে, কোনো চিন্তা যেমন ধ্বংস হয় না, ঠিক তেমনি কোনো কাজ ফলছাড়া হতে পারে না। যখন পৃথিবীতে বসবাস করতাম তখন হাত চালালেই বাতাসে কম্পনের সৃষ্টি হত। তারপর তা অন্তহীনভাবে বাড়তে বাড়তে বাতাসের প্রতিটা বস্তুকণায় তাড়না জাগিয়ে তুলেছে। তারপর থেকে যুগ-যুগান্ত ধরে সে প্রতিবার হাতনাড়া বা হাত চালনার মাধ্যমে সে তাড়নাকে আরও তাড়িয়ে নিয়ে গেছে।

তাই বুঝি?

অবশ্যই, আমাদের এ বিশ্বের গণিতকাররা এ তত্ত্ব জানতেন।

হ্যাঁ, তা অবশ্য জানতেন। ওইনোস বলল।

আগাথস পূর্ব প্রসঙ্গের জের টেনে এবার বলল–হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম, তারা সাধক হিসেবে তাড়নার মাধ্যমে তাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয়েছিল, কোন তাড়নার পক্ষে কতখানি সময়ের ভেতরে বিশ্বকে বেষ্টিত কওে থাকা আবহমণ্ডলের প্রতিটা পরমাণুকে প্রভাবিত করা সম্ভব। সিঁড়িভাঙা অঙ্কের হিসেবে খুব সহজেই তাদের মূল তাড়নায় ফিরে আসা সম্ভব হয়েছে। তারা কিন্তু সে তাড়নার মূল্যায়নও করেছিলেন। আরও আছে–গণিতবিদরা হিসেব কষে আরও বুঝতে জানতে সক্ষম হয়েছিলেন, যে কোনো তাড়নার ফল সত্যসত্যই অন্তহীন। আর এটাও দেখেছিলেন, বীজগণিতের হিসাব-নিকাশের মাধ্যমে এসব ফলের একটা অংশের গোড়াতেও ফিরে যাওয়া সম্ভব। তারা আরও উপলব্ধি করেছিলেন, পিছিয়ে আসার এ পদ্ধতিটা অবগত হয়ে যাওয়ার দরুণ ফলাফলের প্রতিক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বীজগণিতিক বিশ্লেষণের মাধ্যমেই আর তার প্রয়োগ করা সম্ভব একমাত্র তাদের মেধাশক্তির মাধ্যমেই। এ পদ্ধতির আবিষ্ককর্তারা। ঠিক এ জায়গাটাতে পৌঁছেই গণিতবিদরা আচমকা থেমে যেতে বাধ্য হন।

কেন? কেনই বা আর অগ্রসর হলেন না?

এরও কারণ যথেষ্টই ছিল।

কী সে কারণ, আমি তো তাই জানতে চাইছি? বল, কারণটা কী ছিল?

দূর প্রতিক্রিয়ার প্রসঙ্গে বিচার বিবেচনার প্রয়োজন দেখা দেওয়ার জন্য। তাদের পক্ষে যা জানা সম্ভব হয়েছিল, তা থেকে তাদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হলো– বীজগণিত বিশ্লেষণ সম্পূর্ণরূপে নিখুঁত হওয়ার জন্য অনন্ত সময়ের বুকে যে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে, যে কোনো পরিণামে বাতাস বা ইথারের মাধ্যমে পৌঁছানো যেতে পারে। হিসাব-নিকাশ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছিল। বাতাসে যে কোনো তাড়নাই সৃষ্টি করা যাক, সবশেষে নখিল বিশ্বে যা-কিছু বর্তমান তার প্রত্যেকের ওপর তার প্রভাব পড়তে বাধ্য।

হুম্। ওইনোস প্রায় অস্ফুট উচ্চারণ করল।

আগাথস বলে চলল– হ্যাঁ, যা বলছিলাম, অন্তহীন জ্ঞানের অধিকারী সে তাড়নাকে পিছন দিকে চলে গেলে মূলে অর্থাৎ ঈশ্বরে অবশ্যই পৌঁছে যাওয়া যাবে। এরকমভাবে পিছনে চলে যাওয়ার পদ্ধতি অবলম্বন করে পিছনে চলে গেলে ধূমকেতু উত্সকেও জানা সম্ভব হবে। ধী-শক্তিতেই এ-সমতা বর্তমান থাকে। মোদ্দা কথা, যেখানে আরম্ভ সেখানে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব। তাই বলছি কি–

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ওইনোস বলে উঠল–কিন্তু তুমি তো কেবলমাত্র বাতাসের তাড়না সৃষ্টির কথাই বলছিলে, তাই না?

হ্যাঁ, তা বলেছিলাম বটে। তবে পৃথিবীর সম্পর্কেই এ-কথা বলে ছিলাম। এ তাড়না সাধারণত ইথারের মাধ্যমে ছুটে চলে। আরে ইথারেই তো বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তলিয়ে রয়েছে। যত কিছু সৃষ্টি হয়েছে তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম সৃষ্টি।

ওইনোস এবার বলল–তবে তুমি বলতে চাইছ, সব গতিই সৃষ্টিকার্য সম্পাদন করছে, তাই কী?

অবশ্যই। যথার্থ জ্ঞান কিন্তু আমাদের এ-শিক্ষাই দিচ্ছে, চিন্তাই হচ্ছে যাবতীয় গতির উৎস। আর যাবতীয় চিন্তার উৎস–

তাকে কথাটা শেষ করতে না দিয়েই ওইনোস বলে উঠল–ঈশ্বর, তাই তো?

হ্যাঁ, ঠিক তাই। সে বিশ্ব সম্প্রতি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে গেল তার আবহমণ্ডল তাড়নার কথা তো তোমার কাছে সবেমাত্রই ব্যক্ত করলাম। তুমি রূপসি এ বিশ্বের সন্তান ছিলে। তুমি কি তখন কিছুই বুঝতে পারনি, বাহ্যিক ক্ষমতার অস্তিত্ব আছেই আছে? আমাদের প্রতিটা কথাই কি বায়ুমণ্ডলে তাড়না সৃষ্টি করছে না, বল তো?

ওইনোস বলল–তাই যদি হয় তবে কেঁদে আকুল হচ্ছ না কেন? দৃষ্টিনন্দন এ নক্ষত্ররাজ্যের ওপর দিয়ে ডানা মেলে উড়তে উড়তে তোমার পাখা দুটো কেন এমন করে ঝুলে পড়ছে? আর এমন ঘন সবুজ অথচ এমন ভয়ঙ্কর পৃথিবীকে তো আমার নজরে পড়েনি। এর আগ্নেয়গিরিগুলোর রক্তচক্ষু আরও উত্তাল হৃদয়ের ক্ষোভ ছাড়া কিছু নয়।

আগাথস সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল–ঠিক, একেবারে পুরোপুরি ঠিক কথাই বলেছ। তিন শতক আগে করজোড়ে চোখের পানি ঝরাতে ঝরাতে কয়েকটা উচ্চারণের মাধ্যমে এর জন্মদান করেছি। চকচকে ঝকঝকে পাপড়িগুলো অভাবনীয় ও অভূতপূর্ব স্বপ্ন, আর বিক্ষুব্ধ হৃদয়ের স্বপ্ন জ্বলন্ত ভয়ঙ্কর আগ্নেয়গিরিগুলো, বুঝলে?

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *