০৬. জিনম্যানশীপ বা জিন সৌহার্দ

অধ্যায় ৬ : জিনম্যানশীপ বা জিন সৌহার্দ

স্বার্থপর জিন আসলে কি? এটি শুধুমাত্র সত্যিকারের ডিএনএ-এর একটি একক অংশ নয়। ঠিক যেমন আদিম সুপে ছিল, এটি কোনো একটি নির্দিষ্ট টুকরো ডিএনএ’র ‘সব অনুলিপিগুলো’, যারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। আমরা যদি নিজেদের স্বাধীনতা দেই, জিনদের নিয়ে এমনভাবে কিছু বলার জন্য যে, তাদের সচেতন লক্ষ্য আছে, যারা আমাদের আশ্বস্ত করছে সবসময়, আমরা আমাদের অস্পষ্ট এলোমেলো অদক্ষ ভাষাকে সম্মানজনক কোনো অর্থে অনূদিত করতে পারবো। যদি আমরা সেটি করতে চাই, আমরা সেই প্রশ্নটি করতে পারি, একটি একক ‘স্বার্থপর জিন’ কি করার চেষ্টা করছে? এটি চেষ্টা করছে জিনপুলে তার সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করতে। মূলত এই কাজটি সে করে শরীরকে প্রোগ্রাম করতে সাহায্য করে, তার টিকে থাকা আর প্রজনন করার জন্য যে শরীরে এটি নিজেকে খুঁজে পায়। কিন্তু এখন আমরা জোর দিচ্ছি যে এটি আসলে বিতরণকৃত ‘এজেন্সি বা দায়িত্ব, বহু ভিন্ন ভিন্ন একক শরীরে যার একই সাথে অস্তিত্ব আছে। এই অধ্যায়ের মূল বিষয়টি হচ্ছে, একটি জিন হয়তো এর নিজের অনুলিপিকে’ সাহায্য করতে পারে, যা অন্য শরীরগুলোয় অবস্থান করছে। যদি তাই হয়, এটিকে দেখে একক কোনো সদস্যের পরার্থবাদীতা মনে হতে পারে, কিন্তু জিন স্বার্থপরতার কারণে এমন কিছু ঘটবে।

মানুষের ক্ষেত্রে অ্যালবাইনো’ হবার জিনটি কথা বিবেচনা করুন। বাস্তবিকভাবেই বেশ কিছু জিনের অস্তিত্ব আছে যারা অ্যালবাইনিজমের কারণ হতে পারে, কিন্তু তাদের মধ্যে আমি শুধু একটি জিনের কথা বলছি। এটি প্রচ্ছন্ন বা রিসেসিভ, এর মানে, ‘অ্যালবাইনো’ হবার জন্য এটিকে কোনো মানুষের শরীরে অবশ্যই দ্বিগুণ মাত্রায় উপস্থিত থাকতে হবে। আর আমাদের প্রতি ২০,০০০ জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে এটি সত্যি। কিন্তু একক মাত্রা বা একটি কপি হিসাবেও এটি উপস্থিত প্রতি ৭০ জনের মধ্যে ১ জনের শরীরে এবং এইসব ব্যক্তিরা কেউ ‘অ্যালবাইনো’ নন। যেহেতু এটি বন্টন করা আছে অনেক ব্যক্তির শরীরে, ‘অ্যালবাইনো’র মত জিন, অন্তত তাত্ত্বিকভাবে সক্ষম, জিনপুলে তার নিজের টিকে থাকার বিষয়টি সাহায্য করতে পারে এর শরীরগুলোকে এমনভাবে প্রোগ্রাম করে যেন, তারা অন্য ‘অ্যালবাইনো’ শরীরের প্রতি পরার্থবাদীতার সাথে আচরণ করে, কারণ জানা আছে তারা একই জিন বহন করে। ‘অ্যালবাইনো’ জিনের খুব খুশী হওয়া উচিৎ যদি কিছু শরীর, যার মধ্যে তারা বাস করে, তারা মারা যায়, শর্ত শুধু সেটার করার মাধ্যমে তারা অন্য শরীরকে টিকে থাকতে সাহায্য করে, যারা একই জিন ধারণ করে। যদি কোনো অ্যালবাইনো’ জিন কোনো একটি শরীরকে দিয়ে আরো অন্য দশটি ‘অ্যালবাইনো’ শরীরকে বাঁচাতে পারে, তাহলে এমনকি কোনো এক পরার্থবাদীর মৃত্যু জিনপুলে ‘অ্যালবাইনো’ জিনের সংখ্যা বাড়ানোর মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমানে ক্ষতিপুরণ পাবে।

তাহলে কি আমরা আশা করবো অ্যালবাইনোরা পরস্পরের সাথে বিশেষ দয়াশীলতার সাথে আচরণ করবে? আসলে এর উত্তর সম্ভবত, না। এবং কেন না সেটি বোঝার জন্য আমাদের ‘সাময়িকভাবে জিন একটি সচেতন’ এজেন্ট এই ধারণার রুপকটিকে পরিত্যাগ করতে হবে কারণ এই প্রসঙ্গে এটি আসলেই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। আমাদের অবশ্যই পুনরায় অনুবাদ করতে হবে শ্রদ্ধাযযাগ্য, যদিও জটিল শব্দাবলীতে। অ্যালবাইনো’ জিন আসলে টিকে থাকতে বা অন্য ‘অ্যালবাইনো’ জিনকে সাহায্য করতে ‘চায় না। কিন্তু যদি ‘অ্যালবাইনো’ জিন ঘটনাক্রমে এর বাহক শরীরকে অন্যান্য ‘অ্যালবাইনোদের সাথে পরোপকারিতার সাথে আচরণ করার কারণ হয়, তাহলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এর ফলাফল হিসাবে এই জিনটির সংখ্যা জিনপুলে বেড়ে যাবে। কিন্তু সেটি ঘটার জন্য, শরীরের উপর জিনদের দুটি স্বতন্ত্র প্রভাব থাকতে হবে, তাদের অবশ্যই এর সাধারণ প্রভাবটি প্রদান করতে হবে, খুবই ফ্যাকাশে চামড়া। এছাড়াও এটিকে অবশ্যই সেই প্রবণতার নিশ্চয়তা দিতে হবে, যা বাছাইকৃতভাবে সেই সব একক সদস্যদের প্রতি পরোপকারী আচরণ করে, একই ভাবে যাদের চামড়ার রং ফ্যাকাশে। এধরনের ‘দ্বিগুণ প্রভাব’-এর জিন, যদি এর অস্তিত্ব থাকে, জনগোষ্ঠীতে অত্যন্ত সফল হতে পারে।

কিন্তু এটি সত্য যে জিনদের বহুমুখী প্রভাব থাকে, অধ্যায় ৩ এ যে বিষয়টি আমি উল্লেখ করেছিলাম। তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব যে একটি জিনের উদ্ভব হতে পারে, যা বাহ্যিকভাবে চিহ্নিত করার জন্য একটি বৈশিষ্ট্য প্রদান করতে পারে এর বাহককে, ধরুন হালকা রঙের চামড়া, বা সবুজ দাড়ি বা কোনোকিছু যা চোখে পড়ে এবং সেই সাথে কোনো প্রবণতা, যারা এ-ধরনের সুস্পষ্ট বৈশিষ্ট্য যারা বহন করে তাদের প্রতি বিশেষভাবে ভালো ব্যবহার করার বিষয়টি নিশ্চিৎ করে। এটা সম্ভব, তবে এমন সুনির্দিষ্টভাবে কিছু ঘটার সম্ভাবনা কম। সবুজ দাড়ির বৈশিষ্ট্যেও একই ভাবে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে নোখের কোনা বাড়ার বৈশিষ্ট্যের সাথে বা অন্য যে কোনো বৈশিষ্ট্য বরং সবুজ দাড়ির প্রতি আকর্ষণের সাথে থাকতে পারে যেমন, ফ্রিসিয়া ফুলের গন্ধ নেবার অক্ষমতা। সম্ভাবনা খুবই কম যে একটি এবং একই জিন দুটোই সৃষ্টি করতে পারে, কোনো একটি শনাক্তকারী বৈশিষ্ট্য ও সঠিক ধরনের পরার্থবাদীতা। কিন্তু তাসত্ত্বেও, যাকে কিনা বলা যেতে পারে সবুজ দাড়ির পরার্থবাদীতার প্রভাব, তাত্ত্বিকভাবে সম্ভব হতে পারে।

একটি মনগড়া লেবেল যেমন, সবুজ দাড়ি, হচ্ছে শুধুমাত্র একটি উপায়, যার মাধ্যমে জিনরা প্রজাতির অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে তাদের নিজেদের অনুলিপিদের হয়তো শনাক্ত করতে পারে। আর কি কোনো উপায় আছে? একটি বিশেষভাবে সরাসরি উপায় হতে পারে এমন। হয়তো কোনো একটি পরার্থবাদী জিনের বাহককে শুধুমাত্র শনাক্ত করা যেতে পারে সেই বাস্তব সত্যটি ব্যবহার করে, এর বাহক কোনো পরার্থবাদী কাজ করছে। কোনো একটি জিন জিনপুলে ভালোভাবে টিকে থাকতে পারে, যদি এটি এমন কিছু বলে যা এর সমতুল্য: “শরীর, যদি ‘ক’ কাউকে বাঁচাতে গিয়ে পানিতে ডুবতে বসে, ঝাঁপিয়ে পড়ে ‘ক’ কে বাঁচাও। আর যে কারণে এমন কোনো জিন ভালো করতে পারে, সেটি হচ্ছে গড়পড়তার চেয়ে বেশী সম্ভাবনা আছে যে ‘ক’ এরও একই ‘জীবন রক্ষাকারী পরার্থবাদী জিন আছে। ‘ক’ কাউকে বাঁচাতে চেষ্টা করেছে, সেই বাস্তব সত্যটি হচ্ছে একটি লেবেল, সবুজ দাড়ি লেবেলের সমতুল্য। সবুজ দাড়ির চেয়ে এটি কম খামখেয়ালী, তারপরও এটিকে বরং অসম্ভাব্য মনে হয়। আর কোনো সম্ভাব্য উপায় কি ভাবা যেতে পারে, যেখানে জিনগুলো অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে তাদের অনুলিপিগুলো শনাক্ত করতে পারে?

এর উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ। বিষয়টি প্রদর্শন করা খুব সহজ যে, নিকটাত্মীয়রা–কিন– গড়পড়তার চেয়ে তাদের জিনগুলো ভাগাভাগি করার বেশী সম্ভাবনা আছে। বহুদিন ধরেই বিষয়টি স্পষ্ট যে, এটাই সম্ভবত ব্যাখ্যা করছে, কেন সন্তানদের প্রতি পিতামাতাদের পরার্থবাদী আচরণ এত ব্যাপকভাবে দেখা যায়। আর, এ. ফিশার, জে, বি, এস, হলডেন এবং আরো বিশেষ করে ডাবলিউ, ডি, হ্যামিলটন যে বিষয়টি অনুধাবন করেছিলেন তাহলো– একই ভাবে বিষয়টি প্রযোজ্য অন্যান্য নিকটাত্মীয়দের ক্ষেত্রেও– যেমন ভাই ও বোন, ভাইপো ও ভাইঝি, কাছের সব আত্মীয়রা। যদি কোনো সদস্য মারা যায় তার দশজন নিকটাত্মীয়কে বাঁচাবার জন্য, কিন আলট্রইজম বা আত্মীয়-পরার্থবাদীতার জিনটির একটি কপি হয়তো হারিয়ে যাবে, কিন্তু একই জিনের ‘অনেকগুলো কপি বেঁচে যাবে।

 “অনেকগুলো’ শব্দটি বেশ অস্পষ্ট, যেমন, অস্পষ্ট ‘নিকটাত্মীয়’ শব্দটি। আমরা এর চেয়ে ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারি, যেমন করে হ্যামিলটন করেছিলেন। ১৯৬৪ সালে লেখা তার দুটি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ, সামাজিক প্রাণি-আচরণবিদ্যার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অবদান রেখেছে এমন যেকোনো লেখার মধ্যে অন্যতম। আমি কখনই বুঝে উঠতে পারিনি কেন এই দুটি পেপার প্রাণি আচরণবিদরা এতটা অবহেলা করেছেন (তার নাম এমনকি প্রাণি আচরণবিদ্যার দুটি প্রধান পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখিত হয়নি, যে বই দুটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৭০ সালে)(১ )। সৌভাগ্যক্রমে সাম্প্রতিককালে তার সেই ধারণাগুলো নিয়ে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। হ্যামিলটনের পেপারটি মূলত গাণিতিক, কিন্তু খুব সহজাত ধারণা হিসাবেই এর মূলনীতিগুলো বোঝা সহজ, কোনো জটিল গাণিতিক ধারণা ছাড়াই, যদিও একটু বেশী অতিসরলীকরণের ঝুঁকি থাকে। যে বিষয়টি আমরা পরিমাপ করতে চাই সেটি হচ্ছে সম্ভাবনা, বা “অডস’, যে দুটি একক সদস্য, ধরুন, দুটি বোন, কোন একটি নির্দিষ্ট জিন বহন করছে।

সরলীকরণের খাতিরে আমি ধরে নেবো যে আমরা যে জিন নিয়ে কথা বলছি যারা জিনপুলে দুষ্প্রাপ্য (২)। অধিকাংশ মানুষই তাদের শরীরে ‘আলবাইনো না হবার’ জিন ধারণ করে, তারা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত হোক বা না হোক। আর এই জিনটি এত সাধারণ হবার কারণ হচ্ছে প্রকৃতিতে আলবাইনোদের, যারা আলবাইনো নয়, তাদের চেয়ে বাঁচার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃতভাবে কম থাকে, কারণ, যেমন, সূর্যের আলো তাদের চোখে ধাঁধা লাগিয়ে দেয় এবং তাদের দিকে ছুটে আসা কোনো শিকারী প্রাণীকে দেখতে না পাবার সম্ভাবনা আছে। আমরা অবশ্য জিনপুলে এধরনের সুস্পষ্ট ‘ভালো’ জিন, যেমন, ‘অ্যালবাইনো না হবার’ জিনটির উপস্থিতির হার ব্যাখ্যা করতে চিন্তিত নই। কোনো একটি জিনের সাফল্য বিশেষভাবে তাদের পরার্থবাদী আচরণের ফলশ্রুতি, আমরা এই বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে চাই। সুতরাং, আমরা ধরে নিতে পারি, অন্তত এই বিবর্তনের শুরুর দিকে, জিনগুলো দুর্লভ ছিল। এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে, এমনকি কোনো জিন যা কিনা সামগ্রিক কোনো জনগোষ্ঠীতে দুলর্ভ, কিন্তু সেটি কোনো একটি পরিবারের মধ্যে খুবই সাধারণ হতে পারে। আমি বেশ কিছু জিন বহন করছি, যা মোটামুটিভাবে বাকী জনগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্লভ, আপনিও কিছু জিন বহন করেন যা জনগোষ্ঠীতে দুর্লভ। আর আমদের দুজনের একই দুর্লভ জিন বহন করার সম্ভাবনা আসলেই খুব সামান্য। কিন্তু সেই সম্ভাবনাটা আবার বেশ বেশী যে, আমার বোন কোনো একটি বিশেষ দুর্লভ জিন বহন করে যা আমার মধ্যেও আছে এবং একইভাবে আপনার বোনেরও এমন কোনো দুর্লভ জিন বহন করার সম্ভাবনা আছে যা আপনিও বহন করছেন। আর এটা না হবার সম্ভাবনা এই ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ, এবং এটা ব্যাখ্যা করা খুব সহজ।

ধরুন, আপনি কোনো জিন, ‘জি’ এর একটি মাত্র কপি বহন করছেন। আপনি অবশ্য সেই জিনটি আপনার বাবা কিংবা মায়ের কাছ থেকে পেয়েছেন (আমাদের ব্যাখ্যার সুবিধার্থে আমরা কিছু ব্যতিক্রমী সম্ভাবনা অবজ্ঞা করতে পারি– যেমন ‘জি’ জিনটি হয়তো এমন কোনো নতুন মিউটেশন, যা আপনার বাবা-মা দুজনেরই আছে অথবা আপনার বাবা কিংবা মায়ে কারো হয়তো জিনটির দুটি কপি আছে); ধরুন, আপনার বাবা আপনাকে এই জিনটি দিয়েছেন। তাহলে তার শরীরের প্রতিটি সাধারণ কোষ এক কপি ‘জি’ বহন করে; এখন আপনি হয়তো মনে করতে পারবেন যে, যখন কোনো পুরুষ তার শুক্রাণু তৈরী করে, সে তার অর্ধেকটি জিন সেখানে প্রদান করে। সুতরাং সেখানে প্রায় ৫০ শতাংশ সম্ভাবনা আছে যে শুক্রাণুটি আপনার বোনের জন্মের কারণ, সে ‘জি’ জিনটি পেয়েছে। যদি অন্যদিকে, আপনি ‘জি’ জিনটি পেয়ে থাকেন আপনার মায়ের কাছ থেকে, ঠিক হুবহু সমান্তরাল যুক্তি দিয়ে আমরা দেখাতে পারি, তার অর্ধেক ডিম্বাণু অবশ্যই এ জিনটি ধারণ করে, আবারো সেই সম্ভাবনাটি ৫০ শতাংশ যে, আপনার বোনও ‘জি’ জিনটি বহন করবে। এর অর্থ হচ্ছে যদি আপনার ১০০ টি ভাই-বোন থাকে তাহলে প্রায় ৫০ জন যেকোনো নির্দিষ্ট জিন বহন করবে, যা আপনিও বহন করেন। এর অর্থ এটাও যে আপনার যদি ১০০ টি দুর্লভ জিন থাকে, তাহলে তাদের ৫০ শতাংশ আপনার যে কোনো একজন ভাই বা বোনের শরীরে থাকবে।

একই ধরনের গণনা যেকোনো মাত্রার কিনশীপ বা আত্মীয়তার ক্ষেত্রেই আপনি করতে পারবেন। একটি গুরুত্বপূর্ণ আত্মীয়তা হচ্ছে পিতামাতার সাথে তাদের সন্তানদের। আপনার যদি এক কপি ‘এইচ’ জিন থাকে, তাহলে আপনার কোনো একটি নির্দিষ্ট সন্তানের মধ্যে সেই জিনটি থাকার সম্ভাবনা প্রায় ৫০ শতাংশ, কারণ আপনার অর্ধেক জনন কোষেই ‘এইচ’ জিনটি থাকবে। এবং যেকোনো একটি নির্দিষ্ট সন্তানের জন্ম হবে এদেরই কোনো একটি জনন কোষের মাধ্যমে। আপনার যদি ‘এফ’ জিনের একটি অনুলিপি থাকে, আপনার বাবারও ‘এফ’ জিন থাকার সম্ভাবনা থাকবে ৫০ শতাংশ, কারণ আপনি আপনার অর্ধেক জিন আপনার বাবার কাছ থেকে এবং বাকী অর্ধেক আপনার মায়ের কাছ থেকে পাচ্ছেন। সুবিধার জন্য আমরা সম্পর্ক বা রিলেটেডনেস বা আত্মীয়তার একটি সূচক ব্যবহার করতে পারি, যা দুটি সম্পর্কযুক্ত সদস্যের কোনো একটি জিন ভাগাভাগি করার সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে ১/২, কারণ অর্ধেক পরিমান জিন যা কোনো একটি ভাইয়ের শরীরে থাকবে, সেটি অন্য ভাইয়ের মধ্যেও পাওয়া যাবে। এটি একটি গড়পড়তা সংখ্যা: মাইওটিক কোষ বিভাজনের ক্ষেত্রে ভাগ্যের দান, সম্ভাবনা আছে কোনো একটি নির্দিষ্ট জোড়া ভাই এর চেয়ে কম কিংবা বেশী পরিমান জিন ভাগাভাগি করে। পিতামাতা ও সন্তানদের মধ্যে আত্মীয়তা সবসময়ই ঠিক ১/২।

 খুবই বিরক্তিকর একটি কাজ হবে বরং প্রথম মূলনীতি থেকে বার বার এই হিসাব নিকাশ করা; সুতরাং আমরা বরং একটি খসড়া আর দ্রুত ব্যবহারযোগ্য কোনো নিয়মের প্রস্তাব করা যাক এখানে, যার মাধ্যমে আমরা যে কোনো দুটি সদস্য ‘ক’ এবং ‘খ’ এর মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক পরিমান করতে পারবো। আপনি হয়তো আপনার উইল প্রস্তুত করার সময় বা আপনার নিজের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আপাত সদৃশ্যতা ব্যাখ্যা করার জন্য এটি উপযোগী মনে করতে পারেন। সাধারণ যেকোনো ক্ষেত্রেই এটি কাজ করে। কিন্তু এটি ভেঙ্গে পড়ে যদি যেখানে ‘অজাচার বা নিকটাত্মীয়দের মধ্যে প্রজনন ঘটে এবং কিছু কীটপতঙ্গদের মধ্যে, যা আমরা পরে দেখবো।

প্রথমে ‘ক’ এবং ‘খ’ এর সব সাধারণ পূর্বসূরিদের চিহ্নিত করুন। যেমন, কোনো এক জোড়া ফার্স্ট কাজিনদের সাধারণ পূর্বসূরি হচ্ছে তাদের ভাগ করে নেয়া একই দাদা/দাদী অথবা নানা/নানী। একবার যখন আপনি কোনো সাধারণ পূর্বসূরি পেয়ে যাবেন, এটি অবশ্যই যৌক্তিকভাবে সত্যি যে তার সব পূর্বসূরি, ‘ক’ এবং ‘খ’ এর জন্য সাধারণ পূর্বসূরি। তবে আমরা সব পূর্বসূরিদের বাদ দিয়ে সবচেয়ে সাম্প্রতিকতম পূর্বসূরি নিয়ে আলোচনা করবো। এই অর্থে প্রথম কাজিনদের সবারই শুধু দুজন সাধারণ পূর্বসূরি থাকবে। যদি ‘খ’ সরাসরি ‘ক’ এর বংশধারার কোন উত্তরসূরী হয়, যেমন, তার প্রপৌত্র। তাহলে ‘ক’ নিজেই একজন সাধারণ পূর্বসূরি যাকে আমরা খুঁজছি।

 ‘ক’ ও ‘খ’ এর সাধারণ পূর্বসূরি(দের) শনাক্ত করার পর, ‘জেনারেশন ডিসট্যান্স বা প্রজন্ম দূরত্ব গণনা করুন এভাবে: ‘ক’ থেকে শুরু করে পারিবারিক বৃক্ষে উপরে উঠতে থাকুন যতক্ষণ না আপনি একজন সাধারণ পূর্বসূরি অবধি না পৌঁছান এবং আবার নীচে নেমে আসুন ‘খ’ এর দিকে। পারিবারিক বৃক্ষে গাছ বেয়ে উপরে এবং তারপর নীচে আবার আসা অবধি মোট ধাপ সংখ্যাই হচ্ছে ‘প্রজন্ম দুরত্ব। যেমন, যদি ‘ক’, ‘খ’ এর চাচা হয়, তাহলে প্রজন্ম দূরত্ব দুরত্ব হবে ৩; সাধারণ পূর্বসূরি হচ্ছে ‘ক’ এর বাবা (ধরুন) এবং ‘খ’ এর দাদা। ‘ক’ থেকে শুরু করলে সাধারণ পূর্বসূরি প্রাণী অবধি পৌঁছাতে আপনাকে উপরে উঠতে হবে একটি প্রজন্ম। এরপর নীচে নেমে আসুন ‘খ’ এর দিকে, অন্যদিকে আপনাকে আরো দুটি প্রজন্মে নেমে আসতে হবে, সুতরাং প্রজন্ম দূরত্ব হচ্ছে ১+২=৩।

কোনো একটি নির্দিষ্ট সাধারণ পূর্বসূরির মাধ্যমে ‘ক’ ও ‘খ’ এর মধ্যে প্রজন্ম দূরত্ব পরিমাপ করার পর গননা করুন তাদের রিলেটেডনেস বা আত্মীয়তার পরিমান বা, যার জন্য সেই পূর্বসূরি দায়ী; এটা করতে হলে, ১/২ কে গুণন করুন এই একই পরিমাপ দিয়ে প্রজন্ম দূরত্বের প্রতিটি ধাপের জন্য একবার করে: যদি প্রজন্ম দূরত্ব ৩ হয়, এর অর্থ ১/২X১/২X১/২ বা (১/২)°; কোনো একটি নির্দিষ্ট পূর্বসূরির মাধ্যমে যদি প্রজন্ম দূরতু যদি এ সংখ্যক ধাপের সমান হয় তাহলে সেই পূর্বসূরির কারণে আত্মীয়তা বা রিলেটেডনেস হবে (১/২)।

 কিন্তু এটি শুধুমাত্র ‘ক’ ও ‘খ’ এর মধ্যে আত্মীয়তার একটি অংশ। যদি তাদের একাধিক সাধারণ পূর্বসূরি থাকে প্রতিটি পূর্বসূরির জন্য সমতুল্য পরিমান সংখ্যা যোগ করতে হবে। সাধারণত এ-কারণে যা ঘটে তা হলো, এক জোড়া সদস্যরই প্রজন্ম দূরত্ব তাদের সব পূর্বসূরিদের জন্য একই পরিমানের হয়। সেকারণে তাদের যেকোনো একটি পূর্বসূরির সাথে ‘ক’ ও ‘খ’ এর মধ্যে আত্মীয়তা পরিমাপ করতে আপনাকে শুধু করতে হবে পুর্বসুরীদের সংখ্যা অনুযায়ী সেটি গুণন করা। প্রথম কাজিনরা, যেমন, তাদের দুটি সাধারণ পূর্বসূরি আছে, এবং তাদের দুজনের মাধ্যমে পরিমিত প্রজন্ম দূরত্ব প্রত্যেকের জন্য হচ্ছে ৪, সেকারণে তাদের আত্মীয়তা হচ্ছে, ২X(১/২) =১/৮। যদি ‘ক’, ‘খ’ এর প্রপৌত্র হয়, প্রজন্ম দূরত্ব হচ্ছে ৩ এবং সাধারণ পূর্বসূরির সংখ্যা ১ (‘খ’ নিজে), সুতরাং আত্মীয়তা হচ্ছে ১X (১/২) =১/৮। জিনগত হিসাবে বললে, আপনার প্রথম কাজিন হচ্ছে আপনার প্রপৌত্রের সমতুল্য। একইভাবে, আপনি ঠিক যতটুকু আপনার চাচার মত’ (আত্মীয়তা = ২ X (১/২) =১/৪) ততটুকু আপনার দাদার মত (আত্মীয়তা = ১X (১/২)২ =১/৪)।

দূরবর্তী আত্মীয়তা যেমন, তৃতীয় কাজিনদের (২ X (১/২) =১/১২৮) ক্ষেত্রে আমরা প্রায় বেসলাইন সম্ভাবনার কাছাকাছি পৌঁছেছি, যে একটি নির্দিষ্ট জিন যা ‘ক’ বহন করে, সেটি ভাগ করে নেয় যে কোনো ব্যাক্তি যাকেই জনগোষ্ঠী থেকে আপনি নির্বাচন করুন না কেন। তৃতীয় কাজিন, কোনো একটি পরার্থবাদী জিন বহন করার সম্ভাবনাটি জনগোষ্ঠীর যে কোনো কারোর প্রায় সমতুল্য হওয়া থেকে খুব একটা দূরে নয়। কোনো দ্বিতীয় কাজিন (আত্মীয়তা = ১/৩২) হচ্ছে সামান্য খানিকটা বিশেষায়িত। একটি প্রথম কাজিন তার চেয়ে খানিকটা বেশী (১/৮); পুরো ভাই বা বোন আর পিতামাতা আর সন্তান সেকারণেই এত বেশী বিশেষ অবস্থানে অবস্থান করে (১/২) এবং হুবহু যমজরা (যাদের আত্মীয়তা = ১) তাদের নিজেদের মতই বিশেষ। চাচা, ফুফা, ভাইপো, ভাইঝি, দাদা, দাদী, সৎ ভাই আর সৎ বোনরা এই আত্মীয়তার সম্পর্কের মাঝামাঝি অবস্থান করে, ১/৪ আত্মীয়তা সহ।

এখন আমরা কিন-আলটুইজম বা আত্মীয়-পরার্থবাদীতা সম্বন্ধে আরো সুনির্দিষ্টভাবে কিছু কথা বলা মত কোনো অবস্থানে পৌঁছেছি। যে জিনটি নিজেকে উৎসর্গ করে (আত্মহত্যার মাধ্যমে) আরো পাঁচ জন কাজিনকে বাঁচাতে প্ররোচনা দেয়, সেটি জনগোষ্ঠীতে সংখ্যায় বাড়বে না কিন্তু একটি জিন যা পাঁচটি ভাই ও দশজন প্রথম কাজিনকে বাঁচাবে সেটি সংখ্যায় বাড়বে। কোনো একটি আত্মঘাতী পরার্থবাদী জিনকে সফল হতে হলে এটিকে একাধিক ভাইবোন (বা সন্তান বা পিতামাতা) বা চারটির বেশী সৎ ভাইবোন (বা চাচা, ফুফু, ভাইপ, ভাইঝি, দাদা,দাদী) বা আট জনের বেশী প্রথম কাজিনকে বাঁচাতে হবে ইত্যাদি। এধরনের কোনো জিন, যথেষ্ট পরিমান একক সদস্যের শরীরে বাস করে, যাদের জীবন রক্ষা করে পরার্থবাদীরা, নিজেদের মৃত্যুর ক্ষতিপুরণ হিসাবে।

 কোনো একক সদস্য যদি নিশ্চিৎ হতে পারে যে, এই বিশেষ সদস্যটি তার হুবহু যমজ, তার যমজের কল্যাণের ব্যাপারে সে ততটাই উদ্বিগ্ন হবে ঠিক যতটা সে নিজের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়। যমজদের জন্য কোনো পরার্থবাদীতার জিন আবশ্যিকভাবে উভয় যমজ সদস্যই বহন করে, সেকারণে যদি একজন বীরোচিত ভাবে মারা যায় অন্যজনকে বাঁচাতে গিয়ে, তার জিনগুলো বেঁচে থাকে। নাইন-ব্যান্ড আর্মাডিলোরা একসাথে জিনগতভাবে হুবহু একই রকম চারটি আর্মাডিলো শাবকদের জন্ম দেয়। আমি যতটুকু জানি, কোনো ধরনের বীরোচিত আত্মত্যাগের ঘটনা তরুণ আর্মাডিলোদের মধ্যে লক্ষ করা যায়নি। কিন্তু যে বিষয়টি উল্লেখ করা হলো, সেটি হচ্ছে কোনো এক ধরনের শক্তিশালী পরার্থবাদীতা অবশ্যই আমরা আশা করতে পারি, এবং দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়ে সেটি নিয়ে গবেষণা করা কারো জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হতে পারে (৩)।

আমরা এখন দেখতে পাই যে পিতামাতার যত্ন একটি বিশেষ ধরনের কিন-আলট্রইজিম বা আত্মীয়-পরার্থবাদীতা। জিনগতভাবে বললে কোনো একটি পূর্ণবয়স্ক কোনো সদস্যের উচিৎ হবে তার এতিম শিশু ভাইয়ের প্রতি ঠিক ততটা সুরক্ষা আর নজর দেয়া উচিৎ, যতটা সে তার নিজের সন্তানের জন্য করে। দুটি শিশুর সাথে তার রিলেটেডনেস বা আত্মীয়তা একেবারে একই রকম, ১/২। জিন নির্বাচনের ভাষায়, বড় বোন সূলভ পরার্থবাদীতার কোনো জিনের পিতামাতার পরার্থবাদীতার জিনের মতই একই সম্ভাবনা আছে। জনগোষ্ঠীতে বিস্তার লাভ করার জন্য। প্রায়োগিক ক্ষেত্রে, এটি নানা কারণে অতি সরলীকরণ, যে কারণগুলো আমরা পরে আলোচনা করবো। এবং ভাতৃসুলভ বা ভগ্নীসুলভ প্রতিপালন করার বিষয়টি প্রকৃতিতে পিতামাতার প্রতিপালনের মত কখনোই খুব সাধারণ ব্যপার না। কিন্তু আমি যে বিষয়টি বলতে চাইছি এখানে, সেটি হচ্ছে ‘জিনগতভাবে যদি বলা হয়, পিতামাতা/সন্তানদের সম্পর্কের মধ্যে বিশেষত্বের এমন কিছু নেই, যদি আপনি ভাই/বোন সম্পর্কের সাথে সেটি তুলনা করেন। বাস্তব সত্য হচ্ছে পিতামাতারা আসলেই তাদের সন্তানদের মধ্যে জিন হস্তান্তর করে, কিন্তু বোনরা যে পারস্পরিকভাবে তাদের জিন আদান প্রদান করে না, সেটি এখানে জরুরী বিষয় না, কারণ বোনরা উভয়েই তাদের একই পিতামাতার কাছ থেকে জিনগুলোর হুবহু অনুলিপি পায়।

 কিছু মানুষ ‘কিন সিলেকশন’ শব্দটি ব্যবহার করেন ‘গ্রুপ সিলেকশন থেকে এই ধরনের প্রাকৃতিক নির্বাচনকে আলাদাভাবে শনাক্ত করার জন্য (বিভিন্ন গ্রুপের বৈষম্যমূলক টিকে থাকা বা একক প্রজাতি সদস্য বা ইন্ডিভিজুয়াল সিলেকশন( প্রজাতির একক সদস্যদের বৈষম্যমূলক বেঁচে থাকা) থেকে। কিন সিলেকশন’ পরিবারের মধ্যে ঘটা পরার্থবাদীতা ব্যাখ্যা করে; আত্মীয়তা যত নিকটের হবে, ততই শক্তিশালী হবে নির্বাচন। এই শব্দটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে হয়তো শব্দটিকে পরিত্যাগ করতে হবে এর বর্তমান অপব্যবহারের কারণে, যা অনাগত বহু বছর ধরে জীববিজ্ঞানীদের সংশয়াচ্ছন্ন করে রাখবে। ই, ও, উইলসন, তার অন্যথায় প্রশংসাযোগ্য Sociobiology: The New Synthesis বইটিতে ‘কিন সিলেকশন’ সংজ্ঞায়িত করেছিলেন একটি বিশেষ ধরনের গ্রুপ সিলেকশন’ হিসাবে। সেখানে তিনি একটি ডায়াগ্রাম ব্যবহার করেছেন, যা স্পষ্টভাবেই দেখাচ্ছে তিনি এটিকে একক সদস্য বা ইনডিভিজুয়াল সিলেকশন এবং গ্রুপ সিলেকশনের ধারণার অন্তর্বর্তীকালীন প্রচলিত একটি রুপ হিসাবে ভাবছেন– যে ধারণাটি আমি ব্যবহার করেছি অধ্যায় ১ এ। এখন, এমনকি যদি উইলসনের নিজের সংজ্ঞা ব্যবহার করি গ্রুপ সিলেকশনের অর্থ, বৈষম্যমূলকভাবে একক সদস্যদের নিয়ে তৈরী কোনো একটি গ্রুপের’ টিকে থাকা। নিশ্চিৎভাবে, এক অর্থে পরিবার একটি বিশেষ ধরনের গ্রুপ। কিন্তু হ্যামিলটনের যুক্তির মূল বিষয়টি হচ্ছে পরিবার এবং পরিবার নয়, এই দুটির মধ্যে পার্থক্য ধরাবাধা নিয়মমাফিক নয়, বরং বিষয়টি একটি গাণিতিক সম্ভাবনার ব্যপার। হ্যামিলটনের তত্ত্বের কোনো অংশেই এমন কিছু ছিল না যে প্রাণীরা ‘পরিবারের সদস্যদের প্রতি পরার্থবাদী আচরণ করবে এবং বাকী সবার সাথে স্বার্থপর আচরণ করবে। পরিবার আর পরিবার নয় এমন কোনো কিছুর মধ্যে সুনির্দিষ্ট সীমারেখা টানা সম্ভব নয়। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতেই হবে এমন কোনো কিছুর দরকারও নেই, ধরুন, দ্বিতীয় কাজিনকে আমরা পরিবার গ্রুপের ভিতরে গণ্য করবো। নাকি এর বাইরে: আমরা শুধু আশা করবো যে, দ্বিতীয় কাজিনদের ১/১৬ ভাগ সম্ভাবনা থাকে, নিজের সন্তান বা ভাইবোনদের মত পরার্থবাদী আচরণ পাবার ক্ষেত্রে। কিন সিলেকশন অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই গ্রুপ সিলেকশনের বিশেষ কেস নয় (৪)। এটি জিন নির্বাচনের বিশেষ পরিণতি।

এমনকি আরো বেশী গুরুত্বপূর্ণ অসম্পূর্ণতা আছে উইলসনের কিন সিলেকশনের সংজ্ঞায়। তিনি খুব পরিকল্পিতভাবে সন্তানদের বাদ দিয়েছেন, তারা কিন’ হিসাবে সেখানে বিবেচিত হচ্ছে না (৫)! তবে অবশ্যই তিনি খুব ভালো করে জানেন যে, সন্তানরা তাদের পিতামাতার কিন বা আত্মীয়। নিজেদের সন্তানদের প্রতি পিতামাতাদের পরার্থবাদী আচরণটি ব্যাখ্যা করার জন্য কিন্তু তিনি তার কিন সিলেকশন তত্ত্বেও বিষয়টি উল্লেখ করতে চাননি, তিনি অবশ্যই পারেন কোনো একটি শব্দকে নিজের পছন্দ মত সংজ্ঞায়িত করতে, কিন্তু খুবই অস্পষ্ট আর সংশয় সৃষ্টিকারী সংজ্ঞা এটি এবং আমি আশা করি যে উইলসন তার যথার্থভাবে প্রভাবশালী বইটির ভবিষ্যৎ সংস্করণে এটি সংশোধন করে নেবেন। জিনগত ভাষায় বললে, পিতামাতার যত্ন আর ভাই/বোনের পরার্থবাদীতা বিবর্তিত হয় একই কারণে: উভয় ক্ষেত্রেই ভালো একটি সম্ভাবনা আছে যে, পরোপকারী জিন পরোপকারের সুবিধাভোগীর শরীরেও থাকে।

আমি এই নিন্দাসূচক ভর্ৎসনার জন্য সাধারণ পাঠকদের কাছে খানিকটা প্রশ্রয় প্রার্থনা করছি এবং দ্রুত আমি মূল আলোচনায় প্রত্যবর্তন করছি। এ-পর্যন্ত আমি অতি সরলীকরণ করেছি কিছুটা এবং এখন আরো কিছুটা বৈশিষ্ট্য সংযুক্ত করার সময় এসেছে। আমি খুব মৌলিক ভাষায় আত্মঘাতী জিনদের কথা আলোচনা করেছি সঠিকভাবে জ্ঞাত আত্মীয়তার সম্পর্কযুক্ত নির্দিষ্ট সংখ্যক নিকটাত্মীয়কে বাঁচানোর জন্য। অবশ্যই, বাস্তব জীবনে, প্রাণীদের নিয়ে এমন কোনো আশা করা যেতে পারেনা যে ঠিক কত জন আত্মীয়ের জীবন তারা বাঁচাচ্ছে, সেই সংখ্যাটি তারা সঠিকভাবে গণনা করতে পারে। এবং একইভাবে তারা মনে মনে হ্যামিলটনের হিসাব নিকাশও করে না, এমনকি যখন কারা তাদের ভাই আর কারা তাদের কাজিন সঠিকভাবে জানার একটি উপায়ও তাদের থাকে। বাস্তব জীবনে, কিছু সুনির্দিষ্ট আত্মঘাতী এবং চূড়ান্তভাবে জীবন ‘বাঁচানো’কে অবশ্যই মৃত্যুর ‘পরিসংখ্যানগত ঝুঁকি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করতে হবে, কারো নিজের এবং অন্য সদস্যদের। এমনকি একটি তৃতীয় কাজিন জীবন বাঁচানোর জন্য যোগ্য হতে পারে, যদি সেটি করার ক্ষেত্রে আপনার ঝুঁকি আসলেই খুব নগন্য থাকে। তারপরও আবার, আপনি কিংবা যে আত্মীয়ের জীবন বাঁচানোর কথা আপনি ভাবছেন তারা একদিন না একদিন অবশ্যম্ভাবীভাবে মারা যাবেই। প্রতিটি সদস্যের একটি প্রত্যাশিত আয়ু’ আছে, যা কোনো পরিসংখ্যানবিদ বা অ্যাকচুয়ারী একটি সুনির্দিষ্টভাবে সম্ভাবনা সংক্রান্ত ভ্রান্তিসহ গণনা করতে পারেন। কোন একটি আত্মীয়ের জীবন বাঁচাতে, যে কিনা খুব তাড়াতাড়ি মারা যাবে তার বার্ধক্যের কারণে, ভবিষ্যতের জিনপুলে তার প্রভাব থাকবে খুব কম, কোনো সমরুপ নিকটাত্মীয়ের তুলনায় যার কিনা বাকী পুরো জীবনটাই পড়ে আছে।

আত্মীয়তা সংক্রান্ত আমাদের পরিচ্ছন্ন প্রতিসম গণনাটিকে পরিবর্তিত করতেই হবে আরো জটিল পরিসংখ্যানগত বাছবিচারের মাধ্যমে। পিতামহ/পিতামহী (এবং মাতামহ/মাতামহী) এবং তাদের নাতি নাতনীদের, জিনগতভাবে যদি বলা হয়, পরস্পরের প্রতি পরার্থবাদী আচরণ করার সমপরিমান কারণ অছে, কারণ যেহেতু তারা একে অপরের ১/৪ ভাগ জিন ভাগাভাগি করে। কিন্তু যদি নাতিনাতনীদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশী হয়, পিতামহ/পিতামহীদের (এবং মাতামহ/মাতামহীদের) থেকে নাতিনাতনী বরাবর পার্থবাদীতার জিনগুলো বেশী নির্বাচনী সুবিধা পাবে নাতীনাতনী থেকে পিতামহ/পিতামহীদের (এবং মাতামহ/মাতামহীদের) বরাবর পরার্থবাদীতার জিনগুলোর চেয়ে। কোনো একটি অল্পবয়সী দুর। সম্পর্কের আত্মীয়কে সাহায্য করার মোট উপকারিতা, নিকটাত্মীয় বদ্ধ আত্মীয়কে সহায়তা করার চেয়ে বেশী হবার সুস্পষ্ট সম্ভাবনা আছে। (ঘটনাচক্রে, পিতামহ/পিতামহীদের (এবং মাতামহ/মাতামহীদের) অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল তাদের নাতী/নাতনীদের তুলনায় সংক্ষিপ্ত হতে হবে এমন কোনো আবশ্যিকতা নেই। যে সব প্রজাতির মধ্যে শিশুদের মৃত্যুর হার অনেক বেশী, সেখানে এর বিপরীতটি হয়তো সত্যি)।

 পরিসংখ্যানবিদ বা সম্ভাবনা পরিমাপকারীর সমতুল্য উদাহরণটি আরো সম্প্রসারিত করে, প্রতিটি একক সদস্যকে জীবন বীমার আন্ডাররাইটার (বীমাচুক্তির দায়গ্রহণকারী) হিসাবে ভাবা যেতে পারে। কোনো একটি একক সদস্যকে আশা করা যেতে পারে যে, সে বিনিয়োগ করবে বা তার নিজের জীবনের কিছু সম্পদের অংশ ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করবে অন্য কোনো এক সদস্যের জীবনে। আর কাজটি করার জন্য সে এই অন্য সদস্যটির সাথে তার আত্মীয়তার প্রকৃতির উপর নজরে রাখে, এছাড়াও তাকে ভাবতে হয় এই অন্য মানুষটির জীবনে বিনিয়োগ কি একটি ‘ভালো ঝুঁকি’ হবে কিনা, যখন তার প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল অনুযায়ী, যদি সেটি বীমাকারীর আয়ুস্কালের তুলনা করা হয়। খুব কঠোরভাবে ভাবলে আমাদের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালের’ বদলে ‘প্রত্যাশিত প্রজনন সম্ভাবনা’ বলা উচিৎ, অথবা আরো বেশী সুনির্দিষ্টভাবে ‘ভবিষ্যতে নিজের জিনের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালকে সুবিধা দেবার সাধারণ ক্ষমতা। এরপর পরার্থবাদী আচরণের বিবর্তন হবার জন্য, পার্থবাদীর জন্য সর্বমোট ঝুঁকি অবশ্যই কম হতে হবে যে উপকারিতা পাবে তার সর্বমোট উপকারিতা গুণন তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কের চেয়ে। ঝুঁকি এবং লাভকে পরিমাপ করতে হবে জটিল পরিসংখ্যানগত উপায়ে– যেভাবে আমি ব্যাখ্যা করলাম।

কিন্তু কোনো বেচারা সারভাইভাল মেশিনগুলো করবে, বিশেষ করে খুব দ্রুততার সাথে, এমন প্রত্যাশার চেয়ে স্পষ্টতই এটি অত্যন্ত জটিল হিসাব নিকাশ (৬)! এমনকি বিখ্যাত গাণিতিক জীববিজ্ঞানী জে. বি. এস, হলডেনও (১৯৫৫ সালে একটি পেপারে হ্যামিলটনের ধারণাটির আগেই ধারণা করেছিলেন, নিকটাত্মীয়কে পানিতে ডুবে মারা যাওয়া থেকে বাঁচাবে এমন একটি জিনের বিস্তার সম্বন্ধে কিছু প্রস্তাব করে) মন্তব্য করেছিলেন, ‘অন্তত দুইবার আমি খুব সম্ভবত পানিতে ডুবতে থাকা কাউকে বাঁচিয়ে ছিলাম (নিজের জন্য খুব সামান্যতম ঝুঁকি নিয়ে) এবং এইসব হিসাব নিকাশ করার আমার। কোনো সময় ছিলনা। সৌভাগ্যক্রমে অবশ্য হলডেন খুব ভালো করে জানতেন, আদৌ কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই এমন কিছু ধারণা করা যে, সারভাইভাল মেশিনগুলো এই সব যোগ বিয়োগগুলো সচেতনভাবে তাদের মাথার মধ্যে করে থাকে। ঠিক যেমন করে আমরা হয়তো একটি স্লাইড রুল ব্যবহার করতে পারি আদৌও অনুধাবন না করে যে আমরা, আসলেই ‘লগারিদম ব্যবহার করছি। সুতরাং একটি প্রাণীও হয়তো আগে থেকে প্রোগ্রাম করা এমন কোনো উপায়ে, এটি আচরণ করে এমনভাবে যেন জটিল কোনো হিসাব নিকাশ করছে।

যেমনটা আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, এটি কিন্তু এত বেশী জটিল না। যখন কোনো মানুষ একটি বল উপরের দিকে ছুঁড়ে মারে শূন্যে এবং আবার সেটিকে ধরে, সে এমনভাবে আচরণ করে যেন সে এক গুচ্ছ ডিফারেনশিয়াল সমীকরণ সমাধান করছে বলটির গতিপথ নির্ণয় করার জন্য; সে হয়তো আদৌ জানেই না এই ডিফারেনশিয়াল সমীকরণটি কি, বা তার কোনো মাথাব্যাথা নেই, কিন্তু সেই বিষয়টি উপরে দিকে ছুঁড়ে আবার বলটি ধরার ক্ষেত্রে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছেনা। কোনো একটি অবচেতন পর্যায়ে, গাণিতিক সমীকরণের সমতূল্য কিছু যা কার্যকরীভাবে ঘটছে। একইভাবে যখন মানুষ কঠিন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, সিদ্ধান্ত নেবার পক্ষে বিপক্ষে সব কিছু এবং এই সিদ্ধান্তের সকল সম্ভাব্য পরিণতি সে বিবেচনা করে, যা কিনা তার পক্ষে কল্পনা করা সম্ভব। এখানে কিন্তু সে যে কাজটি করছে তা কার্যকরীভাবে কোনো একটি বড় গাণিতিক হিসাব নিকাশ করার সমতুল্য, যা কিনা কোনো কম্পিউটার হয়তো করতে পারে।

যদি আমাদের কোনো কম্পিউটারকে প্রোগ্রাম করতে হয় যা একটি মডেল সারভাইভাল মেশিনের কাল্পনিক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে যেখানে এটি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে পরার্থবাদীতার সাথে সে আচরণ করবে নাকি করবে না। তাহলে আমাদের সম্ভবত উচিৎ হবে মোটামুটি এভাবে আগানো– বিকল্প যে কাজগুলো প্রাণীরা হয়তো করতে পারে আমাদের উচিৎ হবে তার একটি তালিকা করা। তারপর এইসব প্রতিটি বিকল্প আচরণের প্রকৃতির জন্যে আমরা একটি ‘ওয়েইটেড সাম’ ক্যালকুলেশন প্রোগ্রাম করতে পারি। সবগুলো উপযোগিতার থাকবে একটি ধণাত্মক প্লাস চিহ্ন আর সব ঝুঁকির জন্য থাকবে ঋণাত্মক বা নেগেটিভ চিহ্ন। প্রতিটি ঝুঁকি আর সুফল উভয় ক্ষেত্রকেই সমানভাবে ‘ওজন’ করা হবে যখন তাদের গুণন করা হবে আত্মীয়তার সম্পর্কের জন্য প্রযোজ্য সূচক দিয়ে, তাদের সব একসাথে যোগ করার পর। সরলতার কারণে আমরা শুরু করতে পারি, কিছু অন্য নিয়ামক ওজনগুলো বাদ দিয়ে, যেমন, বয়স আর স্বাস্থ্য। যেহেতু কোনো একক সদস্যের তার নিজের প্রতি আত্মীয়তার পরিমাপ হচ্ছে ১ (যেমন, সে নিজেই তার ১০০ শতাংশ জিন বহন করে– অবশ্যই); তার নিজের প্রতি সুবিধা কিংবা ঝুঁকির কোনো অবমূল্যায়ন করা হবে না মোটেও বরং পরিমাপে তাদের পুরোপুরি ‘ওজন’ দেয়া হবে। যেকোনো একটি বিকল্প আচরণের প্যাটার্নের মোট গণিতটি দেখতে হবে অনেকটা এরকম: কোনো একটি আচরণের প্রকৃতির মোট সুবিধা = নিজের সূবিধা– নিজের ঝুঁকি + ১/২ ভাইয়ের সুবিধা– ১/২ ভাইয়ের ঝুঁকি + ১/২ অন্য ভাইয়ের সুবিধা– ১/২ অন্য ভাইয়ের ঝুঁকি + ১/৮ প্রথম কাজিনের সুবিধা– ১/৮ প্রথম কাজিনের ঝুঁকি + ১/২সন্তানের সুবিধা–১/২ সন্তানের ঝুঁকি + ইত্যাদি।

এই গণিতের যোগফল হবে এমন কোনো একটি সংখ্যা যাকে বলবো সেই আচরণের প্যাটার্নের জন্য ‘নেট বেনিফিট স্কোর’, সর্বমোট উপযোগ স্কোর। পরবর্তীতে মডেল প্রাণীটি সমপরিমান গণিত করে প্রতিটি বিকল্প আচরণের প্যাটার্নের জন্য তার হাতে যা আছে। অবশেষে সে বেছে নেয় একটি আচরণের প্যাটার্ন সম্পন্ন করার জন্য, যেখানে সে সবচেয়ে বেশী সুবিধা পায়। এমনকি যদি সব স্কোরই ঋণাত্মক আসে, তারপরও সে বেছে নেবে যেখানে মান সবচেয়ে বেশী, সব মন্দের ভালটিকে। মনে রাখবেন যেকোনো ধনাত্মক কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট আছে সময় আর শক্তির ব্যবহার, যে দুটোই অন্য কোনো কাজে ব্যয় করা যেতে পারতো, যদি কোনো কিছু না করাটা দেখা যায় এমন কোনো ‘আচরণ’ হিসাবে বের হয়ে আসে, যার মোট সুবিধার স্কোর সবচেয়ে বেশী, তাহলে সেই মডেল প্রাণীটি কিছু করবে না।

এখানে একটি অতিমাত্রায়-সরলীকৃত উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, তবে এবার সেটি প্রকাশ করছি কোনো কম্পিউটার সিমুলেশন না বরং একটি ব্যক্তিক আত্মকথন হিসাবে। আমি একটি প্রাণী, যে কিনা আটটি মাশরুমের একটি গুচ্ছ খুঁজে পেয়েছে, পুষ্টিগুণ বিবেচনা করে, এবং সেগুলো বিষাক্ত হতে পারে সেই ঝুঁকিটা সেখান থেকে কিছুটা বিয়োগ করে, আমি হিসাব করে দেখলাম এগুলোর প্রত্যেকটার মূল্য +৬ ইউনিট ( এই ইউনিটগুলো মনগড়া একটি পে-অফ বা পুরষ্কার, যা এর আগের অধ্যায়ে আলোচনা করা হয়েছিল।); মাশরুমগুলো আকারে এত বড় যে আমি মাত্র তিনটা খেতে পারবো। আমার কি উচিৎ হবে এই আবিষ্কারটি কাউকে জানানো, খাদ্যের সন্ধান পাওয়া গেছে এমন একটি ডাক’ দিয়ে? আমার ডাক শুনতে পারে এমন দূরত্বে কে কে আছে? ভাই ‘খ’ (তার সাথে আমার সম্পর্ক =

১/২), কাজিন ‘গ’ ( যার সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক = ১/৮) এবং ‘ঘ’ (কোনো নির্দিষ্ট আত্মীয় নয়, তার সাথে আমার আত্মীয়তার সম্পর্ক এত কম যে সেটাকে শূন্য হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে প্রায়োগিক সবক্ষেত্রে)। আমার জন্য সর্বমোট ‘বেনিফিট’ বা উপযোগ স্কোর হচ্ছে, আমার এই খুঁজে পাওয়াটি নিয়ে আমি যদি চুপ থাকি, তাহলে মাশরুম প্রতি +৬ করে তিনটির জন্য, যা আমি খেতে পারবো, সেটি তাহলে হচ্ছে সর্বমোট +১৮; আমি যদি খাদ্যের সন্ধান দিয়ে ডাক দেই,আমার নেট বেনিফিট স্কোর বের করার জন্য সেখানে একটু হিসাব নিকাশ করতে হবে। আটটি মাশরুম আমাদের চার জনের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হবে। আমার ভাগের দুটো থেকে, প্রতিটি +৬ ইউনিট মোট লাভ হবে +১২ ইউনিট। কিন্তু আমিও কিছু পে-অফ পাবো যখন আমার ভাই আর কাজিন তাদের ভাগে দুটি করে মাশরুম খাবে, কারণ আমাদের ভাগ করে নেয়া জিন। আসল স্কোর তাহলে আসবে (১X১২)+ (১/২X১২)+(১/৮ X ১২)+(০ X ১২) = +১৯ ১/২। এই ক্ষেত্রে কোনো স্বার্থপর আচরণের মোট লাভ হচ্ছে +১৮: খুব কাছাকাছি দুটি স্কোর, কিন্তু রায়টি স্পষ্ট; আমি অবশ্যই খাদ্যর সন্ধান দিয়ে ডাক দেবো; আমার পরার্থবাদী আচরণ এই ক্ষেত্রে আমার স্বার্থপর জিনকেই মূল্য পরিশোধ করবে।

আমি খুব সরলীকৃত ধারণা করেছি যে প্রতিটি একক প্রাণী হিসাব নিকাশ করে বের করে কোনটি তার জিনের জন্য সবচেয়ে ভালো। বাস্তবে যা ঘটে সেটি হচ্ছে জিনপুল পূর্ণ হয়ে যায় সেইসব জিন দিয়ে যা শরীরকে প্রভাবিত করে এমনভাবে যে তারা এমনভাবে আচরণ করে যেন আসলেই তারা এভাবে হিসাব নিকাশ করছে। যাই হোক না কেন এই হিসাব নিকাশ শুধুমাত্র প্রাথমিক স্তরের একটি পরিস্থিতি, আদর্শ পরিস্থিতি যা হওয়ার কথা তার একটি নিকটবর্তী অবস্থান মাত্র। এটি বহু কিছু অবজ্ঞা করেছে, যার মধ্যে আছে সংশ্লিষ্ট সদস্যদের বয়স। যদি আমি কেবলই যথেষ্ট পরিমান খাদ্য গ্রহন করে থাকি কিছুক্ষণ আগেই, একটির বেশী মাশরুম আমি খেতে পারবো না, সেখানে খাদ্য সন্ধানের খবর দিয়ে ডাক দিয়ে আনার নেট বেনিফিট স্কোর হবে আরো বেশী, আমি যদি ক্ষুধার্ত হই সেই পরিস্থিতি থেকে। কোনো শেষ নেই এই ধারাবাহিকভাবে আরো সূক্ষ্মতর হিসাব নিকাশে, যা অর্জন করা যেতে পারে সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সেরা পরিণতি। কিন্তু বাস্তব জীবন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পরিস্থিতি নয়। আমরা আশা করতে পারি না যে, সত্যিকারের প্রাণীরা যখন কোনো অনুকূল সিদ্ধান্ত নেয় তারা একেবারে প্রতিটি খুঁটিনাটি বিষয় গভীরভাবে খতিয়ে দেখে। আমাদের আবিষ্কার করতে হবে, পর্যবেক্ষণ আর পরীক্ষামূলক গবেষণার মাধ্যমে, সত্যিকারের প্রাণীরা আদর্শ লাভ-ক্ষতি বিশ্লেষণের আসলেই কতটা কাছাকাছি আসতে পারে।

শুধু আমাদের আশ্বস্ত করার জন্য যে, আমরা আসলেই এই আত্মগত উদাহরণটি পড়ে বেশী আপ্লুত না হয়ে পড়ি, আমাদের আবার জিনের ভাষায় ফিরতে হবে কিছুক্ষণের জন্য। জীবন্ত শরীরগুলো আসলে যন্ত্র, যা প্রোগ্রাম করা সেই সব জিন দিয়ে, যেগুলো টিকে গেছে। জিন যেগুলো টিকে গেছে তারা সেই কাজটি করেছে এমন পরিস্থিতিগুলোয় যা ‘গড়পড়তায়’ অতীতে সেই প্রজাতিগুলোর পরিবেশে জন্যে বৈশিষ্ট্যসূচক। সেকারণে মূল্য পরিশোধ এবং এর লাভ সংক্রান্ত কোনো আনুমানিক ধারণা নির্ভর করে এর অতীত ‘অভিজ্ঞতার উপর, ঠিক যেমন মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহন করার ক্ষেত্রেও যা ঘটে থাকে। তবে এই ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতার একটি বিশেষ অর্থ আছে জিন অভিজ্ঞতায় বা আরো সুনির্দিষ্টভাবে, অতীতের জিনগুলোর টিকে থাকার পরিস্থিতিগুলোর উপর। (যেহেতু জিনরা তাদের সারভাইভাল মেশিনদের কোনো কিছু শেখার দক্ষতা প্রদান করে, কিছু লাভ-ক্ষতির পরিমাপ বলা যেতে পারে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার উপরে নির্ভর করে।), সুতরাং যতক্ষণ পরিস্থিতির খুব বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না হচ্ছে, এই অনুমান খুব ভালো অনুমান হবে এবং সারভাইভাল মেশিনদের ‘গড়ে’ সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার প্রবণতা থাকবে। যদি পরিস্থিতির কোনো বড় মাপের পরিবর্তন হয়, তাহলে সারভাইভাল মেশিনগুলোর ভুল সিদ্ধান্ত নেবার প্রবণতা থাকবে এবং তাদের জিনকে শাস্তি পেতে হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ তথ্যের উপর নেয়া মানুষের সিদ্ধান্তগুলোর ভুল হবার ঠিক যে-ধরনের প্রবণতা থাকে।

 আত্মীয়তার সম্পর্কের পরিমাপগুলোয় নানা ভুল ও অনিশ্চয়তার শিকার হতে পারে। আমাদের অতিসরলীকৃত গণনা যা আমরা এতক্ষণ আলোচনা করেছি, আমরা এমনভাবে কথা বলেছি যেন সারভাইভাল মেশিনরা প্রত্যেকেই জানে কারা তাদের আত্মীয় এবং তাদের সম্পর্কগুলো কতটা নিকট। বাস্তব জীবনে এধরনের নিশ্চিৎ কোনো জ্ঞান শুধুমাত্র মাঝে মাঝে জানা সম্ভব হতে পারে। কিন্তু সচরাচর ঘটে, সেটি হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্কটি শুধুমাত্র পরিমাপ করা সম্ভব গড় কোনো একটি সংখ্যা হিসাবে। যেমন, ধরুন যে ‘ক’ এবং ‘খ’ সমান সম্ভাবনা আছে যে তারা, সৎভাই অথবা আসল ভাই হতে পারে। তাদের আত্মীয়তা হয় ১/৪ বা ১/২ কিন্তু যেহেতু আমাদের জানা নেই, তারা আপন, নাকি সৎ ভাই, কার্যত এখানে ব্যবহার করার মত সংখ্যাটি হচ্ছে গড় ৩/৮; যদি এটা নিশ্চিৎ করা সম্ভব হয় তাদের মা একজনই, কিন্তু তাদের বাবা এক হবার সম্ভাবনা শুধুমাত্র ১০ জনে ১ জন। তাহলে ৯০ শতাংশ সময় আমরা নিশ্চিৎ যে তারা আসলে সৎ ভাই এবং মাত্র ১০ শতাংশ সময়ে নিশ্চিৎ যে তারা আপন ভাই, তাহলে কার্যত তাদের আত্মীয়তা হচ্ছে (১/১০X১/২) + (৯/১০X১/৪) = ০.২৭৫।

 কিন্তু যখন আমরা এমন কিছু বলি যেমন ‘এটি’ ৯০ শতাংশ নিশ্চিৎ, সেটি আসলে কি বোঝাচ্ছে? আমরা কি বোঝাতে চাইছি কোনো মানব প্রকৃতিবিদকে যিনি দীর্ঘ মাঠ পর্যায়ে গবেষণা শেষে ৯০ শতাংশ নিশ্চিৎ হয়েছেন বা নাকি আমরা বোঝাতে চাইছি প্রাণীরা ৯০ শতাংশ নিশ্চিৎ? কিছুটা ভাগ্য সহায়ক থাকলে এই দুটোই প্রায় একই বিষয়। সেটা দেখার জন্য, আমাদের ভাবতে হবে কিভাবে প্রাণীরা আসলেই তাদের নিকট আত্মীয় কারা, সেটি পরিমাপ করার চেষ্টা করে (৭)।

আমরা জানি কারা আমাদের আত্মীয় কারণ সেটি আমাদের বলা হয়েছে, কারণ আমরা তাদের নাম দিয়েছি, কারণ আমাদের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিবাহ প্রথার প্রচলন আছে,এবং কারণ আমরা সেগুলো লিখিতভাবে সংরক্ষণ করি এবং আমাদের ভালো স্মরণশক্তি আছে। বহু সামাজিক নৃতত্ত্ববিদ অত্যন্ত ব্যস্ত সমাজের এই ‘আত্মীয়তা’ বা কিনশীপ নিয়ে, যা তারা গবেষণা করে থাকেন। তারা আসলেই কিন্তু সত্যিকারের জিনগত আত্মীয়তার কথা বোঝাতে চান না বরং কিছুটা ব্যক্তিক আর সামাজিক ধারণায় আমরা যাকে আত্মীয়তা বলি। মানুষর প্রথা ও গোত্রভিত্তিক আচার আচরণ। সাধারণত বিশেষভাবে জোর দেয় কিনশীপ বা আত্মীয়তার উপর: পূর্বপুরুষদের উপাসনা করার ব্যাপারটি খুবই প্রচলিত নানা সমাজে। পারিবারিক দায়বদ্ধতা আর কর্তব্য এবং আনুগত্য আমাদের জীবনের বিশাল একটি অংশ জুড়ে বিরাজমান। জন্মগত শত্রুতা, আন্তঃগোত্র যুদ্ধ খুব সহজেই ব্যাখ্যা করা সম্ভব হ্যামিলটনের জিনগত তত্ত্বের মাধ্যমে। ইনসেষ্ট বা নিকট সম্পর্কে মধ্যে যৌনাচার অর্থাৎ অজাচারের ট্যাবু বা প্রতিষিদ্ধতা সাক্ষ্য দেয় মানুষের আত্মীয়তা সচেতনাতাটিকে, যদিও এই ইনসেষ্ট প্রতিষিদ্ধতার একটি জিনগতভাবে সুবিধা আছে, সেটি পরার্থবাদীতার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। খুবই সম্ভবত তার কারণ ‘রেসেসিভ’ বা প্রচ্ছন্ন জিনগুলোর ক্ষতিকর প্রভাবগুলো, যা আত্মীয়দের মধ্যে প্রজনন বা আন্তর্জনন এর সময় দেখা যেতে পারে (কিছু কারণে বহু নৃতত্ত্ববিদ এই ব্যাখ্যাটি পছন্দ করেন না)(৮)।

 কিভাবে কোনো বন্য প্রাণী ‘জানতে পারে কে তাদের আত্মীয় বা অন্যভাবে বললে, কোন আচরণগত নিয়ম তারা অনুসরণ করতে পারে যার পরোক্ষ প্রভাব থাকতে পারে তাদের সম্পর্কে এমন কিছু ধারণা দেবার জন্য, যেন মনে হয় তারা তাদের আত্মীয়তা সম্বন্ধে জানে? আপনার আত্মীয়দের প্রতি সদয় আচরণ করুন এই নিয়মটি অবধারিত ভাবে প্রশ্নের জন্ম দেয়, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে রিলেশন বা আত্মীয়তার সম্পর্কগুলোকে কিভাবে শনাক্ত করা হয়ে থাকে। প্রাণীদের তাদের জিনগুলো অবশ্যই এই সূত্রে কাজ করার জন্য সাধারণ কোনো সরল নিয়ম বেধে দেয়। এমন কোনো নিয়ম যা পুরোপুরিভাবে সর্বস্তরের কোন ‘কগনিশন’ বা অবধারণের সাথে সংশ্লিষ্ট না, যা কিনা সেই প্রাণীর আচরণের মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে, কিন্তু তা সত্ত্বেও একটি সূত্র কাজ করে অন্তত গড়পড়তা যেকোনো পরিস্থিতিতে। আমরা মানুষরাও নানা ধরনের নিয়ম সম্বন্ধে সুপরিচিত এবং তারা এত শক্তিশালী যে, আমরা যদি সংকীর্ণমনা হই, শুধু একটি আইন বা নিয়ম মানি, এমনকি যখন আমরা খুব ভালোভাবে দেখতে পাই, এটি আমাদের বা অন্য কারোরই কোনো উপকারে আসছে না। যেমন, কিছু গোড়া ইহুদী বা মুসলিমরা তাদের নিজেদের না খাইয়ে রাখবে তবে কিছুতেই শূকরের মাংস খেয়ে নিয়ম ভাঙ্গবে না। প্রাণীরা তাহলে কি কোনো সাধারণ নিয়মগুলো মানে, যা কোনো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে, নিকটাত্মীয়দের পরোক্ষভাবে উপকার করবে?

 যদি প্রাণীদের অন্য কোন একক সদস্যদের প্রতি পরোপকারী আচরণ করার এমন কোনো প্রবণতা থাকে যারা শারীরিকভাবে তাদের সদৃশ, তারা হয়তো পরোক্ষভাবে তাদের আত্মীয়দের জন্য কিছুটা ভালো কাজ করছে। অনেক কিছু নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট প্রজাতির বিস্তারিত নানা বিষয়ের উপর। এধরনের কোনো আইন, যে কোনো অবস্থায়, শুধুমাত্র পরিসংখ্যানগতভাবে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার ব্যপারটা নিশ্চিৎ করে। যদি পরিস্থিতি বদলায়, যেমন যদি কোনো একটি প্রজাতি আরো বড় কোনো গ্রুপে বাস করা শুরু করে, তখন এই আইনটি আবার ভুল সিদ্ধান্ত নেবার কারণ হবে। ভাবা যেতে পারে যে বর্ণবাদী সংস্কারগুলোকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে নিজেদের সাথে সদৃশ্যময় মানুষদের সাথে সহমর্মিতা অনুভব করা এবং যারা ভিন্ন তাদের সাথে খারাপ আচরণ করার ‘কিন সিলেকশন’ বা আত্মীয় নির্বাচনের একটি অযৌক্তিক সাধারণীকরণের প্রবণতার মাধ্যমে।

কোনো প্রজাতি, যাদের সদস্যরা সাধারণত বেশী স্থান পরিবর্তন করে না বা যাদের সদস্যরা স্থান পরিবর্তন করে ছোট গ্রুপে, সেখানে যেকোনো একজন ব্ল্যানভোম সদস্য যার মুখোমুখি আপনি হতে পারেন, আপনার বেশনিকটবর্তী আত্মীয় হবার সম্ভাবনা তার হয়তো বেশ ভালো। এই ক্ষেত্রে সেই আইনটি– ‘প্রজাতির যে কোনো সদস্য যার সাথে আপনার দেখা হবে তাদের সাথে ভালোভাবে আচরণ করুন’– টিকে থাকার জন্য ইতিবাচকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবার সম্ভাবনা বেশী, এই অর্থে যেকোনো একটি জিন যা এর বাহককে এই ধরনের নিয়ম মানতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে, জিন পুলে সংখ্যায় তারা আরো অনেক বৃদ্ধি পায়। এটাই হয়তো সেই কারণ পার্থবাদী আচরণ কেন প্রায়শই নজরে পড়ে কোনো বানরদের গ্রুপে এবং তিমিদের দলে। তিমি বা ডলফিনরা পানিতে ডুবে মারা যায় যদি তারা বাতাসে শ্বাস নিতে না পারে। শিশু তিমি মাছ এবং দলে যারা আহত, যারা সাঁতরে উপরে আসতে পারবে না দেখা গেছে অন্য সুস্থ্য সদস্যরা তাদের বাঁচাবার চেষ্টা করছে, ভাসিয়ে রাখার জন্য। আমাদের জানা নেই তিমিদের আসলেই নিজস্ব কোনো উপায় আছে কিনা তাদের নিকটাত্মীয়দের চেনার জন্য, তবে সম্ভাবনা আছে এটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ না; হতে পারে যে সেই দলটি যেকোন সদস্যদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্ভাবনা সার্বিকভাবে এতটাই বেশী হতে পারে যে, সেখানে পরার্থবাদী আচরণের জন্য সময় ও শক্তি ব্যয় করা যুক্তিযুক্ত। ঘটনাচক্রে, অন্ততপক্ষে একটি সত্যায়িত কাহিনী আছে,যেখানে ডুবন্ত কোন মানব সাতারুকে বাঁচিয়েছে বন্য এক ডলফিন। এটি গন্য করা যেতে পারে মূল নিয়মটির একটি ব্যতিক্রম বা মিসফায়ার হিসাবে, যেখানে নিয়ম তাদের শিখিয়েছে গ্রুপের যে কোন সদস্যকে বাঁচাতে। এই নিয়মটিতে উল্লেখিত কোনো সদস্য যে ডুবন্ত মানে হয়তো কিছুটা এরকম: ‘লম্বা ছটফট করছে, উপরের তলদেশের কাছাকাছি শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম কিছু।

প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ বেবুনদের দেখা গেছে যে তারা তাদের নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলের বাকীদের জীবন রক্ষা করে শিকারী প্রাণীদের আক্রমণ থেকে, যেমন, কোনো চিতাবাঘ। খুবই সম্ভাবনা আছে যে কোনো এক প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের গড়পড়তা উল্লেখযোগ্য পরিমান জিন আছে, যা দলটির অন্য সদস্যদের মধ্যেও আছে। একটি জিন যা বলছে’ কার্যত,– ‘শরীর, যদি তুমি প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ হয়ে থাকে, তাহলে চিতাবাঘের আক্রমণ থেকে দলকে বাঁচাও’– তার সংখ্যা জিন পুলে বেড়ে যাবে। প্রায়শই উল্লেখিত এই উদাহরণটি নিয়ে আলোচনা শেষ করার আগে, নিরপেক্ষতার পরিচয় হবে যদি আমরা অন্তত একজন সম্মানিত কর্তৃত্বের কথা যোগ করতে চাই, যিনি খুবই ভিন্ন একটি বাস্তব সত্যের কথা উল্লেখ করেছিলেন। তার মতে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষরা সবার আগেই দিগন্ত রেখায় অদৃশ্য হয়ে যায় যখন চিতাবাঘের আবির্ভাব ঘটে।

মুরগির ছানারা সবাই একটি পারিবারিক ‘ক্লাচে’ খাদ্য গ্রহন করে, সবাই তাদের মাকে অনুসরণ করে, তাদের দুটি প্রধান ধরনের ডাক আছে। বেশ উঁচু স্বরে তীক্ষ্ম পাখির চিপ, যা আমি আরো আগেই উল্লেখ করেছিলাম, সেটি ছাড়াও তারা বেশ সুরেলা একটি সংক্ষিপ্ত আওয়াজ করে যখন খাদ্য গ্রহন করে। চিপ, যার প্রভাব আছে মায়ের সাহায্য ডেকে নিয়ে আসে, সেটি গ্রুপের অন্য মুরগীর ছানারা অবজ্ঞা করে। তবে ছোট সেই সুরেলা ডাকের সেই টুইটারগুলো কিন্তু সঙ্গী মুরগী ছানাদের আকর্ষণ করে; এর মানে যখন কোনো মুরগী ছানা খাওয়ার সন্ধান পায়, তার সুরেলা ডাক অন্যান্য মুরগী ছানাদের খাদ্যের উৎসের প্রতি আকর্ষণ করে। আগের হাইপোথেটিকাল উদাহরণের ভাষায়, এই টুইটারগুলো হচ্ছে ‘ফুড কল’, বা খাওয়ার জন্য ডাক। এর আগের ক্ষেত্রটির মত ছানাদের আপাতদৃষ্টিতে প্রার্থবাদীতাকে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে কিন সিলেকশন দিয়ে। যেহেতু প্রকৃতিতেই ছানারা সবাই আপন ভাইবোন, কোনো একটা জিন যা খাদ্য সন্ধানের টুইটার দেয়, তা বিস্তার লাভ করবে, শর্ত শুধু যে ডাকটি দিচ্ছে তার জন্য তাকে যা মাশুল দিতে হয় তার অর্ধেকের চেয়েও কম মোট উপকারিতা যা অন্য ছানারা পায় তার কাছ থেকে। যেহেতু সুবিধাটি সমস্ত ক্লাচের সবার মধ্যে বন্টন হচ্ছে, যা সাধারণত দুই সংখ্যার বেশী, সেকারণে খুব কঠিন না কল্পনা করা যে এই পরিস্থিতি বাস্তবে ঘটছে। অবশ্যই এই আইনটি বিভ্রম সৃষ্টি করে গৃহপালিত ও খামারের কোনো পরিস্থিতিতে যখন কোন একটি মুরগীকে ডিমের উপর বসানো হয় যা তার নিজের না, এমনকি হাস কিংবা টার্কির ডিমও সেটি হতে পারে। কিন্তু সেটি মুরগী কিংবা তার বাচ্চারা কেউই সেটা বুঝতে পারে এমনটা আশা করা যায় না। তাদের আচরণেরর প্রকৃতিটি গড়ে উঠেছে সেই পরিস্থিতিতে যা প্রকৃতিতে সাধারণত বিরাজ করে। এবং প্রকৃতিতে কোনো আগন্তুককে সাধারণত অন্য একই নীড়ে দেখা যায় না।

যদিও এই ধরনের ভুল হয়তো প্রকৃতিতে কখনো কখনো ঘটে। যে প্রজাতিরা দলবদ্ধ হয়ে বাস করে, সেখানে একটি এতিম শিশুকে দত্তক নিতে পারে আগান্তক কোনো স্ত্রী সদস্যরা, খুব সম্ভবত তারা নিজের সন্তান হারিয়েছে। যারা বানরদের বিশেষ করে পর্যবেক্ষণ করেন তারা মাঝে মাঝে ‘আন্ট’ শব্দটা ব্যবহার করেন এভাবে দত্তক নেয়া স্ত্রী প্রাণীদের চিহ্নিত করার জন্য। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে সেখানে এমন কোনো প্রমাণ নেই যে সে আসলেই তারা ‘আন্ট’ বা খালা, বা আসলেই কোনো ধরনের আত্মীয়; যদি বানর-পর্যবেক্ষণকারীরা জিন সচেতন হতেন যেমনটি তারা হতে পারতেন, তারা ‘আন্ট’ এর মত এত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করতেন না খুব ভালোভাবে বিষয়টি বিবেচনা না করে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই আমাদের সম্ভবত এই দত্তক নেয়ার বিষয়টি, যতই হৃদয়স্পর্শী হোক না কেন, আগে থেকে গড়ে ওঠা সহজাত কোনো নিয়মের একটি ভ্রান্ত প্রয়োগ বা মিস ফায়ারিং হিসাবে গন্য করতে হবে। এর কারণ দয়ালু কোনো স্ত্রী সদস্য একটি অনাথকে প্রতিপালন করার মাধ্যমে তার নিজের জিনের কোনো উপকার করছেন না; সে তার সময় আর শক্তি অপচয় করছে, যে সময় আর শক্তি সে ব্যয় করতে পারতো নিজেদের আত্মীয়দের জন্য, বিশেষ করে তার অনাগত সন্তানদের জন্য। ধারণা করা যেতে পারে এটি একটি ভুল যা খুব কদাচিৎ ঘটে, সুতরাং প্রাকৃতিক নির্বাচন “অযথা ব্যস্ত হয়নি মাতৃত্বের সহজাত প্রবৃত্তিকে আরো বেশী বাছ বিচার করার ক্ষমতা দিয়ে এই নিয়মটিকে বদলাতে। যাই হোক, বহু ক্ষেত্রেই এই ধরনের দত্তক নেয়ার বিষয়টি ঘটে না এবং অনাখরা পরিত্যক্ত হয়েই মারা যায়।

একটি উদাহরণ আছে যেখানে এই ধরনের ভুলের অত্যন্ত চরম মাত্রাটি দেখা যায়, যে আপনি হয়তো এটিকে আদৌ কোনো ভুল হিসাবে মনে করতে না চাইতে পারেন বরং স্বার্থপর জিন তত্ত্বের বিরুদ্ধে একটি প্রমাণ হিসাবে মনে হতে পারে। উদাহরণটি হচ্ছে শোকাহত বানর মায়েদের দেখা গেছে অন্য স্ত্রী সদস্যদের বাচ্চা চুরি করতে এবং তাদের প্রতিপালন করতে। আমি এটাকে দেখি দুটি ভুল হিসাবে, কারণে যে দত্তক নিয়েছে সে শুধু তার নিজের সময়ই নষ্ট করেনি, সে তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্ত্রী সদস্যকে ভারমুক্ত করেছে সন্তান প্রতিপালনের কষ্টকর কাজটি থেকে ও তাকে দ্রুত আরেকটি সন্তান ধারণ করার জন্য মুক্ত করেছে। আমার মনে হয় এই গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণটি আরো গভীর গবেষণা দাবী করে। আমাদের জানা দরকার বিষয়টি কতটা প্রায়শ ঘটে; এবং শিশু ও দত্তক গ্রহনকারী সদস্যটির মধ্যে গড় আত্মীয়তার পরিমানটি বা কতটুকু হতে হতে পারে এবং শিশুটির প্রকৃত মায়ের মানসিকতা কেমন– কারণ সর্বোপরি এটি ঘটলে তারই সবিধা, তাহলে মায়েরা কি বোকা তরুণ স্ত্রী সদস্যদের পরিকল্পিতভাবে প্রতারিত করে তাদের সন্তানদের প্রতিপালনের দ্বায়িত্ব নেবার জন্য এমনকি আরো প্রস্তাব করা হয়েছে যে দত্তককারী আর বাচ্চা চুরি করা সদস্যরা হয়তো সন্তান প্রতিপালন কলা বিষয়ে মূল্যবান শিক্ষা অর্জন করার মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে।)?

পরিকল্পিতভাবে মাতৃত্বের সহজাত প্রবৃত্তিকে ব্যবহার করার একটি উদাহরণ আমরা দেখি কোকিলদের ক্ষেত্রে এবং অবশ্যই অন্যান্য প্রজনন বা ব্রুড় পরজীবি পাখিদের আচরণে– এরা হচ্ছে সেই সব পাখি প্রজাতি, যারা তাদের ডিম পাড়ে অন্য প্রজাতির পাখির নীড়ে। কোকিলরা এই নিয়মের অপব্যবহার করে, যে নিয়মটি পাখি পিতামাতার প্রবৃত্তিগত: ‘তোমার বানানো নীড়ে থাকা যেকোনো। ছোট পাখির ছানার প্রতিপালন করো। কোকিলরা ছাড়া এই নিয়মটির সাধারণত একটি প্রত্যাশিত প্রভাব হচ্ছে নিকট স্বজনদের মধ্যে পার্থবাদীতা সীমাবদ্ধতা রাখার জন্য, কারণ এটি একটি বাস্তব সত্য যে পাখীর নীড় এত বেশী পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে যে, আপনার নিজের নীড়ে যা আছে তা অবধারিতভাবে আপনার নিজের সন্তান হতে বাধ্য। পূর্ণবয়স্ক হেরিং গাল, তাদের নিজেদের ডিম তারা নিজেরা চিনতে পারেনা এবং আনন্দের সাথে অন্য গালদের ডিমে তারা তা দেয় এবং স্কুলভাবে বানানো কাঠের কোন ডামিকেও তারা ‘তা’ দেবে যদি কোনো মানব গবেষক সেগুলো দিয়ে তাদের ডিমকে প্রতিস্থাপিত করেন। প্রকৃতিতে ডিম শনাক্ত করা গালদের জন্যে জরুরী না কারণ ডিম গড়িয়ে গড়িয়ে যথেষ্ট দুরে যেতে পারে না যে তারা বেশ কয়েক গজ দূরে অন্য কোনো প্রতিবেশী গালের নীড়ের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে। তবে গালরা তাদের নিজেদের ছানাদের চিনতে পারে: গালের বাচ্চার ডিম যা পারে না সেটি করতে পারে, তারা মাঝে মাঝে নীড় থেকে বের হয়ে প্রতিবেশী গালের নীড়ের কাছাকাছি চলে আসতে পারে এবং যার পরিণতি হতে পারে ভয়ঙ্কর,যা আমরা প্রথম অধ্যায়ে দেখেছিলাম।

অন্যদিকে, গিলোমটরা তাদের নিজেদের ডিম চিনতে পারে এর গায়ে থাকা বিশেষ ছোপ ছোপ দাগ দেখে এবং সক্রিয়ভাবে তাদের বাছাই করে নেয় ডিমে তা দেবার সময়। সম্ভবত এর কারণ তারা নীড় বাধে সমতল বা চ্যাপ্টা পাথরের উপর, যেখানে ডিম গড়িয়ে এদিক ওদিক চলে যাবার সম্ভাবনা আছে যা প্রতিবেশী গিলেমটদের ডিমের সাথে মিশে যেতে পারে। এখন হয়তো বলা যেতে পারে, কি দরকার তাদের এই বাছাই করে কেবল নিজেদের ডিম তা দেওয়া ঝামেলাটা পোহানো? নিশ্চয়ই যদি সবাই বিষয়টি ঠিক করে সে অবশ্যই অন্য কারো ডিমের উপর বসছে তা দেবার জন্য, তাহলে তো কোনো সমস্যা হবার কথা না, নির্দিষ্টভাবে প্রতিটি মা তার নিজের নাকি অন্য কারো ডিমের উপর বসছে। এটাই গ্রুপ সিলেকশন প্রস্তাবকদের যুক্তি। একবার তাহলে বিবেচনা করুন কি হতে পারে যদি এরকম কোনা গ্রুপ বেবী সিটিং চক্র আসলেই তৈরী হলো। গিলেমটদের গড় ক্লাচ বা একবারে পাড়া ডিম ছানার আকার হচ্ছে এক। এর অর্থ হচ্ছে যদি এই পারস্পরিক বেবী সিটিং চক্রটিকে সফলতার সাথে কাজ করতে হয়, প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক গিলেমটদের গড়ে একটি ডিম এর উপর তা দেবার জন্য বসতে হবে। এখন ধরুন কোনো একজন প্রতারণা করলো এবং ডিমের উপর সে বসতে অস্বীকার করলো। ডিমের উপর বসে সময় নষ্ট না করে সে বরং সেই সময়টা ব্যয় করলো আরো ডিম পাড়ার জন্য। এবং এই পুরো স্কীমটা সৌন্দর্য হচ্ছে অন্য আরো বেশী পরোপকারী মনোভাবাপন্ন প্রাপ্তবয়স্করা সেই ডিমগুলোর উপর লক্ষ রাখবে তার হয়ে। তারা বিশ্বস্ত থাকবে সেই নিয়মটি মেনে চলতে, “যদি কোনো এলোমেলো কোথাও পড়ে থাকা ডিম চোখে পড়ে, নিজের নীড়ের আশে পাশে, সেটিকে টেনে নিজের নীড়ে নিয়ে আসতে হবে এবং এর উপরে বসতে হবে। সুতরাং এভাবে এই প্রতারণা করার জিনটি পুরো জনগোষ্ঠীতে বিস্তার লাভ করবে এবং এই চমৎকার সৌহার্দময় ‘বেবী সিটিং’ চক্রটি ভেঙ্গে পড়বে।

‘বেশ’, বলা যেতে পারে, “কি ঘটতে পারে যদি কোনো সৎ পাখি এই আচরণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার না হতে অস্বীকার করে এবং দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকে একটি মাত্র ডিমের উপর বসার জন্য, শুধুমাত্র তার নিজের ডিম? এটা নিশ্চয়ই প্রতারকদের পরিকল্পনা ভেস্তে দেবে। কারণ তারা দেখতে পাবে তাদের নিজেদের ডিম পাথরে উপর পড়ে আছে, কেউ সেগুলোতে তা দিচ্ছে না। এটা নিশ্চয়ই তাদের শায়েস্তা করেনোজা পথে নিয়ে আসবে। কিন্তু হায়! সেটি হয় না। যেহেতু আমরা প্রস্তাব করছি যে ডিমে তা দেওয়া সদস্যরা একটি ডিম থেকে অন্য ডিমের কোন পার্থক্য করে না, যদি কোনো সৎ পাখি এমন কোনো আচরণ অনুশীলন করে প্রতারণা প্রতিরোধ করার জন্য তাহলে তাদের নিজেদের ডিমের একই সম্ভাবনা থাকবে প্রতারকের ডিমের মতই উপেক্ষিত হবার। প্রতারকদের তারপরও সুবিধা আদায় করে নেবার একটি উপায় থাকবে। কারণ তারা আরো বেশী ডিম পাড়বে এবং আরো বেশী পরিমান সন্তান তাদের টিকে থাকবে। সুতরাং সৎ গিলেমটদের এই সব প্রতারকদের পরাজিত করার একটি মাত্র উপায় আছে, সেটি হচ্ছে সক্রিয়ভাবে নিজেদের ডিমের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা। এর মানে পার্থবাদীতা পরিত্যাগ করে নিজের স্বার্থের প্রতি নজর দেয়া।

মেনার্ড স্মিথের ভাষা যদি ব্যবহার করি, এই পার্থবাদী দত্তক নেবার কৌশল সেকারণে বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কোনো কৌশল নয়। এটি অস্থিতিশীল এই অর্থে যে এর চেয়ে আরো উত্তম কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থপর কৌশল হচ্ছে, একজনের যা ডিম পাড়ার কথা, তারচেয়ে বেশী পরিমান ডিম পাড়া এবং তারপর সেই ডিমের উপর বসে তা দিতে অস্বীকার করা। এই পরের স্বার্থপর স্ট্রাটেজীটি আবার নিজেও অস্থিতিশীল, কারণ পরার্থবাদী যে কৌশলটি সে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করছে সেটি অস্থিতিশীল এবং সেটি অপসৃত হবে। কোন একটি গিলেমটদেও জন্য শুধুমাত্র বিবর্তনীয়ভাবে স্থিতিশীল কৌশল হতে পারে তার নিজের ডিমকে চিনতে পারা এবং শুধুমাত্র নিজের ডিমের উপর বসেই তা দেয়া আর ঠিক সেটাই ঘটে প্রকৃতিতে।

যে সমস্ত গান-গাওয়া পাখি বা সঙ্গ-বার্ড প্রজাতির সদস্যদের সাথে কোকিলরা পরজীবির মত আচরণ করে তারা কোকিলদের এই আচণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে, তবে এই ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের ডিমের আকার আকৃতি না চিনে বরং সহজাতভাবে ডিমের উপর প্রজাতি নির্দিষ্ট কোনো চিহ্ন শনাক্ত করার মাধ্যমে; যেহেতু তাদের সেই বিপদের আশঙ্কা নেই যে তাদের নিজেদের প্রজাতির অন্য সদস্যরা তাদের সাথে পরজীবির মত আচরণ করতে পারে, এটি কার্যকরী(৯)। কিন্তু কোকিলরা তাদের পক্ষ থেকে বিষয়টি প্রতিআক্রমণ করে তাদের ডিমকে ক্রমশ আরে বেশী তাদের পোষক প্রজাতির ডিমের রং, আকারের সদৃশ্য করে তোলার মাধ্যমে। এটি একটি মিথ্যার উদাহরণ এবং প্রায়শই এটি ভালোভাবে কাজ করে। এই বিবর্তনীয় অস্ত্র প্রতিযোগিতার ফলাফল হচ্ছে কোকিলের ডিমের বিস্ময়কর নিখুঁত অনুকরণ মিমিক্রি। আমরা অনুমান করতে পারি কোকিল ডিম ও বাচ্চার কিছু অংশ ‘ধরা পড়ে যাবে। এবং যারা ধরা পড়বে না তারা বেঁচে থাকবে পরবর্তী প্রজন্মের কোকিলের ডিম পাড়ার জন্য। সুতরাং যে জিনগুলো ছলনা করার ক্ষেত্রে বেশী দক্ষ সেগুলো বিস্তার লাভ করে কোকিলদের জিন পুলে। একই ভাবে পোষক পাখি, যার দৃষ্টিশক্তি যথেষ্ট শক্তিশালী কোকিলের ডিমের ছদ্মবেশ এর কোন খুঁত ধরার ক্ষেত্রে, সেগুলোই তাদের জিনপুলের অংশ হয়। এভাবে তীক্ষ্ম আর সন্দেহবাদী চোখে পরবর্তী প্রজন্মে হস্তান্তরিত হয়। কিছু সক্রিয় বৈষম্যমূলক বিভাজনকে সুতীক্ষ্ম করতে পারে প্রাকৃতিক নির্বাচন এটি তার একটি ভালো উদাহরণ, এই ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক বিভাজন অন্য প্রজাতির বিরুদ্ধে, যে প্রজাতির সদস্যরা তাদের সবের্বাচ্চ প্রচেষ্টা করে এই বৈষম্যমূলক আচরণটি কার্যত ব্যর্থ করার জন্য।

এখন আবার আমরা ফিরে আসি কোনো একটি গ্রুপের অন্যান্য সদস্যদের সাথে প্রাণীর আত্মীয়তা বা কিনশীপের ‘পরিমাপ’ এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কোনো প্রকৃতিবিদের সংশ্লিষ্ট পরিমাপের তুলনামূলক আলোচনায়। ব্রায়ান বার্টাম বহু বছর ধরে সিংহদের জীববিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করেছেন সেরেনগেতি ন্যাশনাল পার্কে। তাদের প্রজননের আচরণ সম্বন্ধে তার জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে, তিনি একটি বৈশিষ্ট্যসূচক সিংহদের দল বা প্রাইডের সদস্যদের মধ্যে গড়পড়তা আত্মীয়তার সম্পর্ক পরিমাপ করার চেষ্টা করেছিলেন। যে সকল বাস্তব তথ্য তিনি ব্যবহার করেছিলেন এ ধরনের কোনো পরিমাপের জন্য সেগুলো হচ্ছে এরকম : কোনো একটি সাধারণ প্রাইডে সাতটি পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী সদস্য থাকে যারা এর স্থায়ী সদস্য এবং দুটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সিংহ যারা ক্ষণস্থায়ী। প্রাপ্তবয়স্ক নারী সিংহদের অর্ধেক সংখ্যক সদস্য একই সাথে এক ব্যাচ সিংহ শাবকের জন্ম দেয় এবং তারা একসাথে তাদের প্রতিপালন করে, সুতরাং খুবই কঠিন বলা কোন সিংহ শাবকটি আসলে কোন সিংহীর সন্তান। সাধারণত এই বাচ্চাদের সংখ্যা বা লিটার সাইজ গঠিত হয় তিনটি সিংহ শাবকদের দিয়ে। এই সিংহ শাবকদের বাবা হবার দায়িত্ব সমান ভাবে ভাগ করে নেয় প্রাইডের পুরুষরা। তরুণ সিংহীরা প্রাইডে থাকে এবং বৃদ্ধ সিংহীদের তারা প্রতিস্থাপিত করে যারা প্রাইড ছেড়ে চলে যায় বা মারা যায়। পুরুষ সিংহরা কৈশোর পার হলে তাদের প্রাইড থেকে বের করে দেয়া হয়। তারা যখন বড় হতে থাকে তারা একটি প্রাইড থেকে অন্য কোনো প্রাইডে যাযাবরের মতই ঘুরে বেড়ায় সম্পর্কযুক্ত পুরুষদের সাথে দল বেধে বা জোড়ায় জোড়ায় এবং আবার তাদের মূল পরিবারে ফিরে আসার সম্ভাবনা খুব কম।

এটি এবং অন্য কয়েকটি পূর্বধারণা ব্যবহার করে, আপনি দেখতে পারবেন যে, একটি সাধারণ সিংহ প্রাইডের দুটি সদস্যের মধ্যে। আত্মীয়তার একটি গড় সম্পর্ক গণনা করা সম্ভব হবে। বার্টামের পরিমাপে যেকোনো র‍্যানডোমভাবে বাছাইকৃত দুজন পুরষ সিংহের জন্য সংখ্যাটি ০.২২ এবং যে কোনো এক জোড়া স্ত্রী সিংহর মধ্যে সংখ্যাটি ০.১৫। এর মানে হচ্ছে, কোনো একটি প্রাইডে পুরষরা গড়পড়তায় তাদের সৎ ভাই এর চেয়ে খানিকটা কম আত্মীয় এবং স্ত্রী সিংহরা খানিকটা নিকটাত্মীয় তাদের প্রথম কাজিনদের চেয়ে।

এখন, অবশ্যই, কোনো একটি নির্দিষ্ট জোড়া সদস্য হয়তো পূর্ণাঙ্গভাবে আপন ভাই, কিন্তু বারট্রামের কোনো উপায় নেই সেটা জানার এবং আমার মনে হয় বেশ নিশ্চিৎ হয়েই বাজি রাখা যেতে পারে সিংহরাও নিজেরাও সেটা জানেনা। আবার অন্য দিকে, গড় যে সংখ্যাটি বারট্রাম পরিমাপ করেছেন, সেই তথ্যটি একটি অর্থে সিংহদেরও কাছেও আছে। যদি এই সংখ্যাটি বৈশিষ্ট্যসূচক হয় কোনো একটি গড়পড়তা সিংহ প্রাইডের জন্য, তাহলে কোনো একটি জিন যা তার বহনকারী পুরুষ সদস্যকে অন্য একটি পুরুষ সদস্যেও প্রতি এমন ভাবে আচরণ করার প্রবণতার কারণ হয় যেন তারা প্রায় সৎ ভাইয়ের মত, সেই জিনটির ইতিবাচক ভূমিকার রাখে টিকে থাকার ক্ষেত্রে। কোনো জিন যা কিনা বাড়াবাড়ি করে এবং পুরুষদের এমনভাবে আচরণ করায় যা কিনা প্রযোজ্য হতে পারে আপন ভাইয়ের ক্ষেত্রে, সেই জিনগুলো সাধারণত শাস্তি পায়, ঠিক যেমন করে কোনো জিন শাস্তি পায় বেশী বন্ধুভাবাপন্ন না হবার জন্য, যেমন ধরুন অন্য পুরুষদের দ্বিতীয় কাজিন হিসাবে মনে করার মাধ্যমে। যদি সিংহদের জীবনের বাস্তব সত্যগুলো বারট্রাম যেমন বলছেন তেমন হয়ে থাকে এবং একই সাথে গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয়, যদি তারা এরকমই থাকে বহু সংখ্যক প্রজন্মে, তাহলে আমরা আশা করতে পারি যে প্রাকৃতিক নির্বাচন একটি মাত্রায় পরার্থবাদীতাকে সমর্থন করবে যা কোনো একটি সাধারণ প্রাইডের গড় আত্মীয়তা সূচকের জন্য যথোপযুক্ত। আমি ঠিক এটাই বোঝাতে চাইছিলাম, যখন বলেছিলাম যে প্রাণীদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্কের পরিমান কোনো প্রাণী আর একজন ভালো প্রকৃতিবিদের একই হবার সম্ভাবনা আছে (১০)।

সুতরাং আমরা উপসংহারে পৌঁছাতে পারি যে ‘সত্যিকারের আত্মীয়তা হয়তো কম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পরার্থবাদীতার বিবর্তনে বরং আত্মীয়তার সবচেয়ে ভালো যে পরিমাপটি প্রাণীরা করতে পারে তার চেয়ে। এই বাস্তব সত্যটি সম্ভবত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বোঝার জন্য কেন পিতামাতার শিশু প্রতিপালন করার কাজটি এত বেশী মাত্রায় আমরা দেখতে পাই এবং তারা আরো বেশী নিবেদিত প্রকৃতিতে ভাই/বোন পরার্থবাদীতার চেয়ে এবং এছাড়া আরো একটি কারণ কেন প্রাণীরা তাদের নিজেদের বেশী মূল্য দেয় এমনকি বহু সংখ্যক ভাইদের তুলনায়। সংক্ষেপে আমি যেটা বলতে চাইছি সেটি হলো, আত্মীয়তার সূচক ছাড়াও, আমাদের আরো একটি বিষয় বিবেচনা করা উচিৎ সেটি হচ্ছে নিশ্চয়তার সূচক। যদিও পিতামাতা/শিশুর সম্পর্ক তার ভাই/বোন এর সম্পর্কের চেয়ে কিন্তু জিনগতভাবে বেশী না, তবে এর নিশ্চয়তার সূচকটি অনেক বেশী। খুব সাধারণভাবেই কে আপনার ভাইবোন সেই বিষয়ের চেয়ে অনেক বেশী নিশ্চিৎ হওয়া সম্ভব কে আপনার সন্তান সেই বিষয়ে, আর আপনি সবচেয়ে বেশী নিশ্চিৎ আপনি কে সেই বিষয়ে!

আমরা গিলেমটদের মধ্যে প্রতারকদের বিষয়টি আলোচনা করেছি এবং মিথ্যাবাদী আর প্রতারক আর সুযোগের অপব্যবহারীদের নিয়ে এর পরের অধ্যায়গুলোতে আমার আরো কিছু বলার আছে। এমন কোনো পৃথিবীতে যেখানে অন্য সদস্যরা সারাক্ষণই সতর্কতার সাথে অপেক্ষা করছে আত্মীয় নির্ভর পরার্থবাদীতার সুযোগের অপব্যবহার করার জন্য এবং সেটিকে কেবল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য, সেখানে কোন একটি সারভাইভাল মেশিনকে বিবেচনা করতে হয়, কাকে সে বিশ্বাস করতে পারবে, কার ব্যাপারে সে সবচেয়ে বেশী নিশ্চিৎ হতে পারবে। যদি ‘খ’ সত্যি আমার ছোট ভাই হয়, আমার তাহলে আমার নিজের জন্য যতটা যত্ন করা উচিৎ তার জন্য প্রায় অর্ধেক পরিমান যত্ন নেয়া উচিৎ এবং আমার নিজের সন্তানের প্রতি আমার নিজের মতই পূর্ণ যত্ন নেয়া উচিৎ। কিন্তু আমি কি নিশ্চিৎ হতে পারবো তার ব্যাপারে, যতটা নিশ্চিৎ হতে পারি আমি আমার নিজের সন্তানদের ব্যপারে? কিভাবে আমি জানবো সে আমার শিশু ভাই?

যদি ‘গ’ আমার হুবহু যমজ হয়, তাহলে আমি আমার যেকোনো সন্তানের যতটা যত্ন নেই, তার দ্বিগুণ পরিমানে আমার উচিৎ তার যত্ন নেয়া, বাস্তবিকভাবেই তার জীবনের মূল্য দেয়া উচিৎ আমার নিজের জীবনের চেয়ে কোনো অংশে কম না (১১)। কিন্তু আসলেই কি তার ব্যাপারে আমি নিশ্চিৎ হতে পারি? সে আমার মত দেখতে এটা নিশ্চিৎ, কিন্তু এমন কি হতে পারে যে আমরা ঘটনাচক্রে চেহারার একই বৈশিষ্ট্য দেখানো জিনগুলো শেয়ার করি মাত্র। না, আমি তার জন্য আমার জিন উৎসর্গ করতে পারিনা, কারণ যদিও এটা সম্ভব যে সে আমার ১০০ শতাংশ জিনই বহন করে; আমি নিশ্চিৎভাবে জানি আমি আমার ১০০ শতাংশ জিন ধারণ করি, সেক্ষেত্রে আমি আমার নিজের কাছে তার চেয়ে অনেক মূল্যবান। আমি একমাত্র সদস্য শুধুমাত্র যার ব্যপারে আমার যেকোনো একটি স্বার্থপর জিন। নিশ্চিৎ হতে পারে। যদিও আদর্শগতভাবে একক ব্যক্তি স্বার্থপরতার জন্য কোনো একটি জিন হয়তো প্রতিস্থাপিত হতে পারে একটি প্রতিদ্বন্দ্বী জিন দ্বারা যা পরার্থবাদীতার সাথে অন্তত একটি হুবহু যমজ ব্যক্তিকে, দুটি সন্তান বা ভাইদের বা অন্ততপক্ষে চারজন নাতিনাতনী ইত্যাদিকে সুরক্ষা করে। কোনো একক সদস্যের স্বার্থপরতার জন্য জিনের অনেক বড় একটি সুবিধা হচ্ছে সদস্যটির পরিচয়ের ব্যাপারে সে ‘নিশ্চিৎ। প্রতিদ্বন্দ্বী আত্মীয়দের প্রতি নির্দেশিত পরার্থবাদী জিনের ঝুঁকি থাকে কারো প্রকৃত পরিচয়ে সম্বন্ধে ভুল করার জন্য, সেটা হতে পারে সত্যিকারভাবে দুর্ঘটনাবশত বা পরিকল্পিতভাবে সেটি পরিচালনা করে প্রতারক কিংবা পরজীবিরা। সুতরাং প্রকৃতিতে আমাদের সে কারণে অবশ্যই প্রত্যাশা করতে হবে একক সদস্যদের স্বার্থপরতার জন্য, এমন সেটি এমন একটি পর্যায় অবধি যা শুধুমাত্র জিনগত আত্মীয়তার সম্পর্ক দিয়ে পরিমিত হলে যা হতো, তারচেয়ে বেশী মাত্রায়।

বহু প্রজাতিতে, তার সন্তান কিনা সে সম্বন্ধে একটি বাবা যতটুক হতে পারে, তার চেয়ে একটি মা অনেক বেশী নিশ্চিৎ হতে পারেন। মায়েরা দৃশ্যমান স্পর্শযোগ্য ডিম পাড়ে বা তাদের সন্তানদের জরায়ুতে ধারণ করে। তার খুবই ভালো সম্ভাবনা আছে নিশ্চিভাবে জানার যে তার নিজের জিনগুলো কে বহন করছে। বেচারা পিতার প্রতারিত হবার ঝুঁকি অনেক বেশী। সেকারণে আশা করা যেতে পারে যে, বাবারা তাদের সন্তান প্রতিপালনে মায়েদের চেয়ে কম পরিশ্রম করবে। আমরা আরো দেখবো লিঙ্গ যুদ্ধ সংক্রান্ত অধ্যায়ে (অধ্যায় ৯) আসলেই অন্য একই রকম কিছু প্রত্যাশা করার আরো অনেক কারণ আছে। একইভাবে মাতামহী বা নানীরা তাদের নিজেদের নাতি-নাতনী সম্বন্ধে অধিকতর নিশ্চিৎ হতে পারেন পিতামহী বা দাদী অপেক্ষা এবং সে কারণে পিতামহীদের তুলনা তাদের কাছে বেশী পরার্থবাদীতার আচরণ আমরা প্রত্যাশা করতে পারি। এর কারণ তারা নিশ্চিৎ হতে পারে যে এটি তাদের কন্যার সন্তান, তাদের ছেলেদের কিন্তু কেউ বোকা বানাতে পারে। নানীরা তাদের নাতি বা নাতনী সম্বন্ধে তাদের দাদীর মতই সমপরিমান নিশ্চিৎ হতে পারে কারণ তারা দুজনই ভরসা করে একটি মাত্র প্রজন্মের নিশ্চয়তার উপর এবং একটি প্রজন্মের অনিশ্চয়তার উপর। একইভাবে, মামাদের অনেক বেশী উৎসাহী হওয়া উচিৎ তাদের ভাগ্নে ভাগ্নীদের প্রতি যত্নবান হবার জন্য চাচাঁদের তুলনায়, সাধারণভাবে তাদের ঠিক ততটাই পরার্থবাদী হওয়া দরকার যেমন খালারা। আসলেই, সেই সব সমাজ ব্যবস্থায় যেখানে বৈবাহিক সম্পর্কে অবিশ্বস্ততার মাত্রা অনেক বেশী, মামাদের ‘বাবাদের তুলনায় অনেক বেশী পরার্থবাদী হওয়ার কথা কারণ শিশুর সাথে তারা তাদের সম্পর্কের ব্যপারে নিশ্চিৎ হবার ক্ষেত্রে তাদেও যথেষ্ট কারণ আছে। তারা জানে যে এই শিশুর মা নিদেনপক্ষে তাদের সৎ বোন। আর “আইনত’ বাবা, কিছুই জানেন না। আমি অবশ্য এমন কোনো প্রমাণের কথা জানি যা এই সব পূর্বধারণার উপর ভিত্তি করে আছে। কিন্তু আমি সেগুলো নিবেদন করছি এই আশায় যে অন্যরা হয়তো এর সপক্ষে প্রমাণ খোঁজার প্রচেষ্টা হয়তো শুরু করতে পারেন। আরো সুনির্দিষ্টভাবে হয়তো সামাজিক নৃতত্ত্ববিদরা হয়তো আমার চেয়ে আরো চাঞ্চল্যকর কোনো তথ্য দিতে পারবেন (১২)।

আমার সেই বাস্তব সত্যটায় ফিরে আসি যেখানে আমি দাবী করেছি, পিতামাতার পরার্থবাদীতা ভাই/বোন এর পরার্থবাদীতার চেয়ে সচরাচর অনেক বেশী দেখা যায়। স্পষ্টতই মনে হচ্ছে যুক্তিযুক্ত হবে বিষয়টি আমরা ব্যাখ্যা করি ‘শনাক্ত করার সমস্যা’ সংশ্লিষ্ট ব্যাখ্যা দিয়ে। কিন্তু এটি পিতামাতা/শিশুর সম্পর্কটিতে মৌলিক অপ্রতিসাম্যতাটি ব্যাখ্যা করেন। পিতামাতা তাদের সন্তানদের যতটা প্রতিপালন করেন,সন্তানরা তাদের পিতামাতাকে সেভাবে প্রতিপালন করেনা, যদি তাদের মধ্যে জিনগত সম্পর্ক প্রতিসম এবং আত্মীয়তার ব্যাপারে নিশ্চয়তা উভয় দিকেই অনেক বেশী। একটি কারণ হচ্ছে বয়সে বড়, এবং জীবন ধারণের ক্ষেত্রে আরো দক্ষ হবার সুবাদে তাদের সন্তানদের সাহায্য করার জন্য পিতামাতারা প্রায়োগিক ক্ষেত্রে একটি উত্তম অবস্থান থাকে। এমনকি যদি কোনো শিশু তার পিতামাতাদের খাওয়াবার কথা ভাবে, সে আদৌ দক্ষ না বাস্তবিকভাবে কাজটি করার জন্য।

আরো একটি অপ্রতিসাম্যতা আছে পিতামাতা/সন্তানদের সম্পর্কের যা ভাই/বোন সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। সন্তানরা সবসময়ই তাদের পিতামাতার চেয়ে বয়সে তরুণ হয়। এবং এটি প্রায়শই– যদিও সবসময় এমন কিছু ইঙ্গিত করেনা– তাদের প্রত্যাশিত জীবনের দৈর্ঘ্য অপেক্ষাকৃত ভাবে দীর্ঘ। উপরে ঠিক যেমন আমি জোর দিয়েছি ‘প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল’ এর উপরে, প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক যা, সম্ভাব্য সবচেয়ে উত্তম কোনো পরিস্থিতিতে, কোনো একটি প্রাণীর হিসাব নিকাশের অংশ হবে যখন এটি “সিদ্ধান্ত নেয় পরার্থবাদীতার সে আচরণ করবে কি বা করবে না। যে সকল প্রজাতিতে সাধারণত শিশুরা দীর্ঘ জীবন প্রত্যাশা করে তাদের পিতামাতাদের চেয়ে, কোনো জিন যা শিশুর দিক থেকে পরার্থবাদীতা নিশ্চিৎ করার চেষ্টা করে সেটিকে স্পষ্টতই প্রতিকুলতার বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়। এটি পরার্থবাদীর চেয়ে বরং যারা বার্ধক্যের কারণে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে তাদের জন্য পরার্থবাদী আত্মবিসর্জনের উপযোগিতার কৌশল নির্ধারণ করবে। অন্যদিকে, পিতামাতার পরার্থবাদী আচরণের জন্য দায়ী জিন, রূপান্তরিত হবে একটি সংশ্লিষ্ট সুবিধায় যতক্ষণ অবধি প্রত্যাশিত আয়ুষ্কালটি প্রয়োজনীয় হিসাব নিকাশের সমীকরণে উপস্থিত থাকে।

কখনো কখনো কেউ হয়তো শুনতে পারেন যে বলা হচ্ছে কিন সিলেকশন বা আত্মীয়-নির্বাচন খুব ভালো তত্ত্ব হিসাবে ঠিকই আছে, তবে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে এর খুব কমই উদাহরণ আছে। আর এই সমালোচনাটি শুধুমাত্র এমন কারো পক্ষেই করা সম্ভব যে বোঝে না কিন-সিলেকশন বিষয়টি আসলে কি বোঝাচ্ছে। সত্যটি হচ্ছে শিশু সুরক্ষা আর পিতামাতার প্রতিপালনের সব উদাহরণই এবং সেই সাথে সংশ্লিষ্ট শারীরিক সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ: দুধ নিঃসরণের গ্রন্থি, ক্যাঙারুর পেটের থলে এবং ইত্যাদি আরো অনেক কিছু হচ্ছে সেই উদাহরণগুলো, যেখানে আমরা দেখতে পাই কিভাবে কিন সিলেকশনের মূলনীতিটি প্রকৃতিতে কাজ করছে। সমালোচকরা অবশ্যই সুপরিচিত পিতামাতা সন্তান প্রতিপালন করার আচরণটির ব্যাপক হারে অস্তিত্বের ব্যপারে, কিন্তু তারা ব্যর্থ হন বুঝতে যে পিতামাতার সন্তানদের প্রতি এই যত্ন নেবার আচরণটি ভাই/বোন এর পরার্থবাদীতার চেয়ে কোনো অংশেই কিন সিলেকশনের উদাহরণ হিসাবে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। যখন তারা বলেন যে, তারা উদাহরণ চান, তার মানে তারা পিতামাতার এই প্রতিপালন ছাড়া অন্য কোনো উদাহরণ চান এবং সেটি সত্য সেই ধরনের উদাহরণ অপেক্ষাকৃত কম দেখতে পাই আমরা। আমি কিছু কারণও প্রস্তাব করেছি কেন সেটি হতে পারে। আমি হয়তো প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে ভাই/বোন স্বার্থপরতার উদাহরণ উদ্ধৃত করতে পারতাম– আসলে তাদের সংখ্যা খুব বেশী না। কিন্তু আমি সেটি করতে চাইনা, কারণ এটি ভ্রান্ত একটি ধারণাকেই শুধু শক্তিশালী করবে (যেটি সমর্থন করেন যেমন আমরা দেখেছি, উইলসন), যা দাবী করে কিন সিলেকশন হচ্ছে বিশেষভাবে পিতামাতা/সন্তানদের সম্পর্ক ছাড়া ‘অন্য কোনো সম্পর্ক।

আর এই ভুলটি আকারে বড় হয়েছে তার কারণ মূলত ঐতিহাসিক। পিতামাতার প্রতিপালনের বিবর্তনীয় সুবিধা এত বেশী স্পষ্ট যে, বিষয়টির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য আমাদের হ্যামিলটনের অপেক্ষা করতে হয়নি। এটি ডারউইনের বিবর্তনীয় ব্যাখ্যার পর থেকেই বোধগম্য। যখন হ্যামিলটন বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন অন্য সম্পর্কগুলোর সাথে এর জিনগত সমতুল্যতা এবং তাদের বিবর্তনীয় গুরুত্ব, তিনি স্বাভাবিকভাবে এই সব অন্যান্য সম্পর্কের উপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আরো সুনির্দিষ্টভাবে, তিনি সামাজিক পতঙ্গ, যেমন, পিপড়া আর মৌমাছিদের উদাহরণ ব্যবহার করেন, যেখানে বোন/বোন সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেমন, আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে আবার দেখবো। আমি এমনকি কাউকে বলতে শুনেছি যে হ্যামিলটনের তত্ত্বটি প্রযোজ্য ‘শুধুমাত্র সামাজিক পতঙ্গদের ক্ষেত্রে! যদি কেউ পিতামাতার সন্তানদের প্রতি কিন-সিলেকশন কাজ করছে। এমন কিছু উদাহরণ হিসাবে স্বীকার করতে অস্বীকার করেন, তাহলে তার উপর দ্বায়িত্ব বর্তাবে একটি সাধারণ তত্ত্বে প্রস্তাব করা যা কিনা পিতামাতার পরার্থবাদীতা সম্বন্ধে পূর্বধারণা করতে পারে, কিন্তু সেটি সম্পর্কযুক্ত আত্মীয় বা কিনদের মধ্যে পরার্থবাদীতা আগে থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারবে না। আমার ধারণা সে ব্যর্থ হবে।

নোটস (অধ্যায় ৬)

(১) হ্যামিলটনের ১৯৬৪ সালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধগুলো আর অবহেলিত নয়। অতীতের উপেক্ষার ইতিহাস এবং পরবর্তীতের এর যথার্থ স্বীকৃতি বিষয়টি নিজেই একটি চমৎকার গুণগত গবেষণা হতে পারে মিম পুলে কোনো একটি মীমের অন্তর্ভুক্তি সংক্রান্ত একটি কেস স্টাডি। আমি এই মিমটির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছি অধ্যায় ১১তে।

(২) এই অনুমান করার কৌশলটি যে আমরা এমন একটা জিন নিয়ে কথা বলছি যে জিনটি জনগোষ্ঠীতে দুর্লভ, সর্বোপরি ব্যপারটায় খানিকটা প্রতারণা আছে, যা সম্পর্ক পরিমাপ করার বিষয়টিকে সহজ করে ব্যাখ্যা করার জন্য। হ্যামিলটনের অন্যতম বড় অর্জন হচ্ছে প্রদর্শন করা যে, তার উপসংহারগুলো একই থাকে সেই জিনটি দুর্লভ কিংবা খুব সাধারণ কোনো জিন হোক না কেন। এটাই আমরা দেখেছি যে তার তত্ত্বটির একটি ক্ষেত্র যা অনেকের কাছে বিশ্বাস। করার জন্য বেশ কঠিন অনুভূত হয়েছে।

আত্মীয়তার সম্পর্ক পরিমাপ করার সমস্যা আমাদের অনেককেই হোঁচট খাইয়ে দেয় এভাবে, যে-কোনো একটি প্রজাতির দুটি সদস্য, তারা একই পরিবারের হোক বা না হোক, সাধারণত তাদের ৯০ শতাংশেরও বেশী জিন একই। কি বলছি তাহলে, যখন আমরা বলছি, যেমন, দুই ভাইয়ের মধ্যে আত্মীয়তা হচ্ছে যেমন’ অথবা ‘দুই প্রথম কাজিনের মধ্যে আত্মীয়তা হচ্ছে এমন’? এর উত্তর হচ্ছে যে ভাইরা তাদের জিন ভাগাভাগি করে ৯০ শতাংশের চেয়ে আরো অনেক বেশী’ ( অথবা সংখ্যাটি যাই হোক না কেন), যা সেই প্রজাতির সদস্যরা এমনিতেই নিজেদের মধ্য ভাগাভাগি করে থাকে। এক ধরনের প্রাথমিক আত্মীয়তার ন্যুনতম বা বেস লাইন সম্পর্ক কোনো একটি প্রজাতির সকল সদস্যদের মধ্যে বিদ্যমান। আসলেই, একটা অপেক্ষাকৃত কম মাত্রা অবধি, এই সম্পর্ক বিদ্যমান অন্যান্য প্রজাতির সদস্যের সাথেও। পরার্থবাদীতা সেই সব একক সদস্যদের প্রতি নির্দেশিত হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়, যাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক এই প্রাথমিক স্তর বা বেস লাইন থেকে বেশী, সেই প্রাথমিক স্তরটি যেখানেই থাকুক না কেন।

প্রথম সংস্করণে, আমি সমস্যাটি এড়িয়ে গেছি দুর্লভ জিন নিয়ে কথা বলার কৌশল ব্যবহার করে। কিন্তু বিষয়টি নির্ভুল সেই প্রসঙ্গে অবশ্যই কিন্তু এটির আরো ব্যাপকতা আছে, সুতরাং যথেষ্ট নয়। হ্যামিলটন নিজেই লিখেছিলেন জিনরা বংশানুক্রমিকভাবে অনুরুপ’, কিন্তু বিষয়টি নিজেই একটি সমস্যার তৈরী করে, যেমন অ্যালান গ্রাফেন দেখিয়েছিলেন। অন্য লেখকরা এমন কি স্বীকার পর্যন্ত করেননি যে আসলেই কোনো সমস্যা আছে, বরং তারা শুধুমাত্র কথা বলে গেছেন ভাগ করে নেয়া জিনের চূড়ান্ত শতাংশগুলো হিসাব করে, যা অবশ্যই সুনির্দিষ্ট আর ধনাত্মক একটি ভ্রান্তি। কারণ এ ধরনের খামখেয়ালী বক্তব্য আরো বেশী ভ্রান্ত ধারণার জন্ম দেয়। যেমন, একজন বিখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ, ১৯৭৮ সালে প্রকাশিত ‘সোসিওবায়োলজী’র বইয়ের উপর তিক্ত সমালোচনামূলক আক্রমণ চলাকালীন যুক্তি দেবার চেষ্টা করেছিলেন যে, যদি আমরা কিন সিলেকশনকে গুরুত্ব দিয়ে গ্রহন করি আমাদের আশা করা উচিৎ পৃথিবীর সব মানুষ একে অপরের প্রতি পরার্থবাদী আচরণ করবে, কারণ পৃথিবীর সব মানুষেই তাদের ৯৯ শতাংশ জিন ভাগাভাগি করে। এই ধরনের ভ্রান্ত ধারণার একটি সংক্ষিপ্ত উত্তর আমি দিয়েছিলাম আমার Twelve Misunderstandings of Kin Selection শীর্ষক একটি প্রবন্ধে (যেখানে এটি ছিল বিভ্রান্তি নং ৫)। বাকী ১১ টি বিভ্রান্তি পড়ে দেখলেও কোনো ক্ষতি হবে না।

অ্যালান গ্রাফেনই দেখিয়েছিলেন, যাকে বলা যেতে পারে আত্মীয়তার সম্পর্ক পরিমাপ সংক্রান্ত সমস্যাটির একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান তার Geometric View of Relatedness ধারণায়। তার এই ধারণাটির ব্যাখ্যা আমি এখানে বিস্তারিতভাবে দেবো না। এবং আরো একটি প্রবন্ধ Natural Selection, Kin Selection and Group Selection এ গ্রাফেন আরো কিছু সাধারণ আর গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার দিকে নজর দিয়েছেন, সুস্পষ্ট করেছেন সংশয়গুলোকে, বিশেষ করে হ্যামিলটনের inclusive fitness ধারণাটির ব্যাপক অপব্যবহার প্রসঙ্গে। এছাড়াও তিনি আমাদের জানিয়েছেন জিনগত আত্মীয়দের প্রতি পরার্থবাদীতার লাভ-ক্ষতির পরিমাপ করার সঠিক এবং ভুল উপায়গুলো কি।

(৩) আরমাডিলো সম্বন্ধে নতুন কোনো তথ্য আমরা আর পাইনি, কিন্তু কিছু বিস্ময়কর নতুন তথ্য প্রকাশিত হয়েছে অন্য আরেকটি ক্লোনিং প্রাণীদেও গ্রুপ সম্বন্ধে– এফিড। বহু দিন থেকে বিজ্ঞানীরা জানতেন যে এফিডরা ( যেমন, গ্রিন ফ্লাই) অযৌন এবং যৌন উভয়ভাবে প্রজনন করে। আপনি যে কোনো উদ্ভিদের উপর জটলা করে বসে থাকা একগুচ্ছ এফিডদের লক্ষ করুন, সম্ভাবনা প্রবল যে তারা আসলে একটি স্ত্রী এফিডের হুবহু ক্লোন, এবং ঠিক অন্য একটি পাশাপাশি গাছে আপনি পাবেন ভিন্ন আরেকটি গ্রুপের ক্লোন। তাত্ত্বিকভাবে এই পরিস্থিতিগুলো কিন-সিলেকশন বা কিন-নির্বাচন ভিত্তিক বিবর্তনের জন্য আদর্শ একটি পরিস্থিতি। কিন্তু কোনো সত্যিকারের এফিড পরার্থবাদীতা উদাহরণ আমাদের জানা ছিল না, যতদিন না ১৯৭৭ সালে শিগেইয়ুকী আওকি একটি জাপানী প্রজাতির এফিড এর মধ্যে বন্ধ্যা ‘সৈন্যদের উপস্থিতি লক্ষ করেছিলেন। কিন্তু প্রথম সংস্করণের সেই তথ্যটি যুক্ত করার জন্য দেরী হয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকেই আওকি এই বিষয়টি লক্ষ করেন আরো বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির মধ্যে এবং যথেষ্ট পরিমান প্রমাণও তিনি সংগ্রহ করেছেন যে এটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ এফিডদের মধ্যে অন্তত চারবার স্বতন্ত্রভাবে বিবর্তিত হয়েছে।

খুব সংক্ষেপে আওকির কাহিনীটি হচ্ছে এরকম; এফিড ‘সৈন্যরা তাদেও শারীরিক গঠনে সুনির্দিষ্ট প্রকারের, অন্যান্য প্রথাগত সামাজিক কীট পতঙ্গ, যেমন, পিপড়াদের নানা শ্রেণীর মতই ঠিক সুনির্দিষ্ট। তারা হচ্ছে লার্ভা যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়না আর সেকারণের তারা প্রজনন অক্ষম। তারা দেখতে কিংবা আচরণে সৈন্য নয় এমন লার্ভা সমসাময়িক সদস্যদের মত নয় যদিও যাদের সাথে জিনগতভাবে তারা হুবহু একই। সৈন্য এফিডরা অসৈন্য এফিডদের চেয়ে বৈশিষ্ট্যসূচকভাবে আকারে বড়, এবং তাদের বাড়তি একটি আকারে বড় সামনের পা থাকে, যার ফলে তারা দেখতে প্রায় স্করপিয়ন বা কাঁকড়াবিছার মত। তাদের ধারালো দুটো শিং থাকে যা মাথার উপরে সামনের দিক বরাবর সাজানো থাকে। তারা এটি সম্ভাব্য কোন শিকারী আগ্রাসী প্রাণীদের সাথে যুদ্ধ আর হত্যা করার জন্য ব্যবহার করে। এই প্রক্রিয়ায় প্রায়শই তারা মারা যায়। এমনকি যদি তারা মারা নাও যায়, তারপরও সঠিকভাবেই তাদের জিনগতভাবে পরার্থবাদী হিসাবে ভাবা যেতে পারে, কারণ তারা প্রজনন অক্ষম।

স্বার্থপর জিনের ভাষায়, তাহলে কি হচ্ছে এখানে? আওকি সুস্পষ্টভাবে বলেনি ঠিক কোন বিষয়টি নির্ধারণ করে কোন সদস্যটি প্রজনন অক্ষম সৈন্য হবে আর কোন সদস্যটি প্রজনন ক্ষম স্বাভাবিক সদস্যদের মত হবে। তবে আমরা নিরাপদভাব বলতে পারি এর নিয়ামক সম্ভবত পরিবেশ, কোনো জিনগত পার্থক্য নয়– অবশ্যই কারণ প্রজনন অক্ষম সৈন্যরা এবং সাধারণ এফিডরা যে-কোনো একটি উদ্ভিদের উপর যাদের আমরা দেখি তারা জিনগতভাবে একে অপরের হুবহু সদৃশ। তবে অবশ্যই কিছু জিন থাকবে যারা কিনা সক্ষম পরিবেশগত কোনো সংকেত দ্বারা প্রভাবিত হয়ে দুটি ভিন্ন বিকাশ প্রক্রিয়ার যেকোনো একটির প্রতি সক্রিয় হবে। কেন প্রাকৃতিক নির্বাচন এই ধরনের জিনকে টিকে থাকতে সাহায্য করেছে, এমনকি যখন সেই জিনগুলোর বেশ কিছু তারা নিজেদের খুঁজে পাবে প্রজনন অক্ষম সৈন্য এফিডদের শরীরে, সুতরাং তারা ব্যর্থ হবে সেখানে পরবর্তী প্রজন্মে হস্তান্তরিত হবার জন্য? কারণ এই সব সৈন্যদের কল্যাণে, সেই একই জিনের অনুলিপিগুলো রক্ষা পাবে সৈন্য নয় এমন প্রজননক্ষম এফিডদের শরীরে। এবং যৌক্তিকতাটা ঠিক একই যে কোনো সামাজিক কীটের জন্য (অধ্যায় ১০ দেখুন), শুধুমাত্র পার্থক্য অন্যান্য সামাজিক কীটদের মধ্যে, যেমন পিপড়া বা টারমাইটদের ক্ষেত্রে, পজনন অক্ষম ‘পরার্থবাদীদের শরীরে থাকা জিনগুলোর প্রজনন সক্ষম সদস্যদের শরীরে তাদের নিজেদের অনুলিপিগুলোকে সাহায্য করার শুধুমাত্র একটি পরিসংখ্যানগত সম্ভাবনা থাকবে। এফিডদের পরার্থবাদী জিনগুলো নিশ্চয়তা উপভোগ করে, পরিসংখ্যানগত সম্ভাবনার পরিবর্তে, কারণ এফিড সৈন্যরা হচ্ছে তাদের প্রজনন সক্ষম বোনদের ক্লোন সহযোগী, যাদের তারা উপকার করে। কিছু ক্ষেত্রে আওকির এফিডরা বাস্তব জীবনের সবচেয়ে সুস্পষ্ট একটি উদাহরণ যা হ্যামিলটনের ধারণাটির শক্তি প্রমাণ করে।

তাহলে কি এফিডদের সত্যিকারের সামাজিক কীটের বিশেষ ক্লাবে যোগ দেবার অনুমতি দেয়া উচিৎ, যে ক্লাবটি ঐতিহ্যগতভাবে পিপড়া, মৌমাছি, বোলতা আর উইপোকাদের দখলে? কীটতত্ত্ববিদ্যার রক্ষণশীল ঘরানার বিশেষজ্ঞরা হয়তো তাদের সেই ক্লাবের বাইরে রাখতে পারেন নানা কারণ উল্লেখ করে। তাদের দীর্ঘায়ু বিশিষ্ট বৃদ্ধ কোনো রানি নেই যেমন। উপরন্তু সত্যিকারের ক্লোন হওয়া সত্ত্বে, আমার শরীরের কোষগুলো যতটা সামাজিক এফিডরা ততটাই সামাজিক। কোনো একটি উদ্ভিদের উপর একটি প্রাণী তার খাদ্য সংগ্রহ করছে, ঘটনাক্রমে এর শরীরটি বিভাজিত হয়েছে বহু সংখ্যক আলাদা আলাদা এফিডদের শরীরে, তাদের কোনো কোনোটি বিশেষায়িত হয়ে প্রতিরক্ষার দ্বায়িত্ব পালন করার জন্য, ঠিক যেমন মানুষের শরীরে শ্বেত রক্ত কনিকা। সত্যিকারের সামাজিক কীট, তাদের যুক্তি অনুযায়ী, একই প্রাণীর অংশ না হয়েও পরস্পরের সহযোগিতা করে, সেখানে আওকির এফিডরা সহযোগিতা করে কারণ তারা একটি অর্গানিজমেরই অংশ। এই শব্দ উৎস আর অর্থ সংক্রান্ত জটিলতায় আমি জড়াতে চাইনা। আমার কাছে মনে হয় যে, আপনি যতক্ষণ বুঝতে পারছেন, কি ঘটছে পিপড়াদের মধ্যে, এফিড আর মানব কোষগুলোর মধ্য, আপনার সেই স্বাধীনতা থাকা উচিৎ তাদের সামাজিক হিসাবে আখ্যা দেবেন কি দেবেন না যেমনটি আপনি চান। আর আমার নিজের পছন্দ হলো, আমার কারণ আছে আওকির এফিডকে কোন একটি একক অর্গানিজমের অংশ না ভেবে বরং সামাজিক কীট হিসাবে চিহ্নিত করা। কোনো একটি একক জীবের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য আছে যা কোনো একটি একক এফিড সেটি ধারণ করে। কিন্তু যা একগুচ্ছ এফিড ক্লোনের থাকে না। যুক্তিটির বিষদ ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে The Extended Phenotype এর একটি অধ্যায় Rediscovering the Organism এবং এই বইটিতে সংযুক্ত নতুন অধ্যায় The Long Reach of the Gene 41

(৪) আমি আশা প্রকাশ করেছিলাম যে, ই. ও. উইলসন তার কিন সিলেকশনের সংজ্ঞাটি পরিবর্তন করবেন তার ভবিষ্যৎ লেখায়, যেন তিনি সন্তানের ‘কিন’ হিসাবে সেখানে অন্তর্ভুক্ত করেন। আমি আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, তার On Human Nature এ আপত্তিকর বাক্য ‘সন্তান ছাড়া বাকীরা সত্যি সত্যি বাদ দেয়া হয়েছে– আমি এর জন্য কোন কৃতিত্ব দাবী করছি না! তিনি যোগ করেছেন, ‘যদিও কিন এমনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয় যে সেটি সন্তানদেরও অন্তর্ভুক্ত করে, কিন্তু কিন সিলেকশন শব্দটি সাধারণত ব্যবহৃত হয় শুধুমাত্র যেন অন্ততপক্ষে কিছু অন্য আত্মীয়– যেমন ভাই বোন কিংবা পিতামাতারাও এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি আসলেই সঠিক মন্তব্য, জীববিজ্ঞানীরা সাধারণত শব্দটিকে এই অর্থে ব্যবহার করেন। যা শুধুমাত্র সেই বাস্তবতারই প্রতিফলন ঘটায় যে, বহু জীববিজ্ঞানী ‘কিন সিলেকশন’ বিষয়টি মৌলিকভাবে আসলে কি, সে-ব্যাপারে এখনও সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পোষণ করেন না। এখনও তারা ভ্রান্তভাবে ভাবেন এটি যেন কোনো বাড়তি, সীমিত কিছু সদস্যর জন্য প্রযোজ্য একক সদস্যদের নির্বাচনের ধারণার বাইরের কোনো বিষয়। কিন্তু এটি অবশ্যই তা নয়। কিন সিলেকশন নব্য ডারউইনবাদের মৌলিক ধারণাগুলো থেকে উদ্ভূত, যেমন রাত দিনের পরে।

(৫) গ্রুপ সিলেকশন আর কিন সিলেকশনের মধ্যে পার্থক্যটি কোথায় সে ব্যাপারে সংশয় এখনও দূর হয়ে যায়নি। হয়তো সেই পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটেছে। আমার মন্তব্যটি দ্বিগুণ গুরুত্ব নিয়ে এখনও তার অবস্থানচ্যুত হয়নি। শুধুমাত্র, অসাবধানতাবশত আমি নিজেই একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন ভ্রান্তি সেখানে অনুপ্রবেশ করার সুযোগ করে দিয়েছি এই বইটির প্রথম সংস্করণের ১০২ নং পৃষ্ঠার (প্রথম সংস্করণের মূল বইয়ের ১০২ নং পৃষ্ঠা) উপরের অংশে। মূল বইটিতে আমি বলেছিলাম (নতুন এই সংস্করণে সামান্য যে অংশ আমি পরিবর্তন করেছি, এটি তার একটি যে দ্বিতীয় কাজিনরা সাধারণত সন্তান অথবা ভাইবোন যে পরিমান পার্থবাদীতা পায় তার ১/১৬ অংশ পায়’: যেমন, এস, অল্টমান এটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, বিষয়টি স্পষ্টতই ভুল। কিন্তু এটি ভুল সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি কারণে, সেখানে সেই সময় আমি যা বোঝাতে চেয়েছিলাম, সেটির সাথে এটির কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। যদি কোনো পরার্থবাদী প্রাণীর কাছে একটি কেক থাকে, যা সে তার আত্মীয়দের মধ্যে ভাগ করে দিতে পারবে, কোনো কারণই নেই প্রতিটি আত্মীয়কে সেই কেক থেকে একটি করে টুকরো দেয়া। কেকের টুকরোর আকার নির্ধারিত হবে আত্মীয়তার সম্পর্কের ঘনিষ্টতার উপর। আসলেই, বিষয়টি অর্থহীনতার দিকে পরিচালিত হয় কারণ প্রজাতির সব সদস্যরা, অন্য প্রজাতির কথাতো বাদই দিলাম, নিদেনপক্ষে দুরসম্পর্কের আত্মীয়, সুতরাং তারা প্রত্যেকেই খুব সতর্কতার সাথে ভাগ করা কেকটির একটি অংশ দাবী করতে পারে! এর বিপরীত, যদি কোনো নিকটাত্মীয় থাকে আশে পাশে, দুরবর্তী আত্মীয়দের সেই কেক থেকে কোনো ভাগ দেয়ার কোনো কারণ নেই। আরো অন্য অনেক জটিলতার স্বীকার যেমন, ক্রমান্বয়ে হাস পাওয়া উপকারের’ (ল অব ডিমিনিশং রিটার্ন) সুত্র অনুযায়ী, পুরো কেকটিকে উচিৎ হবে তার আশে পাশে উপস্থিত কোনো নিকটাত্মীয়কে দেয়া। আমি অবশ্যই যেটা বোঝাতে চেয়েছিলাম, সেটি ছিল, আমরা শুধুমাত্র এমন কিছু প্রত্যাশা করতে পারি যে সন্তানদের কিংবা ভাইবোন যে পরিমান পার্থবাদীর সুফল পায় দ্বিতীয় কাজিনদের সমপরিমান পরার্থবাদীতা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে (পৃষ্ঠা ১২২, মূল বইয়ের)।

(৬) কিন সিলেকশন তত্ত্বটি কাজ করার জন্য জীবসদস্যদের হিসাব নিকাশ করার প্রায় অবাস্তব পর্যায়ের দক্ষতার প্রয়োজন আছে কিনা এই বিভ্রান্ত যুক্তিটি কোন অংশেই না কমে বরং বার বার পুনরুজ্জীবিত হয়েছে ধারাবাহিক প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। শুধু তরুণ ছাত্রছাত্রীরা নয়, সুপরিচিত সামাজিক নৃতত্ত্ববিদ মার্শাল শাহলিনস The Use and Abuse of Biology বইটি মোটামুটি ভদ্রমাত্রায় অপরিচিতির জগতে হারিয়ে যেতে পারতো, sociobiology বিষয়ের উপর ‘বিধ্বংসী আক্রমণ” হিসাবে এটিকে যদি প্রশংসা করা না হতো। নীচের উদ্ধৃতিটি, কিন সিলেকশন কি মানুষের মধ্যে কাজ করে এই ধারণার সাথে সংশ্লিষ্ট, আসলেই এমন কিছু যে কোনো যুক্তি হতে পারে তা বইটি না পড়লে বিশ্বাস করা সম্ভব হতো নাঃ

‘প্রসঙ্গক্রমে, মন্তব্য করার প্রয়োজন আছে যে ভাষাতাত্ত্বিক বা লিঙ্গুইস্টিক সমর্থনের অভাবে সৃষ্ট এপিসটেমিওলজিকাল সমস্যাগুলো, যা সম্পর্কের কোএফিশিয়েন্ট r এর পরিমান হিসাব নিকাশ করতে সাহায্য করে, সেটি কিন সিলেকশন তত্ত্বের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘাটতি। ভগ্নাংশ আসলেই খুব দূর্লভ এই বিশ্বের ভাষাগুলোতে, যার আবির্ভাব দেখি আমরা ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষায় এবং নিকট ও দূরপ্রাচ্যের প্রাচীন সভ্যতাগুলোয়, কারণ তথাকথিত আদিম মানুষদের মধ্যে তারা সাধারণত অনুপস্থিত। শিকারী ও সংগ্রহকারীদের সাধারণত এক, দুই আর তিন এর বেশী গণনা করার কোন পদ্ধতি নেই। আমি নিজেকে বিরত রাখছি এমন কি আরো বড় সমস্যাগুলো থেকে, কিভাবে প্রাণীরা হিসাব করে বের করতে পারে যে r (ইগো, প্রথম কাজিনরা) = ১/৮।

এটা প্রথম বার নয়, আমি এর আগেও এই বিশেষভাবে উন্মোচক অনুচ্ছেদটি উল্লেখ করেছি। আমার বরং উচিৎ হবে আমার নিজের খানিকটা কর্কশ উত্তরটি এখানে পুনব্যবহার করা, যা আমি Twelve Misunderstandings of Kin Selection প্রবন্ধে লিখেছিলাম:

 ‘শাহলিনস এর জন্য করুণা যে তিনিও মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার প্রলোভনের স্বীকার হয়েছেন, কিভাবে প্রাণীরা r ‘হিসাব কষে বের করতে পারে সে বিষয়ে। যে অদ্ভুত ধারণাটিকে তিনি পরিহাস করার চেষ্টা করেছেন সেটা যথেষ্ট মনের ভিতর কোন ঘন্টি বেজে ওঠে সতর্ক করে দেবার জন্য। কোনো শামুকের খোলস নিখুঁত দারুণ লগারিদম নির্ভর সর্পিলকার একটি গঠন কিন্তু কোথায় শামুক তার লগ টেবিল এর বইটা লুকিয়ে রাখে; সত্যি তো কিভাবে এটি এমনকি সেই বইটি পড়ে, কারণ এর চোখের লেন্সের তো কোন ‘ভাষাতাত্ত্বিক সহায়তা বা যোগ্যতা নেই m গণনা করার জন্য, যা প্রতিসরণের কো-এফিসিয়েন্ট? কিভাবে সবুজ উদ্ভিদরা ক্লোরোফিলের ফর্মুলা মনে রাখে?

বাস্তব সত্যটি হচ্ছে যদি আপনি অ্যানাটোমী, ফিজিওলজী বা জীববিজ্ঞানের যে-কোনো বিষয় নিয়ে ভাবেন, শুধু মাত্র আচরণ নিয়ে নয় শুধু, শাহলিনসের মত, আপনিও তার সেই একই অস্তিত্বহীন সমস্যার মুখোমুখি হবেন। কোনো একটি প্রাণী বা উদ্ভিদের শরীরের যে-কোনো অংশের জণতাত্ত্বিক বিকাশ প্রক্রিয়ার জন্য জটিল গণিতের পূর্ণ বিবরণের প্রয়োজন আছে, কিন্তু তার মানে কি, প্রাণী আর উদ্ভিদকে বুদ্ধিমান গণিতজ্ঞ হতে হবে। অনেক লম্বা উদ্ভিদদের সাধারণত বিশাল বাট্রেস বা ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ডানার মত অংশ থাকে যা কাণ্ডের গোড়া থেকে দুই পাশে ছড়িয়ে বের হয়ে আসে। কোনো একটি প্রজাতির মধ্যে গাছ যত লম্বা হবে, ততই তাদের বাট্রেস আপেক্ষিকভাবে আকারে বড় হবে। ব্যাপকভাবে এটি স্বীকৃত যে এই সব বাট্রেসগুলো আকার ও আকৃতি সেই গাছটিকে সোজা হয়ে দাঁড় করিয়ে রাখার জন্য অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে উপযুক্ত গঠনের নিকটবর্তী হয়। যদি কোনো প্রকৌশলীকে সেটা বোঝাতে হলে বেশ জটিল গণিতের সাহায্য তাকে নিতে হবে। শাহলিন বা অন্য কারো কাছে এটি কখনো মনে হয়নি এই বাট্রেস তৈরীর করার পেছনে থাকা তত্ত্বটিকে সন্দেহ করা যেতে পারে তার কারণ শুধুমাত্র গাছদের সেই গাণিতিক হিসাব নিকাশ করার কোনো দক্ষতাই নেই বলে। কেন তাহলে, কিন নির্বাচনের আচরণ বিষয়ক বিশেষ কেসটিতে এই সমস্যাটি উদ্ভূত হচ্ছে? নিশ্চয় এর কারণ হতে পারে না যে এটি হচ্ছে আচরণ, কোনো অ্যানাটোমি নয়, কারণ অসংখ্য উদাহরণ আছে আচরনের { আমি বোঝাতে চাইছি কিন সিলেকশন আচরণের) যা শাহলিন সতর্কতার সাথে গ্রহন করতে পারেন তার এপিসটেমিওলজিকাল বিরোধীতার প্রসঙ্গ উত্থাপন ছাড়াই, ভাবুন, যেমন আমার নিজের উদাহরণটি (মূল বইয়ের পৃষ্ঠা ১২৪-৫), যেখানে উপরে ছুঁড়ে দেয়া কোনো বল আবার ধরার সময় আমাদের জটিল সব গণনা করতে হয়। সুতরাং এখানে অবশ্যম্ভাবীভাবে একটি ভাবনা চলে আসে, আসলে কি কোনো সামাজিক বিজ্ঞানী আছেন যারা প্রাকৃতিক নির্বাচনের তত্ত্বটি নিয়ে পুরোপুরি সন্তুষ্ট, কিন্তু যিনি, সম্পূর্ণ অসংশ্লিষ্ট কারণে, যার শিকড় হয়তো আছে তাদের বিষয়ের ইতিহাসে, হতাশার সাথে চেষ্টা করছেন কিছু খুঁজে পেতে– যে কোনো কিছু– সুনির্দিষ্টভাবে কিন সিলেকশন তত্ত্বটিতে যে কোন ধরনের ভুল।

(৭) এই বইটি লেখার পর কিন রিকগনিশন বা আত্মীয় শনাক্তকরণের ধারণাটি ব্যাপকভাবেই বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রাণীরা, আমরাসহ, আপাতদৃষ্টিতে বিস্ময়কর সব সূক্ষ্ম দক্ষতা বহন করি, যা আমাদের সাহায্য করে আত্মীয় থেকে অনাত্মীয়দের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য, কখনো শুধুমাত্র গন্ধ শুঁকে। Kin Recognition in Animals নামে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বই এই ক্ষেত্রে আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি তার একটি সার সংক্ষেপ করেছে। মানুষ এর উপর অধ্যায়টিতে লেখক পামেলা ওয়েলস দেখিয়েছেন সেই বক্তব্যটির (“আমরা জানি কে আমাদের

আত্মীয় কারণ আমাদের সেটা বলা হয়েছে’) সাথে আরো কিছু সংযোজন করা প্রয়োজন: অন্তত কিছু পরিস্থিতিগত প্রমাণ আছে যে যে আমরা নানা ধরনের শব্দহীন বা বাক্যহীন সংকেত বা ইঙ্গিত ব্যবহার করি, যা মধ্যে আমাদের আত্মীয়দের ঘামের গন্ধও অন্তর্ভুক্ত। পুরো বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিনিধিত্ব করছে সেই উদ্ধতিটি যা তিনি ব্যবহার করেছিলেন, তার অধ্যায়টির শুরুতে:

all good kumrads you can tell by their altruistic smell– e. e. cummings (তাদের পরার্থবাদী গন্ধ শুঁকে আপনি ভালো কমরেডদের চিনতে পারবেন– ই ই কামিংস)

আত্মীয়দের পরার্থবাদীতা ছাড়াও হয়তো পরস্পরকে শনাক্ত করার প্রয়োজন হতে পারে। তারা হয়তো বহিঃপ্রজনন (জিনগতভাবে ভিন্ন সম্পর্কযুক্ত প্রাণীদের মধ্যে প্রজনন) আর আন্তঃপ্রজনন (জিনগত সম্পর্কযুক্ত প্রাণীদের মধ্যে প্রজনন) মধ্যে একটি ভারসাম্য করতে চায়। বিষয়টি আমরা পরের নোটে দেখবো।

 (৮) একটি প্রাণঘাতী লিথাল জিন হচ্ছে যে জিনটি এর বাহককে হত্যা করে। কোনো একটি রিসেসিস বা প্রচ্ছন্ন লিথাল জিন, যেকোনো রিসেসিভ জিনের মত কোনো প্রভাব ফেলে না যদি না এটি দ্বিগুণ মাত্রায় উপস্থিত না থাকে। রিসেসিভ লিথালরা জিন পুলে টিকে থাকে, কারণ বেশীর ভাগ সদস্যই কেবল তাদের একটি করে কপি বহন করে এবং সে কারণে এর দ্বারা কোনো ক্ষতি সম্মুখীন হয়না। যে কোনো লিথাল জিনই দূর্লভ, কারণ যদি এরা কখনো খুব বেশী মাত্রায় সাধারণ হয় তাহলে জিনপুলে এরা এদের অনুলিপিদের দেখা পাবে যা এদের বাহকদের হত্যা করবে। তা সত্ত্বেও বহু ধরনের লিথাল জিন থাকতে পারে, সুতরাং আমরা এখনও জিনপুলে বহু লিথাল জিন বহন করে যাচ্ছি। ঠিক কত ধরনের ভিন্ন লিথাল জিন মানব জিন পুলে লুকিয়ে আছে এ বিষয়ে আনুমানিক ধারণগুলোর মধ্যে বেশ তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। কিছু বই মনে করে গড়ে প্রতিটি মানুষের জন্য দুটি করে লিথাল জিন আছে। যদি একটি র‍্যানডোম কোনো পুরুষ অন্য কোনো র‍্যানডোম নারীর সাথে প্রজনন করে, সম্ভাবনা আছে তার লিথালটি তার সঙ্গীনির লিথাল এর সাথে মিলবে না এবং এর কোনো কুফল ভোগ করবে না তাদের সন্তানরা। কিন্তু যদি কোনো ভাই তার বোনের সাথে প্রজনন করে এবং একটি কন্যার জন্ম দেয়, এই পুরো সমীকরণটি ভয়ঙ্কর ভিন্ন একটি রুপ ধারণ করে। আমার রিসেসিভ লিথাল জিন যতই দূর্লভ হোক না কেন বৃহত্তর জনগোষ্ঠীতে, বেশ শঙ্কিত হবার মত সম্ভাবনা আছে আমার বোনের লিথাল আর আমার লিথালটি সম্ভবত একই। এখন যদি আপনি হিসাব করেন, দেখা যাবে প্রতিটি লিথাল জিন যা আমি বহন করছি, যদি আমি আমার বোনের সাথে প্রজনন করি, আমদের প্রতি আটটি সন্তানের একটি হয় মত হয়ে জন্ম নেবে বা অল্প বয়সেই মারা যাবে। ঘটনাচক্রে, যদি জিনগতভাষায় বলা হয়, তাহলে কৈশোরে মারা যাওয়াটি জন্মের সময় মারা যাওয়া থেকে আরো অনেক বেশী ‘লিথাল’: জন্মের সময়েই মৃত শিশু তার পিতা-মাতার গুরুত্বপূর্ণ সময় আর শক্তি ব্যয় করে না। কিন্তু যেভাবেই আপনি দেখুন না কেন বিষয়টি, নিকটাত্মীয়দের ইনসেস্ট বা অজাচার শুধুমাত্র সামান্যমাত্র ক্ষতিকর না, এটি আসলেই ভয়াবহ ক্ষতির সম্ভাবনাপূর্ণ। আর সক্রিয়ভাবে নিকট আত্মীয়ের সাথে প্রজনন বা ইনসেস্ট এড়িয়ে চলার বিষয়টির নির্বাচন যেকোনো নির্বাচনীর চাপের মতই শক্তিশালী হতে পারে যা কিনা প্রকৃতিতে পরিমাপ করা হয়েছে।

নৃতত্ত্ববিদরা যারা ‘ইনসেস্ট’ আচরণ এড়িয়ে চলার ডারউইনীয় এই ব্যাখ্যা অস্বীকার করেন হয়তো অনুধাবন করেননি আসলেই কতটা শক্তিশালী একটি ডারউইনীয় ব্যাখ্যার বিরোধিতা তারা করছেন। তাদের যুক্তি কখনো এত বেশী দুর্বল যে, সেটি শুনলে মনে হতে পারে যেন মরিয়া হয়ে তারা সেটা মেনে নেবার জন্য মিনতি করছেন। সাধারণত তারা যা বলেন, যেমন: যদি ডারউইনীয় নির্বাচন আসলেই আমাদের ভিতর সহজাতভাবে ‘ইনসেস্ট’ আচরণের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়ে থাকে, তাহলে সেটি প্রতিষিদ্ধ বা নিষিদ্ধ করার জন্য আমাদের কোনো দরকার ছিল না। এটি ঘিরে এই প্রতিষিদ্ধতা বা টাবু বিষয়টি গড়ে ওঠার কারণ মানুষের অজাচার-জনিত কামনা আছে। সুতরাং ইনসেস্ট-এর বিরুদ্ধে কোনো নিয়মের ‘জৈববৈজ্ঞানিক কোনো কারণ থাকবে না, এটি অবশ্যই বিশুদ্ধভাবে হতে হবে সামাজিক’। এই বিরোধীতা বরং কিছুটা এরকম: গাড়ীদের ইগনিশন সুইচের কোনো লক বা তালার দরকার নেই কারণ গাড়ির দরজায় তালা আছে। সেকারণে ইগনিশন লক চুরি বিরোধী কোনো ব্যবস্থা হতে পারেনা, তাদের অবশ্যই বিশুদ্ধভাবে কোনো না কোনো আচারজনিত গুরুত্ব আছে! নতত্ববিদরা এছাড়াও বলতে খুব পছন্দ করেন যে, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্ন টাবু আছে, আসলেই আত্মীয়তারও ভিন্ন ভিন্ন সংজ্ঞা থাকতে পারে। তারা মনে হয় এমন ভাবে চিন্তা করেন যে এই বিষয়গুলো ইনসেস্ট এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে ডারউইনীয় ব্যাখ্যার প্রচেষ্টাকে খাটো করে। কিন্তু কেউ হয়তো বলতে পারেন যে যৌন কামনা ডারউইনীয় কোনো অভিযোজন হতে পারেনা, কারণ ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিতে প্রচলন আছে ভিন্ন ভিন্ন আসনে যৌন মিলন করার। ইনসেস্ট বা অজাচার এড়িয়ে চলার বিষয়টি খুব সম্ভবত অন্য প্রাণীদেও মতই মানুষের ক্ষেত্রেও একটি ডারউইনীয় নির্বাচনের ফলাফল।

জিনগতভাবে আপনার নিকটাত্মীয় এমন কারো সাথে প্রজনন শুধুমাত্র খারাপ না, জিনগতভাবে বেশী দুরের কারো সাথে প্রজনন বা বহিঃপ্রজননও খারাপ হতে পারে বিভিন্ন স্ট্রেইন বা প্রকারের মধ্যে জিনগত অসামঞ্জস্যতার কারণে। ঠিক কোথায় আদর্শ মধ্যবর্তী অবস্থানটি আছে সেটি ভবিষ্যদ্বাণী করা খুব সহজ না। আপনার প্রথম কাজিনকে প্রজনন সঙ্গী করা উচিৎ হবে আপনার? কিংবা আপনার দ্বিতীয় বা তৃতীয় কাজিন? প্যাট্রিক বেটসন এই প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন, জাপানি কোয়েলদেও মধ্যে, এই ধারাবাহিকতায় তাদের অবস্থানটি কোথায়। একটি পরীক্ষামূলক যন্ত্র, যা পরিচিত ‘অ্যামস্টারডাম অ্যাপারাটাস হিসাবে, সেখানে পাখিদের আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গীনিদের বেছে নেবার জন্য, যারা মিনিয়েচার দোকানের কাঁচের পেছনে অবস্থান করে। গবেষণায় দেখা যায় তাদের নিজেদের আপন ভাইবোন আর পুরোপুরিভাবে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন কোনো পাখিদের চেয়ে তারা সঙ্গী হিসাবে প্রথম কাজিনদের পছন্দ করে। পরবর্তী গবেষণাগুলো প্রস্তাব করছে যে তরুণ কোনো কোয়েল তাদের ক্লাচ সঙ্গীদের (Clutch– ক্লাচ মানে একসাথে পাড়া ডিমগুলো থেকে জন্ম নেয়া বাচ্চাগুলো) কিছু বৈশিষ্ট্য শিখে নেয় এবং তারপর, পরবর্তী জীবনে তারা এমন কোনো যৌনসঙ্গী খুঁজে নেয় তারা প্রায় তাদের ক্লাচ সঙ্গীদের মতই হয় তবে খুব বেশী মাত্রায় একই রকম না।

কোয়েল তাহলে, “ইনসেস্ট থেকে বিরত থাকে তারা যাদের সাথে বড় হয়েছে তাদের প্রতি ভিতর থেকে কোনো যৌন-কামনা বোধ না করার মাধ্যমে। অন্যান্য প্রাণীরা সেটি করে সামাজিক আচার আচরণ মানার মাধ্যমে বা প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর বাইরে ছড়িয়ে পড়ার সামাজিকভাবে আরোপ করা নিয়মের মাধ্যমে। বয়োপ্রাপ্ত পুরুষ সিংহদের, যেমন, তাদের পিতামাতার প্রাইড থেকে বের করে দেয়া হয়, যেখানে তাদের প্রলোভিত করার জন্য তাদের স্ত্রী আত্মীয়রা রয়ে যায়। আর এই সব পরুষ সিংহরাই কেবল প্রজনন করতে পারে যদি তারা অন্য কোনো প্রাইডে তাদের জায়গা করে নিতে পারে। শিম্পাঞ্জি আর গরিলা সমাজে তরুণ স্ত্রী সদস্যরা তাদের গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যায় অন্য গ্রুপে তাদের সঙ্গী খোঁজার জন্য। এই দুটি ছড়িয়ে পড়ার প্যাটার্ন, এবং কোয়েলদের পদ্ধতি আমাদের নিজেদের প্রজাতির বহু সংস্কৃতিতেও দেখা যায়।

(৯) এটি সম্ভবত সত্যি সব প্রায় সব প্রজাতির পাখিদের জন্য। যাই হোক না কোনো কিছু পাখিদের তাদের নিজেদের প্রজাতির নীড়কে পরজীবির মত ব্যবহার করা দেখলে আমাদের অবাক হওয়া উচিৎ না। এবং এই প্রপঞ্চটি, সত্যি, ক্রমবর্ধমান হারে অন্য বেশ কিছু প্রজাতির মধ্যেও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বর্তমানে বিশেষ করে নতুন আণবিক প্রযুক্তির ব্যবহার, কে কার আত্মীয় সেই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অরো তথ্যের যোগান দিয়েছে। আসলেই, “স্বার্থপর জিন’ তত্ত্বটি হয়তো এমন কিছু ঘটার প্রত্যাশা করে আমরা যতটুকু জানি তারচেয়েও বেশী হারে।

(১০) সিংহদের মধ্যে সহযোগিতার মূল চালিকা শক্তি হিসাবে ‘কিন সিলেকশন’ ধারণার উপর বারট্রামের গুরুত্ব আরোপ করার বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন সি, প্যাকার এবং এ. পুসে। তারা দাবী করেছিলেন যে, অনেক প্রাইডে দেখা যাবে কোনো দুটি পুরুষ সিংহের মধ্যে কোনো আত্মীয়তা নেই। প্যাকার ও পুসে প্রস্তাব করেন পারস্পরিক পরার্থবাদীতা অন্ততপক্ষে কিন সিলেকশনের মতই ব্যাখ্যা হতে পারে সিংহদের মধ্যে এই ধরনের পারস্পরিক সহযোগিতার ব্যাখ্যা হিসাবে। হয়তো উভয় পক্ষই সঠিক। অধ্যায় ১২ গুরুত্ব দিয়েছে যে পারস্পরিক আচরণ (Tit for Tat) বিবর্তিত হতে পারে শুধুমাত্র যদি একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিমান সংখ্যক এই পারস্পরিক উপকারিতা বিনিময়কারীদের যদি প্রথম ধাপেই জড়ো করা সম্ভব হয়। এটি নিশ্চিৎ করে যে কোনো একটি হবু সঙ্গীর উপকারের বিনিময়ে উপকার করার ভালো সম্ভাবনা আছে। আত্মীয়তা সম্ভবত এমন কিছু ঘটার জন্য সবচেয়ে সুস্পষ্ট কোন উপায়। আত্মীয়রা স্বাভাবিকভাবে পরস্পর সদৃশ হয়, সুতরাং যদি এই গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যাটিতে নাও পৌঁছায় কোনো জনগোষ্ঠীতে, এটি। কোনো একটি পরিবারের মধ্যে হয়তো সম্ভব হতে পারে। হয়তো সিংহদের মধ্যে সহযোগিতার শুরুটা ঘটেছিল আত্মীয়তার প্রভাবজনিত কারণে, যা প্রস্তাব করেছিলেন বারট্রাম। এবং এটি প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে যেখানে উপকারের বিনিময়ে উপকার বা রেসিপ্রোসিটি নির্বাচনী সুবিধা পায়। সিংহদের নিয়ে এই মতানৈক্য সমাধান করা যেতে পারে শুধুমাত্র বাস্তব তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে। এবং শুধুমাত্র বাস্তব তথ্য প্রমাণই চিরকালের মতই কোনো একটি বিশেষ কেসের ব্যাপারেই তথ্য দেবে, সাধারণ কোনো তাত্ত্বিক তর্কের ব্যাপারে নয়।

(১১) ব্যাপকভাবেই এখন বোঝা সম্ভব হয়েছে এক জোড়া হুবহু যমজ তাত্ত্বিকভাবে আপনার কাছে ততটাই মূল্যবান যতটা আপনি আপনার নিজের কাছে মূল্যবান– যতক্ষণ অবধি যমজটি আসলে নিশ্চিৎভাবেই আপনার যমজ। তবে যে বিষয়টি এত ব্যাপকভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হয়নি সেটি হচ্ছে বিষয়টি একইভাবে সত্য নিশ্চিৎভাবে একগামী কোনো মায়ের ক্ষেত্রে। আপনি যদি নিশ্চিভাবে জানেন যে আপনার মা, আপনার বাবার সন্তান ধারাবাহিকভাবে জন্ম দিয়ে যাবে এবং শুধুমাত্র আপনার বাবার সন্তানই, সেক্ষেত্রে আপনার মা জিনগতভাবে আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন আপনার হুবহু যমজ কোন ভাই-বোন বা আপনার নিজের মত। নিজেকে একটি সন্তান উৎপাদন করার যন্ত্র হিসাবে ভাবুন। তারপর আপনার একগামী মা হচ্ছেন একটি (আপন) ভাই-বোন তৈরীর যন্ত্র এবং আপন ভাই-বোন জিনগতভাবে আপনার নিজের সন্তানের মতই মূল্যবান। অবশ্যই এটি ব্যবহারিক অনেক বিবেচনাকে উপেক্ষা করছে। যেমন, আপনার মা আপনার চেয়ে বয়সে প্রবীন, তবে সেটি তাকে ভবিষ্যৎ প্রজননের জন্যে আপনার নিজের চেয়ে ভালো কিংবা খারাপ বাজি হিসাবে ভাবার বিষয়টি বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে– আমরা কোনো সাধারণ সূত্র দিতে পারি না।

এই যুক্তিটা অনুমান করে নেয় যে, অন্য কোনো পুরষের সন্তান নয় বরং ধারাবাহিকভাবে আপনার পিতার সন্তান উৎপাদন করার জন্য আপনার মায়ের উপর নির্ভর করা যাবে। এবং কতদুর অবধি তাকে ভরসা করা যেতে পারে সেটি সেই প্রজাতির প্রজননসঙ্গী বাছাই করার প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করবে। আপনি যদি এমন কোনো প্রজাতির সদস্য হন, যারা কিনা স্বভাবজাতভাবে বহুগামী। আপনার মায়ের সন্তানদের আপনি নিশ্চয়ই ভরসা করতে পারবেন না আপন পূর্ণ ভাই-বোন হিসাবে। এমনকি আদর্শ কোনো একগামী পরিস্থিতে আপাতদৃষ্টিতে একটি অপরিহরনীয় বিবেচ্য বিষয় আছে যা আপনার মাকে আপনার চেয়ে খারাপ বাজি হিসাবে উপস্থাপন করে। আপনার বাবা হয়ত মারা গেছেন। এমনকি সবচেয়ে উত্তম ইচ্ছা সত্ত্বে, যদি আপনার বাবা মৃত হয়, তাহলে আপনার বাবার সন্তান উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য আপনার মায়ের কাছে প্রত্যাশা করা সম্ভব না বললেই চলে, পারবেন কি তিনি?

বেশ, মূল কথা হচ্ছে, তিনি সেটা করতে পারেন। আর যে সকল পরিস্থিতিতে এমন কিছু ঘটতে পারে সেগুলো অবশ্যই ‘কিন। সিলেকশন’ তত্ত্বের জন্য নিঃসন্দেহে খুব গুরুত্বপূর্ণ। স্তন্যপায়ী হিসাবে আমরা সেই ধারণায় অভ্যস্ত যে যৌনমিলনের পর একটি সুনির্দিষ্ট আর বরং সংক্ষিপ্ত সময়-বিরতির পর সন্তানের জন্ম হয়। একটি মানব পুরুষ তার মৃত্যুর পরও সন্তানের পিতা হতে পারে, তবে তার মৃত্যুর পর নয় মাস অতিক্রান্ত হবার পরে নয় (ব্যতিক্রম হতে পারে যদি শুক্রাণুকে হিমায়িত করে সংরক্ষিত করে রাখা হয়। আগে কোন স্পার্ম ব্যাঙ্কে); কিন্তু বেশ কয়েকটি গ্রুপের কীটপতঙ্গ আছে, যেখানে স্ত্রী সদস্যরা তাদের শরীরের একটি জায়গায় সারাজীবনের জন্য শুক্রাণু সংরক্ষণ করে রাখতে পারে। এবং সেখান থেকে সে একটু একটু করে তার ডিম্বাণু নিষিক্ত করতে ব্যবহার করে, এমনকি তার সঙ্গী মরে যাবার বহু পরে। এরকম করে থাকে এমন কোনো প্রজাতির সদস্য যদি আপনি হন, আপনি আসলেই নিশ্চিৎ হবার সম্ভাবনা পোষণ করতে পারেন যে “জিনগত বাজিতে’ আপনার মা আপনার জন্য ভালো একটি দান হবে। একটি স্ত্রী পিপড়া একটি মেটিং ফ্লাইট এ ওড়ার সময় তার প্রজনন করে জীবনে একবারই, তার জীবনের শুরুতে। এরপর স্ত্রী পিপড়ারা তাদের ডানা হারিয়ে ফেলে এবং আর কখনোই প্রজনন করেনা। স্বীকার করতে হবে, অনেক পিপড়া প্রজাতিতে স্ত্রী পিপড়ারা বেশ কিছু সঙ্গীর সাথে মিলিত হয় তার মেটিং ফ্লাইট এর সময়। কিন্তু আপনি যদি এমন কোনো প্রজাতির সদস্য হয়ে থাকেন, যেখানে স্ত্রী সদস্যরা সবসময় একগামী, আপনি আসলেই আপনার মাকে নিদেনপক্ষে আপনার নিজের মতই জিনগত বাজীতে ভালো দান হিসাবে ভাবতে পারেন। তরুণ কোনো পিপড়া হবার একটি বিশেষ বিষয় হচ্ছে, তরুণ কোনো স্তন্যপায়ীদের ব্যতিক্রম, আপনার বাবা মরে গেল কি, গেল না, সেটা কোনো সমস্যা করে না (অবশ্যই সে নিশ্চিৎভাবে মৃত); আপনি বেশ ভালো ভাবে নিশ্চিৎ হতে পারবেন যে মৃত্যুর পরও আপনার বাবার শুক্রাণু বেঁচে আছে এবং আপনার মা আপনার জন্য ভাইবোন উৎপাদন করা অব্যাহত রাখবে।

এখান থেকে আমরা যে উপসংহারে পৌঁছাতে পারি সেটি হচ্ছে যদি আপনি ভাইবোনের প্রতিপালন এবং প্রতিরক্ষাকারী সৈন্য কীট পতঙ্গদের প্রপঞ্চটি নিয়ে কৌতূহলী হয়ে থাকেন, আমাদের তাহলে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে সেই সব প্রজাতিদের দিকে যেখানে স্ত্রী সদস্যরা সারা জীবনের জন্য শুক্রাণু সঞ্চয় করে। পিপড়া, মৌমাছি আর বোলতাদের ক্ষেত্রে, যেমনটি অধ্যায় ১০ এ আলোচনা করা হয়েছে একটি বিশেষ জিনগত অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য নিয়ে– হ্যাপলোডিপ্লয়ডি– যা তাদেরকে বেশী মাত্রায় সামাজিক কীট হবার জন্য প্রভাবিত করে। আমি এখানে যে যুক্তিটি প্রস্তাব চেষ্টা করছি সেটি হচ্ছে– সেটি ঘটার জন্য হ্যাপলোডিপ্লয়ডি একমাত্র কারণ নয়। আদর্শ কোনো পরিস্থিতিতে সারাজীবনের জন্য শুক্রাণু সংরক্ষণ, কোনো একটি মাকে জিনগতভাবে মহামূল্যবান হিসাবে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে কমপক্ষে একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং যাকে পরার্থবাদী সহযোগিতা দেয়া যুক্তিযুক্ত, ঠিক যে পরিমান সাহায্য কোনো হুবহু যমজ পাবার দাবী রাখে।

(১২) এই মন্তব্যটি এখন আমাকে বিব্রত আর লজ্জিত করে। কারণ এরপর আমি জানতে পেরেছি যে সামাজিক নৃতত্ববিদরা মায়ের ভাইেয়র প্রভাব নিয়ে শুধুমাত্র কথাই বলেন না, অনেকেই এছাড়া আর খুব কম কিছুই বলেছেন। এই প্রভাবটি যা আমি পূর্বধারণা করেছিলাম, সেটির একটি পর্যবেক্ষণগত উপাত্ত নির্ভর বাস্তব সত্য বহু সংখ্যক সংস্কৃতিতে বহু দশক ধরেই লক্ষ করেছেন নৃতত্ত্ববিদরা, এবং বিষয়টি তারা বেশ ভালো করেই জানতেন। উপরন্তু যখন আমি প্রস্তাব করেছিলাম যে, সুনির্দিষ্ট কোনো হাইপোথিসিস, কোনো একটি সমাজে যেখানে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক বা ব্যাভিচারিতার ব্যাপক প্রচলন আছে, সেখানে মামারা বাবাদের তুলনায় অনেক বেশী পরার্থবাদী হয়, কারণ শিশুটির সাথে তাদের আত্মীয়তার সম্পর্কে তাদের অনেক বেশী আত্মবিশ্বাস থাকে (মূল বইয়ের পৃষ্ঠা ১৩৮)। আমি দুঃখজনকভাবে সেই সত্যটি খেয়াল করিনি যে, রিচার্ড আলেকজান্ডার ইতিমধ্যে সেই একই প্রস্তাবটি করেছিলেন (বিষয়টি স্বীকার করে একটি ফুটনোট এই বইটির প্রথম সংস্করণের পরবর্তী প্রকাশনাগুলোয় সংযুক্ত করা হয়েছিল); এই হাইপোথিসিসটি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে, যারা করেছেন তাদের মধ্যে আলেকজান্ডার নিজেই অন্যতম। নৃতত্ত্ববিদ্যার নানা গবেষণাপত্র থেকে সংখ্যাগত উপাত্ত সংগ্রহ করে এই গবেষণাটি এর পক্ষেই মতামত দিয়েছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *