০৮৬. রাবণের স্তবে সন্তুষ্ট হইয়া অম্বিকার অভয় দান

স্তবে তুষ্টা হয়ে মাতা দিলা দরশন।
বসিলেন রথে, কোলে করিয়া রাবণ।।
আশ্বাস করিয়া কন না কর রোদন।
ভয় নাই ভয় নাই রাজা দশানন।।
আসিয়াছি আমি আর কারে কর ডর।
আপনি যুঝিব যদি আসে শঙ্কর।।
অসিত-বরণী কালী কোলে দশানন।
রূপের ছটায় ঘন তিমির নাশন।।
অলকা ঝলকা উচ্চ কাদম্বিনী কেশ।
তাহে শ্যামরূপে নীল সৌদামিনী বেশ।।
কর পদ নখে শশী অলকা প্রকাশে।
বিম্বফল স্খলিত অধরে মন্দ হাসে।।
শোক গেল রাবণের দুঃখ বিনাশনে।
হইল আহ্লাদ চিত্ত দেবী দরশনে।।
নয়নে গলিত ধারা সবিনয়ে কয়।
দয়াময়ী বিনা মোরে সদয়া কে হয়।।
সাক্ষাতে করিলা স্তব রাজা লঙ্কেশ্বর।
রাম সনে সংগ্রামে চলিল অতঃপর।।
ছাড়ে ঘন হুহুঙ্কার গভীর গর্জ্জনে।
বাণ বরিষণ করে তর্জ্জন গর্জ্জনে।।
আগুসারি যুদ্ধে এল রাম রঘুপতি।
দেখিলেন রাবণের রথে হৈমবতী।।
বিস্ময় হইয়া রাম ফেলে ধনুর্ব্বাণ।
প্রণাম করিলা তাঁরে করি মাতৃজ্ঞান।।
বিভীষণে কন তবে ত্রিলোকের নাথ।
রাবণ বিনাশে মিতা ঘটিল ব্যাঘাত।।
কার সাধ্য বিনাশিতে পারে দশাননে।
রক্ষিছে রাবণে আজি হর-বরাঙ্গনে।।
ঐ দেখ রাবণের রথে বিভীষণ।
জলদ-বরণী-কোলে রাজা দশানন।।
দেখিয়া ধার্ম্মিক বিভীষণ সবিস্ময়।
প্রমাদ ঘটিল কি হইবে দয়াময়।।
বিষণ্ন হইয়া রাম বসিলা ভূতলে।
পরম বিমর্ষ হয়ে চিন্তিল সকলে।।
তারা যদি করিলেন এমন ব্যাঘাত।
তবে আর কে করিবে দশাস্যে নিপাত।।
উপায় নাহিক আর করিব কেমন।
দেখিয়া রামের চিন্তা চিন্তে দেবগণ।।
এ সময়ে হৈমবতী কি করিলা আর।
দেবারিষ্ট বিনাশে ব্যাঘাত চণ্ডিকার।।
বিধাতারে কহিলেন সহস্র-লোচন।
উপায় করহ বিধি যা হয় এখন।।
বিধি কন বিধি আছে চণ্ডী-আরাধনে।
হইবে রাবণ বধ অকাল-বোধনে।।
ইন্দ্র কন কর তাই বিলম্ব না সয়।
ইন্দ্রের আদেশে ব্রহ্মা করিবারে যায়।।
রাবণ বধের জন্য বিধাতা তখন।
আর শ্রীরামের অনুগ্রহের কারণ।।
এই দুই কর্ম্ম ব্রহ্মা করিতে সাধন।
অকালে শরতে কৈলা চণ্ডীর বোধন।।
দেবগণ সহিতে পূজিতে মহামায়।
এখানে চিন্তিত রাম কি হবে উপায়।।
আমা হৈতে নাহি হৈল রাবণ সংহার।
জনক-নন্দিনী সীতা না হৈল উদ্ধার।।
মিথ্যা পরিশ্রম কৈনু সঞ্চয় বানর।
মিথ্যা কষ্টে করিলাম বন্ধন সাগর।।
মিথ্যা করিলাম যত রাক্ষস সংহার।
লক্ষ্মণের শক্তিশেল ক্লেশমাত্র সার।।
অনুপায় সকলি হইল এইবার।
বিভীষণে কহেন কি হবে মিতা আর।।
নয়নেতে বহে জল শুখাইল মুখ।
তাহা দেখি বিভীষণের দুঃখে ফাটে বুক।।
বলে প্রভু আমার নাহিক সাধ্য আর।
আমা হৈতে হৈলে হৈত উপায় ইহার।।
এত শুনি কান্দেন আপনি রঘুরায়।
ধূলায় লোটায় ছিন্ন নীলোৎপল প্রায়।।
লক্ষ্মণ কান্দিছে আর বীর হনুমান।
সুগ্রীব অঙ্গদ নল নীল জাম্ববান।।
রোদন করিছে সবে ছাড়িছে সমর।
দেখিয়া রামের দুঃখ যতেক অমর।।
ইন্দ্ররাজ বিধাতারে সবিনয়ে কয়।
শ্রীরামের দুঃখ আর প্রাণে নাহি সয়।।