২১. হনুমান কর্ত্তৃক জাম্বুমালী ও অক্ষয়কুমার বধ

মহাযোদ্ধৃপতি তার নাম জাম্বুমালী।
প্রহস্ত যোদ্ধার বেটা বলে মহাবলী।।
রাবণ তাহাকে বলে করিয়া সম্মান।
আপন কটকে বান্ধি আন হনুমান।।
আদেশ পাইয়া বীর দিব্য রথে চড়ে।
হস্তী ঘোড়া ঠাট কত তার সঙ্গে নড়ে।।
বসিয়াছে হনুমান প্রাচীর উপর।
কটক লইয়া গেল তাহার গোচর।।
প্রথমে হইল দুইজনে গালাগালি।
বাণ বরিষণ করে বীর জাম্বুমালী।।
অসঙ্খ্যক বাণ মারে বানরের বুকে।
মুখে রক্ত উঠে তার ঝলকে ঝলকে।।
বাছিয়া বাছিয়া মারে চোখ চোখ শর।
হনুমানে বিন্ধিয়া সে করিল জর্জ্জর।।
হইলেন মহাক্রোধী পবন-নন্দন।
শালগাছ উপাড়িয়া আনে ততক্ষণ।।
বাহুবলে গাছ এড়ে বীর হনুমান।
রাক্ষসের বাণে গাছ হয় খান খান।।
শালগাছ ব্যর্থ গেল হইয়া চিন্তিত।
পর্ব্বতের চূড়া বীর আনে আচম্বিত।।
বাহুবলে এড়ে বীর পর্ব্বতের চূড়া।
জাম্বুমালী বাণেতে পর্ব্বত করে গুঁড়া।।
জিনিতে না পারে বীর হইল চিন্তিত।
তার ঘরের মুষল পাইল আচম্বিত।।
দুই হাতে তুলি বীর মুষল সত্বরে।
দোহাতিয়া বাড়ি মারে রথের উপরে।।
বাড়ি খাইয়া জাম্বুমালী গেল যমঘর।
যুদ্ধ জিনি বৈসে বীর প্রাচীর উপর।।
ভগ্ন-পাইক কহে গিয়া রাবণ গোচর।
জাম্বুমালী পড়ে বার্ত্তা শুন লঙ্কেশ্বর।।
ছত্রিশ কোটির যে প্রধান সেনাপতি।
সকলের তরে রাজা দিলেক আরতি।।
শুনি সত্য বিড়ালাক্ষ শার্দ্দূল প্রধান।
বীর ধূম্রলোচন সে রণে আগুয়ান।।
নানা অস্ত্র হাতে করি ধায় রড়ারড়ি।
হনুমানে মারিতে সবার তাড়াতাড়ি।।
নানা অস্ত্র সাত বীর এড়ে খরশান।
সবে বলে আমি ত মারিব হনুমান।।
সাত বীর আসিতেছে হনুমান দেখে।
নেউল প্রমাণ হয়ে প্রাচীরেতে থাকে।।
সাত বীর আসিয়া প্রাচীর পানে চায়।
লুকাইল হনুমান দেখিতে না পায়।।
প্রাণ লইলা পলাইল আমা সবা ডরে।
কি বলিয়া ভাণ্ডাইব রাজা লঙ্কেশ্বরে।।
ঘরে যাইতে সাত বীর করে হুড়াহুড়ি।
টান দিয়া আনে হনু বড় ঘরের কড়ি।।
নেউটিয়া ঘরে যাই সবাকার মন।
পাছু খেদাড়িয়া যায় পবন-নন্দন।।
কড়ি তুলি মালে মীর রথের উপর।
কড়ির বাড়িতে তারা যায় যমঘর।।
যুদ্ধ জিনি বৈসে বীর প্রাচীর উপর।
ভগ্নপাইক কহে গিয়া রাজার গোচর।।
যুদ্ধ জিনিলেক রাজা একটা বানর।
সাত বীর পড়িল শুনিল লঙ্কেশ্বর।।
অক্ষয় নামে রাজপুত্র করে বীরদাপ।
বানরে মারিতে তারে আজ্ঞা দিল বাপ।।
অক্ষয় আর ইন্দ্রজিৎ দুই সহোদর।
সে ইন্দ্রজিতের তুল্য যুদ্ধে ধনুর্দ্ধর।।
প্রসাদ দিলেক তারে নানা অলঙ্কার।
বিলাইতে দিল তারে চারিটা ভাণ্ডার।।
পিতৃ-প্রদক্ষিণ করি রথেতে চড়িল।
হস্তী ঘোড়া ঠাট কত সহিত চলিল।।
কটকের পদভরে কাঁপিছে মেদিনী।
অক্ষয় কুমারের ঠাট পাঁচ অক্ষৌহিণী।।
হনুমান বসিয়াছে প্রাচীর উপর।
রুষিয়া অক্ষয় কহে শুন রে বানর।।
অক্ষয় আমার নাম রাবণ-নন্দন।
নাহিক নিস্তার আজি বধিব জীবন।।
কোটি কোটি বাণ আজি করিব সন্ধান।
কেমনে রাখহ প্রাণ দেখি হনুমান।।
সন্ধান পূরিয়া বাণ ধনুকেতে জোড়ে।
বাণ ব্যর্থ করে পাছে চিন্তিত অন্তরে।।
লাফ দিয়া উঠে বীর গগন-মণ্ডলে।
যত বাণ এড়ে সব যায় পদতলে।।
কোপে বাণ ফেলে তার মাথার উপর।
বাণ ফুটে হনুমান হইল জর্জ্জর।।
হনু বলে রাজপুত্র দেখিতে ছাওয়াল।
বাণগুলো এড়ে যেন অগ্নির উথাল।।
লাফ দিয়া হনুমান তার রথে পড়ে।
রথখানা গুঁড়া করে একই চাপড়ে।।
রথের সারথি ঘোড়া হইল চুরমার।
অন্তরীক্ষে পলাইল অক্ষয়-কুমার।।
রাক্ষস পলায় ঊর্দ্ধে হনুমান কোপে।
লাফ দিয়া পায়ে ধরে চিলে যেন লোফে।।
দুই পা ধরিয়া বীর মারিল আছাড়।
ভাঙ্গিল মাথার খুলি চূর্ণ হৈল হাড়।।
যুদ্ধ জিনি বৈসে বীর প্রাচীর উপর।
কুমার পড়িল বার্ত্তা শুনে লঙ্কেশ্বর।।