০১. নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে গিয়ে মাকে তুলে দিতে এসেছিল অর্জুন। অবশ্য মা একা নন, জলপাইগুড়ি শহরের আরও সাতজন প্রৌঢ়া মায়ের সঙ্গে আছেন। ওঁরা দার্জিলিং মেলে কলকাতায় পৌঁছেই দুন এক্সপ্রেস ধরে প্রথমে হরিদ্বার যাবেন। এই মহিলাদের সংগঠন তৈরি হওয়ার পর তাঁরা আর কারও ওপর নির্ভর করবেন না বলে ঠিক করেছেন। বছরে দুবার নিজেরাই বেরিয়ে যাবেন ভারতবর্ষ দেখতে। এবার যাচ্ছেন হরিদ্বার হয়ে কেদারবদ্রীনাথ।

কেদারনাথ-বদ্রীনাথ যাওয়ার ইচ্ছে মায়ের অনেকদিনের। বেশ কয়েকবার অর্জুনকে বলেছেন সেকথা। বেড়াতে যেতে কার না ভাল লাগে। কিন্তু প্রতিবারই একটা না একটা ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় আর মাকে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এখন মায়েদের সংগঠন ঘরোয়া তৈরি হওয়ায় ওঁরা খুশি হয়েছেন। তবু যাওয়ার দিন সকাল থেকেই মায়ের মনখারাপ ছিল। তার ওপর দার্জিলিং মেলে জলপাইগুড়ি শহর থেকে ওঠা যাচ্ছে না। চার নম্বর গুমটিতে একটা অ্যাকসিডেন্ট হওয়ায় শহরে ট্রেন ঢুকছে না। জলপাইগুড়ি থেকে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে ট্যাক্সি করে যাওয়ার পর মা নিচু গলায় বলেছিল, তুইঙ্গে গেলে খুব ভাল লাগত।

দুটো ট্যাক্সি নিয়ে মহিলারা যাচ্ছিলেন। ওঁদের ট্যাক্সিতেও তিনজন আছেন। অর্জুন হেসে বলেছিল, এটা তোমাদের ঘরোয়া ভ্রমণ।

ঘরোয়ার অন্য সদস্যরা শুনতে পেয়ে হেসেছিলেন।

দার্জিলিং মেল ছাড়ল সাতটা পনেরো মিনিটে। অর্জুন মোটরবাইক আনেনি। তাকে জলপাইগুড়ির বাস ধরতে স্টেশন থেকে রিকশা নিতে হবে। বেশি রাত হয়ে গেলে বাস পাওয়া যাবে না। ট্রেনটা প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে গেলে সে সিঁড়ি বেয়ে ওভারব্রিজে উঠে এল। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনের আয়তন বেশ বড়। ওভারব্রিজে উঠে দেখা গেল অন্য প্ল্যাটফর্মে ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। অনেকটা পথ ছুটে আসার পর কিছুক্ষণের জন্যে স্টেশনে দাঁড়ানো ট্রেন দেখতে অর্জুনের খুব ভাল লাগে। খানিকক্ষণ পরে গেলেও জলপাইগুড়ির বাস পাওয়া যাবে, অর্জুন ট্রেনটাকে দেখতে লাগল। তার পেছন দিয়ে যাত্রী এবং কুলিরা ছোটাছুটি করছে। একজন রেলের লোক আসছিলেন, অর্জুন তাঁকে জিজ্ঞেস করল, এটা কোন ট্রেন দাদা?

কাঞ্চনজঙ্ঘা, আজ বিফোর টাইমে ঢুকছে। আসাম যাবে।

অর্থাৎ এই ট্রেন জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন দিয়ে যাবে। সেখানে নেমে রিকশা নিয়ে আধঘণ্টার মধ্যে বাড়ি পৌঁছে যাবে সে। অর্জুন বলল, আমি জলপাইগুড়ি যাব। একজনকে ট্রেনে তুলে দিতে প্ল্যাটফর্ম টিকিট কেটে ঢুকেছি। এখন কি ওই ট্রেনে যাওয়ার টিকিট কাটার সময় আছে?

রেলের কর্মচারী ঘড়ি দেখলেন, একটু রিস্ক হয়ে যাবে। টিকিট কাউন্টার অনেক দূরে। প্ল্যাটফর্ম টিকিট আছে তো? চলুন, আমি গার্ডকে বলে দিচ্ছি।

অর্জুনের খুব মজা লাগছিল। তার ফেরার কথা শিলিগুড়ি থেকে ছাড়া বাসে। বাসস্টপও বেশ দূরে। তার বদলে ট্রেনে গেলে সময় তো কম লাগবেই, বেশ ভালও লাগে।

আমাদের দেশের সরকারি কর্মচারীদের কাজকর্ম নিয়ে অনেক সমালোচনা করা হয়। কিন্তু তাঁদের মধ্যে সত্যিকারের কাজের লোক যদি না থাকতেন তা হলে দেশটা অচল হয়ে যেত। এই ভদ্রলোক সেই শ্রেণীতে পড়েন। গার্ডের সঙ্গে কথা বলে টিকিটের ব্যবস্থা করে দিয়ে তিনি চলে গেলেন

অর্জুন একটি দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় জায়গা খোঁজার জন্যে ট্রেনের পাশ দিয়ে হাঁটছিল, হঠাৎ তার নজর একটি মুখের ওপর পড়তেই সে খুব চমকে গেল। দ্বিতীয় শ্রেণীর স্লিপার কামরায় জানলার পাশে বসে আছেন অমল সোম। যদিও তাঁর মুখে দাড়িগোঁফের জঙ্গল তবু চিনতে অন্তত অর্জুনের অসুবিধে হওয়ার কথা নয়। পেছনে মাথা হেলিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে থাকার জন্যে তিনি অর্জুনকে দেখতে পেলেন না।

একটু সরে এসে অর্জুন ভাবতে লাগল এ কী করে সম্ভব। অমল সোম জলপাইগুড়ির বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন পাহাড়ে। সত্যসন্ধানে তাঁর আগ্রহ চলে গিয়েছিল। তিনি সন্ন্যাসী হননি কিন্তু নিজেকে জানার কারণে সংসার ত্যাগ করেছেন। মাঝে ফিরে এসেছিলেন কদিনের জন্যে, ইচ্ছে হয়েছিল বলেই এসেছিলেন। তখন তাঁকে আটকাবার চেষ্টা করেছিল অর্জুন, পারেনি।

অমল সোম না থাকলে অর্জুন কখনওই সত্যসন্ধানের কথা ভাবতে পারত না। এই মানুষটি প্রথমদিকে তাকে সহকারী হিসেবে সঙ্গে নিয়ে অনেক রহস্য সমাধান করেছেন। দিনের পর দিন ওঁর পাশে থেকে শিখেছে কী করে নিজেকে নির্লিপ্ত রেখে ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। অমল সোম যখন উধাও হয়ে গেলেন, তখন সেই প্রথম দিকটায় খুব অসুবিধে হত অর্জুনের। কিন্তু সেটা কাটিয়ে উঠতে বেশি দেরি হয়নি।

এই অমল সোমকে আসামগামী এক দ্বিতীয় শ্রেণীর কামরায় বসে থাকতে দেখবে বলে কল্পনাও করতে পারেনি অর্জুন। তার ইচ্ছে হচ্ছিল এখনই মানুষটার সামনে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, আপনি কোথায় যাচ্ছেন? এতদিন কোথায় ছিলেন? বাড়িঘর ছেড়ে আর কতদিন এভাবে নিখোঁজ থাকবেন?

কিন্তু নিজেকে সংযত করল অর্জুন। এসব প্রশ্ন করলে অমল সোম নিশ্চয়। বিরক্ত বোধ করবেন। এমন তো হতে পারে উনি জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে নেমে নিজের বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে স্টেশনেই তো সে দেখা করতে পারে। এই সময় এঞ্জিন হুইল দিতেই যাত্রীরা দৌড়ে ট্রেনে উঠতে লাগল। অর্জুন চটপট সামনের কামরার দরজা ধরল। ট্রেন চলতে শুরু করলেও ও দরজা থেকে সরল না। জলপাইগুড়ি রোডে পৌঁছনোর আগে অন্তত গোটাতিনেক স্টেশন পড়বে। অমল সোম তার কোনওটায় যে নামবেন না তার তো ঠিক নেই। তার উচিত ছিল অমল সোমের কামরায় উঠে খানিকটা দূরত্ব রেখে লক্ষ রাখা।

এই সময় টিকিট চেকার এসে বললেন, ভাই দরজা বন্ধ করে দিন। এই লাইনে সন্ধের পর প্রায়ই ডাকাতি হচ্ছে।

দরজা বন্ধ করে অর্জুন জিজ্ঞেস করল, ডাকাতরা ধরা পড়ছে না?

না। অন্তত আমি জানি না।

ট্রেনে ডাকাতি হচ্ছে এই খবর অর্জুনও শুনেছিল। এখন চেকার সেই কথা বলতে আশেপাশের যাত্রীরা সেই আলোচনায় মত্ত হলেন। ডাকাতরা যাত্রী সেজে ওঠে। কে ডাকাত কেনয় বোঝা যায় না। এই যে ট্রেন চলছে, এই কামরায় ডাকাত থাকতে পারে। রিজার্ভেশন নেই এমন লোককে তাই কখনও উঠতে দেওয়া উচিত নয়, ইত্যাদি, ইত্যাদি।

অর্জুনের রিজার্ভেশন নেই, এত অল্প দূরত্বে যাওয়ার জন্যে রিজার্ভেশন করার প্রয়োজন নেই বলে গার্ডসাহেব বলেছেন। অর্জুন ঘড়ি দেখল, পরের স্টেশনে যখন কামরা বদল করবেই তখন এইসব কথা গায়ে না মাখাই ভাল। তা ছাড়া কথাগুলো নেহাত মিথ্যে নয়।

হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি ভেসে এল। ছুটন্ত ট্রেনের যাত্রীরা চিৎকার করছে আর সেটা ভেসে আসছে পাশের কামরা থেকেই। এবং তখনই গুলির আওয়াজ কানে এল। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। ট্রেন ধীরে ধীরে গতি কমিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেই পাশের কামরা থেকে কয়েকজন লাফিয়ে নীচে নামল। অর্জুন দরজা খুলতে যাচ্ছিল কিন্তু অন্য যাত্রীরা বাধা দিলেন, খুলবেন না, খুলবেন না, ডাকাতি হচ্ছে। দরজা খোলা দেখলে ডাকাতরা এখানে উঠে আসবে। কেউ চিৎকার করল, আশ্চর্য। ট্রেন দাঁড়িয়ে গেল কেন? এরকম জায়গায় ট্রেন দাঁড় করিয়েছে কেন? রেলের পুলিশরা অন্য কামরা থেকে চলে এল। তাদের চেষ্টায় মিনিট কুড়ি বাদে ট্রেন ছাড়ল। পরের স্টেশনে ট্রেনটা থামামাত্র দরজা খুলে নেমে পড়ল অর্জুন। ততক্ষণে পাশের কামরার ক্ষুব্ধ যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে নেমে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। ডাকাতরা তাদের অনেককেই নিঃস্ব করে গেছে। ওই কামরায় কোনও রেল পুলিশ ছিল না কেন? এক যাত্রী যদি তাঁর অস্ত্র বের না করতেন তা হলে ডাকাতরা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে যেত। স্টেশন মাস্টারকে এইসব অভিযোগের জবাব দিতে হবে, নইলে ট্রেন আটকে থাকবে। গোলমাল ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছিল। কয়েকজন যাত্রীকে ডাকাতরা আহত করেছে, তাদের রেলের লোকরা নামিয়ে নিয়ে গেল শুশ্রুষার জন্যে। অর্জুন আক্রান্ত কামরায় উঠে এল। কামরাটা এখন প্রায় ফাঁকা। যারা বসে আছে তাদের মুখে এখনও আতঙ্কের ছাপ। কিন্তু অমল সোম নেই। যে জানলার পাশে তিনি বসে ছিলেন সেই জায়গাটা শূন্য।

অর্জুন কাছাকাছি একজনকে জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা, এখানে একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বসে ছিলেন, মুখে দাড়িগোঁফ, কোথায় গেলেন?

লোকটি বলল, কোথায় গেলেন তা কী করে বলব, তবে উনি না থাকলে আরও লোকের বারোটা বাজত। ডাকাতগুলো ওঁর কাছে টাকা চাইতেই উনি রিভলভার বের করে উঁচিয়ে ধরতেই ওরা পিছু হটল। ট্রেন স্টেশনে এসে থামার পর ওই দরজা দিয়ে নেমে গেলেন।

অর্জুন দ্রুত প্ল্যাটফর্মে নামল, স্টেশনটি অতি সাধারণ, প্ল্যাটফর্মের আলো তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে জ্বলছে। যেন জ্বলতে হয় বলেই জ্বলা। এক জায়গায় বেশ কিছু লোক দঙ্গল পাকিয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, বাকি ট্রেনের যাত্রীরা ঝালমুড়ি বা চা খেতে ব্যস্ত। অমল সোম যে এখন প্ল্যাটফর্মে নেই তা বুঝতে অসুবিধে হল না অর্জুনের।

ওর খুব আফসোস হচ্ছিল। কী দরকার ছিল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে দূর থেকে দেখে আড়ালে গিয়ে অনুসরণ করার? সোজা সামনে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারত, অমলদা, আপনি?

তার পরেই মনে হল, অমলদা যদি জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে না নামতেন, তা হলে দূরে কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই ছিল। আর সেখানে যেতে হলে তাঁকে আবার এই ট্রেনে উঠতে হবে। তিনি তো কারও সঙ্গে এখন লুকোচুরি খেলছেন না যে নিজেকে আড়ালে রেখেছেন। অর্জুনকে দেখে তাঁর গা-ঢাকা দেওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই, অবশ্য তিনি যে অর্জুনকে দেখেননি, এব্যাপারে সে একশোভাগ নিশ্চিত।

এই সময় আর-একটা কাণ্ড হল। ট্রেনযাত্রীদের সঙ্গে একে একে যোগ দিচ্ছিল স্থানীয় মানুষ। এই লাইনে রেল চলাচল নিয়ে তাদের যেসব অভিযোগ আছে তা এই সুযোগে জানাতে শুরু করল তারা। অর্জুন বুঝল এই ট্রেন কখন ছাড়বে তা কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়। রাতদুপুরে যদি জলপাইগুড়ি স্টেশনে নামে তা হলে বিপদে পড়তে হবে। অর্জুন ঠিক করল সে বাসে যাবে। ট্রেন লাইন থেকে বাসের রাস্তা খুব বেশি দূরে নয়।

স্টেশন থেকে বেরিয়ে কয়েক পা হাঁটতেই অন্ধকার শুরু হয়ে গেল। পথ পিচের নয় এবং দুধারে ল্যাম্পপোস্ট নেই। কিন্তু লোকজন ছুটছে স্টেশনের দিকে। যেন ওখানে মজার কোনও বটনা ঘটেছে। এই সময় একটা খালি রিকশা বেল বাজাতে বাজাতে ছুটে আসছিল। অর্জুন কোনওমতে সেটাকে থামিয়ে জিজ্ঞেস করল, ভাই, বাসস্টপ কতদূরে।

অনেক দূরে! হেঁটে গেলে ভোর হয়ে যাবে। লোকটা খ্যাক খ্যাক করে হাসল।

পোঁছে দিতে কত ভাড়া নেবে?

দশ টাকা। তার নীচে গেলে পোষাবে না। পেঁয়াজের দাম আবার বাড়ছে।

পেঁয়াজের দাম বাড়লে রিকশার ভাড়া কেন বাড়বে এ প্রশ্ন করা অবান্তর। কোনও আপত্তি না করে রাজি হয়ে গেল অর্জুন।

রিকশা ঘুরিয়ে রিকশাওয়ালা বলল, ভগবানের লীলা বোঝা দায়! সারাদিন রিকশা নিয়ে বসে ছিলাম, দশটা টাকা রোজগার হয়নি। অথচ যেই ট্রেন বন্ধ হল, পর পর প্যাসেঞ্জার পেয়ে গেলাম, দশ দশ কুড়ি।

তুমি আমার আগেও এখান থেকে প্যাসেঞ্জার নিয়ে গেছ।

হ্যাঁ, এক বাবুকে ছেড়ে দিয়ে এলাম এইমাত্র।

অর্জুনের খটকা লাগল, ভদ্রলোকের কি দাড়ি ছিল?

না তো! মাথার টাক একেবারে গলায় নেমে গেছে।

বর্ণনা শুনে হাসি পেল অর্জুনের। যাহোক, অমল সোম তা হলে রিকশা নিয়ে বাসস্টপের দিকে যাননি।

রাস্তাটা ফুড়ুত করে ফুরিয়ে গেল। বড় রাস্তার পাশে গোটা পাঁচেক দোকানে টিমটিমে আলো জ্বলছে। কয়েকটা পুলিশের গাড়ি হেডলাইট জ্বালিয়ে স্টেশনের দিকে ছুটে গেল। ভাড়া মিটিয়ে দিতেই রিকশাওয়ালা ছুটল স্টেশনের দিকে। দুটো বাস রেষারেষি করতে করতে শিলিগুড়ির দিকে চলে গেল। জলপাইগুড়ির দিকে যাওয়ার বাসের কোনও চিহ্ন নেই।

এখন রাত সাড়ে আটটা। অর্জুন দোকানগুলোর সামনে পৌঁছে একজনকে জিজ্ঞেস করল, জলপাইগুড়ি যাওয়ার বাস কোথায় দাঁড়ায় দাদা।

এখানেই।

এখন বাস আসবে তো?

কটা চান? সাড়ে দশটা পর্যন্ত এসেই যাবে।

ওপাশে একটা চায়ের দোকান। একটু চা খেলে মন্দ হয় না। বেঞ্চিতে বসে এক গ্লাস চায়ের অর্ডার দিল অর্জুন। আজকের রাতের খাবার মা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। কাল থেকে কাজের লোকের ওপর নির্ভর করতে হবে। চোখ বন্ধ করে চায়ের গ্লাসে চুমুক দিতে দিতে অর্জুন ভাবছিল এই সুযোগে রান্না নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করলে কেমন হয়?

এত রাতে শুধু চা খাচ্ছ কেন? সঙ্গে কিছু নিলে পারতে!

গলা শুনে চমকে মুখ তুলে তাকাতেই অর্জুন অমল সোমকে দেখতে পেল। সে তড়াক করে উঠে দাড়িয়ে প্রায় চিৎকার করে উঠল, অমলদা?

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে কী করছিলে?

মাকে দার্জিলিং মেলে তুলতে গিয়েছিলাম। আপনি আমাকে দেখেছিলেন?

পাশের কামরায় লাফ দিয়ে উঠতে দেখলাম বলে মনে হয়েছিল। তারপর, তোমাদের খবর কী? সবাই ভাল আছ তো? অমল সোম দাড়িয়ে ছিলেন।

হ্যাঁ। আপনি কি জলপাইগুড়িতে যাচ্ছেন?

সেরকমই ইচ্ছে ছিল।

একথা শোনার পর অর্জুনের আর চা খাওয়ার ইচ্ছে হল না। চায়ের দাম মিটিয়ে দিয়ে অমল সোমের সঙ্গে বাইরে এসে দাড়াল।

অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তো বাড়ি ফিরে যাচ্ছ?

আপনি?

আমি? এই কাছেই একটি ছেলের বাড়ি। ভাবছি তার সঙ্গে দেখা করব।

কে? আমি চিনি?

তুমি চিনবে কী করে? রেলে যারা ডাকাতি করে তাদের সঙ্গে তো তোমার সম্পর্ক থাকার কথা নয়! অমল সোম হাসলেন।

রেল ডাকাত?

হ্যাঁ। একটু আগে যারা আমাদের কামরায় ডাকাতি করেছিল তাদের মধ্যে সে ছিল। মুশকিল হল ওরা যেখানে ট্রেন থেকে নেমে পালিয়েছে সেই জায়গাটা এখান থেকে অন্তত মাইল পাঁচেক দূরে। পালিয়ে বারাস্তায় পৌঁছে যদি সরাসরি বাড়িতে ফিরে আসে তা হলেও এতক্ষণে পৌঁছেছে বলে মনে হয় না।

অর্জুন অবাক হয়ে গেল। অমল সোম এমন গলায় বললেন, যেন কোনও প্রিয়জনের সম্পর্কে কথা বলছেন। সে জিজ্ঞেস করল, ওই ডাকাতের বাড়িটা

আপনি চেনেন?

না, চিনি না। তবে চিনে নিতে পারব।

তা হলে তো পুলিশকে খবর দিলেই হয়!

আগে দেখি আমার ধারণাটা সঠিক কিনা। আচ্ছা!

অমলদা, আমি আপনার সঙ্গে যেতে চাই।

যাবে? বেশ তো, চলো। আমার আজকাল বেশিক্ষণ কথা বলতে ভাল লাগে না, তোমার অসুবিধে হতে পারে। অমল সোম হাঁটতে শুরু করলেন। এতক্ষণে অর্জুন লক্ষ করল একটা বড় চামড়ার মোড়া ছাড়া অমল সোমের সঙ্গে কোনও জিনিসপত্র নেই। উনি কোথায় ছিলেন, কদিনের জন্যে আসছেন তা জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে হলেও নির্লিপ্ত হয়ে হাঁটতে লাগল।

আধা অন্ধকারে দুজন আসছিল! অমল সোম তাদের জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা, মণ্ডলপাড়া কত দূরে?

একজন জবাব দিল, এই তো, ওপাশটা মণ্ডলপাড়া। কার বাড়ি যাবেন?

নামটায় একটু গোলমাল হচ্ছে। শিবু, মহাদেব বা শিবনাথ।

এই নামে তো মণ্ডলপাড়ায় কেউ নেই। কী করে?

সবাই জানে সে বেকার। কিন্তু ইদানীং রেলে ডাকাতি করছে।

সে কী! কী বলছেন আপনি!

হ্যাঁ ভাই। সেইজন্যেই তো দেখা করতে চাইছি।

আপনি কি পুলিশ?

দুর। আমাকে দেখে তো তা মনে হওয়ার কথা নয়।

তাকে দেখতে কেমন বলতে পারো?

নিশ্চয়ই। লম্বা, রোগা, কোঁকড়া চুল। তবে মনে হয় একটুও সাহসী নয়, উলটে ভিতুই বলা যায়।

এরকম একজনকে চিনি। চলুন তো?

দুজন আগে যাচ্ছিল, ওরা পেছনে। অর্জুন না জিজ্ঞেস করে পারেনি, অমলদা, ডাকাতরা তো অনেক ছিল, এই ছেলেটিকে কী করে আপনি ঠাওর করলেন?

কোনও কৃতিত্ব নেই আমার। ডাকাতি করার আগে ওরা যাত্রী সেজে ছড়িয়ে ছিটিয়ে কামরায় বসে ছিল। এই ছোকরা আর তার সঙ্গী বসে ছিল আমার পাশে। সঙ্গী সিনেমার গল্প করলেও ওর তাতে মন ছিল না। হঠাৎ বলল, মণ্ডলপাড়ার অনেক আগে নামতে হবে। সঙ্গীটি বলল, তুই খুব ঘাবড়ে আছিস ভোলানাথ। ছেলেটি প্রতিবাদ করল, অ্যাই আমার নাম ভোলানাথ নয়। সঙ্গী বলেছিল, তুই একটা গাধা। আসল নামে ডাকতে নিষেধ করেছে বস্, মনে নেই। তারপর ডাকাতি আরম্ভ হতেই ওরা স্বরূপ ধরল। কিন্তু এই ছেলেটি এত নার্ভাস ছিল, অমার দিকে ছুরি উঁচিয়েও ঠিকমতো ধরে রাখতে পারছিল না। যাকগে, এখানকার স্টেশনে নেমে জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারলাম মণ্ডলপাড়া বেশি দূরে নয়। ভাবলাম ছেলেটার খোঁজ নিয়ে যাই। অমল সোম যখন এইসব কথা বলছিলেন তখন ওরা একটা গ্রামের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। একটা মুদির দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে পথপ্রদর্শক দুজন কয়েকটা কথা বলে ঘুরে দাঁড়াল, না, ওই নামে কেউ এখানে থাকে না। তবে যে চেহারা বলছেন তার সঙ্গে একজনের মিল আছে।

কী নাম তার? অমল সোম জিজ্ঞেস করলেন।

বিশ্বনাথ মণ্ডল। বৈদ্যনাথ মণ্ডলের ছেলে।

অমল সোম হাসলেন, বাঃ, ওটাও তো ভোলানাথের নাম। তা বৈদ্যনাথবাবুর বাড়িটা একটু দেখিয়ে দেবেন?

দুজনে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে জানাল তারা ওই বাড়িতে যাবে না। বৈদ্যনাথ লোক সুবিধের নয়। সত্যি যদি গোলমেলে ব্যাপার থাকে তা হলে ওরা জড়াতে চায় না। এখান থেকে সোজা এগিয়ে গেলে বাঁ দিকে একটা বটগাছ পড়বে তার গায়ের বাড়িটা ওদের।

লোকদুটো চলে গেল না। মুদির দোকানের বেঞ্চিতে বসে পড়ল। অথচ ওরা নিশ্চয়ই একটু আগে কোনও কাজে বাসরাস্তা ধরে হাঁটছিল।

বটগাছের পাশের বাড়িটায় আলো জ্বলছিল। যদিও এই গ্রামে ইলেকট্রিক এসে গেছে তবু তার আলোয় তেজ নেই। বৈদ্যনাথবাবুর বাইরের ঘরের দরজা খোলা। সেখানে পৌঁছে দেখা গেল একজন বছর ষাটের মানুষ মাটিতে মাদুর পেতে শুয়ে আছেন।

অমল সোম ডাকলেন, বৈদ্যনাথবাবু আছেন?

কে? কে? ধড়মড়িয়ে উঠে বসলেন বৃদ্ধ। তাঁর পরনে লুঙ্গি, ঊধ্বাঙ্গ অনাবৃত। পাশে রাখা চশমা তুলে নাকের ওপর বসালেন।

আপনি আমাদের চিনবেন না।

অ। শহরের লোক বলে মনে হচ্ছে।

আমি এখন শহরের নই। এর নাম অর্জুন, জলপাইগুড়িতে থাকে। আমি অনেকদূর থেকে আসছি।

অ। তা কী করতে পারি?

অনেকটা হেঁটে এসেছি, একটু বসতে বলবেন না?

উদ্দেশ্য কী তানা জানলে, হেঁ হেঁ, বুঝতেই পারছেন, যে খারাপ দিনকাল হয়ে গেছে, তা আসুন, মাদুরে বসুন।

জুতো খুলে অমল সোমকে অনুসরণ করল অর্জুন। জুত করে বসে অমল সোম বললেন, আপনি তো এই গ্রামের সম্মানীয় ব্যক্তি।

ছিলাম। এখন পঞ্চায়েত নির্বাচনে হেরে গিয়ে একঘরে হয়ে আছি। জাল ভোট দিয়ে হারিয়ে দিল ওরা। এর আগেরবার পঞ্চায়েতের সুবাদে কিছু করতে পেরেছিলাম বলে এই বুড়ো বয়সে কিছু খেতে পারছি। যাকগে, উদ্দেশ্যটা বললেন না?

আপনার ছেলের নাম বিশ্বনাথ?

হ্যাঁ ছয় মেয়ের পর ওই ছেলে। বিশ্বনাথের কাছে মানত করে আমার স্ত্রী পেয়েছিলেন। জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান বলে আর কাশীতে গিয়ে পুজো দেওয়া হয়নি। কেন?

ছেলে কী করে?

কিসসু না। মানে এতকাল কিসসু করত না। তবে ইদানীং ব্যবসায় নেমেছে। অর্ডার সাপ্লাইয়ের ব্যবসা। গত সপ্তাহে দুই হাজার টাকা দিয়েছে আমাকে। প্রথম রোজগারের টাকা। বৈদ্যনাথকে বেশ গর্বিত দেখাল।

অমল সোম বললেন, বাঃ, খুব ভাল খবর। তা আপনার ছেলে যে অর্ডার সাপ্লাই করে, করার আগে সেই জিনিস তো বাড়িতে এনে রাখে, তাই না?

হ্যাঁ, উঠোনের পাশে একটা ঘর খালি পড়ে ছিল, ওটাকেই গুদামঘর করেছে। বৈদ্যনাথ কথা ঘোরালেন, কিন্তু আপনারা ছেলে সম্পর্কে এত প্রশ্ন করছেন কেন? মনে হচ্ছে ওর বিয়ের সম্বন্ধ নিয়ে এসেছেন?

অমল সোম হাসলেন, কিন্তু কথা বললেন না।

বৈদ্যনাথবাবু মাথা নাড়তে লাগলেন, না মশাই, ছেলের বিয়ে আমি এত তাড়াতাড়ি দেব না। কত আর বয়স! আগে ব্যবসায় ভাল করে দাঁড়াক, আমাকে মাসে অন্তত সাত-আট হাজার টাকা রেগুলার দিক, তারপর ভাবা যাবে।

অমল সোম বললেন, সে তো ঠিক কথা। ছেলে বাড়িতে আছে?

না, না। শিলিগুড়ি থেকে বাড়ি ফেরে শেষ বাস ধরে।

তা হলে তো অনেক রাত হবে। অতক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না। আপনি ওকে বলবেন আগামীকাল সকালে আমার সঙ্গে দেখা করতে। জলপাইগুড়ির হাকিমপাড়ায় গিয়ে অমল সোমের নাম বললে যে কেউ বাড়িটা দেখিয়ে দেবে। অমল সোম উঠে দাঁড়াতে অর্জুনও উঠল।

বৈদ্যনাথবাবু বসেবসেই জিজ্ঞেস করলেন, কেন? আপনার বাড়িতে যাবে কেন? আপনি কে জানি না, হুকুম করলেই সে আপনার বাড়িতে চলে যাবে?

সে না গেলে পুলিশ এখানে আসবে। শুধু তাকে নয়, আপনাকেও ধরে নিয়ে যাবে। বেশ কয়েক বছর হাজতে থাকতে হবে আপনাদের।

বৈদ্যনাথবাবু উঠে দাঁড়ালেন, আপনি আমাকে ভয় দেখাচ্ছেন? বাড়ি বয়ে এসে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছেন?

অমল সোম বললেন, ভয় দেখাচ্ছি কিনা সেটা ছেলের সঙ্গে কথা বললেই বুঝতে পারবেন। শ্রীমান ভোলানাথ আজ সন্ধেবেলায় ট্রেনে যা করেছেন তা ওর মুখ থেকে শুনতে এসেছিলাম, আপনিও শুনে নেবেন।

আমার ছেলের নাম বিশ্বনাথ, ভোলানাথ নয়।

ওই একই হল। ওর সঙ্গীরা ওকে ভোলানাথ বলে ডাকে, জেনে নেবেন। কথাগুলো বলে অমল সোম বেরিয়ে এলেন। বৈদ্যনাথবাবুর গলা দিয়ে কোনও শব্দ বের হচ্ছিল না। পাশাপাশি হাঁটতে হাঁটতে অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি যখন এত নিশ্চিত তখন ছেলেটাকে পুলিশে না ধরিয়ে দিয়ে এইভাবে চলে এলেন কেন?

অমল সোম বললেন, প্রথম কথা, এখানে আসার আগে আমি সম্পূর্ণ নিশ্চিত ছিলাম না। দ্বিতীয় কথা, আমি পুলিশকে বললে পুলিশ নিশ্চয়ই ওকে ধরত কিন্তু প্রমাণ করতে পারত না। আমি ছাড়া আর কেউ সাক্ষী হিসেবে এগিয়ে আসবে বলে মনে হয় না। ওই কামরায় যারা ছিল তারা আজ রাতের পর যে যার জায়গায় চলে যাবে। পুলিশ তাদের হদিস পাবে না। শুধু একজনের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর বিচারক করবেন বলে মনে হয় না। তৃতীয়ত, ডাকাতির সময় এই ছেলেটি তার সঙ্গীদের বারংবার মনে করিয়ে দিচ্ছিল যেন কারও ওপর অত্যাচার না করা হয়। এটা থেকে মনে হয়েছে ছেলেটা এখনও ওই লাইনে দক্ষ হয়ে ওঠেনি। আমার হাতে রিভলভার দেখামাত্র চুপচাপ চলে গেছে দরজার কাছে।

আপনার মনে হচ্ছে ছেলেটা কাল সকালে দেখা করবে?

দুটো ঘটনার যে-কোনও একটা ঘটতে পারে। প্রচণ্ড ভয় পেয়ে নার্ভাস হয়ে ছেলেটা আমার কাছে আসতে পারে। ওর বাবা যদি জানান আমি পুলিশ নই তা হলে ধরা পড়ার আগে এই রাস্তাটা খুঁজবে। নয়তো ওর দলবলকে গিয়ে বলবে, তারা আমাকে আক্রমণ করে মুখ বন্ধ করতে চাইবে। শেষটা হওয়াই স্বাভাবিক, কারণ অপরাধীরা সাক্ষীর বেঁচে থাকা পছন্দ করে না। অমল সোম দাঁড়িয়ে গেলেন, কারণ সেই দুই পথপ্রদর্শক মুদির দোকান ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

ওর বাপের দেখা পেয়েছেন? একজন জানতে চাইল। হ্যাঁ। আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।

তা হলে বলছেন, এই বিশু ছোকরা ট্রেন-ডাকাতি করছে?

তাই যদি করে তা হলে আপনারা কী করবেন?

আমরা পঞ্চায়েত ডেকে ওকে গ্রাম থেকে তাড়িয়ে দেব।

তখন ও আরও বড় ডাকাতি করবে, তাই না? হয়তো সঙ্গীদের নিয়ে আপনাদের ওপর বদলা নেবে। অবশ্য যা করার তা আপনারা নিশ্চয়ই করতে পারেন। নমস্কার। অমল সোম আবার হাঁটতে শুরু করলেন।

বাসরাস্তায় এসে অর্জুন জিজ্ঞেস করল, আপনি কি জলপাইগুড়ির থানায় ব্যাপারটা জানিয়ে রাখবেন?

না। না। কয়েকটা দিনের জন্যে এসেছি, ঝামেলা বাড়ানোর কী দরকার। দ্যাখো, আমি ইচ্ছে করেই ওর বাবাকে বলিনি হেলে কী করছে। কিন্তু ওই দুজনকে বলেছি। কাল সকাল হওয়ার আগেই পুরো গ্রামের মানুষ জেনে যাবে বিশ্বনাথ ব্যাঙ্ক ডাকাতি করে। ওর বাবার ওপর যাদের রাগ আছে তারা খবরটা বেশি করে ছড়াবে। এই চাল বিশ্বনাথের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়। ও অথবা ওরা আসবেই।

একটা বাস পাওয়া গেল। ওরা যখন জলপাইগুড়ির কদমতলায় বাস থেকে নামল তখন রাত প্রায় এগারোটা। অর্জুন বলল, অমলদা, অনেক রাত হয়ে গেছে, রাতটা আমাদের বাড়িতে থেকে যান।

তোমাদের বাড়ি খালি পড়ে আছে, তাই না। বেশ চলো। এত রাতে শ্রীমান হাবুকে জাগিয়ে খাবার তৈরি করতে বলা অন্যায় হবে। তোমার ওখানে সে ব্যবস্থা

আছে তো?

মা যাওয়ার আগে অনেকটা তৈরি করে গেছেন। কোনও সমস্যা হবে না।