কৃষকের ভাগ্য-গ্রহ

কৃষকের ভাগ্য-গ্রহ
রচনাকাল ৫. ৪. ১৩৫৯
১১. ৫. ১১৩৬৩

প্রকৃতির শক্তি মহাশক্তি। সে শক্তি রোধ করিবার ক্ষমতা বাহারও নাই। জড় পদার্থ হইতে উদ্ভিদ, কীট, পতঙ্গ, পশু, পাখি ইত্যাদি সবই প্রকৃতির নিয়মের অধীন। জীবদলে মানুষই উচ্চস্তরে অধিষ্ঠিত। তাই সে প্রকৃতির সহিত নানারূপ বুঝাঁপড়া করিতেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ পারিতেছে না। মানুষও নানাদিক দিয়া প্রকৃতির অধীন হইয়া আছে। তথাপি ইতর প্রাণী যেরূপ রৌদ্রে পোড়, বৃষ্টির জলে ভিজে, শীতে কঁপে ও গ্রীষ্মে হাঁপায়, মানুষ ঐ সকল অসুবিধা ততটা ভোগ করে না। সে রোদ-বৃষ্টিতে ছাতা, শীতে কম্বল ও গ্রীষ্মে পাখা ব্যবহার করে।

জোয়ার বা ভাটা রোধ করিতে না পারিলেও কখন জোয়ার বা কখন ভাটা হইবে, তাহা মানুষ জানে এবং পূর্বাহ্নেই সে তাহার কার্যোপযোগী ব্যবস্থাদি করিয়া লইতে পারে। ফলত মানুষ প্রকৃতির গতিরোধ করিতে পারে না বটে, কিন্তু প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর কারণ আবিষ্কারকরত ঘটনা ঘটিবার পূর্বে নিজেদের সুখ-সুবিধার ব্যবস্থা করিতে ও অসুবিধার জন্য সতর্ক হইতে পারে। কিন্তু আমি এই কথা বলিতেছি না যে, মানুষ সকল প্রকার প্রাকৃতিক ঘটনারই কারণ আবিষ্কার করিতে পারিয়াছে।

জন্তু অপেক্ষা উদ্ভিদের উপর প্রকৃতির প্রভাব অধিক। শীত, গ্রীষ্ম বা বৃষ্টি জীবজগত হইতে উদ্ভিদজগতকে অধিক প্রভাবিত করিয়া থাকে। তদুপরি ওষধি বা বর্ষজীবী উদ্ভিদের উপর অত্যধিক ক্রিয়া করিয়া থাকে। বর্ষজীবীরা অধিকাংশই কৃষিজাত উদ্ভিদ। কাজেই প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা সুযোগ কৃষককেই ভোগ করিতে হয় বেশি।

কৃষিজাত ফসলের উপর বৃষ্টির প্রভাব অপরিসীম। সময়মতো পরিমিত বৃষ্টি যেমন ফসলের উন্নতিসাধক, তেমন অসময়ে বৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি ফসলের জীবননাশক। সাময়িক অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির দরুন পশু, পাখি বা মানুষের বংশবৃদ্ধি বোধ হয় কম হয় না, কিন্তু আম কাঁঠাল গাছে পূর্ণ ফল ফলে না। তবে ঐ সকল গাছ বাঁচিয়াই থাকে। কিন্তু তিল, মরিচ, মুগ, মুশুরি ইত্যাদি ফসলের গাছ প্রায়ই মরিয়া যায়। তাই অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টির দরুন ডাক্তার, মোক্তার, আমল, মহাজনদের বিশেষ কোনো ক্ষতি না হইলেও চাষীকুল হয় সর্বস্বান্ত। কাজেই চাষীকে আজীবন চিন্তা করিতে হইতেছে আবহাওয়া সম্বন্ধে এবং চাষীদের চিরঅভ্যাস হইয়াছে আকাশ পানে। তাকানো।

আমি ১৩২৬ সালের কার্তিক মাসে প্রথম কৃষিকাজ আরম্ভ করি এবং আজ পর্যন্ত হাতে লাঙ্গলে চাষাবাদ করিতেছি। তিন-চারি বৎসর চাষাবাদের পর হইতেই একটি দারুণ অসুবিধা অনুভব করিতেছিলাম। সেই অসুবিধাটি হইতেছে সময়মতো বৃষ্টি না হওয়া। চাষাবাদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধির সাথে সাথে প্রকৃতির নিয়মের রাজ্যে অনিয়মের বাড়াবাড়ি দেখিয়া আমার পূর্বের অনুভূতি ভাবনায় পরিণত হইল এবং সতত মনে কতগুলি প্রশ্ন জাগিতে লাগিল। প্রশ্নগুলি এই —

১. বৎসরগুলি সবই একরূপ। অর্থাৎ ছয়-ঋতু-বিশিষ্ট। তবে দুইটি বৎসরের একই ঋতুর আবহাওয়া একই মাপের হয় না কেন?

 ২. বৈশাখ মাস সকলই একরূপ। অর্থাৎ গত বৎসরের বৈশাখ আর এই বৎসরের বৈশাখ একরূপ। তবে উভয় বৈশাখে একই তারিখে বা একই মাপে ঝড়-বৃষ্টি হয় না কেন?

 ৩. অমাবস্যা তিথি সবই একরূপ। তবে ওই বৎসরের ভাদ্র মাসের অমাবস্যায় মাঠে জল, আকাশে মেঘ ও বৃষ্টি হইল –এই বৎসর ঐ মাসে, ঐ তিথিতে মাঠে জল, আকাশে মেঘ ও বৃষ্টি হইল না কেন?

৪. গত বৎসর যে ঋতুতে, যে মাসে, যে ফসলে, যেই জাতীয় পোকা জন্সিল –এই বৎসর সেই ঋতুতে, সেই মাসে, সেই ফসলে, সেই জাতীয় পোকা জলি না কেন?

৫. প্রকৃতি কি?

৬. প্রকৃতির নিয়ন্তা কে? ইত্যাদি।

আমার অন্তরের প্রশ্ন অন্তরে থাকিল, সমাধানের পথ খুঁজিয়া পাইতেছিলাম না। যেহেতু আমার শিক্ষা গ্রাম্য পাঠশালায় দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত। কাজেই জ্ঞানও ততটুকু। আমাদের পল্লীপ্রধানদের অনেকের কাছে প্রশ্ন কয়টি জিজ্ঞাসা করায় জবাব পাইলাম –“ওইসব আল্লাহর কুদরত।”

যে খেয়াল আমাকে পাইয়া বসিল তাহা ছাড়াইতে পারিলাম না। মনের কোণে থাকিয়া উহা আমাকে সতত ভাবাইতে লাগিল। অনেক খোঁজ-খবর লইয়া ও ভাবিয়া আলোচ্য প্রশ্নগুলি সম্বন্ধে আমি যে সমাধানে পৌঁছিয়াছি, তাহার পরীক্ষা ও সত্যাসত্য নিরূপণের জন্য বিষয়টি সুধীমণ্ডলীর কাছে উপস্থিত করিলাম।

আমার মতে পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্রশ্নের সমাধান হইলে বাকি প্রশ্নগুলির সমাধান সহজ হইবে। তাই আমি প্রথমে পঞ্চম ও ষষ্ঠ প্রশ্নের আলোচনায় প্রবৃত্ত হইব।

যে সকল ঘটনা কোনো মানুষ বা প্রাণী কর্তৃক ঘটে না, তাহাই প্রাকৃতিক ঘটনা। কোনো ঘটনা ঘটাইতে হইলে তাহার মূলে একটি শক্তি থাকা চাই। যাবতীয় প্রাকৃতিক ঘটনার মূলে নিহিত আছে—তাপ, আলো, আকর্ষণ, বৈদ্যুতিক ও চৌম্বক ইত্যাদি শক্তি। ইহারা সৌরজগতের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অবস্থায়

থাকিয়া বিভিন্ন ঘটনা ঘটায়া উহাকেই আমরা প্রাকৃতিক ঘটনা বলি। প্রাকৃতিক ঘটনা অনেক ঘটিতেছে। দিবা-রাত্রি, জোয়ার-ভাটা, শীত-গ্রীষ্ম, ভূমিকম্প, উল্কাপাত ও ধূমকেতুর উদয়াবধি সকলই প্রাকৃতিক ঘটনা। কিন্তু ঐ সকল আমার আলোচনার বিষয় নহে। আমার আলোচনার বিষয় হইল শুধু আবহাওয়া। অর্থাৎ মেঘ, বৃষ্টি, বাতাস ও নদীর জলের হ্রাস-বৃদ্ধি ইত্যাদি।

অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভিন্ন শক্তির ক্রিয়া যতটুকুই থাকুক না কেন, আবহাওয়া পরিচালনে তাপ ও আকর্ষণ শক্তিই সমধিক কার্যকর। কাজেই তাপ ও আকর্ষণের বিষয়ই আমি বিস্তারিত আলোচনা করিব।

ভূপৃষ্ঠে তাপের একমাত্র উৎস হইল সূর্য। যদিও ভূগর্ভে প্রচুর তাপ নিহিত আছে, তাহা ভূ পৃষ্ঠের শীতলস্তর ভেদ করিয়া আসিয়া আবহাওয়া পরিচালনে ব্যতিক্রম ঘটাইতে পারে না।

বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, ভূপৃষ্ঠের যে অংশ যখন সূর্যোত্তাপ বেশি পায়, তখন সে অংশের বায়ু উত্তপ্ত হয় এবং তাহা শীতল বায়ু অপেক্ষা ওজনে কম হওয়ায় উপরে উঠিয়া যায় ও পার্শ্ববর্তী স্থান হইতে শীতল বায়ু আসিয়া উষ্ণ বায়ুর শূন্যস্থান পূরণ করে। ইহার ফলে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। এই বায়ুপ্রবাহ উত্তরায়নে উত্তরদিকগামী এবং দক্ষিণায়নে দক্ষিণদিকগামী হইয়া থাকে। ইহার প্রচলিত নাম মৌসুমী বায়ু। সূর্যের তাপই এই বায়ুপ্রবাহের একমাত্র কারণ। যখন এই বায়ু জলভাগের উপর দিয়া আসে, তখন প্রচুর জলীয় বাষ্প বহন করিয়া আনে এবং স্থলভাগের উপর দিয়া প্রবাহিত হইবার সময় বৃষ্টিপাত হয়। অবশ্য পর্বতাদির অবস্থানের উপর বৃষ্টিপাতের তারতম্য নির্ভরশীল।

সূর্যের উত্তাপই যদি উক্ত বায়ুপ্রবাহের একমাত্র কারণ হয়, তবে অমাবস্যা, পূর্ণিমা বা তাহার নিকটবর্তী তিথিতে উক্ত বায়ুপ্রবাহের বেগ বৃদ্ধি পায় কেন? চাঁদের উত্তাপ নাই, আছে শুধু আকর্ষণ। তাহা হইলে বলিতে হয় যে, চাঁদের আকর্ষণী শক্তিও বায়ুপ্রবাহের উপর ক্রিয়া করে।

বিজ্ঞান এইকথাও বলে যে, চাঁদের আকর্ষণেই জোয়ার-ভাটা ও জোরকটাল-মরাকটাল হয়। অর্থাৎ অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে নদীর জল বৃদ্ধি পায়। ইহাই যদি স্থির সিদ্ধান্ত হয়, তবে প্রত্যেক অমাবস্যা বা পূর্ণিমায় বায়ুপ্রবাহের বেগবৃদ্ধি এবং জলস্ফীতি হয় না কেন?

উক্ত বিষয়সমূহ পর্যালোচনা করিলে ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, সূর্যের তাপ ও চাঁদের আকর্ষণ ছাড়াও এমন কোনো শক্তি আছে, যাহা জলবায়ু পরিচালনে বিশেষভাবে ক্রিয়াশীল। আমার মনে হয় যে, সেই শক্তিটি হইল গ্রহদের আকর্ষণ।

বস্তু মাত্রেই একে অন্যকে আকর্ষণ করে। আকর্ষণী শক্তি নির্ভর করে উভয়ের ওজন ও দূরত্বের উপর। কোনো বস্তুর ওজন যত অধিক হয়, তাহার আকর্ষণী শক্তিও তত অধিক হয়। পক্ষান্তরে বস্তুদ্বয়ের দূরত্ব যত অধিক হয়, তাহাদের আকর্ষণী শক্তি তত কমিয়া যায়।

সৌরজগতের সীমানার মধ্যে সৌরাকাশে যত বস্তুপিণ্ড আছে, তাহারা সকলেই একে অন্যকে ন্যূনাধিক আকর্ষণ করে। চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ-উপগ্রহ, ধূমকেতু, উল্কাপিণ্ড এমনকি গ্রহকণিকাগুলিও (minor planets) কিছু না কিছু আকর্ষণ করিতে ছাড়ে না। বলা বাহুল্য, যে অন্যকে আকর্ষণ করে, সে নিজেও অন্যের দ্বারা আকৃষ্ট হয়।

পৃথিবী যেমন স্বীয় আকর্ষণী শক্তির দ্বারা চন্দ্রকে বাঁধিয়া নিজের চতুর্দিকে ঘুরাইতেছে, তেমন সে নিজেও চন্দ্রের দ্বারা আকৃষ্ট হইতেছে। ইহারই ফলে হইতেছে জোয়ার-ভাটা ইত্যাদি। কিন্তু সৌরাকাশে এত অধিক বস্তুপিণ্ড থাকিতে চন্দ্র একাই পৃথিবীকে আকর্ষণ করিতেছে না। সৌরাকাশের যাবতীয় বস্তুপিণ্ডই তাহাদের নিজ নিজ সাধ্যমতো পৃথিবীকে আকর্ষণ করিতেছে।

এইখানে একটি প্রশ্ন থাকিয়া যায় যে, সৌরাকাশের বাহিরে বিশাল নক্ষত্র জগতে যে কোটি কোটি নক্ষত্র বিরাজ করিতেছে, তাহারা কি পৃথিবীকে আকর্ষণ করিতেছে না?

 জ্যোতির্বিদগণ বলেন যে, সৌরজগতে গ্রহগুলি যেমন সূর্যকে কেন্দ্র করিয়া এক চক্রাকার পথে অনবরত ঘুরিতেছে, তেমন নক্ষত্র জগতে নক্ষত্রগুলিও এক কেন্দ্রের চতুর্দিকে চক্রাকার পথে ঘুরপাক খাইতেছে। নক্ষত্র জগতের এক পাক শেষ করিতে সময় লাগে প্রায় ২২২ কোটি বৎসর। আমাদের সূর্য এই নক্ষত্র জগতের কেন্দ্র হইতে প্রায় ৩০ হাজার আলোকবর্ষ দূরে থাকিয়া অন্যান্য নক্ষত্র সহ প্রতি সেকেণ্ডে প্রায় ১৭৫ মাইল বেগে নক্ষত্র জগতের কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করিতেছে। কেন্দ্রের নিকট হইতে ক্রমে দূরের নক্ষত্রের গতিবেগ অল্প।

 উপরোক্ত মতে প্রতি মুহূর্তেই নক্ষত্রগুলি স্থান পরিবর্তন করিতেছে এবং গ্রহাদি সহ আমাদের। সূর্যও (নক্ষত্র জগতে) স্থান পরিবর্তন করিতেছে।

বিজ্ঞানীগণ আরও বলেন যে, যখন কোনো দুইটি পদার্থ নিকটবর্তী হইতে থাকে, তখন তাহাদের আকর্ষণী শক্তি বৃদ্ধি পাইতে থাকে এবং যখন তাহারা পরস্পর হইতে দূরে সরিতে থাকে, তখন তাহাদের আকর্ষণী শক্তি ক্রমে হ্রাস পাইতে থাকে। কিন্তু কোনো নির্দিষ্ট দূরত্ব পার হইয়া গেলে তখন উভয়ের মধ্যে বিকর্ষণ দেখা দেয়। এমতাবস্থায় কোটি কোটি নক্ষত্রের ভিন্ন ভিন্ন দূরত্ব হেতু কোনো কোনো নক্ষত্র পৃথিবীকে আকর্ষণ করে, আবার কোনো কোনো নক্ষত্র করে বিকর্ষণ। আকর্ষণ ও বিকর্ষণে কাটাকাটি হইয়া পৃথিবীর ভারসাম্য অক্ষত অবস্থায় থাকাই সম্ভব।

দ্বিতীয়ত, স্থানপরিবর্তনশীল বহু কোটি নক্ষত্রের আকর্ষণী ও বিকর্ষণী শক্তি পৃথিবীর উপর কতটুকু কাজ করিতেছে, তাহার পরিমাণ নির্ধারণ করা দুরূহ। যেহেতু কল্পনাতীত গতিবেগ থাকা। সত্ত্বেও মানব সভ্যতার প্রথম হইতে আজ পর্যন্ত কোনো নক্ষত্রের স্থান পরিবর্তন নজরে পড়ে নাই বা কয়েক শত বৎসরের মধ্যে খুব শক্তিশালী দূরবীনেও কোনো নক্ষত্রের স্থান পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় নাই। বিশেষত যে সকল নক্ষত্রের আলো প্রতি সেকেণ্ডে ১,৮৬,০০০ মাইল বেগে চলিয়া পৃথিবীতে পৌঁছিতে ৩-৪ বৎসর হইতে কয়েক লক্ষ বৎসর পর্যন্ত পথে কাটাইয়া দেয়, সেই সকল নক্ষত্রের স্থান পরিবর্তন (দূরত্ব পরিবর্তন) হেতু পৃথিবীর উপর তাহাদের যে আকর্ষণ-বিকর্ষণের তারতম্য হয় –তাহা দিন, মাস, ঋতু বা বৎসর কেন, শতাব্দীতেও নগণ্য। নক্ষত্রপিণ্ড সম্বন্ধে যে কথা, নক্ষত্র জগতের বাহিরের নীহারিকারাজি সম্বন্ধেও সেই একই কথা।

কাজেই আলোচ্য প্রবন্ধে শুধু চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ-উপগ্রহদের লইয়া আলোচনা করিব।

.

সৌরাকাশের যাবতীয় বস্তুপিণ্ডের মধ্যে সূর্য সর্বাপেক্ষা ওজনে ভারি এবং চন্দ্র পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা নিকটবর্তী। তাই চন্দ্র ও সূর্যের আকর্ষণী শক্তিই পৃথিবীর উপর সর্বাধিক কার্যকর। কিন্তু অন্যান্য গ্রহ-উপগ্রহগুলিও ক্রিয়াহীন নহে, উহারাও নিজ নিজ সামর্থ অনুযায়ী পৃথিবীকে আকর্ষণ করিতেছে। গ্রহ-উপগ্রহগুলি নিজ নিজ কক্ষে চলিয়া সতত স্থান পরিবর্তন করার ফলে উহাদের আকর্ষণ কখনও চন্দ্র-সূর্যের আকর্ষণের অনুকূল হয়, আবার কখনও প্রতিকূল হইয়া দাঁড়ায়। 

চিত্র ১

অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে সমান্তরাল রেখায় গ্রহদের অবস্থান
(গ্রহাদির আয়তন ও দূরত্বের অনুপাত রক্ষা করা হয় নাই।)

গ্রহদের অবস্থান

উপর হইতে নিচে

১. ভালকান ২. নেপচুন। ৩. শনি ৪. বৃহস্পতি ৫. চাঁদ (পূর্ণিমা) ৬. পৃথিবী ৭. সূর্য ৮. বুধ ৯. শুক্র ১০. মঙ্গল। ১১. ইউরেনাস ১২. প্লুটো

মনে করা যাক, সৌর জগতের এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একটি সোজা লাইন টানা গেল এবং গ্রহগুলি স্ব স্ব কক্ষে চলিতে চলিতে হঠাৎ একদিন সকল গ্রহই ঐ কম্পিত লাইনের উপর আসিয়া হাজির হইল। পৃথিবীর চন্দ্রও সেই দিন পূর্ণিমা দেখাইল। (চিত্র ১ দেখুন)।

চিত্রে দেখা যাইতেছে –পৃথিবীর এক দিকে আছে চন্দ্র, বৃহস্পতি, শনি, নেপচুন ও ভালকান। গ্রহ এবং অপর দিকে আছে সূর্য, বুধ, শুক্র, মঙ্গল, ইউরেনাস ও লুটো গ্রহ। কাজেই চন্দ্রের দিকে যে সকল গ্রহ-উপগ্রহ আছে, তাহাদের আকর্ষণ চন্দ্রের আকর্ষণের অনুকূল এবং সূর্যের দিকে যে সকল গ্রহ-উপগ্রহ আছে, তাহাদের আকর্ষণ সূর্যের আকর্ষণের অনুকূল বটে। স্বাভাবিক অবস্থায় অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে, যে ‘জোরকটাল’-এর সৃষ্টি হয়, এইরূপ অবস্থায় ঐ দিন। তদপেক্ষা বহুগুণ শক্তিশালী এক জোরকটালের সৃষ্টি হইবে। বলা বাহুল্য যে, অদ্যাবধি কোনো অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে চন্দ্র, সূর্য ও গ্রহ-উপগ্রহদের ঐরূপ অবস্থিতি ঘটে নাই বা ভবিষ্যতে কোনোদিন ঐরূপ ঘটিবে কি না, তাহা বলা যায় না। কিন্তু যদি কখনও ঐরূপ ঘটে, তবে সেদিন। পৃথিবীর আবহাওয়ার অতিমাত্রায় চঞ্চলতার ফলে এক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটিবে।

পক্ষান্তরে –ঐদিন যদি গ্রহগুলি চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর সঙ্গে এক সরলরেখায় না থাকিয়া আড়াআড়িভাবে থাকে, অর্থাৎ পৃথিবীকে কেন্দ্র করিয়া ৯০ ডিগ্রী কোণ করিয়া দাঁড়ায়, তাহা হইলে ঐদিন (অমাবস্যা বা পূর্ণিমায়) জোরকটালের কোনো ক্রিয়াই পরিলক্ষিত হইবে না। বরং কোনো সপ্তমী বা অষ্টমী তিথিতে যদি গ্রহদের ঐরূপ অবস্থিতি ঘটে, তাহা হইলে তখনই জোরকটালের লক্ষণ দেখা দিবে। অর্থাৎ বায়ুর বেগবৃদ্ধি, মেঘ, বৃষ্টি ও নদীতে জলস্ফীতি দেখা দিবে। (চিত্র ২ দেখুন)

সূর্য হইতে বিভিন্ন গ্রহের দূরত্ব বিভিন্ন এবং উহাদের গতিবেগও বিভিন্ন। কাজেই গ্রহগুলি কখনও চিত্র ১ বা ২-এ প্রদর্শিতমতে অবস্থান করিতে পারে না বা করে না। সৌরাকাশে গ্রহগুলি (নিজ নিজ কক্ষে) এলোমেলোভাবেই থাকিয়া যায়। (চিত্র ৩ দেখুন)

১ ও ২ চিত্রে প্রদর্শিত গ্রহদের অবস্থান ও উহাদের আকর্ষণ সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা হইলে চিত্র ৩-এ গ্রহদের অবস্থান দেখিয়া সহজেই বোধগম্য হইবে যে, ঐ সময় কোন্ কোন্ গ্রহ চন্দ্র বা সূর্যের সপক্ষে এবং কোন্ কোন্ গ্রহ বিপক্ষে থাকিয়া পৃথিবীকে আকর্ষণ করিতেছে। এমতাবস্থায় কোনো গ্রহের ওজন ও পৃথিবী হইতে উহার দূরত্ব জানা থাকিলে উহা কত জোরে পৃথিবীকে আকর্ষণ করিতেছে, তাহা হিসাব করিয়া বাহির করা যায় এবং পৃথিবীকে কেন্দ্র করিয়া চন্দ্র বা সূর্যের সঙ্গে ঐ গ্রহটি কত ডিগ্রী কোণ করিয়া আছে, তাহা হিসাব করিয়া জানা যাইতে পারে যে, ঐ আকর্ষণী শক্তি চন্দ্র বা সূর্যের আকর্ষণের অনুকূল না প্রতিকুল ক্রিয়া করিতেছে।

লেখকের জ্ঞানমতে সৌরাকাশে গ্রহের সংখ্যা ১০টি ও উপগ্রহ (চন্দ্র) ৩০টি। হয়তো আরও আবিষ্কৃত হইতে পারে। সে যাহা হউক, উপরোক্ত নিয়মে প্রতিটি গ্রহ ও উপগ্রহের আকর্ষণী শক্তির হিসাব করিয়া দেখা যাইতে পারে যে, কি পরিমাণ আকর্ষণী শক্তিসম্পন্ন কয়টি গ্রহ উপগ্রহ চন্দ্র বা সূর্যের অনুকূল ও কয়টি প্রতিকূল ক্রিয়া করিতেছে এবং চন্দ্র ও সূর্যের স্বাভাবিক আকর্ষণী শক্তির সঙ্গে পূর্বোক্ত গ্রহদের অনুকূল আকর্ষণী শক্তি যোগ এবং প্রতিকূল আকর্ষণী শক্তি বিয়োগ করিয়া জানা যাইতে পারে যে, ইহাতে চন্দ্র বা সূর্যের আকর্ষণী শক্তি কি পরিমাণ বাড়িল কিংবা কি পরিমাণ কমিল।

চিত্র ২

অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে আড়াআড়িভাবে গ্রহদের অবস্থান
(গ্রহাদির আয়তন ও দূরত্বের অনুপাত রক্ষা করা হয় নাই।)

অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে আড়াআড়িভাবে গ্রহদের অবস্থান

বাম হইতে ডানে

উপরে ১. ভালকান ২. প্লুটো ৩. ইউরেনাস ৪. বৃহস্পতি ৫. পৃথিবী এবং চাঁদ (পূর্ণিমা ও অমাবস্যা) ৬. মঙ্গল ৭. শনি ৮. নেপচুন।

 নিচে

 ৯. বুধ ১০. সূর্য ১১. শুক্র

আগামী যে কোনো পূর্ণিমা বা অমাবস্যা তিথিতে গ্রহ বা উপগ্রহগুলি সৌরাকাশের কোন অংশে কি অবস্থান করিবে, তাহা স্থির করিয়া আলোচ্য হিসাব মতে জানা যাইতে পারে যে, সেই পূর্ণিমা বা অমাবস্যা তিথির জোরকটালে আবহাওয়ার অবস্থা কিরূপ হইবে।

এযাবত যে সমস্ত বিষয় আলোচিত হইল, তাহা পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ করিবার সময় নিম্নলিখিত বিষয়সমূহ প্রণিধানযোগ্য।

.

# সৌরকলঙ্ক

 সৌরবিজ্ঞানীগণ বলেন যে, আমাদের চন্দ্রের গায়ে যেমন কলঙ্ক দেখা যায়, তেমন সূর্যের গায়েও কলক দেখা যায়। কিন্তু চন্দ্রের কলঙ্কের ন্যায় উহা সবসময় সূর্যের গায়ে একই রূপ থাকে না, কখনও বাড়ে, আবার কখনও কমিয়া যায়। সৌরকলঙ্কগুলি প্রতি এগারো বৎসর পর পর অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাইয়া থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় সূর্যের আলোকমণ্ডল (Photosphere) হইতে যে পরিমাণ তাপ ও আলো বিকীর্ণ হইয়া থাকে, সৌরকলহক বৃদ্ধি পাইলে তখন আর সেই পরিমাণ তাপ ও আলো বিকীর্ণ হইতে পারে না, কিছুটা কমিয়া যায়। ইহার ফলে পৃথিবীর আবহাওয়ার অবস্থায় কিছুটা পরিবর্তন হওয়া সম্ভব।

শোনা যায় যে, কোনো একজন বিজ্ঞানী কোনো একটি গাছের গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করিবার সময় দেখিয়াছিলেন যে, খুঁড়িটির কেন্দ্র হইতে স্তরে স্তরে উহার আয়তন বৃদ্ধি পাইয়াছে। স্তরগুলি সম্ভবত খুঁড়িটির বার্ষিক বৃদ্ধির চিহ্ন। তিনি আরও দেখিলেন যে, প্রতি এগারোটি স্তরের পর এমন একটি বিশেষ স্তর দৃষ্ট হয়, যাহা অন্য সকল স্তর হইতে ভিন্ন ধরণের। তিনি জানিতেন যে, প্রতি এগারো বৎসর পর পর সৌরকলঙ্ক বাড়ে। তাই তিনি মনে করিলেন যে, সেই খুঁড়িটির ঐ বিশেষ। স্তরগুলি সৌরকলঙ্কেরই প্রতিক্রিয়ার ফল। ইহাতে মনে হয় যে, সৌরকলঙক পৃথিবীর আবহাওয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করিয়া থাকে।

প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয়ের সত্যাসত্য নিরূপণের সময় সৌরকলঙ্কের অবস্থা ও তদ্বারা পৃথিবীর আবহাওয়া প্রভাবিত হইয়াছে কিনা, তাহা লক্ষ্য করা দরকার।

.

# মহাজাগতিক রশ্মি

সৌরজগতের বাহিরের বিশাল নক্ষত্র জগত বা মহাবিশ্ব হইতে মহাজাগতিক রশ্মি ইত্যাদি যে সকল শক্তিকণিকা অতি প্রচণ্ড বেগে আসিয়া পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ঢুকিতেছে, তদ্বারা পৃথিবীর আবহাওয়ার কোনো পরিবর্তন সাধিত হইতেছে কিনা, তাহাও লক্ষ্য করা দরকার।

চিত্র ৩

অমাবস্যা বা পূর্ণিমা তিথিতে এলোমেলোভাবে গ্রহদের অবস্থান
(গ্রহাদির আয়তন ও দুরত্বের অনুপাত রক্ষা করা হয় নাই।)

এলোমেলোভাবে গ্রহদের অবস্থান

উচ্চতার ক্রম অনুসারে উপর হইতে নিচে

১. পুটো ২. ভালকন ৩. ইউরেনাস ৪. পৃথিবী এবং চাঁদ (পূর্ণিমা ও অমাবস্যা) ৫. মঙ্গল ৬. সূর্য। ৭. নেপচুর ৮. বুধ ৯. শুক্র ১০. বৃহস্পতি ১১. শনি

.

# আঞ্চলিক আবহাওয়ার প্রভাব

ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, চরা পড়িয়া কোনো অঞ্চল হইতে সমুদ্র দূরে সরিয়া যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে কোনো এক বিশেষ অঞ্চলের আবহাওয়ার হঠাৎ পরিবর্তন হইতে পারে এবং অন্যান্য অঞ্চলেও উহার প্রতিক্রিয়া হইতে পারে। এতদ্বিষয় লক্ষ্য রাখা দরকার।

.

পারমাণবিক বিস্ফোরণ

প্রাচীনকালে পৃথিবীতে ঘূর্ণিঝড়ের (Cyclone) প্রকোপ কি রকম ছিল, তাহা আমরা জানি না। তবে বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া বিভাগে খবর লইয়া জানা যাইতে পারে যে, বিগত কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত উহার উৎপাত কি পরিমাণ ছিল। হয়তো খুব বেশি ছিল না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হইতে আমরা জানিতে পারি যে, বাংলাদেশে বিশেষত চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনা ইত্যাদি অঞ্চলে বিগত বাংলা ১২৮৩ সালে একটি প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হইয়াছিল। অতঃপর হইয়াছিল ১৩১৬ সালে (ঈদের দিন) একবার ও ১৩৪৮ সালে আর একবার। উহাদের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ছিল প্রায় ৩৩ ও ৩২ বৎসর –গড়ে ৩১ বৎসর। এই হিসাবে ১৩৮০ কিংবা ১৩৮১ সালে আর একবার ঐ শ্রেণীর ঘূর্ণিঝড় হওয়া সম্ভব।

আমেরিকানরা পরমাণু ভাঙ্গিয়া পারমাণবিক শক্তি উৎপন্ন করিতে সক্ষম হয় বিগত ১৯৪২ সালে এবং তদ্বারা পারমাণবিক বোমা তৈয়ার করিয়া উহার পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ ঘটায় মেক্সিকোর আলামো গোর্ডো মরুবক্ষের ট্রিনিটিতে ১৯৪৫ সালে এবং উহার কার্যকর ব্যবহার করে জাপানের নাগাসাকি ও হিরোশিমায় ঐ সালেই। তৎপর আর কোনো কার্যকর বিস্ফোরণ ঘটানো না হইলেও আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশ প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ করিয়াই চলিয়াছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অবস্থা জানি না, কিন্তু ইহার পর বাংলাদেশে বিশেষত উপকূল অঞ্চলে চলিতেছে ঘূর্ণিঝড়ের এক অনিশ্চয়তা। যে স্থানে বড় ঘূর্ণিঝড় হইত ৩২-৩৩ বৎসরে মাত্র একবার, সেই স্থানে এখন (১৯৪৫ সালের পর) প্রথমত ৭-৮ বৎসরে, পরে ৩-৪ বৎসরে, ইহার পর প্রতি বৎসরে এমনকি এক বৎসরে দুইবারও প্রচণ্ড ঘূর্ণিঝড় হইতে দেখা যাইতেছে। ইহাতে মনে হয় যে, আধুনিক কালের ঘূর্ণিঝড়সমূহ পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রতিক্রিয়ায় উদ্ভূত হইয়া থাকিবে এবং উহা পৃথিবীর আবহাওয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং আলোচ্য প্রবন্ধের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়ের সহিত এই বিষয়ের সম্পর্ক রাখা দরকার।

.

# মহাকাশ গবেষণার ফলাফল

 অধুনা বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীদের মধ্যে মহাকাশ ভ্রমণ ও নানাবিধ দুরূহ তত্ত্বের সন্ধান চলিতেছে। উহার মধ্যে আবহাওয়া সম্পর্কিত অনেক তথ্য পাওয়া যাইতে পারে বা পাওয়া গিয়াছে, যাহার বিস্তারিত বিবরণ আজও জনসাধারণের অজ্ঞাত এবং আমারও। মহাকাশ গবেষকদের আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্যাবলীর সহিত আলোচ্য প্রবন্ধের মৌলিক বিষয়ের সম্পর্ক রক্ষা করা আবশ্যক।

.

উপসংহার

প্রবন্ধের প্রথম দিকেই নিঃসংকোচে স্বীকার করিয়াছি যে, আমি একজন সাধারণ চাষী। সহৃদয় পাঠকবৃন্দ অতি সহজেই অনুমান করিতে পারেন যে, আমি আলোচ্য বিষয়ের সত্যাসত্য নিরূপণে কত অক্ষম। এমনও হইতে পারে যে, এইরূপ একটি কাল্পনিক প্রবন্ধ লেখা আমার পক্ষে হয়তো অসমীচীন। তথাপি কৃষক ভাইদের স্বার্থের জন্যই লিখিলাম।

কৃষকদরদী সুধীবৃন্দকে আলোচ্য বিষয়ের গুরুত্ব অনুধাবন করিতে এবং সদাশয় জ্যোতির্বিজ্ঞানীগণকে ইহার সত্যাসত্য নির্ধারণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করিতেছি।

পরিশেষে আলোচ্য প্রবন্ধের মূলতত্ত্বসমূহের সত্যাসত্য নির্ধারণ করিবার জন্য সদাশয় বাংলাদেশ সরকারের কৃষি বিভাগের শুভদৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি।