কমিউনিকেশন এবং আপেক্ষিকতা
এই বইয়ের বিষয়বস্তুসমূহ স্থান, কাল এবং পাত্রবিশেষে পরিবর্ধিত, পরিশীলিত ও পরিমার্জিত হতে পারে। এই বইয়ের n-তম মুদ্রণে হয়তোবা আর ইন্টারনেটের অনেকগুলো কমিউনিকেশন হ্যাক প্রাচীন হয়ে যাবে। তাই বইটি যেই বছরেই পড়ছেন না কেন, আপনি যদি বইয়ের মূল কনসেপ্টটা বুঝে আমাদের ভুল-ত্রুটিগুলো খেয়াল করতে পারেন, তবেই আপনি কমিউনিকেশন হ্যাকসের বেসিক বুঝতে পেরেছেন।
*
রিপ্লাইয়ের কমিউনিকেশন
যখন কেউ মেসেজ দেয় অনালাইনে, তখন কেউ মেসেজটা দেখলে seen লেখা আসে। অপর পাশ বুঝে যে মেসেজটা দেখা হয়েছে। কিন্তু, মনে করেন। আপনি মেসেজ করলেন,
আজকে বিকেল চারটার মধ্যে ব্যাংক স্টেটমেন্টটা পাঠিয়ে দিতে পারবেন?
— seen 12.45PM
এর মানে কী? পারবেন? পারবেন না? সময় লাগবে? দেখছি?
কিছু কিছু সময় মেসেজ না দেখার চেয়ে seen করে রাখা বেশি বিরক্তিকর। এমন অবস্থায় হ্যাঁ হলে জানিয়ে দিন। না হলে বলে রাখুন যে দেরি হবে যাতে অন্য ব্যবস্থা করা যায়। অনেকে না বলতে লজ্জা পায়, তাই তারা চুপ করে থাকে। কখনই এমন করবেন না। ফাস্ট এবং ফার্স্ট রেসপন্স কমিউনিকেশন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই পরে রিপ্লাই করবো মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে মেসেজ আর মেইল দেখার সাথে সাথে রিপ্লাই করবেন।
*
যাবেন কি যাবেন না?
ইদানীং বিভিন্ন ইভেন্টের জন্য ফেসবুকে ইভেন্ট খোলা হয়। সেখানে আপনি চাইলে, Going, Maybe কিংবা Not Going দিতে পারেন। খুবই সিম্পল কিন্তু মানুষ কেন যেন জিনিসটাকে আরও বেশি জটিল করে ফেলে। অনেকে Going দিয়েও আসে না। দেওয়ার কাজ দিয়ে রেখেছি এমন একটা ভাব।
কারও বিয়ের দাওয়াতে Going দিয়ে রাখা মানে হল তাদেরকে আপনার জন্য আয়োজনের বন্দোবস্ত করতে বলা। আপনার একটা বাটন ক্লিক করার উপর কারও কষ্টে অর্জিত টাকার খরচ নির্ভর করছে। তাই আমাদের যেন এই ন্যূনতম ভদ্রতাগুলো আনার চেষ্টা আমরা করি।
*
নিজের সম্পর্কে কথা বলুন
আমার আপনার চেনা এমন অনেক প্রতিভাবান মানুষ আছেন, যারা তাদের কাজের স্বীকৃতি যথেষ্ট পরিমাণে পাচ্ছেন না। এর পেছনে একটা বড় কারন হচ্ছে, অনেকে এতটাই বিনয়ী যে, নিজের অর্জনগুলো কারও সামনে বলে লজ্জা পান। তারা ভয় পান যে, তাদের নিজেদের কথা বললে অন্যরা অহংকারী ভাববে। তাই তারা চুপ থাকেন আর পাশ দিয়ে অন্য ধুরন্ধর মানুষজন তাদের কাজের ক্রেডিট নিয়ে নেয়।
তো নিজের ঢোল একটু হলেও নিজেকে পেটাতে হবে। এখন কিছু দৃষ্টিকোণ আপনার সামনে তুলে ধরছি যেগুলো হয়তোবা আপনাকে নিজের এবং নিজের কাজ সম্পর্কে বলতে আরেকটু বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করাবে।
প্রথমত, আপনি মনে করেন অনেক সুন্দর একটা কেক বানালেন। কেক বানিয়ে তারপর সেটা আপনি আপনার ওভেনে রেখে আসলেন। এই অবস্থায় যদি কেউ আপনার কেক না খায়, তাহলে তো নিশ্চয়ই আপনি বলবেন না যে, কেউ আমার হাতের রান্না খেতে চায় না! বরং, দোষ আপনার যে, এত সুন্দর কেক বানিয়ে আপনি মানুষকে জানাননি। তাই, আপনি হয়তোবা দারুণ কোনো কাজ করছেন, কিন্তু মানুষকে না জানালে আপনাকে তারা কদর কীভাবে করবে বলেন?
দ্বিতীয়ত, আপনি কি আসলেই আপনার কাজে বিশ্বাসী? আপনি যদি আপনার কাজে বিশ্বাসী হন, তাহলে সেটার কথা মানুষকে জানান। আমরা যখন বইয়ের কথা মানুষকে বলি, আমরা জানি যে অনেকে ভাববে যে আমরা হয়তোবা বইয়ের বিক্রি বাবদ অর্থ পাওয়ার জন্য নিজেদের বইয়ের কথা বলছি। কিন্তু, বাস্তবে বই লিখারও অনেক আগে থেকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ফ্রিতে শত শত ভিডিও দিয়ে এসেছি। আমরা আমাদের বইয়ের প্রতিটা কথার মাধ্যমে ইতিবাচক পরিবর্তন আনায় বিশ্বাসী। তাই, আমরা বইয়ের কথা বলতে, মার্কেটিং করতে সংকোচ বোধ করি না।
তৃতীয়ত, আপনি নিজেই যেন নিজের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা না হন। আপনি হয়তোবা বড় কোনো কাজ করছেন, সুন্দর কোনো শিল্পকর্ম তৈরি করছেন। কিন্তু, মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে যদি লজ্জা পান, তাহলে আপনার কাজ পৃথিবীকে যতটা ভ্যালু দিতে পারতো, তা সম্ভব হবে না কেবলমাত্র আপনার কথা বলতে অপারগতার জন্য। তাই, নিজের কাজকে ভালবাসলে, নিজের কাজকে আসলেই মূল্যায়ন করতে মানুষের সামনে নিজের প্রজেক্টগুলো নিয়ে কথা বলুন।
চতুর্থত, আপনি মনে করেন কোনো নন-প্রফিট সংস্থার জন্য কাজ করেন। আপনার কাজের সম্প্রসারণ হলে আরও অনেক শিশুর পড়াশোনা চলবে। এখন আপনি যদি নিজ থেকে এগিয়ে গিয়ে মানুষের সামনে কথা বলতে না পারেন, তাহলে আপনার নীরবতার জন্য হাজারো শিশু হয়তোবা শিক্ষার সুযোগ হারাবে। তাই, অনেক সময় খালি নিজের জন্য না, পারলে অন্যের। ভালোর জন্য হলেও আপনার প্রজেক্ট সম্পর্কে কথা বলুন।
*
নয়টার ট্রেইন কয়টায় ছাড়ে?
ওই কথাটা যখন প্রথম শুনেছিলাম তখন আসলে কৌতুকটা ধরতে পারিনি কারণ আমার নিয়মিত যাতায়াতের মাধ্যম ছিল বাস। ট্রেইনে ওঠাই হত না। বুঝতে পারছি না দেখে আমাকে আমার চাচু ব্যাখ্যা করলেন যে, নয়টার ট্রেইন কখনও নয়টায় ছাড়ে না। লেট করে কয়টায় ছাড়ে, এটা জানতে এবং একই সাথে একটা কৌতুক বিনিময় করতে আসলে প্রশ্নটা করা হয়।
এমন অনেক কথা আছে, যেগুলো প্র্যাক্টিকালি এক্সপিরিয়েন্স না করলে আসলে বোঝাটা কঠিন। মনে করেন আপনি বিদেশে গিয়ে বললেন যে, আপনার দেশে মানুষ বাম পায়ে আগে নামে। বিদেশীরা হয়তোবা ভাববে যে কুসংস্কারবশত বাঙ্গালীরা এই কাজটা করি। কিন্তু, আসল কারণ তো হচ্ছে। চলন্ত বাস থেকে আমাদের নামার স্বভাব। চলন্ত বাস থেকে ফট করে নেমে জড়তার কারণে মানুষ উল্টে রাস্তায় না পড়ে যায় সেজন্যই হেল্পাররা প্রায়ই চেঁচিয়ে বাম পায়ে নামতে বলে। চলন্ত বাস থেকে যে যাত্রীরা নামবে সেটা অনেক দেশের মানুষই বোধহয় কল্পনাও করতে পারবে না।
*
নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলা
এই টপিকটা বোধ হয় ইন্ট্রোভার্টদের জন্য বেশি প্রযোজ্য। যারা চুপচাপ থাকেন, নিজে থেকে যেচে কথা বলেন না–তারা নিজেদের মত করে থাকতে পছন্দ করেন। কিন্তু, নেটওয়ার্কিং-এর জগতে আপনি চুপ করে বসে থাকলে কেউ এসে আপনাকে জিজ্ঞেস করে করে বের করবে না যে, আপনার প্রতিভা কী। আপনাকে নিজে থেকে গিয়ে নিজের পরিচয় দেন। নেটওয়ার্কিং করার অভ্যাস তৈরি করতে হবে। তাই, আপনার যদি নি থেকে এগিয়ে কথা বলতে বেশি লজ্জা লাগে, তাহলে আপনি কিছু হ্যাকস অ্যাপ্লাই করতে পারেন।
১. আপনার পরিচিত কারও সাথে যান এবং তাকে বলুন যেন আপনাকে অন্যদের সাথে তিনি পরিচয় করিয়ে দেয়।
২. কোনো অনুষ্ঠানের এমন জায়গায় দাঁড়াবেন যেখানে আপনাকে দেখা যায়। অনেকে এক কোণায় কিংবা দেয়ালের আড়ালে লুকিয়ে থাকে। এটা মোটেও চলবে না। নিজে থেকে কথা বলবেন না বুঝতে পেরেছি, কিন্তু মানুষ যেন আপনাকে খুঁজে বের করে কথা বলতে পারে, সেই সুযোগটা অন্তত করে রাখুন।
৩. কী বলে কথা বলা শুরু করবো?– চিন্তায় যারা কথা বলতে পারেন না, তাদের জন্য একটা মেন্টাল হ্যাক হচ্ছে, আপনি যেভাবে চান যে কেউ আপনার সাথে কথা বলা শুরু করুক, সেই একই বাক্যগুলো ব্যবহার করে আপনি অন্যদের সাথে কথা বলতে এগিয়ে যান।
৪. নেটওয়ার্কিং নিয়ে একটি বইয়ের নামই হচ্ছে, Your network is your net worth. উক্তিটা অনেক সত্য। আপনার জীবনে আপনি কোন কোন মানুষকে চিনেন এবং তাদের সাথে আপনার সম্পর্ক কেমন সেটার। উপর আপনার পেশাদার এবং পারিবারিক জীবনের সফলতা অনেকটা নির্ভর করছে। তাই, যখনই মনে হবে যে কথা না বললেও তো চলে! –তখন মনে মনে এই উক্তিটি স্মরণ করবেন।
৫. ফার্স্ট ইম্প্রেশন যেন দারুণ হয়। অর্থাৎ, ঠিকমত ড্রেস-আপ করে যাবেন যেন নিজেকে কেমন দেখাচ্ছে এই বিষয়ে আপনার যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস থাকে। যখন হ্যান্ডশেক করবেন, তখন যেন হ্যান্ডশেকটা জোরালো হয়।
৬. সবসময় মনে রাখবেন। একটা কনভারসেশন চালানোর জন্য আপনাকে যে সবসময় কথা বলতে হবে, এমন কিন্তু না। মানুষ নিজের সম্পর্কে সবসময় কথা বলতে চায়। তাই, আপনি যদি অন্য মানুষটির প্রতি আপনার কৌতূহল প্রকাশ করেন, প্রশ্ন করেন তার আগ্রহের কাজ নিয়ে; তাহলে আপনি প্রথম দুটো কথা বলে চুপ থেকে শুনেন খালি, উনি। নিজে থেকেই পুরো কথাবার্তা চালিয়ে নিয়ে যাবেন!
*
কার সাথে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন?
আপনাকে কেউ যদি সারাদিন উৎসাহমূলক কথা বলতো, সবসময় সাহস দিত, আপনার সম্পর্কে ভালো কথা বলতো তাহলে নিশ্চয়ই আপনার মন একটু হলেও ভালো থাকতো, কাজ উদ্যম আসতো। অনেকটা পার্সোনাল ট্রেইনারের মত, যে আপনার সাথে সবসময় থাকবে আপনাকে আরও ভালো পারফর্ম করার জন্য সাহায্য করতে।
আর যদি এমন হত যে কেউ আপনার কানে সারাক্ষণ খারাপ কথা বলেই যাচ্ছে। অনেকের জীবনে এমন মানুষ আসলেও আছে! সারাটা দিন খারাপ কথা, মন খারাপ করা কথা, তুমি পারবে না! এমন কথা শুনতে থাকলে আপনি যতই মোটিভেটেড মানুষ হন না কেন, আপনার উপর এই কথাগুলোর একটা নেতিবাচক প্রভাব আসবে।
এখন প্রশ্ন হল, কার সাথে আপনার সবচেয়ে বেশি কথা হয়?
আপনি হয়তোবা বলবেন, আপনার পরিবারের সাথে, কিংবা কোনো এক বেস্টফ্রেন্ডের সাথে। কিন্তু, আসলে যার সাথে সব থেকে বেশি কথা হয়, সেই মানুষটি হচ্ছেন আপনি নিজে! হা! একটু ব্যাখ্যা করি।
চিন্তা করা মানে কী? খেয়াল করলে দেখবেন, চিন্তা করা অর্থাৎ থিঙ্কিং হচ্ছে। নিজের সাথে নিজের কথোপকথন। চিন্তা করা মানে হচ্ছে সেলফ-টক (Self Talk)। আমরা যত না অন্যদের সাথে কথা বলি, তার চেয়ে বেশি চিন্তা করি। ঘুম থেকে উঠে সারাটা দিন আমাদের হাজারো চিন্তা। মানে নিজের সাথে হাজারো কথা। এখন প্রশ্ন হল, আপনি নিজে সাথে যে এত কথা বলছেন, এগুলোর প্রভাব আপনার উপর কেমন?
কিছু মানুষ মনে মনে বলতে থাকে, আমাকে দিয়ে এটা হবে না, আমি এই কাজটা পারি না, আমি আসলে এই কাজের যোগ্য না, আমি কেন যে এটা করতে গেলাম!, আমার আসলে এই ভুলটা করা উচিত হয়নি ইত্যাদি। এটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন, মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর চলতে থাকে। চিন্তা করে দেখেন (!), এভাবে নিজেকে মনে মনে ছোট করতে থাকলে একজন মানুষের আত্মবিশ্বাস, সঞ্জীবনী শক্তি কোথায় গিয়ে ঠেকবে? অন্যদিকে, এমন অনেকে আছে যারা একই কথা নিজেদেরকে ভিন্নভাবে বলে। আমি কাজটা শিখে ফেলবো ধীরে ধীরে, এই ভুলটা আর রিপিট হবে না ইনশা আল্লাহ, এই চ্যালেঞ্জটা এবার বেশ জমবে ইত্যাদি। এই মানুষগুলো সারাটা দিন নিজেদের মনে মনে উৎসাহ দিচ্ছে। একটু হলেও তো এর ইতিবাচক প্রভাব তার কাজে এবং জীবনে উঠে আসবে।
আমাদের সবার জীবনেই এমন একটা কণ্ঠ আছে, আমাদের নিজেদের কণ্ঠ যেটা আমাদের সব কাজে আমাদের সাথে কথা বলছে। কণ্ঠটা যদি অনুপ্রেরণার উৎস হয়, তাহলে বাইরের শত কমিউনিকেশনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটা। তাই, অন্যের সাথে কমিউনিকেশনের আগে, নিজের মনের সাথে কমিউনিকেশনটা উন্নত করেন।
*
অর্ডার দেয়া
আপনি যদি চান যে কেউ একটা কাজ না করুক, তাহলে তাকে সেই কাজটা করতে অর্ডার দিতে পারেন। কারণ, যেই কাজ মানুষ এমনিই করতো, সেই কাজ বাধ্য হয়ে করতে হলে মানুষ সেটা ঘৃণা করে।
একদিন বাসে করে শাহবাগ যাচ্ছি। এক মহিলা এসে সরাসরি আমাকে বললেন, আপনি সরেন। পাশের সিটে যান। আমি এখানে বসবো। আমি মহিলা সিটে বসে ছিলাম না, তবুও তিনি কেন যে অর্ডার দিয়ে বললেন সেটা আমি জানি না। আমার চেয়ে বয়স একটু হয়তোবা বেশি। তর্কে না গিয়ে আমি সরে গেলাম। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে, তিনি যদি আমাকে বলতেন, ভাইয়া, আপনি কাইন্ডলি একটু পাশের সিটে বসবেন?–আমি তাহলে খুশি মনে পাশের সিটে চলে যেতাম। অর্ডার করার পরও আমি একই কাজ করেছি, কিন্তু মনে অনেক বিরক্তি নিয়ে।
আপনি মানুষকে অর্ডার দিয়ে যতটুকু কাজ করাতে পারবেন, তার চেয়ে অনেক বেশি হয়তো আপনি পারবেন যদি এমন ব্যবস্থা করতে পারেন যেন তারা একই কাজটা খুশি মনে করে। এখন সব জায়গায় অবশ্যই অর্ডার কাজ করে। যেমন : মিলিটারিতে অর্ডার ফলো না করলে পুরো টিমের মহাবিপদ হতে পারে। কিন্তু, সামাজিক জীবনে যতটা কম সম্ভব অর্ডার করার অভ্যাসটা করতে পারেন।
যিনি আই ডোন্ট কেয়ার বলেছেন, তিনি কেয়ার না করলে কি কখনও আই ডোন্ট কেয়ার বলতেন?
*
মেসেজ দিয়ে রাখসি তো!
এক ক্লায়েন্ট একবার তার বসের কাছে বললো যে, সে বলে আমাকে (লেখককে) মেসেজ পাঠিয়েছে। বস এসে আমাকে ধরলো যে, মেসেজ পাঠানোর পরও কেন আমি কিছু করিনি। আমি বুঝলাম যে আমি মেসেজ পাইনি। কিন্তু, সেই এমপ্লোয়ি বলেই যাচ্ছে যে সে মেসেজ পাঠিয়েছে। এভাবে চলতে চলতে এক সময় প্রমাণ দেখানোর পালা আসলো। আমি বলাম, এসএমএস চেক করলে এবার আসলে বোঝা যাবে কে মিথ্যা বলছে। অবাক হয়ে দেখলাম যে লোকটা হোয়াটস অ্যাপ (Whats App) ওপেন করে দেখাচ্ছে যে সে মেসেজ পাঠিয়েছে।
প্রথম কথা, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ করলে আমি কীভাবে বুঝবো যে উনি কে? দ্বিতীয়ত, হোয়াটস অ্যাপ কিংবা মেসেঞ্জারে মেসেজ পাঠিয়ে রাখলে। সেটা অনেক সময় ফিল্টার সেকশনে চলে যায়। তাই, কেউ যদি মনে করে যে, অচেনা নাম্বার থেকে মেসেজ পাঠিয়ে রাখলেই কর্পোরেট কমিউনিকেশন হয়ে গেল, তাহলে সে বোকার স্বর্গে বাস করছে।
আর প্রসঙ্গত বলে রাখি, অনেক সময় কাজ কেন হয়নি জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে, আমি তো মেসেজ দিয়ে রাখসি। মেসেজ দিয়েছেন না কি দেননি, এটাতো বিষয় না, কাজটা ম্যানেজ করতে পারেননি–এটাই মূল বিষয়। মেসেজ পাঠিয়েই অনেকের কাজ যেন একদম শেষ। আরে ভাই দেখেন, মেসেজ দেখেছে না কি। কাজ শুরু করেছে না কি। কাজ কবে শেষ করে আপনাকে দিবে। তাই, মেসেজ পাঠানোটাই শেষ কাজ না। কাজটা আদায় করলেই কেবল কমিউনিকেশন সফল হবে।
*
সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট
কমিউনিকেশনের একটা বড় অংশ হচ্ছে আমাদের বডি ল্যাংগুয়েজ এবং সিচুয়েশন। এমনকি, আমাদের বসার জায়গাও অনেক কিছু কমিউনিকেট করে। আপনি হয়তো বিভিন্ন সরকারি অফিসের চেয়ারে টাওয়াল দেখেছেন, সেটাও একটা পদমর্যাদার ইঙ্গিত হিসেবে অর্থবহন করে। আপনি কোন জায়গায় বসছেন সেটাও কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ। মিটিং রুমের এক সাইডের সিঙ্গেল চেয়ার, যেটা বসের জন্য বরাদ্দ, সেখানে গিয়ে ফট করে বসলে বিপদ হতে পারে। একটা বসার জায়গাও যে একটা অফিসে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা এখন বিভিন্ন কোম্পানি অনুধাবন করছে। জুনিয়র এমপ্লোয়িরা যাতে সিনিয়রদের সাথে সহজে কথা বলতে পারে, সেজন্য সবাই একই ফ্লোরে, একই ধরণের ডেস্কে বসছে ইদানীং বিভিন্ন কোম্পানিতে। বর্তমানে পৃথিবীর অন্যতম সেরা টেক সিইও ইলন মাস্ক বসেন অফিসের এমন জায়গায়, যেখানে তাকে সবথেকে সহজে দেখা যায়। সবাই যখন দেখে বস এত পরিশ্রম করছেন এবং চাইলেই তার সাথে কথা বলা যায়, তখন সবাই আরও বেশি অনুপ্রাণিত হয়। বিচিত্র এই দুনিয়ায় তাই আপনার বসার ধরণও অনেক কথা বলে!
বড় মিটিং টেবিলের দুই পাশে দুই সারি চেয়ারে দুই পক্ষ বসরে এবং টেবিলের এক সাইডে একটি মাত্র চেয়ারে উচ্চপদস্থ কিংবা সিনিয়ারদ্রোস্ট ব্যক্তি বসবেন। দুই সারির এক সারিতে না বসে আপনি যদি সরাসরি বসের চেয়ারে বসেন, তাহলে মানুষ ভাবতে পারে যে আপনি আপনার পাওয়ার মুভ দেখাচ্ছেন!
ইন্টেরোগেশন (Interrogation) এর দৃশ্যে সব সময়। দেখবেন যে, দুই পক্ষ একদম একে অরের মুখোমুখি বসেছে। মুখোমুখি বসাটা অবচেতনভাবে একটা সাংঘর্ষিক আবহ তৈরি করে। পুলিশ যখন ক্রিমিনালের মুখ থেকে কোনো তথ্য বের করার চেষ্টা করছে, তখন সরকম সেটআপ কাজে দিতে পারে।
আপনি যদি কারও সাথে আলাপ-আলোচনা করতে চান, একসাথে কাজ করতে চান, তাহলে সারলে মুখোমুখি না বসে পাশাপাশি কিংবা কোকোণি বসুন, তাহলে একটা সহযোগিতামূলক পরিবেশ অবচেতন মনে তৈরি হবে।
*
হেটারদের সাথে কমিউনিকেশন
ইউনিভার্সিটিতে একদিন ক্লাসে স্যার বোঝাচ্ছিলেন যে, কাস্টমার তিন ধরণের হয়। প্রথম শ্রেণির কাস্টমার হচ্ছে ফ্যানরা। তারা আপনার পণ্য খুবই পছন্দ করে। আপনার পণ্যের কথা অন্যদের সাথে শেয়ার করে এবং তারা আপনার নিয়মিত গ্রাহক। আপনি ১০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে তারা। আরও ১০০০ টাকার পণ্য কিনবে আপনার কাছ থেকে।
দ্বিতীয় শ্রেণির কাস্টমার হল তারা, যারা নিরপেক্ষ। আপনার পণ্য কিনেছে সে, কিন্তু ভালো-মন্দ কোনো অনুভূতি নেই। তাদেরকে ১০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে কোনো কিছু না হলেও, ৫০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলে হয়তে আপনার কাছ থেকে ৫০০ টাকার পণ্য কিনবে।
তৃতীয় শ্রেণির কাস্টমার হল তারা, যারা আপনার পণ্য তো পছন্দ করেই না, বেত অন্যদেরকেও বলে বেড়ায় যাতে আপনার দোকানে কেউ না যায়। এসব কাস্টমারকে ১০০০ টাকা ডিসকাউন্ট দিলেও হয়তোবা পণ্য কিনবে না।
এখন মনে করেন আপনার বাজেট ১০০০ টাকা। এই ১০০০ টাকা দিয়ে আপনি ১০০ জন ফ্যানকে গিফট দিয়ে সুপার-ডুপার ফ্যান করে ফেলতে পারেন খুশি করে। অথবা ২০০ জন নিরপেক্ষ কাস্টমারকে আপনি আপনার ফ্যান বানাতে পারেন। নাহলে ১ জন হেটারকে আপনার কাস্টমার বানানোর চান্স তৈরি করতে পারেন। এখন বুদ্ধি থাকলে যে কেউ পুরো বাজেট ফ্যানদের জন্য বরাদ্দ রাখবে।
এই কনসেপ্টটা আমরা আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি না কেন? যখন কেউ আমাদের নিয়ে খারাপ কিছু বলে তখন আমরা সমস্ত এনার্জি, সময় আর ইমোশন দিয়ে তাদের সাথ ঝগড়া করি। কিছু কি বদলায়, নাকি তর্ক আরও বেশি দূর গড়ায়? চিন্তা করেন খালি, আমরা যদি সেই একই এনার্জি, সময়। আর ইমোশন আমাদের যারা ভালোবাসে, স্নেহ করে–তাদেরকে দিতাম? তারা বহুগুণে সেই ভালোবাসা, স্নেহ আমাদের ফিরিয়ে দিতেন।
তাই, আজ থেকে যতই নিন্দুকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করুক না কেন, আগে দেখবেন আপনার শুভাকাঙ্ক্ষীদের যথেষ্ট সময় দিতে পেরেছেন কি না। তাছাড়া, ইগ্নোর করার চেয়ে বড় কোনো অপমান হতে পারে না।
*
পিপল স্কিল : কী এবং কেন?
অনেক যোগ্য মানুষের ভিড়ে আমরা কিন্তু আলাদা করে মনে রাখি সেই মানুষটিকে যিনি সুন্দর করে কথা বলতে জানেন। সুন্দর করে কথা বলতে পারার গুনটি শুধু জনপ্রিয় হবারই নয়, বরং কখনো কখনো সফল হওয়ারও একটি চাবিকাঠি। তবে, সবার সাথে সঠিকভাবে কথা বলার পাশাপাশি সঠিকভাবে শোনাটাও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিল। কিন্তু Stephen R Covey এর মতে, Most people do not listen with the intent to understand. Most people listen with the intent to reply.
তো চলুন আজ শেখা যাক গুছিয়ে কথা বলা ও মনোযোগ দিয়ে কথা শোনার আদবকেতাগুলো!
১. কথা শোনা : মনোযোগ সহকারে কথা শোনা এক প্রকার শিল্প। যেটা সকলের পক্ষে রপ্ত করা সম্ভব নয়। অবাক হচ্ছেন? ভাবছেন, কথা শোনার আবার কিসের মাহাত্ম? মনে রাখবেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের কান দিয়েছেন দুটো, মুখ দিয়েছেন একটা। অতএব, বলা আর শোনার অনুপাতটা কেমন হওয়া উচিত বুঝতেই পারছেন। তা আপনাদের এই শোনার ক্ষমতা অর্জনের। জন্যে আজ আপনাদের তিনটা ফর্মুলা দিচ্ছি। এই ফর্মুলাটা 3A পরিচিত! এই 3A এর মর্মার্থ হলো–
Acceptance–
আমরা যখন কথা বলি তখন অনেকক্ষেত্রেই আমাদের শ্রোতা যিনি বা যারা থাকেন তাদের ভাব-ভঙ্গি দেখে মনে হয় তিনি বা তারা আমাদের কথায় আগ্রহ পাচ্ছেন না। অনেক সময় তাদের দেখে মনে হয় তারা বেশ বিরক্ত। যখন আমরা শ্রোতা হই তখন আমরাও এরকম করে থাকি প্রায়শই। যেটা অনচিত। আমাদের সাথে যখনই কেউ কোনো ব্যাপারে কথা বলতে এইবেন, শ্রোতা হিসেবে আমাদের উচিত হবে তাকে সুন্দর করে স্বাগত জানানো, যাতে সে কথা বলায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। হতে পারে সেটা একটা উষ্ণ কুশল বিনিময়ের মাধ্যমে!
Appreciation—
আমরা বাঙ্গালিরা উৎসাহ দেবার বেলায় বরাবরই বেশ কৃপণ। আমাদের কারও ভালো কাজে অনুপ্রেরণা দিতে বড় সংকোচ হয়। অথচ এই একটুখানি প্রশংসা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণামূলক ভালো কথা মানুষের মধ্যকার সম্পর্কটাকে নিমেষে বদলে দেয়। যখন কেউ আপনার সাথে কোনো আইডিয়া বা প্ল্যান শেয়ার করবে আপনার উচিত সেটা শোনামাত্রই সেটার প্রশংসা করা, তাকে বাহবা দেওয়া। তাহলে দেখবেন মানুষটা আপনার সাথে কথা বলতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবে।
Approval—
মানুষ সবখানে তার নিজের আইডিয়া বা প্ল্যানের গ্রহণযোগ্যতা খোঁজে। কারও কাছ থেকে কোনো আইডিয়া, বা প্ল্যান শোনার পর আপনি যদি কোনো কথা না বলেন তাহলে ওই মানুষটা দ্বিধায় ভুগবে। তার আপনি যদি তাকে জানান তার আইডিয়াটা কেমন ছিলো? কীভাবে করলে আরো চমৎকার হবে তাহলে ব্যাপারটা চমৎকার হবে। মানুষটাও আর সংশয়ে ভুগবে না।
আর এই 3A তথা Acceptance, Appreciation, Approval দিতে গিয়ে পুরোটা সময় আপনাকে যেটা দিতে হয় সেটা হলো Attention অর্থাৎ মনোযোগ। অথচ আমরা এই মনোযোগটাই দেই না কথা শোনার সময়। কেউ একজন কথা বলার সময় দেখা যায় আমরা অন্যমনস্ক হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকি। কখনও দেখা যায় নিজের মুঠোফোনে ডুবে আছি, আবার কখনও দেখা যায় ঘড়িতে সময় দেখছি। অথচ এই ব্যাপারগুলো যিনি কথা। বলছেন তার জন্যে কতটা অস্বস্তিকর সেটা কখনও ভেবে দেখেছেন? কেউ কথা বলার সময় আপনি ঘড়ি দেখছেন এর মানে দাঁড়ায় আপনি অপেক্ষায় আছেন কতক্ষণে সবটা শেষ হবে। কারও কথা বলার সময় আপনি মুঠোফোনে মনোযোগ দিচ্ছেন কিংবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন এর মানে হলো আপনি ওই মানুষটাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। অথচ কথা শোনা নামের যে দক্ষতাটা আপনি রপ্ত করতে চাইছেন সেটার প্রথম ও প্রধান কাজ হলো। মনোযোগ দেওয়া। আর একটা ব্যাপার হলো আমরা বাঙ্গালিরা কথা শুনি কেবল তর্ক করার জন্যে। জানা বা বোঝা আমাদের কথা শোনার উদ্দেশ্য না। কথা শুনতে হবে বোঝার জন্যে, জানার জন্যে। আর একটুখানি মনোযোগ ও গুরুত্ব দিয়ে কারও কথা শুনলে দেখবেন যে কারও মন গলিয়ে ফেলা সম্ভব কেবল তার কথা শুনেই!
এবার আসা যাক,
২. কথা বলা : কথা বলার সময়ও কয়েকটা ব্যাপারে খেয়াল রাখা অত্যন্ত জরুরি। তো চলুন কথা না বাড়িয়ে কী কী করতে হবে সেগুলো জেনে নেই!
কথা বলবেন হাসিমুখে : যখন যেখানে যার সাথেই কথা বলবেন না কেন, কথা বলার সময় মুখে একটা হাসি রাখবেন। যাতে কথা বলামাত্রই মানুষ আপনাকে বন্ধুসুলভ হিসেবে ধরে নেয়। কথা শোনার সময়ও হাসি মুখে শুনবেন।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানাবেন : মাঝে মাঝে মাথা নেড়ে সম্মতি কিংবা নিজের মতামত প্রকাশ করবেন। কেননা আপনি যখন কথা বলেন তখন কেবল মুখেই কথা বলেন না, আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়েও কথা বলেন। তাই, মাথা নাড়ানোর ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন।
কথা বলবেন চোখের দিকে তাকিয়ে : এবার আসা যাক আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে। আমরা অনেকে কথা বলার সময় মাথা নিচু করে থাকি। কিংবা ডানে বামে বা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি। শ্রোতার চোখের দিকে তাকাতে ইতস্তত বোধ করি। এটা এক ধরণের অভদ্রতা। আর এটা না করলে শ্রোতার সঙ্গে সম্পর্কটাও ঠিকমতো গঠিত হয় না।
তাই, সবসময় মনে রাখবেন কথা বলার সময় শ্রোতার চোখের দিকে। তাকিয়ে হাসিমুখে কথা বলবেন। প্রয়োজনে মাথা নাড়বেন।
*
যেভাবে কখনও কারও সাথে কথা বলা উচিত নয়!
প্রথমে দুজন বন্ধুর কিছু কাল্পনিক কথোপকথন দেখে নেওয়া যাক!
কথোপকথন-০১
প্রথম বন্ধু- দোস্ত, জানিস? ফেইসবুকে কোনো ভিডিও মাত্র ৩ সেকেন্ড দেখা হলেই একটা ভিউ গণনা করা হয়। অন্যদিকে ইউটিউবে, ৩০ সেকেন্ড দেখলে তারপর একটা ভিউ গণনা করা হয়।
দ্বিতীয় বন্ধু– এইটা আর এমন কী? এ তো আমি সেই কত আগে থেকেই জানি। আসছে আমাকে ফেইসবুক আর ইউটিউব শেখাতে। আমাকে এসব শেখাতে এসো না। লাভ নেই!
কথোপকথন-০২
ধরা যাক, একজনের মন খারাপ। মুখ গোমড়া করে বসে আছে। তার বন্ধুর আগমন।
প্রথম বন্ধু–কী রে! কী খবর?
বন্ধু- দোস্ত, ভালো লাগছে না। কয়েকদিন ধরে একেবারেই মন মেজাজ ঠিক নেই। কোনো কাজে মনোযোগ দিতে পারছি না। বেশ অস্বস্তিকর মনে হচ্ছে সব কিছু। রাতে ঘুম হচ্ছে না ঠিকঠাক। আমি জানি না, ঠিক কী হচ্ছে আমার সাথে। বেশ হতাশ লাগছে।
প্রথম বন্ধু– আরে কী অদ্ভুত ব্যাপার! তোর জীবনের সব কিছুই ঠিকঠাক তাও তোর শুধু হতাশ লাগে। তাজ্জব ব্যাপার। এটা কোনো সমস্যা হলো। আমার জীবনে কি এগুলো হয় নাই? আমার জীবনে আমি লড়াই করি নাই? ফাজলামি করো নাকি? আজকাল ছেলেপেলের এই হলো গিয়ে এক সমস্যা। কিছু হলেই তাদের হতাশ লাগে, কিছু ভাল্লাগে না, রাতে ঘুম হয় না। আরে ভাই। সারারাত তো ফেইসবুক নিয়ে পড়ে থাকো, সিনেমা দেখো। ঘুমটা আসবে কোত্থেকে শুনি, হ্যাঁ?
পুরো ফ্যাশন হয়ে গেসে এই প্রজন্মের জন্যে এইসব ডিপ্রেশন, ফ্রাস্টেশন। অসহ্য ব্যাপারস্যাপার।
কথোপকথন ০৩
ধরা যাক, একজন কোনো প্রতিযোগীতায় বেশ কিছু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। সে এটা নিয়ে বেশ খুশি। এমন সময় তার বন্ধুর আগমন।
প্রথম বন্ধু– এগুলো কী, দোস্ত?
দ্বিতীয় বন্ধু– দোস্ত, টেন মিনিট স্কুল ডিজিটাল মার্কেটিং অ্যাওয়ার্ডে- এ তিন তিনটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। কী চমৎকার! তাই না?
প্রথম বন্ধু– এ কী! মোটে তিনটা অ্যাওয়ার্ড নিয়েই এভাবে লাফাচ্ছিস? কত কত এজেন্সি তো আঠারো-উনিশটা অ্যাওয়ার্ড পেয়েও তোর চেয়ে কম লাফাচ্ছে।
দ্বিতীয় বন্ধু– আমাদের স্টুডেন্ট নোটস- সেকশনটা গ্র্যান্ড প্রি অ্যাওয়ার পেয়েছে, দোস্ত! খুশি হবো না?
প্রথম বন্ধু- আরেহ এইগুলো কোনো ব্যাপারই না। অনেক এজেন্সি আছে ১২ ২০ টা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। আমি নিজেই তো গত বছর ৭ টা পেয়েছিলাম। টা পাওয়া কোনো ব্যাপার না। আগে ৮-১০ টা পাওয়ার অভ্যাস কর, এরপরে লাফাইস। এসব ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে এত উচ্ছ্বাস করার কোনো মানে নাই। আমার মনে হয় একটু বেশিই লাফাচ্ছিস এটা নিয়ে!
কথোপকথন ০৪
ধরা যাক, কেউ সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকে চমৎকার একটা ছুটি কাটিয়ে ফিরেছে। এরপর তার বন্ধুর সাথে দেখা। চমৎকার সেই ট্রিপের গল্পটা বেশ আয়েশি ভঙ্গিতে বলা শুরু করলো সে!
প্রথম বন্ধু- দোস্ত, এত সুন্দর একটা ছুটি গেল। সেন্টমার্টিন দ্বীপটা এত অসাধারণ। সাগরের পানি কী সুন্দর নীল! কী চমৎকার একটা জায়গা!
দ্বিতীয় বন্ধু–আরেহ, সেন্টমার্টিনের আলাপ বাদ দে তো তুই? তোর গল্প রাখ। আমারটা শোন। থাইল্যান্ড গিয়েছিস কখনও? আমি থাইল্যান্ড গিয়েছিলাম। থাইল্যান্ড এত সুন্দর। সেন্টমার্টিন একটা জায়গা হলো নাকি? সেন্টমার্টিনের গল্প কাউকে বলিস না, দোস্ত! বাদ দে। তোর সারা দুনিয়া দেখাই বাকি এখনও!
আমাদের প্রত্যেকের বন্ধুমহলেই এই ত্যাড়া বন্ধুর মতো মহা নেতিবাচক কিছু বন্ধু থাকে। যারা কি না আমাদের সবার কথা, অভিজ্ঞতা, সফলতা, ধারণা, অনুভূতি, বিশ্বাস আর অর্জনকে তাদের নেতিবাচক কথা দিয়ে একেবারে এক তুড়িতে নস্যাৎ করে ছাড়ে। আমাদের কোনো কোনো পরিবারের সদস্যও এরকম মানসিকতাসম্পন্ন!
আচ্ছা, একটা কথা বলুন তো? শুধু যদি বলেই বেড়ান, শুনবেন কখন? শুনি? একটা কথা মাথায় রাখবেন, প্রতিটা অর্জনই মূল্যবান। প্রতিটা অভিজ্ঞতাই দারুণ! আমাদের বন্ধু-বান্ধব, ভাই-বোন, বাবা-মা যখন অনেক আগ্রহ নিয়ে তাদের কোনো অভিজ্ঞতা, সফলতা, ধারণা, অনুভূতি কিংবা অর্জনের কথা আমাদের সাথে শেয়ার করতে আসেন তখন তাঁদের কাছের মানুষ হিসেবে। আমাদের উচিত সেটা গুরুত্ব সহকারে শোনা এবং মূল্যায়ন করা।
হতে পারে আপনি তাদের চেয়ে অনেক বেশি অভিজ্ঞ, অনেক বেশি জানেন, অনেক বেশি অর্জন করে ফেলেছেন, কিন্তু সেটার মানে কিন্তু এই না যে আপনি অন্যদের অর্জন আর অভিজ্ঞতাকে অবমূল্যায়ন কিংবা অবজ্ঞা করবেন। এ হতেই পারে আপনি অনেক অনেক পুরস্কার জিতেছেন, তার মানে এই না যে অন্য কারও পাওয়া কোনো পুরস্কারকে আপনি চোট দেখবেন। হয়তোবা হতাশা নামের নেতিবাচক অনুভূতির কোনো জায়গা আমার জীবনে কিন্তু তার মানে এই না যে আপনি অসম্মান করবেন অন্য কারও অনুভূতিগুলোকে।
এখন থেকে কেবল নিজে বলার অভ্যাসটাকে একটুখানি ছুটি দিন। অভ্যাস করুন শোনার। দেখবেন, মানুষের প্রিয় হয়ে ওঠা খুব একটা কঠিন কাজ নয়!
*
সতর্কতা : কথা বলা ও শোনার সময় যে কাজগুলো করা যাবে না!
কথা বলা বা শোনার সময় আমরা প্রায়ই এমন কিছু প্রতিক্রিয়া দেখাই যা অপরপ্রান্তের মানুষটির কথা বলা বা শোনার আগ্রহ আর উদ্যম নষ্ট করে দেয়। যেমন, আমি এইটা আগেই জানতাম।, এই সমস্যায় আমি কত পড়শি।, আমি এভাবেই কথা বলি।, গোত্রের উত্তর কিংবা অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা, নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া দেখানো, মনোযোগ না দেওয়ার মতো প্রতিক্রিয়া। এই কথা বা কাজগুলো মানুষের কাছে আমাদের গ্রহণযোগ্যতা অনেক কমিয়ে দেয়। আমাদের ব্যক্তিত্বকে নেতিবাচকভাবে তুলে ধরে।
শুধুমাত্র কথা বলা ও শোনার মাধ্যমেও মানুষের মন জয় করে নেওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নিই সেরকম কয়েকটি কার্যকর কনভারসেশন হ্যাকস!
১. মানুষের উদ্যম নষ্ট করে দেবেন না।
আমি এটা আগেই জানতাম–আমাদের কাছে মাঝে মাঝেই আমাদের ছোট ভাইবোন বা বন্ধুরা সুন্দর কোনো আইডিয়া বা কথা শেয়ার করে। আর আমরা অনেকেই সেটার প্রত্যুত্তরে আমি এটা আগেই জানতাম- বলে থাকি। এই কথাটা অপর প্রান্তের মানুষটার উদ্যমটাকে একেবারে নষ্ট করে দেয়। এবং ফলাফলস্বরূপ ওই মানুষটা আর কোনোদিনও আপনার সাথে কোনো কথা শেয়ার করার আগ্রহ দেখাবে না। আর তাই আমি এটা আগেই জানতাম মানুষের উদ্যম নষ্ট করে দিয়েন না।
২. নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করুন।
আমি এভাবেই কথা বলি–এই কথাটা আমাদের সবার বেশ পরিচিত। আমাদের জেদি আর একগুয়ে স্বভাবের পরিচায়ক হলো এই উক্তিটা। আমড়া একবার ভাবুন তো, সবাইকে বদলানোর চাইতে নিজেকে বদলে ফেলাটা সহজ না? কী দরকার শুধু শুধু নিজেকে সবার কাছে জেদি আর একগুঁয়ে হিসেবে তুলে ধরার?
তার চেয়ে বরং আমি এভাবেই কথা বলি- না বলে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করুন। সেটা সবার জন্যেই ভালো।
৩. সহানুভূতিশীল হতে শিখুন।
আমরা একেকজন মানুষ একেকরকম। আমাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ। পরিস্থিতিও আলাদা। আমাদের সমস্যা আলাদা, সমস্যা সমাধানের ধরণও আলাদা। আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও আলাদা। আমাদের কাছে যখন কেউ কোনো। সমস্যা নিয়ে আসে তখন এই ঝামেলায় আমিও কতবার পড়েছি বলে ওই মানুষটার সমস্যাটাকে উড়িয়ে দেওয়াটা অনুচিত।
সাহায্য নাই করতে পারেন, অন্তত শুনতে তো পারেন। এতে অন্তত ঐ মানুষটা হালকা বোধ করবেন। সহানুভূতিশীল হতে শিখুন। কেউ কোনো সমস্যার কথা শেয়ার করলে এই ঝামেলায় আমিও কতবার পড়েছি বলে তাকে আর তার সমস্যাকে উড়িয়ে দেবেন না।
৪. তর্ক করার জন্যে নয়, বোঝার জন্যে শুনুন।
আমরা আসলে কথা শুনি মূলত জবাব দেওয়ার বা তর্ক করার জন্যে। কথার মধ্যে লুকোনো মেসেজটা বোঝার চেষ্টা না করেই আমরা উত্তর দেই, তর্ক শুরু করে দেই। এই অভ্যাসটা মানুষের কাছে আপনার ইম্প্রেশন নষ্ট করে। তাই চেষ্টা করুন বক্তার কথা বুঝতে। বুঝে উত্তর দিন। খামাখা তর্কে জড়াবেন না।
৫. কথা বলা বা শোনার সময় অন্যদিকে মনোযোগ দেবেন না।
আমরা অনেক সময় কথা বলতে গিয়ে শ্রোতার দিকে তাকাই পর্যন্ত না। মোবাইল অঁতোই কিংবা মাথা নিচু করে থাকি। এটা মানুষের আগ্রহ নষ্ট করে। তাই, কথা বলার সময় যাকে বলছেন তার দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। আর যারা শুনছেন তারাও বক্তার দিকে তাকিয়ে তার কথায় মনোযোগ দিন।
৬. নেগেটিভ বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখাবেন না।
কারও সাথে কথা বলা কিংবা কারও কথা শোনার সময় কখনও এমন কোনো কারও আচরণ করবেন যাতে বক্তা বা শ্রোতা বুঝতে পারেন যে আপনার তার সাথে সতা বলা কথা শোনার বেলায় আগ্রহ নেই। এরূপ আচরণের মধ্যে হাই তোলা, অন্যদিকে তাকিয়ে থাকা, নিশ্চুপ থাকা অন্যতম। এই আচরণগুলো করা যাবে না। হাসিমুখে এবং মনোযোগ দিয়ে কথা বলুন, শুনুন, জবাব দিন।
৭. মাঝে মাঝে অবাক হওয়ার ভান করলেও মন্দ হয় না।
কেউ কোনো কথা বা আইডিয়া শেয়ার করতে চাইলে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। কথা শোনাটাও অনেক বড় একটা স্কিল। আপনার জানা কোনো তথ্য বা আইডিয়া পুনরায় শেয়ার করা হলেও মাঝে মাঝে অবাক হবার ভান করে দেখতে পারেন। আপনার একটুখানি ভান যদি কাউকে খুশি করে দেয় তাহলে এইটুকুন ভান তো করাই যায়।
৮. কখন থামা উচিত বুঝবার চেষ্টা করুন।
কখন কথোপকথন শেষ করা উচিত সেটা বোঝার কিছু উপায় আছে। নেক্সট কবে দেখা হচ্ছে?, কিংবা কার্ড বিনিময়, হ্যান্ডশেক করা এই কাজগুলো সাধারণত কথোপকথনের সমাপ্তির লক্ষণ। এই ব্যাপারগুলোতে নজর রাখা উচিত।
এই কথাগুলো বা কাজগুলো হয়ে গেলে বুঝতে হবে এরপরে আর কোনো কথা বলা অনুচিত।
এখন থেকে কথা বলা ও শোনার সময় এই ট্রিকগুলো কাজে লাগাতে পারলে আপনি ধীরে ধীরে একজন আদর্শ বক্তা এবং শ্রোতা হয়ে উঠবেন।
*
সাবধান : আপনি কি একজন Conversation Monster?
আপনার আমার আমাদের সবার আশেপাশেই এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের কথাবার্তা আর আচার-আচরণে কিছু সাধারণ অসঙ্গতি আছে যেটা ওই মানুষগুলোর সাথে আমাদের কথোপকথনে আগ্রহ কমিয়ে দেয়। কিছু নমুনা দেখানো যাক :
১. ইয়ে মানব : এরা সব বাক্যে একটা করে ইয়ে জুড়ে দেয়। এবং বেশ অদ্ভুতভাবে ওই ইয়ে টা ঘুরেফিরে সেই আসল কথার প্রতিস্থাপক।
ধরা যাক, কাউকে যদি প্রশ্ন করা হয় যে তার গ্রামের বাড়ি কোথায়? ই মানবের এর উত্তর হবে ইয়ে- তে। আরে বাপু আপনি যার সাথে কত বলছেন সে কি খাতা কলম নিয়ে অংক করতে বসেছে নাকি যে লাইনের পর লাইন ধরে ভেবে চিন্তে আপনার ইয়ে এর মান বের করবে।
২. উড়ে এসে জুড়ে বসা মানব : ধরা যাক, কথা বলছিলেন ক্রিকেট নিয়ে। উড়ে এসে জুড়ে বসা মানব নিজের সাথে কাঁধে করে উইম্বলডনের গল্প নিয়ে উড়ে এসে জুড়ে বসবে।
কথা হলো, টেনিস বল টেপে মুড়িয়ে ক্রিকেট খেলা পর্যন্ত হজম করা গেলেও ক্রিকেটের আড্ডায় কেউ টেনিস ঢুকিয়ে দিলে ব্যাপারটা হজম করতে একটু সমস্যা হয়ই।
৩. বাচাল : এদের কথা যদি একবার শুরু হয় তাহলে আপনার জন্যে শুভকামনা। উনি শুধু বলেই যাবেন, আপনার শোনা বা না শোনায় তার কিছু আসে যায় না।
৪. আজীবন সম্মান করে যাওয়া মাটির মানুষ : এই মানুষগুলো জীবনেও কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে না। কোনো এককালে কোনো এক গুনীজন তাদের মস্তিষ্কে সম্মান প্রদর্শনের আরেক নাম চোখের দিকে না তাকানো।- এমন একখানা অদ্ভুত ধারণা প্রবেশ করিয়েছিলেন। এবং তারাও অনুগত চিত্তে উহা বেদবাক্যের মতো মেনে চলছেন।
৫. আমি মানব : এই আমি মানব এর জীবনে কেবল একজনই আছেন। সেটা হলো আমি! ওনার জীবনে উনি নিজে বাদে আর কিছু নাই। সবার সব কথা আর কাজের মধ্যে নিজের ইচ্ছা কিংবা অনিচ্ছাকৃত প্রবেশের মাধ্যমে তারা নিজেদের জীবনের সার্থকতা খুঁজে পান।
৬. মোবাইল আসক্ত : আমি মানব এর মতো এই মহামানবের জীবনেও সম্বল একটাই। সেটা হলো ফোন। সারাক্ষণ ফোনের মধ্যে সাঁতরে বেড়ায় এরা।
৭. নো প্রাইভেসি : এরা কারণে অকারণে মানুষজনকে ব্যক্তিগত প্রশ্ন করে বেড়ায়। নিজের চরকা বাদে অন্য সকলের চরকা নিয়ে তাদের বেজায় কৌতূহল। বেতন, পরিবার, রিলেশনশিপের মতো সংবেদনশীল ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলোতে এদের অনেক আগ্রহ।
৮. চুলকানি রোগী : কথা বলুক কিংবা শুনুক এদের হাত হয় মাথায় নয় ঘাড়ে নয় কান চুলকাতে ব্যস্ত থাকে।
৯. খেই হারানো- মানব : এই বান্দারা কথার মাঝখানে হারিয়ে যায়। মনোযোগ দিয়ে কখনও কথা শোনে না। এদের মনোযোগ বক্তা ছাড়া অন্য সবখানেই থাকে।
পাঠক এবার আপনার জন্যে প্রশ্ন, আপনি কি এদের কারও মতো? তাহলে আপনাকে বলছি, সময় থাকতে বদলে ফেলুন বদভ্যাস। নয়তো আপনার সাথে কথা বলার আগ্রহ সবারই কমে যাবে।
*
সবার প্রিয় হতে চান?
সবার প্রিয় হয়ে উঠতে কে না চায়? আমাদের আচরণ, অভ্যাস আমাদের ব্যক্তিত্বের প্রকাশক। আপনার কিছু ছোট অথচ সাধারণ বৈশিষ্ট্য আপনার গ্রহণযোগ্যতা সবার কাছে অনেকটা বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। চলুন জেনে নেওয়া যাক, সবার প্রিয় হয়ে ওঠার ৫টি কার্যকর কৌশল
১. আগে দর্শনধারী এরপর গুনবিচারী।
নিজের পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, কথাবার্তা এই ব্যক্তিত্ব নির্দেশক কাজগুলো আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তুলতে পারে যদি এ বিষয়গুলোতে আপনি সঠিকভাবে সময় দেন। সবখানে আরাম খুঁজতে যাওয়াটা অযৌক্তিক। এমন কোনো কাজ বা আচরণ করবেন না যেটা আপনার সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। সোজা হয়ে দাঁড়ান, মেরুদণ্ড সোজা করে বসুন। কথা বলুন সামনের দিকে ঘুরে শ্রোতার চোখের দিকে তাকিয়ে।
যতই বলি না কেন, Dont Judge a book by its cover. এর মতো আগে দর্শনধারী এরপর গুনবিচারী। ও সত্যবচনই বটে।
তাই নিজের পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ, অঙ্গভঙ্গি, পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক হোন। আত্মবিশ্বাসী, গোছানো, পরিপাটি ও সুন্দর থাকুন।
২. আশপাশের পরিবেশের ব্যাপারে সজাগ হোন।
চারপাশের পরিবেশ ও মানুষজনের প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন হোন। তারা ৯ ধরণের মানসিকতার, তাদের আগ্রহের জায়গা কোনটি, তাদের বলেন, ব্যাপারগুলো নিয়ে ধারণা থাকলে অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ও কাজকর্ম কম হবে। একুশ শতকের অন্যতম প্রয়োজনীয় স্কিল Emotional intelle এর একটি প্রধান দিক হলো এই Self awareness. কখন কোন জায়গy কোন মানুষকে কোন কথাটা কীভাবে বলতে হবে সেটা নিয়েও যাতে আপনার একটা ধারণা থাকে।
তাই নিজের চারপাশ, পারিপার্শ্বিক মানুষ সম্পর্কে ধারণা রাখুন। সে অনুযায়ী কথায় ও কাজে প্রাসঙ্গিক হোন।
৩. শুনুন বোঝার জন্যে।
আমরা অধিকাংশ যতটা না শ্রোতা তার চাইতে বেশি তর্কপ্রিয়। আমরা উত্তর দিতে ভালোবাসি। কথার পিঠে কথা বলতে ভালোবাসি। তর্ক করতে ভালোবাসি। অথচ সবার প্রিয় হওয়ার জন্য অন্যতম কার্যকর দিক হলো একজন আদর্শ শ্রোতা হতে পারা। তাই কথার পিঠে কথা যুক্ত করে নিজেকে সবার কাছে তর্কপ্রিয় হিসেবে তুলে ধরার চাইতে বক্তা কী বলতে বা বোঝাতে চাইছেন সেটা ঠান্ডা মাথায় মনোযোগ সহকারে শুনে বোঝার চেষ্টা করুন।
আর সব কথারই উত্তর দিতে হবে অমনও তো কোথাও বলা বা লেখা নেই। তাই তর্ক করা বা উত্তর দেবার জন্যে নয় কথা শুনুন বোঝার জন্যে। তাহলেও সবার প্রিয় হয়ে উঠতে পারবেন।
কথায় বলে, Just because you are right that does not mean I am wrong. আর ইংরেজি ৯ কে উল্টো দিক থেকে দেখতে ইংরেজি ৬ এর মতোই লাগে। তাই কে কোন ব্যাপারটা কোন দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছে। সেটাও দেখা জরুরি। আমরা প্রতিটা মানুষ আলাদা, আমাদের চিন্তাভাবনা আলাদা, দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। তাই মতভেদ হওয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। মতভেদ হলেই তর্কে জড়ানোটা খুব একটা ভালো সিদ্ধান্ত কখনই নয়।
৪. সহমর্মিতা দেখান।
আমাদের মধ্যে দিন দিন সহানুভূতি, সহমর্মিতা কমে যাচ্ছে। আমাদের কাউকে নিয়ে ভাবার সময় নেই, কারও কথা শোনার সময় নেই। ক্রমশ যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি আমরা। আমরা আমাদের আশেপাশের কারও আনন্দে। হই না, তাদের কষ্টে সমব্যথী হই না। এমনকি আমাদের ঠিক পাশের মানুষটার মনের মধ্যে কী চলছে সেটা আমাদের রা। আর আমরা জানার চেষ্টাটাও করি না। কারণ কারও জন্যে আমাদের সময় নেই। আমরা অনেক ব্যস্ত। অথচ আমাদের আশেপাশের সউই হয়তো তার সমস্যার কথাটা খুলে বলতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাচতো।
আপনার কাছে কেউ আগ্রহ নিয়ে কিছু বলতে আসলে এটা তো আমি আগে একেই জানি! বা এই সমস্যায় আমি কত পড়সি! বলে তার জানা, শেখা বা সমস্যাটাকে উড়িয়ে দেবেন না।
নিজের আশেপাশের কাছের মানুষ, বন্ধু, আত্মীয়ের দিকে নজর দিন। ওদের সমস্যার কথা শুনুন। সবসময় সাহায্য করতে নাই বা পারলেন কিন্তু কখনও কখনও যদি কারও সমস্যার কথা গুরুত্ব সহকারে শোনা হয় তাহলেও অপর মানুষটা অনেকখানি হালকাবোধ করেন। আর এতে করে আপনিও হয়ে উঠতে পারবেন অনেকের কাছের, নিজের আর ভীষণ প্রিয় কেউ।
৫. মহানুভবতা সংক্রামক।
সালাম, কুশলাদি বিনিময়ের মতো ছোট ছোট মহান অভ্যাস আপনাকে অনেকের থেকে আলাদা করে তোলে। এই কথাটা আমি প্রায়ই বলি। আমাদের বাবা আমাদের বন্ধুদেরকে দুই ক্যাটাগরিতে ভাগ করে রেখেছেন। আর ক্যাটাগরিটাও করা হয়েছে কারা দেখা হলে সালাম দেয় আর কারা দেয় সেটার ওপরে ভিত্তি করে। ব্যাপারটা বেশ মজার কিন্তু।
আপনার করা ছোট্ট কিছু সুন্দর ব্যবহার আর আচরণ যদি অন্য কারও দিন ভালো করে দেয় তাহলে ওই মানুষটার চোখে আপনার প্রিয় হয়ে ওঠাটা খুব অস্বাভাবিক কিছু নয়।
চেষ্টা করুন সালাম দেবার, পরিচিতদের সাথে নিয়মিত কুশল বিনিময় করার, হাসিমুখে কথা বলার, ধন্যবাদ দিন সময়ে-অসময়ে, প্রশংসা করুন যেকোনো ভালো কাজের। দেখবেন আপনার এই ভালো দিকগুলো ছড়িয়ে পড়বে আপনার আশেপাশের মানুষগুলোর মাঝেও।
এখন থেকেই একটু একটু করে ওপরের পাঁচটি দিক নিয়ে নিয়মিত কাজ করা শুরু করুন। দেখবেন আশপাশের প্রতিটা মানুষ আপনাকে কত সহজে আপন করে নিচ্ছে।
*
ইংরেজি : ভাষা নাকি বিষয়?
ইংরেজি হলো একটি ভাষা। আর ভাষার কাজ হলো কমিউনিকেট অথচ আমরা ইংরেজিকে ব্যবহার করি একটি বিষয় হিসেবে। এবং তা লক্ষ্য হলো এ প্লাস পাওয়া। আর এজন্যে আমরা অনেক অনেক গ্রামাতে নিয়ম আর উদাহরণ পড়ি। এবং হয়তো শেষ পর্যন্ত এ প্লাসও পাই। আমরা জানি না এই গ্রামারগুলোর বাস্তবিক প্রয়োগ কেমন হয়। কোনটান সাথে কোনটা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত।
ইংরেজির প্রয়োজন কিংবা গুরুত্ব কি মোটে এইটুকুই? এ প্লাস পেলেই হয়ে গেলো?
আমি আমার জীবনে বহু ইভেন্টে গিয়ে স্টুডেন্টদেরকে গিয়ে একটা খুবই সাধারণ প্রশ্ন করেছি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত খুব কম সংখ্যকই সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছিল।
Article, Parts of Speech তো সেই শৈশবে পড়ে আসা ব্যাকরণ। আমার প্রশ্ন ছিলো, Article কোন Parts of Speech?
এই প্রশ্ন শোনামাত্র বেশিরভাগই বেশ বিভ্রান্ত হয়ে যায়। দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। গুটিকয়েক মাত্র সঠিক উত্তরটা দিতে পারে।
আচ্ছা, চিন্তা করে দেখুন তো! আমি যদি এখন বলি,
I have a book.
অর্থাৎ আমার একটি বই আছে। এখানে, book এর আগে a আছে। এই a হলো Article! আর এখানে a আমার কথা কিংবা বক্তব্যের অংশ। তার মানে Article I Parts of Speech! Article কোন Parts of Speech? Article Adjective.
কীভাবে? সেটাও বলছি।
Adjective কী? Adjective হলো যেটা Noun বা Pronoun এর দোষ-গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ নির্দেশ করে! A book, An ant, The man এখানকার Article গুলো প্রতিটা Noun এর সংখ্যা নির্দেশ করছে। তাই Article হলো Adjective.
এই যে আমরা ছোটবেলায় Article, Parts of Speech এতবার পড়েছি, কিন্তু এই দুটোর মাঝেও যে সম্পর্ক আছে সেটা কিন্তু আমরা জানি না।
Tag Question এ আমরা পড়েছি,
He is a boy, isnt he?
কিন্তু কেন হয় এরকম সেটা আমাদের অজানা।
আসল কথা হলো, ইংরেজি নামের ভাষাটাকে বিষয় হিসেবে ব্যবহার করতে ভাষার আসল উদ্দেশ্যটাকেই গুলিয়ে ফেলেছি। ইংরেজিতে কথা বলার প্রসঙ্গ এলেই আমাদের ঘেমেনেয়ে বিশ্রী অবস্থা হয়। আমরা পালিয়ে বাঁচতে উল্টো দিকে দৌড় দেই।
যেহেতু, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার একদম শুরু থেকেই ইংরেজিকে একটা ভাষা হিসেবে আমাদের কাছে উপস্থাপন করা হয়। তাই ভাষা ইংরেজিকে তাতাস্থ করবার দায়িত্বটা আমাদের নিজেরই। কারণ আপনি যদি এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে ইংরেজিতে কথা বলতে অস্বস্তিতে ভোগেন তাহলে প্রতিযোগীতার দৌড়ে আপনাকে পিছিয়ে পড়তে হবে অনেকের চেয়ে। চাকরি পাবার আগে সিভি লিখতে গিয়ে, ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে চাকরি পাওয়া আটকে যাবে। চাকরি যদি পেয়েও যান, প্রেজেন্টেশন দিতে গিয়ে, ইমেইল করতে গিয়ে পদে পদে আপনাকে বিব্রত হতে হবে। ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে গিয়ে ইংরেজিতে কথা বলতে না পারার কারণে প্রমোশনটা ঝুলে যাবে। সবখানে অপদস্ত হতে হবে। তাই, শিক্ষাব্যবস্থাকে আসামী না করে এবার মাঠে নামুন।
কী করা যেতে পারে?
৪-৫ জন বন্ধু মিলে একটা গ্রুপ বানান। হোক সেটা আন্ডার গ্রুপ, সমস্যা নেই। আড্ডা দিন তবে ইংরেজিতে। নিয়ম করে প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট করে ইংরেজিতে গল্প করুন। এতে করে দেখবেন আপনার ইংরেজিতে কথা বলার জড়তা কমে যাবে, কথা বলার দ্রুততা বেড়ে যাবে। কয়েক মাস শেষে নিজের পরিবর্তন দেখে নিজেই চমকে যাবেন।
হ্যাঁ, আপনার মনে হতেই পারে যে বন্ধুরা পচাবে। কিন্তু আপনি তো তাদের সাথেই গ্রুপটা বানাবেন যারা নিজেরাও আপনার মতো শিখতে আগ্রহী। তাই না? তখন আপনারা নিজেরা নিজেরা ভুল করলেও কেউ কাউকে পচাবেন। আর এরপর যখন আপনাদের ইপ্রুভমেন্ট অন্যদের চোখেও পড়বে তখন অন্য যে বন্ধুটা আপনাকে প্রথম ব্যঙ্গ করেছিলো, সে ও চাইবে আপনাদের দলে ভিড়তে। এভাবে দেখবেন আপনাদের গ্রুপটা বড় হচ্ছে। আরেকটা কাজ করতে পারেন কিন্তু। যে ৪-৫ জন মিলে আড্ডার গ্রুপ বানিয়েছিলেন, তারাই একটা চ্যাটিং এর গ্রুপ খুলে ইংরেজিতে চ্যাটিং শুরু করে দিন না। দেখবেন ইংরেজি লেখার স্কিলটাও বেশ তাড়াতাড়ি ভালো হচ্ছে। পরীক্ষা তো দেই একদিন। চ্যাটিং করি সারাদিন। তাহলে কোনটা বেশি কাজে দেবে? বাংলিশে চ্যাট করে আপনারও কোনো লাভ নেই। আপনার বন্ধুদেরও। তাই ইংলিশে চ্যাট করে যদি নিজের কমিউনিকেশন স্কিলটা ভালো করা যায় তাহলে কেন নয়?
আর হ্যাঁ, এই চর্চাগুলো নিয়মিত করতে হবে কিন্তু। তা না হলে ফলাফল পাবেন না। তো আজ থেকেই শুরু করে দিন। দেখবেন সম্ভাবনাগুলো ঘুরে। বেড়াবে আপনার আশেপাশেই।
*
সমালোচনার পূর্বশর্ত!
মানুষ জাজমেন্টাল প্রাণি। আর আমাদের কথাবার্তার টপিকও হলো ঘুরে ফিরে মানুষই। মানুষকে নিয়ে কথা বলতে, নিন্দা করতে, জাজ করতে বড় ভালোবাসি আমরা। কাউকে জাজ করবার বেলায় খুব একটা সময় নেই না আমরা। শোনা কথায় কান দিয়ে মানুষকে ভুল বোঝার মতো ভুলটাও প্রায়শই হয়ে যায় আমাদের। তা কী করে এই ভুল থেকে বেরিয়ে আসা যায়? একটা গল্প বলা যাক! একবার এক লোক সক্রেটিসের কাছে তাঁর বন্ধু সম্পর্কে একটা কথা বলতে গেলো। তিনি প্রত্যুত্তরে তাকে জিজ্ঞেস করলেন তার আনা তথ্যটি ৩ ফিল্টার টেস্টে পাস করবে কি না? লোকটির ৩ ফিল্টার টেস্ট নিয়ে ধারণা ছিলো না! তাই সক্রেটিস তিনটি প্রশ্ন করে ৩ ফিল্টার টেস্টের ব্যাপারে বুঝিয়ে দিলেন।
১. তথ্যটি কি সত্য?
২. তথ্যটি কি কারও সম্পর্কে ভালো কথা?
৩. তথ্যটি কি প্রয়োজনীয়?
লোকটির প্রথম প্রশ্নের উত্তর ছিলো সত্য না মিথ্যা সেটা তার অজানা। সেটি আসলে শোনা কথা।
দ্বিতীয় উত্তর ছিলো, এটি আসলে কারও সম্পর্কে খারাপ কথা।
তৃতীয় উত্তর ছিলো, এটি আসলে শ্রোতার না জানলেও ক্ষতি নেই।
আমাদের শোনা অধিকাংশ কথাই আসলে এমন। তিন ফিল্টারের একটা ফিল্টারও অতিক্রম করে না। অথচ তবুও আমরা শোনা কথায় কান দিয়ে একটা মানুষকে চট করে জাজ করে বসি! এখন থেকে এই অভ্যাসটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
*
খুদেবার্তার আদবকায়দা
দুইটা নমুনা দেখাই বরং
1. Bro wanna talk. Its urgent. Call me.
2. This is my new number. Save it.
ঝামেলাটা এখানে কোথায় বলুন তো? মনে হয় ধরতে পেরেছেন। আচ্ছা বলেই দেই। এখানে নাম পরিচয় কিছুই নেই। কথা হলো কোনো অপরিচিত নাম্বার। থেকে এ ধরণের খুদেবার্তা আসলে মেজাজ খারাপ হওয়াটা কি অন্যায়?
চলুন কথা না বাড়িয়ে বরং খুদেবার্তা লেখার কায়দাকানুনগুলো শিখে ফেলি।
১. পুরোনো কথাই বলি। নাম লিখুন। যাকে খুদেবার্তা পাঠাচ্ছেন তাঁর নামটা উল্লেখ করুন শুরুতে। আমাদের নাম আমাদের খুব প্রিয়। আর নাম উল্লেখ করা হলে প্রাপক অন্তত নিশ্চিত হবে যে মেসেজটা আসলে তাকেই পাঠানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক বা সুপারভাইজারের নাম ভুল লেখার কারণে পুরো রিপোর্ট নতুন করে করার তিক্ত অভিজ্ঞতাও আছে অনেকের। তাই নামের বানানটা ঠিকঠাক লিখবেন।
২. একটা কমার (,) অনেক ক্ষমতা। ভুল জায়গায় কমা কিংবা একেবারেই কমা ব্যবহার না করলে আপনার কথার মানেটাই বদলে যেতে পারে।
উদাহরণ দেই
আয়মান ভাইয়া, একটা সমস্যা!
আয়মান ভাইয়া একটা সমস্যা!
তফাতটা বুঝলেন তো?
৩. কী প্রয়োজন বিস্তারিত গুছিয়ে বলুন।
৪. প্রাপকের সময় আর ব্যস্ততাকে সম্মান দেখান।
৫. কাজসংক্রান্ত কথা হলে পরে কখন আর কীভাবে যোগাযোগ করলে প্রাপকের সুবিধা সেটা জেনে নিন।
৬. সব লেখা শেষ হলে একটা লাইন গ্যাপ দিয়ে নিচে, ধন্যবাদ দিয়ে নিজের পরিচয়টা দিয়ে দিন। পরিচয় বলতে নাম, পদবি, কর্মরত সংস্থার নাম লিখে দিলেই হবে। আর যদি শিক্ষার্থী আর প্রতিষ্ঠানের কোনো ক্লাবের সদস্য হয়ে থাকেন তাহলে ক্লাবের নাম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামটা উল্লেখ করে দিলেই চলবে। ক্লাবের সদস্য না হলেও সমস্যা নেই, কোন ক্লাস আর স্কুল লিখলেই যথেষ্ট।
এখন থেকে খুদেবার্তা লেখার সময় এই বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখবেন। কারণ, আপনার খুদেবার্তাটাই প্রাপকের কাছে আপনার ফার্স্ট ইম্প্রেশন তৈরি করে দেবে। এটি পড়েই প্রাপক সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি আপনাকে সময়। দেবেন নাকি না।
*
টার্গেট অডিয়েন্স আসলে কারা?
পুঁথিগত সংজ্ঞা না দিয়ে সোজা করে বলি, টার্গেট অডিয়েন্স হলো আপনার কাজ বা প্রোডাক্ট যাদের জন্যে বানানো। এই যে ভিডিও বানানোর পর ভিউ কেন বাড়ে না সেটা ভেবে মাথার চুল ছিঁড়ছেন, ভেবে দেখেছেন কাদের জন্যে ভিডিওটা বানানো, কাদের জন্যে ভিডিওটা কাজে আসবে? সেই জায়গায় ভিডিওটা আদৌ পৌঁছেছে নাকি?
দৈনিক পত্রিকাগুলোর উদাহরণ দেই। তাহলে আরও সহজ হবে। প্রায় সব দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাথেই সপ্তাহে ৭ দিন অতিরিক্ত একটা ছোট ট্যাবলয়েড দেওয়া হয়।
প্রথম আলোর কথাই ধরুন। সপ্তাহে ৭ দিন ৭টা আলাদা আলাদা ট্যাবলয়েড দেওয়া হয়।
এই একেকটা ট্যাবলয়েডে একেক রকমের বিজ্ঞাপন স্থান পায়। মূল পত্রিকারও একেক পৃষ্ঠায় একেক রকমের বিজ্ঞাপন স্থান পায়। কেন এটা ভেবেছেন?
এই একেকটা ট্যাবলয়েড আর পৃষ্ঠার টার্গেট অডিয়েন্স ভিন্ন। তাদের চাহিদাও ভিন্ন। এটাই আসল কারণ। আর এ কারণেই পড়াশোনা পাতা কিংবা শিক্ষার্থীদের জন্যে আসা ট্যাবলয়েডে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্টুডেন্ট স্কলারশিপের, স্টুডেন্ট ব্যাংকিং আর স্টুডেন্ট লোনের মতো বিজ্ঞাপন থাকে। অন্যদিকে যেই ট্যাবলয়েড বা পৃষ্ঠার টার্গেট অডিয়েন্স নারী তাদের জন্যে সেখানে শ্যাম্পু, ডিটারজেন্ট, মশলার বিজ্ঞাপনই থাকে।
তাই আপনি যে কাজটা করছেন বা যেই পণ্যটা বানিয়েছেন সেটা কাদের জন্যে সেটা খুঁজে বের করুন। আর তারপর সেটা জায়গামতো পৌঁছানোর জন্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। একটা নির্দিষ্ট পণ্যের চাহিদা সবার থাকবে এমনটা কখনই হবে না। তাই, প্রচারণা চালান বুঝেশুনে।
*
উপস্থাপক হতে চান?
বর্তমান সময়ে পেশা হিসেবে উপস্থাপনা অর্থাৎ অনুষ্ঠান সঞ্চালনার জনপ্রিয়তা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। আর এই উপস্থাপনা আর সঞ্চালনা আমারও প্রিয় কাজগুলোর একটা। তা কীভাবে একজন আত্মবিশ্বাসী উপস্থাপক হয়ে ওঠা যায়? আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে আপনাদের জন্যে রইলো কিছু পরামর্শ!
১. কিউ কার্ড এডিট করে নিন : বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইভেন্টের কিউ কার্ডের লেখক আর বক্তা ভিন্ন হয়ে থাকেন। লেখকের লেখার ধরণ আর বক্তার বলার ধরণে অমিল থাকাটাও তাই অস্বাভাবিক নয়। কিউ কার্ডের স্ক্রিপ্ট প্রয়োজনমতো এডিট করে নিন। স্ক্রিপ্টে লেখা কথা বলুন নিজের মতো করে। এতে করে আপনাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে হবে।
২. মাইক্রোফোন টেস্টিং : একেক একমের ইভেন্টে একেক ধরণের মাইক্রোফোন থাকে। একেকটার কাজ আবার একেক রকমের। মাইকগুলোকে নিজের সাথে অ্যাডজাস্ট করে নিন যাতে কথা ঠিকমতো শোনা যায়। মঞ্চে ওঠার আগেই মাইক্রোফোন টেস্টিং সেরে ফেলুন। কথা বলার সময় মাইক্রোফোনটা যেন সঠিক অবস্থানে স্থির রাখা হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে!
৩. অলসতা দূরীকরণ : লাঞ্চ বা যেকোনো স্ন্যাকস ব্রেকের পরপর দর্শকদের মধ্যে ঝিমুনি চলে আসে। তাই, খাওয়াদাওয়া আর ব্রেকের পর দর্শকদের আলস্য দূর করতে একটু আধটু মজার অ্যাক্টিভিটি করাতে পারেন।
৪. স্ক্রিপ্ট হুবহু না পড়াই ভালো : স্ক্রিপ্ট কিন্তু বেদবাক্য নয় যে পরিবর্তন, পরিমার্জন কিংবা সংশোধন করা যাবে না। গত্বাঁধা স্ক্রিপ্টই হুবহু পড়ে গেলে ব্যাপারটা বেশ একঘেয়ে হয়ে যাবে। তাই মাঝে মাঝে স্ক্রিপ্টের বাইরেও কথা বলুন।
৫. দর্শকদের নিয়েও ধারণা রাখুন : দর্শকদের নিয়ে একটুখানি গবেষণা মঞ্চে ওঠার আগেই করে নিন। মিলিয়ে নিন যেই কথা, তথ্য, গল্প কিংবা হিউমার আপনি দিতে যাচ্ছেন সেগুলো তাদের জন্যে প্রাসঙ্গিক কি না। পরে দেখা যাবে ঐ অঞ্চলের মানুষদের সামনে তাদের নিজস্ব কোনো সংস্কৃতি নিয়েই এমন কোনো মজা আপনি করে বসেছেন সে তাদের জন্যে একটু অপমানজনক ছিলো।
৬. মঞ্চে উঠে চর্চা করুন : মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সাথে কথা বলা কখনই কোনো মামুলি ব্যাপার নয়। এটা নিয়ে ভয়ভীতি থাকতেই পারে। ফাইনাল ইভেন্টে মঞ্চে দাঁড়িয়ে কাঁপাকাপি করার চেয়ে বরং মঞ্চভীতি কাটাতে আগেভাগেই মঞ্চের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিন। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই কয়েকবার মঞ্চে উঠে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন। ভীতি কেটে যাবে।
৭. শুরুটা করুন চমকে দিয়ে : শুরুর বক্তব্যটা হতে হবে প্রাণবন্ত। গল্প, উক্তি, গান, কোনো আঞ্চলিক ঐতিহ্য যেকোনো কিছু দিয়ে শুরু করতে পারেন। দর্শক চমকে যাবে। শুরুতে দেওয়া চমক পুরো অনুষ্ঠানজুড়েও বজায় থাকবে।
৮. ঝিমিয়ে পড়া দর্শকদের জাগাতে কৌতুক বলতে পারেন : মজার মজার কিছু জোক বা স্টোরি আগেভাগেই রেডি রাখুন। ঝিমিয়ে পড়া দর্শকদের জাগাতে কাজে লাগবে।
৯. পোশাক নির্বাচনে সতর্ক থাকুন : ইভেন্টের ধরণ অনুযায়ী ড্রেসকোড মেইনটেইন করেন। কর্পোরেট ইভেন্টে ফরমাল পোশাক আর ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে দেশীয় পোশাক পরতে পারেন।
১০. আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার আনবে বৈচিত্র্য : ইভেন্টে অঞ্চল অনুযায়ী আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করতে পারেন। তুলে ধরতে পারেন প্রাসঙ্গিক কোনো আঞ্চলিক ঐতিহ্য। দর্শক মজা পাবেন।
১১. সমাপ্তি হোক বিশেষ : কোনো ইভেন্টের শুরুটা যতখানি গুরুত্বপূর্ণ তেমনি শেষটাও ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই কেবল শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে ইভেন্ট শেষ না করে চেষ্টা করুন কিছু কল টু অ্যাকশন অর্থাৎ ইভেন্টের পর দর্শকদের করণীয় কী সেটা নিয়ে একটু ধারণা দিতে। ওপরে উল্লেখ করা পরামর্শগুলো পুরোপুরি আমার নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তুলে ধরা। আমি নিজে উপস্থাপনা করার সময় এই কাজগুলো করার চেষ্টা করি। আশা করি আপনাদেরও কাজে লাগবে। ভবিষ্যৎ উপস্থাপকদের জন্যে শুভকামনা!
*
পাবলিক স্পিকিং নিয়ে ভয়?
যত যাই বলা হোক না কেন, পাবলিক স্পিকিং আর প্রেজেন্টেশন নিয়ে আমাদের ভয়টা বেশ পুরোনো। দুটো কাজেই অনেক মিল থাকলেও একটুখানি পার্থক্যও আছে। প্রেজেন্টেশন ব্যাপারটা এখনও ক্লাসরুম, মিটিং রুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে এই প্রেজেন্টেশন জিনিসটাই যখন বড় কোনো কনফারেন্স রুম বা মিলনায়তনের মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সামনে দিতে হয় তখন সেটা আবার পাবলিক স্পিকিং হয়ে যায়। পুঁথিগত সংজ্ঞার দিকে না হয় আর না গেলাম। চলুন জেনে নেই কিছু পরামর্শ যেগুলো আপনাকে একজন চমৎকার বক্তা হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করবে।
১. কীভাবে শুরু করবেন : বক্তব্যের শুরুতে দর্শকের মনোযোগ আর বক্তার ভয় দুটোই থাকে একেবারে চূড়ায়। তাই এই ব্যাপারটা কাজে লাগাতে হবে। এই প্রথম ১০-১৫ সেকেন্ডে দর্শক সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে যে তারা আপনার পরবর্তী কথাগুলো শুনবে নাকি না। তাই শুরুটা এমনভাবে করতে হবে যাতে করে দর্শকের আগ্রহটা জন্মানোর আগেই নষ্ট না হয়ে যায়। গল্প, ফ্যাক্ট, প্রশ্ন, মজার কোনো প্রাসঙ্গিক তথ্য এর যে কোনো কিছু দিয়ে হতে পারে আপনার বক্তব্যের শুরু।
২. বরফ ভাঙ্গার খেলা : আমরা সাধারণত কোনো ইভেন্টে গেলে পরিচিত মানুষদের মধ্যেই ঘুরপাক খাই। বন্ধু বা কলিগ ছাড়া অন্য কারও পাশে বসিও না। একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি একটা ইভেন্টে কিন্তু মোটামুটি সমমনা মানুষেরাই যায়। তাই আপনার আশেপাশের মানুষগুলো আপনার অচেনা হলেও তাদের আগ্রহ কিন্তু আপনার আগ্রহের সাথে মেলে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে এখানে উপস্থাপক কী করবে। উপস্থাপক আসলে এই ব্যাপারটাই সবাইকে মনে করিয়ে দেবে যে ইভেন্টের প্রতিটি মানুষের আগ্রহের বিষয়বস্তুটা আসলে একই। দর্শকদের দিয়ে মজার কোনো এঙ্গেজিং অ্যাক্টিভিটি করাতে পারেন যেটা তাদের মধ্যকার অভ্যন্তরীণ জড়তার বরফটাকে ভেঙ্গে গলিয়ে ফেলবে।
৩. দর্শক নিয়ে গবেষণা : একজন বক্তা হিসেবে আপনার কাজ হবে আপনি কাদের সামনে কথা বলতে যাচ্ছেন তাদের নিয়ে আগে থেকে ধারণা নিয়ে যাওয়া। তাদের পছন্দ, আগ্রহের বিষয়াদি নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করে নিয়ে এরপর সেটার সাথে মিল রেখে নিজের বক্তব্য তৈরি করে ফেলা। এতে করে একটা সুবিধা হবে, আপনি দর্শকের সামনে কোনো অপ্রাসঙ্গিক কথা, উক্তি বা তথ্য বলে ফেলার ঝুঁকি কম থাকবে।
৪. দর্শকদের অংশগ্রহণ : দর্শকদের মধ্যকার জড়তা ভেঙ্গে ফেলার মানে কিন্তু এই নয় যে এরপর আপনি একাই শুধু কথা বলে যাবেন আর দর্শক সেগুলো শুনে যাবে। আপনার বক্তব্যের সাথে দর্শকদের কানেক্ট করুন। ছোট ছোট কাজ করতে বলুন। একটা উদাহরণ দিলে পরিষ্কার হবে, কিছুদিন আগে TEDx এ একটা ছোট্ট বক্তব্য দেবার সুযোগ হয়। আমার। সেখানে কথা বলেছিলাম কী করে আমাদের স্বপ্নগুলোকে বাস্তবে। রূপ দেওয়া যায়। ধরা যাক আপনিও স্বপ্ন নিয়েই কথা বলছেন। স্বপ্নগুলোকে লিখে ফেললে সেটা লক্ষ্যে পরিণত হয়। একটা কাজ করুন না। আপনার দর্শকদেরকেও বলুন নিজের স্বপ্নটা চট করে তারিখসহ লিখে ফেলতে! ব্যস, দর্শক কানেক্টেড!
৫. চোখাচোখি : কারও চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা কারও কারও কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজগুলোর একটি। কিন্তু একজন পাবলিক স্পিকার বা উপস্থাপক তো আর মঞ্চের ফ্লোরের দিকে তাকিয়েও কথা বলতে পারবেন না তাই না? তো করা কী যায়? যে। মিলনায়তন বা হল রুমে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন, সেটার সামনের দিকে কয়েকটা পয়েন্ট সেট করে রাখুন। কথা বলার সময় ঘুরে ফিরে ওগুলোর দিকে তাকান, এতে করে ফ্লোরের দিকে কিংবা কারও চোখের দিকে না তাকিয়েও চোখাচোখি তথা আই কন্ট্যাক্ট মেইনটেইন করা যাবে।
৬. মঞ্চভীতি : মঞ্চে দাঁড়িয়ে অনেক মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য সবার সামনে তুলে ধরাটা মামুলি কোনো কাজ নয়। এতে ভয়। পাওয়াটাই উল্টো অস্বাভাবিক। ভয়টাকে একবারে বিদায় করা না। গেলেও একটুখানি কমানো সম্ভব। আগেভাগে মঞ্চটার সাথে পরিচিত হয়ে নিন। মঞ্চে উঠে হাঁটাহাঁটি করুন। স্পিচটা বলে প্র্যাকটিস করুন ইভেন্ট শুরুর আগে। কোন কোন পয়েন্টগুলোর দিকে তাকিয়ে আই। কন্ট্যাক্ট মেইন্টেইন করবেন সেটা নির্ধারণ করুন। দেখবেন ভয় অনেকটা কেটে গেছে।
৭. বডি ল্যাঙ্গুয়েজ : আমরা মুখে যতখানি কথা বলি তার চেয়ে অনেক বেশি মনের ভাব প্রকাশ করি আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে। আমাদের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মোট দুটো অংশ আছে!
ক. Gesture : কথা বলা কিংবা কাউকে বোঝানোর সময় প্রয়োজনে আমরা অনেকেই হাত নেড়ে বোঝাই বা ব্যাখ্যা করি। এটাই হলো Gesture.
খ. Posture : কথা বলার সময় আমাদের দাঁড়ানো কিংবা বসার ধরণটাই হলো প্রকৃতপক্ষে Posture.
কথা বলার সময় এই Gesture আর Posture-এ যেন ভারসাম্য থাকে সে দিকে নজর রাখতে হবে। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলতে হবে।
৮. যেভাবে বক্তব্য তুলে ধরবেন : বক্তব্য দেবার ক্ষেত্রে কী বলছেন তার চাইতে কীভাবে বলছেন সেটা অনেক বেশি জরুরি। আপনার দর্শকদের বয়স, মানসিকতার সাথে মিলিয়ে নিজের কথাগুলো তুলে ধরুন। গল্প বলুন। এমন কিছু করুন যাতে দর্শক সেটার সাথে রিলেট করতে পারে। ভুলেও স্ক্রিপ্ট হাতে নিয়ে মঞ্চে উঠবেন না। দেখেই যদি পড়বেন তাহলে পড়ার প্রয়োজন কী? দেখে দেখে পড়া আর বক্তব্য দেওয়া তো আর এক জিনিস নয়!
৯. টপিক নিয়ে গবেষণা : অধিকাংশ অনুষ্ঠানের বক্তব্যেই বক্তার বক্তব্যের পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে ধারণা দেওয়া হয় না। যে বিষয়টা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে সেটা নিয়ে বিস্তারিত জানতে হলে কোথা থেকে সাহায্য নেওয়া যেতে পারে সেটা জানানো হয় না। বক্তব্য দেবার আগেই বিষয়বস্তু নিয়ে একটু ঘাটাঘাটি করুন। দেখে নিন আগে এই টপিক নিয়ে কে কী বলেছে। চিন্তা করুন ইউটিউব, টেড টক রেখে মানুষের আপনার কথা শুনে কী লাভ। চেষ্টা করুন যাতে অনলাইনে পাওয়া বক্তব্য আর পরামর্শগুলোর চেয়ে আপনার বক্তব্য আর পরামর্শগুলো আলাদা হয়। সহজ বাংলায় লোকের পয়সা উসুল করতে সাহায্য করুন।
১০. ভেন্যু : দর্শক আর টপিক নিয়ে গবেষণার কথা তো আগেই বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি ভেন্যু নিয়েও একটু আধটু ধারণা রাখলে আখেরে আপনারই সুবিধা। ইভেন্ট শুরুর অন্তত কিছুক্ষণ আগে গিয়ে দেখে নিন ভেন্যুর অবস্থা। আয়োজকদের সাথে পরিচিত হয়ে নিন। দেখবেন জায়গাটা আর অপরিচিত লাগছে না।
১১. স্বরের ব্যবহার : শুধুমাত্র আপনার কণ্ঠস্বরের ওঠানামা করেই আপনি আপনার বক্তব্যে একটা আলাদা মাত্রা যোগ করতে পারেন। ৯ কণ্ঠস্বরের অবস্থা কিন্তু আমাদের মধ্যকার আবেগগুলোকে ফুটিয়ে তোলে। তাই আনন্দ, দুঃখ, বিস্ময়ের মতো আবেগগুলো যখন বক্তবে তুলে ধরবেন তখন নিজের কণ্ঠস্বরটাকেও সাবলীলভাবে কাজে লাগান।
১২. স্পিচ ডিলাইটস : ভেন্যু, দর্শক আর টপিক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে প্রায়ই দেখবেন এর সাথে প্রাসঙ্গিক কোনো না কোনো মজার ঘটনা, তথ্য পেয়ে যাবেন। এগুলো কাজে লাগান। সুযোগ বুঝে এগুলো। আপনার বক্তব্যের সাথে জুড়ে দিন। দর্শক বেশ মজা পাবে। এই ব্যাপারগুলোকেই বলে স্পিচ ডিলাইটস।
১৩. গল্পের শক্তি : নিউটনের মহাকর্ষ সূত্রের বিবৃতি মনে না থাকলেও নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার পর যে মহাকর্ষ সূত্রটা আবিষ্কৃত হয়েছিল এই ব্যাপারটা আমাদের সবার মনে আছে। এই হলো গল্পের শক্তি। কারও মনে কোনো ব্যাপার বা ঘটনা গেঁথে ফেলতে চাইলে গল্প বলুন। গল্পের ছলে যা বোঝাতে চাইছেন বোঝান। অনেক দিন মনে রাখবে। আপনাকে দর্শক।
১৪. সমাপ্তি : শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে আর কত বক্তব্যের শেষ করবেন বলুন তো? বক্তব্যের শেষে ব্যতিক্রম কিছু আনতে চাইলে এই শব্দ দুটোকে অতিক্রম করতে হবে! শুরুর মতো সমাপ্তিটাও করুন দর্শককে আরেক দফা চমকে দিয়ে। গল্প, উক্তি, ফ্যাক্ট, মজার কোনো প্রশ্ন কিংবা দরকারে এতক্ষণ যা যা বলেছেন সেটার সারমর্ম বলুন। অন্তত শুকনো ধন্যবাদের চেয়ে বেশি কাজে লাগবে।
নিজের মতামত, মনোভাব আর আইডিয়াকে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে তুলে ধরতে পারাটা একটা অনেক বড় দক্ষতা। একবার অর্জন করে ফেলতে পারলে দেখবেন একুশ শতকের প্রতিযোগিতার দৌড়ে আপনি কতখানি এগিয়ে!
*
নিজে নিজে কীভাবে অনুশীলন করবো?
যুগে যুগে সবাইকে একটা উপদেশ দেয়া হয়েছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে প্র্যাক্টিস করো! তাহলে অনেক ভালো করতে পারবে। হ্যাঁ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কিংবা খালি নিজে নিজে কথা বলে প্র্যাক্টিস করলেও অনেক লাভ। কিন্তু, ডিজিটাল যুগে একটা ডিজিটাল সমাধান তো দেওয়াই যায়, তাই না?
নিজেকে ভিডিও করেন। এবং বিশ্বাস করেন, এটা অনেক কাজে দিবে। আমরা দুই ভাই কয়েক বছর ধরে ভিডিও করে যাচ্ছি। এবং একদম শুরুর ভিডিওগুলোর সাথে এখনকার ভিডিওগুলোর তুলনা করলে আকাশ-পাতাল তফাত দেখতে পাই আমরা। এমন না যে আপনাকে ভিডিও করে আপলোড দিতে হবে। আপনি ভিডিও করে খালি দেখেন। শুধু বাচনভঙ্গি নয়, আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজেরও অনেক খুঁটিনাটি আপনার চোখে ধরা পড়বে।
প্রথম প্রথম নিজেকে দেখতে এবং বিশেষ করে নিজের কণ্ঠ শুনতে খুবই অস্বস্তি লাগবে, কিন্তু, খুব দ্রুতই আপনি অনেক কিছু শিখে যাবেন।
আর যদি অনলাইনে ভিডিও আপলোড করতে পারেন, তাহলে মানুষের সামনে কথা বলার আত্মবিশ্বাস পাবেন। মানুষ আপনাকে এমন অনেক সাজেশন দিতে পারবে যেটা আপনার চোখের সামনে থাকলেও আপনি দেখতে পারছিলেন না। এবং হেট কমেন্ট আসা শুরু করলে আপনি নিন্দুকদের সামলানোর টেকনিক শিখে ফেলবেন!
*
আবদারের কমিউনিকেশন
কমিউনিকেশনের একটা বেসিক কন্সেপ্ট আমরা সবাই ছোটবেলা থেকে ব্যবহার করে এসেছি। যেমন, আমাদের যদি কোনো খেলনা দরকার হত তাহলে আমরা দেখতাম যে আব্বু কিংবা আম্মু কখন সবচেয়ে খুশি আছেন। মেজাজ খারাপ থাকলে ধারে কাছেও ঘেঁষা যাবে না। কিন্তু যখনই তারা একটু খুশি থাকবেন, তখনই আব্বু আমাকে ওই গাড়িটা কিনে দাও না আ আ আ!
বাচ্চাকালেই আমরা জানতাম যে মানুষের মুড বুঝে কথা বলতে হয়। কিন্তু বড় হয়ে এই বেসিকটাই আমরা অনেক সময় ভুলে যাই।
কেউ হয়তোবা অনেক কাজের মধ্যে আছে। না বুঝে শুনে, অই দোস্ত! আমার এই কাজটা করে দে না প্লিজ! আমার একটা মুভির টিকেট লাগবে…তুই তো সিনেমা হলের মানুষজনকে চিনিসই…। আপনি কথা শেষ করার আগেই অন্য পাশে বিস্ফোরণ হয়ে যেতে পারে।
এবং এটাই কিন্তু হয় অনেক সময়। আপনি কারও সাথে কথা বলতে গেলেন তো বলা নেই কওয়া নেই, আপনাকে তুলে চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করা শুরু করে দিলো। আপনি ভাবছেন আপনি এমন কী করেছেন যে আপনাকে এভাবে কথা শুনাচ্ছে। আপনিও হয়তোবা মনে কষ্ট পেয়ে বলে ফেললেন, সবা৯ আমাকে পাইসেটা কী! আমি এত কিছু করি তবুও আমাকে কেউ দেখতে পারে না…। …মূল্য কেউ বুঝলো না…না থাকলে তোদের কী হইতে জানিস!…আমার সাথেই কেন সব সময় এমন…।
আসলে আপনি হয়তোবা কিছু করেননি। খালি টাইমবোমা ফাটার সময় পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন আরকি। ওই মানুষটি হয়তোবা সবার কাছ থেকে চাপ নিয়েই যাচ্ছিল। কোনো এক উছিলা, উপায় খুঁজছিলো রাগটা ঝাড়ার জন্য। এবং তাই হয়তোবা আপনার উপর চড়াও হয়েছে। হয়তোবা ভেবেছিল, আপনি কাছের মানুষ বলে রাগ ঝাড়ার ব্যাপারটি বুঝতে পারবেন। কিন্তু, আপনিও যদি দুই-একটা কথা শুনিয়ে দেন, তাহলে তো আগুনে আরও তেল। ঢাললেন শুধু।
মানুষ খারাপ ব্যবহার করলে মাথা পেতে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু, সব সময় সব জিনিস ব্যক্তিগতভাবে নিয়ে আঘাত পাবেন না। মানুষ আপনার সাথে কীভাবে আচরণ করছে, সেটা আপনার চেয়ে ওই মানুষটির পারসোনালিটির উপর বেশি নির্ভর করে।
*
আপনি কাদের সাথে কথা বলছেন?
আমরা যখন অনলাইনে ভিডিও বানাই, আমাদের একটা ধারণা থেকে যে আমরা কাদের সাথে কথা বলছি। ইউটিউবে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পাই যে কারা আমাদের ভিডিও দেখছেন। ইউটিউব ভিডিওর অ্যানালিটিক্স অনুযায়ী আমরা বুঝতে পারি যে আমরা মূলত তরুণদের জন্য কথা বলছি। তাই, আমাদের ভিডিওর টপিকগুলোও আমরা তেমনিভাবে সিলেক্ট করি।
এখন আপনি বলবেন, ভাই! সব জায়গায় তো আর আপনার ইউটিউব নাই। তখন কী করবো?
এই প্রশ্নটা আসলে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে সব বিজনেস স্টুডেন্টকে এটা শেখানো হয়। বিষয়টা হচ্ছে টার্গেট গ্রুপ সেট করা। অর্থাৎ, কারা আপনার কথা শুনবে তাদের বর্ণনা তৈরি করা।
উদাহরণ মনে করেন এই বইটা। ইউটিউবে কারা ভিডিও দেখবে, এটা আন্দাজ করতে পারলেও, এই বইটা কারা পড়বে তা সম্পর্কে তো আমাদের ১০০% ধারণা নাই। তাই, প্রথমে নিজেদের প্রশ্ন করলাম যে বইটা কাদের জন্য। উত্তর পেলাম; তরুণদের জন্য, স্টুডেন্টদের জন্য, কর্পোরেট মানুষের জন্য। এখন প্রশ্ন করলাম যে, বইতে কী বলে সম্বোধন করবো? তুমি না আপনি? তুমি বললে যেই কর্পোরেট মানুষজন আমাদের চেয়ে বয়সে বড়, তারা রেগে যেতে পারেন। তাহলে বাকি থাকলো আপনি। আপনি করে। তো একটা ছোট বাচ্চার সাথেও কথা বলা যায়। তাই, এই বইতে আপনি। আপনি করেই আমরা আপনাকে সম্বোধন করেছি।
এখন মনে করেন আমরা কোনো ভার্সিটিতে কথা বলতে যাচ্ছি। মনে করেন ৩য় বর্ষের ক্লাস নিচ্ছি। আমরা সহজেই তুমি করে বলতে পারি। কিন্তু তবুও আমরা আগে পারমিশন চেয়ে নেই যে, তুমি বলে সম্বোধন করতে পারবো কি না। কারণ, একবার তুমি করে বলতে গিয়ে শিক্ষা হয়েছিল।
গল্পটা বলি। আমি তখন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্কেটিং-এর ক্লাস নিচ্ছি। তো একদিন ক্লাসে আমরা কথা বলছি এমন পণ্য নিয়ে যেটা দরকার, কিন্তু কিনতে একদম আনন্দ লাগে না। মনে করেন চকোলেট, কিনতে টাকা লাগলেও আনন্দ হয় যে আপনি মজার একটা চকোলেট খাচ্ছেন। তো, আমি যখন উদাহরণ চাইলাম এমন পণ্যের; যেটা দরকার, কিন্তু কিনতে একদম আনন্দ লাগে না, তখন একজন বলে উঠলো, স্যার! ডায়পার!
আমি ভেবেছিলাম উত্তর আসবে টেক্সট বই, পরীক্ষার খাতা এসব। তাই, প্রশ্ন করলাম, এত কিছু থাকতে তোমার মাথায় ডায়পারই কেন আসলো? তখন সে উত্তরে বলল, স্যার, আমার ২ বছরের বাচ্চার জন্য প্রতি মাসেই কিনতে হয়তো, তাই। আমার তো আক্কেলগুড়ুম। আরও প্রশ্ন করতে গিয়ে বের হয়ে আসলো যে সে ৫ বছর ধরে ম্যারিড। সে কলেজের পর একটু গ্যাপ দিয়ে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে। আমি হিসেব করে দেখলাম যে সে কম করে হলেও আমার চেয়ে ২ বছরের সিনিয়র। আর আমি তাকে তুমি করে এতদিন ডেকেছি। তাও আবার মাঝেমাঝে নাম ধরে!
সমাধান কী? আমি এরপরের দিন থেকে তার সাথে কথা বললে ইংলিশে বলতাম। কারণ সিনিয়র হোক জুনিয়র হোক, ইংলিশে তো সবাই You!
*
অর্থহীন কমিউনিকেশন
অনেককেই হয়তোবা বলতে শুনেছেন যে, কী সব আড্ডা-ফাউড়া দিস! এভাবে সময় নষ্ট করলে কি হবে! অনেকেই হয়তোবা এগুলোকে অর্থহনি আড্ডা হিসেবে দেখেন। কিন্তু, আমাদের কাছে অর্থহীন কমিউনিকেশন মানে কিন্তু আড্ডা নয়। বরং সীমিত পরিসরে হলেও, এগুলো অনেক দরকার। এই আড্ডার মধ্য দিয়েই অনেক গভীর বন্ধুত্ব তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হলে শত শত হোমওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট মনে না থাকলেও; মনে। থাকবে প্রাণখোলা আড্ডাগুলো। এবং সারাদিন বইয়ের মধ্যে মুখ বুজে রাখার চেয়ে একটু গিয়ে মানুষের সাথে কথা বললে জীবনে বাঁচার মত বাঁচা হয়।
*
২৪/৭ কমিউনিকেশন
কেবল মুখের কথাতেই কমিউনিকেশন হবে এমন কোনো কথা নেই। আমাদের কমিউনিকেশনের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে আমাদের নিজেদের জীবন। আমাদের চরিত্র, আমাদের চলাচল, আমাদের আচরণ–আমাদের মুখের কথার চেয়ে বেশি প্রকাশ করে। তাই, কমিউনিকেশন কেবল কথা বলার সময় হয় না, কমিউনিকেশন আমাদের লাইফস্টাইল।
[যেই ডিজিটাল যুগে ২ মিনিটের ভিডিও দেখতে মানুষ ক্লান্ত হয়ে যায়, সেই যুগে আপনি ১৫০+ পৃষ্ঠার একটি বই। ম কারাছন। আগনার যথেষ্ট ধৈর্য আছে বলতেই হবে। এখন শুধু দরকার এই বইয়ের হ্যাকগুলো একটা একটা করে আপনার জীবনে প্রয়োগ করা। আমাদের বিশ্বাস, আপনি পারবেন!
যাওয়ার আগে দুটো জিনিস। প্রথমত, বইটি পড়া শেষ হয়ে গেলে পারলে ডোনেট করে দিবেন। আমরা চাই যত সব অঙ্গর নানক কমিউনিকেশনের মত গুরুত্বপূর্ণ স্কিলটি শেখাতে। আশা করি, সেই কাজে আপনি আমাদের সাহায্য করবেন।
দ্বিতীয়ত, একটা বইয়ে কমিউনিকেশনের মত মস্ত বড় একটা সাবজেক্ট কোনভাবেই শতভাগ উপস্থাপন করা সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিনিয়ত কমিউনিকেশনে অনেক নতুন কৌশল যোগ হচ্ছে। তাই, কমিউনিকেশন সংক্রান্ত নতুন সব আগডট পেতে নিচে একটি QR Code দিয়ে রাখা হল। এখানে আমরা কমিউনিকেশন হ্যাকস বই স্থানসংকুলান করতে না পারায় যেই টপিকগুলো বাদ দিতে হয়েছে, সেগুলো রাখা হবে। পাশাপাশি আরও কিছু সারগ্রাইজ থাকবে। সেটা QR Code দিয়ে গেলেই পাবেন!
বই এখানেই শেষ!
এখন কমিউনিকেশন হ্যাকগুলো জীবনে প্রয়োগ করার সময় হোক শুরু!]
মাশাল্লাহ content গুলো বড়াবড়ই যথেষ্ট ভালো বিস্তারিত আলোচনার জন্য আরও ভালো হয়েছে। বড় কথা হলো বাস্তব জীবনে বাস্তবায়ন করা অনেক কষ্টসাধ্য।
মহান রবের কাছে একটাই মিনতি, আমি যেন আমার জীবনকে পরিবর্তন করতে পারি দোয়া চাই সবার কাছে।
আমরা আরোও আশাবাদী আপনার কাছে বাস্তব জীবন মুখোমুখি নিয়ে content আরো চাই।