কমিউনিকেশন হ্যাকস
আয়মান সাদিক ও সাদমান সাদিক
দয়া করে বইটি পড়বেন না
যদি…
…কেবল নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য কমিউনিকেশন শিখতে চান। কারণ, আপনি এই বইতে শক্তিশালী কিছু কৌশল শিখতে যাচ্ছেন যেগুলো অন্যদের উপর আপনার একটা বাড়তি সুবিধা দিবে বাকি সারাটা জীবনের জন্য। কিন্তু, আমরা চাই আপনি এই ক্ষমতাকে ভালো কাজে ব্যবহার করেন। কমিউনিকেশন তখনই আসলে সফল হয় যখন উভয় পাশেরই লাভ হয়। একপাশের লাভ আর অন্য পাশের ক্ষতিকে সোজা বাংলায় প্রতারণা বলে। তাই, এই বইতে আপনি যা কিছুই শিখবেন, দয়া করে পৃথিবীতে আরও বেশি বোঝাঁপড়া তৈরিতে ব্যবহার করবেন। যদি অন্য উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে আমরা অনুরোধ করবো যেন আপনি এই বইটি অন্য কাউকে দিয়ে দেন, অথবা বইটি না কিনে ওই টাকা দিয়ে নিজের পছন্দের কিছু একটা খেয়ে ফেলেন।
তো আশা করি, আপনি যদি পরের পৃষ্ঠায় যেতে চান তাহলে আমাদের শর্ত মানছেন। আমরা ভরসা করতে চাই যে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই ভালো এবং তারা ভালো করতে চায়। আর ভালো কমিউনিকেশন দিয়ে পৃথিবী পাল্টে ফেলা যায়। সেই আশা নিয়ে চলুন, শুরু করা যাক কমিউনিকেশন হ্যাকস!
কমিউনিকেশন হ্যাকস –কাদের জীবনে লাগবে?
তুমি যদি স্টুডেন্ট হয়ে থাকো
স্টুডেন্ট লাইফ থেকেই যদি তুমি কমিউনিকেশনে এক্সপার্ট হয়ে যাও, তাহলে তোমার সামনে গিয়ে নেটওয়ার্ক অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। যেকোনো প্রতিষ্ঠানে সবচেয়ে কারিজম্যাটিক স্টুডেন্টটাকে খেয়াল করলে দেখবে, তার মূল কারিজমা হচ্ছে তার কমিউনিকেশন স্কিল। তুমি অন্য সব কিছুতে ডাব্বা মারলেও, এই এক কমিউনিকেশন স্কিল দিয়ে বহুদূরে এগিয়ে যেতে পারবা।
যদি পেশাগত জীবনে আরও ভালো করতে চান
বর্তমান সময়ে পেশাগত জীবনে সফট স্কিলস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর সফট স্কিলস-এর লিস্টে একদম উপরে থাকে ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন স্কিলস। লিডারশিপের জন্য আপনি যেই জায়গাতেই যান না কেন, কমিউনিকেশন স্কিলস লাগবেই। তাই, কর্পোরেট ক্যারিয়ারে যদি আপনি নিজেকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে নিতে চান, তাহলে এই বইটি আপনার জন্য। সাইকোলজি, সেলস এবং কমিউনিকেশন স্কিলস একসাথে মিলিয়ে কীভাবে আপনি আপনার সেরাটা দিতে পারবেন, সেটা এই বইতে চ্যাপটার বাই চ্যাপটার আমরা এক এক করে শিখবো।
যদি নিজেকে কমিউনিকেশন এক্সপার্ট করতে চান
পৃথিবীর অনেকগুলো সেরা কমিউনিকেশন, সেলস এবং সাইকোলজি বিষয়ক বইগুলো রিসার্চ করে লোকাল উদাহরণ দিয়ে এই বইটি লিখা হয়েছে। তাই, আপনি একদম নিজের ক্ষেত্রে নিজের ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহার করার জন্য এমন অনেক টিপস এবং ট্রিক্স পাবেন, যেগুলো আজকে থেকেই প্রয়োগ করতে পারবেন এবং ফলাফল পাবেন।
আপনি যদি ডিজিটাল জগতে কাজ করেন
কমিউনিকেশন নিয়ে যত কিছু শেখানো হয় এবং যত কন্টেন্ট আছে, অধিকাংশই অ্যানালগ যুগের। ডিজিটাল যুগের সাথে কমিউনিকেশনে। যে ইনোভেশনগুলো এসেছে, সেগুলোর কথা মাথায় রেখে এই বইতে চ্যাপটারগুলো লিখা হয়েছে। আপনি কমিউনিকেশনের যেই হ্যাকগুলো শিখবেন, সেগুলো বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারবেন তো বটেই, তার উপর ডিজিটাল মাধ্যমগুলোতেও পেশাদার কাজে বেশ ভালো ফলাফল দিবে।
কমিউনিকেশন হ্যাকস কী?
এই পৃষ্ঠাটি তাদের জন্য যারা কমিউনিকেশন হ্যাকস জীবনে প্রথমবারের মত শুনছেন। কমিউনিকেশন হ্যাকস নিয়ে প্রাথমিক ধারণা থাকলে আপনি এখনই সরাসরি বইয়ের কন্টেন্টে ঝাঁপিয়ে পড়ন। এই বইটি সিরিয়ালি পড়ার কোনে বাধ্যমাধকতা নেই। যেকোনো পৃষ্ঠা থেকে পড়লেও আপনি নতুন কিছু না কিছু শিখবেন।
কখনও বড় কর্মকর্তা বা নেতাদের স্কিল সেট পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন কি? দেখে না। থাকলে এখন একটু চিন্তা করে দেখেন। যে জিনিসটি সবার আগে আপনার চোখের। সামনে কিংবা মনে ভেসে উঠবে, সেটা হল সেই নেতার বা কর্মকর্তার কমিউনিকেশন স্কিল। তার হয়তো চার বছরের ইঞ্জিনিয়ার ডিগ্রি আছে, হয়তোবা সে প্লেন চালাতেও। ওস্তাদ, কিন্তু দিনশেষে তার দৈনন্দিন কাজে যেই জিনিসটি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে। সেটা হল তার কমিউনিকেশন স্কিল।
এখন টেক্সটবুকের ভাষায়, কমিউনিকেশন হ্যাকস হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তার মধ্যে ব্যবহৃত কিছু কৌশল যা আপনার বাচনভঙ্গি এবং সর্বোপরি ইমেজকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। ফিউচার অফ স্কিলসগুলোর মধ্যে সবার জীবনে কার্যকরী। ভুমিকা রাখা স্কিলটি হল কমিউনিউকেশন।
জীবনের শুরুতে আমাদেরকে অক্ষর দান এবং আধো-আধো শব্দ শিখানোর মাধ্যমে যেই জিনিসটি শেখানো হয়, সেটা হল কমিউনিকেশন। আর পনেরো বছরের শিক্ষা জীবন শেষে শখানেক বই পড়ে, হাজারখানেক পরীক্ষা দিয়েও অনেকে নিজের মনের চিন্তাগুলো আরেকজনের সামনে প্রকাশ করতে পারে না।
কমিউনিকেশন স্কিল আবার শেখানোর কী আছে? আমাদের স্কুল-কলেজের শিক্ষা কারিকুলামেই তো এসব জিনিস শিখে এসেছি। দরখাস্তের হাজারো নিয়ম, স্মারক লেখার কৌশল কিংবা দুই বন্ধুর মধ্যে ডায়ালগের বাহার, সবই আমাদের জানা, কিন্তু মজার বিষয় হল দিনশেষে না আমরা চিঠি লিখি, আর না আমাদের দিয়ে স্মারক লেখা হয়। শেষমেষ আমরা কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার আর ইমোতেই আমাদের দৈনন্দিন কথোপকথন সারি। কিন্তু, এসব তো কোনো কারিকুলামে ছিল না। এসব নিয়ম কোথায় পাওয়া যায় কিংবা এসব নিয়ম বানাছেহ বা কে? আমরা অবশ্য নিয়ম বানানোর দায়িত্ব নিচ্ছি না, বরং এসব মাধ্যমে কথা বলার কিছু কৌশল শিখিয়ে আপনার জীবনটাকে সহজ করার এবং আপনার কথার গুরুত্ব বাকিদের সামনে বাড়িয়ে তোলার অভিপ্রায় হল এই বইটি।
*
আপনার কমিউনিকেশন লেভেল কত?
দক্ষতা – হ্যাঁ/না
১ জায়গা, সময় এবং পরিবেশ অনুযায়ী কি আমি কথা বলি?
২ অন্যের মানসিক অবস্থা ভেবে কি আমি কথা বলি?
৩ নিজের মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে কি আমি কথা বলি?
৪ আমি কি আমার কথা বলার ধরণ সম্পর্কে সচেতন?
৫ আমার কি আমার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ নিয়ে সচেতন?
৬ যার সাথে কথা বলছি তার সাথে সম্পর্কের গভীরতা অনুযায়ী কি কথা বলি?
৭ আমি কি বার্গার ফিডব্যাক মেথডে (প্রশংসা-সমালোচনা-প্রশংসা) কথা বলি?
৮ আমি কি সবাই, সবসময়, কখনই না, কেউই না, অসম্ভব –এসব শব্দগুলো বাদ দিয়ে কথা বলি?
৯ কোনো সমস্যা হলে আমি কি অন্যকে দোষ না দিয়ে নিজের উপর দায়ভার নেই?
১০ ব্যক্তিগত মতামতের চেয়ে কি যাচাই করা তথ্য কিংবা পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বেশি কথা বলি?
১১ যা শুনতে ভালো লাগে, তার চেয়ে যা সত্য; তা শুনতে কি বেশি পছন্দ করি?
১২ কোনো কথা শোনার সময় ব্যক্তিগত ধারণার আঙ্গিকে না শুনে, প্রথমে মুক্তমনে কথা শুনি?
১৩ প্রথমে নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে পারি কি?
১৪ যা চিন্তা করছি, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শব্দে প্রকাশ করতে পারি কি?
১৫ সাহায্য লাগলে সাহায্য চাইতে পারি কি?
১৬ দরদাম করতে পারি কি?
১৭ পাবলিক ঘোষণা দিতে কি পা?
১৮ বাচ্চাদের সাথে মিশে গিয়ে কথা বলতে পারি কি?
১৯ সিনিয়র সিটিজেনদের সাথে কথা বলতে পারি কি?
২০ রিক্সাওয়ালা, সিএনজিচালক এমন মানুষদের সাথে আড্ডা দিতে পারি?
১টি হ্যাঁ =৫ মার্ক। ১টি না =০ মার্ক
.
আমার কমিউনিকেশন লেভেল স্কোর ?/১০০
৮০-১০০ আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা করা শুরু করেন
৬০-৭৯ প্রেজেন্টেশন দেয়া এবং ক্লাস নেয়া শুরু করেন।
৪০-৫৯ ডিবেট, পাবলিক স্পিকিং করা শুরু করেন।
২০-৩৯ কম্ফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে কথা বলা শুরু করেন
০-১৯ পরিচিত মানুষদের সাথে কথা বলা অনুশীলন করেন।
বইয়ের শেষে গিয়ে আবার এই প্রশ্নগুলো পাবেন। তখন আবার পূরণ করে দেখুন। ১ মাস পর পর পূরণ করে নিজের দুর্বলতা একটা করে ঠিক করে ফেলুন।
*
সূচিপত্র
॥ প্র্যাক্টিকাল কমিউনিকেশন
॥ রিভার্স সাইকোলজি হ্যাকস!
॥ ইল্যুশন অফ চয়েস
॥ নিচের দুটো অপশন একটু খেয়াল করে দেখুন তো, পার্থক্যটা কোথায়?
॥ ভালোবাসার কমিউনিকেশন
॥ বিগ বস কমিউনিকেশন
॥ স্টিকি কমিউনিকেশন
॥ ছন্দের কমিউনিকেশন
॥ আপনার সমস্যাটা কী?
॥ ক্যালেন্ডার বুক করে রাখেন
॥ সহজ সরল কমিউনিকেশন
॥ ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার কৌশল
॥ ইট ডিপেন্ডস (It Depends)
॥ বিপজ্জনক কমিউনিকেশন
॥ একবারে পুরো মেসেজটি পাঠান
॥ আমাদের মন এবং তুষারপাত
॥ প্রশংসা আর নিন্দার কমিউনিকেশন
॥ যারা না বলতে পারেন না!
॥ ইমোটিকনে কমিউনিকেশন
॥ লিগ্যাল কমিউনিকেশন
॥ কমিউনিকেশনের মায়া
॥ বলে ফেলা ভালো, নাকি চুপ থাকা ভালো
॥ মিটিং কমিউনিকেশন
॥ কমিউনিকেশন শেখার সেরা সোর্স
॥ দক্ষিণে গিয়ে হাতের বাম দিয়ে সোজা গিয়ে পশ্চিমে!
॥ অফেন্সিভ কমিউনিকেশন
॥ WIIFY কমিউনিকেশন
॥ কোন কথাটা ভাইরাল হবে?
॥ স্টোনওয়ালিং (Stonewalling)
॥ আপনার মনমতো একটা সময়
॥ আমার জন্য আপনার কি প্রশ্ন আছে?
॥ নাম্বার সংগ্রহ করার কমিউনিকেশন
॥ ইমেইল লেখার আদব-কায়দা
॥ আজকে থেকে এগুলো বদলে ফেলুন
॥ আর একটা জিনিস!
॥ অজুহাতে কুপোকাত
॥ অধিকাংশ মানুষ
॥ ২ মাস আগের পরিকল্পনা
॥ ইংলিশে বলসে! তার মানে ঠিক বলতেসে!
॥ গত দশবার কথা কী দিয়ে শুরু হয়েছে?
॥ কল কাটার জন্য ব্যতিব্যস্ত
॥ সত্যিকারের সমালোচনা
॥ আমি, আমি, আমি
॥ স্বার্থপর কমিউনিকেশন
॥ শব্দ করে ব্যাগ গোছানো
॥ কষ্টের প্রতিযোগিতা
॥ মন দিয়ে শোনার ট্রিক
॥ সবচেয়ে কম জানা মানুষ হলে
॥ অনলাইনে যে ৮টি ভুল আমরা প্রায়ই অজান্তে করে ফেলি!
॥ না মানে কী?
॥ কমিউনিকেশনের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র
॥ কমিউনিকেশনের ইকোনমি
॥ সেলেবদের সাথে কমিউনিকেশন
॥ ফাঁপা ধন্যবাদ
॥ ভাবিকে সালাম
॥ মানুষ কখন আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে?
॥ সংখ্যা দিয়ে মিথ্যা বলার কমিউনিকেশন
॥ কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ
॥ ভোক্যাবুলারি কেন শিখবো?
॥ আন্তর্জাতিক কমিউনিকেশন
॥ সবাই তো এটা জানেই!
॥ অন্যের সমস্যা বনাম নিজের সমস্যা
॥ পোশাকে কমিউনিকেশন
॥ ফিডব্যাকের কমিউনিকেশন
॥ চুপ কেন থাকবো
॥ কে ঠিক, কী ঠিক
॥ স্প্যাম বনাম ব্যক্তিগত কমিউনিকেশন
॥ সবচেয়ে মধুর শব্দ
॥ ৭৯ আরে আমিও তো!
॥ চাওয়া পাওয়ার কমিউনিকেশন
॥ শেয়ার করা মানেই সততা না
॥ কমিউনিকেশন ক্রেডিট
॥ চিন্তাভাবনার কমিউনিকেশন
॥ যখন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করবেন
॥ অদৃশ্য ভুল
॥ কমিউনিকেশনের বিপদসংকেত
॥ জুনিয়রের সামনে কমিউনিকেশন
॥ ম্যাজিক মিথ্যা জেনেও কেন মজা লাগে?
॥ বার্তাবাহক
॥ কাজের কথায় কমিউনিকেশন
॥ লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি
॥ কীভাবে স্যরি বলবেন
॥ নিজের ভ্যালু কমে যায়
॥ দুপুর ১২টা না কি রাত ১২টা?
॥ কাজটা কেন জরুরি
॥ অবচেতন মনে কমিউনিকেশন
॥ শুনতে ঠিক, আসলেই ঠিক
॥ চোখে চোখে কমিউনিকেশন
॥ যেই কথাগুলো না বললেও চলে
॥ শেয়ার করার মানুষ
॥ ঠাট্টা করে কমিউনিকেশন
॥ রঙের কমিউনিকেশন
॥ বিরক্তিকর কমিউনিকেশন
॥ দৈনন্দিন কমিউনিকেশন কোথায় শিখবো
॥ ঠিক বুঝেছি তো?
॥ জাজ না করা
॥ ইংলিশে ইংলিশ শেখানো
॥ কে বলেছে কার কথা?
॥ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিউনিকেশন
॥ কন্ট্যাক্ট দিয়ে কমিউনিকেশন
॥ মানুষের নাম্বার চাওয়া
॥ আপনি কি স্প্যাম করছেন?
॥ ডিজিটালি শেয়ার করার কমিউনিকেশন
॥ কমিউনিকেশন এবং আপেক্ষিকতা
॥ রিপ্লাইয়ের কমিউনিকেশন
॥ যাবেন কি যাবেন না?
॥ নিজের সম্পর্কে কথা বলুন
॥ নয়টার ট্রেইন কয়টায় ছাড়ে?
॥ নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে কথা বলা
॥ কার সাথে সবচেয়ে বেশি কথা বলেন?
॥ অর্ডার দেয়া
॥ মেসেজ দিয়ে রাখসি তো!
॥ সিটিং অ্যারেঞ্জমেন্ট
॥ হেটারদের সাথে কমিউনিকেশন
॥ পিপল স্কিল : কী এবং কেন?
॥ যেভাবে কখনও কারও সাথে কথা বলা উচিত নয়!
॥ সতর্কতা : কথা বলা ও শোনার সময় যে কাজগুলো করা যাবে না!
॥ সাবধান : আপনি কি একজন Conversation Monster?
॥ সবার প্রিয় হতে চান?
॥ ইংরেজি ভাষা নাকি বিষয়?
॥ সমালোচনার পূর্বশর্ত!
॥ খুদেবার্তার আদবকায়দা
॥ টার্গেট অডিয়েন্স আসলে কারা?
॥ উপস্থাপক হতে চান?
॥ পাবলিক স্পিকিং নিয়ে ভয়?
॥ নিজে নিজে কীভাবে অনুশীলন করবো?
॥ আবদারের কমিউনিকেশন
॥ আপনি কাদের সাথে কথা বলছেন?
॥ অর্থহীন কমিউনিকেশন
॥ ২৪/৭ কমিউনিকেশন ॥
*
প্র্যাক্টিকাল কমিউনিকেশন
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা প্রচলিত ধারণা আছে যে পৃষ্ঠা-ভরে লিখলেই নাম্বার পাওয়া যায়। যে যত বেশি পৃষ্ঠা নিবে, তার মার্ক তত বেশি। দাঁডিপালা দিয়ে খাতার ওজন মেপে নাম্বার দেয়া হয় বলে অনেকে লেখার মানের চেয়ে লেখার পরিমাণকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বসেন। হ্যাঁ! এইভাবে অনেক নাম্বার পেয়ে কারও কারও গোল্ডেন চলে আসে। কিন্তু, বাস্তবে আপনি মানুষকে রচনা বলতে যান, দেখেন কী হয়। যেখানে মানুষ ফেসবুক পোস্টে See More ক্লিক করে দুই লাইন অতিরিক্ত পড়তে চায় না, যেখানে মানুষের সারাংশ পড়ারই ধৈর্য নাই, সেখানে প্যারাগ্রাফ বলতে চাওয়াটাও অনেক বোকামি। তাই, পরীক্ষার খাতায় প্যারাগ্রাফ লিখতে গিয়ে রচনা লিখে ফেললেও, বাস্তবে যেন আমরা যত কম শব্দে সম্ভব নিজের আইডিয়াগুলো অন্যের সামনে উপস্থাপন করি।
শব্দের সংখ্যা বেশি হলেই যদি মান ভালো হত, তাহলে সাহিত্যে সবচেয়ে। বেশি নোবেল পেত ডিকশনারিগুলো!
*
রিভার্স সাইকোলজি হ্যাকস!
কমিউনিকেশন স্কিল আসলে পুরোটাই সাইকোলজির খেলা। একবার যখন আপনি মানুষকে বুঝবেন, মানুষের মানসিকতা বুঝবেন; তখন কখন, কোথায়, কী বলতে হবে–সেটা আপনি নিজ থেকেই বুঝতে পারবেন। যেমন- আমাদের একটা সাইকোলজি হচ্ছে যে, আপনার যা বলার কথা, তার ঠিক উল্টোটা বললে মানুষ বরং আপনাকে বেশি বিশ্বাস করে ফেলতে পারে। এই ট্রিকটা আমরা অনেক সময় বাচ্চাদের সাথে করে এসেছি। সবজিটা খাও!–এভাবে বললে খাবে না। কিন্তু যদি বলি, আমি জানি তুমি এত পিচ্চি যে এই সবজি খেতে পারবে না। তখন পারলে জেদ করে হলেও সে সবজিটা গিলবে! ইভেন্টে আসলে আমরা অনেক খুশি হব। আমরা চাই যে আপনি ইভেন্টে আসেন। কিন্তু, আপনার খুব যদি কষ্ট হয় তাহলে না বলতেও পারেন। আশা করি আপনার কাছ থেকে দ্রুত উত্তর পাবো।–এত ভদ্রভাবে বললে তো না বলতেও কষ্ট হবে!
*
ইস্যুশন অফ চয়েস
নিচের দুটো অপশন একটু খেয়াল করে দেখুন তো, পার্থক্যটা কোথায়?
অপশন ১ : আপনি কি বইটি কিনবেন নাকি কিনবেন না?
অপশন ২ : আপনি কি স্টুডেন্ট হ্যাকস কিনবেন নাকি কমিউনিকেশন হ্যাকস কিনবেন?
আগে আপনি মনে মনে একটি অপশন সিলেক্ট করে ফেলুন। এবার আসি ব্যাখ্যায়।
অপশন ১ : এ কেনার সিদ্ধান্তটাই নেয়া হয়নি। আপনার সব সময় টার্গেট থাকবে যেন মানুষের সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটা সহজ করা যায়। এমন যদি হত যে আসল সিদ্ধান্ত অর্থাৎ কেনার সিদ্ধান্তটাই নিতে না হত? ওটাই অপশন। ২-তে পাবেন। খেয়াল করে দেখেন যে দ্বিতীয় অপশনে না কেনার কোনো অপশনই দেয়া হয়নি। ধরেই নেয়া হচ্ছে যে আপনি বই কিনছেন, এখন অপশনাল সিদ্ধান্ত হচ্ছে আপনি কোন বই কিনবেন। এরকম আরেকটা সিচুয়েশন দেই।
অপশন ১ : লাঞ্চের আগে আসবি নাকি পরে আসবি?
অপশন ২ : তুই কি আমার বাসায় আসবি?
এখন আপনি একদম নিশ্চিতভাবে জানেন যে কোনটা বললে আপনার বন্ধুর আসার সম্ভাবনা বেশি। (আর ফ্রি লাঞ্চের কথা বললে কেনই বা আসবে না!)
*
ভালোবাসার কমিউনিকেশন
রেস্টুরেন্টে এক্সট্রা সস চাইতে অনেকে লজ্জা পেলেও ইনবক্সে গিয়ে দেখেন সেই একই মানুষ কবিতা, উপন্যাসে পারলে রবীন্দ্রনাথ, শেক্সপিয়রকে টেক্কা দিচ্ছে। আসলে, প্রয়োজন আর ইচ্ছা থাকলে আমরা অনেক কিছুই পারি। এবং সেটা আমাদেরকে শিখিয়েও দিতে হয় না। কিন্তু, ওই একই। ব্যাপারগুলো কেন যেন আমরা বাস্তব জীবনে ফলাতে পারি না। কিছু উদাহরণ দেই :
ব্রেকআপের সময় : আসলে তুমি একদম পারফেক্ট! দোষটা আসলে আমার। তুমি আমার চেয়ে আরও ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো। রিজেক্ট করার সময় কত দরদভরা যুক্তি! কিন্তু, একটা অকাজের কাজে না বলার সাহস আনতে পারে না নাকি এই একই মানুষগুলো!
ইপ্রেস করার সময় :
তুমি কী চাও?
তোমাকে!
মনের সবচেয়ে গভীর অনুভূতি এক শব্দে বলতে পারে। কিন্তু, ৫ মিনিট দিলেও অনেকে নিজের আইডিয়াটা বলতে পারে না! কথা শুরু করতে চাইলে :
আসোলামু আলাইকুম!
আপনি কি জানেন না যে, সালামের উত্তর দিতে হয়!
ইনবক্সে যেভাবে সালামের চর্চাটা থাকে, ওই একই চর্চাটা ছোট, বড়, রিক্সাওয়ালা, দারোয়ান সবার প্রতি থাকলে কী সুন্দরই না হত। কিন্তু না! অন্যগুলো করতে বললে অনেকের অকওয়ার্ড লাগে!
শেখানোর বিষয় আর ইচ্ছা থাকলে সবাই আসলে নিজে থেকেই পণ্ডিত হওয়ার যোগ্যতা রাখে।
*
বিগ বস কমিউনিকেশন
আমরা যতই কমিউনিকেশনের কথা বলি না কেন, সিনিয়র কারও সাথে কথা বলতে গেলে আসলে অনেক ট্রিকই কাজ করে না। সোজা বাংলায় ক্ষমতাশালী মানুষকে অনেক কিছুই ভয়ের চোটে বলা হয়ে উঠে না। এমন অবস্থায় কী করা যায়?
নিজের জীবন থেকে একটা উদাহরণ দেই।
বিভিন্ন সময় ক্লায়েন্ট নিজের পাওয়ার দেখানোর জন্য ছোট-খাটো কাজে আমাকে ব্যবহার করছিল। এখন রেগে গেলে তো ব্যাপারটা খুবই আনপ্রফেশনাল দেখাবে। আবার মুখ বুজে তো নিজের সময়ও নষ্ট করা যাচ্ছে না। তার চেয়েও বড় কথা জিনিসটা আমার জন্য অপমানজনক। হচ্ছিলো। তো কীভাবে বোঝাই যে আমার সময় আর সার্ভিস ফ্রি না?
একদিন ক্লায়েন্ট বললো, তো শুনো, কালকে আমার বিল পেপারটা লাগবে। তুমি সকাল সকাল প্রিন্ট করে নিয়ে আসো।
(আমি জানি যে আমার এখানে কোনো দরকার নেই। কারণ আমি আর ক্লায়েন্ট দুইজনই জানি যে ফাইলটা ইমেইল করে দিলেই প্রিন্ট করে নেয়া যাবে অফিস থেকে। আমাকে কেবল পাওয়ার দেখানোর জন্য এই হুকুম।)।
আমার উত্তর ছিল, ভাইয়া, আমি আজকে ফাইলটা দিতে গেলে আপনার কাজটা করতে পারবো না। তাহলে ডেডলাইন এক দিনের জন্য মিস হবে। আপনার এতে সমস্যা না থাকলে আমি ফাইলটা দিতে চলে আসছি। এটা শুনে তিনি বললেন, না না। থাক। তুমি ফাইলটা মেইল করে দাও। আর কাজটা যত দ্রুত সম্ভব করে দাও।
একটা বাক্যের মাধ্যমে তার কাছে আমার কাজের মূল্য বাড়ালাম, সময় বাঁচালাম আর মনে মনে ছোটখাটো একটা বিশ্বজয়ের আনন্দ পেলাম। হ্যাঁ, সব ক্ষেত্রে উপরের মানুষজনকে কাবু করা যায় না, কিন্তু চেষ্টা না করলে মানুষ আপনাকে পেয়েই বসবে। তাই, এইদিক-ওইদিক করে বুদ্ধি বের করাটা কখনও থামাবেন না!
*
স্টিকি কমিউনিকেশন
হুস্টান বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সার্ভে করতে সাহায্য চেয়ে মানুষের কাছে প্রপোজাল পাঠানো হচ্ছিল। যার কাজ, সেই প্রফেসর সাহেব একটা এক্সপেরিমেন্ট করলেন। তিনভাবে তিনি প্রপোজালগুলো পাঠালেন। ১ম দলের প্রপোজালের উপর স্টিকি নোটে পার্সোনাল একটা চিঠি লিখে পাঠালেন।
২য় দলের প্রপোজালের উপর কিছু না লেখা স্টিকি নোট পাঠালেন।
৩য় দলের প্রপোজালে কোনো স্টিকি নোটই দেওয়া হয়নি।
ফলাফল?
১ম দল : ৭৬% সার্ভে করে দিলেন
২য় দল : ৪৮% সার্ভে করে দিলেন
৩য় দল : ৩৬% সার্ভে করে দিলেন
খালি তাই নয়, ২য় দল ৩য় দলের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততার সাথে সার্ভে করে ফেরত দিল এবং ১ম দল ২য় দলের চেয়ে অনেক বেশি দ্রুততার সাথে সার্ভে করে ফেরত দিল!
মোরাল অফ দ্য স্টোরি : আজই স্টিকি নোট ব্যবহার করা শুরু করুন! আর স্টিকি নোটই যে ব্যবহার করতে হবে এমন না। আপনি খামে করে নিজের হাতে লিখা কোনো চিঠি দিলেন কিংবা ছোট একটা চকোলেট; সেটাও কাজ করবে।
(এখানে একটা স্টিকি নোট ব্র্যান্ডের স্পন্সরশিপ নিতে পারলে বেশ ভালো। ইনকামও হত! ইশশ!)
*
ছন্দের কমিউনিকেশন
বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে চলা টেলিভিশন সিরিজ হচ্ছে ইত্যাদি। অনুষ্ঠানটির মূল সঞ্জীবনী শক্তি হচ্ছে উপস্থাপক হানিফ সংকেতের অসাধারণ উপস্থাপনা। পুরো দেশের মানুষ তার উপস্থাপনা পছন্দ করেছে। এমন একজন মানুষ যাকে পুরো দেশের মানুষ পছন্দ করে, তার কাছে শেখার নিশ্চয়ই কিছু আছে, তাই না?
আপনি যদি ইত্যাদি দেখে থাকেন (না দেখে থাকলে আজই ইউটিউবে ১/২টা এপিসোড দেখে আসুন!), তাহলে দেখবেন উপস্থাপক হানিফ সংকেত কথা বলার সময় সব কথাই ছন্দে ছন্দে উপস্থাপন করেন। হ্যাঁ! এটাই অনেক বড় একটা শিক্ষা! আমরা ছন্দ পছন্দ করি।
তাই বলে দিনে ২৪ ঘণ্টা ছন্দ করে কথা বললে অনেকেই বিরক্ত হবে। কিন্তু, ব্যবসার প্রচারণা, বিশেষ করে বিজ্ঞাপনে ছন্দের ব্যবহার করলে মানুষের মনে বেশি গভীরভাবে কথাগুলো গেঁথে যায়।
আমরা একদম শৈশবে ছন্দ-কবিতা পড়েছিলাম। বড় হয়ে হয়তো অনেক থিওরি পড়ে দুনিয়াটা অনেক কমপ্লেক্সভাবে চিন্তা করি। কিন্তু, মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শৈশবের ছড়া এখনও কাজ করে!
*
আপনার সমস্যাটা কী?
মনে করেন, আপনি পাসপোর্ট অফিসে একটা সংশোধন করতে গেলেন। নিচের কোনটা শুনতে আপনার ভালো লাগবে?
অপশন ১ : আপনার কী সমস্যা?
অপশন ২ : আপনাকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?
দুইটা বাক্যই কিন্তু একই কথা বলে কিন্তু কত তফাত। পার্থক্যটা কথায়, অপশন ১-এ আপনার কী সমস্যা বললে মনে হয় সমস্যাটা আমার ব্যক্তিগত একটা ক্রটি। অন্যদিকে আমি কীভাবে সাহায্য করতে পারি বললে নিজের যে দোষ কিংবা সমস্যা আছে সেটা তো আমরা ভুলে যাই-ই, বরং আরও ভালো লাগে যে কেউ সমাধানে এগিয়ে আসছেন।
একই কথা, কিন্তু ডেলিভারিতে কত তফাৎ!
এমনই একটা সুন্দর রূপক আছে। একই জায়গা থেকে ২টি বল জোরে লাথি দিলে হয়তো দেখা যাবে বলগুলো একে অন্যের থেকে ৯০/১০০ ফিট দূরে গিয়ে পড়েছে। কিন্তু আসল বলটা কিক করার সময় মাত্র ৪/৫ মিলিমিটার এইদিক ওইদিক কিক করার কারণে শেষ ফলাফল অনেক বেশি ভিন্ন দেখায়!
*
ক্যালেন্ডার বুক করে রাখেন
যখনই কোনো মিটিং শেষ হবে, সাথে সাথে পরের মিটিং-এর জন্য ক্যালেন্ডার বুক করে ফেলেন এবং অন্য সবাইকে ক্যালেন্ডার বুক করে রাখার রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে রাখুন। কারণ, বেশিরভাগ সময় মুখে মুখে কথা হয় যে, সোমবার বসি আরেকবার চলেন।–এই বলে সবাই উঠে চলে যায়। কেউ হয়তোবা মিটিং-এর কথা ভুলেই যায়। অথবা, যেহেতু এটা কেবল মৌখিক একটা সিদ্ধান্ত, কেউ চাইলেই কল করে বলতে পারে আরেকদিন মিটিং করতে। এভাবে একটা একটা করে আপনার ক্লায়েন্ট মিটিং ছুটে যেতে পারে। তাই, মিটিং-এর সাথে সাথেই ক্যালেন্ডার বুক করে রিকুয়েস্ট পাঠাবেন। একবার ক্যালেন্ডার বুক করা থাকলে সেটা অফিশিয়াল হয়ে যায়। অনেকটা। তখন কেউ হুট করে মিটিং বাদ দিতে চাইলে ব্যাপারটা অনেক অপেশাদার লাগে। তাই, যখনই কোনো মিটিং-এর কথা আসবে, তখনই ক্যালেন্ডার বুক করে রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে রাখবেন।
আরেকটু ক্যাজুয়াল হলে মেসেঞ্জারে রিমাইন্ডার সেট করে রাখবেন। অনেকে মেইল কিংবা এসএমএস চেক করে না। এসব হতচ্ছাড়াদের লাইনে আনার শেষ উপায় হচ্ছে মেসেঞ্জারে দিনক্ষণ দিয়ে রিমাইন্ডার সেট করে দেয়া। ক্যালেন্ডার বুক করতে হলে আপনার Gmail অ্যাকাউন্টে গিয়ে তারিখ এবং সময় অনুযায়ী সুট বুক করে রাখুন।
*
সহজ সরল কমিউনিকেশন
প্রথম যখন Apple থেকে Ipod বের হয়, তখন অনেক তথ্য দিয়ে সেই পণ্যটা বিক্রি করা যেত। কতটুকু স্টোরেজ, কতটুকু র্যাম, কতগুলো সার্কিট, প্রসেসর আরও কত কী! এত কিছু না বলে কী বলা হলো?
এক পকেটে ১,০০০ গান
মানুষ র্যাম, স্টোরেজ, মেমোরি– এত কিছু না বুঝলেও; ১,০০০টা গান যে শুনতে পারবে–এটা বুঝে। এবং এটাই মার্কেটিং জিনিয়াস। যেকোনো কঠিন জিনিসকে একদম সহজ ভাষায় অন্যের সামনে উপস্থাপন করা। আইনস্টাইনের এমনই এক উক্তি ছিল, আপনি কোনো জিনিস তখন বুঝেছেন, যখন সেটা আপনি একটা বাচ্চাকেও বোঝাতে সক্ষম হবেন।
*
সহজ ভাষায় লেখার চেকলিস্ট!
১) আপনি কি আপনার পাঠক সম্পর্কে অবগত? কে বা কারা আপনার লেখা পড়ছে সেটা কি আপনি জানেন?
২) আপনার লেখায় কি আপনার পাঠক যা জানতে চায় সেটা আছে?
৩) আপনার লেখা কি আপনার পাঠকের মনের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে?
৪) আপনার লেখার মাধ্যমে আপনি যে বার্তা কিংবা। শিক্ষা আপনার পাঠকদের মাঝে পৌঁছতে চান সেটা কি সুস্পষ্ট ও নির্দিষ্ট?
৫) আপনার বার্তাটি কি ছোট, অর্থপূর্ণ এবং যৌক্তিক?
৬) আপনার পাঠক কি জানে আপনার কাছ থেকে পাওয়া শিক্ষাটাকে সে কীভাবে কাজে লাগাবে?
৭) আপনার ব্যবহার করা অনুচ্ছেদগুলো কি প্রধান ধারণাটা দিয়েই শুরু হয়?
৮) আপনার লেখায় ব্যবহৃত বাক্যগুলো কি শক্তিশালী? বাক্যগুলো কি দৈর্ঘ্যে অনেক বড় বা অনেক ছোট?
৯) লেখাটা কি সংলাপের সুরে পাঠকের ভাষায় লেখা?
১০) শিরোনামগুলো কি লেখা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা দেয়?
১১) পরিচিত আর অনুভূতি প্রকাশক শব্দের ব্যবহার ঠিকমতো করেছেন তো?
১২) আপনার ব্যবহার করা সংজ্ঞাগুলো কি বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়?
১৩) লেখায় ছক আর তালিকার ব্যবহার রেখেছেন?
১৪) বানান আর ব্যাকরণজনিত ভুলত্রুটি যাচাই করেছেন?
১৫) পড়তে কি সহজ মনে হচ্ছে?
সাবাস! আপনি শেষ করতে পেরেছেন!
*
ব্যক্তিগত প্রশ্ন করার কৌশল
না, আমরা মানুষের বেতন কিংবা বয়স কীভাবে জিজ্ঞেস করতে হয় সেটা। শেখাবো না, কারণ অনেকের জন্যই প্রশ্নগুলো অনেক বেশি স্পর্শকাতর। তবে, এমন কিছু টেকনিক আছে যেগুলোর মাধ্যমে না উত্তর করা কিছু। প্রশ্নের উত্তর পাওয়া সম্ভব।
মনে করেন আপনি একটি অফিসে কেমন পলিটিক্স হয়, সেটা বোঝার চেষ্টা করেন তাহলে হয়তোবা প্রশ্ন করতে পারেন :
আপনি কি অফিস পলিটিক্স করেন?
অনেকেই হয়তোবা নিজের ভয়ে অফিস পলিটিক্স করলেও বলবে না। এর চেয়ে আপনি যদি প্রশ্ন করেন,
আপনার কি মনে হয় ৭৫% এর বেশি মানুষ অফিস পলিটিক্স করে এই কোম্পানিতে?
এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত কোনো রিস্ক নেই। যদি অনেকেই হ্যাঁ উত্তর দেয়, তাহলে আপনি সামগ্রিকভাবে একটা ভালো আইডিয়া পাবেন যে আসলেও অফিসে পলিটিক্স হয় নাকি না।
*
ইট ডেপেন্ডস (It Depends)
আমি নিজের একটা ওয়েবসাইট বানাতে চাই। কেমন খরচ হবে?
–উপরের প্রশ্নের দুটো উত্তর দিলাম।
১) ভাইয়া, ইট ডিপেন্ডস। বলা যায় না ভাইয়া। একেক ধরণের ওয়েবসাইট বানাতে একেক ধরণের দাম পড়বে।
২) ভাইয়া, এটা কোনো সিস্টেম অনুযায়ী করতে পারলে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে আমাদের টিম ২১ দিনের মধ্যে আপনাকে কাজটা বুঝিয়ে দিতে পারবে। আর সেটা না পারলে আপনার সাথে আরেকদিন একটা মিটিং-এ সব পরিষ্কার করে নিতে হবে।
দুনিয়ার সব কিছুই আসলে ডিপেন্ডস। সবকিছুই কোনো না কোনো কিছুর উপর নির্ভর করে এবং এটা সবাই জানে। তাই, ইট ডিপেন্ডস বলার মতো অনর্থক জিনিস বোধ হয় কমই আছে। যদি বলতেই হয় তাহলে বলেন কিসের উপর নির্ভর করে। যেমন : উপরের উদাহরণে বলতে পারতো, এটা ভাইয়া ডিপেন্ড করে ডোমেইন, হোস্টিং, সাইট বিল্ডিং, ফিচার অ্যাড করাসহ আরও কিছু ব্যাপারের ওপর।
মানুষ প্রশ্ন করলে তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ন্যূনতম তথ্যগুলো দিয়ে। রাখবেন। এমন তথ্য যেগুলো তাদের সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। যখন দরকার হবে, অন্তত আপনার কথা তারা একবার হলেও ভেবে দেখবে।
*
বিপজ্জনক কমিউনিকেশন
মানুষ যখন ঝগড়া করে, তখন সে শুধু নিজের না, তার আশপাশের পুরো পরিবেশটাকেই ডাউন করে ফেলে। কোনো মানুষের মেজাজে যখন বিস্ফোরণ ঘটে, তখন আপনার সেই মানুষটার আশপাশে না থাকাই ভালো। বিভিন্ন শপিংমলে যখন কাস্টমার মারামারির পর্যায়ে চলে যান, তাকে খুব কৌশলে অন্য কাস্টমারদের সামনে থেকে সরিয়ে ফেলার প্রটোকল থাকে। কারণ একজন রাগী মানুষ খালি নিজের না, তার আশপাশের সবার দিনটা খারাপ করে। এখন আপনি যদি সেন্স করতে পারেন যে কেউ ঝগড়া করতে এগিয়ে আসছে, তাহলে আপনার প্রথম টার্গেট হবে ঝগড়া করার পরিবেশটাই না দেয়া। কিন্তু, সব সময় তো সেটা সম্ভব হবে না। তাই, কিছু টিপস মনে রাখতে পারেন যখন উদ্ধত মানুষ আপনার দিনের শান্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে চাইবে।
*
উদ্ধত মানুষদের কীভাবে সামলাবেন?
১) মনে করার চেষ্টা করুন সেইসব মুহূর্তের কথা যেগুলোতে আপনি মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার। করেছিলেন এবং মানুষ আপনাকে সেগুলোর জন্য মাফ করে দিয়েছিল। আপনি বদলাতে পারলে আপনার সামনের উদ্ধত মানুষটি কেন বদলাতে পারবে না? এই প্রশ্নের উত্তরে উদ্ধত মানুষটি সম্পর্কে আপনার সমগ্র ধারণাই পাল্টে যেতে পারে।
২) কোনো কথাকেই ব্যক্তিগতভাবে নিবেন না। হয়তোবা মানুষটি খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে।
৩) মানুষটিকে তার অতিমাত্রার আচরণের কথা উল্লেখ করুন যদি সে বেশি বাড়াবাড়ি করে। চুপ করে থাকলে বদ আচরণকে সে তার অধিকার মনে করবে।
8) মানুষটি যে কারণে রেগে আছে, সেটা সমাধান করার সুযোগ থাকলে নিজের দিক থেকে চেষ্টা করুন।
৪) উপেক্ষা করুন। কাউকে এর চেয়েও কম গুরুত্ব দেয়া সম্ভব না।
৫) মানুষটির কথাবার্তা এবং আচরণ তার। এ জীবনের সাপেক্ষে তুলনা করে দেখুন।
৬) তার নেতিবাচক দিকগুলো উপেক্ষা করে ভালো দিকগুলোর জন্য প্রশংসা করুন।
৭) বোঝার চেষ্টা করুন যে মানুষটি ব্যক্তিগত কারণে নাকি পারিপার্শ্বিক কাজের কারণে রেগে আছে।
৯) উদ্ধত মানুষটিকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, আমি কীভাবে তোমাকে সাহায্য করতে পারি?
১০) কোনোভাবেই নিজেকে ছোট করে তার সামনে উপস্থাপন করবেন না।
১১) উদ্ধত মানুষটির আচরণ খারাপ থাকলে থাকতে পারে। কিন্তু, আপনি নিজে আচরণ খারাপ করলে, সে তার আচরণের জন্য অজুহাত পেয়ে যাবে।
১২) আপনার চেয়ে সিনিয়র কিংবা বস যদি উদ্ধত হয় তাহলে তাদের লেভেলের। কোনো সিনিয়রের সাহায্য নিন।
১৩) উদ্ধত মানুষটির বিষয়টি যে আপনাকেই সমাধান করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আপনার ওপর চাপ বেশি হয়ে গেলে বিরত থাকুন।
১৪) অন্য মানুষটির আগে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে আনুন।
১৫) হঠাৎ করে ব্যবহার পাল্টে যাবে, এমন আশা করবেন না। পরিবর্তন আসতে সময় লাগে। অথবা সে মানুষটাই বোধ। হয় এমনই।
আমরা হয়তোবা অনেকগুলো পয়েন্ট বললাম। এগুলোর তিন/চারটি এমনকি এক দুটি প্রয়োগ করলেই বেশিরভাগ মানুষের মধ্যে একটা পরিবর্তন চলে আসার কথা।
*
একবারে পুরো মেসেজটি পাঠান
আপনি বন্ধুদের সাথে কিংবা অনলাইনে যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে আড্ডা দেওয়ার অধিকার রাখেন। কিন্তু, পারলে কর্পোরেট কাজে কোষ্ঠকাঠিন্যমূলক বার্তা পাঠাবেন না! অর্থাৎ, একটা একটা লাইন না করে, পুরো কথাটা একবারে পাঠাবেন। খুবই ছোট্ট একটা তফাৎ, কিন্তু এটা করলে আপনার খুদে বার্তাগুলো আরও গোছানো লাগবে।
*
আমাদের মন এবং তুষারপাত
মনে করেন একটি পাহাড়ে অনেক তুষারপাত হয়েছে। এমন হলে বাইরের অনেক ঠান্ডার দেশে মানুষ স্লেজ গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়ে। পাহাড়ের উপর থেকে স্লেজ গাড়িতে করে স্লাইড করে নিচে চলে যায়। প্রতিবার স্লাইড করে নিচে যাবার সময় বরফের উপরের স্তর একটু করে দেবে যায়। তিন-চারবার স্লাইড করে নামার পর কিছু জায়গায় বরফের স্তর এতটাই দেবে যায় যে। এরপরে যতবারই কেউ স্লাইড করে নিচে নামুক না কেন, ওই দেবে যাওয়া। অংশ দিয়েই খালি নিচে নামে।
প্রথম প্রথম স্লাইড করে নামার কোনো বাধাধরা রাস্তা না থাকলেও, তিন চারবার নামার পর দেবে যাওয়া পথেই সবাই নামা শুরু করে।
আমাদের চিন্তা-ভাবনাও আসলে এভাবে কাজ করে। প্রথম প্রথম আমরা সব কিছু নিয়ে চিন্তা করতে পারি। কিন্তু, যতই আমরা কোনো জিনিস নিয়ে বেশি জেনে ফেলি, তখন আমরা ঐ একই লাইনেই কেবল চিন্তা করতে থাকি। আমাদের অধিকাংশের দৈনন্দিন চিন্তা-ভাবনার ৯০-৯৫ শতাংশই কিন্তু গতকালের চিন্তা-ভাবনা!
এই যদি হয় অবস্থা, তাহলে কীভাবে আমরা নতুন চিন্তা-ভাবনা করবো? তিনটি জিনিস সহজেই করা সম্ভব :
১. নিজের বন্ধুমহলের বাইরের মানুষের সাথে কথা বলুন। (গত সাতদিনে চেনা-জানা মানুষের বাইরে কয়জন মানুষের সাথে কথা বলেছেন? কয়জন বিদেশি মানুষের সাথে কথা বলেছেন? নিজেই নিজেকে যাচাই করুন)
২. নতুন নতুন লেখকের বই পড়ুন, নতুন নতুন বিষয়ের বই পড়ন। যেমন : বেশিরভাগ দিন আত্মউন্নয়নমুলক বই পড়ে থাকলে কিছুদিন সাহিত্যের বইও পড়ুন।
৩. নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। যেমন : কখনও রক্ত না দিয়ে থাকলে রক্তদান করুন, কখনও ভিডিও না বানালে নিজের একটা ভিডিও বানিয়ে দেখুন (আপলোড করা বাধ্যতামূলক নয়!), কখনও
আর্ট এক্সিবিশনে না গিয়ে থাকলে ঘুরে আসুন। নতুন নতুন বই পড়লে, মানুষের সাথে কথা বললে, নতুন নতুন অভিজ্ঞতা নিলে আপনার মনে নতুন করে তুষারপাত হয়ে আগের দেবে যাওয়া পথগুলো হারিয়ে যাবে। তখন আপনি আবার একদম নতুন করে পাহাড়ের উপর থেকে স্লেজ গাড়িতে করে সম্পূর্ণ নতুন পথে নামতে শিখবেন!
*
প্রশংসা আর নিন্দার কমিউনিকেশন
আপনি একটা কাজ ভালো করলে একটা প্রশংসা পেতে পারেন। আর আপনি যদি একটা কাজ খারাপ করেন, তাহলে সেই কথা সবাইকে বলে বেড়ানো। হয়। আমরা যেই আগ্রহ ও উদ্যমের সাথে গীবত করি, সেই উদ্যমের সাথে যদি মানুষকে আমরা উৎসাহ দিতাম, তাহলে সত্যি বলতে আমাদের বোধ। হয় আর কোনো মোটিভেশন লাগতো না।
ঠিক একইভাবে আমরা মানুষকে অন্যের সামনে যতটা মজার সাথে অপদস্ত করি, ততটা আনন্দের সাথে প্রশংসা করি না। আমরা যদি ব্যক্তিগতভাবে সমালোচনা করতাম এবং প্রকাশ্যে প্রশংসা করতাম, তাহলে দুনিয়া আসলেই বদলে যেত।
আর এই প্রশংসা আর নিন্দা আমাদের জীবনে সবথেকে বেশি প্রভাব ফেলে যখন আমাদের বয়স কম থাকে। এই বিষয়ে শিক্ষক এবং অভিভাবকরা যদি কিছু জিনিস মেনে চলতেন, তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম ব্যাপক আত্মবিশ্বাস নিয়ে গড়ে উঠতো।
*
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মধ্যে কথোপকথন কেমন হওয়া উচিত?
যেভাবে বলতে পারেন,
১) গুনের চেয়ে সেই গুনুটাকে কী করে কাজে লাগিয়েছে সেটা প্রশংসায় উল্লেখ করুন। যেমন- আপনার বাচ্চা নিজে নিজেই এই সমস্যার সমাধান করেছে। যেমন (কাজটার উদাহরণ)
২) আপনার ভূমিকাটাও উল্লেখ করুন। আপনি কী কী করেছেন ওকে বোঝানোর জন্যে সেটাও বলুন।
৩) নিজেকে অপর প্রান্তের মানুষটার জায়গায় বসিয়ে এরপর পরিস্থিতিটা চিন্তা করুন।
৪) সংক্ষেপে পুরো পরিস্থিতিটার ব্যাখ্যা দিন।
যেটা না বলাই ভালো
১) প্রশংসা করার সময় কোনো গুণের কথা সরাসরি উপসংহার হিসেবে বলবেন না।
যেমন- আপনার বাচ্চা তো বেশ স্মার্ট।
২) কোনো ভুলের জন্য বাচ্চাকে দোষারোপ করবেন না।
৩) যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন না।
৪) অপভাষা ব্যবহার করবেন না।
*
যারা ‘না’ বলতে পারেন না!
মানুষের সব কথায় হ্যাঁ বলতে থাকলে আপনি মানুষের পুতুল হয়ে যাবেন। আপনি অন্যের পুতুল হবেন নাকি নিজের জীবন নিজে তৈরি করবেন সেটা আপনাকে নির্বাচন করতে হবে। এরপরও কয়েকটি মেন্টাল কনসেপ্ট মাথায় রাখলে আপনার জন্য না বলা সহজ হয়ে যাবে। সেই কনসেপ্টগুলো হল :
১. সবকিছুতে হ্যাঁ বললে আপনি এমন অনেক কাজে হ্যাঁ বলে ফেলবেন যেগুলো করার কোনো দরকার ছিল না।
২. নিজেকে বেশি সস্তা করে ফেলতে চান? সবকিছুতে সবাইকে হ্যাঁ বলতে থাকুন।
৩. হ্যাঁ বলে কাঁচুমাচু করার চেয়ে না বলে ক্লিয়ার থাকাটা সবার জন্যই ভালো।
৪. সব কাজ আপনার উপর আসলে আপনি হয় মানুষ চিনতে ভুল করেছেন, না হয় কাজ বুঝে নিতে ভুল করেছেন।
*
আমি আমার সোশ্যাল স্কিল কীভাবে বাড়াবো?
নিচের বাক্যগুলো আপনার জন্য সত্য হলে টিক এবং মিথ্যা হলে ক্রস দিন।
অন্যের মানসিক অবস্থা ভেবে কি আমি কথা বলি?
আমি খুব বেশি দিন বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখতে পারি না।
জয় কিংবা পরাজয়ের সময় আমার হুশ থাকে না।
কথা শোনার সময় খুব সহজেই আমার মনোযোগ চলে যায়।
আমি খুব সহজেই অন্যেদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মনের বিরুদ্ধে কাজ করি।
কী বলবো তা না জানা থাকায় অনেক সময় মানুষের সাথে কথাই বলা হয় না।
মানুষ কী চিন্তা করছে কিংবা অনুভব করছে সেটা আমার বুঝতে অনেক সমস্যা হয়।
রেগে গেলে আমি খারাপ শব্দ ব্যবহার করি এবং জিনিসপত্র ছোঁড়াছুড়ি করি।
মানুষ আমাকে প্রায়ই আরও ম্যাচিউর/পরিণত হতে বলে।
মানুষ আমার কথায় কখনই হাসে না।
আমি মাঝে মাঝে অশালীন ভাষা ব্যবহার করি।
মানুষের বডি ল্যাঙ্গুয়েজের মানে বুঝতে পারি না।
কী বলবো না তা না জানা থাকায় কথাবার্তা বেশি দূর আগাতে পারি না।
ধন্যবাদ, প্লিজ এসব শব্দ ব্যবহার করতে কার্পণ্য বোধ করি।
মানুষের পার্সোনাল স্পেসের মধ্যে অনেক সময় ঢুকে পড়ি।
নতুন বন্ধু বানাতে পারি না।
আমার আশেপাশে মানুষ থাকলে নার্ভাস হয়ে যাই।
নিজের কথার আওয়াজ অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।
মানুষের আচরণে কষ্ট পেলে নিজের মধ্যে পুষে রাখি।
আমি আমার সোশ্যাল স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করছি (যেমন এই বইটা পড়ছি)।
.
বই আর ইন্টারনেট থেকে পাওয়া দুটো উক্তি দিয়ে শেষ করি,
সবাইকে খুশি করতে চাইলে নেতা না হয়ে আইসক্রিম বিক্রি করেন গিয়ে।
দ্বিতীয়টা স্টিভ জবস বলেছিলেন বোধ হয়, একটা আইডিয়াকে হ্যাঁ বলা মানে এক হাজারটা আইডিয়াকে না বলা।
*
ইমোটিকনে কমিউনিকেশন
এই ইমোটিকন জিনিসটা অনেক কনফিউজিং। একই ইমোটিকনের অর্থ একেকজনের কাছে একেক রকম। তাই, আপনি যা বলছেন, তা অন্যজন বুঝছে কি না, সেটা নিশ্চিত করাটাই ইমোটিকন কমিউনিকশনের মূল জটিলতা। একই বাক্য কেবল ইমোটিকন দিয়ে সম্পূর্ণ পাল্টে দেয়া যায়।
বর্তমান যুগে আমাদের অনেক কথা যেহেতু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হয়, তাই ইমোটিকনের ব্যবহারও অনেক বেড়ে গেছে। এখন সমস্যা হচ্ছে ইমোটিকনের ব্যাপারটা অনেক আপেক্ষিক। একেকজনের কাছে একেক ইমোটিকনের মানে একেকরকম হতে পারে। কিন্তু, নিচের ৩টি গাইডলাইন মানলে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যাবে :
১. আপনার মোবাইলে যে ইমোটিকন দেখাচ্ছে, সেটা অন্যের মোবাইলে গিয়ে বদলে যেতে পারে। তাই, আপনি বলছেন দুষ্টুমি করে কিছু, সেটা অন্যের হ্যান্ডসেটে বদলে গিয়ে আদেশ হয়ে যেতে পারে।
২. পেশাগত কাজে যেমন ইমেইলে একদমই ইমোটিকন ব্যবহার করা উচিত না। বাইরের দেশে অনেক উদারমনা ম্যানেজার থাকলেও, লোকাল মেইলে ইমোটিকন ব্যবহার করে বিপদে পড়লে আমরা দায়ী থাকবো না কিন্তু!
৩. ইমোটিকন ব্যাপারটা আপেক্ষিক। আপনার কাছে একটা অর্থ থাকতে পারলে, অন্যজনের কাছে সেটার অর্থ বদলে যেতে পারে। এটা জেনেশুনে তারপর ব্যবহার করবেন।
*
লিগ্যাল কমিউনিকেশন
পেশাদার দুনিয়ায় কাজ করার সময় জীবনেও মুখের কথার উপর সম্পূর্ণ ভিত্তি করে কাজ করবেন না, যা কিছু করছেন, সবকিছুর লিগ্যাল কাগজপত্র রাখবেন; তারপর বাকি সব কাজ।
এখন আসি মূল প্রসঙ্গে। আপনি কখনও যদি ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট খুলে। থাকেন, তাহলে দেখবেন কয়েকশ শুধু শর্ত আর শর্ত। অফিশিয়াল অনেক ডকমেন্টে দেখবেন নিচে একদম ছোট করে সারির পর সারি কঠিন শব্দে অনেক কিছু লেখা থাকে।
এগুলো কেন লেখা থাকে? নিশ্চয়ই ব্যবসায়িক কারণে। তবে, এখানে শেখার অনেক কিছু আছে। আসল ব্যাপার হচ্ছে, আপনি যদি আপনার শর্তগুলোর মধ্যে ফাঁকফোকর রাখেন এবং কেউ যদি সেটা ব্যবহার করতে পারে, তাহলে আপনার করার কিছুই থাকবে না। তাই, একশ লাইন হলেও লিগ্যাল পেপারস এমনভাবে তৈরি করা হয় যেন মানুষ সহজে এর ফাঁকফোকর ধরতে না পারে। এমন দুটো প্র্যাক্টিকাল উদাহরণ দিচ্ছি।
বাংলাদেশেরই বড় একটা সংস্থাকে একটা টেলিকম কোম্পানি অফার দিলো যে, আন্তর্জাতিক কল করার সময় প্রথম এক মিনিট ফ্রি এবং তারপরে প্রতি মিনিট টাকা কাটা হবে। আপনি চাইলে এখনই একটু চিন্তা করে দেখুন তো, অফারটার মধ্যে সমস্যাটা কোথায়?
কারণ, পরের মাসে টেলিকম কোম্পানি হুট করে দেখে তাদের কয়েক হাজার ডলার মূল্যের কথা বলা হয়েছে, কিন্তু বিল এসেছে মাত্র কয়েক ডলার। কাহিনী অনুসন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেল যে, মানুষজন ৫৯ সেকেন্ড কথা বলে কেটে দিত। তারপর আবার কল দিয়ে ৫৯ সেকেন্ড কথা বলতো। এভাবে ৫৯ সেকেন্ড পর পর কেটে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলে যেত কিন্তু বিল আসতো না কারণ অফার অনুযায়ী প্রথম এক মিনিট ফ্রি! এই নিয়ে প্রচুর বাকবিতণ্ডা হয়ে গিয়েছিল!
তারা যদি প্রথম এক মিনিট ফ্রি না বলে যদি এককালীন এক মিনিটের টকটাইম ফ্রি বলতো, তাহলেও টেলিকম কোম্পানি হয়তোবা বেঁচে যেত!
এই গেল একটা অফারের ভুলের উদাহরণ। এমন সমস্যা যেকোনো প্রক্রিয়াতেই হতে পারে। আরেকটা উদাহরণ দেই। তখন মানুষ প্রথম প্রথম অনলাইনে টাকা পাঠানো শুরু করেছে। টাকা পাঠাতে হলে তারা টাকার অংক লিখে সেন্ড দিত এবং টাকা চলে যেত। কিন্তু, একজন পোদ্দার একদিন সংখ্যার সামনে একটা নেগেটিভ চিহ্ন বসিয়ে সেন্ড ক্লিক করলো। মানে সে, ১০০ টাকা না লিখে ধরেন–১০০ টাকা লিখলো। এবং অবাক হয়ে সে দেখলো যে অন্যের অ্যাকাউন্ট থেকে তার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে এসেছে। এটা ছিল নেহাত প্রোগ্রামিং-এর সীমাবদ্ধতা। কেউ চিন্তাও করেনি যে খালি একটা নেগেটিভ চিহ্ন দিয়ে ব্যাংকের টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়াটাকেই পাল্টে ফেলা যাবে! পরে অবশ্য সেটা ঠিক করা হয়েছে। এখন আপনি চাইলেও ব্যাংকের এটিএমে গিয়ে এই কাজটি করতে পারবেন না।
শিক্ষার বিষয় হলো, ব্যবসার ক্ষেত্রে একটা সামান্য অক্ষর কিংবা চিহ্নও পুরো লাল বাতি জ্বালিয়ে দিতে পারে। তাই শর্ত প্রযোজ্য যত ছোট করেই লেখা থাকুক না কেন, ঠিকমত পড়ে যেন কাজে আগান।
*
কমিউনিকেশনের মায়া
নিচের ২টি কেস অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়। ব্যাপারগুলো খুবই স্পর্শকাতর, কিন্তু অনেকেই একদম অমানবিক একটা রিয়্যাকশন কিংবা কমেন্ট দিয়ে বসেন। একটার উত্তর আমরা দিয়ে দিলাম, অন্যটির উত্তর আপনি আপনার আশপাশের মানুষের সাথে কথা বলে বের করেন। এটা কাল্পনিক মনে হলেও অনেকে যদি একটু ইতিবাচক কথা বলতো, তাহলে হয়তোবা অনেক জীবন বদলে যেত। এমন অনেক ঘটনা আছে যেখানে সুইসাইড করার আগে অনেকেই ইশারা ইঙ্গিত দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেন একজন হলেও বন্ধু এগিয়ে আসে। আমার দুই ক্লাসমেট এভাবেই সুইসাইড করেছে। তাদের পোস্টের নিচে যদি একজন সহমর্মিতা নিয়ে কিছু লিখতো, তারা হয়তোবা আজ বেঁচে থাকতো। একটা অনুপ্রেরণামূলক কমেন্টও কিন্তু কখনই কম নয়। তাই, আমাদের দরকার কথার ভেতরের মানুষটিকে বোঝার।
*
কীভাবে মানুষকে আরও সহজে বুঝতে পারবেন?
চোখে চোখে কথা বলুন
কথা বলার সময় মানুষের মুখ, বিশেষ করে চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন যাতে তার অভিব্যক্তি এবং আবেগ বুঝতে পারেন।
বুঝলে বুঝতে দিন
মাথা নেড়ে, কিংবা আলতো হাসিমুখ দিয়ে প্রকাশ করুন যে আপনি বুঝতে পারছেন। আপনি বুঝতে পারছেন জানলে তিনি আত্মবিশ্বাস পাবেন এবং কথা রিপিট করবেন না।
মনে রেখেছি
এমন কোনো কথা যদি থাকে যেটা বললে মনে হবে যে আপনার আগের কথাগুলো বিস্তারিত মনে আছে, তাহলে সেগুলো শেয়ার করুন। কোনো বিষয়ে একমত থাকলে সেটাও শেয়ার করুন।
হুম যেন না বলতে পারে
আপনার প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ/না দিয়ে করা গেলে, অপর মানুষটির কাছ থেকে নতুন কিছু কিন্তু জানতে পারছেন না। তাই, এমন প্রশ্ন করুন যেগুলোর উত্তর করতে গিয়ে তারা আপনাকে কোনো তথ্য দিয়ে বসেন।
আয়নাবাজি
এটাকে বলে মিররিং। অন্য মানুষটি যেই বডি ল্যাংগুয়েজ দেখাচ্ছে, আপনি সেটা অনুকরণ করুন। মানুষ আপনার মাঝে তাদের নিজেদের প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলে আপনার সাথে আরও সহজভাবে কথা বলতে পারবে।
বুদ্ধিমান তোতাপাখি
মানুষ যা বলছে, তাই নিজের মতো করে গুছিয়ে আবার তাকে বলুন। এটাতে দুজনের মধ্যে বোঝাঁপড়ার তফাতটা অনেক কমে যাবে।
*
বলে ফেলা ভালো, নাকি চুপ থাকা ভালো
একটা সিচুয়েশন দেই আপনাকে। মনে করেন আপনি একজন স্টুডেন্টকে পড়াচ্ছেন। এখন তার অবস্থা দেখে আপনি বুঝে গেছেন যে তার অ্যাডমিশনে ভালো জায়গায় চান্স পাওয়ার সুযোগ খুবই কম। এমন অবস্থায় আপনি দুটো জিনিস বলতে পারেন :
১. এখন অবস্থা যাই হোক না কেন! তুমি পারবে! মানুষ পারে না এমন জিনিস নেই! লেগে থাকলে অনেক কিছুই হতে পারে!
২. এখন অবস্থা অনুযায়ী তোমার স্বপ্নের ইন্সটিটিউটে চান্স পাওয়ার সম্ভাবনা কম। এর চেয়ে তুমি তোমার দ্বিতীয় সারির পছন্দগুলো টার্গেট করে পড়লে রিস্ক অনেক কম।
দুটোই সত্য। কিন্তু, ব্যাপার হচ্ছে এই যে সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারটা রিস্ক নিবো না কি সেফ খেলবো?– এই সিদ্ধান্ত তো শিক্ষার্থীর নেওয়া উচিত কারণ এটা তার জীবন। আমরা ক্ষণিকের উৎসাহ দিয়ে আসল রিস্কের কথা না বলে হয়তোবা তাদের মন খুশি করছি, কিন্তু আসলে তার সত্যটা জানা উচিত।
আর এখানেই সমস্যাটা হয়। মন খারাপ করবে বলে অনেক সময়ই আমরা মানুষকে সত্যটা না বলে একটা বুলি শুনিয়ে দেই। এটাকে ইংরেজিতে বলে Sugarcoating। অর্থাৎ সত্যি কথা গায়ে লাগবে বলে, মিষ্টি কথা দিয়ে সেটা এড়িয়ে যাওয়া।
কিন্তু, এই সুগারকোটিং করলে কিন্তু আমরা মানুষটাকেই বিপদে ফেলছি। তাহলে আমরা কী করবো?
১. মন খারাপ করে ফেলতে পারে এমন সত্য বলবো?
২. সুগারকোটিং করবো?
পারলে, নিজের কথা রেখে অন্যেরটা চিন্তা করে সত্যটা বলুন। আপনার নিষ্ঠুর সত্যের জন্য আজ হয়তোবা আপনাকে ঘৃণা করবে, কিন্তু কাল যখন দেখবে বাকি সবাই নিজের মুখ বাঁচানোর জন্য সুগারকোটিং করেছিল; তখন আপনাকে বেশি শ্রদ্ধা করবে।
আর মনে রাখবেন, মানুষকে সত্য বলার ব্যাপারটা আপনার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তের ব্যাপার না। এটা আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
*
মিটিং কমিউনিকেশন
যেই কাজটা একটা এসএমএস, ফোন কল কিংবা ইমেইল দিয়ে শেষ করা যায়, সেই কাজের জন্য যেন কখনও মিটিং না করতে বসি। এবং মিটিং-এ কোনো ভূমিকা নেই, এমন মানুষ না রাখলে মিটিং আরও ফোকাসড হবে। তো চলুন, দেখে নেয়া যাক বাদবাকি মিটিং কমিউনিকেশন হ্যাকস।
মিটিং-এর কমিউনিকেশন কায়দা
গ্রহণযোগ্য
১) কান খোলা রাখুন। কান ঠিকমত খোলা রাখলে কিন্তু সবারই কথা বলার প্রয়োজন কমে যায়।
২) মিটিং রুমে চা-কফি রাখুন। বিশেষ করে লম্বা সময়ের মিটিং-এর জন্য।
৩) আমাদের মেমোরি অতটাও শার্প না যতটা আমরা মনে করি। তাই মিটিংয়ের সময় খাতায় কিংবা ডিজিট্যালি নোট নিন।
৪) মিটিং-এর আগে আপনার রিসার্চ এবং পেপারওয়ার্ক শেষ করে রাখুন।
৫) প্রশ্ন করে নিশ্চিত করুন যে আপনারা দুজন একই জিনিসই বুঝেছেন।
অগ্রহণযোগ্য
১) মানুষের যদি মনে হয় যে শুধু আপনিই কথা বলছেন, তাহলে তারা আপনার কথা শোনা বন্ধ করে দিয়ে নিজেদের কণ্ঠ জোরালো করার প্রতি মনোযোগ দিবে যেটাতে সবারই লস।
২) বেশি কুড়মুড় শব্দ করে এমন টোস্ট কিংবা পুরো রুম গন্ধ করে ফেলে এমন পেঁয়াজ–্রসূন দেওয়া হবার খাবেন না। বিশেষ করে ক্রমের ভেতর তো সিগারেট ধরাবেনই না।
৩) আপনি যতই ভালো স্যুট-টাই পরে ফরফর কথা বলেন না কেন, লেট করে মিটিং-এ গেলে আপনার ইমেজের ক্ষতি পোষানো বেশ কঠিন হয়ে যাবে।
৪) কথা বলার সুযোগের অভাব কখনই হবে না, তাই অন্যের কথার মাঝে তাকে থামিয়ে দেবেন না। সবারই সময়। আসবে।