কমিউনিকেশন ল্যাঙ্গুয়েজ গ্যাপ
মনে করেন কেউ আপনাকে বলল, Thank you!
আপনি বললেন, Youre welcome!
এখন একই কথাই বাংলায় বলি,
কেউ আপনাকে বলল, ধন্যবাদ!
এখন আপনি কী বলবেন? শুভেচ্ছা?
আপনাকে যখন কেউ ধন্যবাদ দেয়, আপনি কী উত্তর দেন? খেয়াল করলে দেখবেন যে, আমাদের কিন্তু বাধাধরা কোনো নির্দিষ্ট উত্তর নেই ধন্যবাদের জন্য। তাই, অনেকে আমরা নীরবে ধন্যবাদ নেই আর একটা মুচকি হাসি দেই। আমাদের নিজেদের কথা বললে ধন্যবাদ পেলে আমরা বলি আপনাকেও ধন্যবাদ! কিংবা আপনি চাইলে স্বাগতম ও বলতে পারেন। যাই বলেন না কেন, অন্তত চুপ করে খালি ধন্যবাদ শুনবেন না, এই আরকি!
*
ভোকাবুলারি কেন শিখবো?
পরীক্ষার জন্য ভোকাবুলারি শেখার ব্যাপারটা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি। বিরক্তিকর ছিল। তখন পরীক্ষা পাস করার জন্য হলেও কষ্ট করে। শিখেছিলাম। পরে বিভিন্ন ট্রেইনিং সেশনের জন্য রিসার্চ করতে গিয়ে এমন কিছু ব্যাপার জানলাম, যেগুলো আগে জানা থাকলে হয়তোবা আরও আগে থেকে এবং বেশি আগ্রহের সাথে নতুন শব্দ শিখতাম। ব্যাপারগুলো আপনাদের সাথে এখনই শেয়ার করি যেন বাকিটা জীবন ভোকাবুলারি আপনি নিজ আগ্রহেই শিখবেন।
১. আমরা অধিকাংশ চিন্তাভাবনা করি শব্দ দিয়ে। এমন কিছু জিনিস আছে যেগুলো শব্দ ছাড়া আমরা কল্পনা করতে পারি না। যেমন : সমাজ, আদর্শ, হিংসা ইত্যাদি যেগুলো অবস্তুগত চিন্তা। আপনি হয়তোবা অনেক কিছু অনুভব করতে পারেন, কিন্তু শব্দের মাধ্যমে আমরা সবচেয়ে ভালো ভাবে চিন্তা করতে পারি। আমাদের ভোকাবুলারির গভীরতা নির্ধারণ করে আমাদের চিন্তার ব্যাপকতা কতদূর হবে।
২. ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স শেখাতে গিয়ে আমরা একটা জিনিস শিখলাম। যে, আমরা যত স্পষ্টভাবে আমাদের ইমোশনগুলো শব্দ দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারবো, আমাদের জন্য ইমোশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করা তত সহজ হয়ে যাবে। পরে দেখা গেল যে, বিভিন্ন জাতির ইমোশনের উপর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কেমন। দেখা গেল চাইনিজরা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে অনেক এগিয়ে আছে। এবং বুঝতেই পারছেন এর পেছনে কারণ কী? ভোক্যাবুলারি! তাদের ভাষায় ৩,৭০,০০০-এরও বেশি শব্দ আছে এবং কম্বিনেশন করে আরও অনেক। তারা আরও নিখুঁতভাবে নিজেদের প্রকাশ করতে পারে বলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা নিজেদের অনুভূতি সম্পর্কে অনেক সহজে জানতে পারে। তাই, নিজেকে জানতে এবং নিজের ইমোশনগুলো বুঝতেও ভোকাবুলারি জানুন।
৩. সব ভাষায় সব শব্দ থাকে না। কিংবা শব্দ থাকলেও একই অর্থ থাকে না। যেমন : ইংরেজিতে Thank You এর উত্তরে Welcome এর যে মানে, welcome এর বঙ্গানুবাদ করে শুভেচ্ছা বললে কিন্তু একই মানে তা না। তাই, বিভিন্ন অনুভূতি এমন আছে যেগুলো কেবল নির্দিষ্ট ভাষা ভাড়া অন্য কোনো ভাষায় নেই। যেমন- বাংলায় আছে কিংকর্তব্যবিমূঢ় কিংবা পরশ্রীকাতরতা ইত্যাদি। তাই নতুন ভাষার নতুন ভোকাবুলারি জানলে আপনার কমিউনিকেশন করার ক্ষমতা অন্যদের সাথে এবং নিজের চিন্তাগুলোর মাঝে অনেক বেড়ে যাবে।
*
আন্তর্জাতিক কমিউনিকেশন
আপনি নিশ্চয়ই টম অ্যান্ড জেরি, মিকি মাউস এসব কার্টুন দেখেছেন। চার্লি চ্যাপলিন কিংবা মিস্টার বিনের এপিসোডও আশা করি দেখেছেন। এগুলো সারা পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত। এর একটা কারণ কী জানেন?
টম অ্যান্ড জেরি, মিকি মাউস, চার্লি চ্যাপলিন কিংবা মিস্টার বিন– সবারই ভাষা আন্তর্জাতিক। না না, ইংলিশের কথা বলছি না!
আরেকটু ঠিকভাবে বললে বলবো এই বিশ্বপ্রিয় সিরিজগুলোর ভাষা বিশ্বজনীন। কারণ, এই সিরিজগুলোতে কোনো কথাই নেই! সব বডি ল্যাংগুয়েজ এবং অ্যাকশন দিয়ে প্রকাশ করা হচ্ছে। কোনো একটা নির্দিষ্ট ভাষায় কন্টেন্ট বানালে সেটা ওই ভাষায় কথা বলা মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে যতক্ষণ না সেটা অনুবাদিত হয়। কিন্তু, যেই কন্টেন্ট পুরোটাই ছবির উপর নির্ভর করে, যেমন ফটোগ্রাফি; সেই কন্টেন্ট তো পুরো পৃথিবীর মানুষ। বুঝতে পারে।
তাই, বিশ্ববাসীর জন্য কিছু বলতে চাইলে ইংলিশের চেয়েও একটা বড় একটা ভাষা আছে কিন্তু!
*
সবাই তো এটা জানেই!
আপনি যা জানেন, তা নিশ্চয়ই সবাই জানে না। কিন্তু, অনেকে ভাবে যে, আরেহ! এটা তো সবাই জানে! এটা আবার বলার কী হলো?
একটা উদাহরণ দেই আমাদের জীবন থেকে। বাংলাদেশে এখনও কোটি কোটি মানুষ আছেন যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন না। শহরেই এমন অনেক সিনিয়র সিটিজেন আছেন, যারা ইন্টারনেট ব্যবহার করা শিখতে চান, কিন্তু হয়তোবা শেখানোর মতো সময় তাদের আশপাশের কারও নেই। এমন অবস্থায় আমরা কয়েকটা উন্মুক্ত ভিডিও কোর্স বানাই যে। কীভাবে গুগল ব্যবহার করতে হয়?, কীভাবে ইন্টারনেটে ব্রাউজ করতে হয়? ইত্যাদি।
আমাদের লক্ষ্য ছিল, যাদের ইন্টারনেট শেখানোর কেউ নেই, তাদের কাছে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের মাধ্যমে এই ভিডিওগুলো পৌঁছে দেওয়া।
কিন্তু, অনলাইনে দেওয়ার পর মানুষ প্রচুর ঠাট্টা-বিদ্রূপ করলো কমেন্টে।
এইটা কি কোনো শেখানোর কিছু হলো নাকি?
কন্টেন্টের কি অভাব হয়েছে নাকি? ইত্যাদি।
অনেকেরই এই ধারণা ছিল যে, তারা দৈনন্দিন ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন বলে সবাই বোধ হয় গুগল, নেট ব্যবহার করতে পারে। এবং এই চিন্তাটার জন্য, আমি যা জানি ওটাতো অন্যরাও জানে!; অনেক প্রয়োজনীয়। তথ্য আমরা অন্য মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি না।
আরেহ! মানুষকে কি হাত ধোয়া শেখানো লাগে?
বিশ্বাস করেন আর নাই করেন, পৃথিবীতে লাখ লাখ স্বেচ্ছাসেবক মানুষকে বিভিন্ন দেশে হাত ধোয়া শেখাচ্ছে কারণ এই একটা কাজের মাধ্যমে লাখ লাখ প্রাণ অকালমৃত্যু থেকে বেঁচে যাবে।
আমি তো কেবল কলেজে, আমার কথা কার কাজে লাগবে?
–যারা স্কুল থেকে কলেজে ভর্তি হচ্ছে তাদের কাজে লাগবে!
আমি তো কেবল চাকরিতে জয়েন করেছি। আমি আবার কীভাবে হেল্প করবো?
–আপনি যেভাবে সিভি বানিয়ে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরিটা পেয়েছেন, সেই প্রক্রিয়াটা শেয়ার করলে চাকরিপ্রার্থীদের অনেক কাজে লাগবে!
মোটকথা, আপনি নিজে যা জানেন, সেটা সব সময় যে অন্যরাও জানবে এমনটা কিন্তু নয়।
*
অন্যের সমস্যা বনাম নিজের সমস্যা
মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি : দুনিয়ার কোটি কোটি সমস্যা থাকলে। থাকুক, কিন্তু নিজের সমস্যাটা তার কাছে সব থেকে বড় সমস্যা।
এখন এই বেসিক সাইকোলজিটা আমরা আমাদের জীবনে কীভাবে কাজে লাগাতে হয় সেটা শিখবো। নিজের সমস্যার কথা অন্যের কাছে বললে খুব একটা লাভ নেই যদি না সে আপনার খুব কাছের কেউ হয়। আপনার সমস্যা অন্য কারো ব্যক্তিগত সমস্যা নয়। কিন্তু, সেটা অন্য কারও সমাধান কিংবা সাজেশন হতে পারে এবং সেভাবেই জিনিসটা উপস্থাপন করলে আপনারঙ্কাজ হাসিল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কয়েকটা উদাহরণ দেই।
আপনি যা বলতে পারেন—
স্যার, প্লিজ! একটা ইস্যুরেন্স করান। ইস্যুরেন্স না করাতে পারলে বস রেগে যাবেন!
স্যার এই ইন্স্যুরেন্সটা আমার আপনার কারও জন্যই না, এটা আপনার সন্তানের নিরাপত্তার জন্য করুন।
আপনার কথা। শুনে ক্লায়েন্ট যা ভাবতে পারে-
তাতে আমার কী!
আচ্ছা, হ্যাঁ! তাই তো। আমি না থাকলে আমার বাচ্চার কী হবে? এই কয়টা টাকার জন্য বাচ্চার ভবিষ্যত নিয়ে ঝুঁকি নেওয়া উচিত হবে না।
আরেকটা উদাহরণ দেই ইউনিভার্সিটি লাইফের জন্য। মনে করেন আপনার কোনো টিম মেম্বারের কাছ থেকে তার পার্টটা দ্রুত করিয়ে নিতে হবে, এমন। অবস্থায় কী করা যায়?
আপনি যা বলতে পারেন | দোস্ত! তোর প্রেজেন্টেশনের পার্টটা একটু জলদি করে দে না! | দোস্ত আজকে রাত ১১টার মধ্যে তোর পার্টটা করে দে। নাহলে কালকে তোর ফুটবল ম্যাচ বাদ দিয়ে কাজটা করতে হবে। |
আপনার বন্ধু যা ভাবতে পারে | আমি আর করসি! | ও জানে যে কালকে আমার প্ল্যান কী। আজকে না পাঠালে কালকে টাইম আর জায়গামত আমাকে ধরে ফেলে খেলার বারোটা বাজায় দিবে। আজকের মধ্যেই করে ফেলি তাহলে! |
একদম বেসিক একটা পানির বোতলের ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে শেষ বলে ব্যাখ্যাটা করি। মনে করেন একটা টেবিলে আপনি আরেকজনের সাথে বসে আছেন এবং মাঝখানে একটা পানির বোতল। বোতলটির মুখ খোলা এবং যে কোনো সময় পানি পড়ে আপনাদের কাগজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এখন বোতলটি সাবধানে রাখতে বলবেন কীভাবে?
ভাই, আপনার বোতলটা একটু বন্ধ করে সাবধানে নিচে রাখেন নাহলে যেকোনো সময় বোতল উল্টে আমার কাগজ ভিজে যেতে পারে।
ভাই, আপনার বোতলটা একট বন্ধ করে সাবধানে নিচে রাখেন নাহলে যেকোনো সময় বোতল উল্টে আপনার কাগজ ভিজে যেতে পারে।
দেখলেন তো এক শব্দের কী কারিশমা! এখন নিশ্চয়ই আপনি একদম ক্লিয়ারলি বুঝতে পারছেন যে কেন আপনি ডানপাশের অপশনে কথা বলবেন!
একদম বেসিক হলেও এটার মাধ্যমে আসলে কী হচ্ছে? অন্য মানুষটি আপনার স্বার্থের কথা শুনলে আপনার উপর বিরক্ত হবে। কিন্তু, নিজের স্বার্থে রক্ষার কথা আপনার মুখ থেকে শুনলে আপনার উপর অনেক খুশি হবে। দিন শেষে একই কাজই কিন্তু হচ্ছে, একটা বোতল সরানো হচ্ছে; কিন্তু বলার শব্দের উপর নির্ভর করছে কাজটা কতটা বিনয় আর স্ব-ইচ্ছার সাথে হচ্ছে।
*
পোশাকে কমিউনিকেশন
একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট একটা বড় কোম্পানির ম্যানেজারের সাথে ৫ মিনিটের একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেল। দুজন মিলে কোম্পানির পাশের রেস্তোরাঁয় বসলো। খাবার অর্ডারের পরে ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট কৌতূহলবশত ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করলো, স্যার! আপনি তো আমার চেয়ে অনেক বেশি সিনিয়র। তবুও এই ছোট্ট মিটিং করতে আপনি কোট টাই পরে এসেছেন। কেন? ম্যানেজার মুচকি হেসে বললেন, তুমি জুনিয়র বলে কি স্যান্ডো গেঞ্জি পরে মিটিং করতে আসবো!
সিনিয়র হোক আর জুনিয়র, সবাইকে সমান গুরুত্ব দিয়ে মিটিং করতেন বলেই হয়তোবা তিনি বড় কোম্পানির ম্যানেজার ছিলেন। দিনশেষে আপনি কী পোশাক পরবেন সেটা আপনার ব্যাপার, কিন্তু আপনার পোশাক আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই কমিউনিকেট করবে অন্যদের কাছে–সেটা আপনাকে মেনে নিতেই হবে।
ড্রেস নিয়ে আরেকটা কমন প্রশ্ন পাওয়া যায়।
ভাই! মার্ক জাকারবার্গ আর স্টিভ জবসকে চিনেন? তাদের প্রেজেন্টেশন তো কোটি কোটি মানুষ দেখে। কিন্তু, ওরা তো গেঞ্জি পরে প্রেজেন্টেশন দেয়!
তারা ভাই নিজেদের কোম্পানির বস! তার উপর তারা মাল্টি বিলিয়নিয়ার। তাদের আর কাউকেই ইম্প্রেস না করলেও চলবে এবং দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ তাঁদেরকে চিনে। আপনিও যদি ওই লেভেলের বস হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি চপ্পল পরে প্রেজেন্টেশন দিলেও মানুষ দেখবে!
*
ফিডব্যাকের কমিউনিকেশন
আমাদের চোখের সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে যে আমরা পুরো দুনিয়াটাকে দেখতে পারলেও, নিজেদের দেখতে পারি না সরাসরি। আমরা মানুষের বহুত ভুল ধরতে পারলেও নিজেদের ভুলগুলোর ব্যাপারে আমরা অন্ধ। তাই নিজেদের ভুলগুলো শুধরে নিতে অন্যদের সাহায্য দরকার। কিন্তু এখানেই সমস্যা। খুব কম মানুষের পক্ষেই সম্ভব একদম নিরপেক্ষভাবে নিজের সমালোচনাটা নেওয়া।
যখনই কেউ আমাদের সমালোচনা করে তখন আমরা কী করি?
–রেগে যাই
-–পাল্টা আক্রমণ করি
–সমালোচনাকারীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলি
–মন খারাপ করে বসি
এত কিছু করি, কিন্তু কয়জন আছি যারা সমালোচনা শুনে সেটা দিয়ে নিজেকে শোধরানোর চেষ্টা করি? খুবই কম। কারণ, আমরা নিজের ব্যাপারে অনেক বেশি ডিফেন্সিভ। এবং এজন্যই একবার বিজনেস কমিউনিকেশন ক্লাসে স্যার আমাদের একটা এক্সপেরিমেন্ট করালেন। তিনি ক্লাসে বললেন যে, কে আছো, যে আরও সুন্দরভাবে সমালোচনা নিতে চাও? শুরুর দিকে সুযোগ পেলেই আমি ক্লাসের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করতাম যাতে আমার কথা বলার দক্ষতা বাড়াতে পারি। তাই, আমি হাত তুললাম। স্যার আমাকে ক্লাসের সামনে এসে দাঁড়াতে বললেন। তারপর স্যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে। বললেন, এখন তোমরা সাদমানের সম্পর্কে যা যা সমালোচনা আছে, তা করবা। এরপর স্যার আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, খালি একটাই কন্ডিশন, তুমি সমালোচনার কোনো জবাব কিংবা ব্যাখ্যা দিতে পারবে না। আমি ভাবলাম কিসের কী, এটা তো অনেক সহজ। কিন্তু, আমি তো জানতাম না যে আমি ডিফেন্স করতে না পারলে আমার নামে কত সমালোচনা উঠে আসবে। এক এক করে শুরু হলো, তুই বেশি দ্রুত কথা বলিস!, তুই কথা বলার সময় বেশি হাত নাড়াস!, আমাদের না বলে তই বলিস আমদের! আমি সাথে সাথেই বলতে গেলাম, আরে আমি তো সময়ের জন্য বলতে পারি না…; সাথে সাথে স্যার আমাকে থামিয়ে দিলেন। শর্ত একটাই যে, আমাকে চুপ থাকতে হবে। তারপর আরও অনেক সমালোচনা আসলো যেটা আসলেই আমাকে উন্নতি করতে সাহায্য করেছে। এক্সপেরিমেন্টটার উদ্দেশ্য ছিল এটা বোঝানো যে, আমরা যদি চুপচাপ সমালোচনা নিতে পারি, তাহলে আমরা নিজেদের সম্পর্কে আসলেই অনেক কিছু জানতে পারি। সমালোচনা শুনলেই যদি আমরা রেগে যাই, দুই-একটা কথার মোচড়ে অন্য মানুষটিকে কুপোকাত করে ফেলি; তাহলে আমরা কখনই অন্য মানুষদের কাছ থেকে গঠনমূলক সমালোচনা পাবো না। কারণ, তারা সব সময় ভয়ে থাকবে এবং জরুরি অনেক কথাও নিজের মধ্যে পুষে রাখবে।
*
চুপ কেন থাকবো
আমাদের পৃথিবীটা অনেক সহজ হত যদি ভুল করার সময় সাথে সাথে আমরা সঠিক গঠনমূলক সমালোচনা পেতাম।
আমরা বেশিরভাগ সময় কাজের ফিডব্যাক সময়মত পাই না। ইউটিউবে আমরা ভিডিও বানানোর সাথে সাথে কমেন্ট পাই, কোনটা ঠিক কোনটা ভুল। কিন্তু এই কমেন্টগুলোই যদি আমরা ১ বছর পরে পাই, তাহলে তো আমরা ভুলেই যাবো যে কী ইপ্রুভ করা যেত। তাছাড়া ১ বছর পরে। ফিডব্যাক পেলে এই যে মাঝের ১টা বছর গেল, সবগুলোতে ভালো করার চান্স মিস গেল। তাই, ফিডব্যাক থাকলে যেন আমরা সাথে সাথেই দেই।
আরেকটা উদাহরণ দেই। কোনো কারণে ঘুম না হওয়ার কারণে হয়তোবা আপনার কয়দিন ধরে খিটখিটে মেজাজ হয়ে আছে। সবাই বিরক্ত হচ্ছে কিন্তু কেউ ভয়ে কিছুই বলছে না। জানবেন হুট করে এমন কোনো একজনের কাছে। যে আর ব্যাপারটা নিতে পারছে না।
আপনি সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন! পেয়েছেটা কী!
আপনি অবাক হয়ে খেয়াল করলেন আসলেই তো। কারণ ছাড়াও অনেকের সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়ে যাচ্ছে। এটাই এত দেরিতে না বলে প্রথমে বুঝিয়ে বললে কিন্তু পুরো সপ্তাহজুড়ে নিজের ব্যবহারে আরও বেশি সচেতন হতেন।
একটা জিনিস খেয়াল করলে দেখবেন, আমরা পড়াশোনা ঠিক করছি না ভুল করছি, সেটা ছয় মাস কি বারো মাস পর আমরা রিপোর্ট কার্ডে জানতে পারি। যখন রিপোর্ট কার্ডে জানতে পারি কোথায় ভুল ছিল, তখন আর পড়াশোনার ভুলগুলো শুধরানোর সময় থাকে না। তাই, আমাদের উচিত যখন শিখছি, তখন একটা মিনি প্র্যাক্টিকাল করে যাচাই করে নেয়া যে আমরা আসলেই বুঝতে পেরেছি কি না।
কর্পোরেট দুনিয়ায় রিপোর্টকে বলে অ্যাপ্রেইল (Appraisal)। বছর শেষে বস যদি ঝাড়ি দেয় যে, আপনার কাজ ঠিক হয়নি; তাহলে লাভ কী? বরং কাজ যখন করছিলেন তখন একটু একটু করে ফিডব্যাক দিলে পুরো কাজটাই বছর শেষে ঠিকঠাক এগোতো। খালি চিন্তা করে দেখুন, ৩ মাস পর পর একটা করে ঝাড়ি খাওয়ার চেয়ে যদি প্রতিদিন আপনি যখন যেই ভুলটা করেন তখন যদি সেটা শুধরে দেয়া হত তাহলে আপনি কত দ্রুত উন্নতি করতে পারতেন!
তাই, ফিডব্যাক হচ্ছে ঋণের মত যত দ্রুত সম্ভব অন্য মানুষটিকে বুঝিয়ে দিন!
*
কে ঠিক, কী ঠিক
মনে করেন দুই পিচ্চির মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে,
১ম পিচ্চি : সূর্য উত্তর দিকে উঠে।
২য় পিচ্চি (মায়ের মোবাইলে কম্পাস দেখে) : এই দেখ! সূর্য দক্ষিণ দিকে উঠে!
আপনি দূর থেকে বুঝতে পারছেন কোনো পিচ্চিই সাধারণ জ্ঞানের হোমওয়ার্কটা এখনও করে নাই। কিন্তু, তারা তাদের নিজেদের অজানার মধ্যে ঝগড়া করে যাচ্ছে।
আমরাও অনেকে ওই দুই পিচ্চির মত মারামারি করে যাই। কে ঠিক এটা বের করতে যেয়ে ভুলেই যাই যে, কোনটা ঠিক?
আমাদের আগ্রুমেন্টের সাথে যেই মুহূর্তে আমরা আমাদের ইগো জড়িয়ে দেই, ঠিক সেই মুহূর্তে সেটা অনুসন্ধান না হয়ে মৌখিক বক্সিং হয়ে যায়। মৌখিক বক্সিং এড়াতে, গলার জোর না বাড়িয়ে কথার যুক্তি বাড়াবেন।
*
স্প্যাম বনাম ব্যক্তিগত কমিউনিকেশন
মেসেজ #1 | মেসেজ #2 |
Hello Everyone! I have started an online shop for gadgets. I have a special offer going! Give the page a like and share! | Hi Sadman Bhaiya! Hope youre doing amazing! If you need any latest gadget just give me a call and I will manage it for you. My number : +8801400373965. By the way, 5% special discount for you and your friends Bhaiya! |
কোথায় ঘাটতি আছে | কোথায় হ্যাকস আছে |
Hello Everyone! বুঝা যাচ্ছে যে একই ম্যাসেজ কপি-পেস্ট করে সবাইকে পাঠানো হয়েছে। | নাম বলার কারণে স্প্যাম মনে হবে না। তার উপর শুরুতে ফ্রেন্ডলি ধাঁচ আছে। |
I have a special offer going! – কী অফার? কিসের জন্য? এখন কি আমাকে গিয়ে দেখতে হবে? কয়দিনের জন্য এই অফার? | 5% special discount for you and your friends—অন্য জায়গায় দাম সহজেই আমি কম্পেয়ার করে দেখতে পারবো যে ডিসকাউন্ট নিলে আমার লাভ আছে নাকি। ফেসবুক পেজে গিয়ে দেখতে হচ্ছে না কষ্ট করে খুঁজে। |
Give the page a like and share!– কেন করবো ভাই? আমার কী ঠেকা? | আমার বন্ধুদের জন্যও যেহেতু ৫% ডিসকাউন্ট, তাই আমি আরও অন্যদের কাছে এই পেজের কথা বলার উৎসাহ পাবো। কারণ অন্যদের ডিসকাউন্ট ম্যানেজ করে দিতে পারলে তারাও আমার উপর খুশি হবে। |
কোনো কিছু জানতে হলে ওই পেজে গিয়ে তারপর টেক্সট দিয়ে উত্তরের জন্য বসে থাকতে হবে। | নাম্বার দিয়ে দিয়েছে, তাই একদম সরাসরি যে কোনো সময় কল দিতে পারবো। |
*
সবচেয়ে মধুর শব্দ
ছোটবেলায় পরীক্ষার পরীক্ষার খাতায় নাম্বার পাওয়ার জন্য আমরা অনেকেই হয়তোবা খাতায় লিখেছি যে মা শব্দটির মত মধুর শব্দ আর নেই এই পৃথিবীতে!
কিন্তু অনেকে তো আম্মা, আম্মু কিংবা মামনি ডাকে। তাদেরও কি মা শব্দটি সবথেকে বেশি প্রিয়? কিংবা মনে করেন যারা অন্য ভাষায় কথা বলে, মাদার, আম্মিয়া কি তাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় শব্দ? যদি তাই হয়, তাহলে তো মা শব্দের পাশাপাশি মা শব্দের অনুবাদগুলোরও সবথেকে মধুর শব্দ হওয়ার কথা!
আচ্ছা তর্কে না যাই! এটা ইমোশনের ব্যাপার। কিন্তু, সত্যি কথা বলতে আমাদের কাছে সবচেয়ে মধুর শব্দ হচ্ছে আমাদের নিজেদের নাম। সবচেয়ে মধুর শব্দ না হলেও, সবথেকে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে আমাদের নিজেদের নাম।
একটা হলরুমে আপনি মাইকে গিয়ে বলেন মা। কার মার কথা বলা হচ্ছে। এটা তো কেউ জানে না। তাই অনেকে হয়তোবা নিজেদের মোবাইলে আবার ডুবে যাবে। কিন্তু, আপনি কারও নাম বলেন। যাদের নাম, তাদের ১০০% মনোযোগ আপনি পেয়ে যাবেন। এতই যখন গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আমাদের নাম, এটাকে কীভাবে কমিউনিকেশনে কাজে লাগানো যায়?
১. মানুষের নাম মনে রাখা শুরু করেন। মানুষ অনেক খুশি হয় যখন তারা দেখে যে অন্য মানুষটি তাদের নাম মনে রেখেছে।
২. অনলাইনে যখন কথা বলছেন কিংবা এসএমএস করছেন, মানুষের নাম উল্লেখ করেন। এখন অনেক বিজনেস টুল আছে যেগুলো একই মেসেজ হাজারজনকে পাঠাতে পারে, কিন্তু সবার মেসেজে তাদের নিজের নাম এডিট করে বসাতে পারে। এতে করে মেসেজ পেলে মনে হয় যে আমাকে একান্ত ব্যক্তিগতভাবে মেসেজ করা হয়েছে।
*
আরে আমিও তো!
মানুষ দুটো জিনিস সবথেকে বেশি পছন্দ করে :
১। প্রশংসা এবং ২। সাদৃশ্য।
প্রশংসা পেতে যে সবারই ভালো লাগে এটা নিয়ে আসলে বলার নতুন কিছু নেই। তবে সাদৃশ্যের ব্যাপারটা কী?
মানুষ তার নিজের মতো কাউকে পেলে অবচেতনভাবে অনেক খুশি হয়। দুইজন যদি একই স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে থাকে, তাহলে একদম প্রথম দেখাতেই অনেক ঘনিষ্ঠ হয়ে যায়। একই ভাবে আপনি যদি আরেকজনের সাথে আপনার পছন্দের কিংবা জীবনের কোনো মিল খুঁজে পান, তাহলে সাথে সাথে সেটার কথা তুলুন।
আপনাদের দুইজনের যদি একই সিরিজ, গান কিংবা বই ভালো লাগে, তাহলে দুজনের মধ্যে কথা বলার অনেক সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। এমনও হয়েছে যে দুইজনের মধ্যে কোনো মিল নেই, কিন্তু কোনো এক সময় আমরা একই কোম্পানিতে কাজ করেছি; সেটার কথা বলার সাথে সাথেই একটা কানেকশন তৈরি হয়ে গেছে!
তাই, মানুষকে যোগ্য প্রশংসা করুন এবং জীবনের কোনো মিল থাকলে সাথে। সাথে সেটার কথা মেনশন করুন।
*
চাওয়া পাওয়ার কমিউনিকেশন
কবি বলে গেছেন, যা চাই, তা ভুল করে চাই; যা পাই তা চাই না। এর মাঝে সত্য থাকলেও শতভাগ সত্য বলা যাবে না। কারণ, কিছু সময়। চাইলেই আসলে পাওয়া যায়, কিন্তু আমরা লজ্জা কিংবা ভয়ে চাই না।
কয়েকটা উদাহরণ দেই। একদিন বন্ধুদের নিয়ে খেতে গিয়েছি। একটা দারুণ অফার চলছিল। কিন্তু, অফারটা সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রযোজ্য ছিল। তো এখন। বুঝতেই পারছেন যে আমরা দেরিতে পৌঁছেছিলাম। সাতটা পঁচিশ বাজে দেখে সবাই অন্য দোকান দেখা শুরু করলো। আমি বললাম, একবার জিজ্ঞেস করে। দেখ না। আমাকে বললো যে সময় শেষ হয়ে গেছে। আমি তারপরও একবার খালি গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসতে বললাম; যা না! খালি একটা প্রশ্নই তো! আর হ্যাঁ, আমার বন্ধুকে অবাক করে দিয়ে তারা রেস্টুরেন্ট ঠিকই আমাদের। জন্য অফারটা কন্সিডার করলো। এমন না যে তারা ঘড়ি ধরে থাকে যে সাতটা বাজলেই তারা তাদের অফার বন্ধ করে দিবে। তারাও মানুষ। তাদেরও এক বিচার-বুদ্ধি আছে। আমরা যদি জিজ্ঞেস না করতাম, তাহলে আমরা বেশি দামে অন্য কোনো খাবারই হয়তোবা খেতাম। খালি একটু সাহস করে জিজ্ঞেস করায় ওইদিন আমরা সবাই খুব মজা করে খেয়েছি। এবং যদি না বলতো? ক্ষতি কী? এমনিও সাতটায় অফার বন্ধ ছিল। প্রশ্ন করলে খালি জেতার সুযোগ। ছিল, হারানোর তো কিছু ছিল না!
এমন আরও অনেক উদাহরণ দেয়া যাবে, যেখানে কেবলমাত্র একটু জিজ্ঞেস করার কারণে অনেক কিছু পেয়ে যাওয়া সম্ভব। কিন্তু আমরা সেটা করি না। আরেকটা একদম সত্য ঘটনা বলি। একটা স্টুডিও মাইক্রোফোন কিনতে গিয়েছি। আমার অনেক কষ্টে বাজেট ছিল ১৪ হাজার টাকা। দোকানদার বললো ১৫ হাজার। প্রায় ৭-৮ মিনিট দরদাম করলাম। উনি শেষমেষ উনার প্রোডাক্ট লিস্ট খুলে দেখালেন যে মাইক্রোফোনটার দাম তার নিজের রেজিস্টারেই ১৪ হাজার ৫০০ টাকা লিখা ছিল, তাই তিনি এর কমে দেবেন না। তো এমন অবস্থায়, আমারও আসলে কিছুই বলার নাই, তার উপর মাঝখানে আমি নিজে আমাজনে গিয়ে পণ্যটির দাম দেখে এসেছি, তিনি মিথ্যা বলছিলেন না। তাই আমি চলে যাচ্ছিলাম, কিন্তু যাবার আগে খালি একবার বললাম ভাই, ১৪ হাজারই আছে। পারলে দিয়েন। উনি কী জানি ভেবে বললেন, আচ্ছা নেন।
আমি তো সেই অবাক! মাইক্রোফোন নিয়ে এসে আমি যতটা না খুশি ছিলাম, তার চেয়ে বেশি সন্দিহান ছিলাম যে আমাকে ২ নম্বর মাল গছিয়ে দিয়েছে কি না! কিন্তু, আজ অবধি তিন মাস যাচ্ছে এবং মাইক্রোফোন একদম টপ-নচ পারফরমেন্স দিচ্ছে। ওইদিন যদি আমি শেষে চুপচাপ কিছু না বলে আসতাম, তাহলে হয়তোবা এই সুন্দর সুযোগটা মিস করতাম। আমি আজও জানি না যে অচেনা মানুষটি কেন আমার কথায় হ্যাঁ বলেছিলেন, কিন্তু আমি এটা জানি যে কিছু কিছু সময় খালি একটু চাইলেও অনেক অবাক হওয়ার সুযোগ থাকে!
আসলে বলতে গেলে আমরা না শুনতে খুবই লজ্জাবোধ করি কিংবা ভয় করি। এক্সট্রা সস লাগলে খালি একটু গিয়ে জিজ্ঞেস করে দেখেন; বেশিরভাগ জায়গাতেই আপনাকে দিয়ে দেবে। না বললে সমস্যা নেই; সসের জন্যও তো তাদের খরচ হয়। কিন্তু, জিজ্ঞেস করতে তো সমস্যা নেই। সসের কথা বলছি কারণ এই ছোটখাটো জিনিসগুলোর জন্য একটু চাওয়া শুরু করেন যেন আসতে আসতে বড় বড় চান্সেও প্রশ্ন করতে কার্পণ্য বোধ না করেন। কোনো একটা জিনিস হয়তোবা খুব পছন্দ হল, কিন্তু দাম জিজ্ঞেস করলে কিনতে বাধ্য করবে এই ভয়ে দাম না জেনেই চলে আসে অনেকে। আরে ভাই একটু জিজ্ঞেস করে দেখেন খালি, হয়তোবা ২০-৩০% ক্ষেত্রে দাম আপনার ধারণার চেয়েও অনেক কম।
চাইতে দোষ নেই, কিন্তু এটা ভাবায় দোষ আছে যে চাইলেই আমি পাতে যোগ্য। এটাকে এক শব্দে এনটাইটেলমেন্ট (Entitlement) বলে এনটাইটেলমেন্ট ছাড়া প্রশ্ন করার অভ্যাস আপনাকে এমন অনেক কিছ৯ এনে দিবে যা হয়তোবা আপনি চিন্তাও করতে পারছেন না। তাই, আজকে থেকে অযৌক্তিক ভয় আর লজ্জা পকেটে রেখে, মানুষের কাছে ছোট-খাটো জিনিস চাওয়ার অভ্যাসটা শুরু করেন।
*
শেয়ার করা মানেই সততা না
অনেকে ভাবে যে, আমি যদি সৎ হই, তাহলে তো আমার লুকানোর কিছু নেই। আমি তো সবাইকে সব বলতে পারবো!
আসলে সৎ হলেই যে সবকিছু বলতে হবে। কিংবা, সবকিছু শেয়ার না। করলে যে অসৎ, এই ধারণাগুলো ভুল।
তোমার পাসওয়ার্ডটা দাও যদি আমাকে বিশ্বাস করো। কারও কাছে বিশ্বাস কিংবা আস্থা প্রমাণ করার জন্য যদি আপনাকে আপনার প্রাইভেট কথা শেয়ার করতে হয়, তাহলে আপনার উপর সেই মানুষটার বিশ্বাস শর্তসাপেক্ষ। আপনি যতক্ষণ গোলাম হয়ে সব তথ্য শেয়ার করবেন, ততক্ষণ আপনাকে সে তার আস্থা দিয়ে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাখবে। তাই, মানুষের আস্থা পাওয়ার জন্য যে গোপনতম কথাগুলো শেয়ার করে নিজেকে দুর্বল করে ফেলতে হবে, এমন কোনো কথা নেই।
দ্বিতীয়ত, সব কথা সবার সাথে শেয়ার না করার কারণ হচ্ছে সবার মাঝে এমন কয়েকজন আছে যারা আপনার তথ্য আপনার বিরুদ্ধেই কাজে লাগাবে। সোশ্যাল মিডিয়ার জগতে যখন মানুষ পরের বেলা ভাত কী দিয়ে খাবে– এটাও বলে বেড়াচ্ছে; সেখানে তাদের প্রতিযোগীরা ফেসবুকের কয়েকটা পোস্ট দেখলেও অনেক বড় বড় তথ্য পেয়ে যাবে। তাই, কিছু কথা নিজের কাছে রাখলেই ভালো এবং আপনার দলের অন্য মানুষজনেরও যেন বিষয়টা খেয়াল থাকে। অনেক কোম্পানির মানুষজনকে দেখেছি যে, কোনো কোম্পানির মিটিং করতে গিয়েছি সেটার মিটিং-এর ছবি ফেসবুকে দিয়ে রেখেছে। সব প্রতিযোগী তখন খুব সহজেই বুঝে যায় কার নেক্সট মুভ কী!
*
কমিউনিকেশন ক্রেডিট
যারা অন্যের কথা নিজের বলে চালিয়ে দেয়, তাদের কেউ পছন্দ করে না। এর চেয়েও বড় ব্যাপার হচ্ছে, কারও যদি আইডিয়া চুরির অভ্যাস থাকে, তাহলে কেউ তাদের সাথে আইডিয়া নিয়ে কথাও বলবে না।
এখন আপনি হয়তোবা ক্রেডিট হয়তোবা ক্রেডিট চুরি করছেন না ইচ্ছা করে। কিন্তু, মানুষ হয়তোবাদ আপনাকে ক্রেডিট চোর ভাবতে পারে। কারণ, কোনো একটা কথা হয়তোবা আপনার অন্য কারও সাথে মিলে গেছে। এবং এই বিষয়ে মার্ক টোয়েনের অসাধারণ একটা উক্তি আছে,
একদম প্রথম প্রজন্মের মানুষ হওয়ার একটা সুবিধা ছিল। নতুন চিন্তা করার সময় তারা নিশ্চিতভাবে জানতো যে তাদের আগে কোনো মানুষ কখনও এই বিষয়ে চিন্তা করে দেখেনি। তাই ক্রেডিট দেওয়ার চিন্তা নেই।
কিন্তু ডিজিটাল যুগে আপনি নিজে থেকে একটা আইডিয়া বের করলেও, ইন্টারনেটে সার্চ করে দেখবেন আপনার কথাই কেউ অনেক আগে বলে ফেলেছে। আর আপনার অজান্তে আসলেই যদি এমন কিছু বলে ফেলা হয়ে যায়, তাহলে মানুষ আপনাকে আইডিয়া চোর বলবে।
এখন এর সমাধান কী? নিজস্ব অভিজ্ঞতা থেকে বলি। আমরা প্রচুর ভিডিও বানাই। আর একটা কথা বললে এক-দুটো ভিডিওর কথা তো মিলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। ভিডিও মনে করেন বাদ দিলাম, এই যে বই লিখছি, এই কথাগুলোই অনেকের সাথে মিলে যেতে পারে। তাই, আমরা সম্পূর্ণ দুই পৃষ্ঠাজুড়ে খালি আমাদের রেফারেন্স বইগুলোর কথাই বলেছি যাতে কেউ আমাদের কপিক্যাট বললে আমাদের ডিফেন্স হিসেবে রেফারেন্স থাকে!
আত্মরক্ষার জন্য তাই রেফারেন্স দিয়ে কথা বলবেন। কিন্তু এর চেয়েও বড় একটা হ্যাক আছে। মানুষ আপনাকে অনেক বেশি পছন্দ করবে যখন আপনি তাদেরকে ক্রেডিট দিবেন। এমনকি একটা কৌতুকও কারও কাছ থেকে শুনে থাকলে তার নামটা বলুন। মানুষটি সামনে থাকলে কৌতুকটা শুরু করে আসল হাসির অংশটা ওই মানুষটিকে শেষ করে সবাইকে হাসাতে দিন।
আপনি যদি মানুষকে ক্রেডিট ঠিকমত দিতে পারেন, তাহলে মানুষ আরও বেশি করে আপনার সাথে আইডিয়া শেয়ার করবে। তাই, আজই নিজের জীবনে খেয়াল করে দেখুন, আপনি গত ৩০ দিনে কয়জন মানুষকে সঠিকভাবে ক্রেডিট দিতে পেরেছেন?
বিস্ময়করভাবে কত কিছুই অর্জন করে ফেলা সম্ভব যদি কাজের ক্রেডিট কে পাবে–এই চিন্তা মাথায় না থাকে।
–হ্যারি ট্রম্যান
*
চিন্তাভাবনার কমিউনিকেশন
শব্দ এবং বাক্য আমাদের খালি অন্যের সাথে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে না। নিজের চিন্তাগুলোকেও ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে দেখতে সাহায্য করে। কয়েকটা উদাহরণ দেই।
এই জিনিসগুলো আমরা সাধারণভাবে সবাই জানি। কিন্তু, একটু ভিন্নভাবে উপস্থাপন করলে বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনার ধারণা অনেক পাল্টে যেতে পারে। যেমন :
এটা বলা যেই কথা | এটা মানেও একই কথা |
শুভ নববর্ষ! | তো… আজকে সূর্যের চারদিক পৃথিবী আরেকবার চক্কর দেয়া শেষ করেছে। |
ট্যাক্স দেন! | এই দেশে থাকার জন্য বার্ষিক সাবস্ক্রিপশন ফি দেন! |
আমার প্রিয় উদাহরণ দিয়ে শেষ করি।
আপনি কি একদম ঘুটঘুঁটে অন্ধকার দেখেছেন?
–হ্যাঁ, দেখেছি।
ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে কী দেখেছেন?
–কিছু দেখিনি তো ভাই! ঘুটঘুঁটে অন্ধকার ছিল বললাম না?
তাহলে কেন বলছেন যে ঘুটঘুটে অন্ধকার দেখেছেন?
এখন আপনার কাছে প্রশ্ন, ঘুটঘুটে অন্ধকারে কিছুই যদি দেখা না যায়, আপনি কি জীবনেও ঘুটঘুঁটে অন্ধকার দেখেছেন আসলেও? কিংবা আপনি ঘুটঘুঁটে অন্ধকারে বলতে যেই কালো দৃশ্য আপনি মনে মনে কল্পনা করেন, সেটা কি আদৌ ঘুটঘুঁটে অন্ধকার নাকি কেবলমাত্র আলোর অনুপস্থিতি?
চিন্তা করে দেখেন তো কিছুক্ষণ তাহলে, আপনি এতদিন ঘুটঘুঁটে অন্ধকার বলতে যা জানতেন, তা আসলেও নিজে পুরোটা বুঝেছেন কি?
এমনই আরও অনেক জিনিস, প্রতিটা শব্দ খেয়াল করে ভাবলে আমাদের অনেক দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যাবে। তাই, শব্দ এবং বাক্য ব্যবহার করে এতদিন খালি আমরা কমিউনিকেট করেছি। আজ, সেই একই শব্দ এবং বাক্য খেয়াল করে আমরা আমাদের চিন্তার জগৎকে নতুন করে আবিষ্কার করি!
*
যখন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করবেন
যখন আইডিয়া নিয়ে চিন্তা করবেন তখন সমালোচনা বন্ধ রাখবেন।
আইডিয়া যতই বাজে হোক না কেন, আইডিয়া শেয়ার করার সময় সবাই যেন চুপ থাকে। একই সাথে পেন্সিল এবং রাবার যেন আমরা কখনই না চালাই।
আইডিয়া শেয়ার করার সময় আইডিয়ার ব্যবহারিক দিক নিয়ে কথা বললে:
১) অনেকে সমালোচনার ভয়েই আইডিয়া দেওয়া বন্ধ করে দেবেন; হয়তোবা তাদের মাথায় ভালো কোনো আইডিয়া ছিল!
২) আইডিয়া দেয়ার সাথে সাথে সমালোচনা করলে অনেকে সেটাকে ব্যক্তিগত আক্রমণ হিসেবে নেয়। কোনটা ব্যক্তিগত সমালোচনা এবং কোনটা আইডিয়ার সমালোচনা সেটা অনেকে তফাতটা বুঝতে পারে না। তাই, আইডিয়াটা মন দিয়ে শুনেন। কিন্তু, তাৎক্ষণিক সমালোচনা থাকলেও, পারলে তা ৫ মিনিট পর দিন কারণ সাথে সাথে আইডিয়ার সমালোচনা অনেকে সহজে নিতে পারে না।
৩. আইডিয়া ভালো হোক আর খারাপ হোক, শেয়ার করার সুযোগ দিন। এমনকি এক কোম্পানি ভালো আইডিয়া দেওয়ার জন্য যেমন পুরস্কার দিত, তেমনই একদম বাজে আইডিয়াকেও সাহসিকতার জন্য স্বীকৃতি দিত। এটা এজন্য করতো যেন অন্যরা যত বাজে আইডিয়াই হোক না কেন, প্রকাশ যেন অন্তত করে। এমন পরিবেশ তৈরি করতে।
খালি মিটিং রুম কিংবা গ্রুপে নয়। নিজে যখন চিন্তা করছেন তখনও চিন্তা করার সময় মনের সমালোচকটাকে পারলে একটু বন্ধ রাখবেন। বড় হতে হতে আমাদের মনের সমালোচক এত উচ্চমানের হয়ে যায় যে, আমরা সমালোচনার তোপে নতুন কোনো আইডিয়ার কথাই চিন্তা করতে পারি না। এবং এখানেই বাচ্চারা আমাদের চেয়ে ভিন্ন। তাদের চিন্তার কোনো বাধা নেই। ব্যবসা সফল হবে কি না, মানুষ পছন্দ করবে কি না, বস খুশি হবে কি না– এসবের একটা চিন্তাও বাচ্চাদের নেই। আর একারণেই তারা এমন সব চিন্তা করতে পারে যেটা বড়রা মাথাতেই আনতে পারেন না। তাই আবারও বলছি, পেন্সিল আর রাবার একসাথে চালাবেন না।
*
অদৃশ্য ভুল
আমরা অনেক সময় ইন্টারনেটে দেখি মানুষকে গালি দিতে এই বলে যে, অমুক একটা হিজড়া!
হিজড়া কিংবা তৃতীয় লিঙ্গের যারা, তারাও তো মানুষ। হিজড়া কীভাবে একটা গালি হয়? অনেকে হয়তোবা অনেক দিন ধরেই হিজড়াকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু, প্রতিবার যখন হিজড়া শব্দটা কেউ গালি হিসেবে ব্যবহার করছে, তারা কি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে অপমান করছে না? এবং এই অদৃশ্য ভুলটা কয়জনই বা এখনও বুঝতে পেরেছে? একইভাবে আমরা গালি হিসেবে কামলা, গ্রাম থেকে আসছে! এসব টুডে দেই। কেন রে ভাই? শহরে থাকার কারণে, কিংবা কংক্রিটের দেয়ালের মধ্যে কাজ করে বলে কি কেউ উচ্চপদের মানবসত্তা হয়ে গিয়েছে নাকি? বরং আমাদের দেশ চলে গ্রামের মানুষের কষ্টের ফসলের উপর, প্রবাসী ভাইদের রেমিটেন্সের উপর। মানুষ কতটা নিচ মানসিকতার হলে কামলা, চাষা, গ্রাম থেকে আসছে! –এসব শব্দকে গালি হিসেবে ব্যবহার করে।
একটু অগোছালো হলে এখন রোহিঙ্গা বলে গালি দেয়া হয়। গালির এতই সংকট যে, উদ্বাস্তু মানুষকে নিয়েও এখন কথায় কথায় নিজের দীনতা প্রকাশ করতে হয়।
এমনই আরও অনেক অদৃশ্য ভুল আছে যেগুলো আমাদের মানসিক সঙ্কীর্ণতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ফেল করলে রিক্সাওয়ালা হয়ে যাবো যেই মুখ দিয়ে বের হয়, সেই মুখে সব পেশাই সম্মানজনক কথাগুলো আসলে খুব একটা মানায় না।
*
কমিউনিকেশনের বিপদসংকেত
একশ দুইশটা জিনিস না খুঁজে আমরা যদি একটা ব্যাপার খেয়াল করে জানতাম যে একটা বিয়ে টিকবে কি টিকবে না, তাহলে ব্যাপারটা বোঝা আমাদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যেত না? এমনই একটা বিপদসংকেত কয়েক যুগের রিসার্চের পর সাইকোলজিস্ট জন গটম্যান বের করেছিলেন। আর সেই মহাবিপদসংকেত হল : অবজ্ঞা (Contempt)।
কাপলদের ১৫ মিনিটের কথাবার্তা রেকর্ড করে তিনি দেখছিলেন যে অবজ্ঞামূলক আচরণ কতটুকু ছিল তাদের মাঝে। যেমন : এমন ভাব করা যেন অন্য মানুষটি কিছু বোঝে না, অন্য মানুষটিকে দিয়ে কিছু হবে না। এমন ভাব-ভঙ্গি করা, কথা বলার সময় এমনভাবে চোখ ঘুরানো যেন অন্য মানুষটির কথার কোনো মূল্যই নেই–এসব অবজ্ঞামূলক আচরণ তিনি খেয়াল করছিলেন। এবং মাত্র ১৫ মিনিটের কথাবার্তার ভিডিও রেকর্ড করে তিনি সিংহভাগ সঠিক ধারণা করতে পেরেছিলেন কাদের বিয়ে টিকবে না।
ব্যাপারটা খালি বিয়ের জন্য নয়। দুটো মানুষের মধ্যে সম্পর্ক কতটা গভীর হবে সেটা নির্ভর করে তারা কতটা কম অবজ্ঞামূলক আচরণ একে অন্যের প্রতি করে। অর্থাৎ, সম্পর্ক গভীর করতে হলে একে অন্যের ব্যক্তিত্ব, কাজ এবং কথার প্রতি সম্মানসূচক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাতে হবে। না হলে খুব একটা ইতিবাচক সম্পর্কে আশা করা যাবে না।
*
জুনিয়রের সামনে কমিউনিকেশন
কমিউনিকেশনের একদম বেসিক দুটো ব্যাপার হচ্ছে, প্রশংসা করলে সবার সামনে করুন। এবং সমালোচনা থাকলে একান্ত ব্যক্তিগতভাবে গিয়ে ওয়ান টু-ওয়ান বলুন।
তার মানে ব্যক্তিগত সমালোচনাগুলো মানুষের সামনে করবেন না। বিশেষ করে জুনিয়রদের সামনে কাউকে অপদস্ত করবেন না। কারণ, এতে তার। সম্মান এবং অথরিটিতে বেশ আঘাত লাগে। জুনিয়র এমপ্লয়িদের সামনে তাদের বসকে ঝাড়লে পুরো টিমের মানসিকতাই ড্যামেজ হয়ে যায়। তাই, সমালোচনা কীভাবে করছেন সেটার উপর টিমের মোরাল এবং উপদেশের গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি নির্ভর করে।
*
ম্যাজিক মিথ্যা জেনেও কেন মজা লাগে?
ছোটবেলায় ম্যাজিক দেখে আমি অনেক অবাক হতাম। কিন্তু, যেই পরিমাণে অবাক হতাম; বড় হয়ে ঠিক সেই পরিমাণেই হতাশ হয়েছিলাম যখন আমি ম্যাজিকের কারসাজিগুলো জানতে পেরেছি। এখন কাউকে ম্যাজিক করতে দেখলে মনে মনে জানি যে, এটাতে নিশ্চয়ই কোনো কৌশল আছে! লোকটার কোনো অলৌকিক পাওয়ার আসলে নেই। তবুও যতক্ষণ আসল কৌশলটা অজানা থাকে, ততক্ষণ ঠিকই উপভোগ করি। একইভাবে আরও অনেক কিছু আমরা ভেতরে ভেতরে ঠিকভাবে জানলেও উপরে উপরে আমরা পারফর্মেন্সটা কিংবা অভিনয়টা দেখতে চাই।
এটা নিয়েই একটা হ্যাক এখানে শেয়ার করি। মানুষ নিজের কষ্টের কথা সবাইকে বলতে চায়, শেয়ার করতে চায়। মানুষ আসলে চায় যে অন্যরা তাদের প্রতি সমবেদনা অনুভব করুক। আর এখানে আসল ব্যাপার হচ্ছে তারা একটু সহানুভূতি চায় এবং মনের কথাগুলো শেয়ার করতে চায়। তারা শ্রোতা চায় আসলে। কিন্তু, অনেক সময় কষ্টের কথা শেয়ার করতে গেলে অপর পাশের মানুষটি সমস্যার সমাধান দেয়ার চেষ্টা করে। অবশ্যই সমাধান দেয়ার উদ্দেশ্যটা মহৎ। কিন্তু, সাথে সাথে সমাধানের কথা শুরু না করে আপনি যদি খালি মন দিয়ে শুনেন, তাহলে মানস আরও অনেক বেশি খুশি হয়।
খেয়াল করে দেখেন একটা জিনিস। আপনি ২ সেকেন্ড শুনে যেই সমাধানটা দিচ্ছেন, সেটা কি ওই মানুষটা ২ মাস চিন্তা করে বের করতে পারেনি? অবশ্যই পেরেছে। সে সমাধান জানে। কিন্তু, সে খালি আপনার কাছে একটু ভেন্ট করতে চাচ্ছে, কথা বলে হালকা হতে চাচ্ছে। এবং এটাই হচ্ছে অনেক মানুষের স্বভাব।
মানুষ অনেক সময় সমাধান জানলেও, সমস্যা নিয়ে কথা বলতে চায়। কারণ, তারা সমাধান নয়, শ্রোতা চায়।
*
বার্তাবাহক
আমি বলি, আপনি বলেন আর অন্য কেউ বলুক, দুই যোগ দুই সব সময়ই চার হবে। এটা কে বলছে, তাতে কিছুই যায় আসে না। অর্থাৎ, আমাদের কথার সত্যতার সাথে আমাদের পরিচয়ের আসলে কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু, তবুও আমরা একটা সম্পর্ক তৈরি করে ফেলি। আমাদের সাইকোলজি বার্তার সাথে বার্তাবাহককে যুক্ত করে ফেলে। উদাহরণ দেই।
সিমেন্টের বিজ্ঞাপনে কন্ট্রাকশন সাইটে অভিনেতাকে একটা হলুদ হেলমেট আর সেফটি ভেস্ট পরিয়ে স্ক্রিপ্ট পড়ানো হবে যে, তমুক সিমেন্ট সেরা সিমেন্ট! আমি, আপনি সবাই জানি যে অভিনেতা ইঞ্জিনিয়ার না। কিন্তু, মানুষ সিমেন্টের কথা শুনতে চায় ইঞ্জিনিয়ারের মত দেখতে একজন মানুষের কাছে। একইভাবে বাচ্চাদের মিল্ক পাউডারের বিজ্ঞাপনে মডেল যেই হোক না কেন, একটা ডাক্তারের অ্যাপ্রন পরে পণ্যের গুনগান করলে আমরা শুনি। বাচ্চাদের বিজ্ঞাপনে মডেলদের সাধারণত শাড়ি পরানো হয়, কারণ মা হিসেবে মানুষ শাড়ি পরা একজন নারীকে বিজ্ঞাপনে দেখতে অভ্যস্ত। তাই ব্যাপারটা খেয়াল করেছেন? কোনো কথার সত্যতার চেয়ে আমরা বেশি। গুরুত্ব দেই যে কে কথাটা আমাদেরকে বলছে। কোনো সেলেব্রিটি যিনি নিজে যেই পণ্য কখনও ব্যবহার করেননি, সেই পণ্যের কথা বললেও মানুষ পণ্যটা কিনবে।
এটা আমাদের সীমাবদ্ধতা। কিন্তু, আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমরা আসলেও মানুষকে কিছু বলতে চাই; তাহলে কী বলছি সেটার চেয়েও বশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে বিষয়টা কাকে দিয়ে বলাচ্ছি।
*
কাজের কথায় কমিউনিকেশন
কিছু মানুষের সাথে কথা বললেই তারা কাজ ধরিয়ে দেয়। এমন মানুষের কাছ থেকে সবাই লুকিয়ে থাকতে চায়। এখন প্রশ্ন হলো, আপনি কি ওই মানুষটা, যার সাথে কথা বললেই কাজ ধরিয়ে দেয়?
খেয়াল করে দেখুন একটু। নিজেকে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। আপনার আশপাশের মানুষের সাথে শেষ দশবার যেই কথা হয়েছে, তার মধ্যে কয়বার আপনি কাজ নিয়ে কথা বলেছেন?
আমি এটা বলছি না যে, কাজের সময় কাজ নিয়ে কথা না বলে আড্ডা দেবেন। মোটেও এটা বলছি না। কিন্তু, কাজের বাইরে দেখা হলেও যদি কাজ নিয়ে কথা বলেন, তাহলে কিন্তু বিপদ। কারণ, আপনি চাচ্ছেন কাজ নিয়ে এগোতে। কিন্তু, অন্যরা কাজের কথা না শুনতে চেয়ে যদি আপনার কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়, তাহলে কাজ তো আরও গোল্লায় যাবে। তাই, নিজের ক্ষেত্রেই একটু নজর রাখবেন যেন আপনি মানুষকে এতটা বিরক্ত না করে ফেলেন যে তারা আপনার সাথে লুকোচুরি খেলা শুরু করে!
*
লাভের চেয়ে বেশি ক্ষতি
মানুষের একটা সহজাত প্রবৃত্তি হলো, একই পরিমাণ লাভের চেয়ে লোকসানকে সে বেশি ভয় পায়।
বইটি পড়ে রিভিউ করলে আজই ১০০ টাকা জিততে পারেন! | বইটি পড়ে রিভিউ না করলে আজই ১০০ টাকা খোয়াতে পারেন! |
উপরের দুটো অপশনের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ দ্বিতীয় অপশনের দ্বারা বেশি প্রভাবিত হবেন। এমন অনেক সার্ভে করা হয়েছে। একটা উদাহরণ। দিয়ে বলি।
একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলা হয়েছে যে, জিতলে ৫০ টাকা পাবেন, হারলে ৫০ টাকা দিবেন। সমান সমান জেতা হারার ব্যাপার থাকলেও মানুষ রিস্ক নিতে চায় না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। তাই তারা চ্যালেঞ্জটা করে না। এমনকি জিতলে ৮০ টাকা আসবে, হারলে ৫০ টাকা যাবে–এমন অবস্থাতেও অনেকে চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করেন না। এর মানে হচ্ছে মানুষকে লাভের চেয়ে ক্ষতির কথা বলে বেশি প্রভাবিত করা যায়। এটাকে সাইকোলজির ভাষায়। বলে লস অ্যাভারশন প্রিন্সিপল (Loss Aversion Principle)।
তাই, অনেক বিজ্ঞাপনে দেখবেন লাভের কথা না বলে ক্ষতির কথা বলে মানুষকে কিনতে প্রভাবিত করা হয়। যেমন :
তমুক ব্র্যান্ডের আটা খেয়ে শরীরকে রাখুন ইয়াং! না বলে হয়তোবা বিজ্ঞাপনে বলা হবে, বিভিন্ন বার্ধক্য রোগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে তমুক ব্র্যান্ডের আটা খান!
আমাদের টুথপেস্ট ব্যবহার করলে আপনার দাঁত সুন্দর থাকবে। না বলে হয়তোবা বলবে, আমাদের টুথপেস্ট ব্যবহার না করলে আপনার দাঁতে হবে ক্যাভিটি!
*
কীভাবে স্যরি বলবেন
আমাদের মা একটা কথা বলেন, খালি চামড়ার মুখ দিয়ে বললেই স্যরি হয়ে যায় না।
একদম সত্য। আসলে স্যরি যতটা না বলার জিনিস, তার চেয়ে বেশি করে দেখানোর ব্যাপার। এজন্য বলা হয় যে, মুখে স্যরি আসল স্যরি না, অপরাধবোধ থেকে একই ভুল রিপিট না করাটাই আসল স্যরি।
স্যরি বলতে অনেকে লজ্জা পান। কিন্তু আসল সত্য হল, নিজের ইগোটাকে সাইডে রেখে যারা স্যরি বলতে পারে, তারাই অতীতকে পেছনে ফেলে সামনে এগোতে পারে। মুহূর্তের সংকোচ যেন সারাজীবনের বোঝা না হয় আমাদের। এখন কিছু ব্যাপার স্যরি বলার সময় একটু ঠিক রাখা দরকার।
১. স্যরি বললে সরাসরি বলেন। ফোনের মাধ্যমে স্যরি বলাটা খুব একটা গ্রহণযোগ্য হয় না (যদি না সামনাসামনি দেখা করাটা অনেক কঠিন হয়ে যায়)।
২. কেন দুঃখ প্রকাশ করছেন, সেই কারণটা জ্ঞাপন করলে খুবই ভালো হয়। নিচের কোনটা বললে ভালো সেটা আপনারা পড়লেই বুঝতে পারবেন।
অপশন ১ | অপশন ২ |
আমি স্যরি। | আমার না জানিয়ে বইটা নেয়া উচিত হয়নি। বইটা হঠাৎ না বলে নিয়ে গিয়ে তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিতে আমি চাইনি। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি স্যরি। সামনে থেকে আমার দরকার পড়লে জিজ্ঞাসা না করে কখনই নেব না। |
৩) আসলেই অপরাধবোধ থাকলে স্যরি বলেন। অপরাধবোধ ছাড়া স্যরি বললে কিন্তু মানুষ ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পারে সেটা আপনি যতই
৪) সুন্দর করে বলেন না কেন। a অন্যের ভুলের বোঝা নিজের উপর নিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিজেকে ছোট করবেন না।
*
নিজের ভ্যালু কমে যায়
একটা চাকরি মেলাতে (Job Fair) কারা যায়? যারা চাকরি চায় তারা নিশ্চয়ই। এখন এই জায়গায় সবাই চাকরি চাইতে গিয়েছে কিন্তু চাকরি অফার করছে মাত্র কয়েকজন। এমন জায়গায় আপনি যদি চাকরি খুঁজতে যান, তাহলে আপনাকে আরও অনেকের দলে মিশিয়ে ফেলা হবে। আপনি হয়ে যাবেন অনেকের মধ্যে আরেকজন। এর চেয়ে, যেখানে ভিড় কম, সেখানে মানুষকে ভদ্র এবং পেশাদারভাবে অ্যাপ্রোচ করুন। ফেসবুকে যেখানে সবাই ব্যক্তিগত জীবনের প্যাচাল শেয়ার করে বারোটা বাজিয়ে। রেখেছে, সেখানে আপনি একদম পেশাদার কাজগুলো শেয়ার করে সম্ভাব্য চাকরিদাতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন।
বক্তৃতার পর সবাই যখন সেলফির জন্য আর নাম্বারের জন্য ভিড় করছে, তখন বক্তার কাছে যাবেন না। বক্তার জন্য যে ক্রেস্টটা আছে, কিংবা বক্তা যদি কোনো জিনিস নিজের সাথে এনে থাকেন, সেটা নিয়ে তাকে গাড়িতে পর্যন্ত এগিয়ে দিন। গাড়িতে উঠার সময় যখন আশপাশে কেউ থাকবে না, তখন আপনার কথা বলুন।
শিক্ষা হলে, ভিড়ের মধ্যে কথা বলে নিজের গুরুত্ব না কমিয়ে, এমন সিচুয়েশন তৈরি করেন যেখানে আপনি একান্তভাবে মনোযোগ পাবেন।
*
দুপুর ১২টা নাকি রাত ১২টা?
Send the file over by 12PM
কয়টার সময় ফাইলটা পাঠাতে হবে? দুপুর ১২টা? নাকি রাত ১২টা? আপনি হয়তোবা জানেন যে 12PM মানে দুপুর ১২টা। কিন্তু, আপনি জানলেই তো খালি হবে না। অন্য মানুষটি যদি দুপুর ১২টায় না পাঠিয়ে রাত ১২টায় ফাইল পাঠায়? তাহলে তো পুরো একটা দিন গ্যাপ হয়ে যাবে।
তাই, অন্য পাশের মানুষটি বুঝতে পারবে এই অনুমান বাদ দিয়ে একদম ভেঙ্গে বলাটাই সবচেয়ে ভালো। তাহলে কীভাবে বলা যায়?
উদাহরণ ১ : Send the file over by 11 :59AM in the early hour.
উদাহরণ ২ : Send the file over by 12PM noon.
উদাহরণ ৩ : বেলা ১২০০ ঘটিকার মধ্যে ফাইলটি পাঠিয়ে দিয়েন।
*
কাজটা কেন জরুরি
মানুষকে যখন কাজ দেবেন, সমস্যা না হলে পারলে তাদেরকে একটু বলে দিবেন যে কাজটা কিসের জন্য। এটা খুবই সহজ শোনালেও এর গুরুত্ব কতটা বেশি তা সাইমন সিনেক (Simon Sinek) এর একটা টেড টকে বুঝতে পেরেছিলাম। তিনি একটা ছোট্ট উদাহরণ দিয়েছিলেন।
মনে করেন, আপনাকে রুমের এক কোণায় দাঁড় করানো হল। এখন বলা হল সোজা হাঁটেন। আপনি সোজা হাঁটা শুরু করলেন। মাঝপথে আপনার। সামনে একটা বক্স বসিয়ে দেয়া হল। আপনি হয়তোবা দাঁড়িয়ে থাকবেন, কারণ আপনাকে সোজা হাঁটতে বলা হয়েছে।
এখন মনে করেন, সোজা হাঁটতে না বলে আপনাকে বলা হল, রুমের অপর কোণায় চলে যান। এবারও আপনি কোণাকোণি হাঁটা শুরু করলেন। কিন্তু, এবার পথের মাঝে যখন বক্স বসানো হলো, তখন আপনি পাশ দিয়ে হেঁটে কোণায় পৌঁছে গেলেন। কারণ, এবার আপনাকে কাজের শেষে কী হবে তার। পরিষ্কার ধারণা দেয়া ছিল। প্রোগ্রামিং-এর ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো আরও জোরালোভাবে চোখে পড়ে।
মূল বিষয় হল, মানুষকে কাজের উদ্দেশ্য বললে তারা নিজেদের থেকে কাজটা সমাধান করার সুযোগটা পায়। আপনি হয়তোবা কাউকে বললেন, দোকান থেকে একটা কাঁচি আনো। কাঁচি না পেলে সে শূন্যহাতে ফেরত আসবে। আপনি যদি বরং বলেন, আমাকে এই কাগজগুলো কেটে দাও তো। তাহলে কাচি না পেলেও সে বসে থাকবে না। হয়তোবা ব্লেড কিংবা আন্টিকাটার নিয়ে এসে কাজটা সেরে ফেলবে।
*
অবচেতন মনে কমিউনিকেশন
মানসিকতা গড়ার জন্য এই যুগে অনেক ট্রেইনিং প্রোগ্রাম আছে। অনেক ট্রেইনিং-এ ইতিবাচক মানসিকতা ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করার জন্য কিছু স্ট্র্যাটিজিক শব্দ ব্যবহার করা হয়।
যেমন : ফিটনেস গোল সেট করার সময়, ৫ কেজি ওজন লুস করবো। না বলে ৫ কেজি ওজন ঝেড়ে ফেলবো বলা হয়। এখন আপনি বলতে পারেন, লুস করবো আর ঝেড়ে ফেলবো– এই দুটোর মধ্যে এমন কী তফাত? অনেক!
এবং তফাতটা বাহ্যিক নয়। তফাতটা অবচেতন মনে। আপনি যখন কোনো জিনিস লুস করেন, তখন আপনি কী করেন? হারিয়ে যাওয়া জিনিসটা খুঁজেন। আমাদের অবচেতন মনে প্রোগ্রাম করা আছে যে আমরা যখন কোনো জিনিস লুস করি, সাথে সাথে যেন সেটা আমরা খোঁজা শুরু করি। আপনি মুখে বলছেন, ওয়েইট লুস করবো। কিন্তু পেছনে আপনার অবচেতন মন (Subconscious Mind) সেটা আবার ফেরত আনার ফন্দি করছে! এমন অনেককেই দেখবেন কয়েকদিন সেই ব্যায়াম করে ওজন কমিয়ে আবার সেই মিষ্টিকুমড়ো হয়ে বসে আছে (কিংবা সোফায় শুয়ে আছে!) শব্দের প্রভাব অবচেতন মনে অনেক বেশি। এমনই আরেকটা উদাহরণ দেই।
শিক্ষকদের ট্রেইনিং নেওয়া উচিত যেন তারা কখনও এমনটা না বলেন যে, তমুক স্টুডেন্টটা অলস। বরং বলা উচিত, তমুক স্টুডেন্টটা এখনও বিষয়টাতে আগ্রহী না কিংবা মোটিভেটেড না। পার্থক্য কী?
আপনি যখন কাউকে অলস বলছেন, তখন আপনি সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন যে মানুষটা এমনই। এখানে আর করার কিছু নেই। কিন্তু, আপনি যদি বলেন যে কোনো স্টুডেন্ট এখনও বিষয়টাতে আগ্রহী হয়নি; তাহলে তাকে উৎসাহ পেয়ার, কিংবা নতুনভাবে শেখানোর অনেক কিছু করার আছে। অলস বলে আমরা উপসংহার টেনে হাল ছেড়ে দেই। অন্যদিকে, অনাগ্রহী বললে শেখানোর কায়দায় উন্নতি করার উদ্যোগ নেই আমরা।
আপনার হয়তোবা মনে হচ্ছে শব্দ দিয়ে আর কীই বা হবে। কিন্তু আমাদের চিন্তা-ভাবনার জগত এই শব্দগুলো দিয়েই তৈরি। চিন্তার বিল্ডিং ব্লক শব্দ-কে যদি আমরা সঠিকভাবে নিজের মাইন্ড প্রোগ্রামিং করতে ব্যবহার না করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের অজান্তেই অদৃশ্য মানসিক কারাগারে আটকে থাকবো।
শেষে আমার প্রিয় একটা উদাহরণ দিচ্ছি। এটা আমার মানসিকতায় অনেক বড় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। উক্তিটা রবার্ট কিয়োসাকির রিচ ড্যাড, পুওর ড্যাড বই থেকে নেয়া।
সাধ্যের বাইরে কোনো জিনিস দেখলে অসচ্ছল মাইন্ড বলে– এটা অর্জন করার সামর্থ্য আমার নেই। আর অন্যদিক সচ্ছল মাইন্ড নিজেকে প্রশ্ন করে। আমি কীভাবে এটা অর্জন করার সামর্থ্য তৈরি করতে পারি?
*
শুনতে ঠিক, আসলেই ঠিক
আপনি যদি আপনার কমিউনিকেশন এবং চিন্তায় আরও বেশি যৌক্তিক হতে চান, তাহলে নিচের প্রশ্নটি সবসময় আপনার মাথায় রাখবেন যখনই আপনার সামনে নতুন কোনো তথ্য আসবে।
কেবলমাত্র আমার পূর্ব ধারণার সাথে নতুন কথাটা মিলে যাচ্ছে জন্যই কি কথাটা সঠিক মনে হচ্ছে নাকি কথাটা আসলেও যৌক্তিকভাবে সঠিক?
কোনো একটা তথ্য সত্য হওয়ার সাথে আমাদের মতের সাথে মিল থাকার কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, আমাদের পূর্ব ধারণার সাথে মিললেই যেন আমরা কোনো তথ্য গ্রহণ করে না নেই আর পূর্বধারণার সাথে সাংঘর্ষিক হলেই যে এড়িয়ে যাবো, এমন যেন না হয়।
*
চোখে চোখে কমিউনিকেশন
মানুষের সাথে কথা বলার সময় তাদের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। তাই বলে পুরোটা সময় পেঁচার মত তাকিয়ে থাকতে হবে এমন না। কিছুক্ষণ। পরপর একটু আই কন্ট্যাক্ট করুন; চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন। আরও সহজ অভ্যাস করতে হলে, হয় খালি ডান চোখের দিকে, অথবা খালি বাম। চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলুন।
এমন অনেকে আছে যারা অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে কথাই বলতে পারে না। এতে সমস্যা কী?
১. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে আমাদের কমিউনিকেশনের মাত্র ২০/৩০% হচ্ছে আমরা কথায় যা বলছি। বাকিটা মুখের ভাবভঙ্গি এবং বডি ল্যাঙ্গুয়েজে থাকে। আপনার যদি মানুষের দিকে তাকিয়ে কথা। বলার অভ্যাস না থাকে, তাহলে আপনি অনেক ইশারা মিস করে। যাবেন। একটা উদাহরণ দেই। এমন বিরক্তিকর অবস্থায় পড়েছেন না, যেখানে আপনার তাড়া আছে, কিন্তু কেউ আপনাকে আটকে তার বাচ্চা কেন ঢ্যাঁড়স খায় না–এই গল্প শোনাচ্ছে। আপনি হয়তোবা মুখের অভিব্যক্তি ও শরীরের চঞ্চলতা দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, ভাই আমাকে ছেড়ে দেন! আমাকে দৌড়াতে হবে এখন! কিন্তু, তারা আপনার অভিব্যক্তি না বুঝে আপনাকে চূড়ান্ত বিরক্ত করছে। এমন মানুষকে কেউই পছন্দ করে না। তাই, আপনি যেন এমন না হয়ে যান, তাই অন্য মানুষটার দিকে কথা বলার সময় খেয়াল রাখবেন।
২. অনেকে ভাবতে পারে আপনি তাদেরকে ইগনোর করছেন।
৩. মানুষ আপনাকে গম্ভীর বা অহংকারী ভাবতে পারে যে, আপনার এতই ভাব যে আপনি তাকানই না।
তাছাড়া, চোখ হচ্ছে মনের আয়না। চোখ এমন অনেক কিছু বলে যেটা শব্দে কখনই আসে না। মানুষ চোখের দিকে তাকিয়ে অনেক সময় মিথ্যা বলতে পারে না। তাই, কেবল রোম্যান্টিক কথাবার্তার জন্য নয়; ইমোশনাল কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কমিউনিকেশনের জন্যও আই কন্ট্যাক্ট করাটা খুবই জরুরি। মুখের দিকে না তাকিয়ে কথা বলা আর চোখ বন্ধ করে মিস্টার বিনের কমেডি দেখা একই জিনিস!
*
যেই কথাগুলো না বললেও চলে
অনেকে নিজেরাই জানে যে তারা অনেক বেশি কথা বলে। কিংবা অহেতুক কথা বেশি বলে। কিংবা এমন কথা বলে যেটা অন্যদের মুডটাই খারাপ করে দেয়। যেটাকে এখন ব্যাডবাজ (BadBuzz) বলে। এক্ষেত্রে একটা সিম্পল হ্যাক অনুশীলন করার অভ্যাস গড়ে তুললেই আপনার কথা অনেক নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাবে।
হ্যাকটা হল : আমি এখন যেই কথাটা বলতে যাচ্ছি, সেটা কি পৃথিবীতে দুঃখের পরিমাণ বাড়াবে?
অথবা, আমি এখন যেই কথাটা বলতে যাচ্ছি, সেটাতে কি পৃথিবী কিছু বদলাবে?
রাস্তার পাশে আজকে দেখলাম একটা পাপি মরে পড়ে আছে–এটা বললে যাকে কথাটা বলছেন, তার শুনে খারাপ লাগবে। এক আপনার খালি কষ্ট লাগছিল, এখন আরেকজনের কষ্ট লাগছে। আপনার শেয়ার করার কারণে কি কিছু বদলাবে? পাপি মারা গেছে তো গেছে। হয়তোবা কেউ ওটাকে সরিয়ে ফেলেছে। কথাগুলো বলে কি কোনো দংখা বাড়ানোর দরকার আছে?
অবশ্য হ্যাঁ, এই কথা শেয়ার করে যদি পশুর প্রতি সচেতনতা বাড়াতে চান। কিংবা কেবল মনের বোঝা হালকা করতে চান তাহলে করতে পারেন। কিন্তু এমন কিছু জিনিস যেগুলো বলার কোনো ইতিবাচক দিকই নেই, সেগুলো আমরা কেন বলতে যাবো?
*
শেয়ার করার মানুষ
আপনার জীবনে কি এমন কেউ আছেন, যার সাথে আপনি সবকিছু শেয়ার করতে পারেন? যদি উত্তর হ্যাঁ হয়, তাহলে খুবই ভালো। কারণ, একটি দীর্ঘ সুন্দর জীবনের জন্য ঘনিষ্ঠ কিছু মানুষের সাথে আপনার জীবনের চলার পথের গল্পগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়াটা খুবই জরুরি।
কিন্তু, শেয়ার করার মানুষ না থাকলে একটু চেষ্টা করে দেখুন কারও সাথে কথা বলা যায় নাকি। কারণ, নিজের কথাগুলো কারও সাথে শেয়ার না করতে পারলে নিজেকে অনেক বিচ্ছিন্ন মনে হয়। সেখান থেকে অনেকে হয়তোবা ডিপ্রেশনে চলে যায়। সুইসাইড করে এমন অনেক মানুষেরই কাছের মানুষও জানে না যে মানুষটা কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। কেন? কারণ, শেয়ার করার মত পরিবেশ ছিল না।
এখন প্রশ্ন হলো মানুষ কেন কথা শেয়ার করে না?
একটা কারণ হতে পারে শেয়ার করার মতো গ্রহণযোগ্য কোনো মানুষ নেই। কিংবা শেয়ার করলে সেই কথা অন্যজনের কানে লাগিয়ে বিপদ তৈরি হতে পারে। অথবা, শেয়ার করলে সেটা নিয়ে অনেকে আপনাকে জাজ করে বসবে, অর্থাৎ আপনাকে নিচু চোখে দেখা শুরু করবে। এমন অবস্থায় কী করা যায়?
১. একদম শুরুতে, ছোটখাটো জিনিস শেয়ার করুন। যেমন : কোনো একটা মুভি দেখার কথা, কিংবা আবহাওয়ার কথা। ব্যক্তিগত তথ্য দিতে হবে এমন না। কেবল, কথা বলা শুরু করেন মানুষের সাথে।
২. আপনি ছদ্মনামে অনলাইনে আপনার আইডিয়া অনুভূতিগুলো শেয়ার করুন যদি একান্তভাবে মানুষের সাথে কথা বলার সুযোগ না থাকে।
৩. মানুষকে বলতে না পারলে কিংবা অনলাইনেও যেতে না পারলে, অন্তত কাগজে লিখে রাখুন নিজের কথাগুলো।
যেভাবেই হোক, মানুষের সাথে কমিউনিকেশন আপনাকে বাড়াতে হবে। অন্যের জন্য না, অন্তত খালি নিজের জন্য। সবথেকে ভালো হবে যদি আপনার কাছে শেয়ার করাটা চ্যালেঞ্জিং মনে হয়, তাহলে অভিজ্ঞ সাইক্রিয়াট্রিস্টের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করুন।
*
ঠাট্টা করে কমিউনিকেশন
সবথেকে ভালো গল্প তারা বলতে পারে যারা মানুষকে হাসাতে পারে, কিংবা কাঁদাতে পারে। ভালো কথা।
কিন্তু, অনেকে নিজেদের কৌতুকে এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে, তাদের শো-এর টিকেট কাটেনি, এমন মানুষকেও তাদের স্ট্যান্ড-আপ জোকস শোনাতে থাকে। এখানে কিছু বিষয় আছে।
সব কিছুর একটা জায়গা আছে যেটা ইদানীং কিছু মানুষের কাণ্ডজ্ঞানের সৌরজগতের মধ্যে নেই। সেলফি তুলবি তো তোল। আইসিইউ কি বাদ রাখা যেত না? কিংবা কবরস্থান!
আপনি খুশি থাকতেই পারেন। কিন্তু, সবাই তো আর সব সময় খুশিমনে। আপনার দিলখুশ টোটকা শুনতে চায় না।
সিনিয়র মানুষজন যদি দেখে যে আপনি তাদের সামনে ইচ্ছামত হাসিঠাট্টা করে যাচ্ছেন, তাহলে তারা ভাবতে পারে যে আপনার বিচার-বুদ্ধি একটু কম। কিংবা ভাবতে পারে আপনি একদম ড্যাম-কেয়ার। হাসি-ঠাট্টা করুন অসুবিধা নাই, কিন্তু সবাইকে আপনার অডিয়েন্স ভাববেন না।
*
রঙের কমিউনিকেশন
কর্পোরেট দুনিয়ায় রঙ দিয়ে অনেক ব্র্যান্ডিং হয়। বাংলাদেশের চারটি টেলিকম কোম্পানির কিন্তু নির্দিষ্ট রঙ আছে যেগুলো তারা তাদের বিজ্ঞাপনে, মডেলদের পোশাকে সব জায়গায় ব্যবহার করে।
আমরা তো ভিডিও নির্মাণের জগতে বেশ কয়েক বছর ধরে আছি। এখানে আপনি এক ব্র্যান্ডের কন্টেন্টে অন্য ব্র্যান্ডের রঙ দিয়েছেন তো ঝাডি খেয়েছেন! এবং রঙ কিন্তু খালি ব্র্যান্ডিং নয়, রঙের মাধ্যমে অনেক ইমোশনও। প্রকাশ হয়ে যায়। একটা উদাহরণ দেই।
সাধারণত খাতা চেক করার সময় শিক্ষকরা লাল কালি দিয়ে কাটেন। এখন লাল কালি দিয়ে কাটা-কাটি করতে করতে লাল কালির মাধ্যমে বাচ্চাদের অবচেতন মনে একটা আশংকা হয়। তাই, কিছু বাইরের দেশের কিছু পাঠশালায় লাল কালি বদলে বেগুনি কিংবা নীল কালি দিয়ে খাতা চেক করা হয় যাতে বাচ্চাদের ফিডব্যাক দেয়ার সময় অবচেতনভাবে তাদেরকে আশঙ্কিত না করে ফেলা হয়।
তাই, রঙের মাধ্যমে আমাদের ইমোশনকে প্রভাবিত করা যায়। এখানে একটা প্রচলন আছে যে, কমলা রঙ তারুণ্যকে প্রকাশ করে, বেগুনি রঙ আভিজাত্যকে প্রকাশ করে ইত্যাদি। আসলে ব্যাপারটা কালচারের উপর অনেকটা নির্ভর করে।
*
বিরক্তিকর কমিউনিকেশন
আপনি কী বলছেন সেটার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে আপনি কোন পরিবেশে কথাটা বলছেন। আপনি দুনিয়ার সেরা স্পিচটাই তৈরি করেন আনেন না। এরপর মানুষকে বলা শুরু করেন। প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে দৌড়াচ্ছে। এমন কাউকে থামিয়ে আপনার মহামূল্যবান স্পিচ শোনাতে যান, দেখেন কী হয়? রাখেন আপনার স্পিচ, আমাকে যাইতে দেন আগে!
আরেকটা উদাহরণ দেই। কোন লেকচার সবথেকে বিরক্তিকর বলেন তো! কেউ হয়তোবা বলবে ক্যালকুলাস, কেউ বলবে জিওগ্রাফি আর কেউ বলবে ফিন্যান্স! যে যাই বিরক্তিকর ভাবুক না কেন, একটা লেকচার সবার জন্যই বিরক্তিকর। আর সেটা হচ্ছে ক্লাসের ঘণ্টা পড়ার পরও চলমান লেকচার। যদি না অসাধারণ কোনো শিক্ষক লেকচারটা দেন, ঘণ্টা পড়ার পর আর কারও কিন্তু শুনতে ইচ্ছা করে না, সেটা যতই গুরুত্বপূর্ণ কথা হোক না কেন।
তাই, খেয়াল রাখুন আপনি যেন বিরক্তিকর সময় কমিউনিকেশন না করেন। লাঞ্চের পর পেটে গরম গরম ভাত থাকলে ঘুম ঘুম ভাব চলে আসে। ঠিক তখন যদি আপনি ব্রেইনস্ট্ররমিং (Brain Storming) মিটিং রাখেন, তাহলে মানুষজন চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে যাবে!
*
দৈনন্দিন কমিউনিকেশন কোথায় শিখবো
বিজ্ঞাপন থেকে! হ্যাঁ! বিজ্ঞাপন থেকে কমিউনিকেশন শেখার অনেক কিছ আছে। বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য প্রতি সেকেন্ডে হাজারেরও বেশি গুনতে হয়। তাই কত কম সময়ে মানুষের নজর আকড়ে ধরে সম্পূর্ণ বিজ্ঞাপনের গল্প এবং অফার ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটা নিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাতারা এবং অ্যাড এজেন্সিগুলো অনেক পরিশ্রম করে। তাই, বিজ্ঞাপন খুবই ভালো উদাহরণ যে আপনার কথা কত কম সময়ে কত ভালোভাবে মানুষকে বোঝানো যায়। বিজ্ঞাপন থেকে কয়েকটা লেসন এখানে শেয়ার করলাম যেন বিজ্ঞাপন থেকে শিখতে আপনি আরও বেশি আগ্রহী হন।
১. আপনার ইউটিউবে বিজ্ঞাপন দিলে প্রথম কয়েক সেকেন্ড পর মানুষ বিজ্ঞাপনটি স্কিপ করে যেতে পারে। তাই, ৩০ সেকেন্ডের অ্যাড বানালেও, প্রথম কয়েক সেকেন্ডে এমন আকর্ষণীয় জিনিস দেখাতে হয় যেন মানুষ ওই অংশের কারণ পুরোটা বিজ্ঞাপনই দেখে ফেলে।
২. বিজ্ঞাপনে মডেলদের পোশাক খেয়াল করবেন। মডেলদের পোশাকের রঙের সাথে ব্র্যান্ডের রঙ কিন্তু অধিকাংশ সময়ে মেলানো হয়।
৩. বিজ্ঞাপন মানুষ বেশি মনে রাখে যখন সেখানে জিঙ্গেল থাকে। তাই সুর করা ছন্দময় কথা বিজ্ঞাপনে রাখলে বেশি ভালো হয়।
৪. বাচ্চাদের খাবারের বিজ্ঞাপনে মা চরিত্র দেখানো হয়, রডের বিজ্ঞাপনে সেফটি হেলমেট পরা ইঞ্জিনিয়ার দেখানো হয়, এনার্জি ড্রিঙ্কের বিজ্ঞাপনে তারুণ্য দেখানো হয়–এসব চিন্তাভাবনা করে করা হয় যাতে পণ্যগুলো মানুষ আরও সহজে গ্রহণ করে নিতে পারে।
বলতে থাকলে পুরো বই লিখে ফেলা যাবে। আপনি যদি আসলেই এই বিষয়ে আগ্রহী হন তাহলে Ogilvy on Advertising বইটা পড়তে পারেন। মানুষের সাইকোলজি, কীভাবে মেসেজ দিতে হয়, কোন ধরনের বিজ্ঞাপন। বেশি কাজ করে–এসব নিয়ে দারুণ একটা বই। সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে আপনি বিভিন্ন ট্রেইনিং করতে পারেন। বিভিন্ন ক্লাবে জয়েন করতে পারেন।
*
ঠিক বুঝেছি তো?
বিশেষ করা মিটিং-এর পর আপনি একবার পুরো মিটিং-এর সামারি নিজের ভাষায় বলে নিশ্চিত করবেন যে, সবাই একই জিনিস বুঝেছেন কি না।
অর্থাৎ কমিউনিকেশন রিপ্লে করবেন। ক্রিকেট কিংবা ফুটবল দেখার সময় একটা আউট আমরা কত অ্যাঙ্গেল থেকে দেখে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তর্ক করি, এই আম্পায়ারটা ওই দলের নুন খেয়েছে! খেলা দেখার সময় রিপে করার উৎসাহ থাকে। ওই একই উৎসাহ যদি কমিউনিকেশনের মধ্যে থাকতো, তাহলে কত যে ভুল-বোঝাবুঝি শুধরে যেত!
এছাড়া একটি ভুল অধিকাংশ মানুষ করে। এটা হল, মিটিং শেষ করে চলে। যায়। আসলে তখন আপনার উচিত পুরো মিটিং সামারিটা লিখে মেইল করে দিবেন। যাতে, পরে তারা আমি তো ভাবসিলাম আপনি এটা বলেছেন!– অজুহাত দিতে গেলে আপনি সরাসরি মেইল খুলে দেখাতে পারেন যে আসলে তাদের দিক থেকে গাফিলতি ছিল।
সবসময়! অন্তত নিজের জন্য হলেও, সবকিছু লিখিত রাখবেন। পেশাদার জীবনে এটার গুরুত্ব যে কত বেশি, সেটা যতক্ষণ না কেউ কথার উপর পল্টি মারছে, ততক্ষণ বুঝতে পারবেন না।
*
জাজ না করা
ইদানীং দুটো শব্দ কমিউনিকেশনে বেশ প্রচলিত। একটা হচ্ছে, Judgemental আর অন্যটা হচ্ছে, Condescending। এই দুটো যেন আপনার কমিউনিকেশনের মধ্যে না আসে।
জাজমেন্টাল বলতে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? আপনি কথা বলার সময় যদি কেউ আপনার সম্পর্কে না জেনে উল্টাপাল্টা আন্দাজ করতে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তিটি জাজমেন্টাল। আর কেউ যদি এমন ভাব নেয় যে, সে তার মহামূল্যবান সময় ব্যবহার করে আপনার সাথে কথা বলে সে আপনাকে উদ্ধার করছে, তাহলে সে কনডিসেন্ডিং টোনে কথা বলছে।
এমনভাবে কমিউনিকেট করুন যেন কোনোদিন কেউ আপনার বিরুদ্ধে এই দুটি শব্দ ব্যবহার করতে না পারে।
*
ইংলিশে ইংলিশ শেখানো
এই ব্যাপারটা দেখলে আমার মাঝে মাঝে একটু খটকা লাগে। অনেক সময় ইংলিশ টিচারদের পড়াতে দেখেছি, যারা সম্পূর্ণ লেকচারটা ইংলিশে দেন। হ্যাঁ, ইংলিশে কথা বলতে বাধ্য করলে অনেকে হয়তোবা ইংলিশ শিখবে। কিন্তু, আমার মনে একটা প্রশ্ন আসে যে, যারা ইংলিশ শিখতে যায়, তারা ইংলিশ পারে না জন্যই তো ইংলিশ শিখতে যায়। তারা
এখন ক্লাসেও যদি লেকচার দিয়ে শেখানো হয়, তাহলে তারা বুঝবে কীভাবে? এটা অনেকটা এমন যে, আপনি ফ্রেঞ্চ ভাষা জানেন না, কিন্তু ফ্রেঞ্চ টিচার আপনাকে ফ্রেঞ্চ ভাষায় ফ্রেঞ্চের শব্দাবলী শেখাচ্ছে!
তাই, মূলকথা হল যা বুঝাতে চাচ্ছেন, সেটা বুঝার আগে যদি আপনার কথা বুঝতেই সমস্যা হয়, তাহলে সেটা শিক্ষার্থীর নয়, শিক্ষকের সীমাবদ্ধতা।
*
কে বলেছে কার কথা?
যখন কোন গীবতের আসর বসে, তখন মানুষের প্রথম প্রতিক্রিয়া কী হয়?
আমিও একটু শুনি! এখানে একটা বিষয় সব সময় মনে রাখবেন, যে মানুষ অন্যের কথা আপনার কানে ঢালছে, সেই মানুষগুলো আপনার কথাও অন্যের কানে ঢালবে।
তাছাড়া গীবত শুনলে অনেকেই সেখানে তাদের নিজেদের গীবতটাও ঢেলে দেয়, আরে হ্যাঁ! ওর ক্যারেক্টার খারাপ। ওই তো সে দিনই দেখলাম যে রিক্সার হুড উঠায় কাকে নিয়ে জানি কোথায় যাচ্ছিল! এই যে শেয়ার করলেন আপনার মনের কথা, এটা সে শীতকালের গোসল করার গরম পানির পাতিলের মত সাবধানে নিয়ে আরেকজনের কানে এমনভাবে ঢালবে যেন একটা ফোঁটাও তার নিজের গায়ে না পড়ে! গীবত শুনতে যতই ইচ্ছা করুক না কেন, গীবতকারি মানুষের কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকবেন। মনে রাখবেন, গীবত করা এককালীন ইভেন্ট না, গীবত করা অনেকের স্বভাব।
ঠিক একই সূত্র ওই মানুষদের প্রতি প্রযোজ্য, যারা অন্যের গোপন কথা আপনাকে বলে। বলার আগে আবার বলে নিবে, তোকে বিশ্বাস করি জন্যই বলছি, কাউকে বলিস না আবার! প্রশ্ন হল এই মানুষ আপনাকে বিশ্বাস করে তো বুঝলামই। কিন্তু, সে যদি আরও দশজনকে বিশ্বাস করে তাহলে কী হবে? কী হবে বলছি। আপনার কোনো গোপন তথ্য পেলে তার আরেকজন বিশ্বস্ত মানুষের কাছে বর্ডারের গরুর মত চালান করে দিবে। একটা কথা পরিষ্কার করে রাখি। আপনি যতই বিশ্বস্ত হন না কেন, অন্য কারও গোপন তথ্য আপনার জানার কোনো অধিকার নেই। তাই, আপনাকে যত বিশ্বাস করেই কোনো সিক্রেট বলা হোক না কেন, সেই সিক্রেটটা বলা হচ্ছে আরেকজনের প্রাইভেসি নষ্ট করে।
তাই গোপন তথ্য পাচারকারী এবং গীবতকারিরা যত বিনোদনমূলক গরম গরম খবরই লেটুস পাতা দিয়ে সুন্দর থালিতে পরিবেশন করুক না। আপনি সেটা ইগ্নোর করে ডায়েট করবেন!
*
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কমিউনিকেশন
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের অন্যতম আনন্দ হচ্ছে, মনের মধ্যে যা কিছু আছে, সব কথা কোনো ফিল্টার ছাড়া শেয়ার করে দেয়া যায়। পেশাদার জীবনে যত স্ট্রেস থাকে, র্যান্ট কিংবা ভেন্ট করে কথাগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উগরে দিয়ে অনেকে শান্তি খুঁজেন। এখন ব্যাপার হচ্ছে, রাগ ঝাড়ছেন তো ঝাড়ছেনই অনেকে, একদম পাবলিক হাইওয়েতে তাদের ক্লায়েন্টের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করছেন। অন্যরা তো। আপনাকে দেখছেই; হয়তোবা আপনার ক্লায়েন্টও আপনার পোস্ট পড়ে জানতে পারলো যে ভেতরে ভেতরে আপনি কতটা চটেছেন!
কারও যদি ক্লায়েন্ট কিংবা অন্য কাউকে নিয়ে অনলাইনে গালমন্দ করার স্বভাব থাকে, তাহলে সেটা আপনার ক্ষেত্রেও করবে। তাই, এসব মানুষ থেকে তো একটু দূরে থাকতেই হবে; সাথে সাথে নিজের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে যে, আমি কি অনলাইনের রগচটা বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছি কি না?
এবং খালি পাবলিকলি গালমন্দ না। অনেকে কলিগদের সাথে গ্রুপ খুলে সেখানে বসকে ইচ্ছামত আছাড় দেয়। সেটার আবার স্ক্রিনশট কেউ একজন বসকে দেখিয়ে প্রমোশন নেয়। তাই একদম রাগারাগি করে ঝাল যদি ঝাড়তেই হয়, তাহলে এমন মানুষের সাথে শেয়ার করুন যাদের সাথে। আপনার কর্মক্ষেত্রের মানুষের কোনো সংযোগ নেই।
এবং সবসময় মনে রাখবেন, ইন্টারনেটের দুনিয়ায় সবাই সবাইকে খুব। সহজেই চিনে ফেলতে পারে। তাই, কখনও এমনভাবে ধ্বংস করবেন না। যেন সেটার ধোয়া অন্য সবাইকে আপনার থেকে দূরে থাকার ইঙ্গিত দেয়।
*
কন্ট্যাক্ট দিয়ে কমিউনিকেশন
পেশাগত কাজের জন্য পেশাদার মেইল ব্যবহার করেন। এটা বিশেষ করে স্টুডেন্ট এবং সদ্যপাশ করা গ্র্যাজুয়েটদের মাঝে দেখা যায় যে তাদের ইমেইল অ্যাড্রেস–[email protected]। জীবনেও কোনো কোম্পানি চাইবে না যে এমন ইমেইল অ্যাড্রেস ব্যবহারকারী কোনো ব্যক্তি তাদের অফিসে কাজ করুক। অধিকাংশ ভাবে হকেই ইমেইল অ্যাড্রেস দিয়ে দেয়। আপনার না, সংখ্যা কিংবা BD কিংবা নিরপেক্ষ কিছু বসিয়ে ইমেইল তৈরি করুন।
দিয়েছেন তো গেছেন! — [email protected]
ব্যবহারযোগ্য — [email protected]
পারলে hotmail, yahoo এসব ব্যবহার না করে gmail অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করুন। আরও ভালো হবে যদি আপনি নিজের কোম্পানির ডোমেইন দিয়ে ইমেইল তৈরি করতে পারেন যেমন[email protected] আর হ্যাঁ! ব্যক্তিগত কাজের জন্য এবং অফিসের কাজের জন্য আলাদা মেইল ব্যবহার করুন। প্রয়োজন ছাড়া ব্যক্তিগত মেইল যেন অফিসের কাজে ব্যবহার না করেন।
*
মানুষের নাম্বার চাওয়া
মানুষের নাম্বার চাইতে হলে, ভাই, আপনার নাম্বারটা দেন এভাবে বললে স্প্যাম মনে হয় এবং তার চেয়েও বড় কথা–অপেশাদার মনে হয়। নাম্বার যদি চাইতেই হয়, তাহলে নিচের একটা উদাহরণ তুলে ধরলাম। মনে করেন মেসেঞ্জারে পাঠাচ্ছি—
আসোলামু আলাইকুম, আজনান ভাই!
আশা করি ভালো আছেন। আমরা অনলাইনে অনূর্ধ্ব ২,৫০০ টাকা মূল্যের পণ্যের কন্টেন্ট ডিসট্রিবিউশনের পরিকল্পনা করছি। একসাথে কাজ করলে আমাদের উভয়ের জন্যই একটা দারুণ সুযোগ হবে। তাই, আপনার একটা ৩০ মিনিটের অ্যাপয়েন্টমেন্ট চাইছিলাম।
প্রজেক্টের ওভারভিউ আমি নিচে অ্যাটাচ করে দিচ্ছি। আশা করি দ্রুত সাক্ষাৎ হবে। ধন্যবাদ!
Content DistributionPlan.PDF. Download Here
সাদমান সাদিক।
বিজনেস ডেভেলপমেন্ট হেড
টেন মিনিট স্কুল।
+০১৪০০৩৭৩৯৬৫
*
আপনি কি স্প্যাম করছেন?
স্প্যাম হচ্ছে সেইসব বিরক্তিকর বিজ্ঞাপনমূলক মেসেজ, যেগুলো আমাছে না জানিয়ে অচেনা মানুষজন আমাদেরকে পাঠায়। এখন বিষয় হচ্ছে আমাদেরকে অনেক সময় এমন মানুষের সাথে যোগাযোগ করতে হয়, যাদের সাথে আমাদের আগে কখনও দেখা হয়নি। তাহলে, কীভাবে অচেনা মানুষ হয়েও, পেশাদারভাবে কাউকে মেসেজ করা যায়?
স্প্যামঃ
সবাইকে স্বাগতম! এই , বইমেলায় পাওয়া যাচ্ছে। কমিউনিকেশন শেখার দারুণ বই কমিউনিকেশন হ্যাকস! আজই কিনুন। এই মেসেজটি লাইক এবং শেয়ার করুন।
পেশাদার মেসেজঃ
প্রিয় তামিম ভাই,
আশা করি ভালো আছেন। আপনার নাম্বারটি আপনার ওয়েবসাইট থেকে। সংগ্রহ করেছি একটি বিজনেস প্রস্পেক্টের কারণে। শিক্ষার্থীরা যেন নিজেদের কমিউনিকেশন স্কিল বাড়াতে পারে সেজন্য আমরা দেশের লাইব্রেরীগুলোতে অনেক কম মূল্যে কমিউনিকেশন হ্যাকস সরবরাহ করছি। ১০০ কপি-এর মূল্য আমরা ৩৫% ডিসকাউন্টে দিচ্ছি শুধুমাত্র লাইব্রেরীর জন্য। আপনি যদি ইচ্ছুক হন, তাহলে আপনার সাথে শীঘ্রই দেখা করতে আগ্রহী।
সাদমান সাদিক
সেলস হেড,
অধ্যয়ন প্রকাশনী
+০১৪০০৩৭৩৯৬৫
*
ডিজিটালি শেয়ার করার কমিউনিকেশন
ডিজিটাল যুগে ফাইল শেয়ার করাটা অনেক সহজ হয়ে গেছে। কিন্তু, একই সাথে এসেছে সাইবার সিকিউরিটি এবং প্রাইভেসির সমস্যা। পেশাগত জীবনে ডিজিটাল কন্টেন্টের এই কয়টা বিষয় মাথায় রাখবেন :
১. আমাদের দেশে যদিও ২ যদিও কপিরাইটকে মানুষ খুব একটা তোয়াক্কা করে না, নো ছবি কিংবা কন্টেন্ট ব্যবহারের আগে শিল্পীর পারমিশন ভন্ন কিংবা তাকে রয়্যালটি বাবদ অর্থ দিয়ে দিবেন। কর্পোরেট কোনো কপিরাইটেড কন্টেন্ট পারমিশন ছাড়া ব্যবহার। যদি কারণ কাছে ধরা খান, তাহলে ব্যাপক বিপদে পড়তে পারেন যেমন একটা দৈনিক সাকিব আল হাসানের চিত্র পেপারের ফ্রন্ট আজে ব্যবহার করেছিল। তাও আবার শিল্পীর নাম লেখা অংশটা কেটে তা সেটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সে কি ঝড়! ওই শিল্পীর সমিশন নিতে কত সময়ই বা লাগতো? কিংবা ক্রেডিট না দিয়ে যত লাখ আমার ব্যান্ডের ক্ষতি হয়েছে, তার চেয়ে সম্মানি হিসেবে ৫০ হাজার দিলেও হয়তোবা কমের উপর দিয়ে যেত। ইদানীং আরেকটা জিনিস অনেক হচ্ছে। বিভিন্ন এজেন্সি থার্ড পার্টি দিয়ে ভিডিও বানিয়ে নেয়। এখন অনেকে হয়তোবা জেনে না জেনে কপিরাইটওয়ালা মিউজিক ভিডিওতে দিয়ে দেয়। প্রমোশনের সময় যখন লাখ টাকা ঢেলে বুস্ট করা হয়, তখন কপিরাইট ক্লেইম খেয়ে এজেন্সি, কোম্পানিসহ সবাই ভূত হয়ে যায়! তাই, কন্টেন্টে শেয়ার করার আগে কপিরাইট খেয়াল রাখুন।
২. মানুষের কোন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুলে ধরলে পোস্টের নিচে তার নামটি মেনশন করুন। পারলে পোস্টের একদম শুরুতেই নামটা মেনশন করুন। যদিও করা উচিত নয়, তবুও, একদম নাম খুঁজে না পেলে সংগৃহীত লিখে দিবেন।
৩. অফিসের ডকুমেন্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করতে গেলে লিক হয়ে যাবার ভয় থাকে। তাই অনেক কোম্পানি Telegram, WhatsApp, Slack কিংবা Facebook Workplace ব্যবহার করে অভ্যন্তরীণ কাজের জন্য। তবুও অনেক জিনিস লিক হয়ে যায়। এমন অনেক কাহিনী আছে। যেখানে এজেন্সির কাছে পিচ করা আইডিয়া অন্য কোনো জায়গায়। ইমপ্লিমেন্ট করা হয়েছে পারমিশন না নিয়ে। সব সময় মনে রাখবেন, সফটওয়্যারের ভুলের চেয়ে মানুষের ভুলে লিক বেশি হয়।
*
ডিজিটাল মোলাকাতের (Icebreaking) কমিউনিকেশন
নতুন কর্মস্থলে কিংবা নতুন কোন টিমের সাথে যখন একটা প্রজেক্ট শুরু হয়, তখন নতুন চ্যাটিং গ্রুপ খোলা হয় Telegram, WhatsApp কিংবা Slack এ। এসব গ্রুপে অনেক সময় প্রজেক্ট চলার মাঝখানে নতুন সদস্য হিসে, আপনাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব গ্রুপে জয়েন করলে চুপ করে বল থাকবেন না। একটা মেসেজে বলে দিন :
১. এই গ্রুপ চ্যাট সংশ্লিষ্ট প্রজেক্টে আপনার কাজ কী?
২. আপনার পদ এবং ডিপার্টমেন্ট
৩. আপনার কন্ট্যাক্ট
একটা উদাহরণ দিয়ে রাখি :
সবাইকে শুভেচ্ছা! আমি সাদমান সাদিক। আমি ডিজিটাল মার্কেটিং সেলস। ফানেলের অ্যানালিটিক্সটা দেখছি। আমি ডেটা অ্যানালিটিক্স টিমে শামীর ভাইয়ার তত্ত্বাবধানে কাজ করছি। যেকোনো প্রয়োজনে আমাকে পাবেন +0১৪০০৩৭৩৯৬৫ এই নাম্বারে অথবা মেইল করতে পারেন এখানে। [email protected]
একইভাবে যখন একটা গ্রুপে আপনার কাজ শেষ হয়ে যাবে, সবাইকে বলে সেখান থেকে বিদায় নিন। একটা উদাহরণ দিলাম নিচে :
আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমাদের এই বছরের পারফর্মেন্স দারুণ ছিল। অনেক কিছু শেখার ছিল। আজ একটা মিশ্র অনুভূতির মেসেজ আছে। আমার তমুক কোম্পানিতে চাকরি হয়ে গেছে। ১০ জুনের মধ্যে আমি সব কাজ গুছিয়ে চলে যাবো। আপনাদের কাছে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। কোনোদিন কোনো কাজে লাগলে আমার ব্যক্তিগত নাম্বারে +০১৪০০৩৭৩৯৬৫ কল দিয়েন। আল্লাহ্ হাফেজ।–এই বলে চ্যাট গ্রুপ এক্সিট করে ফেলবেন।
এমন অনেকে আছেন যারা চাকরি ছেড়ে দেয়ার পরও চুপ করে গ্রুপে লুকিয়ে থাকেন। অনেকে হয়তোবা খেয়ালও করে না ব্যাপারটা। আমারই চেনা জানা এমন আছে যারা এক কোম্পানি থেকে অন্য প্রতিযোগী কোম্পানিতে গিয়েছে, কিন্তু ঠিকই আগের কোম্পানির প্রজেক্টের চ্যাট গ্রুপের আপডেটগুলো পায়! তাই, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে যখন যার কাজ শেষ, তাকে গ্রুপ থেকে বিদায় জানাবেন, অথবা নিজে বের হয়ে গেলে বিদায় চেয়ে চ্যাট গ্রুপ থেকে এক্সিট করবেন।
Thanks