৩১. হোগার্টের যুদ্ধ

৩১. হোগার্টের যুদ্ধ

গ্রেট হলের যাদুকররা সিলিংটি কালো এবং সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে তারা খচিত। তার নিচে চারটি বড় হাউস টেবিলে লাইন ধরা পোষাকে সজ্জিত ছাত্ররা। কারো পরণে ভ্রমন আলখাল্লা আর কারো পরণে গাউন। এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দাঁড়িয়ে আছে উজ্জ্বল মুক্তোর মত সাদা স্কুলের ভূতগুলো। মৃত এবং জীবিত সবার চোখ প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের উপর। তিনি কথা বলছেন একটি উঁচু প্রাটফর্মে দাঁড়িয়ে। তার পেছনে অন্যান্য শিক্ষকরা দাঁড়িয়ে আছেন। আর ভেতরে আছে অর্ধ গোড়াকৃতির শরীরগুলো এবং অর্ডার অব দি ফিনিক্সের সদস্যরা, যারা এসেছেন লড়াইতে অংশ নিতে।

.. ছেলেপেলেদের খালি করার কাজটি তদারকি করবেন মি. ফ্লিটউইক এবং ম্যাডাম পমফ্রে। প্রেফেক্টস, আমি যখন বলব তখন তুমি তোমার হাউসটি সংগঠিত করবে। খালি করার সময় তুমি অর্ডারের কায়দায় তোমার দায়িত্ব বুঝে নেবে।

অনেক ছাত্র ভয় পেয়েছে। কিন্তু হ্যারি যখন বাইরে দিয়ে ঘুরছে এবং গ্রিফিনডোরদের টেবিলে চোখ বুলাচ্ছে রন এবং হারমিয়নকে খোঁজার জন্য তখন এরনি ম্যাকমিলান হাফলপাফ টেবিলের উপর উঠে দাঁড়ালো এবং উচ্চস্বরে বলল, আমরা যদি এখানে থাকি এবং যুদ্ধে যোগ দেই তাহলে কেমন হয়?

চারপাশে দুর্বল করতালির শব্দ পাওয়া গেল।

তোমরা যদি সাবালক হতে, তাহলে তোমরা এখানে অবস্থান করতে পারতে, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন।

আমাদের জিনিসপত্রের কি হবে? একজন মেয়ে র‍্যাভেনক্ল টেবিল থেকে বলল। আমাদের বাক্স, আমাদের পেঁচাগুলো?

আমাদের জিনিসপত্র সংগ্রহের সময় নেই, প্রফেসর বললেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল তোমাদেরকে নিরাপদে এখান থেকে বের করা।

প্রফেসর স্নেইপ কোথায়? স্নিথারিন টেবিল থেকে একটি মেয়ে উচ্চস্বরে বলল।

সোজা কথায় বলতে গেলে, সে বিছানায় যাচ্ছে, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন। এবং একটি উল্লাসধ্বনি উঠল গ্রিফিনডোর, হাফলপাফ এবং র‍্যাভেন গ্রুপের টেবিল থেকে।

হ্যারি গ্রিফিনডোরের পাশ দিয়ে হলের ভেতরে প্রবেশ করল। সবগুলো মুখ সে যেদিকে যাচ্ছে সেদিকে ঘুরে যাচ্ছে। অনেকের ভেতর ফিসফিস কানাঘুষির শব্দ পাওয়া গেল।

আমরা ইতিমধ্যেই চারদিকে প্রোটেকশনের ব্যবস্থা করেছি, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন। কিন্তু আমরা তা বেশি সময় ধরে রাখতে পারব না যদি আরো শক্তি সঞ্চার না করি। সে কারণেই আমি তোমাদের সবাইকে বলছি যে দ্রুত, শান্তভাবে তোমরা তোমাদের দায়িত্ব শৃংখলার সঙ্গে 

কিন্তু তার কথা শেষ হওয়ার আগেই গোটা হলরুমে একটি কণ্ঠশব্দ প্রতিধ্বনিত হল। উচ্চ, শীতল এবং পরিস্কার কণ্ঠ : আওয়াজ কোথা থেকে আসছে। তার উৎস নেই। মনে হল যেন দেয়ালের সব জায়গা থেকেই শব্দ বের হচ্ছে। মনে হল যেন এই আদেশ শতশত বছর ধরে ওখানে আটকে আছে।

আমি জানি যে তোমরা লড়াই করতে প্রস্তুতি নিয়েছ, ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটা শোরগোল উঠল। অনেকেই একজন আরেকজনকে ভয়ে জড়িয়ে ধরল এবং শব্দটা কোথা থেকে আসছে সে উৎস দেখতে চারদিকে তাকালো তোমাদের প্রচেষ্টা বৃথা। তোমরা আমার সঙ্গে লড়তে পারবে না। আমি তোমাদেরকে হত্যা করতে চাই না। হোগার্টের টিচারদের প্রতি আমার পরম শ্রদ্ধা রয়েছে। আমি যাদুকরদের রক্ত ঝরাতে চাই না।

গোটা হলে একটা নিরবতা নেমে এল। এ নিস্তব্ধতা সবার কানে এসে চাপ সৃস্টি করল।

হ্যারি পটারকে আমার হাতে তুলে দাও, ভোল্টেমর্টের কণ্ঠ বলল। কারো কোনো ক্ষতি হবে না। শুধু হ্যারি পটারকে আমার হাতে তুলে দাও। আমি কাউকে

ছুঁয়ে এখান থেকে সরে যাবো। হ্যারি পটারকে আমার হাতে তুলে দিলে তোমাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে।

তোমাদের মধ্যরাত পর্যন্ত সময় আছে।

আবার চারদিকে নিরবতা নেমে এল। সবাই আবার মাথা ঘুরিয়ে হ্যারির যেখানে থাকার কথা সেদিকে তাকালো। তারপর সিথারিন টেবিল থেকে একজন উঠে দাঁড়ালো। হ্যারি দেখল সে প্যানসি পারকিনসন। সে কাঁপা হাত তুলে চিৎকার করে বলল, সে এখানে আছে! হ্যারি পটার এখোন! কেউ একজন তাকে ধরো!

হ্যারি কিছু বলার আগেই চারপাশ থেকে সবাই নড়ে উঠল। গ্রিফিনডোররা উঠে দাঁড়িয়ে স্লিথারিনের দিকে মুখ করে দাঁড়ালো। তারপর হাফলপাফ টেবিল থেকে এবং প্রায় একই সঙ্গে র‍্যাভেনকু টেবিল থেকেও। সবাই হ্যারির দিকে পেছন ফিরে প্যানসির দিকে ফিরে দাঁড়িয়েছে। হ্যারি বিস্ময়ের সঙ্গে দেখল সবাই তাদের

আলখাল্লা বা পোষাকের নিচে থেকে যাদুদণ্ড রে করে ধরেছে।

ধন্যবাদ মিস পারকিনসন, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন। তুমি প্রথমে হল ত্যাগ করবে এবং সঙ্গে যদি তোমার হাউসের সবাই তোমাকে অনুসরণ করে যেতে চায়, তো যাবে।

হ্যারি বেঞ্চগুলোর সরানোর আওয়াজ পেল। তারপর থিরিন টেবিলের সবার একসঙ্গে বের হওয়ার শব্দ পেল।

র‍্যাভেনক্ল, ওদেরকে অনুসরণ করো! প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন।

ধীরে ধীরে চারটি টেবিলই খালি হয়ে গেল। স্লিথারিন টেবিল একেবারে খালি হয়ে গেলেও কিছু সংখ্যক র‍্যাভেন বসে রইল। অধিকাংশ হাফপাফেরাও রয়ে গেল এবং গ্রিফিনডোরের অর্ধেক বসে রইল। টিচারদের প্লাটফর্ম থেকে প্রফেসর ম্যাকগোনাগল নেমে আসতে বাধ্য হলেন অল্প বয়স্কদের তাড়িয়ে পাঠিয়ে দেয়ার জন্য।

অবশ্যই তোমরা থাকবে না, ক্রিভি, যাও! আর তুমি, পিকস!

হ্যারি দৌড়ে উইসলিদের কাছে গেল। তারা বসে আছেন এক সঙ্গে গ্রিফিনডোরদের টেবিলে।

রন এবং হারমিয়ন কোথায়? হ্যারি জানতে চাইল।

তুমি ওদেরকে পাওনি? মি. উইসলি উদ্বেগের সঙ্গে বললেন। হ্যারি চুপ হয়ে গেল কারণ কিংসলে প্লাটফর্মে উঠে এসেছে যারা রয়ে গেছে তাদের উদ্দেশ্যে কথা বলতে।

মধ্যরাত হওয়া পর্যন্ত আমাদের হাতে আছে মাত্র আধঘণ্টা সময়। সুতরাং আমাদের যা করার দ্রুত করতে হবে। একটি যুদ্ধ পরিকল্পনার ব্যাপারে হোগার্টের টিচার এবং অর্ডার অব দ্য ফিনিক্সের ভেতরে সমঝোতা হয়েছে। প্রফেসরদের মধ্যে ফ্লিটউইক, স্প্রাউট এবং ম্যাকগোনাগল যোদ্ধাদের গ্রুপগুলো নিয়ে তৃতীয় সর্বোচ্চ টাওয়ারে যাবেন। সেখান থেকে তারা সবচেয়ে ভাল দেখতে পাবেন। ওই জায়গাটি স্পেল ব্যবহারের জন্য চমৎকার। এদকি রেমুস, সে লুপিনের দিকে দেখালো আর্থার সে মি. উইসলির দিকে ইশারা করল এবং আমি একটি দল গ্রাউন্ডে নিয়ে যাবো। আমাদের লোক দরকার হবে স্কুলে প্রবেশের যে কিছু প্যাসেজ আসে সেগুলোর ডিফেন্স করা।

-এ কাজটি মনে হয় আমাদের করতে হবে, ফ্রেড নিজেকে এবং জর্জকে দেখালো। কিংসলে মাথা দুলিয়ে সম্মতি দিল।

ঠিক আছে, এখানে লিডাররা আছেন এবং আমরা বাহিনীকে ভাগ করে ফেলব!

পটার!, প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বললেন। তিনি দ্রুত হ্যারির কাছে আসলেন। তখন ছাত্ররা সব প্লাটফর্মে উঠে এসেছে, তাদের অবস্থানের ব্যাপারে জেনে নিচ্ছে, নির্দেশনা শুনছে। তুমি কিছু একটার কথা ভাবছিলে না?

কি? ওহ, ওহ হ্যাঁ, হ্যারি বলল।

সে হরক্রুক্সটির কথা প্রায় ভুলেই গিয়েছিল। মনে হয় যেন ভুলে গিয়েছিল যে একটি যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। কারণ ব্যাখ্যাতীতভাবে রন এবং হারমিয়নের অনুপস্থিতি তাকে অন্য সবকিছু থেকে অমনোযোগি করে তুলছে।

তাহলে যাও, পটার যাও।

ঠিক-হ্যাঁ।

সে দৌড়ে বের হয়ে আসার সময় বুঝতে পারল যে অনেক চোখ তাকে অনুসরণ করছে। তখনো ছাত্রদেরকে খালি করে নেয়ার কাজ চলছে। সে ছাত্রদের সঙ্গে মার্বেলের সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল। কিন্তু উপরে উঠেই সে দ্রুত একটি ফাঁকা করিডোরের ভেতর ঢুকে গেল। তার চিন্তার ভেতর ভয় এবং অস্থিরতা বাধা দিতে থাকল। সে নিজেকে স্থির করতে চেষ্টা করল, হরক্রুক্স খোজার ব্যাপারে মনোযোগ দিতে চেষ্টা করলো। কিন্তু অস্থিরভাবে তার চিন্তা এক জায়গায় গিয়ে আটকে যাচ্ছে। রন এবং হারমিয়নের সাহায্য ছাড়া সে যেন তার চিন্তাকে গুটিয়ে নিতে পারে না। সে গতি থামিয়ে তারপর একসময় দাঁড়িয়ে পড়ল। সে ফাঁকা প্যাসেজের একটি জায়গায় বসে পড়ল এবং মারাউন্ডার ম্যাপটি তার গলায় ঝোলানো ব্যাগ থেকে বের করল। সে ম্যাপটির ভেতরে কোথাও রন এবং হার মিয়নের ছোট ফোঁটা দেখতে পেল না। দেখল অসংখ্য ছোট ফোঁটা রিকোয়ারমেন্ট রুমের দিকে যাচ্ছে। ভাবল হয়তো ওরা ওই ফোঁটাগুলোর মধ্যে আছে। সে ম্যাপটি সরিয়ে রাখল। হাতদুটো মুখের উপর চেপে ধরে মনোনিবেশ করতে চেষ্টা করল…

ভোল্ডেমর্ট চিন্তা করছে আমি হয়তো র‍্যাভেনকু টাওয়ারের দিকে যাচ্ছি।

এটাই জায়গা। এখানেই শুরু করতে হবে। ভোল্ডেমর্ট ক্যারোসকে র‍্যাভেনক্ল কমন রুমে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। এর একটিই ব্যাখ্যা হতে পারে : ভোল্ডেমর্ট ভয় পেয়েছিল যে হ্যারি জানে হরক্রুক্সটির ওই হাউসটির সঙ্গে সংযোগ আছে।

একটা কারণে সবাই এ যুক্তির সঙ্গে একমত হবে যে র‍্যাভেনকুই হল হারানো ডায়াডেম বা মুকুট… কিন্তু ডায়াডেম কী করে ওই হরক্রুক্স হবে? এটা কী করে সম্ভব যে ডায়াডেমটি র‍্যাভেনক্লরা শতশত বছর ধরে খুঁজছে ভোল্ডেমর্ট পেয়ে যাবে? কে তাকে বলে দেবে যে কোথায় সেটিকে খুঁজতে হবে, যেখানে জীবিত কোনো লোক এটিকে দেখেনি?

জীবিত কোনো লোক….

হাতের আঙুলগুলোর নিচে হ্যারির চোখটি আবার খুলে গেল। সে পায়ের উপর লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো। এবং দৌড় যে পথ দিয়ে এসেছিল সেদিকে যেতে থাকল। এখন সে তার আশার শেষ জায়গাটি দেখতে চায়। পাথরের সিঁড়িতে এসে সে শতশত লোকের পায়ের আওয়াজ শুনতে পেল রুম অব রিকোয়ারমেন্টের দিকে যাচ্ছে। শব্দ উঁচু থেকে আরো উঁচু হতে থাকল। শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের জোরে জোরে নির্দেশ দিচ্ছে। ছাত্রদেরকে লাইন দিয়ে তাদের হাউসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। হ্যারি দেখল জাকারিয়াস স্মিথ প্রথম বর্ষের ছাত্রদেরকে ঠেলে সামনে লাইন ঠিক করে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। এখানে সেখানে অল্প বয়সী ছাত্ররা কাঁদছে, আর একটু বয়স্ক ছাত্ররা বন্ধু এবং ভাই বোনদের ডাকাডাকি করছে…

নিক! নিক! তোমার সঙ্গে আমার একটু কথা বলা দরকার!

সে ছাত্রদের ঠেলে শেষ পর্যন্ত সিঁড়ির নিচে নামল। সেখানে প্রায় মাথাহীন গ্রিফিনডোরে ভুত নিক দাঁড়িয়ে ওর জন্য অপেক্ষা করছে।

হ্যারি, মাই ডিয়ার বয়!

নিক হ্যারির হাত তার দুহাত দিয়ে ধরল। হ্যারির মনে হল তার হাত বুঝি ঠাণ্ডা পানিতে নিক্ষেপ করা হয়েছে।

নিক! তোমার আমাকে সাহায্য করতে হবে। র‍্যাভেনক্ল টাওয়ারের ভূত কে?

প্রায় মাথাহীন নিকেকে বিস্মিত দেখা গেল।

ওখানে অবশ্যই গ্রে লেডি, কিন্তু তোমার যদি কোনো ভূতদের সাহায্য দরকার হয়-তাহলে তাকে দরকার হবে–তুমি কী জানো সে এখন কোথায়?

দাঁড়াও দেখি…

নিক তার মাথাটি এদিক ওদিক ঘোরালো। সে ছাত্রদের উপর দিয়ে তাকালো।

ওই ওখানে, হ্যারি, লম্বা চুলের ওই অল্পবয়সের মেয়েটি।

হ্যারি ওর আঙুল দিয়ে দেখানো দিকে তাকালো। হ্যারি দেখল লম্বা ভূতটি হ্যারি যে দেখছে সেটা দেখছে। এবং সে ভুরু কুচকে দেয়ালের অন্যদিকে সরে গেল।

হ্যারি দৌড় দিল। যে দরোজাটির ভেতর দিয়ে সে চলে গেছে হ্যারি সেটি দিয়ে ঢুকল। দেখল প্যাসেজের শেষ প্রান্তে সে রয়েছে। এখনো চেষ্টা করছে হ্যারির কাছ থেকে দূরে রে যেতে।

হেই-দাঁড়াও! ফিরে এসো!

সে মাটি থেকে উপরে উঠেছে, কিন্তু একটু বিরতি নিল। হ্যারি দেখল তার লম্বা চুলে এবং মেঝে সমান আলখাল্লায় তাকে সুন্দর দেখাচ্ছে। কিন্তু তাকে দেখলে বেশ দাম্ভিক মনে হয়। কাছে যেতেই হ্যারি চিনতে পারল তাকে আগে কয়েকবার করিডোরে দেখেছে। কিন্তু তার সঙ্গে কখনো কথা হয়নি।

তুমি কী গ্রে লেডি?

সে মাথা নাড়ল, কিন্তু মুখে কিছু বলল না।

তুমি র‍্যাভেনক্ল টাওয়ারের ভূত?

কথা ঠিক।

তার গলায় আন্তরিকতা নেই।

প্লিজ, আমার একটু সাহায্যের প্রয়োজন। তুমি হারিয়ে যাওয়া ডায়াডেম সম্পর্কে যা জানো সেটা আমার জানা দরকার।

তার ঠোঁটে একটি বাঁকা হাসি দেখা গেল।

চলে যাবার জন্য উদ্যোগ নিয়ে সে বলল, আমি শঙ্কিত যে আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারব কিনা।

একটু দাঁড়াও!

হ্যারি তাকে ধমক দিতে চায়নি, কিন্তু তার ভেতরের অস্থিরতা এবং রাগ হুমকীর মত শোনালো। মেয়েটি তার সামনে থেকে উড়াল দিতেই হ্যারি ঘড়ির দিকে তাকালো। মধ্যরাত হতে আর পনেরো মিনিট বাকী।

সে ভয়ানকভাবে বলে উঠল, এটা খুবই জরুরি। যদি ডায়াডেমটি হোগার্টসে থাকে তাহলে সেটি দ্রত আমাকে খুঁজে বের করতে হবে।

তুমিই প্রথম ছাত্র নও যে ডায়াডেমটি পেতে চাচ্ছ, সে নিচে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বলল। ব্যাচের পর ব্যাচের ছাত্ররা এ নিয়ে আমাকে উত্ত্যক্ত করেছে-

এটা পরীক্ষায় বেশি নাম্বার পাওয়ার চেষ্টা নয়! হ্যারি চিৎকার করে বলল। এটা ভোল্ডেমর্টের কারণে প্রয়োজন… ভোল্ডেমর্টকে পরাজিত করতে প্রয়োজন… নাকি তুমি সে ব্যাপারে আগ্রহী নও?

তার মুখটি লাল হয়ে গেল না, কিন্তু গালদুটো আরো অস্পষ্ট হয়ে উঠল। এবং তার কণ্ঠস্বর আরো কঠিন শোনালো। অবশ্যই চাই… তুমি কতটা সাহস যে বলছ?

ওয়েল, তাহলে আমাকে সাহায্য কর।

তার অনমনীয়তা দূর হতে থাকল। সে তোতলাতে তোতলাতে বলল, এটা..এটা আমার মায়ের বলে কোনো কথা নয়

তোমার মা?

সে নিজে রেখে গেছে বলে মনে হল।

সে বলল, যখন আমি দুনিয়া ছেড়ে যাই, তখন আমার নাম ছিল হেলেনা র‍্যাভেন।

তুমি তার মেয়ে? তাহলে তুমি অবশ্যই জানো, কী হয়েছে?

নিজেকে সে এক স্থানে স্থির করে রাখতে চেষ্টা করে বলল, ডায়াডেম যেখানে জ্ঞান বৃদ্ধি করে, আমার সন্দেহ আছে যে তুমি এর সাহায্য নিয়ে ওই যাদুকরকে পরাজিত করতে পারবে কিন্তু, বিশেষ করে সে যখন নিজেকে লর্ড বলে-

আমি তোমাকে তো বলেছি যে এটি শরীরে পড়ার ব্যাপারে আমার কোনো অগ্রহ নেই। হ্যারি তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বলল। আমার এত ব্যাখ্যা করার সময় নেই, কিন্তু যদি তুমি হোগার্ট নিয়ে ভাবো, যদি ভোল্ডেমর্টের পরাজয় চাও তাহলে ডায়াডেম সম্পর্কে যা জানো আমাকে খুলে বল!

সে শান্ত হয়ে রইল। শুন্যে ভাসছে। হ্যারির দিকে তাকালো। হ্যারির নিজেকে অসহায় মনে হল। অবশ্যই সে যদি কিছু জানতো তাহলে ফ্লিটউইক কিংবা ডাম্বলডোরকে অবশ্যই বলতো। তারাও নিশ্চয়ই তাকে একই প্রশ্ন করেছে। হ্যারি মাথা নেড়ে কেবল ফিরে যেতে প্রস্তুত হল। তখন সে নিচু স্বরে বলে উঠল

আমি ডায়াডেমটি মায়ের কাছ থেকে চুরি করেছিলাম।

তুমি-তুমি কী করেছিলে?

আমি ডায়াডেমটি চুরি করেছিলাম, সে ফিসফিস করে আবার রিপিট করলো। আমি নিজেকে চতুর ভাবতাম, মায়ের চেয়ে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবতাম। সেটি নিয়ে আমি পালিয়ে গিয়েছিলাম।

হ্যারি বুঝতে পারল না সে কীভাবে মেয়েটির আস্থা কুড়িয়েছে। সে কোনো প্রশ্ন করল না, সে যত্নের সঙ্গে ওর কথা শুনতে থাকল। মেয়েটি বলতে থাকল, ওরা বলেছে, আমার মা কখনো স্বীকার করেনি যে ডায়াডেমটি খোয়া গেছে। সে এমন ভাব করেছে যে ওটি তার কাছেই আছে। সে এমনকি হোসার্টের অন্য প্রতিষ্ঠাতাদের কাছেও আমার ওই বিশ্বাসঘাতকতাকে লুকিয়েছিল।

এরপর আমার মা অসুস্থ হয়ে পড়ল–ভয়ানক অসুস্থ। আমার ওই চতুরতার পরও সে আমাকে একবার দেখার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছিল। সে আমার কাছে একজন লোককে পাঠিয়েছিল যে আমাকে দীর্ঘকাল ধরে ভালবাসতো। আমি তার সে ভালবাসার দাবীকেও অগ্রাহ্য করে নিজের অবস্থানেই ছিলাম। আমার মা জানতো যে, কাজ না হওয়া পর্যন্ত লোকটি আমার পেছনে লেগেই থাকবে।

হ্যারি অপেক্ষা করল। মেয়েটি লম্বা একটি নিঃশ্বাস ছাড়ল এবং আবার মাথাটি ঘোরালো।

আমি যে জঙ্গলে লুকিয়েছিলাম সে সেখানে চলে গেল। যখন আমি তার সঙ্গে ফিরতে অস্বীকার করলাম তখন সে সহিংস হয়ে উঠল। ব্যারন ছিল মাথা গরম লোক। আমি তাকে প্রত্যাখ্যান করায় সে নিষ্ঠুর হয়ে উঠল, আমার স্বাধীনতায় সে হিংসা বোধ করল। সে আমাকে চাকু দিয়ে কোপ দিল।

ব্যার? তুমি বলতে চাচ্ছ?

ব্লাডি ব্যারন, হ্যাঁ, গ্রে লেডি বলল। সে যে আলখাল্লাটি পড়ে আছে তার একপাশ খুলে তার সাদা বুকের উপরের কালো ক্ষত চিহ্নটি দেখালো। সে যখন বুঝতে পারল যে সে কি করে ফেলেছে তখন তার ভেতর অনুশোচনা হয়। যে চাকুটি আমার প্রাণ কেড়ে নেয় সে সেই চাকুটি হাতে তুলে এবং নিজের উপর চালিয়ে নিজের জীবন দিয়ে দেয়। এত শত বছর পরও সে অনুশোচনায় তার চেইনটি পড়ে থাকে…তাই উচিত।

আর….আর ওই ডায়াডেমটি?

এটি সেখানেই ছিল আমি যেখানে লুকিয়ে রেখেছিলাম। যখন শুনেছি যে ব্যারন আমার পেছনে পেছনে জঙ্গলে আসছে তখন আমি সেটিকে একটি গাছের ভেতরের ফাপা জায়গায় লুকিয়ে রেখেছেলাম।

একটি ফাঁকা গাছ? জিগ্যেস করল হ্যারি। কি গাছ, কোথায় ছিল সেটি?

আলবানিয়ার একটি জঙ্গলে। একটি নির্জন জায়গা। আমি ভেবেছিলাম মা সেখানে পৌঁছতে পারবে না।

আলবানিয়া? হ্যারি আবার উচ্চারণ করল। তার দ্বিধা কেটে যাচ্ছে। মাথার ভেতর অনেক পরিস্কার হয়ে এসেছে। এবার সে বুঝতে পারল কেন সে তাকে বলেছে যে ডাম্বলডোর এবং ফ্লিটউইকের কাছে কী বিষয় অস্বীকার করেছে। তুমি এ কাহিনী অন্য কাউকে বলেছ, তাই না? অন্য কোনো ছাত্রের কাছে?

আমার কোন…..ধারনা ছিল না….সে আমার সঙ্গে অভিনয় করেছে। মনে হয়েছে..সে বুঝতে পেরেছে….সমবেদনা দেখিয়েছে…

হ্যাঁ, হ্যারি ভাবল। টম রিডল অবশ্যই বুঝতে পারতো হেলেনা র‍্যাভেনক্লর জিনিসটি সম্পর্কে তার অধিকারের বিষয়টি।

ওয়েল, তুমিই প্রথম নও যাকে রিডল ধোকা দিয়ে কথা বের করেছে, হ্যারি বলল। সে যখন কিছু চায় তখন তার কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে…

তারমানে ভোল্ডেমর্ট তাহলে এভাবেই গ্রে লেডিকে ধোকা দিয়ে বের করে নিয়ে সে ওই দূরে জঙ্গলটিতে উড়ে গিয়েছিল এবং গোপন জায়গা থেকে ডায়াডেমটি তুলে নিয়ে এসেছে। হয়তো বরগিন এন্ড বার্কলসে কাজে ঢোকার আগেই সে হোগার্ট ত্যাগ করেছিল।

হতে পারে না যে ভোল্ডেমর্টের যখন দীর্ঘ দশ বছর সরে থেকেছিল তখন সে ওই আলবানিয়ার নির্জন জায়গাটিই বেছে নিয়েছিল আশ্রস্থল হিসাবে?

কিন্তু ওই ডায়াডেমটি, যেটি তার কাছে মূল্যবান হরক্রুক্স হিসাবে দেখা দিয়েছিল, ওই নিচু গাছের ভেতরে রাখেনি… না, ডায়াডেমটি গোপনে তার আসল

জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এবং ভোল্ডেমর্ট সেটিকে ওখানেই রেখেছে

–সেই রাতে যখন সে এসে তার কাজ চেয়েছিল! হ্যারি তার চিন্তার শেষ অংশ মুখে উচ্চারণ করল।

তুমি কী বললে?

যেদিন সে এসে ডাম্বলডোরকে অনুরোধ করেছিল তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে, সেদিনই সে ক্যাসলের ভেতর এটি লুকিয়ে রেখেছে। হ্যারি বলল। সে কথাটি নিজেই বিশ্বাস করার জন্য একটু উঁচু স্বরে বলল। সে অবশ্যই ডাম্বলডোরের অফিসে যাবার সময় অথবা ফিরে আসার পথে ডায়াডেমটি রেখেছিল। কিন্তু তাকে বারবার সেখানে যেতে হয়েছিল, এবং সেখানেই সে গ্রিফিনডোরের তলোয়ারটি নিয়ে ধোকাবাজি করার সুযোগ পেয়েছিল–ধন্যবাদ, ধন্যবাদ!

হ্যারি ওকে ভাসমান অবস্থায় রেখে চলে এল। তাকে হতবাক মনে হয়েছে। সে আবার যখন হলে প্রবেশের পথের কোণায় আসল তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল পাঁচ মিনিট সময় আছে। যদিও সে এখন জানে যে হরক্রুক্স কোন জিনিসটি, কিন্তু সেটা কোথায় আছে তা এখনো জানা নেই…

প্রজন্মের পর প্রজন্ম ছাত্ররা ডায়াডেমটি পেতে ব্যর্থ হয়েছে; এ কথার মানে হল সেটি র‍্যাভেনকুতে নেই। তাহলে এটি কোথায় আছে? কোন গোপন জায়গা টম রিডল হোগার্টে খুঁজে পেয়েছে যে, জায়গাটি চিরকাল গোপন থাকবে বলে সে মনে করেছে?

বহুরকম চিন্তার ভেতর হ্যারি ডুবে যাচ্ছে। সে এক কোণায় চলে এল। মাত্র কয়েক পা এগিয়েছে, ঠিক তখনই প্রচণ্ড শব্দে জানালা ভেঙে গেল। সে লাফ দিয়ে এক পাশে চলে গেল। একটি বিশাল শরীর জানালা দিয়ে প্রবেশ করে অপর পাশের দেয়ালে বাড়ি থেল। শরীরটি কিছু একটা ছেড়ে দিল এবং হ্যারির দিকে উড়ে আসতে থাকল।

হ্যাগ্রিড! হ্যারি চিৎকার করে বলল। কি! কি ঘটনা!

হ্যারি, তুমি এখানে! তুমি এখানে! তার স্বভাবসুলভ জড়ো কণ্ঠে বলল।

হ্যাগ্রিড নিচু হয়ে হ্যারির উপর ঝুঁকে পড়ে তাকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরল যেন পাজর ভেঙে যেতে চায়। তারপর হ্যারিকে ছেড়ে দিয়ে সে ভাঙা জানালার দিকে ফিরে গেল।

গুড বয় গ্রোপি! সে জানালা দিয়ে চিৎকার করে বলল। তোমার সঙ্গে একটু পর দেখা হবে, এখানে একজন ভাল ছোকরা আছে!

হ্যাগ্রিডের পেছন থেকে হ্যারি দেখল দূরে আলোর ঝলকানি। সে একটি পরিস্কার কিন্তু অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেল। হ্যারি চোখ নামিয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো। মধ্যরাত হয়ে গেছে। যুদ্ধ শুরু হয়েছে।

হ্যাগ্রিড, তুমি কোথা থেকে আসলে?

হ্যাগ্রিড বলল, আমাদের গুহার উপর থেকে ইউ-নো-হুর কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম। ওই কণ্ঠস্বরটি বলছিল, তোমাকে তার হাতে তুলে দেয়ার জন্য মধ্যরাত পর্যন্ত সময় আছে। তাই বুঝতে পারলাম যে তুমি অবশ্যই এখানে আছ। কি ঘটতে যাচ্ছে তাও বুঝতে পারলাম। নিচে নেমে আসো ফ্যাঙ। তাই আমরা যোগদান করতে চলে এলাম। আমি, গোপি এবং ফ্যাও। আমরা জঙ্গলের বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে পড়েছি। গ্লোপি আমাদের বয়ে এনেছে। ওকে বলেছিলাম ক্যাসেলে নামিয়ে দাও, তাই ও জানালা ভেদ করে ঢুকে পড়েছে। আমি যেভাবে বলেছিলাম সেভাবে হয়নি–রন এবং হারমিয়ন কোথায়?

হ্যারি বলল, এটা একটা ভাল প্রশ্ন। চলো যাই।

ওরা একসঙ্গে করিডোর ধরে যেতে থাকল। ফ্যাঙও ওদের সঙ্গে লাফিয়ে লাফিয়ে চলল। হ্যারি করিডোরের চারদিকে হুলুস্থুল শব্দ শুনতে পেল। দৌড়ানোর শব্দ, চিৎকার। সে জানালা দিয়ে গ্রাউন্ডে অনেক আলো দেখতে পেল।

আমরা কোথায় যাচ্ছি? হ্যাগ্রিড জানতে চাইল। হ্যারির পায়ের নিচে ধুপধাপ শব্দ হচ্ছে। কাঠের মেঝে ভেঙে পড়ার শব্দ হচ্ছে।

আমি ঠিক জানি না, হ্যারি বলল। সে পুরোপুরি অন্যদিকে বাক নিল। কিন্তু রন এবং হারমিয়নও অবশ্যই এখানে কোথাও আছে।

যুদ্ধের প্রথম হতাহতের দৃশ্য সামনেই দেখা গেল। দুটি পাথরের অদ্ভুত ধরণের মূর্তি আলাদা হয়ে পড়ে আছে। এগুলো সাধারণত করিডোরে পাহারার জায়গায় থাকে। জানালা দিয়ে কোনো অশুভ শক্তি এ দুটিকে আঘাত করেছে। নিস্তেজ হয়ে সেগুলো করিডোরে পড়ে আছে। হ্যারি একটির কাটা মাথার উপর দিয়ে লাফিয়ে পার হল। সেটির মাথাটি বলে উঠল, আহ, আমাকে নিয়ে চিন্তা করো না…আমি এখানে ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকব।

পাথরের কুৎসিত মুখটি দেখে হ্যারির জেনোফিলিয়াসের বাড়ির রওয়ানা দেওয়া র‍্যাভেনর কথা মনে পড়ল। সেটির মাথায় ছিল হেডড্রেস…তারপর দেখল র‍্যাভেনক্ল টাওয়ারের মূর্তি…মাথায় পাথরের ডায়াডেম….তার মাথায় বাঁকা হয়ে…

যখন সে করিডোরের শেষ প্রান্তে উপস্থিত হল তখন তার মনে পড়ল তৃতীয় একটি প্রতি মুর্তির কথা : কুৎসিত দর্শন যাদুকর যার পরচুলা হ্যারি পরেছিল এবং একটি ভাঙাচোরা টোপ খাওয়া টায়রা। ফায়ার হুইস্কির গরমে হ্যারি হঠাৎ ধাক্কা খেল এবং সে প্রায় হোঁচট খেতে বসেছিল।

অবশেষে সে এখন জানে যে হরক্রুক্সটি কোথায় তার জন্য অবস্থান করছে….

টম রিডল কাউকে বিশ্বাস করে না। তাই সে কাজটি একাই করেছে। সে নিজের প্রতি এতটাই আত্মবিশ্বাস রাখে যে ভেবেছে সে, একমাত্র সেই হোগার্টসের রহস্যের এতটা গভীরে যেতে পারবে, আর কেউ না। অবশ্যই ডাম্বলডোর এবং ফ্লিটউইক এবং অন্য সব ছাত্ররা কেউ কখনো ওই বিশেষ জায়গাটিতে প্রবেশ করেনি। কিন্তু হ্যারি তার স্কুলকালীন সময় ওই পথে ঢুকে পড়েছিল। আর এখন সে এবং তোন্ডেমর্টই সেই গোপন খবরটি জানে যা ডাম্বলডোরও কোনোদিন তার জানা মতে আবিষ্কার করেননি… :

পথের মধ্যে প্রফেসর প্রাউটের সঙ্গে দেখা হল। তিনি দ্রুত চলে যাচ্ছেন, তার পেছনে নেভিল এবং অন্য কয়েকজন। তাদের সবার কান ঢাকা। হাতে কিছু একটা দেখতে অনেকটা পটের ভেতর চারাগাছের মত।

যাদুগাছ! নেভিল দ্রুত ছুটতে ছুটতে হ্যারির দিকে তাকিয়ে বলল। দেয়ালের উপর দিয়ে ওদের দিকে নিক্ষেপ করতে যাচ্ছি–ওরা এগুলো পছন্দ করবে না!

হ্যারি এখন জানে তাকে কোথায় যেতে হবে : হ্যারি দৌড় দিল। পেছনে পেছনে হ্যাগ্রিড এবং ফ্যাঙ ছুটল। ওরা একের পর এক প্রোট্রেইট পার হতে থাকল, সেগুলোর ভেতর থেকে ছবিগুলো বের হয়ে ওদের সঙ্গে মিলিয়ে দৌড়াতে থাকল এবং ক্যাসলের অন্য প্রান্তের খবর বলতে থাকল। একটি ক্যানভাসের সঙ্গে আরেকটি গায়ে গা মিলিয়ে চলছে। ওরা যখন করিডোরের শেষ প্রান্তে পৌঁছল তখন পুরো ক্যাসল একটি ঝাঁকি দিয়ে উঠল। হ্যারি জানে, একটি বিশাল পাত্র বিস্ফোরণের কারণে ফেটে গেল। এটি ছিল অর্ডারের টিচারদের চেয়ে ভয়াবহ একটি অশুভ শক্তির যাদু করা।

কোনো অসুবিধা নেই ফ্যাঙ, ঠিকাছে ফ্যাঙ, হ্যাগ্রিড চিৎকার করে বলল। কিন্তু বিশাল বোরহাউন্ডটি ছুটল চায়না প্লেটগুলো উড়ছে সেদিকে। হ্যাগ্রিড হ্যারিকে রেখে আতঙ্কিক্ত বিশাল কুকুরটির পেছনে পেছনে ছুটল।

 হ্যারি কাঁপতে থাকা প্যাসেজ দিয়ে ছুটতে থাকল। তার যাদুদণ্ডটি প্রস্তুত রয়েছে। একটি করিডোরের শুরু থেকে ছোট পেইন্টিং থেকে নাইট উপাধিপ্রাপ্ত

স্যার ক্যাডোগ্যান একটির পর একটি পেইন্টিং এর ভেতর দিয়ে চলতে থাকলেন তার পরিচ্ছদ থেকে ঝুনঝুন শব্দ হতে থাকল। তিনি চিৎকার করে উৎসাহ যোগাতে থাকলেন। তার পেছনে পেছনে ছোট ঘোড়াটি তালে তালে ছুটছে।

অসৎ এবং দাম্ভিকদের, কুকুর এবং বদমায়েশগুলোকে তাড়াও, হ্যারি পটার!

হ্যারি দ্রুত একটি কোণার দিকে ঢুকল এবং দেখল ফ্রেন্ডস কয়েকজন ছাত্র। সঙ্গে আছে লি জর্ডান, হান্নাহ অ্যাবোট। এটি খালি প্রিনথের উপর দাঁড়িয়ে আছে, যার উপরের মূর্তিটি একটি গোপন প্যাসেজের ভেতর ঢুকে গেছে। ওরা ওদের যাদুদণ্ড ধরে আছে এবং ফুটো দিয়ে ভেতরের কথা শুনতে চেষ্টা করছে।

একটি চমৎকার রাত্রি! ক্যাসলটি আরেকবার ঝাঁকি দিয়ে উঠতেই ফ্রেড উচ্চস্বরে বলল। হ্যারি দৌড়ে কাছে গেল। অন্য একটি করিডোরে ধাক্কা দিয়ে সে ভেতরে ঢুকল। চারদিকে অসংখ্য পেঁচা, মিসেস নরিস হিসহিস শব্দ করে সেগুলোকে জায়গা মত পাঠিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন….

পটার!

সামনে আবারফোর্থ ডাম্বলডোর যাদুদণ্ড ধরে পথ আগলে আছেন।

আমার বারটির ভেতরে শতশত ছেলেপেলে ঢুকে পড়েছে পটার! 

আমি জানি, ওদেরকে আমরা সরিয়ে দিয়েছি, হ্যারি বলল। ভোডেমর্ট

আক্রমণ করেছে কারণ তোমাকে তার হাতে তুলে দেয়া হয়নি, আবারফোর্থ বললেন। আমি কালা নই, হগসমিডের সবাই শুনতে পেয়েছে তার কথা। এবং তোমাদের কারো মনে হয়নি যে কিছু স্নিথারিনকে জামিনদার হিসাবে আটকে রাখার কথা? যাদেরকে তোমরা নিরাপদে রাখার জন্য সরিয়ে দিয়েছ তাদের মধ্যে শিশু ডেথইটারও রয়েছে। তাদেরকে এখানে রেখে দেয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতো না?

তাতে ভোল্ডেমর্টকে আটকানো যেতো না, হ্যারি বলল। এবং আপনার ভাই কখনো তা করেননি।

আবারফোর্থ গুনগুন করতে করতে উল্টোদিক ধরে চলতে শুরু করলেন।

আপনার ভাই কখনো তা করেননি…ঠিকাছে, এটি সত্য কথা। হ্যারি দৌড়াতে দৌড়াতে চিন্তা করল। ডাম্বলডোর অনেককাল ধরে স্নেইপের মোকাবেলা করে আসছিলেন। কিন্তু কখনো শিশুদেরকে আটকাননি….

এরপর সে ঘুরে একটি শেষ কোথায় আসল। ওদেরকে দেখে সে স্বস্তি এবং ক্ষোভে চিৎকার করে উঠল। রন এবং হারমিয়ন দুজনেরই বাহুতে বাকা নোংরা। হলুদ কিছু একটা পদার্থ। রনের বাহুর নিচে একটি ব্রুমস্টিক।

তোমরা কোথায় মরতে গিয়েছিলে? হ্যারি বলল।

 চেম্বার অব সিক্রেটসে, রন বলল।

চেম্বার-কি? হ্যারি বলল। সে কোনোক্রমে টলতে টলতে ওদের সামনে এসে দাঁড়ালো।

এ হল রন, রনের বুদ্ধি! হারমিয়ন হাপাতে হাপাতে বলল। কাজটা দারুন হয়েছে না? তুমি আমাদের ছেড়ে যাওয়ার পর আমি রনকে বললাম, যদি আমরা অন্য একটি খুঁজে পাই তহলে সেটি তুলব কীভাবে? আমরা এখনো কাপটি তুলতে পারিনি! এবং তখনই রন চিন্তাটা করলো। বাসিলিস্ক!

কী?

হরক্রুক্স তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস, রন বলল।

হ্যারি ভাল করে রন এবং হারমিয়নের হাতের মুঠোতে ধরা জিনিসের দিকে তাকালো। বড়বড় সাপের দাঁত। এবার সে বুঝল যে মৃত বাসিলিস্কের মাথা থেকে আনা হয়েছে।

কিন্তু তোমরা ওখানে গেলে কীভাবে? হ্যারি ওগুলোর থেকে চোখ তুলে রনের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইল। তোমাদের তো পারসেলটঙের প্রয়োজন ছিল।

ও তাই করেছে! হারমিয়ন বলল। ওকে দেখাও রন।

রন একটি ভয়ানক, অদ্ভুত হিসহিস শব্দ করল।

তুমি এটা করেছিলে লকেটটি খোলার সময়, রন ক্ষমা চাওয়ার সুরে বলল। ঠিকভাবে করতে আমাকে মাত্র কয়েকবার চেষ্টা করতে হয়েছে। অবশেষে কাজে দিয়েছে।

হারমিয়ন বলল, সে দারুন কাজ করেছে, দারুন!

হ্যারি নিজেকে শান্ত রাখতে পারছে না। বলল, তারপর?

তারপর আমাদের আর একটি হরক্রুক্স বাকী আছে, রন বলল। সে জ্যাকেটের পকেট থেকে হাফপাফের ভাঙাচোরা কাপের অংশ বের করল। হার মিয়ন এটি কুপিয়েছে। মনে করেছে তাই করা উচিত। এখনো সে সম্ভষ্ট হয়নি।

জিনিয়াস! চিৎকার করে হ্যারি বলল।

রন বলল, এটা কোনো ব্যাপার না। কিন্তু তাকে আনন্দিত দেখা গেল। এখন তোমার নতুন কী খবর আছে?

তার কথা শেষ হতেই মাথার উপর বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেল। সিলিং এর উপর থেকে ধুলো খসে পড়তেই তিনজন উপরের দিকে তাকালো। এবং দূরে। কোথাও চিৎকারের শব্দ শোনা গেল।

আমি জানি ডায়াডেমটি দেখতে কেমন। এবং আমি জানি এটি কোথায় আছে, হ্যারি বলল। সে দ্রুত ফিসফিস করে কথা বলছে। সে জিনিসটা ঠিক আমি যেখানে আমার পোশনের বইটি লুকিয়ে রেখেছি সেখানে লুকিয়ে রেখেছে। যেখানে সবাই শতশত বছর ধরে তাদের জিনিস লুকিয়ে রাখে। সে ভেবেছে সে একাই জিনিসটা খুঁজে পেতে পারে। চলো!

দেয়াল আবার কাঁপতে শুরু করেছে। সে অন্য দুজনকে ঠেলে নিয়ে গোপন প্রবেশ পথ দিয়ে আবার রুম অব রিকোয়ারমেন্টে নেমে এল। তিনজন মেয়েলোক ছাড়া রুমটিতে কেউ নেই। জিনি, টঙ্কস এবং একজন বয়স্কা যাদুকর মহিলা মাথায় হ্যাট পরে বসে আছেন। হ্যারি তাকে চিনতে পারল। তিনি নেভিলের দাদী।

আহ পটার!, তিনি বললেন। যেন তিনি হ্যারির জন্যই অপেক্ষা করছিলেন। তুমি কী আমাদের বলতে পার কী হচ্ছে?

সব কিছু ঠিক আছে? জিনি এবং টঙ্কস একই সঙ্গে বলে উঠল।

এই পর্যন্ত যতটুকু জানি ঠিকাছে, হ্যারি বলল।

হগস হেডের প্যাসেজে কি আরো মানুষ আছে?

হ্যারি জানে যে যতক্ষণ পর্যন্ত রুমে কোনো লোক থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত এটিকে ট্রান্সফর্ম করা যাবে না।

আমিই প্যাসেজ দিয়ে সর্বশেষ এসেছি, মিসেস লঙবটম বললেন। আমি এটিকে বন্ধ করে দিয়ে এসেছি। আমার মনে হয় এটিকে আবার খোলাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। মি. আবারফোর্থ বার এ চলে গেছেন। তুমি কী আমার নাতিকে দেখেছ?

তিনি যুদ্ধ করছেন, হ্যারি বলল।

স্বাভাবিক, বৃদ্ধ মহিলা গর্বের সঙ্গে বললেন। ক্ষমা করবে, আমাকে যেতে হবে তাকে সাহায্য করার জন্য।

অবিশ্বাস্য গতিতে তিনি লম্বা পা ফেলে পাথরের সিঁড়ির দিকে চলে গেলেন।

হ্যারি টক্কসের দিকে ফিরল।

আমি! আমি জানতাম তুমি তোমার বাচ্চা নিয়ে তোমার মায়ের কাছে আছে।

আমি কিছু না জেনে ওখানে বসে থাকতে পারি না–মা আছে ওকে। দেখাশোনার জন্য। তুমি কী রেমুসকে দেখেছ?

সে একদল যোদ্ধা নিয়ে গ্রাউন্ডে যাবার প্ল্যান করছিল।

একটি কথাও না বলে টঙ্কস দ্রুত বের হয়ে গেল।

জিনি, হ্যারি বলল। আমি দুঃখিত, কিন্তু তোমাকে চলে যেতে হবে। অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু আবার তুমি ফিরে আসতে পারবে।

জিনি খুশির সঙ্গে আশ্রয়স্থল ছেড়ে যেতে রাজি হল।

জিনি টঙ্কসের পেছনে পেছনে দ্রুত চলে যেতে থাকলে হ্যারি তার পেছন থেকে উচ্চস্বরে বলল, তুমি আবার এখানে চলে এস। তোমাকে এখানে আবার চলে আসতে হবে!

রন তীব্রভাবে বলল, একটু অপেক্ষা কর! আমরা একজনের কথা ভুলে গেছি!

কে? হারমিয়ন বলল।

ঘরের ভূত, ওরা তো নিচের কিচেনে আছে, তাই না?

তোমার মনে হয় যে ওদেরকেও আমরা যুদ্ধে জড়াতে পারি? হ্যারি বলল।

না, রন বলল খুব গুরুত্বের সঙ্গে। আমি বলছি ওদেরকে বের হয়ে যাওয়ার কথা। আমরা আর কোনো ডোবি চাই না। নাকি? আমরা ওদেরকে আদেশ দিতে পারি না আমাদের জন্য মরতে-।

বাসিলিস্কের দাঁতগুলো হারমিয়নের হাত থেকে ফসকে যেতেই একটা শব্দ হল। হারমিয়ন দৌড়ে রনের কাছে গেল। ওগুলো রনের গলায় জড়িয়ে দিয়ে সে রনের মুখে কিস করলো। রন হাত থেকে ব্রুমস্টিক এবং দাঁতগুলো ফেলে দিয়ে এত উল্লসিত হয়ে চুমো খেল যে হারমিয়নকে উঁচু করে ফেলল।

এটাই কি সময়? হ্যারি ক্ষীণ কণ্ঠে বলল। হারমিয়ন এবং ব্রন একে অপরকে ধরে রাখল এবং জায়গায় দাঁড়িয়ে দুলতে থাকল। হ্যারি আবার বলল, এই! এখানে যুদ্ধ চলছে!

রন এবং হারমিয়ন দুজন একটু দূরে সরল। দুজন দুজনের হাত ধরে রাখল।

আমি জানি, তাকে দেখে মনে হল কেবলই সে তার মাথার পেছনে ধাক্কা খেয়েছে। বলল, হয় এখন, অথবা আর কখনোই না। তাই না?

বাদ দাও সে কথা, হরক্রুক্সের কী হবে? হ্যারি বলল।

তোমার কী মনে হয় যে তুমি এটাকে ডায়াডেম পাওয়া পর্যন্ত এর ভেতরে ধরে রাখতে পারবে?

আঁ..হা…সরি,রন বলল। সে এবং হারমিয়ন বাসিলিস্কের দাঁতগুলো একত্র করল। দুজনই গোলাপি হয়ে গেছে।

ওরা উপরে উঠে আসতে থাকল। সুস্পষ্টভাবে বোঝা গেল যে ওরা যে সামান্য কয়েক মিনিট নিচে কাটিয়েছে এই সময়টাতে পরিস্থিতি অনেক খারাপ হয়ে গেছে। দেয়ালগুলো আগের চেয়ে অনেক বেশি পরিমান কাঁপছে। কাছের জানালা দিয়ে ধুলোয় চারদিকে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। হ্যারি দেখল, লাল এবং সবুজ আলো ক্যাসেলের একেবারে কাছে বিস্ফোরিত হচ্ছে, হ্যারি বুঝতে পারল যে ডেথ-ইটাররা প্রবেশ পথের কাছে চলে এসেছে। হ্যারি নিচের দিকে তাকিয়ে দেখল গ্রোপ ছাদের থেকে বিশাল নালার মত হয়ে একেবেকে ঘুরছে, ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।

দেখা যাক ওদের কারো উপর গিয়ে পড়ে কি না! রন বলল। কাছেই কোথাও থেকে চিল্কারের আওয়াজ পাওয়া গেল।

আমাদের কেউ যেন না হয়! একটি কণ্ঠ বলল। হ্যারি পেছন ফিরে দেখল জিনি এবং টঙ্কস। দুজনই তাদের কাছের জানালা দিয়ে যাদুদণ্ড ধরে রেখেছে। হ্যারি দেখল জিনি একটি শক্তি ছুঁড়ে দিচ্ছে নিচে যোদ্ধাদের দিকে।

গুডগার্ল? ধুলোর ভেতর দিয়ে দৌড়ে আসা একটি শরীর বলল। হ্যারি দেখল আবারফোর্থ। একদল ছেলের পাশ দিয়ে আসবার সময় তার ধুসর চুলগুলো উড়ছে। ওদেরকে মনে হচ্ছে উত্তর পাশের জায়গাটায় দুর্বল হয়ে পড়েছে। ওরা ওদের জায়ান্টটা নিয়ে এসেছে।

আপনি কি রেমুসকে দেখেছেন? টঙ্কস বলল।

সে ডোহোলোভের সঙ্গে লড়ছিল, আবারফোর্থ উচ্চস্বরে বললেন। তারপর থেকে আর দেখা হয়নি!

জিনি বলল, টঙ্কস, আমি নিশ্চিত সে ঠিক আছে

কিন্তু টঙ্কস আবারফোর্থের পেছনে পেছনে দৌড় দিল।

 জিনি অসহায়ের মত রন, হ্যারি এবং হারমিয়নের দিকে তাকালো।

ওরা ঠিক থাকবে, হ্যারি বলল। যদিও সে নিজেই জানে এ কথার কোনো অর্থ নেই। জিনি, আমরা কিছুক্ষণের ভেতরই ফিরে আসব, তুমি শুধু বিপদের ভেতর যেও না, নিরাপদে থাকো। -আসো! সে রন এবং হারমিয়নের উদ্দেশে বলল। ওরা একটি দেয়ালের পাশ দিয়ে দৌড় দিল রুম অব রিকোয়ারমেন্টের উদ্দেশ্যে, সেখানে পরবর্তী করণীয় করতে হবে।

আমার ওই জায়গাটা দরকার যেখানে সবাই জিনিস লুকিয়ে রাখে–হ্যারি নিজেকেই নিজে মাথার ভেতরে বলল।

ওরা দরোজা দিয়ে প্রবেশের সময় মৃত্যুর চিৎকার শুনতে পেল। পেছন থেকে দরোজাটা বন্ধ করে দিতেই নিস্তব্ধতা নেমে এল। ওরা এমন একটি জায়গায় চলে এল যে জায়গাটি অনেকটা একটি শহরের একটি ক্যাথেড্রেলের মত। এর উঁচু টাওয়ারটি তৈরি করা হয়েছে বহুদিন আগের চলে যাওয়া ছাত্রদের লুকানো জিনিস দিয়ে।

এবং সে কি কখনো ভাবেনি যে এখানে কেউ ঢুকতে পারে? রন বলল। তার গলার আওয়াজের প্রতিধ্বনি উঠল।

সে ভেবেছিল সে একাই জানে, হ্যারি বলল। এটা তার জন্য খুবই ক্ষতিকর, আমি আমার সময়ের জিনিস এখানে লুকিয়েছিলাম… একইভাবে।…আমার মনে হচ্ছে নিচের এই জায়গায়।

সে কিছু জিনিস পার হয়ে গেল। লাইন ধরা জিনিসের ভেতর দিয়ে যেতে উপরে নিচে তাকালো। সে স্মরণ করতে পারছে না এরপর কোনদিকে যেতে হবে…

অ্যাকসিও ডায়াডেম! হারমিয়ন অস্থির হয়ে স্পেল করল। কিন্তু কিছুই তাদের দিকে এল না। গ্রিনগোটের ভল্টের মত, মনে হল রুমটির কোনো জিনিস সহসা ওদের কাছে ধরা দেবে না।

চলো আমরা ছড়িয়ে পড়ি,হ্যারি অন্য দুজনকে বলল। একটা পাথর খোজো যেটি একটি বৃদ্ধ লোকের মাথায় টুপি বা মুকুটের মত আছে। এটি কোনো একটি আলমিরার উপর রাখা আছে, এবং সেটা অবশ্যই আশেপাশে কোথাও…

ওরা পাশাপাশি লাইনগুলোতে ছাড়িয়ে পড়ল। হ্যারি অন্য দুজনের পায়ের শব্দের প্রদিধ্বনি শুনতে পেল। ওদের পা গিয়ে লাগছে বোতল, বাক্স, চেয়ার, বই, অস্ত্র ব্রুমস্টিকের উপর গিয়ে পড়ছে…

এখানেই কোথাও আছে, হ্যারি একা একা বিড়বিড় করে বলল। এখানেই কোথাও…এখানেই…

গভীর থেকে গভীর অলিগলিতে সে যেতে থাকল। সে জিনিস খুঁজছে যা সে আগে এসে এখানে দেখেছিল। হ্যারির নিজের নিঃশ্বাসই নিজের কাছে উচ্চ শব্দের শোনাচ্ছে। তারপর নিজের বুকটাই হঠাৎ করে কেঁপে উঠল। ওই যে ওইখানে। ঠিক সামনে দাগ পড়া একটি পুরাতন আলমিরার উপরে, ঠিক যেখানে সে তার পোশণ বইটি লুকিয়ে রেখেছিল তার কাছেই উপরে রাখা। একটি যাদুকরের মাথায় ধুলো মাখা প্রাচীন আমলের টায়রা। …

দশ ফুট দূরে থাকতেই হ্যারি হাত বাড়িয়ে দিল। ঠিক তখনই একটি কণ্ঠ বলে উঠল, ওটা ধরো পটার!

হ্যারি ধাক্কা খেয়ে থেমে গেল এবং ঘুরে দাঁড়ালো। তার পেছনে কাঁধে কাঁধ মিশিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ক্র্যাবে এবং গয়েল। দুজনই হ্যারির দিকে যাদুদণ্ড তাক করে আছে। তাদের হাসিমাখা মুখ দুটোর পেছনে ড্র্যাকো ম্যালয়ের মুখটি হ্যারি দেখতে পেল।

তোমার হাতে ধরে থাকা যাদুদণ্ডটি আমার, পটার, ম্যালফয় বলল। তার হাতের যাদুদণ্ডটি সে ক্র্যাবে এবং গয়েলের মাঝখান দিয়ে হ্যারির দিকে ধরে আছে।

এখন আর না, হ্যারি নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল। হ্যারির যাদুদণ্ডটি সে আরো শক্ত করে ধরল। যে জেতে সেটা তার হয় ম্যালফয়। তোমার হাতেরটা তোমাকে কে দিল?

আমার মা, ড্র্যাকো বলল।

হ্যারি হাসল। যদিও পরিস্থিতি মোটেই হাসার মত না। সে এখন রন এবং হারমিয়নের কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছে না। ওরা হয়তো শ্রবণের মত দূরত্বের বাইরে চলে গেছে। ডায়াডেমটি খুঁজছে।

তোমরা ভোল্ডেমর্টকে ছাড়া তিনজন এলে যে? হ্যারি বলল। আমরা পুরস্কার পাবো, ক্র্যাবে বলল। এমন একজন কাঙ্খিত মানুষের সামনে তার কণ্ঠ বিস্ময়করভাবে শান্ত। এর আগে হ্যারি তাকে কখনো কথা বলতে শোনেনি। ক্র্যাবে এমনভাবে হাসছে যেন ছোট কোনো বাচ্চাকে এক ব্যাগ চকলেট দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আমরা এখানে রয়ে গেছি হ্যারি, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা যাবো না। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে তোমাকে তার সামনে হাজির করবো।

ভলো প্ল্যান, হ্যারি উপহাসের সুরে বলল। হ্যারি ভাবতে পারেনি যে এত কাছে ওদের দেখতে পাবে এবং ম্যালফয়, ক্র্যাবে আর গয়েলের দ্বারা বাধাগ্রস্থ হবে। সে ধীরে ধীরে পেছনে হরক্রুক্সটির কাছাকাছি যেতে থাকল। ওদের সঙ্গে সংঘাত শুরু হওয়ার আগেই যদি ওটা ধরা যায়….

তোমরা এখানে ঢুকলে কীভাবে? সে ওদের মনোযোগ অন্যদিকে নিতে চেষ্টা করল।

আমি গত একবছর ধরে সত্যিকার অর্থে এই জিনিস লুকানোর ঘরেই থাকি, ম্যালফয় বিরক্তির কণ্ঠে বলল। আমি জানি কীভাবে এখানে ঢুকতে হয়।

আমরা করিডোরের পেছনে লুকিয়েছিলাম, গুনগুন করে গয়েল বলল। আমরা এখন ডিস-ইলুশন চার্ম করতে পারি। তুমি ঠিক আমাদের সামনে দাঁড়ালে এবং বললে যে তুমি একটা ডায়াডেম খুঁজছ। ডায়াডেম কি জিনিস?

হ্যারি? হঠাৎ দেয়ালের ওপাশে ডান দিক থেকে রনের ডাক প্রতিধ্বনি তুলল। তুমি কারো সঙ্গে কথা বলছ?

মুহূর্তের ভেতরে ক্র্যাব তার যাদুদণ্ডটি পঞ্চাশ ফুটের মত উঁচু হয়ে থাকা ফার্নিচার, পুরাতন বইয়ের ট্রাঙ্ক, পুরাতন গাউন এবং অপরিচিত অনেক জিনিসের দিকে ধরল।

ডিসেনডো!

দেয়াল খসে পড়তে থাকল এবং তারপর যেখানে রন দাঁড়িয়ে আছে এই সরু পথ বন্ধ হতে থাকল।

রন!, হ্যারি চিৎকার করে উঠল। কোনো একটি অজানা জায়গা থেকে হারমিয়নও চিৎকার দিল। হ্যারি অসংখ্য জিনিস মেঝেতে পড়ার শব্দ পেল। সে স্তূপের দিকে যাদুদণ্ড তাক করে বলল, ফিনিটে! এবং সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো পড়া বন্ধ হয়ে গেল।

না! ম্যালফয় চিৎকার করে বলল। আবার স্পেল ছুঁড়তে থাকা ক্র্যাবের হাত ধরল। যদি পুরো রুম স্তূপ করে ফেল তাহলে ডায়াডেম জিনিসটা তলে কোথাও পড়ে যাবে!

তাতে সমস্যা কি? ক্র্যাবে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। ডার্ক লর্ড পটারকেই চান, ডায়-আডডেম দিয়ে আমাদের কী হবে?

পটার এখানে ঢুকেছে ওটা নিতে, ম্যালফয় বলল। তার কোনো একটা অবশ্যই কারণ আছে-

অবশ্যই কারণ? ক্র্যাবে ক্ষোভের সঙ্গে ম্যালয়ের দিকে ফিরল। তুমি কী বলছ তাতে কী আসে যায়, আমি তোমার আদেশ মানতে রাজি নই, ড্র্যাকো, তুমি এবং তোমার বাবা শেষ হয়ে গেছ।

হ্যারি? রন চিৎকার করে স্তূপের ওপাশ থেকে বলল। কী হচ্ছে এসব?

হ্যারি? উপহাসের সুরে ক্র্যাব বলল। এসব কী, -না, পটার! ক্রুসিও!

হ্যারি টায়রাটার জন্য ঝাঁপ দিল। ক্র্যাবের ছুঁড়ে দেয়া কার্স একটুর জন্য মিস হল। কিন্তু গিয়ে পাথরটির উপর আঘাত করল। সেটি শুন্যে উঠে গেল। ডায়াডেমটি উড়ে গিয়ে চোখের বাইরে স্তূপের ভেতর পড়ল।

থামো! ম্যালফয় ধমক দিয়ে ক্র্যাবেকে বলল। তার কণ্ঠস্বর পুরো রুমটিতে প্রতিধ্বনি তুলল। ডার্ক লর্ড ওকে জীবিত ধরতে চান-

তো, আমি ওকে হত্যা করছি না, হত্যা করছি? চিৎকার করে ক্র্যাবে বলল। সে ম্যালফয়ের হাতটি সরিয়ে দিল। কিন্তু আমি যদি সুযোগ পাই, অমি ওকে মেরে ফেলব, ডার্ক লর্ড ওকে মৃতও পেতে পারে। কি পার্থক্য-

একটি উজ্জ্বল আলো হ্যারির এক ইঞ্চি দূর দিয়ে চলে গেল। হারমিয়ন পেছন দিক দিয়ে ঘুরে ওর পেছনে চলে এসেছে এবং ক্র্যাবের মাথা বরাবর স্পেল ছুঁড়ে দিয়েছে। কিন্তু ম্যালফয় তাকে টান দিয়ে সরিয়ে ফেলার কারণে মিস হয়ে গেছে।

এটা হল সেই মাডব্লাড! অ্যাভাডা কেদাভ্রা!  

হারমিয়ন ঝাঁপিয়ে পাশে পড়ল। এবং হারমিয়নকে কিলিং কার্স ছুঁড়ে দিয়েছে দেখে সে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠল। তার ভেতর থেকে সব দ্বিধা উঠে গেল। সে ক্র্যাবের দিকে একটি স্টানিং স্পেল ছুঁড়ে দিল। সে দ্রুত সরে গেল এবং ধাক্কা লেগে ম্যালফয়ের যাদুদণ্ডটি হাত থেকে খসে পড়ল। সেটি গড়িয়ে ফার্নিচার এবং বাক্সের ভুপের ভেতর চলে গেল।

ওকে হত্যা করো না! হত্যা করো না! ম্যালফয় চিক্কার করে ক্র্যাবে এবং গয়েলকে বলল। ওরা দুজনই হ্যারির দিকে যাদুদণ্ড ধরে আছে। ওদের মুহূর্তের দ্বিধা করাটাই হ্যারির প্রয়োজন ছিল।

এক্সপেলিয়ারমাস!

গয়েলের যাদুদণ্ডটি হাত থেকে খসে জিনিসগুলোর ভেতর অদৃশ্য হয়ে গেল। গয়েল বোকার মত জায়গার উপর লাফ দিল। যাদুদণ্ডটি তুলতে চেষ্টা করল। ম্যালফয় লাফ দিয়ে হারমিয়নের দ্বিতীয় ছুঁড়ে দেয়া স্টান থেকে সরে গেল। ঠিক তখনই রন বেরিয়ে এল সরু পথের মুখে। ক্র্যাবের দিকে সে ফুল বডি বাইন্ড কার্স ছুঁড়ে দিল। কিন্তু অল্পের জন্য তা মিস হল।

ক্র্যাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে আবার চিৎকার করল, অ্যাভাডা কেদাভ্রা! রন লাফ দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে ছুটে আসা সবুজ আলো থেকে সরে গেল। হারমিয়ন ওদের দিকে স্পেল চার্জ করতেই যাদুদণ্ডহীন ম্যালফয় ভয়ে তিন পায়ের আলমিরার পেছনে চলে গেল। কিন্তু গয়েলের গায়ে স্টানিং স্পেল লাগল।

ওরা এখানেই কোথাও আছে! হ্যারি চিৎকার করে হারমিয়নের উদ্দেশে বলল। সে আঙুল দিয়ে টায়রাটি যেখানে পড়েছে সে জায়গাটি দেখালো। ওটা দেখ, আমি রনকে- ও

হ্যারি! হারমিয়ন চিৎকার করে উঠল।

একটি ভয়ানক, বাতাসে লগসহুস করা গর্জন মুহূর্তের ভেতরে ওকে সতর্ক করে দিল। হ্যারি ঘুরে দেখল রন এবং ক্র্যাবে যে যার আগে পারে সরু লাইন দিয়ে ওদের দিকে দৌড়ে আসছে।

ভয়ানক উত্তাপ সহ্য করবে? ক্র্যাবে গর্জন করে বলল।

কিন্তু সে যা করেছে তার উপর এখন আর তার নিয়ন্ত্রণ নেই বলে মনে হল। অস্বাভাবিক রকমের তপ্ত ধোয়া ওদের পেছনে পেছনে ধাওয়া করে আসছে। কালো বোয়া যেন ওদের ছুতে চেষ্টা করছে।

আগুয়ামেনটি! হ্যারি বলল। কিন্তু তার যাদুদণ্ডের আগা দিয়ে বের হওয়া পানি যেন শুন্যেই বাষ্প হয়ে গেল।

দৌড়াও! ম্যালফয় স্টান হওয়া গয়েলকে ধরল এবং টেনে নিল। ক্র্যাবে ওদের সবাইকে পেছনে ফেলে দিয়েছে। তাকে এখন ভয়ঙ্কর লাগছে। আগুন তিনজনের পেছনে ছুটছে। ক্র্যাব যে আগুন ব্যবহার করেছে তা সাধারণ আগুন না। সে এমন কার্স ব্যবহার করেছে যেটি হ্যারি চেনে না। ওরা যখন এক কোনায় চলে গেল তখন আগুনও সেদিকে ধাওয়া করল। যেন এ আগুনের প্রাণ আছে,ওদের হত্যা করতে চায়। এই ঘোয়া থেকে সাগনের মত রুপ নিল।

ম্যালফয়, ক্র্যাবে এবং গয়েল চোখের সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে। হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন মৃতের মত স্তব্ধ হয়ে গেছে। ধোয়া ও আগুনের বিশাল কুণ্ডলী ওদের ঘিরে ফেলল। ধীরে ধীরে কাছে থেকে আরো কাছে চলে আসছে।

আমরা কী করব? হারমিয়ন আগুনের কান ফাটানো শব্দের ভেতরই চিৎকার করে বলল। আমরা এখন কী করতে পারি?

এই যে!

হ্যারি কাছের একটি স্তূপের উপর থেকে দুটি ভারি ধরণের ক্ৰমস্টিক তুলে নিল এব একটি রনের দিকে ছুঁড়ে দিল। রন টান দিয়ে হারমিয়নকে তার পেছনে উঠিয়ে নিল। দ্বিতীয় ব্রুমস্টিকটাতে হ্যারি তার পা ঘুরিয়ে তুলে দিল এবং পা দিয়ে মাটিতে একটি ধাক্কা দিলে। ওরা শূন্যে উঠে গেল। অল্পের জন্য সেই আগুনের।

শিংওয়ালা সরিসৃপটি প্রচণ্ড শব্দ করে থাবা দিয়েও নাগালের ভেতর পেল না। বোয়া এবং তাপ অবিশ্বাস্য রকমের বাড়তে থাকল। ওদের ঠিক নিচেই কার্স ছুঁড়ে দেয়া আগুন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের ছাত্রদের রক্ষিত গোপন জিনিসগুলোকে গ্রাস করতে থাকল। হ্যারি আশপাশে কোথাও ম্যালফয়, ক্র্যাবে এবং গয়েলের চিহ্নটি পর্যন্ত দেখতে পেল না। সে সাহসের সঙ্গে অনেকটা নিচে দিয়ে আক্রমণ করা বিশাল ধোয়ার শরীরটার ওপর দিয়ে তাদের খুঁজতে চেষ্টা করল। কিন্তু অগ্নিকুণ্ড ছাড়া আর কিছুই দেখা গেল না। কি ভয়ানক মৃত্যু….হ্যারি এমনটা কখনো চায়নি…

হ্যারি চলো বের হই! চলো বের হয়ে যাই! রন বলল। যদিও ধধায়ার কুণ্ডলির ভেতর কোনোক্রমেই এখন দেখা সম্ভব নয় যে দরোজাটি কোন দিকে।

এরপর হ্যারি শুনতে পেল ভয়ানক জায়গাটির ভেতর প্রচণ্ড আগুনের হলকার থেকে একজন মানুষের আর্তনাদ শোনা যাচ্ছে।

ভয়ানক বিপদজনক! রন চিৎকার করে বলল। হ্যারি শুন্যের উপর ঘুরল। তার চোখের চশমাটি একটু হলেও ধোয়া চোখ থেকে রক্ষা করছে। হ্যারি নিচের আগুনের কুণ্ডলীর চারদিকে ঘুরল ভেতরে মানুষের পা বা মুখ দেখা যায় কিনা যা এখনো কাঠের মত পুড়ে যায়নি।

এবং হ্যারি ওদের এবার দেখতে পেল। ম্যালফয় অচেতন গয়েলের উপর হাত দিয়ে রেখেছে। ওরা একটি পুড়তে থাকা ডেস্কের উপর রয়েছে। গয়েল ঝাঁপ দিল। ম্যালফয় তাকে আসতে দেখে একটি হাত বাড়িয়ে দিল। হ্যারি দম বন্ধ করে ওদের কাছে ঝাঁপ দিল এবং বুঝতে পারল যে অবস্থা ভাল না। গয়েলের শরীর ভারী, ম্যালয়ের হাত ভিজে আছে। হ্যারি ধরতেই তা পিছলে গেল

ওদের জন্য আমরা যদি মরি তাহলে আমি তোমাকে মেরে ফেলব হ্যারি! রনের গলা শোনা গেল। এবং ধোয়া বের করা চিমেরা যখন ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে যাবে তখনই রন এবং হারময়িন গয়েলকে ধরে তাদের মস্টিকে তুলল। আর হ্যারি টান দিয়ে ম্যালফয়কে তার ক্রমস্টিকে তুলে দিল।

দরোজা! দরোজার দিকে যাও! ম্যালফয় হ্যারির কানের কাছে বলল। হ্যারি গতি বাড়ালো এবং রন, হারমিয়ন আর গয়েলকে কুণ্ডলী পাকিয়ে ওঠা ধোয়ার ভেতর দিয়ে অনুসরণ করল। দম নিতে কষ্ট হচ্ছে। গ্রাস করে নেয়া ধোয়ার ভেতর যে অল্প কিছু জিনিস অক্ষত রয়েছে সেগুলো শুন্যে ছিটকে উঠছে, যেন কার্স করা আগুনের ভেতর থেকে কোনো প্রাণীরা আনন্দ উল্লাস করে ওগুলো ছুঁড়ে মারছে : কাপগুলো, শিল্ড, নেকলেস এবং একটি পুরাতন রঙ জ্বলে যাওয়া টায়রা

তুমি কী করছ, তুমি কী করছ? দরোজা তো ওই দিকে! ম্যালফয় চিৎকার করে বলল। কিন্তু হ্যারি একেবারে তীব্র একটি বাক নিয়ে ব! লি। ডায়াডেমটি মনে হল ধীর গতিতে নেমে যাচ্ছে। ঝলমলে আলোতে চকচ ১ করছে, সেটি বিশাল সরিসৃপটির মুখের সামনে কাছাকাছি ছুটে যাচ্ছে। হ্যারি ধরে ফেলল, হাতের কব্জির ভেতর গেঁথে নিল

সরিসৃপটি হ্যারির দিকে থাবা দেয়ার মুহূর্তেই সে ঝট করে আবার বাক নিয়ে দরোজাটার দিকে ছুটে গেল। রন, হারমিয়ন এবং গয়েল বের হয়ে গেছে,ওদের দেখা যাচ্ছে না। ম্যালফয় হ্যারিকে শক্ত করে ধরে রেখে চিৎকার করছে। ধোয়ার ভেতর দিয়ে দেয়ালের চতুষ্কোণ জায়গাটি দিয়ে হ্যারি ব্রুমস্টিক ঢুকিয়ে দিল। মুহূর্ত পরেই বুক ভরে ঠাণ্ডা পরিস্কার বাতাস টেনে নিল। এবং বাইরের করিডোরের একটি দেয়ালের উপর এসে ধাক্কা খেল।

ম্যালফয় ক্ৰমস্টিকের উপর থেকে পড়ে গেল এবং উবু হয়ে থেকেই শ্বাস টানতে থাকল। সে কাশছে এবং ওয়াক ওয়াক করছে। হ্যারি থামল। দেখল রুম অব দ্য রিকোয়ারমেন্টের দরোজাটি উধাও হয়ে গেছে। রন এবং হারমিয়ন মেঝেতে বসে হাপাচ্ছে, পাশে গয়েল। সে এখনো অচেতন।

ক্র্যা-ক্র্যাবে ম্যালফয় কোনো রকমে বলল।

সে মারা গেছে, রন কর্কশ গলায় বলল। সব কিছু নিস্তব্ধ। কাশি আর নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। হঠাৎ একটি বিকট শব্দে ক্যাসলটি কেঁপে উঠল। একদল অশ্বারোহী কাঁচের মত স্বচ্ছ শরীর দ্রুত ওদের পাশ দিয়ে বের হয়ে গেল। ওদের হাতের নিচের মাথাগুলো ভয়ানক সহিংস চিৎকার করছে। হেডলেস হুটগুলো চারদিকে দেখতে দেখতে পার হওয়ার সময় হ্যারি কোনোক্রমে পায়ে ভর করে উঠে দাঁড়ালো। চারদিকে যুদ্ধ চলছে। ওই পালাতে থাকা ভূতগুলোর চিৎকার ছাড়াও হ্যারি আরো অনেকের চিৎকার শুনতে পেল। হ্যারির নিজের ভেতরও একটি ভয়ের ভাব তৈরি হল।

জিনি কোথায়? সে তীব্র কণ্ঠে বলল। তার তো রুম অব রিকোয়ারমেন্টে ফেরার কথা ছিল।

হায় হায়, তোমার কি মনে হয় যে ওভাবে আগুনে পোড়ার পরও জিনিসটা আর কাজ করবে? রন বলল। সেও উঠে দাঁড়ালো। হাতের তালু দিয়ে বুকের উপর ঘষতে ঘষতে ডানে বায়ে তাকালো। আমরা কি ছড়িয়ে পড়ে খুঁজব-?

না হারমিয়নও উঠে দাঁড়ালো। ম্যালফয় এবং গয়েল হতাশ হয়ে মেঝেতে বসে থাকল। ওদের দুজনের কারো কাছে কোনো যাদুদণ্ড নেই। আমরা একসঙ্গে থাকব। আমি বলছি আমরা একসঙ্গে যাব–হ্যারি তোমার হাতের সঙ্গে ওটা কি?

কি? ওহ, হা-

সে তার বাহু থেকে ডায়াডেমটি টেনে বের করে হাতে নিল। জিনিসটি এখনো গরম হয়ে আছে আর আগুনের আচে কালো হয়ে গেছে। কিন্তু আরো ভালো করে হ্যারি চেয়ে দেখল। জিনিসটার উপর ছোট ছোট করে লেখা আছে উইট বেয়ন্ড মেসারস ইজ ম্যানস গ্রেটেস্ট ট্রেজার

রক্তের মত কালো ভেজা বস্তু ডায়াডেমের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে। হঠাৎ হ্যারি লক্ষ করল যে জিনিসটি প্রচণ্ডভাবে কাঁপছে। এরপর জিনিসটি তার হাতের ভেতরই ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। ভেঙে যাওয়ার পরই হ্যারির মনে হল সে একটি আর্তনাদ শুনতে পেল। ক্যাসলের কোথাও থেকে নয়, যে জিনিসটি তার আঙুলগুলোর ভেতর ভেঙে গেছে সেখান থেকে।

এটি অবশ্যই ফিনফায়ারের শব্দ, হারমিয়ন টুকরোগুলোর দিকে তাকিয়ে বলল।

কি বললে?

ফিনফায়ার-কার্স এর ফায়ার-এ জিনিস হরকক্স ভেঙে ফেলতে পারে, কিন্তু আমি কখনো সাহস করিনি এ জিনিস ব্যবহারের। এ জিনিস ভয়ানক বিপদজনক। ক্র্যাবে এটা জানলে কিভাবে?

সে অবশ্যই ক্যারোসের কাছ থেকে শিখেছে, হ্যারি মুখ বিকৃত করে বলল।

সে এ ব্যাপারে কোনো মনোযোগই দেয়নি যখন ওরা বলছিল কীভাবে থামানো যায়, সত্যি, রন বলল। তার চুলের কিছু অংশ হারমিয়নের মত পুড়ে গেছে। মুখে কালো দাগ দেখা যাচ্ছে। যদি সে আমাদের সবাইকে হত্যা করতে চাইত, তাহলে তার মৃত্যুর জন্য দুঃখিত হতাম।

হারমিয়ন ফিসফিস করে বলল, কিন্তু তুমি কী বুঝতে পারছ না, যদি আমরা সাপটিকে ধরতে-

হঠাৎ করিডোরে সংঘর্ষ, চিৎকার চেঁচামেচি শুনে সে থেমে গেল। হ্যারি ঘুরে তাকালো এবং মনে হল বুকের ভেতরে কলজেটা থেমে গেছে। ডেথ-ইটাররা হোগার্টের ভেতরে ঢুকে গেছে। ফ্রেড এবং পার্সিকে দেখা গেল। ওরা মাথা ঢাকা এবং মুখোশ পরা ডেথ-ইটারদের সঙ্গে সামনাসামনি লড়ে যাচ্ছে।

 হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন দৌড়ে সামনে গেল ওদের সাহায্য করতে। বিদ্যুত গতিতে চারদিকে আলো ছুটছে এবং পারসির সঙ্গে লড়তে থাকা লোকটি দ্রুত পেছনে সরতে গেল, ঠিক তখনই তার মাথার ঢাকনাটি খুলে গেল। ওরা একটি চওড়া কপালের সাদা কালো চুলের লোককে দেখতে পেল

হ্যালো মিনিস্টার! পারসি চিৎকার করে বলল। থিকনেসের দিকে সরাসরি একটি অমঙ্গল কার্স ছুঁড়ে দিল। থিকনেসে হাত থেকে তার যাদুদণ্ডটি ফেলে দিল এবং তার পরনের গাউনের সামনের অংশ চেপে ধরল। বোঝা যাচ্ছে যে তার যন্ত্রণা হচ্ছে। আমি কি উল্লেখ করনি যে আমি পদত্যাগ করছি?

তুমি তামাশা করছ পারসি! ফ্রেড তার সঙ্গে লড়াই করতে থাকা ডেথ ইটারটিকে তিনটি স্টান করে উচ্চস্বরে বলল। থিকনেসে মাটিতে পড়ে গেল। তার

শরীরের উপর দিয়ে ছোট ছোট কাটার মত বের হল। অনেকটা সমুদ্রের পোকা মাকড়ের মত হয়ে গেল। ফ্রেড পারসির দিকে খুশির সঙ্গে তাকালো।

তুমি তামাশা করছ পারসি। আমি তোমাকে অনেকদিন তামাশা করতে দেখিনি

শূন্যে একটা বিস্ফোরণ হল। ওদের সকলের অবস্থান এক হয়ে গিয়েছিল। রন, হ্যারি, হারমিয়ন, ফ্রেড এবং পারসি। ডেথ-ইটার দুটো পায়ের কাছে পড়েছিল। চোখের পলকে দৃশ্যপট পাল্টে গেল। হ্যারির মনে হল সে উড়ে যাচ্ছে। সে শুধু কোনোক্রমে তার হাতের ছোট যাদুদণ্ডটি ধরে রাখতে পারল। হাত দিয়ে মাথাটাকে রক্ষা করতে চেষ্টা করল। সে শুনতে পেল তার সঙ্গীরা সবাই চিৎকার চেঁচামেচি করছে কেউ কিছু জানে না যে কী ঘটে গেল

তারপর যেন দুনিয়াটা আবার ফিরে এল চিৎকার আর্তনাদের মধ্যে। আধা অন্ধকারে হ্যারি দেখল সে করিডোরের কাছে ধ্বংসস্তূপের ভেতর অর্ধেক ডুবে আছে। করিডোরের উপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। ঠাণ্ডা বাতাস গায়ে লাগতেই হ্যারি বুঝতে পারল যে ক্যাসলের একাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। গালের উপর গরম অনুভব করে বুঝতে পারল যে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তখনই সে একটি প্রচণ্ড আর্তচীৎকারের শব্দ শুনতে পেল যে আর্তচীৎকার তাকে ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিল। এরপর এক তীব্র কান্নার শব্দ শুনলো যা কার্স থেকে নয় বা ধোয়া থেকে নয়। হ্যারি টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালো। সে চারদিকে চেয়ে দেখে বেশি আতঙ্কিত হল। এমন আতঙ্কিত সে সারা জীবনে কখনো হয়নি।

হারমিয়ন ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে টলতে টলতে উঠে এল। যে জায়গাটায় দেয়াল ভেঙে পড়েছে সেখানে তিনটি লাল মাথার তোক দেখা গেল। ওরা কাঠ এবং পাথরের স্তূপের উপর দিয়ে হোঁচট খেয়ে নড়েচড়ে আসতে থাকলে হ্যারি হার মিয়নের হাত ধরল ওকে তুলতে।

না-না-না!কেউ একজন চিৎকার করল। না, ফ্রেড, না!

পারসি তার ভাইকে ঝাঁকি দিচ্ছে। রন হাঁটু গেড়ে পাশে বসেছে। ফ্রেডের চোখ অপলক তাকিয়ে আছে। ভূতের তীক্ষ্ণ হাসি তার মুখে স্থায়ী হয়ে আছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *