১৫. গবলিনদের প্রতিশোধ

১৫. গবলিনদের প্রতিশোধ

খুব সকালে অন্য দুজনের ঘুম ভাঙার অগেই হ্যারি তাবু থেকে বের হল। সে পুরাতন একটি গাছ খুঁজে পেল। গাছটি আঁকাবাকা এবং বেশ ছড়ানো। এই গাছটির নিচেই সে ম্যাড-আই মুডির চোখ মাটিতে পুতে দিল। এবং জায়গাটিকে যাদুদণ্ড দিয়ে একটি ক্রস চিহ্নও দিয়ে রাখল। ম্যাড-আইর জন্য এটা খুব একটা ভাল জায়গা নয়। হ্যারি অনুভব করল যে ম্যাড-আই হয়তো ডোলোরেস আমব্রিজের দরোজায় থাকতেই বেশি পছন্দ করতো। হ্যারি তাবুতে ফিরে এলো। বাকী দুজনের ঘুম থেকে জেগে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে থাকল। এরপর ওরা কী করবে তা নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন।

হ্যারি এবং হারমিয়নের মত হল, এক জায়গায় দীর্ঘ সময় অবস্থান করা ঠিক নয়। রনও একমত হল। সেই সঙ্গে ওরা ঠিক করল যে প্রথম প্রয়োজন ওদের খাবার, আর সেটা বেকন স্যান্ডউইচ। হারমিয়ন প্রথম ওদের চারদিকে দেয়া এনচানমেন্ট তুলে নিল। রন এবং হ্যারি সব দাগ মুছে ফেলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। ওরা যে এখানে ক্যাম্প করেছিল সেটা যাতে বোঝা না যায়। এরপর ওরা ছোট একটি মার্কেটের কাছে ডিসাপেরেট করল।  

আরো একবার ওরা সাময়িকভাবে একটি গাছের নিচে তাবু পাতলো। চারপাশে আত্মরক্ষামূলক এনচানমেন্ট দিল। হ্যারি ঝুঁকি নিয়ে অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লা গায়ে চড়িয়ে অন্তত ক্ষুধা নিবারনের জন্য কিছু খাদ্যদ্রব্য আনতে বের হল। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই কাজটি করল। সে ছোট শহরটাতে মাত্র ঢুকতে শুরু করেছে ঠিক তখনই অস্বাভাবিক একটা শীতল ভাব লক্ষ করল। নেমে আসা একটি ঘন কুয়াশা আকাশ অন্ধকার করে ফেলল। হ্যারি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল।

এরপর, হ্যারি হাপাতে হাপাতে খালি হাতে ফিরে এল। মুখে শুধু বলল, ডেমেনটর!

শুনে রন বলল, কিন্তু তুমি একটি ভালো প্যাট্রোনাস বানাতে পারতে!

হ্যারি দম ফেলতে ফেলতে বলল, পারতাম না…..সম্ভব হতো না …বুঝতে চেষ্টা কর!

এই অপ্রত্যাশিত খবরে ওদের চেহারায় হতাশা ফুটে উঠতে দেখে হ্যারি লজ্জিত হল। এটি একটি দুঃস্বপ্নের মত অভিজ্ঞতা। ডেমেনটরগুলো দূরের ঘন কুয়াশার ভেতর থেকে সোজা বের হয়ে রুপ নিচ্ছিল। এক অস্বাভাবিক ঠাণ্ডা হ্যারির কলজেতে জমাট বাধিয়ে দিয়েছিল এবং ওদের চিৎকারে কান ফেটে যাচ্ছিল। হ্যারির মনে হয়েছিল নিজেকে সে রক্ষা করতে পারবে না। হ্যারি ওর সবটুকু মনোবল ব্যবহার করে নিজেকে সচল করে দৌড় দিয়ে ফিরে এসেছে। তখন চোখবিহীন ডেমেনটরগুলো নেমে আসছে মাগলবর্নদের মাঝে। মাগবর্নরা ওদেরকে দেখতে পাচ্ছে না।

কিন্তু যেখানেই তারা যাচ্ছে হতাশ করছে সবকিছু।

 তারমানে আমরা এখনো কোনো খাবার পাবো না।

হারমিয়ন ধমক দিয়ে বলল, চুপ করো রন! হ্যারির দিকে ফিরে বলল, হ্যারি, কী ঘটেছে? কেন তুমি মনে করছ যে তুমি প্যাট্রোনাস তৈরি করতে পারবে না? গতকালই তো তুমি ঠিকঠিকভাবে তৈরি করেছ?

আমি জানি না।

সে নিচু পারকিন্সের পুরোনো চেয়ারটিতে বসল। এখন নিজের কাছে আরো অপমানজনক মনে হচ্ছে। একটা ভয় কাজ করতে থাকল যে তার ভেতরই কিছু একটা গড়মিল হয়েছে। গতকালটাকে তার কাছে অনেক লম্বা অতীত বলে মনে হচ্ছে। আজ তার বয়স আবার সেই তের বছরের মত মনে হলো, সে সময় হোগার্ট এক্সপ্রেসে বিদ্ধস্ত হয়ে পড়ে থাকার মত।

রন একটা চেয়ারে লাথি দিল।

কি হলো আবার? হারমিয়ন মেজাজ গরম করে তাকালো। আমি ক্ষিদেয় মরে যাচ্ছি। সেই মরতে যাওয়ার সময় সামান্য একটু ব্যাঙের ছাতা মুখে পড়েছিল!

হ্যারি খোঁচা দিয়ে বলল, তাহলে তুমি নিজে ডেথ-ইটারদের সঙ্গে লড়াই কর গিয়ে।

আমি তা পারতাম, কিন্তু এখন আমার হাতে ব্যান্ডেজ বাধা, তুমি হয়তো সেটা লক্ষ করার সময় পাওনি।

সেটাই তো সুবিধাজনক।

তাতে কী হবে

হারমিয়ন হাত কপালে তুলে চাপড় দিল। হঠাৎ তার চঞ্চল হয়ে ওঠার কারণে রন এবং হ্যারি দুজনেই নিরব হয়ে গেল। হারমিয়ন বলল, অবশ্যই! হ্যারি লকেটটি আমার কাছে দাও! তাড়াতাড়ি দাও! সে অস্থির হয়ে বলল। হ্যারির মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখে সে আঙুলে টোকা দিয়ে তাগিদ দিল। হরক্রুক্স হ্যারি, তুমি এখনো ওটি গলায় পরে আছো!

হারমিয়ন হাত বাড়িয়ে রাখল এবং হ্যারি গলা থেকে মাথার উপর দিয়ে চেইনটি খুলল। লকেটটি তার নিজের স্পর্শ থেকে সরে যেতেই হ্যারির মনে হল তার অনেক হালকা লাগছে, নিজেকে মুক্ত লাগছে। সে আগে বুঝতে পারেনি যে তার একটা শীতলভাব তৈরি হয়েছিল। অথবা বুঝতে পারেনি যে পাকস্থলীতে একটি ভারি চাপ অনুভব হয়েছে। এগুলো উঠে যাওয়ার পর সে এসব অনুভব করলো।

এখন একটু বেটার? হারমিয়ন জানতে চাইল।

হ্যাঁ, অনেক ভালো!

হ্যারি, হারমিয়ন হামাগুড়ি দিয়ে ওর সামনে চলে এলো এবং এমনভাবে কথা বলল যেন অসুস্থ কোনো রুগির সামনে কথা বলছে, তোমার মনে হয়নি যে তুমি কিছুর ভেতর আটকে আছো? মনে হয়েছে?

কী, নাহ, হ্যারি অত্মপক্ষ সমর্থন করে বলল। এটি আমার গলায় থাকা অবস্থায় আমরা কী করেছি সবই আমার মনে আছে। আমার উপর অন্য কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকলে আমি কী করছি সেগুলো মনে থাকতো না। থাকতো? জিনি আমাকে বলেছিল অনেক সময় সে কিছু স্মরণ করতে পারতো না।

হুম, হারমিয়ন উচ্চারণ করল। সে লকেটটির দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিকাছে, হতে পারে আমাদের এই লকেটটি গলায় নেয়া উচিত নয়। আমরা এটিকে তাবুর ভেতর কোথাও রেখে দিতে পারি।

হ্যারি দৃঢ়কণ্ঠে বলল, আমরা হরক্রুক্সটি কোথাও ফেলে রাখতে পারি না। যদি এটি হারিয়ে যায়, যদি চুরি হয়ে যায়

ঠিকাছে, ঠিকাছে, হারমিয়ন লকেটটি গলায় শার্টের ভেতরে গুঁজে দিতে দিতে বলল, কিন্তু আমরা এটি পালা করে গলায় ঝুলিয়ে রাখব। যাতে কারো দীর্ঘ সময় গলায় ঝুলিয়ে রাখতে না হয়।

রন বিরক্তির সঙ্গে বলল, গ্রেট! এটার সমস্যার সমাধান হল।এখন আমরা কিছু খাবার পেতে পারি?

ঠিকাছে, কিন্তু আমাদের অন্য কোথাও যেতে হবে, হ্যারির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে হারমিয়ন বলল। ডেমেনটররা নেমে আসছে জেনে চুপচাপ বসে থাকার কোনো কারণ নেই।

অবশেষে ওরা রাত কাটানোর জন্য একটি নির্জন খামার বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে উঠল। সেখান থেকে ওরা কোনোক্রমে ডিম আর রুটির জোগাড় করতে পারল।

এটাকে তো চুরি বলা যায় না, তাই না? হারমিয়ন বলল। ওরা ডিম দিয়ে গবগব করে টোস্ট খাচ্ছে। যদি আমরা মুরগির খাঁচার নিচে কিছু পয়সা রেখে দেই?

রন মুখ ভরে খাবার নিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল, হারমিয়ন, তুমি অনেক বেশি ভাব, রিলাক্সে থাকো তো!

সত্যিই ওরা খাবারের পর রিলাক্স অনুভব করলো। রাতে হাসাহাসির মাঝে ওরা ডেমেনটরদের কথা ভুলে গেল। হ্যারি উফুল্ল বোধ করলো। ওর ভেতর প্রাণ সঞ্চার হল। রাতের পাহারা দেয়ার কাজ প্রথমে হ্যারি গ্রহণ করলো।

এবারই ওরা প্রথম বুঝতে পারল যে পেট ভরা থাকলে ভালো স্পিরিট পাওয়া যায়। খালি পেট থাকলে মেজাজ খিটমিট করে। হ্যারির কাছে বিষয়টি তেমন বিস্ময়কর নয়। কারণ ডাডলি পরিবারে থাকতে তাকে অনেক সময় না খেয়ে থাকতে হয়েছে। হারমিয়ন ভালভাবে কাটালেও অনেক সময়ে রাতগুলো সস্তা বেরি ফল আর বাসী বিস্কুট খেয়ে কাটিয়েছে। সে সময়ের তুলনায় হয়তো তার ধৈর্যও একটু কমেছে। কিন্তু রন তিন বেলা সুস্বাদু খাবার খেয়েছে। তার মা অথবা হোগার্টের ঘরের ভূতগুলো তাকে দেখাশোনা করেছে। সে কারণেই ক্ষুধা তাকে। দিকবিদিক শুন্য করে ফেলে, তার কোনো হুশ থাকে না। তাই একই সঙ্গে যখন খাবারের প্রয়োজন এবং হরক্রুক্স গলায় নেয়ার পালা এলো তখন সরাসরি বিরক্তি প্রকাশ করল।

এর পর কী হবে? এভাবেই সে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করল। তার নিজের কোনো ধারণা হল না, কিন্তু আশা করল যে হারমিয়ন এবং হ্যারি একটা কিছু প্ল্যান বের করে ফেলবে। সে বসে ভাবতে থাকল পরবর্তী খাবারের ব্যবস্থার কথা। হ্যারি এবং হারমিয়ন ঘণ্টার পর ঘন্টা কোনো সিন্ধান্ত পৌঁছানো ছাড়াই আলোচনা করল পরের হরক্রুক্সটি কোথায় হতে পারে এবং যেটি তারা ইতিমধ্যেই পেয়েছে সেটা কীভাবে ধ্বংস করবে। নতুন কোনো তথ্য বা বিষয় তাদের কাছে না থাকার কারণে তারা ঘুরে ফিরে একই আলোচনায় ফিরে আসতে থাকল।

ডাম্বলডোর হ্যারিকে বলেছিলেন যে, ভোল্ডেমর্ট এমন একটি জায়গায় হরক্রুক্সগুলি লুকিয়ে রেখেছে যে জায়গাটি তার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ওরা বারবার ভোল্ডেমর্টে যে জায়গাগুলোতে অবস্থান করেছে এবং ভ্রমন করেছে সে জায়গাগুলোর নাম উচ্চারণ করতে থাকল। যে, এতিমখানার কথা… সে জন্ম গ্রহণ করে এবং বেড়ে ওঠে, হোগার্ট … যেখানে শিক্ষা লাভ করেছে, বোরজিন এন্ড বার্কস… যেখানে স্কুল ছাড়ার পর কাজ করেছে, তারপর আলবেনিয়া… যেখানে সে নির্বাসন জীবনযাপন করেছে; এই এলাকাগুলোর দিকেই ওরা গুরুত্ব দিল।

রন বলল, চলো আলবেনিয়ায় যাই, পুরো দেশটি খুঁজে দেখতে এক বেলার বেশি সময় প্রয়োজন হওয়ার কথা নয়।

সেখানে কিছু পাওয়া যাবে না। সে নির্বাসনে যাবার আগেই পাঁচটি হরক্রুক্স তৈরি করেছিল। এবং ডাম্বলডোর নিশ্চিত যে ছয় নাম্বার হরক্রুক্সটি ছিল সাপ। হারমিয়ন বলল। আমরা জানি যে সাপটি আলবেনিয়ায় নেই। এটা সাধারণত ভল-

আমি তোমাকে নাম নিতে নিষেধ করেছি না?

ঠিকাছে, সাপটি সাধারণত ইউ-নো-হুর সঙ্গে থাকে, এবার খুশি তো?

পুরোপুরি না।

বোরজিন এন্ড বার্কসে সে কিছু লুকিয়ে রেখেছে বলে আমার মনে হয় না, হ্যারি বলল। সে বারবার এই যুক্তি দিতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু আবারো বলল ওদের নিরবতা ভঙ্গ করার জন্য। বোরজিন এও বাকর্সে ডার্ক বিষয়ে যথেষ্ট এক্সপার্ট রয়েছে। হরক্রুক্স থাকলে তারা সঙ্গে সঙ্গে ধরে ফেলতো।

রন হাল ছাড়ল। কিন্তু তারসঙ্গে যুক্তি-তর্কে যাওয়াটা দমন করে হ্যারি বলল, আমি এখনো মনে করি যে হোগার্টেই সে হয়তো কিছু লুকিয়ে রেখেছে।

হারমিয়ন দীর্ঘনিঃশ্বাস ছাড়ল।

কিন্তু ডাম্বলডোর তাহলে সেটা জানতে পারতো, হ্যারি!

হ্যারি তার থিওরির পক্ষে আবার যুক্তি দিতে থাকল।

ডাম্বলডোর আমার সামনে বলেছেন যে তিনি হোগার্ট সের সব গোপন বিষয় জানেন না। আমি তোমাকে বলছি, যদি একটি গোপন জায়গায় ভল

এই!

হ্যাঁ, ইউ-নো-হু! হ্যারি চিৎকার করে বলল। ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। যদি ইউ-নো-হুর কাছে কোনো গুরুত্বপূর্ণ জায়গা থাকে তাহলে সেটা হল হোগার্টস!

রন উপহাস করে বলল, ও কাম অন! তার স্কুল?

হ্যাঁ তার স্কুল! এটাই ছিল তার প্রথম নিজের বাড়ির মত জায়গা। এই জায়গাই তার কাছে সবকিছু, এমন কি জায়গাটি ছেড়ে যাবার পরও-

আমরা তো ইউ-নো-হু কে নিয়ে আলোচনা করছি তাই না? রন বলল। সে হরক্রুক্স চেইনটি নিজের গলায় পড়ল। হ্যারির মনে হল সেটি ওর কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে নিজের গলায় পরতে।

হারমিয়ন বলল, তুমি বলেছিলে যে হোগার্টস ছাড়ার পর ইউ-নো-হু ডাম্বলডোরের কাছে একটি চাকরি চেয়েছিল।

হ্যাঁ, ঠিক। হ্যারি বলল।

এবং ডাম্বলডোর ভেবেছিলেন সে হোগার্টসে ফিরে আসতে চায় কিছু একটা অনুসন্ধানের জন্য। সম্ভবত প্রতিষ্ঠাতার কোনো জিনিস–সেটা কী আরেকটি হরক্রুক্স?।

হ্যাঁ, হ্যারি বলল।

কিন্তু সে তো চাকরি পায়নি, তাই না? হারমিয়ন বলল। সুতরাং সে প্রতিষ্ঠাতার কোনো জিনিস হাতে পায়নি এবং স্কুলে কিছু লুকিয়ে রাখতে পারেনি।

হ্যারি পরাজয়ের সুরে বলল, ওকে, তাহলে হোগার্টের কথা ভুলে যাও।

সুতরাং অন্য কোনোদিকে না তাকিয়ে ওরা লন্ডনে গেল। অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লার নিচে থেকে এতিমখানায় তল্লাশি চালালো, যে এতিম খানায় ভোল্ডেমর্ট বড় হয়েছে। হারমিয়ন লুকিয়ে লাইব্রেরিতে ঢুকল এবং রেকর্ড পরিক্ষা করে জানতে পারল যে জায়গাটি বহু বছর আগে ধ্বংস হয়ে গেছে। ওরা জায়গাটি ঘুরে দেখল এবং সেখানে উঁচু অফিস কক্ষের সন্ধান পেল।

হারমিয়ন নিরুৎসাহের সঙ্গে বলল, আমরা এর ভিটা খুড়ে দেখতে পারি।

 সে এখানে হরক্রুক্স লুকিয়ে রাখবে না। হ্যারি বলল। হ্যারিই শুধু জানে, এই এতিমখানা থেকেই ভোল্ডেমর্ট পালাতে দৃঢ়সংকল্প ছিল। সে তার প্রাণের একটি জিনিস কখনোই এখানে লুকিয়ে রাখতে পারে না। ডাম্বলডোর হ্যারিকে জানিয়েছেন যে ভোল্ডেমর্ট লুকিয়ে থাকার জন্য একটি চমৎকার জায়গা অথবা রহস্যময় জায়গা চাইত। লন্ডনের এই ঘিঞ্জি জায়গাটি যা হোগার্টসের থেকে, মিনিস্ট্রি অথবা গ্রিনগোটের ভবনের চেয়ে অনেক আলাদা। গ্রিনগোট হল সোনালী দরোজা এবং মার্বেলের মেঝের একটি উইজার্ডিং ব্যাঙ্ক।

কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই ওরা গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়াতে থাকল। নিরাপত্তার জন্য রাতে বিভিন্ন জায়গায় তাবু স্থাপন করল। প্রতি সকালেই অন্যস্থানে যাওয়ার সময় ওরা ওদের সেখানে থাকার চিহ্নগুলো মুছে বা নষ্ট করে ফেলত। তারপর আবার অন্য একটি নির্জন জায়গার উদ্দেশে ছেড়ে যেত। অ্যাপারিশনের মাধ্যমে ওরা আরো ঘন গাছগাছালি, আরো দুর্গম পাথরের খাঁজে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্য। এলাকায় এবং কাটা ঝোপঅলা পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা গাড়ল। একবার একটি লেকের পাশে পাথরের উপর আশ্রয় নিল। প্রতি ১২ ঘণ্টার মত সময় পরপর নিজেদের মধ্যে হরক্রুক্স পালাবদল করলো। যেন একটি ধীর গতির বালিশ বদলের খেলা। মিউজিক থামার মত যখন তীব্র তাপ অনুভব করছে তখন তারা আরেকজনের হাতে লকেটটি দিচ্ছে।

হ্যারির স্কারটিতে আবার জ্বলাপোড়া শুরু হল। হ্যারি লক্ষ করেছে হরক্রুক্স গলায় নেয়ার সময়টাতেই প্রায়ই ঘটনাটা ঘটছে। চেষ্টা করেও মাঝে মাঝেই ওর যন্ত্রণার বিষয়টি লুকিয়ে রাখতে পারে না।

কী ব্যাপার, কী দেখলে? হ্যারির মুখে যন্ত্রণার ছাপ দেখে রন জানতে চাইল।

প্রত্যেকবারের মত সে এবারো বিড়বিড় করে বলল, একটি মুখ, সেই একই মুখ। সেই চোরটির মুখ যে গ্রেগোরোভিচের কাছে চুরি করতে গিয়েছিল।

রন ঘুরে দাঁড়ালো। নিজের হতাশ হওয়াটা লুকাতে চেষ্টা করলো না। হ্যারি জানে রন আশা করেছিল তার পরিবারের খবর শুনবে, অথবা অর্ডার অব দ্য ফিনিক্সের খবর শুনবে। কিন্তু হ্যারি তো আর টেলিভিশনের এন্টেনা নয় যে ইচ্ছেমত দেখবে; সে শুধু ভল্টেমর্টের চিন্তার ভেতরই ঢুকে যায়। সে নিজে যা খুশি তা দেখতে পারে না। বোঝা যায়, ভোল্ডেমর্ট সেই অল্প বয়সের অচেনা ছেলেটিকে নিয়ে যারপরনাই মাথা ঘামাচ্ছে। হ্যারি নিশ্চিত যে ছেলেটির নাম এবং পরিচিতি সম্পর্কে ভোল্ডেমর্ট হ্যারির চেয়ে বেশি কিছু জানে না। হ্যারির জ্বালাপোড়া অব্যাহতভাবে চলতে থাকলে সে দেখতে পেল হাস্যজ্জ্বল সোনালী চুলের ছেলেটি হ্যারির মেমোরির ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছে। হ্যারি নিজের যন্ত্রণাকে জোর করে দমন করে রাখল। কারণ বাকী দুজন ছেলেটির কথা বলায় অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। ওদেরকে দোষ দেয়া যায় না, ওরা হরক্রুক্সের জন্য মরিয়া হয়ে আছে।

দিন পার হয়ে সপ্তাহে গড়ালো। হ্যারির সন্দেহ হতে থাকল যে রন এবং হার মিয়ন তার কাছ থেকে লুকিয়ে অথবা তার সম্পর্কে কিছু আলোচনা শুরু করেছে। বেশ কয়েকবার হ্যারি তাঁবুর ভেতর প্রবেশ করার সঙ্গেসঙ্গে হঠাৎ করে ওরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা বন্ধ করে দিয়েছে। দুবার অকস্মাৎ ওদের মুখোমুখি হয়ে দেখেছে ওরা একজনের মাথা আরেকজনের কাছাকাছি নিয়ে কানাকানি করে কথা বলছে। হ্যারি কাছে আসতেই ওরা কথা বন্ধ করে ব্যস্ত হয়ে কাঠ এবং পানি সংগ্রহের কাজে মন দিয়েছে।

হ্যারি ভেবে উঠতে পারে না যে, ওরা তার সঙ্গে এমনিতেই নিরর্থক ঘুরে বেড়ানোর জন্য আসতে রাজি হয়েছে কিনা। কারণ ওরা চিন্তা করেছে যে হ্যারির একটি প্ল্যান আছে এবং নির্দিষ্ট সময় ওরা সে প্ল্যানটা জেনে নেবে। রন তার মেজাজ খারাপের ভাবটা লুকানোর কোনো চেষ্টাই করল না। হ্যারি ভয় পেতে থাকল যে হারমিয়নও তার নেতৃত্ব নিয়ে হতাশ না হয়ে পড়ে। এই অবস্থার ভেতর হ্যারি পরবর্তী হরক্রুক্স খোজার জায়গার কথা চিন্তা করল। তার বারবার ঘুরে ফিরে

হোগার্টসের কথাই মনে হল। অন্য দুজনের কারো এভাবে চিন্তা আসছে না। হ্যারি বিষয়টি মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল।

গ্রামীণ এলাকা দিয়ে যাবার সময় দেখা গেল হেমন্ত নেমে এসেছে। গাছের পাতায় মাটি ঢেকে থাকা একটি জায়গায় ওরা তাবু পাতলো। ডেমেনটরদের পাশাপাশি প্রাকৃতিক কুয়াশা ডেমেনটরদের কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয়েছে। সেই সঙ্গে বাতাস আর বৃষ্টি সমস্যা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। হারমিয়ন ধীরে ধীরে খাবার যোগ্য মাশরুমগুলো খুজে পেয়েছে। কিন্তু এতে ওদের নির্জন বাস বা অন্য লোকের সঙ্গহীনতার ঘাটতি পুরণ হচ্ছে না। অথবা ভন্ডেমর্টের বিরুদ্ধে লড়াই-এর কথা ভুলে থাকছে না।

এক রাতে ওয়েলসে একটি নদীর পারে তাবুর নিচে বসে রন বলল, আমার মা, হালকা বাতাস থেকে খুব ভালো খাবার তৈরি করতে পারে।

প্লেটের উপর থেকে একটি মাছের টুকরো কাটা দিয়ে তুলে মুখে দিল। হ্যারির চোখ এমনিতেই রনের গলার দিকে চলে গেল। সে দেখল রনের গলায় হরক্রুক্সটি চকচক করছে। সে নিজের ইচ্ছাকে দমন করলো রনের সঙ্গে লকেটটি নিয়ে ঝগড়া করা থেকে। হ্যারি জানে লকেটটি গলা থেকে খোলার সময় রনের মেজাজ কিছুটা ভালো হবে।

হারমিয়ন বলে বসল, তোমার মা শুধুমাত্র বাতাস থেকে খাবার তৈরি করতে পারেন না। কেউ তা পারবে না। এলিমেন্টাল ট্রান্সফিগারের গ্যাম্পস আইনে যে পাঁচটি ব্যতিক্রম আছে তারমধ্যে খাবার একটি

আহ, তুমি ইংরেজি বোঝো না? রন দাঁতের ফাঁক থেকে মাছের কাঁটা বের করতে করতে বলল।

কোনো কিছু ছাড়া তুমি এমনিতেই খাবার তৈরি করতে পারো না। খাবার কোথায় আছে জানলে তুমি সামন করতে পারো, তুমি খাবারকে রুপান্তর করতে পারো বা কম খাবারকে তুমি বেশি করতে পারো।

ঠিক আছে, এ নিয়ে আর কথা বলো না, বিরক্তিকর, রন বলল।

হ্যারি মাছ ধরে এনেছে আর আমি রান্না করেছি। আমি লক্ষ করছি, খাবার বানাবার বিষয়টি সব সময় আমাকেই করতে হয়। কারণ আমি একটি মেয়ে!

রন পাল্টা বলল, না, এর কারণ হল তুমি সবচেয়ে ভালো ম্যাজিক করতে পারো।

হারমিয়ন লাফিয়ে উঠল এবং এক খণ্ড খাবার তার প্লেট থেকে নিচে পড়ে গেল।

আগামীকাল তুমি রান্না করবে রন। তুমি সব মসল্লাদি যোগাড় করে চার্মের মাধ্যমে খাওয়া যায় এমন খাবার তৈরি করবে। আমি মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকব, দেখবে কি খাবার তুমি

এই চুপ! চুপ! হ্যারি লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে দু হাত প্রসারিত করে বলল। এখন থামো!

হারমিয়ন রেগে গেল।

তুমি কী করে ওর পক্ষ নিলে, ও কখনো রান্না

হারমিয়ন চুপ করো! আমি কারো শব্দ শুনতে পাচ্ছি!

হ্যারি মন দিয়ে বাইরের শব্দ শুনতে চেষ্টা করল। তখনো ওদের কথা না বলার জন্য তার হাত দুটো উপরে তুলে আছে। একটু পরেই ওদের তাবুর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর পাড়ে কথা বলার শব্দ শুনতে পেল। হ্যারি ক্লিকোস্কোপের দিকে ফিরে তাকালো। সেটি কোনো নড়াচড়া করছে না।

তুমি তো আমাদের রক্ষার জন্য মাফলিয়াটো চার্ম ব্যবহার করেছ তাই না? সে হারমিয়নের উদ্দেশে ফিস ফিস করে বলল।

হারমিয়নও ফিসফিস করে উত্তর দিল, আমি সব ব্যবস্থাই করেছি! মাফ লিয়াটো, রিপেলিং এবং ডিসইস্যুশনমেন্ট সবটাই। ওরা আমাদের দেখতে বা আমাদের কথা শুনতে পাবে না। ওরা যারাই হোক।

গাছের পাতা মাড়িয়ে যাওয়ার মরমর চরচর শব্দ শোনা গেল। গাছের ডালের শব্দ শোনা গেল। পানির ভেতর দিয়ে উঠে আসার শব্দ পাওয়া গেল। যেখানে ওদের তাবুর পাশে নদী বাকা হয়ে গেছে তার ঢালুতে শব্দ হচ্ছে। এই অন্ধকার জায়গায় যেখানে ওরা নিজেদের রক্ষার জন্য এনচানমেন্ট ব্যবহার করেছে তা মাগলবর্ন এবং সাধারণ যাদুকরদের কাছ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য যথেষ্ট। আর যদি ওরা ডেথ-ইটার হয়ে থাকে তাহলেও ওদের চার্মগুলো যথেষ্ট কিনা সেটা এবার পরিক্ষা হয়ে যাবে।

দলটি নদীর কিনারায় আরো কাছে আসতে থাকলে তাদের কথা বলার শব্দ আরো স্পষ্ট হতে থাকল, কিন্তু তাদের আলাপচারিতা রহস্যজনক মনে হচ্ছে না। হ্যারি হিসাব করল যে, ওদের কাছ থেকে লোকগুলো ২০ ফুটের মত দূরে আছে। কিন্তু নদীর পানির শব্দের কারণে একেবারে নিশ্চিত হতে পারল না। হারমিয়ন ছো মেরে তার ব্যাগটি তুলে নিল এবং ব্যাগের ভেতর হাত দিয়ে কিছু খুঁজতে থাকল। একটু পরেই সে ব্যাগের ভেতর থেকে তিনটি এক্সটেনডাবল ইয়ার বের করলো। একটি রনের দিকে এবং একটি হ্যারির দিকে ছুঁড়ে দিল। ওরা সেগুলো তুলে নিয়ে দ্রুত তারের এক মাথা নিজেদের কানে এবং অন্য মাথা তাবুর বাইরের দিকে ঠেলে দিল।

সঙ্গে সঙ্গে হ্যারি একজন পুরুষের ক্লান্ত কণ্ঠস্বর শুনতে পেল।

এখানে কিছু স্যালমন মাছ পাওয়ার কথা, তোমার কি মনে হয় এখনো মাছের সিজন আসেনি? অ্যাকসিও স্যালমন!।

পানি ছেটানোর কয়েকটি শব্দ হল এবং তারপরই মাছের লাফালাফির শব্দ পাওয়া গেল। কেউ একজন আনন্দের শব্দ করলো। হ্যারি ওর এক্সটেনডাবল ইয়ারের তারটি আরো যত্ন করে কানের ভেতরের দিকে ঠেলে দিল। নদীর কুলকুল ধ্বনি ছাপিয়ে একটি কণ্ঠের কথা শুনতে পেল। কিন্তু লক্ষ করল তারা ইংরেজিতে কথা বলছে না অথবা এমন কোনো মানুষের ভাষায় কথা বলছে না, যা সে আগে শুনেছে। দ্রুত অবিরাম কথা বলে চলেছে। মনে হল দুজনের মধ্যে কথা চলছে। তাদের একজনের গলার স্বর একটু নিচু এবং ধীরে কথা বলে।

ক্যানভাসের অন্য পাশে একটি আলো উঠল। তাবু এবং আলোর মাঝ দিয়ে বড় একটি ছায়া পার হয়ে গেল। রান্না করা স্যালমন মাছের সুগন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দিল। টুংটাং শব্দ করে কাটা চামচগুলো প্লেটের উপর এসে পড়ল। তখন প্রথম লোকটির গলা শুনতে পেল।

এখানে, গ্রিপহুক, গরনুক।

হারমিয়ন হ্যারির দিকে মুখ করে বলল, গবলিনরা!

 হ্যারি মাথা নেড়ে সায় দিল।

 ইংরেজিতে দুজন গবলিন একে অপরকে বলল, ধন্যবাদ।

তাহলে তোমরা তিনজন পালিয়ে বেড়াচ্ছ, কত দিন ধরে? কোমল কণ্ঠে উল্লসিত একজন বলল। হ্যারির কাছে অস্পষ্টভাবে গলাটি পরিচিত মনে হল। সে মোটা পেটের হাস্যজ্জ্বল একটি মুখের দৃশ্য মনে করতে পারল।

ছয় সপ্তাহ…অথবা সাত, আমি ভুলে গেছি, ক্লান্ত লোকটি বলল। কয়েক দিন পরে গ্রিপহুকের দেখা পেলাম, তার অল্প পরেই গরনুক যোগ দিল। সঙ্গী পেয়ে ভালই লেগেছে। একটু সময় কথার বিরতি, সবাই চুপ হয়ে থাকল। সে সময় চামচ প্লেটগুলো ওরা নিচে নামিয়ে রাখল। তোমার পালিয়ে আসার কারণ কি টেড? লোকটি বলতে শুরু করল।

আমি জানতাম যে ওরা আমার জন্য আসছে। কোমল গলার লোকটি বলল। হ্যারি হঠাৎ ধরে ফেলল এটা কার গলা: টঙ্কসের বাবা। তিনি আবার বললেন, যখন শুনেছি ডেথ-ইটাররা গত সপ্তাহে এসেছিল। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম সরে আসাই ভালো। নীতিগত কারণেই মাগলবর্ন হিসাবে রেজিস্টার হইনি। তখনই বুঝেছি শুধু সময়ের ব্যাপার। আমি জানতাম শেষ পর্যন্ত আমাকে সরে যেতে হবে। আমার স্ত্রীর কোনো সমস্যা নেই। সে একজন পিওর ব্লাড। এরপর আমার ডিনের সঙ্গে দেখা, কয়েক দিন হল তাই না, সান?

হ্যাঁ, অন্য কণ্ঠটি বলল। হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন তিনজন মুখ চাওয়াচাওয়ি করল। চুপচাপ কিন্তু সবাই উত্তেজিত। ওরা নিশ্চিত যে কথা বলা কণ্ঠস্বরটি ডিন থমাসের। ডিন থমাস ওদের গ্রিফিনডোরের সহপাঠী।

প্রথম লোকটি জানতে চাইল, তুমি মাগলবর্ন, তাই না?

ডিন বলল, নিশ্চিত না। আমি শিশু থাকতে আমার বাবা আমার মাকে ছেড়ে গিয়েছেন। তিনি একজন যাদুকর কিনা সে বিষয়ে পরিক্ষা করা হয়নি।

সবাই কিছুক্ষণ নিরব রইল। শুধু কিছু চিবানোর শব্দ হতে থাকল। তারপর টেড আবার কথা বলতে শুরু করলো।

সত্যি কথা বলতে কি ডার্ক, তোমার সঙ্গে দেখা হওয়াতে আমি অবাক হয়েছি। খুশি হয়েছি, কিন্তু অবাক হয়েছি। আমার জানা ছিল তুমি ধরা পড়েছ।

ডার্ক বলল, ধরা পড়েছিলাম, আমাকে আজকাবানে নিয়ে যাবার অর্ধেক পথে ডাওলিশকে স্টান করলে তার ব্রুম ভেঙে অর্ধেক হয়ে যায়। তুমি চিন্তা করতে পারবে না বিষয়টি কত সহজ ছিল। আমার মনে হয় না সে এখনো সম্পূর্ণ ঠিক হয়েছে। একটা ধাক্কা খেয়েছিল।

মনে হয় অন্য কোনো যাদুকরও একই সাথে যাদু করেছিল। বিষয়টি এমন হয়ে থাকলে, আর আমি যদি জানতাম কে এই কাজটি করেছে সেই যাদুকরের সঙ্গে আমি হাত মেলাতাম। সম্ভবত সেই আমার জীবন বাঁচিয়েছে।

আবার নিরবতা নেমে এল। এই ফাঁকে আগুন জ্বলার এবং নদীর জলের কল কল শব্দ পাওয়া গেল। তারপর আবার টেড বলল, তোমরা দুজন কোন দলে ভিড়েছ? আমার ধারণা গবলিনরা সবাই ইউ-নো-হুর পক্ষে।

গবলিনদের মধ্যে উঁচু গলার লোকটি বলল, তোমার ধারণা ভুল। আমরা কোনো দলের না। এটা যাদুকরদের মধ্যে যুদ্ধ।

তাহলে তোমরা লুকাচ্ছ কেন?

আমার মনে হয়েছে এটাই বুদ্ধিমানের কাজ, গম্ভীর গলার গবলিন বলল। যখন দেখলাম আমার সামান্য অনুরোধ প্রত্যাখ্যান হল, তখন ভাবলাম আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা হুমকীর সম্মুখীন।

টেড জানতে চাইল, ওরা তোমাকে কী করতে বলেছে?

এমন কাজ যা আমার বংশের জন্য অপমানজনক, গবলিন বলল। আমি তো আর ঘরের ভুত না।

তোমার কী ব্যাপার গ্রিপহুক?

একই কারণ, উচ্চকণ্ঠের গবলিন বলল! গ্রিনগোটরা এখন আর শুধুমাত্র আমাদের বংশের নিয়ন্ত্রণে নেই। আমি কোনো উইজার্ডিং মাস্টারকে মানি না।

সে গবলেডগুক ভাষায় কিছু একটা সঙ্গে যোগ করে বলল। তা শুনে গোরক হেসে দিল।

হাসির কথাটা কি? ডিন জানতে চাইল।

ডার্ক উত্তরে বলল, সে বলছে,কিছু বিষয় আছে যা উইজার্ডরাও মানে না।

খানিক সময় সবাই বিরতি নিল।

ডিন বলল, আমি বুঝতে পারলাম না।

গ্রিপহুক ইংরেজিতে বলল, আমি চলে আসার আগে ছোট একটি প্রতিশোধ নিয়েছি।

তাহলে গবলিন, একজন ভালো মানুষ বলতে হয়, নিজেকে শুধরে নিয়ে টেড তাড়াতাড়ি বলল। একটি ডেথ-ইটারকে পুরাতন সিকিউরিটি ভল্টে আটকে ফেলতে পারোনি?

যদি তাই করতাম তাহলে তলোয়ারও ওটা ভেঙ্গে ওকে উদ্ধার করতে পারত, গ্রিপহুক উত্তরে বলল। গরনুক হাসল এবং ডার্ক চুকচুক শব্দ করল।

টেড বলল, ডিন এবং আমি এখানে কিছু মিস করছি।

সেভেরাস স্নেইপও তাই, যদিও সে এর কিছুই জানে না। গ্রিপহুক বলল। দুজন গবলিন অট্টহাসি দিল।

তাবুর ভেতরে উত্তেজনায় হ্যারির নিঃশ্বাস আরো ঘন হয়ে উঠল। হারমিয়ন এবং হ্যারি একে অপরের দিকে তাকালো। যত স্পষ্ট করে সম্ভব ওদের কথা শুনতে চেষ্টা করল।

ডার্ক বলতে থাকল, তুমি ওই বিষয়টি কিছু শোননি টেড? গ্রিফিনডোরের অল্পবয়সী ছেলেপেলেরা হোগার্টসে স্নেইপের অফিস থেকে তলোয়ার চুরি করতে চেষ্টা করেছিল?

হ্যারির শরীরের ভেতর একটি বিদ্যুত খেলে গেল। শরীরের সবগুলো নার্ভ শিরশির করে উঠল।

টেড বলল, না-তো, এরকম খবর দ্য প্রফেট-এ ও পড়িনি। কথাটা কি সত্যি বলে মনে হয়।

আমার মনে হয় সত্যি, গ্রিপহুক আমাকে বলেছে, সে কথাটা শুনেছে, ব্যাংকে কাজ করে বিল উইসলির কাছ থেকে, যারা তলোয়ারটি চুরি করতে গিয়েছিল ওই ছেলেপেলেদের মধ্যে একজন হল বিলের ছোট বোন।

হ্যারি হারমিয়ন এবং রনের দিকে ফিরে তাকালো। দুজনই ওদের কানে দেয়া এক্সটেনডাবল ইয়ারটি শক্ত করে ধরে আছে।

মেয়েটি এবং তার দুজন বন্ধু স্নেইপের অফিসে প্রবেশ করে এবং তলোয়ার রাখা গ্লাস কেস ভেঙে ফেলে। ওরা যখন সেটি নামিয়ে নিয়ে আসছে তখন স্নেইপ ওদেরকে ধরে ফেলে।

আহ! গড ব্লেস দেম, টেড বলল। ওরা কী ভেবেছিল যে তলোয়ারটি ইউ নো-হুঁ অথবা খোদ স্নেইপের উপর ব্যবহার করতে পারবে?

ডার্ক বলল, ওরা সেটা নিয়ে যাই করতে চেয়ে থাকুক না কেন, স্নেইপ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে ওটি ওখানে আর রাখা ঠিক হবে না। কয়েকদিন পর, আমার ধারণা ইউ-নো-হুর কথা মত সে ওটিকে লন্ডনে পাঠিয়ে দিয়েছে গ্রিনগোটে রাখার জন্য।

গবলিনরা আবার হাসতে শুরু করল।

টেড বলল, আমি এরমধ্যে হাসির কিছু দেখতে পাচ্ছি না।

গ্রিপহুক বলল, এটি একটি নকল কপি।

গ্রিফিনডোরের তলোয়ার!

হ্যাঁ, এটি একটি কপি মাত্র। কিন্তু বড় চমৎকার কপি, এটা ঠিক। কিন্তু এটি উইজার্ডদের তৈরি। আসলটি বানিয়েছিল কয়েক শত বছর আগে গবলিনরাই। এবং গবলিনদের সম্পদ হিসাবেই তা ছিল। গ্রিফিনডোরের আসল তলোয়ারটি আর যেখানেই থাকুক, গ্রিনগোটের ব্যাংকে নেই।

আচ্ছা, এবার বুঝলাম, টেড বলল। আমি ধরে নিতে পারি যে তোমরা ডেথ-ইটারদের কথাটা জানাও নি।

তাদেরকে এ তথ্য প্রদানের কোনো কারণ নেই, গ্রিপহুক দৃঢ়তার সঙ্গে বলল। এবার গরনুক এবং ডার্কের সঙ্গে টেডও হেসে উঠল।

তাবুর ভেতরে হ্যারি চোখ বন্ধ করল। হ্যারির কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা করল। এক মিনিট পার হতেই হ্যারির মনে হল দশ মিনিট পার হয়ে গেছে। ডিনের সাহায্য পাওয়া যেতে পারে। হ্যারি আনন্দের সঙ্গে মনে করতে পারল, ডিনও জিনির সাবেক বয়ফ্রেন্ড।

জিনি এবং অন্যদের কী হয়েছিল? যে চুরি করতে চেয়েছিল তার?

ওহ, ওদেরকে নিষ্ঠুরভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে, গ্রিপহুক বলল।

টেড তাড়াতাড়ি জানতে চাইল, ওরা ঠিক আছে তো? আমি বলতে চাচ্ছি উইসলি পরিবারের সন্তানরা এখনও কি অক্ষত?

গ্রিপহুক বলল, আমি যতটা জানি ওরা খুব বড় ধরণের আঘাত পায়নি।

টেড বলল, ওদের ভাগ্য ভাল। স্নেইপের যা রেকর্ড সে হিসাবে তারা বেঁচে আছে এটা একটা আনন্দের খবর।

ডার্ক বলল, তোমার কি মনে হয় টেড, তুমি কী বিশ্বাস করো যে স্নেইপ ডাম্বলডোরকে হত্যা করেছে?

টেড বলল, অবশ্যই আমি মনে করি। তুমি তো বলতে পারবে না যে এরমধ্যে পটারের কোনো হাত আছে।

ডার্ক বিড়বিড় করে বলল, এখন কোনো কিছু বিশ্বাস করা কঠিন।

ডিন বলল, আমি হ্যারিপটারকে চিনি। আমি মনে করি সে একটা প্রকৃত মানুষ,,একটা বিশ্বাস করার মত মানুষ–যেটাই তুমি বল না কেন।

ডার্ক বলল, হ্যাঁ, প্রচুর লোক তাই মনে করে যে, সে ওরকম একটি ছেলে। আমি নিজেও। কিন্তু সে এখন কোথায়? কোনোকিছু খুঁজে বেড়াচ্ছে। তুমি মনে রেখ, এমন কিছু যদি সে জানে যা আমরা জানিনা, অথবা তার যদি কোনো বিপদ হয়–তাহলে সে লুকিয়ে না থেকে প্রতিরোধ করতে বেরিয়ে আসবেই। তুমি জানো প্রফেট পত্রিকা তার বিরুদ্ধে একটি রিপোর্ট করেছে।

দ্য প্রফেট? টেড উপহাস করে বলল। যদি এখনো তুমি ওই আবর্জনা পড় তাহলে সব মিথ্যা তোমাকে বিশ্বাস করতে হবে। ডার্ক, যদি আসল কথা জানতে চাও তাহলে দি কুইবলার পড়।

এরপর হঠাৎ করে ওয়াক ওয়াক শব্দ পাওয়া গেল। শব্দ করে গলায় আটকে যাওয়া একটি মাছের কাঁটা ডার্ক গিলে ফেলল। তারপর সে কোনোক্রমে বলল, দ্য কুইবলার, জেনো লাভগুডের ওই নির্বোধ নেকড়া?

টেড বলল, এখন আর ওটা নিবোধ নয়, তুমি দেখলেই সেটা বুঝবে। যে সব। বিষয় প্রফেট গায়ে মাখছে না সে বিষয়গুলো জেনো তুলে আনছেন। গত ইস্যুতে ক্রাম্পল হর্ন স্ক্যোকের ব্যাপারে একটি কথাও বলা হয়নি। কয়দিন তারা তাকে দূরে সরিয়ে রাখবে আমি জানি না। কিন্তু জোনো তার প্রত্যেক ইস্যুর প্রথম পাতায় বলেছেন, যেসব ইউজার্ডরা ইউ-নো-হুর বিরুদ্ধে এবং যারা হ্যারিকে সাহায্য করতে প্রস্তুত তাদের সংখ্যা এখন বেশি।

ডার্ক বলল, যে ছেলেটির মুখ দুনিয়ার কোথাও দেখা যাচ্ছে না তাকে সাহায্য করা কঠিন ব্যাপার।

টেড বলল, শোনো, তারা এখনো তাকে ধরতে পারেনি সেটাই একটা বড় ব্যাপার। আমি তার কাছ থেকে খুশিমনে টিপস নিতে রাজি আছি। আমরাও তো এখন মুক্ত থাকতে চেষ্টা করে যাচ্ছি, তাই না?

ডার্ক গম্ভীরভাবে বলল, হ্যাঁ, তোমার কথার যুক্তি আছে। গোটা মিনিস্ট্রি এবং সব ইনফরমার এখন হন্যে হয়ে তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমি তো মনে করেছিলাম ইতিমধ্যেই সে ধরা পড়েছে। দেখ, তাকে এরমধ্যে ধরে মেরে ফেলে গোপন করা হয়েছে কি না কে জানে।

আহ, এমন কথা বলো না ডার্ক, বিড়বিড় করে টেড বলল।

বেশ খানিকক্ষণ কোনো কথাবার্তা শোনা গেল না। শুধু কাটা চামচ এবং নাইফের টুংটাং শব্দ হল। পরে যখন আবার তারা কথা বলতে শুরু করল তখন আলোচনা হল রাতে তারা নদীর পারেই ঘুমাবে, নাকি পাহাড়ের ঢালুতে গাছের নিচে ফিরে যাবে তা নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিল গাছের নিচে ওরা বেশ আচ্ছাদিত থাকবে। তাই আগুন নিভিয়ে, জিনিসপত্র গুছিয়ে ওরা ফিরে গেল। ওদের কথা বলা শব্দ ধীরে ধীরে দূরে চলে গেল।

হ্যারি, রন এবং হারমিয়ন ওদের কান থেকে এক্সটেনডাবল ইয়ারের তার খুলে গুটিয়ে ফেলল। হ্যারি নিজেই চুপ থাকার প্রয়োজন অনুভব করেছিল এবং দেখেছিল দীর্ঘক্ষণ কান পেতে থাকা ক্রমেই মুশকিল হয়ে পড়ছে। কিন্তু এখন সে নিজেই কথা বলতে পারছে না। সে শুধু বলল, জিনি–তলোয়ারটি-

হারমিয়ন বলল, আমি জানি!

হারমিয়ন সামনে হাত বাড়িয়ে তার ছোট ব্যাগটি নিল এবং হাত পুরোপুরি ভেতরে প্রবেশ করিয়ে দিল।

এখানে….আমরা….আমরা… সে দাঁতে দাঁত চেপে বলল। সে কিছু একটা টেনে বের করতে চেষ্টা করল যা ব্যাগের অনেক ভেতরে ছিল বোঝা গেল। ধীরে ধীরে একটি পিকচার ফ্রেম চোখের সামনে বের হতে থাকল। হ্যারি দ্রত সামনে। এগিয়ে গেল ওকে সাহায্য করার জন্য। ওরা পাইনিয়াস নাইজেলাসের একটি ফাঁকা পোট্রেইট বের করে আনল। হারমিয়ন তার যাদুদণ্ডটি সেটার দিকে ধরে রাখল যে কোনো সময় স্পেল ব্যবহার করার জন্য।

ওরা তাবুর সঙ্গে ঠেক দিয়ে পোট্রেইটটা রাখল। হারমিয়ন ঘনঘন নিশ্বাস ছেড়ে বলল, ডাম্বলডোরের অফিসে থাকতে যদি কেউ নকল তলোয়ারটা রেখে আসলটা সরিয়ে নিয়ে থাকে তাহলে পাইনিয়াস নাইজেলাস সেটা দেখে থাকতে পারে। তার ছবিটি পাশেই টাঙানো ছিল।

অবশ্য সে যদি ঘুমিয়ে না থাকে, হ্যারি বলল। কিন্তু সে তখনও দম আটকে রাখছে। হারমিয়ন ফাঁকা পোট্রেইটের সামনে হাটু গেড়ে বসে ক্যানভাসের মাঝখানটার দিকে যাদুদণ্ড ধরে থাকলো। সে গলা পরিস্কার করে বলল, হেই পাইনিয়াস? পাইনিয়াস নাজেলাস?

কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না।

পাইনিয়াস নাইজেলাস? হারমিয়ন আবার ডাকল। প্রফেসর ব্ল্যাক? প্লিজ, আমরা কি আপনার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারি, প্লিজ?

পি-জ শব্দটি সবসময় কাজে আসে, একটি ঠাণ্ডা কণ্ঠ উপহাসের সঙ্গে বলল। এবং পাইনিয়াস নাইজেলাসের ছবি ক্যানভাসে ভেসে উঠল। সঙ্গে সঙ্গে হারমিয়ন উচ্চস্বরে বলল, অবস্ক্যুরো!

একটি কালো চোখবাধা কাপড় পাইনিয়াস নাইজেলাসের চতুর, কালো চোখের উপর এসে পড়ল। সে কারণে পাইনিয়াস ধাক্কা খেল এবং ব্যথায় ককিয়ে উঠল।

কি–কতবড় সাহস–তোমরা কি করতে-

হারমিয়ন বলল, আমি খুবই দুঃখিত প্রফেসর ব্ল্যাক, পূর্ব সতর্কতা হিসাবে এটা করতে হয়েছে।

এই বাড়তি কাপড় আমার চোখের উপর থেকে এক্ষণি সরাও! আমি বলছি সরাও! তোমরা একটি গ্রেট আর্ক নিয়ে নাড়াচাড়া করছ! আমি এখন কোথায়, কী ঘটছে এসব?

আমরা কোথায় সেটা কোনো বিষয় নয়, হ্যারি বলল। পাইনিয়াস চোখের উপর থেকে একে দেয়া কাপড়টি সরাতে চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু স্থির হয়ে গেলেন।

এটা কি পলাতক পটারের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে?

হয়তো বা, হ্যারি বলল। সে জানে এতে পাইনিয়াস নাইজেলাস আরো আগ্রহী হয়ে উঠবে। আমরা আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই–গ্রিফিনডোরের তলোয়ারটির ব্যাপারে।

আহ, পাইনিয়াস নাইজেলাস বললেন। হ্যারিকে দেখার জন্য তিনি এদিক ওদিক মাথা নাড়তে থাকলেন। হ্যাঁ, ওই সংকীর্ণ মেয়েটি নির্বোধের মত কাজ করেছে

রন ধমকের সুরে বলল, আমার বোনের ব্যাপারে চুপ থাকুন!

পাইনিয়াস নাইজেলাস অবজ্ঞার সঙ্গে ভূরু কুচকালেন।

অন্য আর কে আছে এখানে? দুদিকে মাথা ঘুরিয়ে দেখতে চেষ্টা করে তিনি বললেন। তোমার কথা বলার ধরণ আমাকে বিরক্ত করেছে। তোমার বোন এবং তার বন্ধুদের কাজটি সাহসি কিন্তু নির্বোধের মত। হেডমাস্টারের ঘরে চুরি!

হ্যারি বলল, ওরা চুরি করছিল না। ওই তলোয়ারটি স্লেইপের না।

তলোয়ারটি প্রফেসর স্নেইপের স্কুলের, পাইনিয়াস নাইজেলাস বললেন। উইসলি পরিবারের মেয়েটির ওটার উপর দাবিটা কি? ওর শাস্তি হওয়া উচিত। ইডিয়ট লংবটম এবং অস্বাভাবিক লাভগুডের মত।

হারমিয়ন বলল, নেভিল কোনো ইডিয়ট নয় এবং লুনাও কোনো অস্বাভাবিক।

আমি এখন কোথায়? পাইনিয়াস নাইজেলাস বললেন। তিনি আবার তার চোখের সামনের পর্দাটি সরিয়ে ফেলতে চেষ্টা করলেন। তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে এসেছ? তোমরা আমাকে আমার পুরাতন জায়গা থেকে সরিয়ে এনেছ কেন?

সেটা নিয়ে ভাববেন না। জিনি, নেভিজ্ঞ এবং লুনাকে স্নেইপ কীভাবে শাস্তি দিয়েছে? হ্যারি দ্রুত বলল।

প্রফেসর স্নেইপ তাদেরকে একটি নিষিদ্ধ জঙ্গলে পাঠিয়ে দিয়েছেন, ওই বোকা হ্যাগ্রিডের জন্য কাজ করতে।

হারমিয়ন তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, হ্যাগ্রিড কোনো বোকা লোক নন।

হ্যারি বলল, স্নেইপ হয়তো ভেবেছে এটা তাদের জন্য একটি শাস্তি। কিন্তু জিনি, লুনা এবং নেভিল সম্ভবত এ নিয়ে হ্যাগ্রিডের সঙ্গে হাসাহাসি করেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গল…এর চাইতে অনেক অনেক মন্দ জায়গা ওরা মোকাবেলা করেছে, এটা আর কী বিরাট ব্যাপার!

হ্যারি স্বস্তি বোধ করল। সে এরচেয়ে ভয়ানক কিছু মনে করেছিল। মনে করেছিল কমপক্ষে কুসিয়াটাস কার্স সহ্য করতে হয়েছে।

আমরা যে বিষয়টি জানতে চাই প্রফেসর ব্ল্যাক, কেউ কি কখনো তলোয়ারটিকে সরিয়ে নিয়েছিল? হয়তো বা পরিস্কার করার জন্য বা এ ধরণের কোনো কারণে?

পাইনিয়াস নাইজেলাস খানিক বিরতি নিলেন। তিনি চোখের সামনের বাধাটি খুলে ফেলতে চেষ্টা করলেন।

তিনি বললেন, মাগলবর্নর, গবলিনদের তৈরি কোনো অস্ত্র কখনো পরিস্কার করার দরকার পড়ে না, বুঝলে সাধারণ বুদ্ধির মেয়ে? গবলিনদের সিলভার সব ধরণের জাগতিক আবর্জনা এমনিতেই সরিয়ে ফেলে। শুধুমাত্র যে সব জিনিস এটিকে শক্তিশালী করে শুধু সেটাই গ্রহণ করে।

হ্যারি বলল, হারমিয়নকে সাধারণ বুদ্ধির বলবেন না।

আমি বৈপরিত্য দেখতে দেখতে হাপিয়ে উঠেছি। পাইনিয়াস নাইজেলাস বললেন। এখন বোধহয় সময় হয়েছে আমার হেডমাস্টারের অফিসে ফিরে যাওয়ার?

তিনি অনুমানের উপর ফ্রেমের এক পাশে চলে গেলেন। ছবির দৃশ্য থেকে বের হওয়াটা অনুমান করতে চেষ্টা করছেন হোগার্টে ফিরে যাবার জন্য। হ্যারি হঠাৎ সচকিত হয়ে উঠল।

ডাম্বলডোর! আপনি কি ডাম্বলডোরকে আমাদের সামনে নিয়ে আসতে পারেন!

দুঃখিত, কি বললে? পাইনিয়াস নাইজেলাস জানতে চাইলেন।

প্রফেসর ডাম্বলডোরের পোট্রেইট–আপনি কি আপনার ছবির মধ্যে তাকে নিয়ে আসতে পারেন?

প্রফেসর পাইনিয়াস হ্যারির কণ্ঠ যেদিক থেকে শোনা গেল সেদিকে মাথা যোরালেন।

দেখা যায় মাগলবৰ্নাই শুধূ অজ্ঞ নয় পটার। হোগার্টের পোট্রেইটগুলো একটি আরেকটির সঙ্গে একত্র হতে পারে। কিন্তু তারা দুর্গের বাইরে একত্রে ভ্রমণ করতে পারেন না। শুধু অন্য একটি পেইন্টিং কোথাও ঝোলানো থাকলে ভিজিট করতে পারেন। ডাম্বলডোর এখানে আমার সঙ্গে আসতে পারেন না। এবং তোমাদের কাছ থেকে যে আচরণ পেলাম তাতে আমি তোমাদের নিশ্চিত করতে পারি যে, আমি আর কখনো তোমাদের ভিজিট করবো না!

হ্যারি লক্ষ করলো তিনি পোট্রেইট থেকে বের হয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করছেন।

হারমিয়ন বলল, প্রফেসর ব্ল্যাক, আপনি কী আমাদের দয়া করে বলতে পারেন না, শেষবার কবে কেস থেকে তলোয়ারটি বের করা হয়েছিল? আমি বলতে চাচ্ছি, জিনিদের বের করার আগে?

পাইনিয়াস অস্থিরতার সঙ্গে নাক সিটকালেন।

আমার ধারণা গ্রিফিনডোরের তলোয়ারটি শেষবার বের করতে দেখেছি ডাম্বলডোর যখন ওটা ব্যবহার করেছিলেন একটি রিং ভাঙার জন্য।

হারমিয়ন ঝট করে হ্যারির দিকে ঘুরে তাকালো। পাইনিয়াস নাইজেলাসের সামনে ওরা আর কেউ আর কোনো কথা বলার চিন্তা করলো না। নাইজেলাস ছবি থেকে বের হওয়ার পথটি ঠিক করলেন।

ঠিকাছে, তোমাদের সবাইকে গুডনাইট, একটু বিরক্তির সঙ্গে তিনি বললেন। তিনি আবার দৃশ্য থেকে বের হতে শুরু করলেন। তখন শুধু তার হ্যাটের কোনা দেখা যাচ্ছে। হ্যারি হঠাৎ করে চিৎকার করে উঠল।

একটু দাঁড়ান! আপনি কী কথাটি স্নেইপকে বলেছেন?

পাইনিয়াস নাইজেলাস দাঁড়িয়ে পেছনে ছবির দিকে ঘুরলেন।

প্রফেসর স্নেইপের মাথায় অনেক বিষয় রয়েছে যা ডাম্বলডোরের অস্বাভাবিক বিষয়গুলোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। গুডবাই পটার!

তিনি এরপর সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গেলেন। পেছনে শুধু তার ছায়াটুকু রয়ে গেল।

হারমিয়ন চিৎকার করে বলল, হ্যারি!

হ্যারিও চিৎকার করে বলল, আমি জানি! নিজে স্থির থাকতে পারছে না। সে বাতাসের ভেতরই হাত দিয়ে পাঞ্চ করলো। সে যা মনে করেছিল তারচেয়ে ঘটনা আরো বড়। সে লম্বা পা ফেলে তাবুর ভেতর হাঁটতে থাকল। মনে হল সে একমাইল পথ হেঁটে যাচ্ছে। হ্যারি এখন আর ক্ষুধা অনুভব করছে না। হারমিয়ন পাইনিয়াস নাইজেলাসের পোট্রেইটটা আবার ব্যাগের ভেতর ভরে ফেলল। সে ব্যাগটি শক্ত করে ধরে তারপর এক কোণে ছুঁড়ে ফেলে রাখল। তারপর হ্যারির দিকে উজ্জ্বল মুখ করে তাকালো।

ওই তলোয়ারটিই হরক্রুক্স ভেঙে ফেলতে পারে! গবলিনের তৈরি ব্লেড শুধুমাত্র যে জিনিস একে শক্তিশালী করে সেটাই গ্রহণ করে। হ্যারি, ওই তলোয়ার বাসিলিস্ক বিষ দিয়ে ভেজানেনা!

এবং ডাম্বলডোর সেটি আমাকে দেননি, কারণ তখনো সেটি তার প্রয়োজন ছিল। তিনি এটা লকেটের জন্য ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন

-এবং তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে ওরা চায় না তোমার হাতে ওটা আসুক।  

যদি তিনি তার দলিলে ওটা উল্লেখ করতেন

তাই তিনি একটি নকল তলোয়ার তৈরি করেছেন একটি নকল তলোয়ার গ্লাস কেসের ভেতর রেখে দিয়েছেন।

এবং তিনি আসলটা রেখে দিয়েছেন…কোথায়?

ওরা একজন আরেকজনের দিকে তাকালো। হ্যারি অনুভব করলো প্রশ্নটি ওদের সামনে বাতাসে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেন ডাম্বলডোর তাকে কথাটা বলেননি? নাকি তিনি হ্যারিকে কথাটা বলেছেন, কিন্তু হ্যারি ধরতে পারেনি?

চিন্তা করো! হারমিয়ন বলল। চিন্তা করো কোথায় তিনি সেটা রেখে যেতে পারেন?

হ্যারি আবার হাঁটতে শুরু করল। বলল, অন্তত হোগার্টে না।

হারমিয়ন বলল, হগসমিয়াডের কোথাও হতে পারে?

হ্যারি বলল, শ্ৰিকিং ম্যাকের কথা বলছো? কেউ কখনো সেখানে যায়নি।

কিন্তু স্নেইপ জানে সেখানে কীভাবে ঢুকতে হয়, সেটা একটু বেশি ঝুঁকিপূর্ণ না?

হ্যারি তাকে স্মরণ করিয়ে দিল, ডাম্বলডোর তাকে বিশ্বাস করতেন। হার মিয়ন বলল, এতটা বিশ্বাস করতেন না যে তলোয়ারটি তুলে নেয়ার কথা বলবেন।

হ্যাঁ, তোমার কথা ঠিক!, হ্যারি বলল। সে ভেবে আনন্দ পেল যে ডাম্বলডোরের কিছু রিজার্ভেশন ছিল। স্নেইপের উপর বিশ্বস্ততা ওর কাছে যতটা অস্পষ্টই হোক না কেন। তাহলে কি তিনি তলোয়ারটি হগসমিয়াড থেকে নিরাপদ দূরে রেখেছেন? তুমি কী মনে করো রন? রন?

হ্যারি চারদিকে তাকালো। পলকের ভেতর মনে হল রন তাবু থেকে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। তারপর সে লক্ষ করলো যে ছায়ার দিকে নিচে একটি জায়গায় পাথরের মত সে বসে আছে।

ওহ্, আমাকে কিছু বলছিলে? রন বলল।

কি?

রন নিচের জায়গার থেকে উপরে ঘুরে তাকালো।

তোমরা দুজন চালিয়ে যাও, আমাকে এর মধ্যে তোমাদের ফান নষ্ট করতে ডেকো না।

হ্যারি স্তম্ভিত হয়ে গেল। সে হারমিয়নের দিকে সাহায্যের জন্য তাকালো। হারমিয়ন মাথা দোলালো। সেও হ্যারির মত স্থির হয়ে গেছে।

হ্যারি জানতে চাইল, সমস্যা কি?

সমস্যা? কোনো সমস্যা নেই, রন বলল। সে হ্যারির দিকে মুখ করে তাকাচ্ছে না। অন্তত তুমি যে সমস্যার কথা বলতে চাচ্ছ সে সমস্যা না।

মাথার উপর তাঁবুতে কিছু পড়তে শুরু করেছে। বোঝা গেল বৃষ্টি শুরু হয়েছে।

হ্যারি বলল, বুঝলাম, কিন্তু তোমার ভেতর একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। কী সেটা, একটু ঝেড়ে বলবে।

রন লম্বা পা দুটো ঘুরিয়ে বেডের থেকে নামিয়ে উঠে বসল। তাকে অন্যরকম দেখাচ্ছে।

ওকে, আমি সমস্যার কথা ঝেড়ে বলছি। আশা করা না যে আমি উপরে উঠব আর নামব। কারণ কিছু অন্য বিষয় আছে যা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। যে বিষয়গুলো তুমি জানো না তার সঙ্গে একে যোগ করো।

আমি জানি না? হ্যারি আবার উচ্চারণ করল। আমি জানি না?

অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির বেগ আরো বাড়ছে। তাদের আশপাশ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে এবং নদী অন্ধকারের ভেতর কলকল শব্দ করছে। ভয়ানক বিপদজনক পানিতে হ্যারি আনন্দ পায়। রন বলছিল তার ভয় এবং সন্দেহের কথাগুলো।

রন বলল, বিষয়টি এরকম নয় যে আমি আমার জীবনের সবটুকু সময় এখানে কাটিয়ে দেব। তুমি জানো হাতের অবস্থা ভালো না, খাবার নেই, আমার পেছনের দিকটা প্রতিরাতেই ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। আমি আশা করেছিলাম আমরা কয়েকদিনের ভেতর কিছু একটা পেয়ে যাব।

রন, হারমিয়ন বলল। তার কণ্ঠ এতটা শান্ত যে রন ইচ্ছা করলে বৃষ্টির কারণে তার কথা শুনতে পায়নি এমন ভান করতে পারতো।

হ্যারি বলল, আমি ভেবেছিলাম তুমি কী জন্য আসছ সেটা বুঝে শুনেই রাজি হয়েছ।

হ্যাঁ, আমিও মনে করেছিলাম যে আমি বুঝতে পেরেছি।

তাহলে কোন অংশ তোমার ধারণার সঙ্গে মিলছে না? হ্যারি বলল। এখন ধীরে ধীরে সে গুটিয়ে থাকার বদলে রেগে যেতে থাকল। তুমি কী ভেবেছিলে যে আমরা ফাঁইভস্টার হোটেলে থাকতে যাচ্ছি? একদিন পরপর একটি করে হরক্রুক্স পেয়ে যাবো? তুমি কি ভেবেছিলে যে ক্রিসমাসের সময় মার কাছে ফিরে যাবে?

আমরা ভেবেছিলাম তুমি কী করতে এসেছো সেটা তোমার জানা আছে, রন চিৎকার করে বলল। সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। তার কথাগুলো হ্যারির মনে আগুনে পোড়ানো চাকুর মত বিধতে থাকল। আমরা ভেবেছিরাম ডাম্বলডোর তোমাকে বলে গেছেন তোমাকে কী করতে হবে। আমরা ভেবেছিলাম তোমার কাছে একটি নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে।

রন! হারমিয়ন বলল। ঠিক সে সময় বৃষ্টির সঙ্গে বজ্রপাতের শব্দ শোনা গেল। তাঁবুর উপরে অঝোরে বৃষ্টির শব্দ হচ্ছে। রন হারমিয়নের কথা কানে তুলল না।

ঠিকাছে, তোমাকে নিয়ে আসার জন্য দুঃখিত, হ্যারি বলল। হ্যারি ভেতরে একটা শুন্যতা অনুভব করলেও তার কণ্ঠ একেবারে শান্ত। আমি তোমার সঙ্গে সব কিছু পরিস্কার করে বলেছি। তোমাকে আমি সবকিছু জানিয়েছি ডাম্বলডোর। আমাকে কী কী বলেছেন। তুমি হয়তো লক্ষ করোনি যে আমরা ইতিমধ্যেই একটি হরক্রুক্স পেয়েছি।

হ্যাঁ, এবং অন্য হরক্রুক্স খুকতে গিয়ে এটাও আমরা প্রায় হারিয়ে ফেলেছিলাম। অন্য কথায় বলা যায় একটার জন্য আরেকটা ধরা!

তোমার গলা থেকে লকেটটা খোলো, রন, হারমিয়ন বলল। তার গলার স্বর সাধারণ অবস্থার চেয়ে চড়া। প্লিজ দয়া করে খোল। সারাদিন লকেটটি গলায় পরে থাকলে তুমি এভাবে কথা বলতে না।

হ্যাঁ, তাই, হ্যারি বলল। সে রনের পক্ষে কোনো যুক্তি শুনতে চাচ্ছে না। তুমি কী মনে করো আমি লক্ষ করিনি যে তোমরা আমার পেছনে কানাকানি করছিলে? মনে করো আমি বুঝতে পারিনি যে এ নিয়েই তোমরা কানাকানি করছে?

হ্যারি, আমরা সেরকম

মিথ্যা বলো না! রন বাধা দিয়ে বলল। তুমিও আমাকে একই কথা বলেছ। তুমি বলেছ যে তুমি নিজেও হতাশ। তুমি বলেছ যে তুমি ভেবেছিলে যে এর চেয়ে ভাল কিছু একটা সে করতে পারে

আমি এমনভাবে বিষয়টি বলিনি হ্যারি, এভাবে নয়! হারমিয়ন চিৎকার করে বলল।

তাবুর উপর ঝরঝর করে বৃষ্টি ঝরছে। হারমিয়নের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কয়েক মিনিটের উত্তেজনা কেটে যাবার আগে ওদের মধ্যে যেন অল্প সময় জ্বলে ওঠা আগুন নিভে গেলে যে অন্ধকার এবং শীতলতা তৈরি হয় তেমনি পরিবেশ সৃষ্টি করলো। গ্রিফিনডোরের তলোয়ারটি কোথায় আছে তা ওদের জানা নেই। এই তিন টিনেজারের এখন পর্যন্ত অর্জন এটুকুই যে ওরা বেঁচে আছে।

তাহলে আমরা এখনো এখানে কেন, হ্যারি রনের উদ্দেশে বলল।

সার্চ মি রন বলল।

হ্যারি বলল, তাহলে বাড়ি ফিরে যাও।

হ্যাঁ, হয়তো তাই করবো, রন চিৎকার করে বলল সে হ্যারির দিকে কয়েক পা এগিয়ে এল। হ্যারি পেছনে গেল না। রন বলল, শুনতে পাওনি ওরা আমার বোন সম্পর্কে কি বলে গেল? কিন্তু তুমি একটি শব্দও করলে না। করেছ? তোমার কাছে সেটা ছিল শুধু নিষিদ্ধ জঙ্গল। হ্যারি আমার মধ্যে এই ধারণা হচ্ছে যে জিনির কি হল তা নিয়ে হ্যারির কিছু আসে যায় না। কিন্তু আমার আসে যায়, মানসিক চাপ এবং ওই বিশাল আকারের মাকড়শাগুলো

আমি শুধু ভাবছিলাম-সে অন্যদের সঙ্গে আছে, ওরা সবাই হ্যাগ্রিডের সঙ্গে

হ্যাঁ, আমি বুঝতে পেরেছি, তোমার কিছু আসে যায় না! এবং আমার পরিবারের বাকীদের অবস্থা কী উইসলিদের পরিবারের অন্য কারো আর শাস্তির দরকার নেই শুনতে পেয়েছ ওদের এই কথা?

হ্যাঁ, আমি-।

চিন্তা করে দেখেছ আমি কী বলেছি?

রন!, হারমিয়ন বলল। সে দুজনের মাঝখানে চলে এলো। এর ভেতর নতুন কোনো কথা আছে বলে মনে হয় না। আমরা জানি না এমন কোনো কথা নেই! চিন্তা করে দেখ রন, বিলদের ইতিমধ্যে স্কার করা হয়েছে, অনেক মানুষ দেখেছে যে জর্জ এরইমধ্যে একটি কান হারিয়েছে। তোমার এতক্ষণে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করার কথা। আমি নিশ্চিত ও সেটাই বোঝাতে চেয়েছে

ওহ, তুমি নিশ্চিত তাই না? ঠিক আছে, ভাল কথা, এ নিয়ে আমি আর কথা বলব না। তোমাদের জন্য সবকিছু ঠিকঠাক আছে, তোমাদের বাবা মায়েরা নিরাপদ আছেন-

হ্যারি চিৎকার করে বলল, আমার বাবা-মা মৃত!

রনও চিষ্কার করে বলল, আর আমার বাবা মারও একই বিষয় ঘটতে পারতো!

হ্যারি গর্জন করে বলল, তাহলে যাও! তাদের কাছে ফিরে গিয়ে ভান করো যে তুমি স্প্যাটারগ্রোট পেয়েছ। এবং মাম্মি তোমাকে আদর করে খাওয়াতে পারবেন, এবং

রন হঠাৎ আক্রমণ করতে উদ্যোত হয়ে উঠল, হ্যারিও উদ্যোত হল। কিন্তু দুজন নিজেদের পকেট থেকে যাদুদণ্ড বের করার আগেই হারমিয়ন তার নিজেরটা বের করে তুলে ধরল।

প্রোটেগো! সে চিৎকার করে বলল। হ্যারি এবং হারমিয়নকে একপাশে এবং রনকে আরেক পাশে রেখে একটি অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হল। স্পেলের ধাক্কায় ওরা সবাই যার যার জায়গা থেকে একটু পিছিয়ে গেল। স্বচ্ছ দেয়ালের ভেতর থেকে হ্যারি এবং রন একজন আরেকজনের দিকে এমনভাবে তাকালো যেন কেউ কাউকে জীবনে কখনো দেখেনি, এই প্রথমবার দেখছে। হ্যারি রনের প্রতি একটি ভয়ানক বিতৃষ্ণা বোধ করল। মনে হল ওদের ভেতর থেকে কিছু একটা হারিয়ে গেছে।

হ্যারি বলল, হরক্রুক্সটা রেখে দাও।

রন মাথার উপর দিয়ে চেনটি খুলল এবং পাশেই একটি চেয়ারের উপর রেখে দিল। সে হারমিয়নের দিকে ফিরল। তুমি কী করবে?

কী বলতে চাচ্ছ?

তুমি কী এখানেই থাকবে, না যাবে?

আমি… তাকে ভয়ানক উদ্বিগ্ন দেখা গেল। হ্যাঁ-হ্যাঁ, আমি থাকব। রন, আমরা বলেছি আমরা হ্যারির সঙ্গে যাবো, বলেছি তাকে সাহায্য-

বুঝতে পেরেছি, তুমি ওকে বেছে নিয়েছ।

রন না!…প্লিজ রন…কাম ব্যাক রন!….কামব্যাক…

সে তার সামনের স্বচ্ছ দেয়াল দ্বারা বাধাগ্রস্থ হল। হারমিয়ন যখন সামনের বাধাটি সরালো ততক্ষণে রন রাতের অন্ধকারের ভেতর চলে গেছে। হ্যারি নিরব পাথরের মত দাঁড়িয়ে থাকল। গাছ গাছালির ভেতর হারমিয়নের কান্না করে রনকে ডাকার আওয়াজ শুনতে পেল।

কয়েক মিনিট পর হারমিয়ন ফিরে এল। তার চুলগুলো মুখের সামনে এসে পুরো মুখ ঢেকে দিয়েছে।

সে…সে চলে গেছে! ডিসাপ্যারেট করেছে!

 হারমিয়ন একটি চেয়ারে বসে পড়ল। মুখ লুকিয়ে কাঁদতে শুরু করল।

হ্যারি হতভম্ভ হয়ে গেছে। সে নিচু হয়ে হরক্রুক্সটি তুলে নিজের গলায় পরল। রনের বিছানার থেকে কম্বলটি টেনে নিয়ে সে হারমিয়নের দিকে ছুঁড়ে দিল। তারপর নিজের বিছানাটিতে উঠে গেল। তাবুর অন্ধকার ছাদটির দিকে চেয়ে থাকল। সে বাইরের বৃষ্টির শব্দ শুনতে পাচ্ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *