বাঙ্গালায় আর্য্য উপনিবেশ
বাঙ্গালা দেশ আর্য্যেতর জাতির দ্বারা অধ্যুষিত ছিল বলিয়া এদেশে আগমন ও বসতি করা উত্তর-ভারতের আর্য্যদিগের পক্ষে বহুদিন অবধি নিষিদ্ধ ছিল। এদেশে আসিলে প্রায়শ্চিত্ত না করিয়া কেহ স্বসমাজে গৃহীত হইত না। যাহারা এদেশে রহিয়া যাইত তাহারা ব্রাত্য, নষ্ট বা পতিত বলিয়া গণ্য হইত। বৈদিক যুগে বাঙ্গালা দেশে উপনিবিষ্ট আর্য্যের অস্তিত্ব থাকিলে তাহাদের সংখ্যা নিশ্চয়ই নিতান্ত অল্প ছিল। এদেশে ব্যাপকভাবে উপনিবেশ স্থাপন মৌর্য্যযুগেই আরম্ভ হয়। প্রথমে বরেন্দ্রভূমিতে এবং রাঢ়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলে যাহারা উপনিবিষ্ট হয়, তাহাদের বেশী ভাগ ছিল জৈনমতাবলম্বী। জৈনধর্ম্মের মূল কেন্দ্র মগধ বরেন্দ্রভূমি হইতে সুদূর নেহ, সেইজন্য জৈনধর্ম্ম এই অঞ্চলে সর্ব্বপ্রথম প্রসার লাভ করে। দিব্যাবদানে(১) আছে যে, অশোকের সময়ে পুণ্ড্রবর্দ্ধন জৈনধর্ম্মের একটি বিশিষ্ট কেন্দ্র ছিল।
রাঢ়-সুহ্মে অসভ্যজাতির প্রাচুর্য্য থাকায় এবং দেশ দুর্গম হওয়ায় এই অঞ্চলে জৈনধর্ম্ম তত বেশী প্রসার লাভ করিতে পারে নাই। জৈনমতের পর বৌদ্ধমত এবং সর্ব্বদেশে ব্রাহ্মণ্যমত বাঙ্গালাদেশে প্রাধান্য লাভ করে। রাঢ় ও বরেন্দ্র ভূমিতে আর্য্য সংস্কৃতি আসিবার অনেক কাল পরে, সম্ভবত এই দুই স্থান হইতে, বঙ্গে অর্থাৎ পূর্ব্ববঙ্গে ইহা বিস্তার লাভ করে। এই কারণে সংস্কৃতি ও সভ্যতায় পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় যথেষ্ট পশ্চাৎপদ থাকায় পূর্ব্ববঙ্গের অধিবাসী, ‘বঙ্গাল’ বা ‘বাঙ্গাল’, আবহমানকাল সাহিত্যে ও লোকব্যবহারে উপহাসের পাত্র বলিয়া পরিগণিত হইয়া আসিয়াছে।
—————–
১. Cowell ও Neil সম্পাদিত, পৃ. ৪২৭।