১.০৮ কী বিচিত্র এই দ্বেষ!

কী বিচিত্র এই দ্বেষ!

[হারুন হত্যামামলা
তদন্তকারী অফিসার আশিক আহমেদ এবং বিকাশ চট্টোপাধ্যায়]

—রোল নাম্বার ওয়ান?

—প্রেজেন্ট মিস!

—রোল নাম্বার টু?

—ইয়েস মিস!

—থ্রি?

—প্রেজেন্ট প্লিজ়!

—রোল নাম্বার ফোর?

উত্তর না পেয়ে অ্যাটেনডেন্সের খাতা থেকে মুখ তোলেন শাহনাজ, রিপন স্ট্রিটের Progressive Day School-এর ক্লাস ওয়ানের টিচার |

—হারুন কোথায়? আসেনি?

—না মিস, অ্যাবসেন্ট।

—ওকে, রোল নাম্বার ফাইভ?

রোল কল চলতে থাকে। সিক্স, সেভেন, এইট…

আমাদের হাওড়া-শিয়ালদায় যেমন অষ্টপ্রহর থিকথিক জনস্রোত, এখানেও তা-ই। একই ছবি মোটামুটি। কাঁধে বাক্সপ্যাঁটরা নিয়ে কুলিদের ব্যস্তসমস্ত যাতায়াত, এক প্ল্যাটফর্ম থেকে অন্যতে। ক্লান্তিহীন। হিন্দি-ইংরেজিতে ট্রেনের ঘোষণা মিনিটে মিনিটে, পাল্লা দিয়ে ইঞ্জিনের ধোঁয়ার কুণ্ডলী, আওয়াজের গজরানি। এক একটা ট্রেন থামছে, উগরে দিচ্ছে মানুষের দঙ্গল। এক একটা ছাড়ছে, টইটম্বুর যাত্রীদল সমেত। স্টেশনের বাইরে ট্যাক্সি-অটোর স্ট্যান্ডে নিত্যদিনের জটলা চালকদের। পান-বিড়ি-সিগারেটের আড্ডা। ওঁরা জানেন, খদ্দেরের অভাব এখানে হওয়ার নয়। সে কাকভোর হোক বা মাঝরাত। নির্জনতার প্রবেশ নিষেধ এ তল্লাটে।

বেরিলি জংশন। দিল্লি থেকে প্রায় আড়াইশো কিলোমিটার দূরের স্টেশন। উত্তরপ্রদেশের পাঁচটি ব্যস্ততম স্টেশনের তালিকা বানাতে বসলে বেরিলির অন্তর্ভুক্তি অবধারিত। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রোজ ছোটে দূরপাল্লার ট্রেন। সঙ্গে যোগ করুন যাত্রীবোঝাই লোকাল ট্রেনের দৈনন্দিন কু-ঝিকঝিক আর যথেষ্ট সংখ্যায় পণ্যবাহী গাড়ির প্রাত্যহিক আসা-যাওয়া।

বেরিলি জিআরপি (Government Railway Police) থানাকেও শশব্যস্ত থাকতে হয় চব্বিশ ঘণ্টাই। দিনে গড়ে দশটা মিসিং ডায়রি হবেই। বাচ্চাদের অনেকেই দলছুট হয়ে যায় রোজ, কপাল নেহাত খারাপ না হলে পাওয়া যায় খোঁজাখুঁজির পর। আর বড় স্টেশন মানেই, কে না জানে, পকেটমারদের যৌবনের উপবন, বার্ধক্যের বারাণসী। বেরিলিও ব্যতিক্রম নয়। সকাল-সন্ধে মিলিয়ে পকেটমারির অভিযোগ জমা পড়ে ডজন ডজন। রাত বাড়লে সাইডিং-এর আধো-অন্ধকারে মদ-জুয়ার মোচ্ছব তো রোজকার উপদ্রব। প্ল্যাটফর্মের এমাথা-ওমাথা টহলদারি চালাতেই হয় তিন শিফটে। মর্নিং, ইভনিং, নাইট। ঢিলেমির জো নেই এতটুকু।

সন্ধে তখন রাতের চৌকাঠে পা দেব-দেব করছে। প্ল্যাটফর্মে টহল দিতে দিতেই বড় স্টিলের ট্রাঙ্কটা নজরে এল দুই কনস্টেবলের।

এখানে এভাবে পড়ে কেন? কুলি নিয়ে এসে রেখেছিল? ট্রেনে ওঠাতে ভুলে গেছে, আর যার জিনিস সে-ও খেয়াল করেনি? না কি কেউ রেখে গিয়ে কিছু কিনে-টিনে আনতে গেছে, চলে আসবে শিগগির? কিন্তু এভাবে কোনও পাহারা ছাড়া মালপত্র ফেলে রেখে গেলে হাওয়া হয়ে যেতে আর কতক্ষণ? থানায় নিয়ে যাওয়াই ভাল, না হলে একটু পরেই হয়তো কেউ এসে কান্নাকাটি জুড়বে, আমার ট্রাঙ্ক চুরি হয়ে গেছে, অমুক প্ল্যাটফর্মের তমুক জায়গায় রাখা ছিল। মালপত্র আকছার চুরি হয় এই স্টেশনে, নতুন কিছু নয়।

ধরাধরি করে ট্রাঙ্ক আনা হল থানায়। ওসি এবং অন্য অফিসাররা উলটেপালটে দেখলেন। নাহ, কোথাও এমন কিছু লেখা নেই, যা থেকে মালিকের সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। ওসি সিদ্ধান্ত নিলেন, খুলেই দেখা যাক কী আছে ভিতরে, জিনিসপত্র থেকে যদি সন্ধান মেলে মালিকের।

তালা ভাঙা হল এবং ট্রাঙ্কের ভিতরের দৃশ্যে আঁতকে উঠলেন বেরিলি জিআরপি থানার কর্মী-অফিসাররা। যাঁরা লাশ দেখে অভ্যস্ত এবং হঠাৎ মৃতদেহ দেখে যাঁদের বিচলিত হওয়ার কারণ নেই কোনও।

হারুন রশিদ হত্যা মামলা। পার্ক স্ট্রিট থানা, কেস নম্বর ৫৩৯। তারিখ ১৫/৮/৯৪। ধারা ৩৬৪/৩০২/২০১/৩৪ আইপিসি। খুনের উদ্দেশ্যে অপহরণ, খুন, প্রমাণ লোপাট এবং একই অপরাধের উদ্দেশ্যে একাধিকের সম্মিলিত পরিকল্পনা। মহম্মদ হাদিস সপরিবারে থাকতেন পার্ক স্ট্রিট থানা এলাকার ২২/২এ, ব্রাইট স্ট্রিটে। আদি বাড়ি বিহারের গয়া জেলায়। চাকরির সন্ধানে আটের দশকের মাঝামাঝি চলে আসেন কলকাতায়। চেষ্টাচরিত্রের পর চাকরি জোটে অজন্তা লেদার্স ফ্যাশন লিমিটেডে। ইলিয়ট রোডের কাছে সিরাজুল ইসলাম লেনে কোম্পানির ফ্যাক্টরি, তৈরি হয় চামড়ার জিনিসপত্র। কাজে ফাঁকি দেওয়া হাদিসের ধাতে ছিল না। দক্ষ কর্মী হিসেবে অল্পদিনেই মালিকের অত্যন্ত বিশ্বস্ত হয়ে উঠেছিলেন।

ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। স্ত্রী, নয় বছরের ছেলে হারুন আর বছর চারেকের ফুটফুটে মেয়ে। যার সেভাবে নামই ঠিক হয়নি এখনও। বাবা-মা-দাদা যে যেমন খুশি ডাকে আদর করে।

ছেলেমেয়েকে কলকাতায় পড়াবেন, ইচ্ছে ছিল হাদিসের। হারুন একটু বড় হতেই গয়ার স্কুল থেকে ছাড়িয়ে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে কলকাতায় নিয়ে এলেন। একটু বেশি বয়সেই হারুনকে ভরতি করলেন রিপন স্ট্রিটের ‘Progressive Day School’-এ ক্লাস ওয়ানে। হারুন তখন নয়। সালটা ১৯৯৪।

স্কুল শুরু হত সকাল সাড়ে সাতটায়। ছুটি বারোটায়। ট্রামে করে হারুনকে স্কুলে পৌঁছে দিতেন হাদিস। ছুটির পর কখনও হেঁটে, কখনও ট্রামে, একাই সাধারণত বাড়ি ফিরত হারুন। খেয়েদেয়ে কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে নিয়েই বিকেলে পাড়ায় ফুটবল পেটাতে ছুটত।

১৩ অগস্টের বিকেলে অন্যরকম হল। ফুটবল নিয়ে দাপানো তো দূরের কথা, স্কুল থেকে বাড়িই ফিরল না হারুন। সাড়ে বারোটার মধ্যে যে ছেলে চলে আসে, তিনটে পেরিয়ে সাড়ে তিনটে বেজে গেলেও তার পাত্তা নেই। কোথায় গেল? কী হল হারুনের?

খবর গেল হাদিসের কাছে, সব কাজ ফেলে বাড়ি ফিরলেন তড়িঘড়ি।

হারুনের স্কুল

খোঁজ-খোঁজ। স্কুলে ছোটা হল প্রথমে। দারোয়ান জানালেন, ছাত্ররা সবাই রোজকার মতো বেরিয়ে গিয়েছে। আলাদা করে হারুনকে খেয়াল করেননি। বন্ধুদের বাড়ি যেতে পারে? খোঁজখবর হল। নেই। পাড়াপ্রতিবেশীরা ভিড় জমালেন, এলেন অফিসের সহকর্মীরাও। হাদিস খবর দিলেন চার ঘনিষ্ঠ শুভানুধ্যায়ীকে। ছুটে এলেন মহম্মদ সামসুদ্দিন, কুদ্দুস আলম, মহম্মদ একলাখ এবং দীর্ঘদিনের প্রতিবেশী আলমগির।

চারজনই বহুদিনের পরিচিত হাদিসের। সবারই বয়স তিরিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে। একলাখ ছাড়া গয়ারই বাসিন্দা সবাই, কর্মসূত্রে কলকাতায়। সামসুদ্দিন অনেকদিনের বন্ধু, ছোটখাটো কাপড়ের ব্যবসা আছে। বন্ধুর সঙ্গে যৌথভাবে ৩৬, আগা মেহেন্দি লেনে একটা ছোট দু’কামরার ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছিলেন হাদিস বছরখানেক হল। গ্রামের বাড়ি থেকে আত্মীয়পরিজনরা প্রায়ই আসে, থাকতে দেওয়ার তো একটা জায়গা চাই। সেই উদ্দেশ্যেই বাড়ি ভাড়া।

মহম্মদ একলাখের বাড়ি বিহারের ছাপড়ায়। কাজ করতেন অজন্তা লেদার্সেই, হাদিসের সুপারিশেই চাকরি। কৃতজ্ঞ ছিলেন স্বাভাবিক কারণেই, হাদিসের পরিবারের যে-কোনও বিপদে-আপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন সবার আগে। দীর্ঘ অসুস্থতার কারণে ফ্যাক্টরির চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন সম্প্রতি, টুকটাক ব্যবসাপাতিতে দিন গুজরান। অবিবাহিত, বাবার সঙ্গে থাকেন ৪, দেদার বক্স লেনের একটা দু’কামরার ভাড়াবাড়িতে।

আলমগির একটা গাড়ির যন্ত্রাংশ মেরামতির দোকান চালান ইলিয়ট রোডের কাছে। থাকেন সপরিবারে ব্রাইট স্ট্রিটে, হাদিসের বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া। দুই প্রতিবেশীর মধ্যে ঘনিষ্ঠ পারিবারিক সম্পর্ক। সুখ-দুঃখে একে অন্যের পাশে থাকেন নিঃস্বার্থ।

হারুনের হারিয়ে যাওয়ার খবরে সবচেয়ে বিচলিত কুদ্দুস আলম। যিনি ভীষণ প্রিয় ছিলেন বালক হারুনের। ‘কুদ্দুস চাচা’ বলতে অজ্ঞান। ফুটবলের নেশা চাচাই ধরিয়েছিলেন। আগা মেহেন্দি রোডে সামসুদ্দিন-হাদিসের ভাড়ার ফ্ল্যাটে থাকতেন। হাদিস অস্থায়ী পার্টটাইম কাজ জুটিয়ে দিয়েছিলেন কুদ্দুসকেও, ওই অজন্তা লেদার্স ফ্যাক্টরিতেই।

সারারাত ছোটাছুটি করেও যখন খোঁজ মিলল না হারুনের, পরের দিন সকালে, ১৪ অগস্ট, পার্ক স্ট্রিট থানায় মিসিং ডায়রি করলেন হাদিস। GDE (জেনারেল ডায়রি এন্ট্রি) নম্বর ১৫১৫। পুলিশকে জানালেন না, আগের দিন, ১৩ অগস্ট, বিকেল সোয়া তিনটে নাগাদ ফ্যাক্টরিতে একটা ফোন এসেছিল।

—হাদিসভাই, আপনার ফোন…

অজন্তা লেদার্সের বহুদিনের কর্মী ফজলুল ডাক দেন কাজে ব্যস্ত হাদিসকে।

—আমার? কে?

বলল না। আপনাকে খুঁজছে।

হাদিস রিসিভার কানে দেন। ওপার থেকে ভাঙাভাঙা গলায়, থেমে থেমে বলতে থাকে অপরিচিত।

—আপনার ছেলে আমাদের কাছে। আজ রাত দশটা নাগাদ পার্ক সার্কাসের ৪ নম্বর ব্রিজের মুখে দাঁড়াবেন। পঁচিশ হাজার টাকা একটা কালো ব্যাগে নিয়ে আসবেন। আমাদের লোক থাকবে। মাথায় লাল টুপি, ডানহাতে ঘড়ি। ওকে ব্যাগটা দিয়ে দেবেন। পুলিশে জানাতে পারেন। তবে জানালে আর ছেলেকে জীবিত পাবেন না। টাকা পেলে কাল সন্ধের মধ্যে ছেলেকেও পাবেন। আর একটা কথা, একা আসবেন। চালাকি পছন্দ করি না আমরা।

ফোন কেটে যাওয়ার পর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল হাদিসের। পঁচিশ হাজার? মাসমাইনের চাকরি, চলে যায় মোটামুটি। এখন বিকেল সোয়া তিনটে। রাত দশটার মধ্যে এত টাকা জোগাড় হবে কী করে? ফোনে একবার হারুনের সঙ্গে কথা বলতে চাওয়ার কথাও মাথায় এল না। একবার ‘আব্বা’ ডাকটা শুনতে পেলে মনটা শান্ত হত একটু।

সামসুদ্দিন হাজার দুয়েক দিলেন, কুদ্দুস-একলাখ দিলেন হাজার খানেক করে। আলমগির জোগাড় করলেন চার হাজার। ফ্যাক্টরির মালিক খুবই পছন্দ করতেন হাদিসকে, বিপদে পাশে দাঁড়ালেন। দিলেন পাঁচ হাজার। পাড়া-প্রতিবেশীদের কাছে ধার আর নিজের সঞ্চয় থেকে কুড়িয়ে-বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে গেল পঁচিশে। ব্রাইট স্ট্রিটের বাড়ি থেকে পার্ক সার্কাস আর কতটুকু? রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ হেঁটেই রওনা দিলেন কালো ব্যাগ হাতে। একাই।

সোয়া দশটা বাজল, ক্রমে সাড়ে দশটা, অপেক্ষা করতে করতে একসময় ঘড়ির কাঁটা দশকে অগ্রাহ্য করে এগারো ছুঁল। কোথায় সেই মাথায় লাল টুপি, ডানহাতে ঘড়ি? সাড়ে এগারোটা অবধি ধৈর্য ধরেও যখন কেউ এল না, একরাশ উদ্বেগ-আশঙ্কা-দুশ্চিন্তা নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলেন হাদিস।

মাথা কাজ করছে না আর। কোথায় গেল ছেলেটা? কারা কিডন্যাপ করল? কেন? বাড়িতে ইতিমধ্যেই অবস্থা সঙ্গিন। স্ত্রী নাওয়া-খাওয়া প্রায় বন্ধই করে দিয়েছেন। মেয়ে বারবার জানতে চাইছে দাদার কথা। কী করবেন এখন?

আত্মীয়স্বজন-পাড়াপ্রতিবেশী সবাই গতকাল থেকে একই কাটা রেকর্ড বাজিয়ে চলেছে, সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাল লাগছে না আর শুনতে। কী ঠিক হয়ে যাবে? হারুনকে ফিরে না পেলে কীভাবে ঠিক হয়ে যাবে সব? যার যায়, তারই যায়। অন্যরা কী করে বুঝবে হারুনের মুখটা মনে পড়লেই ডাক ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কোথায় আছে, কেমন আছে ছেলেটা?

পুলিশে জানানো দরকার এবার। মুক্তিপণ চেয়ে ফোনের কথাটা বলব? না কি আপাতত মিসিং ডায়েরি করে রেখে অপেক্ষা করা উচিত পরের ফোনের? কিডন্যাপাররা হয়তো আজ ইচ্ছে করেই টাকাটা নিল না, দূর থেকে নজর রাখছিল? না, আর একদিন দেখি, পুলিশকে বললে যদি জানতে পেরে যায় ওরা, মেরে ফেলে হারুনকে? আর ভাবতে পারেন না হাদিস।

মুক্তিপণের ফোনের ব্যাপার চেপে যাওয়া হল ১৪ তারিখ সকালের মিসিং ডায়েরিতে। কিন্তু সারাদিন অপেক্ষার পরও যখন আর ফোন এল না টাকা চেয়ে, বিপর্যস্ত হাদিসকে নিয়ে সামসুদ্দিন-কুদ্দুস-একলাখ-আলমগির এবং কয়েকজন সহকর্মী পার্ক স্ট্রিট থানায় এলেন সেদিনই সন্ধেবেলায়। সব খুলে বললেন হাদিস, অভিযোগ দায়ের হল। তদন্তের দায়িত্ব নিলেন সাব-ইনস্পেকটর আশিক আহমেদ, যিনি বর্তমানে তপসিয়া থানার ওসি।

থানা থেকে যখন বেরচ্ছেন লেখাজোকা শেষ হওয়ার পর, হাদিস দুঃস্বপ্নেও ভাবেননি, পরের

দিনই ফিরে আসতে হবে আবার, চরম দুঃসংবাদ পেয়ে।

যা যা সঙ্গে থাকে ওই বয়সের স্কুলছাত্রের সঙ্গে, সব ছিল। খাতাবই স্কুলব্যাগের ভিতর, ওয়াটারবটল, টিফিনবক্স। স্কুলের ইউনিফর্ম পরা বালকের নিথর দেহ পড়ে ট্রাঙ্কের ভিতর।

শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে, গলায় আঙুলের স্পষ্ট দাগ দেখে অনুমান করতে অসুবিধে হয় না বেরিলি থানার ওসি-র। পরিচয়ও জানা যায় সহজেই, প্রত্যেকটি খাতায় নাম লেখা আছে গোটা গোটা অক্ষরে।

—স্যার লড়কা কা নাম হারুন রশিদ, কলকাত্তা কা কোই Progressive Day School কা স্টুডেন্ট লাগতা হ্যায়।

—স্কুল কা ফোন নম্বর পতা করো য্যায়সে ভি হো … অউর কলকাত্তা ট্রাঙ্ককল বুক করো জলদি ….

১৫ অগস্টের রাত সাড়ে ন’টা তখন।

রাত পৌনে এগারোটায় যখন বেরিলি থেকে ফোন এল হারুনের স্কুলে, ধরার লোক বলতে শুধু একজন দারোয়ান। যিনি ঘুমচোখে ফোন তুললেন এবং খবর শুনে সঙ্গে সঙ্গে জানালেন প্রিন্সিপালকে। যিনি এক মুহূর্ত দেরি না করে খবর দিলেন হাদিসকে। বন্ধুবান্ধব-আত্মীয়স্বজন নিয়ে হাদিস ছুটলেন থানায়।

পার্ক স্ট্রিট থানার তৎকালীন ওসি ব্যোমকেশ ব্যানার্জি ট্রাঙ্ককলে কথা বললেন বেরিলি

জিআরপি-র ওসি-র সঙ্গে। সিদ্ধান্ত হল, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাদিসকে নিয়ে পার্ক স্ট্রিট থানার একটি দল রওনা দেবে বেরিলিতে। অজন্তা লেদার্স ফ্যাক্টরির মালিক খবর পেয়ে মাঝরাতেই চলে এসেছিলেন থানায়। বললেন, হাদিসের প্লেনভাড়া তিনি দেবেন, সকালের ফ্লাইটে দিল্লি পৌঁছে সেখান থেকে গাড়িতে বেরিলি বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাওয়া যাবে।

সাততাড়াতাড়ি টিকিট জোগাড়ে সাহায্য করল থানা, প্লেনেই যাওয়া হল ১৬ অগস্টের ভোরে। হাদিসের সঙ্গে সামসুদ্দিন ছাড়াও গেলেন আলমগির। হাদিসের স্ত্রী ততক্ষণে শয্যা নিয়েছেন, অসংলগ্ন কথা বলতে শুরু করেছেন। সামলানোর জন্য কলকাতায় থেকে গেলেন কুদ্দুস-একলাখ।

বেরিলি পৌঁছতে ১৬ অগস্ট বিকেল হয়ে গেল। ছেলের দেহ শনাক্ত করলেন হাদিস, এবং করেই সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়লেন। পোস্টমর্টেম বেরিলিতেই হল। যেমন ভাবা গিয়েছিল, শ্বাসরোধ করেই মারা হয়েছিল হারুনকে। শরীরের অন্য কোথাও কোনও ক্ষতচিহ্ন ছিল না।

দিনেদুপুরে একটা বাচ্চা ছেলেকে কিডন্যাপ করল কে বা কারা, এবং দেহ পাওয়া গেল কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের বেরিলি স্টেশনে, ট্রাঙ্কবন্দি অবস্থায়! এমনটা কখনও ঘটেনি কলকাতা পুলিশের ইতিহাসে। কারা ঘটাল?

১৫ অগস্টের মাঝরাতেই ঘণ্টাখানেক আলাদা করে হাদিসের সঙ্গে কথা বলেছিলেন অফিসাররা। পরের দিন সকালে ফ্লাইট, পুত্রশোকে বাক্‌রুদ্ধ। তবু কিছু প্রশ্ন তো না করলেই নয়।

—কোনও শত্রু ছিল আপনার?

—না স্যার, ছাপোষা মানুষ, বউ-বাচ্চা নিয়ে থাকি। কোনও শত্রুতা নেই।

—কাউকে সন্দেহ হয়?

—না স্যার। হারুনকে কেন মারল স্যার? ও তো কোনও ক্ষতি করেনি কারওর। আমার সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কাউকে সন্দেহ হয় না। কাকে সন্দেহ করব? আচ্ছা বডি কি সত্যিই হারুনের? কোথাও কোনও ভুল হচ্ছে না তো?

একমাত্র ছেলের মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে ট্রাঙ্কে, সুদূর উত্তরপ্রদেশে। মাথা কাজ না করারই কথা। এই মানসিক অবস্থায় কিছু জানতে চাওয়া এবং ঠিকঠাক উত্তরের প্রত্যাশা করাটাই অনুচিত। হাদিসকে বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসেন তদন্তকারী অফিসার আশিক। থানায় ফেরার পথে মাথায় পাক খেতে থাকে একাধিক সম্ভাবনা।

প্রথম প্রশ্ন, কিডন্যাপ যে বা যারা করেছে, সে বা তারা মুক্তিপণের টাকা নিতে এল না কেন পার্ক সার্কাসে চার নম্বর ব্রিজের কাছে? টাকা না পেয়েই মেরে দিল? এমন তো হওয়ার কথা নয়।

প্রশ্ন নম্বর দুই, পঁচিশ হাজার টাকার জন্য অপহরণ এবং খুন? পেশাদার গ্যাং খোঁজখবর নিয়ে কাজে নামে। যার থেকে মুক্তিপণ চাইব, তার সেটা দেওয়ার মতো সামর্থ্য আছে কি না সেটা নিশ্চিত জেনে নেয় আগেভাগে খোঁজখবর করে। হাদিস সামান্য চাকুরে, মাস গেলে সাকুল্যে মাইনে হাজার তিনেক। তিনি কোত্থেকে পঁচিশ হাজার দেবেন এক কথায়? ন্যূনতম হোমওয়ার্ক করল না অপহরণকারীরা?

তিন, মোটিভটা কী? টাকা যে নয়, বোঝাই যাচ্ছে। হাদিস অল্পক্ষণের জেরায় বলেছেন, কোনও শত্রু নেই। তা হলে? বেরিলি থেকে ফিরুন, তারপর হাদিসকে আর একবার বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ না করলেই নয়। পারিবারিক কোনও ঝামেলা, যার উৎস আদৌ কলকাতাতেই নয়, গয়ার বাড়িতে? বা অন্য কোথাও? ফ্যাক্টরিতে কোনও গোলমাল?

চার, মৃতদেহ বেরিলি স্টেশনে পৌঁছল কী করে? এত জায়গা থাকতে বেরিলি কেন? দেহ লোপাটের অনেক জায়গা আছে শহরে বা তার কাছেপিঠে। হারুন স্কুল থেকে ১৩ তারিখ বেরিয়েছিল ছুটির পর। আর বাড়ি ফেরেনি। বডি পাওয়া গিয়েছে ১৫ তারিখ রাতের দিকে বেরিলি স্টেশনে। অপহরণের পর হারুনকে নিয়ে ট্রেনে করে বেরিলি রওনা দিয়েছিল কিডন্যাপাররা? খুনটা ট্রেনে হয়েছিল?

পাঁচ, দিনের বেলা, রিপন স্ট্রিটের মতো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় একটা ছেলেকে কে বা কারা তুলে নিয়ে গেল, কেউ দেখল না? অস্বাভাবিক নয়? তা হলে কি পরিচিত কেউ যুক্ত? কাল প্রথম কাজ, স্কুলে যাওয়া। হারুনের ক্লাসে এবং অন্য ছাত্রদের কাছে জানতে চাওয়া, কেউ কিছু দেখেছিল? দারোয়ান এবং অন্যান্য কর্মীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ প্রয়োজন।

ছয়, পুরনো ক্রাইম রেকর্ড আজই ঘাঁটতে হবে, প্রয়োজনে রাত জেগে। শহরে গত পাঁচ বছরে কতগুলো কিডন্যাপিং হয়েছে, কেসগুলোর সমাধান হয়েছে কি না, হলে অভিযুক্তরা এখন কোথায়, জেলে না জামিনে বাইরে, খোঁজ নিতে হবে। পুরনো কিডন্যাপারদের ছবি জোগাড় করতে হবে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের CRS (Crime Record Section) থেকে।

সাত, নতুন কোন গ্যাং? কিডন্যাপিং ছিঁচকে অপরাধীর কম্মো নয়। সাধারণত পেশাদার এবং পোড়খাওয়া গ্যাং-ই করে থাকে। পঁচিশ হাজারের জন্য একটা বাচ্চাকে তুলে নিয়ে গিয়ে মেরে দেওয়া, নাহ, হিসেব মিলছে না। একেবারে আনকোরা কোনও চক্র হলে অবশ্য অন্য কথা। পঁচিশ হাজার খুব বেশি টাকা নয় হয়তো, কিন্তু নেহাত কমও না, বিশেষ করে যদি কোনও বেপরোয়া উঠতি গ্যাং হয়।

আট, ঘুরেফিরে আটকে যাওয়া সেই প্রথম প্রশ্নেই, যে বা যারাই কাজটা করুক, টাকা তো হাতে আসেইনি। তার আগেই মেরে দিল? টাকা হাতে পাওয়ার পর মেরে ফেলার ঘটনা আছে। অপহৃতের পক্ষে যাতে পরে কিডন্যাপারদের চিনিয়ে দেওয়ার সুযোগ না থাকে, অনেক গ্যাং টাকা পাওয়ার পর খুন করে সেই সম্ভাবনাটুকুও নির্মূল করে দেয়। কিন্তু এক্ষেত্রে তো সেই থিয়োরিও খাটছে না। তা হলে?

নয়, বাবা-মাকে বাদ দিলে হারুনের সবচেয়ে কাছের মানুষ ছিল কুদ্দুস। হারুনের সঙ্গে রোজই ফুটবল মাঠে অনেকটা সময় কাটাত কুদ্দুস, গল্পগুজব করত। হারুনের ব্যাপারে কুদ্দুসের সঙ্গে কালই কথা বলা দরকার। কে সবচেয়ে কাছের বন্ধু ছিল, কী খেতে ভালবাসত, অন্য পছন্দ-অপছন্দ ইত্যাদি, জানা জরুরি।

যেমন দরকার সামসুদ্দিন, আলমগির আর একলাখকেও জিজ্ঞাসাবাদের। ওঁরা ঘনিষ্ঠ ছিলেন হাদিসের। পরিবারের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এবং শোক সামলে কিছুটা ধাতস্থ হলে হাদিসের স্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলা দরকার। বাইরে থেকে আর কতটুকুই বা বোঝা যায়, কে বলতে পারে খুনের মোটিভ হয়তো আদৌ মুক্তিপণ নয়, অজানা অভাবিত কিছু?

১৬ অগস্ট, ১৯৯৪, সোমবার সকাল পৌনে আটটা। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে আড়মোড়া ভাঙছে শহর।

ফার্স্ট পিরিয়ড চলছে Progressive Day School-এ। আশিক পৌঁছলেন জনাদুয়েক অফিসারকে নিয়ে, ডেকে নিয়েছেন কুদ্দুসকেও। প্রিন্সিপালের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা সেরে নিলেন আশিক। ঘটনার কথা এখনও কাগজে বেরোয়নি, তবে আজকের মধ্যে জানাজানি হবেই। কাল ফলাও করে বেরবেই ন’বছরের স্কুলছাত্রের অপহরণ এবং খুনের খবর। তার আগে ছাত্রদের কিছু না জানাতে অনুরোধ করলেন স্কুল কর্তৃপক্ষকে। স্কুলের শিক্ষক-অশিক্ষক সমস্ত কর্মীদের তালিকা প্রয়োজন। আর, ক্লাস ওয়ানের ছাত্রদের সঙ্গে একবার কথা বলা দরকার, কখন সম্ভব?

—এখনই চলুন, তবে বাচ্চারা যাতে ভয় পেয়ে না যায়, সেটা একটু …

—শিয়োর।

ক্লাসে ঢুকেই আশিক বুঝতে পারেন, বোকার মতো কাজ করে ফেলেছেন। ইউনিফর্ম পরে আসা ঠিক হয়নি, সিভিল ড্রেসে আসা উচিত ছিল। ক্লাস ওয়ান, কতই বা বয়স ওদের? বইখাতা নিয়ে কচিকাঁচার দল, বসে আছে বেঞ্চে। পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে গেছে, চোখেমুখে শঙ্কার জ্যামিতি।

—এই পুলিশ আঙ্কল তোমাদের সঙ্গে কিছু কথা বলবেন। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

ক্লাসটিচার শাহনাজের আশ্বাসে যে বিশেষ কাজ হয়নি, বাচ্চাদের দেখেই বোঝেন আশিক। লাভ হবে না জেনেও মুখ খোলেন, এসেই যখন পড়েছেন।

—হারুন, তোমাদের বন্ধু, আজকেও অ্যাবসেন্ট। ও বোধহয় দুষ্টুমি করে বাড়িতে না বলে অন্য কোথাও একটা লুকিয়ে রয়েছে। ওর বাবা-মা খুব চিন্তা করছেন। লাস্ট ফ্রাইডে যখন ছুটি হয়েছিল, তোমরা কি কেউ ওর সঙ্গে বেরিয়েছিলে?

পিনড্রপ সাইলেন্স।

—কেউ বলতে পারবে মনে করে, স্কুল থেকে বেরনোর পর হারুন কোনদিকে গিয়েছিল? তোমরা কেউ ছিলে সঙ্গে?

বাচ্চারা স্পিকটি নট।

আশিক বেরিয়ে আসেন। নাহ, এভাবে হবে না। কাল-পরশু অন্য অফিসারকে সিভিল ড্রেসে পাঠিয়ে টিফিন টাইমে কয়েকজন বাচ্চার সঙ্গে আলাপ জমাতে হবে। ব্রাইট স্ট্রিটের আশেপাশে, মানে হারুনের বাড়ির কাছাকাছি, স্কুলের অন্য কোন কোন ছাত্রের বাড়ি, সেটা বার করতে হবে স্কুলের রেজিস্টার থেকে। ওদের সঙ্গে কথা বলা দরকার।

প্রিন্সিপালের ঘরে ফিরে আসা হল। রয়েছেন আরও দু’-তিনজন সিনিয়র টিচার। ছাত্রদের

নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা করার প্রয়োজন, অভিভাবকদের ছাড়া ছুটির পর বাচ্চাদের বেরতে দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করার সময় হয়েছে, এইসব আলোচনা চলছে টুকটাক। কথাবার্তায় ছেদ পড়ে শাহনাজের আওয়াজে।

—স্যার, একটা কথা ছিল।

প্রিন্সিপাল তাকান। শাহনাজের পাশেই একটু ভীতসন্ত্রস্ত মুখে দাঁড়িয়ে এক ছাত্রও।

—স্যার, সাব্বির, হারুনের ক্লাসমেট। কিছু বলতে চায় মিস্টার আশিককে। তখন ভয় পেয়ে গিয়েছিল হঠাৎ পুলিশ দেখে।

আশিক ঝটিতি উঠে দাঁড়ান। বাচ্চাটা কিছু দেখেছিল? কী বলতে চায়? ক্লু বলতে এখনও পর্যন্ত কিছুই হাতে নেই। বাচ্চাটার থেকে মিলতে পারে আদৌ?

—আঙ্কল, ফ্রাইডে ছুটির পর আমি আর হারুন একসঙ্গে বেরিয়েছিলাম। রোজই একসঙ্গে যাই।

—ফ্রাইডেতে কী হল?

—বাড়ির কাছে এসে হারুনকে ‘বাই’ বলার সময় একটা লোক হারুনকে ডাকল।

—তোমার বাড়ি কোথায়?

—কাছেই।

—তারপর?

—তারপর হারুন খুশি মনে লোকটার সঙ্গে চলে গেল।

—খুশি মনে?

—খুশি মনে।

—লোকটাকে দেখলে চিনতে পারবে?

—ইয়েস স্যার।

—স্যার নয়, আঙ্কল।

আশিক গাল টিপে দেন সাব্বিরের। দ্রুত চিন্তা করতে থাকেন। বলছে, দেখলে চিনতে পারবে। মানে চেহারাটা মনে আছে। ছবি আঁকানো দরকার। একটা আলোর রেখা দরকার ছিল, সেটা বাচ্চাটা দিয়েছে। ক্যাডবেরি চকোলেট তো প্রাপ্যই একটা।

বাচ্চাটির হাত ধরে বেরিয়ে আসেন শাহনাজ। পিছুপিছু আশিক, প্রিন্সিপাল এবং অন্যান্য শিক্ষকরা। আশিক হাঁক দেন, কুদ্দুস, একটা ক্যাডবেরি কিনে আনো তো চটপট।

কুদ্দুস দাঁড়িয়ে ছিলেন গেটের কাছে, পুলিশের গাড়ির পাশেই। আশিকের ডাকে পিছন ফেরেন এবং ফুট বিশেক দূরে দাঁড়িয়ে থাকা কুদ্দুসকে দেখে শাহনাজের হাত জোরে চেপে ধরে সাব্বির।

—কী হল?

—মিস, ওই আঙ্কলটা! ওর সঙ্গেই হারুন খুশি মনে চলে গেছিল ফ্রাইডে।

আশিক মুহূর্তে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট। কুদ্দুসও। দু’জনে চোখাচোখি হয়। কয়েক সেকেন্ড মাত্র, কুদ্দুস রাস্তার দিকে দৌড় শুরু করার উপক্রম করতেই চিৎকার শুনতে পান গাড়ির গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা সহকর্মী অফিসার।

—ধরো ওকে!

থানার গাড়ির ড্রাইভারও ব্যাপার বুঝে লাফিয়ে নামেন। পালাবার পথ ছিল না কুদ্দুসের। কত দৌড়বে? উসেইন বোল্ট তো নন।

শেষমেশ কুদ্দুস? হারুনের কুদ্দুসচাচা? কিন্তু কেন?

—একা করিনি স্যার! একলাখও ছিল।

পার্ক স্ট্রিট থানার ওসি-র চেম্বারে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে থাকা কুদ্দুসের মুখ থেকে অস্ফুটে বেরোয় কথাগুলো। সঙ্গে সঙ্গে থানার গাড়ি স্টার্ট দেয় দেদার বক্স লেনে, একলাখের ঠিকানায়।

—কেন করলি ওইটুকু বাচ্চাকে খুন?

কুদ্দুসের জবানবন্দিতে খুলতে থাকে রহস্যের জট। এবং মোটিভের বৃত্তান্ত শুনে তাজ্জব হয়ে যান অফিসাররা। এত তুচ্ছ কারণে ন’বছরের একটা ছেলেকে এভাবে মেরে ফেলা যায়?

—হাদিসভাইয়ের জন্যই একলাখ আর আমি চাকরিটা পেয়েছিলাম। সামসুদ্দিনভাই, আমার আর একলাখ, দু’জনেরই দূরসম্পর্কের আত্মীয় হন। হাদিস খুব মানত সামসুদ্দিনভাইয়ের কথা। উনি অনুরোধ করায় ফেলতে পারেননি। মালিককে অনেক বলেকয়ে আমাদের চাকরিটা পাইয়ে দিয়েছিল হাদিসভাই।

—বেশ, তা সেই হাদিসের ছেলেকেই খুন করে কি ঋণশোধ করলি?

ফের দু’হাতে মুখ ঢাকে কুদ্দুস।

—মাথায় শয়তান ভর করেছিল স্যার। আমি চাইনি এর মধ্যে জড়াতে, একলাখের কথাতে করে ফেলেছি…

—ওটা তুই আগে ধরা পড়েছিস বলে বলছিস। একলাখ আগে ধরা পড়লে বলত, তোর কথাতে করেছে। দেখা আছে ওসব। মারলি কেন বাচ্চাটাকে?

—চাকরি পাওয়ার পর হাতে কিছু পয়সা আসত স্যার মাস গেলে। আগে তো এর থেকে ওর থেকে চেয়েচিন্তে চালাতে হত। আমি আর একলাখ প্রায় রোজই মদ খেতাম চাকরি জোটার পর। কাজে যেতে দেরি হয়ে যেত প্রায়ই। একদিন সুপারভাইজার খুব বকাবকি করল, কাজে ফাঁকি দেওয়ার জন্য নোটিস ধরাল। আমরা দু’জন সামসুদ্দিনভাইকে বললাম হাদিসভাইকে বলতে। হাদিসভাই মালিককে বোঝাল, আর একবার শেষ সুযোগ দিতে। মালিক অন্ধের মতো ভালবাসতেন হাদিসভাইকে। সুযোগ দিলেন, চাকরিটা বেঁচে গেল।

—তারপর?

—কিছুদিন আমরা মন দিয়ে কাজ করলাম, তারপর আবার যেই কে সেই। একলাখ শরীরের উপর এত অত্যাচার করত যে অসুস্থই হয়ে পড়ল। ফিরে গেল ছাপড়ার বাড়িতে। প্রায় ছ’মাস পরে ফিরল এই মাসখানেক আগে। ফ্যাক্টরিতে গেল, মালিক বলল, আর কাজে নেবে না। একলাখ কাজের মধ্যেই মদ খেত, হাদিসভাই অনেক বারণ করা সত্ত্বেও শুনত না। মালিক কিছুতেই আর কাজে নিল না।

একলাখ আবার ধরল সামসুদ্দিনভাইকে। এবার আর হাদিসভাই রাজি হল না মালিককে অনুরোধ করতে। স্পষ্ট বলে দিল, অনেকবার সাবধান করেছি, শুধরোসনি। আমার কথায় মালিক শেষ সুযোগ দিয়েছিল, সেই কথার দাম দিসনি, আমি এখন কোন মুখে বলব? তুই অন্য চাকরি খুঁজে নে। তর্কাতর্কি হল খুব।

—একলাখের ব্যাপারটা বুঝলাম। কিন্তু তুই তো দিব্যি চাকরি করছিলি…

—কোথায় আর করছিলাম স্যার? চাকরি তো টেম্পোরারি, পার্টটাইম। মালিক কিছুতেই পার্মানেন্ট করছিল না। সুপারভাইজার রিপোর্ট দিয়েছিল, দেরি করে আসি, কাজে ফাঁকি দিই। একলাখকে যখন আর কাজে রাখল না কোম্পানি, আমিও চিন্তায় পড়ে গেলাম। দরবার করলাম হাদিসভাইয়ের কাছে, তুমি একবার বললেই চাকরিটা পাকা হয়ে যায়। মাইনেটা বাড়ে। এত অল্প টাকায় আর চলছে না।

হাদিসভাই মুখের উপর বলে দিল, এখন বছরখানেক মুখ বুজে কাজ কর। দেখলি তো

একলাখের অবস্থা। সবাই জানে তোর আর একলাখের ব্যাপারস্যাপার। এখন কোনও চান্সই নেই পার্মানেন্ট হওয়ার, বেশি হইচই করলে যেটা আছে, সেটাও যাবে।

ভীষণ রাগ হয়ে গেল আমার। সেদিনই চাকরি ছেড়ে দিলাম। হাদিসভাইকে বললাম, তোমার দয়ার চাকরি আমি পায়ের তলায় রাখি। হাদিসভাইও রেগে গেল। বলল, তোদের দু’জনকে চাকরি জোগাড় করে দেওয়াই ভুল হয়েছে আমার।

—হুঁ…

—অমন ঝামেলা তো কতই হয়। আমি অত মনে রাখিনি স্যার। মিটমাট হয়ে গিয়েছিল। হাদিসভাইদের বাড়ি তারপরও যেতাম, হারুনকে ফুটবল খেলতে নিয়ে যেতাম। একলাখ কিন্তু চাকরি যাওয়াটা ভুলতে পারছিল না। একদিন ওর দেদার বক্স লেনের বাড়িতে ডাকল। মদ কিনে এনেছিল, অনেক রাত অবধি খেলাম। একলাখ আমার মনে বিষ ঢোকাল।

—আর তুই সে-বিষ ঢুকতে দিলি?

—মাথার ঠিক ছিল না স্যার। হাতে কাজকম্মো কিছু নেই। একলাখ বোঝাল, আমাদের দু’জনের চাকরি ইচ্ছে করলেই হাদিসভাই বাঁচাতে পারত। কিন্তু করেনি। শোধ নেব ওর জীবনটাও তছনছ করে দিয়ে। আমার যে কী ভূত চেপেছিল মাথায়, রাজি হয়ে গেলাম।

ছক কষলাম দু’জনে মিলে। হারুনকে কিডন্যাপ করব, পঁচিশ হাজার চাইব। টাকা নিয়ে দেশে ফিরে গিয়ে ব্যবসা করব। হারুনকে মেরে ফেলতেই হবে, ছেড়ে দিলে তো বলেই দেবে আমাদের নাম।

—কিন্তু টাকা তো আনতেই গেলি না … কেন?

—কী করে যাব স্যার? যেদিন দুপুরে হারুনকে তুললাম, সেদিন সন্ধে থেকে তো হাদিসভাইয়ের সঙ্গে। এখানে খুঁজছি, ওখানে খুঁজছি হারুনকে, কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে। হাদিসভাই টাকা নিয়ে বেরল সাড়ে ন’টায়, আমাদের বলল, তোরা থাক, ভাবিজানকে সামলা। মেয়েটাকে দ্যাখ।

তখন আমার বা একলাখের ব্রাইট স্ট্রিট থেকে বেরনোর উপায়ই ছিল না। ঘরভরতি লোক, কান্নাকাটি চলছে। প্ল্যান ভেস্তে গেল আমাদের।

—হারুনকে মারলি কখন?

কীভাবে খুন হয়েছিল হারুন, ফিরে দেখা ফ্ল্যাশব্যাকে।

১৩ আগস্ট, ১৯৯৪। স্কুল ছুটি হল, সাব্বিরের সঙ্গে বেরল হারুন, হেঁটে বাড়ি ফিরবে রোজকার মতো। আবদুল লতিফ স্ট্রিটে সাব্বিরের বাড়ির কাছে একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল কুদ্দুস। আর একটু দূরে একলাখ। কুদ্দুস হাত নেড়ে ডাকল হারুনকে। কুদ্দুসচাচাকে হঠাৎ ওখানে দেখে খুব খুশি হারুন, বায়না ধরল আইসক্রিমের। কুদ্দুস বলল, বেশ আমার বাড়িতে চলো। ওখানে আইসক্রিম আনব, খাওয়ার পর ব্রাইট স্ট্রিটে পৌঁছে দেব। একলাখও যোগ দিল কুদ্দুস-হারুনের সঙ্গে। একলাখের সঙ্গে তেমন ঘনিষ্ঠ ছিল না হারুন। তবে চিনত বাবা আর কুদ্দুসচাচার বন্ধু হিসেবে।

হারুনকে নিয়ে কুদ্দুস-একলাখ গেল ৩৬ আগা মেহেন্দি লেনের ভাড়াবাড়িতে। পরিকল্পনা ছিল ওখানেই খুনটা করার। ঢোকার মুখে দেখা হয়ে গেল এক প্রতিবেশীর সঙ্গে, যিনি হারুনের গাল টিপে আদর করে দিলেন। হারুনকে নিয়ে বাড়িতে ঢোকার সাক্ষী রাখা ঠিক হবে না, এই ভেবে হারুনকে নিয়ে যাওয়া হল একলাখের দেদার বক্স লেনের আস্তানায়। এই বলে, আইসক্রিম একলাখ চাচার বাড়িতে আছে।

যাওয়ার পথে দেখা হল শেখ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। দেদার বক্স লেনেই যাঁর সবজির দোকান। হারুনের বাবাকে চেনেন, সেই সূত্রে হারুনকেও। আদর করে বললেন, টফি খাবে? হারুন বলল, না না, আইসক্রিম খেয়ে বাড়ি ফিরব।

কোথায় আইসক্রিম? দেদার বক্স লেনের ফ্ল্যাটে ঢোকার পরই হারুন শুনল, কুদ্দুসচাচা বলছে একলাখচাচাকে, আর দেরি করে লাভ নেই, শেষ করে দিই!

কুদ্দুস-একলাখ গলা টিপে ধরলেন হারুনের। দম বন্ধ হয়ে মৃত্যু আসতে আর কতক্ষণ? কী-ই বা প্রতিরোধ সম্ভব ওইটুকু বাচ্চার পক্ষে?

বড় স্টিলের ট্রাঙ্ক কিনে কুদ্দুস দিনকয়েক আগে রেখে দিয়েছিল আগা মেহেন্দি লেনের বাড়িতে। রিকশা নিয়ে কুদ্দুস ফের গেল আগা মেহেন্দি লেনের ফ্ল্যাটে। ট্রাঙ্ক নিয়ে ফিরল দেদার বক্স লেনে। হারুনের দেহ ট্রাঙ্কে ঢুকিয়ে তালাবন্ধ করে দেওয়া হল।

যেমন আগে থেকেই ভাবা ছিল, ট্রাঙ্কবন্দি দেহ নিয়ে বেরল দু’জনে। এবং বেরিয়ে কাছেই

পেমেন্টাল গার্ডেন লেনের একটা পিসিও বুথ থেকে মুক্তিপণ চেয়ে একলাখ ফোন করল হাদিসকে। এরপর ট্যাক্সি নিয়ে সোজা হাওড়া স্টেশন।

বিকেল ৪-১৭ মিনিটের হাওড়া-কাঠগোদাম এক্সপ্রেসের লেডিজ় কম্পার্টমেন্টে কুদ্দুস-একলাখ তুলে দিল ট্রাঙ্ক। যা প্রায় আটচল্লিশ ঘণ্টা পরে পৌঁছল বেরিলিতে। ট্রেন জংশনে থামার পর যাত্রীরা নেমে গেলে সাফাইকর্মীদের চোখে পড়েছিল। কেউ হয়তো ফেলে গেছেন, এই ভেবে প্ল্যাটফর্মে ট্রাঙ্ক নামিয়ে রেখেছিলেন। সান্ধ্য টহলদারিতে চোখে পড়েছিল বেরিলির জিআরপি-র কর্মীদের।

রহস্য উন্মোচনের পর বাকি তদন্তভার পড়েছিল ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের হোমিসাইড শাখার তৎকালীন সাব-ইনস্পেকটর বিকাশ চট্টোপাধ্যায়ের উপর। যিনি সফল কর্মজীবন শেষে অবসর নিয়েছিলেন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হিসেবে।

কুদ্দুসকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে, খবর পেয়ে গিয়েছিল একলাখ। পালিয়েছিল রাজ্য ছেড়ে। সহজে পাকড়াও করা যায়নি, বিহারে গোয়েন্দারা দিনের পর দিন ঘাঁটি গেড়ে বসে থাকা সত্ত্বেও। অক্টোবরের শেষে দিনদুয়েকের জন্য এসেছিল কলকাতায়, সোর্স মারফত খবর পেয়েছিলেন বিকাশ। বিহারে আর ফেরা হয়নি একলাখের, ঠাঁই হয়েছিল শ্রীঘরে।

বিকাশ ছিলেন সেই গোত্রের অফিসার, যাঁরা কোনও ফাঁকফোকর রাখতেন না তদন্তে, ছেঁটে ফেলতেন ন্যূনতম ‘চান্স ফ্যাক্টর’ও। সাক্ষ্যপ্রমাণ প্রস্তুত করেছিলেন পেশাদারি পারদর্শিতায়। জাল বুনেছিলেন নিপুণ, যাতে হীনতম অপরাধের শাস্তি পায় অভিযুক্তরা।

ট্রাঙ্কটা কিনেছিলেন কুদ্দুস মল্লিকবাজারের একটা দোকান থেকে, ২২০ টাকা দিয়ে। দোকান চিহ্নিত হল কুদ্দুসের বয়ান অনুযায়ী, বাজেয়াপ্ত করা হল সংশ্লিষ্ট ক্যাশমেমোর কপি। দোকানদার কুদ্দুসকে চিনিয়ে দিলেন আদালতে। হ্যাঁ, এই লোকটাই কিনেছিল।

মুক্তিপণের ফোনটা পেমেন্টাল গার্ডেন লেনের যে STD বুথ থেকে করা হয়েছিল, তার হদিশ মিলল কুদ্দুসকে জেরা করে। বুথের মালিক ওয়াসিম মুবারকি জানালেন, কে ফোনটা করেছিল, চিনতে পারবেন মুখ দেখলে। আদালতে চিনিয়ে দিলেন কুদ্দুসকে, ফোন করার সময় পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একলাখকেও। বুথের ‘কল রোল’ বাজেয়াপ্ত করা হল, যা নিশ্চিত প্রমাণ করল হাদিসের ফ্যাক্টরিতে ১৩ অগস্ট সোয়া তিনটের ফোন কল।

রিপন স্ট্রিট এলাকায় বা আশেপাশের ট্যাক্সিস্ট্যান্ডে খোঁজখবর করে সন্ধান পাওয়া গেল সেই ট্যাক্সিরও, যাতে চড়ে ট্রাঙ্কবন্দি মৃত হারুনকে নিয়ে কুদ্দুস-একলাখ রওনা দিয়েছিল হাওড়া স্টেশনে। WB-04/2052-র ড্রাইভার মহম্মদ আকবর সাক্ষ্য দিলেন আদালতে। সেই বিকেলের দুই আরোহীকে চিনিয়ে দিলেন, যারা একটা বড় ট্রাঙ্ক নিয়ে উঠেছিল গাড়িতে।

যে রিকশা করে ট্রাঙ্ক নিয়ে আগা মেহেন্দি লেন থেকে একলাখের দেদার বক্স লেনের বাড়িতে এসেছিলেন কুদ্দুস, খোঁজ মিলল তার চালকেরও। মহম্মদ সামসাদ, যার বয়ান পেশ হল আদালতে এবং যিনি দেখেই চিহ্নিত করলেন কুদ্দুসকে।

আগা মেহেন্দি লেনের যে প্রতিবেশী হারুনকে দেখেছিলেন কুদ্দুস-একলাখের সঙ্গে, দেদার বক্স লেনের যে সবজিবিক্রেতা হারুনকে টফি খাওয়াতে চেয়েছিলেন, তাঁদের বয়ানও গুরুত্বপূর্ণ পারিপার্শ্বিক প্রমাণ হিসেবে জায়গা পেল চার্জশিটে।

কফিনে শেষ পেরেক ঠোকার কাজটা বাকি ছিল। সম্পূর্ণ হল হারুনের প্রাণের বন্ধু ছোট্ট সাব্বির রহমানের বয়ানে। একসঙ্গে স্কুল ছুটির পর বেরনো, কুদ্দুসের ডেকে নেওয়া হারুনকে আর হারুনের খুশি মনে চলে যাওয়া। শনাক্তকরণে মুহূর্তের জন্যও দ্বিধাগ্রস্ত দেখায়নি সাব্বিরকে। সোজা আঙুল দেখিয়েছিল কুদ্দুসের দিকে, এই আঙ্কলটাই!

দীর্ঘ বিচারপর্বের পর ২০০৩ সালে দোষী সাব্যস্ত হয় কুদ্দুস-একলাখ, দণ্ডিত হয় যাবজ্জীবন কারাবাসে। উচ্চ আদালতে মুক্তির আবেদন অগ্রাহ্য হয়।

‘The Murder Room’, অন্যতম সেরা উপন্যাস ফিলিস ডরোথি জেমসের। যে প্রখ্যাত ব্রিটিশ গোয়েন্দাকাহিনি লেখিকা পিডি জেমস নামেই পরিচিত পাঠকদের কাছে। উপন্যাসটিতে লিখেছিলেন, “All the motives for murder are covered by four Ls: Love, Lust, Lucre and Loathing.”

ঠিকই। খুনের নেপথ্যে ওই চারটে কারণই থাকে শেষ বিচারে। এক, প্রেম। দুই, কামনা বা যৌন-ঈর্ষা। তিন, অর্থলোভ। চার, তীব্র রাগ-ঘৃণা-বিদ্বেষ। হারুন শিকার হয়েছিল তালিকায় চার নম্বর অনুভূতির।

কী বিচিত্র এই দ্বেষ!

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *