‘কলকাতা’ নাম
কলকাতা শহরের নাম নিয়ে গবেষণার অন্ত নেই, ইদানীং নয়, বহুকাল থেকে। তৎসত্ত্বেও এই গ্রন্থে ‘কলকাতা’ নাম নিয়ে কোনো গবেষণায় প্রবৃত্ত হইনি, অনাবশ্যকবোধে।
‘কলকাতা’ বা ‘ক্যালকাটা’ নাম নিয়ে গবেষণার কয়েকটি দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। (১) ‘কিলকিল’ থেকে কলকাতা। (২) প্রথম কলকাতায় পদার্পণ করে এক সাহেব কোনো হিন্দুস্থানী ঘাসুড়েকে জিজ্ঞাসা করেন, জায়গাটার নাম কি? ঘাসুড়ে ভাবে সাহেব জিজ্ঞাসা করছে, কবে ঘাস কাটা হয়েছে। উত্তরে সে বলে ‘হুজুর, কলকাটা’ (গতকাল কাটা)। এই ‘কলকাটা’ থেকে ক্যালকাটা এবং তাই থেকে কলকাতা-কলিকাতা। (৩) কালীঘাটের কালীতীর্থ কালীক্ষেত্র থেকে কালীক্ষেত্ত-কালীকেত্ত-কলিকাতা, যার ইংরেজি রূপ ক্যালকাটা। (৪) রেভারেণ্ড লঙের মতো বিচক্ষণ ব্যক্তিও বলেন, মারাঠাদের প্রতিরোধের জন্য ‘কাটা খাল’ (মারাঠা ডিচ, পরে সার্কুলার রোড) থেকে ‘ক্যালকাটা’ নাম হতে পারে, যেমন টিপু সুলতানের মসজিদের জন্য ‘ধর্মতলা’ নাম ইত্যাদি। এদেশীয় আঞ্চলিক নাম নিয়ে ‘সাহেবী’ গবেষণার এটি একটি বিশেষ দৃষ্টান্ত। (৫) কলিচুণের কাতা থেকে ‘কলিকাতা’ নামের উৎপত্তি হতে পারে, শ্রীযুক্ত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের এই প্রতিপাদ্য আমিও সমর্থন করি (শ্রীসুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় : ‘কলিকাতা’ নামের ব্যুৎপত্তি : সাহিত্য পরিষৎ পত্রিকা, ৪৫ বর্ষ ১ম সংখ্যা; বিনয় ঘোষ : পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি, প্রথম সংস্করণ ১৯৫৭ : ‘ছোট কলিকাতা’, পৃষ্ঠা ৫৯৭-৬০৪; Benoy Ghosh. ‘Notes on the History of Old Calcutta’ in Calcutta Municipal Gazette, Vol, 61, No. 15, 12 February, 1955)। সম্প্রতি শ্রীযুক্ত রাধারমণ মিত্র ‘এক্ষণ’ পত্রিকায় (১৩৭৬-৭৭) এ বিষয়ে প্রণিধানযোগ্য দীর্ঘ আলোচনা করেছেন।
কিন্তু কলিচুনের কাতা থেকে কলিকাতা নাম উৎপত্তি হোক বা নাই হোক, নামটি যে বিশুদ্ধ এদেশীয় নাম এবং ইংরেজদের আগমনের অনেক আগে থেকেই ছিল, এমনকি একাধিক গ্রামের নাম ছিল, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে বিভিন্ন মঙ্গলকাব্যে, পরবর্তী ‘আইন-ই-আকবরী’ প্রভৃতি প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক গ্রন্থে, ‘কলিকাতা’ নাম ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ ‘বর্ধমান’ নাম যদি ‘বার্ডোয়ান’ নাম (Burdwan), ‘মেদিনীপুর’ যদি ‘মিডনাপুর’ হতে পারে, তাহলে ‘কলিকাতা’ ‘কলকাতা’ ইংরেজ আমলের ‘ক্যালকাটা হতে বাধা নেই। ‘কলিকাতা’ নামে ‘বুৎপত্তি’ নিয়ে ভাষাতাত্ত্বিক গবেষণা হতে পারে, নামের ‘ইতিহাস’ নিয়ে গবেষণা অনাবশ্যক।