কলকাতা ১৮৪০-৫০
লটারি কমিটির উন্নয়ন ও শোভাবর্ধনের কাজ শেষ হবার পর কলকাতার পথঘাট হাটবাজার ও বিভিন্ন স্থানের একটি বিবরণ পাওয়া যায় The Bengal and Agra Annual Guide and Gazetteer for 1841, Vol I, Part III থেকে। বিবরণটি বিশেষ আকর্ষণীয় এই কারণে যে রামমোহনের পর, ডিরোজীয়ান বা ইয়ংবেঙ্গলের যুগে, প্রায় বিদ্যাসাগরের কাল (ছাত্রজীবন তো বটেই) পর্যন্ত কলকাতা শহর আকারে-প্রকারে কেমন ছিল, তার পরিচয় পাওয়া যায় এর মধ্যে। তা ছাড়া অনেক প্রাচীন স্থান ও নামের ঠিকানাও এই বিবরণের মধ্যে পাওয়া যায়, যা কলকাতা শহরের ইতিহাস-সন্ধানীদের কৌতূহল উদ্রেক করবে।
ধর্মতলা ১৮৪১। রাস্তার দু’পাশেই অনেক ঘরবাড়ি দেখা যায়, মাটির কুঁড়েঘর সংখ্যায় অল্প (‘comparatively few native hut’s)।
ওয়েলেসলি রোড ১৮৪১। বেশ ভাল রাস্তা (‘a fine street’), কিন্তু লাইন ধরে সারবন্দি কুঁড়েঘর এবং এদেশীয় খালাসীদের উপদ্রবের জন্য কুখ্যাত (আজও এই স্থানটি খালাসীটোলা নামে খ্যাত)। অঞ্চলটিতে বেকার ও বেশ্যাদের যথেষ্ট ভিড় (….lined almost continuously with native huts and exposed to the greater nuisance of the kalasee or native seamen’s quarters, which is situated about the middle of it, near the spot at which it intersects the Jaun Bazar Street, and is inhabited by a debauched and otherwise totally demoralised mass of people, composed chiefly of those who are out of employment or who live by prostitution’)।
আপার ও লোয়ার সার্কুলার রোড ১৮৪১। সুন্দর রাস্তা, কিন্তু ঘরবাড়ির সংখ্যা অল্প বলে ছন্নছাড়া ও ফাঁকা মনে হয় ‘(‘but the paucity of houses gives them a straggling, and here and there, a desolated appearance…’)
চৌরঙ্গি ১৮৪১। চৌরঙ্গিতে ভাল ভাল রাস্তা আছে অনেক, কিন্তু তেমন দীর্ঘ বা প্রশস্ত নয়। ক্যামাক স্ট্রীট বেশ ভাল রাস্তা, কিন্তু বাড়িঘরের সংখ্যা এখনও খুব কম, এবং এর দক্ষিণ দিকে প্রচুর কুঁড়েঘর ও খালি জমি (‘Camac Street is also a very good street, but has as yet few buildings, and towards its southern extremity has numerous huts and much unoccupied ground…’)।
লাউডন স্ট্রীট ১৮৪১। সম্প্রতি তৈরি বেশ কয়েকটি ভাল বাড়ি আছে। কিন্তু ভাল বাড়ির সৌন্দর্য প্রচুর জরাজীর্ণ পর্ণকুটিরের জন্য বিকৃত মনে হয় (‘…has several good houses of recent erection but it too at the same time, is disfigured by many unseemly and barbarous hovels’)।
কসাইতলা ১৮৪১। কসাইতলা (বেণ্টিক স্ট্রীট অঞ্চল) ও তার সংলগ্ন অঞ্চলে অনেক বাড়ির সামনের দিকে ‘shop fronts’ তৈরি করা হয়েছে এবং এই রকম দোকানঘরের শো-রুম তৈরি করার প্রবণতা ইদানীং ইয়োরোপীয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে বেশ প্রবল হয়ে উঠেছে (‘Of late, however there have been shop-fronts added to the lower stories of several of the houses in Cossitollah and other streets; and the propensity towards this kind of improvement is daily increasing among the European tradesmen)।
রাইটার্স বিলডিংস ১৮৪১। স্কয়ারের (ট্যাঙ্ক স্কয়ার, অর্থাৎ ডালহৌসি স্কয়ার) একদিকে একসারির অনাকর্ষণীয় ঘরবাড়ি দেখা যায়, যার নাম ‘রাইটার্স বিলডিংস’ (‘A range of indifferent looking houses, known by the name of the Writers’ Buildings, occupies, one side of the Square.’)।
শহরতলী (Suburbs) ১৮৪১। আলিপুর ও বালিগঞ্জ বেশ স্বাস্থ্যকর জায়গা। বালিগঞ্জে বিশাল একটি খোলা জায়গার মধ্যে কয়েকটি ভাল বাড়ি আছে, গবর্ণর-জেনারেলের বডিগার্ডরা সেখানে থাকে। তারপর উত্তর দিকে অনেকটা এগিয়ে গেলে, সার্কুলার রোডের পূর্বদিকে, এণ্টালি। এখানে অনেক বাড়িঘর আছে এবং প্রধানত মধ্যবিত্তরা এখানে বাস করে (‘inhabited principally by the middling classes’)। মারাঠা খালের অপর পারে অবস্থিত বলে এণ্টালি অঞ্চলে সুপ্রীম কোর্টের এলাকাভুক্ত নয়। আরও উত্তর দিকে বৈঠকখানা বৌবাজার ছাড়িয়ে এগিয়ে গেলে, সল্ট লেকের দিকে বরাবর টানা রাস্তা চলে গিয়েছে। এই রাস্তায় কয়েকটি ভাল বাড়ি আছে। উত্তর-পশ্চিমে অনেকটা গেলে সিমলা ও অন্যান্য শহরতলি অঞ্চল দেখা যায়। এটা সম্পূর্ণ এদেশিয় লোকের বসত অঞ্চল, মধ্যে মধ্যে ধনিক ব্যবসায়ীদের বেশ বড় বড় সুদৃশ্য বাগানবাড়ি আছে।
কলকাতার বাজার
১৮৪১ সালের এই গেজেটিয়ার কলকাতার হাটবাজারের একটি তালিকা আছে। তালিকাটির বিশেষ ঐতিহাসিক মূল্য আছে বলে এখানে উদ্ধৃত হল :
আর্মেনিয়ার বাজার : সাউথ রোড। এণ্টালি।
বালিগঞ্জ কা হাট : বডিগার্ড লাইনের উত্তরে। সপ্তাহে দুদিন হাট হয়, বৃহস্পতি ও রবিবার।
বাগবাজার : বাগবাজার স্ট্রীট ও চিৎপুরের সংযোগস্থলে।
বীরুশীলের বাজার : পদ্মপুকুর এণ্টালির দক্ষিণপূর্ব কোণে।
বিশ্বনাথ মতিলালের বাজার : নতুন বাজার, বৌবাজার স্ট্রীটের দক্ষিণে।
বৈঠকখানা বাজার : বৈঠকখানা গির্জার দক্ষিণে।
বৌবাজার : ৬০ নং বৌবাজার স্ট্রীট।
বোষ্টমচরণ মল্লিকের বাজার : ৩৪৪ নং চিৎপুর রোড।
চাঁদনি চক বাজার : ১৬ নং ধর্মতলা স্ট্রীট।
কর্নেল পীয়ার্সের বাজার : গার্ডেন রীচ।
কলিঙ্গ বাজার : ওয়েলেসলি স্ট্রীট, কলিঙ্গের পশ্চিমে চাউলহাট্টা।
কলভিন বাজার : সিমলা।
দেবনারায়ণ দাসের বাজার : মৌলা আলি কা দরগার উল্টো দিকে।
দেওয়ান গোকুল ঘোষালের বাজার : খিদিরপুর।
ধর্মতলা বাজার : ১ নং চৌরঙ্গি রোড (ডাঃ জ্যাকসন কিনেছেন।)।
ফেনউইক বাজার : হাড়িয়াবাগানের পুবদিকে।
ফৌজদারী বালাখানা বাজার : চিৎপুর রোড, মুর্গিহাটা স্ট্রীটের পূর্বপ্রান্তে।
গোপাল মল্লিকের বাজার : ৩৩ নং চিৎপুর রোড, টিরেটা বাজারের উত্তরে।
গোপীবাবুর বাজার : ধর্মতলা ও জানবাজারের মধ্যস্থলে।
গঙ্গানারায়ণ সরকারের বাজার : ভবানীপুর রোডের উল্টোদিকে।
হাজী কারবালায়ের বাজার : কলেজ স্কয়ারের পশ্চিমে, পটলডাঙ্গায়।
জানবাজার : ওয়েলেসলি-বৌবাজারের সংযোগস্থলে।
কাশীমল্লিকের বাজার : ১৩ নং লোয়ার সার্কুলার রোড।
লালাবাবুর বাজার : ৩৪৩ নং চিৎপুর রোড।
মেছুয়াবাজার : ২০৯ নং মেছুয়াবাজার স্ট্রীট।
মাধব দত্তের বাজার : কলেজ স্কয়ারের পশ্চিমে।
মুনশি আমিনুদ্দিনের বাজার : শিয়ালদহ ও কুমোপাড়ার মধ্যস্থলে, পর্তুগিজ গোরস্থানের উত্তরে, আপার সার্কুলার রোড।
তালিকাভুক্ত অধিকাংশ হাটবাজার নামসহ বর্তমানে লুপ্ত। তালিকায় হগ সাহেবের বাজারের (নিউ মার্কেট) নাম নেই, কারণ ১৮৪১ সালে এই বাজার ছিল না। ‘নিউমার্কেট’ ১৮৭১-৭৪ সালে তৈরি হয়। বোঝা যায়, কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলের ধনিক প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিরা বাজার স্থাপন করতেন অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে। বীরুশীল, বিশ্বনাথ মতিলাল, বৈষ্ণবচরণ মল্লিক, কর্নেল পীয়ার্স, দেবনারায়ণ দাস, দেওয়ান গোকুল ঘোষাল, ফেনউইক, গোপাল মল্লিক, গোপীবাবু (গোপীমোহন ঠাকুর), গঙ্গানারায়ণ সরকার, কাশী (নাথ) মল্লিক, লালাবাবু, মাধব দত্ত, মুনশি আমিনউদ্দিন, এঁদের প্রত্যেকের আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠা ছিল যথেষ্ট এবং নিজেদের জমিজায়গাতে বাজার বসিয়ে এঁরা প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছেন। বাজারগুলিকে ছোটখাট জমিদারির সঙ্গে তুলনা করা চলে।
কলকাতার পথঘাট স্থান ১৮৪১
আমহার্স্ট স্ট্রীট : নতুন রাস্তা, বৌবাজার থেকে, সেণ্ট জেমস চার্চের উত্তরে।
আর্মেনিয়ান বেরিয়াল গ্রাউণ্ড লেন : আর্মানি গোরস্তান কা রাস্তা। টিরেটা বাজারের কোণাকুণি।
আর্মেনিয়ান চার্চ : ১নং ওল্ড চীনাবাজার স্ট্রীট।
বুলার্ডস বিল্ডিংস : আলেকজাণ্ডার কা বাড়ি, ৩১ নং চৌরঙ্গি রোড, অধুনালুপ্ত চৌরঙ্গি থিয়েটারের দক্ষিণে।
বামুনবস্তি : পার্কস্ট্রীট-চৌরঙ্গির দক্ষিণে তৃতীয় রাস্তা।
বেনিয়াতলাও : গৌখানার পুবে, লোয়ার সার্কুলার রোডে।
ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস : পাদ্রি পীয়ার্স কা ছাপাখানা, ১১নং লোয়ার সার্কুলার রোড।
বিবি কুপার কা ইমামবাড়ি : ১৩৪ নং, ওয়েলেসলি স্কয়ারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে একটি গলিতে।
বিবি ডানকান কা বস্তি : ৫ ও ৬ নং ক্যামাক, উড ও পার্কস্ট্রীটের জংশনে।
বেঙ্গল ক্লাব হাউস : ট্যাঙ্ক স্কয়ার (ডালহৌসির) পুবদিকে।
ব্ল্যাকবার্ন লেন : চুণাগলি (Choona Gully), বৌবাজারের উল্টেদিকে।
বণ্ডেড অয়ার হাউস : পূর্ণ বনাৎ গুদাম। ৭ নং ক্লাইভ স্ট্রীট।
ক্যামাক স্ট্রীট : বাদামতলা কা দক্ষিণ রাস্তা। পার্কস্ট্রীট চৌরঙ্গির দক্ষিণে তৃতীয় রাস্তা।
কামার লেন : ব্যাপারীতলা স্ট্রীটের কোণাকুণি।
চাঁদ সেরাঙের মসজিদ : ১৭০ নং তালতলা লেন।
ছাতাওয়ালা গলি : বৌবাজারের উত্তরে প্রথম গলি, লালবাজারের দিক থেকে।
চিনাবাজার স্ট্রীট (ওল্ড) : লালবাজারের কোণে।
চিনাবাজার (নিউ) : লায়নস রেঞ্জের উত্তরে, পুরাতন কেল্লার (Old Fort) উল্টোদিকে।
চৌরঙ্গি রোড : ঝাঁঝরি তলাও কি পুরব রাস্তা।
চুনাম গলি (Chunan Gully) : বৌবাজার লেনের উল্টোদিকে।
চার্চ লেন : পাথরিয়া গির্জা কা পশ্চিম রাস্তা, সেণ্ট জনস গির্জার পশ্চিম দিকে।
চার্চ মিশন প্রেস : মিশন রো।
খৈরু মেতরের মসজিদ (Coiroo Metter’s Mosque) : ১২ নং খৈরু মেতরের লেন। ‘মেতর’ মুসলমান সেক্ট।
কলিঙ্গ পুলিস থানা : ৫৬ নং কলিঙ্গ বাজার স্ট্রীট।
কলিঙ্গ কা পাঁচপীর দরগা : ২৪ থেকে ২৭ নং কলিঙ্গ ফার্স্ট লেন। এদেশীয়রা একে পাঁচপীরের দরগাই বলে।
কলিঙ্গ ফার্স্ট লেন : এই লেনের প্রায় প্রত্যেক বাঁকের একটি করে এদেশীয় নাম আছে, কিন্তু নামগুলি এখন এমন বিকৃত যে সেগুলির আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করা অসম্ভব। কলকাতার রাস্তার মধ্যে এরকম কুটিল রাস্তা বিরল। এখানকার অনেক বাড়িঘর ওয়েলসলি স্কয়ার ও স্ট্রীট তৈরির সময় ভেঙে ফেলা হয়েছে। কলিঙ্গ বাজার স্ট্রীটের (জানবাজার থেকে) পূর্বদিকের প্রথম রাস্তা হল এইটি। এর একটা অংশ এখন ওয়েলেসলি স্কয়ারের মধ্যে, লুপ্ত, বাকি অংশ এই স্কয়ারের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে দেখা যায়।*
কলিঙ্গ বাজার স্ট্রীট : জানবাজার স্ট্রীটের দক্ষিণে ষষ্ঠ রাস্তা (6th Lane), প্রায় ওয়েলেসসি স্ট্রীট পর্যন্ত বিস্তৃত।
কলভিন ঘাট : কাচাগুড়ি ঘাট, চাঁদপাল ঘাটের উত্তরে।
কম্যানড্যাণ্টস গার্ডেন : ‘কম্যানধন কা বাগিচা’ ৭০ থেকে ৭৭ নং কলিঙ্গ মুচিপাড়া লেন।
কুপাস লেন : ১১ নং ও ১২ নং কসাইতলা স্ট্রীটের মধ্যিখানে।
কর্ণওয়ালিস স্কয়ার : হেদুয়া পুকুর।
ক্রীক রো : ডিঙ্গা ভাঙা।
ক্রুকেড লেন : বাঁশতলা গলি, ডেকাস লেন থেকে টানা বেরিয়েছে।
ডেকার্স লেন : বাঁশতলা গলি।
ধর্ম ঠাকুর (Dhammoh Thekoor) : ৫১ নং জানবাজার স্ট্রীট।
ডিঙ্গাডাঙ্গা লেন : ৩৯ ও ৪০ নং ধর্মতলা স্ট্রীটের মধ্যে।
ডুমতলা স্ট্রীট : ১৪ ও ১৫ নং রাধাবাজার স্ট্রীটের মধ্যে।
ডুকুরিয়া বাগান (Dookoorea Bagan) : ফ্রি স্কুলের উত্তরে, জানবাজার।
ইমামবাড়ি লেন : ৫৩ ও ৫৪ নং কসাইতলা স্ট্রীট।
একসচেঞ্জ রুম : ট্যাঙ্ক স্কয়ারের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে।
ফেনউইক লেন : লিন্ডসে স্ট্রীটের দক্ষিণে প্রথম রাস্তা।
ফার্গুসন লেন : ইলিসিয়াম রো-তে।
ক্রেমিঙ লেন : চুণাম গলির উত্তর-পশ্চিমে।
ফ্রি স্কুল : কোম্পানি কা স্কুল। ফ্রি স্কুল স্ট্রীটের উত্তর সীমায়, পশ্চিমদিকে।
ফ্রেণ্ড বেরিয়াল গ্রাউন্ট : ৮ নং গোরস্তান লেন। পুরাতন গোরস্তানের (পার্ক স্ট্রীট) পশ্চিমদিকে।
গ্যাস্টিন প্লেস : গাষ্টিন কা বাড়ি।
গোয়ালটুলি : জানবাজার ও ধর্মতলার মধ্যেকার অঞ্চল, মট লেন দ্বারা বিভক্ত।
গুমঘর লেন : ‘নেটিভ’ হাসপাতালের পূর্বদিকে, ধর্মতলায়।
গর্ডন লেন : ওয়েলিংটন স্কয়ারের পুবকোণে।
গোরস্তান লেন : ‘পুরান গোরস্তান কা পশ্চিম রাস্তা’ রডন স্ট্রীটের প্রায় উল্টোদিকে।
গুড়িয়ামা পুকুর লেন : (Gooreamah pookar Lane) : চাঁদনি চক স্ট্রীটের সোজা, কেণ্ডারডাইন লেন পর্যন্ত।
হীরাকাটা লেন (Heeracotta Lane)* : আগে নাম ছিল নিমু খানসামা লেন, মেডিক্যাল কলেজের দক্ষিণে।
হারু খানসামা কা মসজিদ (Harrow Khanshama Ka Musjid) : ১৫ নং ইমামবাগ লেন।
হাড়িপাড়া লেন : তালতলা পুলিশ থানার পুবদিকে (৬৮ ও ৬৯ নং জানবাজার রোড)।
হিদারাম ব্যানার্জি লেন : ১৫ ও ১৬ নং কেণ্ডারডাইন লেন। ওয়েলিংটন স্ট্রীট পার হয়ে, সেন্ট জেমস গির্জার উল্টোদিকের রাস্তায় শেষ হয়েছে।
হিলস লেন (Hill’s Lane) : ‘জনি খানসামা কা গলি’, এলিয়ট রোডে।
হিন্দু কলেজ : ‘পটলডাঙ্গা স্কুল ঘর।’ কলেজ স্কোয়ারের দক্ষিণে।
জ্যাকসন ঘাট : ‘মতিলাল শীল কা কল ঘাট।’ মতিলাল শীলের ক্রু-গুদামের (screw-godown) দক্ষিণদিকে।
জ্যাকসন ঘাট স্ট্রীট : ‘মতিলাল শীল কা কল ঘর কা সামনা রাস্তা’।
জানবাজার : ওয়েলেসলি স্ট্রীট ও বৌবাজার স্ট্রটের সংযোগস্থলে।
জবস লেন (Job’s Lane) : ৩৫ ও ৩৬নং কসাইতলা স্ট্রীটের মধ্যে থেকে ছোট রাস্তা।
জেলিয়া পুকুর (Jaleah pooker) : বৌবাজারে, স্কট লেনে।
ঝাঁঝরি তলাও : লিণ্ডসে স্ট্রীটের দক্ষিণে।
জোড়া তলাও : এইসব পুকুর এখন নেই, কিন্তু নামগুলো আছে। ২০ ও ২৪ নং ফ্রি স্কুল স্টীটে এই পুকুরগুলো ছিল।
কেরস লেন (Kerr’s Lane) : ফ্রি স্কুল স্ট্রীটের পুবে চতুর্থ রাস্তা।
কার্ক (চার্চ, সেন্ট অ্যানড্রুজ) : লর্ড গির্জা, ট্যাঙ্ক স্কয়ারের উত্তরপূর্ব কোণে।
কারবালা : মাণিকতলা ও আপার সার্কুলার রোডের সংযোগস্থলে উত্তর কোণে।
কিড ষ্ট্রীট : ঝাঁঝরি তলাও কা রাস্তা।
লিণ্ডসে বিল্ডিং : পুরান ডাকঘর কা দক্ষিণ রাস্তা।
লায়ন্স রেঞ্জ : কোম্পানি কেরানি কা বাড়ি (Writers’ Buildings) কা উত্তর রাস্তা।
মহামাডান কলেজ : ওয়েলেসলি স্কয়ারের উত্তরে।১
মাখনওয়ালা গলি : ৬৭-৬৮ নং সার্কুলার রোডের মধ্যে।
মেরিডিথ লেন : নলপুকুর কা বাড়ি কা রাস্তা, ওয়াটারলু স্ট্রীটের উল্টোদিকে।
মিডলটন রো : চৌরঙ্গি গোল তলাও রাস্তা।
মিডলটন স্ট্রীট : পুরান বকসিখানা কা রাস্তা।
মেণ্ডি (Mendee) বেগম লেন : পার্ক স্ট্রীটের সমান্তরাল রাস্তা।
মিশ্রী খানসামা কা মসজিদ : ১০৬ নং কলিঙ্গ বাজার স্ট্রীট।
মিশ্রী গঞ্জ : জানবাজারের দক্ষিণে, প্রথম রাস্তা।
মৌলা আলি কা দরগা : এন্টালিতে প্রবশের মুখে (মৌলালি)।
ময়রা স্ট্রীট : শর্টস বাজারে।
মট লেন : মট সাহেব কা গলি।
নবাব কা বাগিচা : ১৯-২০ নং নিয়োগীপুকুর ইস্ট লেন, ৮৪ নং জানবাজার স্ট্রীট।
নিয়োগী পুকুর : ৮৪ নং জানবাজার স্ট্রীটের পিছনের গলিতে।
নল (নাল) পুকুর লেন : সুতারকিন লেনের লাইনে।
নানকু জমাদার লেন : নানকু জমাদার বা ‘বৌ বিবি কা গলি’ ধর্মতলা স্ট্রীট থেকে বেরিয়েছে, কসাইতলার পূবদিকে দ্বিতীয় রাস্তা।
পেটি কোর্ট (Petty Court) : টুলো কেম্পানির নিলামঘরের দক্ষিণে।
পেটি কোর্ট জেল ষ্ট্রীট : মেডিক্যাল কলেজের পশ্চিমে।
পটলডাঙ্গা কা তলাও : কলেজ স্কয়ার।
পাবলিক লাইব্রেরী : ১২ নং এসপ্লানেড রো।
পাঁচ পীর কা দরগা : ২৪-২৭ নং কলিঙ্গ ফার্স্ট লেন।
রানি মুদি গলি : কসাইতলার পশ্চিমে, ২৩-২৪ নম্বর বাড়ির মধ্যে।
রফিক সেরাঙ লেন : রফিক সেরাঙ কা গলি, ইমাম বাগ লেনের উত্তরে।
খালাসীটোলা : ধর্মতলায়।
শাঁখারীটোলা লেন : ৪৯-৫০ নং ধর্মতলা স্ট্রীট।
সার্পেনটাইন লেন : বৈঠকখানা গৌখানা কা রাস্তা।
শর্টস বাজার স্ট্রীট : কলভিন ঘাটে, স্ট্র্যাণ্ড।
সসর্সেট প্লেস : কলভিন ঘাটে, স্ট্রাণ্ড।
সেন্ট জেমস চার্চ : নেডা গির্জা।
সদর স্ট্রীট : বোর্ড ঘরকা উত্তর রাস্তা।
থিয়েটার রোড : নাচঘর কা উত্তর রাস্তা : পুরনো চৌরঙ্গি থিয়েটারের উত্তরে।
ট্রেডস অ্যাসোসিয়েশন রুম : ১২ নং ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রীট।
জিগজ্যাগ লেন : মীরজানি কা গলি।
সদর দেওয়ানি ও নিজামৎ আদালত : জেনারেল হসপিটালের পশ্চিমে। ভবানীপুর।
সুপ্রীমকোর্ট : ২ নং এসপ্লানেড রো।
বর্তমানে সুপ্রীমকোর্ট নেই, সদর দেওয়ানি ও নিজামৎ আদালতও নেই। তার বদলে হাইকোর্ট জজকোর্ট ছোট আদালত ইত্যাদি আছে। বামুনবস্তি নেই, লটারি কমিটি তাকে চৌরঙ্গির অভিজাত অঞ্চলে রূপায়িত করেছেন। থিয়েটার রোড আছে ভিন্ন নামে, কিন্তু নাচঘর বা চৌরঙ্গি থিয়েটার নেই। ‘তলাও’ কয়েকটি এখনও আছে, কিন্তু গোলদীঘি বা কলেজ স্কয়ার যে ‘পটল ডাঙ্গা কা তলাও’ নামে পরিচিত ছিল তা অনেকের জানা নেই। মহাত্মা গান্ধী, পণ্ডিত জওহরলাল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বা রবীন্দ্রনাথের মতো স্বনামধন্য নন, এরকম অনেক অখ্যাত হিন্দু-মুসলমান খ্রীস্টান পুরুষ-মহিলার স্মৃতি প্রাচীন কলকাতা একদা বহন করত এবং তাঁরা তৎকালে বেশ জনপ্রিয়ও ছিলেন। যেমন রফিক, সেরাঙ, রানি মুদি, মীরজানি, নানকু জমিদার, মিশ্রি খানসামা, মেণ্ডি বেগম, জনি খানসামা, হারু খানসামা, খৈরু মেতর, চাঁদ সেরাঙ, বিবি কুপার, বিবি ডানকান প্রভৃতি। বিবি ডানকান বস্তির মালিক ছিলেন, বিবি কুপারের ইমামবাড়ি ছিল, চাঁদ সেরাঙ ও খৈরু মেতরের মসজিদ ছিল। কিন্তু আজ রানি মুদির মুদিত্বের আধুনাবিস্মৃত খ্যাতি ইণ্ডিয়ান স্ট্রীটে পুনরুজ্জীবিত হবার কোনো সম্ভাবনা নেই, যেমন কোনো প্রত্মতত্ত্ববিদের সাধ্য নেই, কলিঙ্গের পাঁচপীরের দরগা অথবা খৈরু মেতরের মসজিদ অথবা ৫১ নং জানবাজার স্ট্রীটের ধর্মঠাকুর অথবা ‘নবাব কা বাগিচা’ পুনরাবিষ্কার করার।
* ‘…almost every turn in this Lane has a name amongst the natives, but they have been so mutilated that it is not possible now to show the boundary of each name. ‘ is one of the most intricate Lanes in Calcutta, particularly now that a great number houses belonging to it have been broken down for Wellesley Square and its Street (from Jaun Bazar), a part of it loses itself in Wellesley Square and the remaining is seen at the south east corner of that Square…’
* ‘হীরাকাটা’ থেকে পরে ‘হাড়কাটা’ হয়েছে। বৌবাজারে বহুকাল থেকে স্বর্ণকারদের ব্যবসাকেন্দ্র। স্বর্ণকারদের পাশে হীরাকাটা (Diamond-cutters) : শিল্পীদের বসতি স্বাভাবিক।-বি.
১। ক্যালকাটা মাদ্রাসা।