পরদিন সন্ধ্যের সময় আফিস থেকে ফিরে চা-জলখাবার খেয়ে মাল্যবান ওপরে এল।
সে-দিন সেই পরোটাগুলো কাকে দিয়েছিলে?
কোন দিন?
ঐ যে-দিন বৌঠানের জন্যে বেনারসী কিনতে গেলাম?
ওঃ, লোনার মাকে।
লোনার মা এসেছিল আর?
না।
তার ছেলের কী হয়েছে যেন?
কুষ্ঠ।
উৎপলা বললে, কেন জিজ্ঞেস করছ?
কুষ্ঠরুগী-তাই ভাবছি—
লোনার মাকে আমি বলেছিলাম রোজ এসে ভাত ডাল মাছ নিয়ে যেতে।
তা বলেছ, ভালোই করেছ, উনুনের আগুনে নিজেকে জ্বালিয়ে তবে এসব মানুষকে হাঁড়ির ভাত সেদ্ধ করতে হয়। বড় সন্তাপ এদের–
কৈ, এল না তো আর।
কুণ্ঠরুগী কি-না, কী হয়েছে—
না, বুড়ির কোনো রোগ হয়নি, উৎপলা বললে।
আমি বলেছি, ছেলের কথা—
তা অবিশ্যি, হয়তো কোনো আশ্রমে গেছে।
তা হতে পারে!
বেশি নয়—একটু—আলোড়িত হয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছিল মাল্যবান। ঘন-ঘন কয়েকবার চোখের পলক ফেলে বললে, আমাকে সে-দিন উপোসী রেখে লোনার মাকে পরোটা তো দিয়েছ—।
চেয়েছিল, কেন দেব না?
দিয়েছ, ঠিক করেছ। ভালোই করেছ। ভালোই করেছ–
মাল্যবান আর কথা বাড়াবে না, ভাবছিল। সে-দিনকার সেই পরোটার কথা বলবার জন্যেও প্রধানত আসেনি সে; অন্য সব বিশেষ অন্তরঙ্গ কথা বলার তাগিদ, কিন্তু তবুও বললে, ওকে দিয়েছ, ভালোই করেছ, কিন্তু আমাকেও কিছু দিলে পারতে, সমস্ত দিন অফিস খেটে আসি–
কবেকার পরোটার কথা কপচাতে এসেছে মাল্যবান, উৎপলার গলায় ঝঝ এল, বললে, তুমি বাইরে থেকে খাবার আনিয়ে নিলেই পারতে–
ভবিষ্যতে আনাতেই হবে। নাহলে আমি ঠকব। কিন্তু তোমাকে বলছিলাম—
আমার শুনে দরকার নেই।
মাল্যবান একটু কঠিন হয়ে বললে, কেন, তোমার মাথার দুদিকে দুটো তো কান।
কঠিনতর হয়ে মাল্যবানের স্ত্রী বললে, আমার কান সকলের যা-তা কথা শোনবার জন্যে নয়।
মাল্যবানের মনে হল, স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে-বলতে সে ভুল পথে চলেছে। সে হেসে উড়িয়ে দেবার ভঙ্গি করে বললে, যা বলতে চাই, তা বলা হয় না। অন্য পাঁচ রকম বলে ফেলি। নিজেকে ঠিকভাবে প্রকাশের শক্তি আমার নেই। তুমি কিছু মনে কোরো না।
উৎপলা একটা চিরুণী তুলে নিয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিল—চুল বাঁধবে বলে নয়—এমিই। চুল আঁচড়াতে-আঁচড়াতে সে চুপ করে রইল।
সে-দিনের মতো ঘরোয়া আলাপ শেষ হয়ে গেল। নিচে চলে গেল মাল্যবান। কিন্তু সেদিনকার বিকেলের পরোটা-জলখাবারের কথা নিয়ে বেঁকিতে পাড় দিতে সে চায়নি তো; অভিপ্রায় ছিল তার সূক্ষ্ম গভীরতর অনেককিছুর কিনার ঘেঁষে কথা বলার।
কথা শেষ হলে স্বাদ। অন্য সফলতা।
কিন্তু হল না কিছুই।