১৬. আজ রাত্তিরে অপূর্ব জ্যোৎস্না উঠেছে

যোড়শ পরিচ্ছেদ

(কাজলের ডায়েরি থেকে)

আজ রাত্তিরে অপূর্ব জ্যোৎস্না উঠেছে। রাস্তার পাশের গাছে বাসা বেঁধে থাকা পাখিগুলো ডাকছে সকাল হয়ে গেছে মনে করে। চাদের আলোয় একবার বাইরে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। ঘাসের ওপর হালকা শিশির চক চক করছিল।

অনেকদিন আগে আমার পোষা কুকুর কালু যখন মারা যায়, মা বলেছিলেন-দেখিস বুড়ো, ভগবান ঠিক এসে বসে আছেন ওর কাছে। সেদিন আমি মার কথা বিশ্বাস করতে পেরেছিলাম, আজ হয়তো আর পারবো না। তবে এক নতুন বিশ্বাসে আমার মন ভরে উঠছে। ধর্মতলার মোড়ে সেদিনকার সেই খুকিটা, যে পাউরুটি শক্ত করে ধরে দাঁড়িয়েছিল, সোলেগাব-এর গল্পের সেই আশি বছরের দুঃখী বুড়ো, সবাইকে আমার কত আপন বলে মনে হচ্ছে। এদের প্রতি ভালোবাসা আমার অন্ধকার ঘরে একটা নতুন জানালা খুলে দিয়েছে।

কদিন ধরে খুব নিশ্চিন্দিপুরে যেতে ইচ্ছে করছে। এখন সেখানেও শুকনো বাঁশপাতা ঝরে ঝরে বাঁশবাগানের পথ আচ্ছন্ন হয়ে আছে, সোঁদা গন্ধ উঠছে বাঁশতলা থেকে। দুধরঙের সজনেফুল ঘন নীল আকাশের পটে থোকা থোক। ফুটে আছে। আমাদের পুরোনো ভিটের সজনেগাছটা—সেটা ঠেলে উঠেছে আকাশে মাথা তুলে অনেকখানি। নদীতে নৌকোয় বসে থাকা মাঝি হঠাৎ বোঝে, জলে জোয়ারের টান লেগেছে। একটু একটু কবে কর্দমময় তীর ঢেকে গিয়ে জল বাড়তে থাকে।

আমাদের পুরোনো ভিটে কি চিরকালই অমনি পড়ে থাকবে—চামচিকে আর বাদুড় বাসা বানাবে কেব? বাবার স্মৃতি কি একেবারে মুছে যাবে আমাদের সুন্দর গাঁ নিশ্চিন্দিপুর থেকে? আমি তা হতে দেবো না। আমি মাকে নিয়ে আবার ফিরে যাবো গাঁয়ে। শহর আমার থেকে যা কেড়ে নিয়েছে, আমার গ্রাম আমাকে তা ফিরিয়ে দেবে।

বেচারি রামদাসের কথা বড়ো মনে পড়ছে এ সময়। এবার দেখা হলে বলবো–দুঃখ করো না রামদাস কাকা, আমি তোমাকে একটা নতুন দোতারা বানিয়ে দেবো।

Leave a Reply to Tapon Das Suronjit.TDS Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *