১৫.
শরৎ ফুরিয়ে হেমন্ত এল। হেমন্ত ফুরিয়ে শীত। তারপর বসন্ত এল, চলেও গেল, দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও কয়েকটা ঋতু। পার হল আরও একটা ফাল্গুন, আরও একটা বৈশাখ।
সেদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খবরের কাগজ উলটোচ্ছিল শরণ্যা। তৃতীয় পাতায় হঠাৎ ছবিটায় চোখ পড়ে গেল। সুহাসিনী ওয়েলফেয়ার সোসাইটির বৃদ্ধাশ্রম উদ্বোধন করছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, পাশে সুহাসিনীর প্রেসিডেন্ট নিবেদিতা।
শরণ্যা ঝুঁকল ছবিটার ওপর। পিছনে আবছা ভাবে অর্চনামাসিকে দেখা যায় না ? আর কে আছে? দময়ন্তীদি? বোঝা যাচ্ছে না পরিষ্কার। তবে মামণির ছবিটা খুব ঝকঝকে। মন্ত্রী ফিতে কাটছেন, পাশে হাসি হাসি মুখে দাঁড়িয়ে মামণি। দারুণ একটা কাঞ্জিভরম পরেছেন তো! শাড়িটা কি নতুন? শরণ্যা দেখেছে আগে? মামনিকে লাগছে বেশ!
আপন মনে ভ্রুকুটি করল শরণ্যা। বিড়বিড় করে বলল,—এই, মামণি কী রে? আদিখ্যেতা হচ্ছে? বল নিবেদিতা মুখার্জি। উঁহু, এক্স শাশুড়ি। সত্যি, সম্পর্কেও এত এক্স ওয়াই জেড থাকে!
মহাশ্বেতা ঢুকেছেন ঘরে। অফিস যাওয়ার জন্য তৈরি, ঘড়ির ব্যান্ড বাঁধছেন। ব্যস্ত মুখে বললেন,—এখনও বিছানায় গড়াচ্ছিস যে? বলেছিলি না, আজ ইউনিভার্সিটি যাবি?
—যাব। দেরি করে বেরোব।
—ঠাম্মার ফিজিওথেরাপির লোকটা আসবে সাড়ে দশটায়, ফ্রিজের ওপর টাকা রেখে গেলাম, মনে করে ভদ্রলোককে দিয়ে দিস।
—আয়াটা এসেছে?
—হ্যাঁ। খাওয়াচ্ছে ঠাম্মাকে।
—বাবা বেরিয়ে গেছে?
—অনেকক্ষণ। ফেরার পথে তো আবার ডাক্তারের কাছে যাবে।
এপ্রিল মাসে সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল অন্নপূর্ণার। মাঝারি। ডান দিকটা প্রায় পড়ে গিয়েছিল, দু’ মাসে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। অল্প অল্প হাঁটছেন অন্নপূর্ণা। অবশ্যই ধরে ধরে।
শরণ্যা দু’হাত ছড়িয়ে বড়সড় একটা আড়মোড়া ভাঙল,—কাগজটা আজ দেখেছ?
—কী আছে?
—দেখো না। শরণ্যা পাতাটা বাড়িয়ে দিল,—ছবিটা দেখো।
দেখলেন মহাশ্বেতা। টুকরো খবরটাতেও পাখির চোখ বোলালেন। তারপর বিছানায় ফেলে দিয়েছেন কাগজটা,—হুঁহ্, যত সব ঢং। ছেলেরা কবে গলাধাক্কা দেয়, তাই নিজের একটা আস্তানা গড়ে রাখল!
—যাই বলো, ভদ্রমহিলার কিন্তু জিল আছে। অ্যাল্টিমেটলি করে দেখালেন তো।
মহাশ্বেতা মুখ বেঁকিয়ে সম্পূর্ণ অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলেন,—শুভ্রর মা ফোন করেছিলেন একটু আগে। তোর একটা ব্লাউজের মাপ চাইছিলেন। বিকেলে গেলে দিয়ে আসিস।।
—আমার আজ ওদিকে যাওয়া হচ্ছে না। শুভ্র হয়তো এলেও আসতে পারে।
—শুভ্রর হাতেই দিয়ে দিস তা হলে। সঙ্গে তোর চুড়ির মাপও।
—উনি যে কেন আবার গয়না গড়াতে যাচ্ছেন! তুমি বারণ করতে পারলে না ?
—আহা, শাশুড়ির বুঝি ইচ্ছে হয় না?
শরণ্যা হেসে ফেলল, —তারপর যদি কেড়ে নিতে ইচ্ছে হয়, তখন?
ঠাট্টাটা মোটেই সহজ ভাবে নিতে পারলেন না মহাশ্বেতা। ভার গলায় বললেন,—অলুক্ষুনে কথা বোলো না বুবলি। একটা শুভ কাজ হতে চলেছে…
—শুভ কাজ অশুভ হতে ক’দ্দিন লাগে মা?
—আবার ফাজলামি? মনে রেখো, শুভ্রর মতো একটা ছেলে পেয়ে তুমি বর্তে যাচ্ছ।
—শুভ্র কিন্তু উলটো কথা বলে মা। শরণ্যা তবু হিহি হাসছে,—আমার মতো একটা মেয়ে পেয়ে ওই নাকি উৎরে গেছে।
—বোকো না। ওর মতো ছেলে হয় ?
—শুভ্রর ইউনিভার্সিটির ট্র্যাক রেকর্ড তো জানো না! ভেরি পুয়োর। মেয়েরা ওকে দেখলে জুতো হাতে ঘুরত।
এই ঠাট্টাতেও মহাশ্বেতা হাসতে পারলেন না,—দেখো, এ ভাবে ওর মা’র সামনে কখনও বোলো না। শাশুড়ির মনে ব্যথা দিতে নেই।
—বুঝলাম। এবার তুমি কাটো। অফিসে ঢ্যাঁড়া পড়ে যাবে।
—যাচ্ছি। মেয়ের ড্রেসিংটেবিলে নিজেকে একবার দেখে নিলেন মহাশ্বেতা। দেখছেন ড্রেসিংটেবিলটাকেও। ভুরু কুঁচকে বললেন, —এই বুবলি, এই চলটাটা কবে উঠল ?
—ওঠাই তো ছিল। ও বাড়ির থেকে নিয়ে আসার সময়েই তো….
—পালিশের সময়ে মনে করিয়ে দিস। বলেই মহাশ্বেতা গজগজ করছেন, —এই সব পুরনো ফার্নিচারগুলো আমার মোটেই দেওয়ার ইচ্ছে ছিল না। কেন যে শুভ্র জেদ ধরে আছে!
—নতুন নিতে বোধহয় নার্ভাস ফিল্ করছে।
—কেন?
—আবার যদি ফেরতটেরত দিতে হয়।
এবার আর ধমক নয়, মহাশ্বেতার চোখে আগুন। দাঁড়ালেন না আর, মেয়েকে দৃষ্টিতে ভষ্ম করে বেরিয়ে যাচ্ছেন ঘর ছেড়ে। দরজায় গিয়ে গুমগুম স্বরে বললেন, —রঙ্গরসিকতা ত্যাগ করে এবার গাত্রোত্থান করো। শুয়ে শুয়ে আর দেয়ালা করতে হবে না।
শরণ্যা এবার আর হাসল না। মায়া হচ্ছিল মা’র জন্য। বেচারা, এখন সিঁদুরে মেঘের নাম শুনলেও ভয়।
অন্যমনস্ক মুখে শরণ্যা আবার কাগজটাকে টানল। ছোট্ট একটা ইন্টারভিউ আছে মামণির। থুড়ি, নিবেদিতা দেবীর। মানুষের মঙ্গলের জন্য তিনি কী করেছেন, আরও কী কী করতে চান…।পড়তে পড়তে একটা বিকেল মনে পড়ে যাচ্ছিল শরণ্যার। বিষয় সম্পত্তি নিয়ে খুড়তুতো দাদার সঙ্গে দাঁতে দাঁত চেপে ঝগড়া করছেন নিবেদিতা…। একই মানুষের কত রকম যে রং। দুটোই তো সত্যি। এই নিবেদিতাও। ওই নিবেদিতাও।
ভাবতে গিয়ে সামনে আর একটা ছবি। নির্জন দুপুরে একা ঘরে বসে এক নিঃসঙ্গ মানুষ। আপন খেয়ালে লিখছেন কী যেন, কাটছেন, লিখছেন… গভীর তন্ময়তায় ডুবে আছেন নিজের ভেতরে।
আশ্চর্য, দুই ভিন্ন মেরুর জীব হয়েও দুটো মানুষ কী করে যে একই ছাদের নীচে কাটিয়ে দিতে পারে জীবনটা? নাকি অদৃশ্য বলরেখা আছে মাঝে, শরণ্যার চোখে পড়েনি?
তুৎ, যত সব ফালতু ভাবনা। নিবেদিতা-আর্যর আকর্ষণ বিকর্ষণ নিয়ে শরণ্যার আর কীসের মাথাব্যথা? পাস্ট ইজ পাস্ট।
গা ঝাড়া দিয়ে উঠে মুখটুখ ধুয়ে নিল শরণ্যা। রান্নাঘরে গিয়ে এক কাপ চা বানাল। কাপ হাতে অন্নপূর্ণার ঘরে। একগাল হেসে বলল, —কী গো, আজ কেমন?
অন্নপূর্ণা বিছানায় বসে। আয়া চুল বেঁধে দিচ্ছে। এক ধাক্কায় বেশ খানিকটা রোগা হয়ে গেছেন অন্নপূর্ণা, হাত মুখের চামড়া আরও কুঁচকে কুঁচকে গেছে।
নাতনির ডাকে ফিরে তাকিয়েছেন অন্নপূর্ণা। হাসতে গিয়ে গাল একদিকে বেঁকে গেল। ঈষৎ জড়ানো স্বরে বললেন,—ভাল আছি তো।
—কী বুঝছ? বিয়ের আগে ফিট হয়ে যাবে?
অন্নপূর্ণা কষ্ট করে ডান হাতটা তুললেন,—এই হাতেই ছোঁড়ার কান মুলতে পারব।
—মনে রেখো কথাটা। দিন কিন্তু আর বেশি নেই।
—জানি।
অন্নপূর্ণার জন্য এ ঘরে একটা ছোট কালার টিভি কিনে দিয়েছেন নবেন্দু। সারাদিনই চলে প্রায়, এখন বন্ধ। শরণ্যা চাপা গলায় আমাকে জিজ্ঞেস করল, —টিভি অফ কেন?
—ইনিই বললেন। এখন একটা দুঃখের সিরিয়াল হয়, ওঁর ভাল লাগে না।
—ও ।
ঠাম্মার গাল আলতো ছুঁয়ে বেরিয়ে এল শরণ্যা। পায়ে পায়ে নিজের ঘর। আলগা হাতে কাগজপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে ব্যাগে। কী ভেবে ব্যাগটা বদলে বড় ব্যাগ নিল একটা। পি-এস-বি আজ কয়েকটা রেফারেন্স দেবেন, আজই ব্রিটিশ কাউন্সিলে গিয়ে বইগুলোর সন্ধান করতে হবে। চেতনার কাজ শেষ হয়ে গেছে গত সেপ্টেম্বরে, তারপর মাস তিনেক নিষ্কর্মা বসেছিল শরণ্যা, এ বছরের গোড়ায় জয়েন করেছে রিসার্চে। গবেষণায় আর তেমন স্পৃহা ছিল না তার, ভেবেছিল উঠে পড়ে চাকরির খোঁজে লাগবে, শুভ্রর জোরাজুরিতে শুরু করতে হল কাজটা। নিজে অবশ্য শুভ্র ঢুকেছে এক সংবাদপত্রের অফিসে। কাগজটা ইংরিজি, দিল্লি মুম্বাইতে নাম থাকলেও কলকাতায় নতুন, তারা এক ঝাঁক। ছেলেমেয়ে নিচ্ছিল, শুভ্র লড়াই করে জোগাড় করে ফেলল কাজটা। মাথায় পোকা আছে ছেলেটার। নিজে রিসার্চে যাবে না, কিন্তু শরণ্যাকে সেই ঠেলে ঠেলে…
নাটকও করতে পারে কিছু। বিয়ের কথাটাও পাড়ল কেমন থিয়েটারি ঢংয়ে। প্যাংক্ৰিয়াসে অপারেশানের পর থেকেই শুভ্রর মা টুকটাক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। গত জানুয়ারিতে মাকে নিয়ে পুরীতে হাওয়া বদল করতে গিয়েছিল শুভ্র, ফিরে শরণ্যার সঙ্গে দেখা হতেই প্রথম কথা, —খুব একটা সমস্যায় পড়ে গেলাম রে।
—কী হয়েছে?
—মা ভীষণ জেদ করছে, মার পছন্দ করা মেয়েকে এক্ষুনি বিয়ে করতে হবে। কী করি বল তো?
শুভ্রর সঙ্গে একটু একটু করে কবে যেন একটা মানসিক সম্পর্ক তৈরি হয়ে গেছে শরণ্যার। সে যেন বড় বেশি নির্ভর করতে শুরু করেছিল শুভ্রর ওপর। কোনও পরিণতির কথা স্পষ্ট করে ভাবেনি তখনও, তবুও।
শুভ্রর কথায় জোর ধাক্কা খেয়েছিল শরণ্যা। তাও প্রাণপণে উদাসীন থাকার চেষ্টা করে বলেছিল, —আমি কী বলব? তোর যা ইচ্ছে তাই করবি।
—প্রবলেম। শুভ্র মাথা চুলকোচ্ছে,—মুখ ফুটে মাকে না বলি কী করে? খুব আশা করে আছে…
—না করবিই বা কেন? রাজি হয়ে যা।
—বলছিস? তোর অমত নেই তো?
—আমার মত অমতের প্রশ্ন আসছে কোত্থেকে?
—বা রে, তুই না মত দিলে বিয়েটা করব কী করে?
—ন্যাকামি করিস না। আমি হ্যাঁ বললে তবে তুই গিয়ে টোপর পরবি?
—অবশ্যই। বিয়েতে তো মিয়া বিবি দু’জনকেই সম্মতি দিতে হয়।
—কীই-ই? শরণ্যা হোঁচট খেয়েছিল জোর।
—আর কেন বোর করছ বস? হ্যাঁ-টা বলেই দাও না। মোগাম্বো ভি খুশ, হাম ভি খুশ।
—শুভ্র….. তুই…..!
—দ্যাখ খুকি, আমার কপালেও আর মেয়ে জোটার চান্স নেই, তোরও বরটা কেটে গেছে, থিয়োরিটিকালি এটাই আইডিয়াল ম্যাচ। আয়, আমরা ঘর বানাই।
সেই ঘর বাঁধার দিন এসে গেল। এবার অবশ্য ঘটাপটার প্রশ্ন নেই, সাদাসিধে রেজিষ্ট্রি ম্যারেজ, শুধু শুভ্রর মার ইচ্ছে অনুযায়ী শুভ্রদের বাড়িতে একটা বউভাত মতন হবে, এই যা। এতেই মহাশ্বেতা নবেন্দু দারুণ খুশি। এবং উত্তেজিতও। তবে তাদের মুখে সেই উচ্ছ্বাসটা ফুটছে না যেন, অনিন্দ্যর সঙ্গে বিয়ের আগে যেমনটি দেখেছিল শরণ্যা। কোথাও বুঝি একটা চোরা অস্বস্তি কাজ করেই যায়। এবার সব ঠিকঠাক চলবে তো?
শরণ্যা ড্রেসিংটেবিলের সামনে এসে বসল। জট পড়েছে চুলে। চিরুনি চালিয়ে টেনে টেনে ছাড়াচ্ছে। ক’দিন ধরে চুল উঠছে খুব, রাতে শোওয়ার আগে মাথায় তেল লাগাতে হবে।
শরণ্যার মনে অবশ্য কোনও আশংকাই নেই। সে এখন নির্ভার প্রজাপতির মতো থাকে সারাটা দিন। মাঝের একটা বছরকে তার কেমন অলীক মনে হয়। সেই শুনশান দোতলা…. গ্রীষ্মের দুপুরে ছায়ারা লুকোচুরি খেলছে….ফিসফিস করছে বাতাস….! একসময়ে মনে হত বাড়িটা যেন গিলে খেতে আসছে, এখন বাড়িটাকে শুধুই একটা ছবি মনে হয়। ঝাপসা ঝাপসা। দূরে সরে গেলে দুঃস্বপ্নও কি মায়াবী হয়ে ওঠে?
অনিন্দ্যর সঙ্গেও একদিন দেখা হয়েছিল শরণ্যার। ডিভোর্সের দিক্রি পাওয়ার মাস তিনেক পরে।
তখনও শরণ্যা চেতনাতেই আছে। প্রোজেক্টের জন্য কয়েকটা রিপোর্ট কিনতে গিয়েছিল হাইকোর্ট পাড়ায়। ভারত সরকারের বুক ডিপো থেকে।
দোকানটা থেকে বেরিয়ে মিনিবাস স্ট্যান্ডের দিকে হাঁটছিল। হঠাৎই বুকটা ছলাৎ। অনিন্দ্য! উলটো দিক থেকে হেঁটে আসছে। একেবারে মুখোমুখি হয়ে দু’জনেই বুঝি পলকের জন্য থামল। ক্ষণিক ভাষা ফুটল দু’জনের চোখে হারিয়েও গেল। আবার যে যার পথে।
কিন্তু একটু গিয়েই কী যে হল শরণ্যার! কে যেন ঘুরিয়ে দিল ঘাড়খানাকে স্তম্ভিত শরণ্যা দেখল অনিন্দ্যও ঘুরে তাকিয়েছে। দাঁড়িয়ে আছে স্থির।
কেন যে সেদিন ঘুরেছিল শরণ্যা?
শুভ্রকে আজও বলতে পারেনি সেদিনের কথাটা। কেন পারেনি?
শরণ্যার প্রহেলিকার মতো লাগে। এত তুচ্ছ একটা ঘটনা…?
সেই কীট কি তবে রয়েই গেছে? অত বিষ ঢালার পরেও? বুকের কে কুঠুরিতে বাসা বেঁধে আছে সে? শুভ্র কি তার অস্তিত্ব টের পাবে কোনও দিন
শরণ্যা কাঁপা কাঁপা শ্বাস ফেলল। এক এক সময়ে নিজেকেও চেনা যে কঠিন!
_______