কিডিচ
নভেম্বর আসার সাথে সাথেই শীতের প্রকোপও বেড়ে গেল। স্কুলের চারপাশের পাহাড়গুলো বরফ জমে ধূসর রং ধারণ করেছে এবং খালের জল জমে ঠাণ্ডা ইস্পাতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন সকালে খেলার মাঠে বরফ জমে। ওপরের জানালা দিয়ে দেখা যায় হ্যাগ্রিড চামড়ার ওভারকোট, খরগোশের চামড়ার হাতের দস্তানা এবং চামড়ার ভারি জুতা পরে বরফ গলাবার ঝাড়ু দিয়ে কিডিচ খেলার মাঠের বরফ পরিষ্কার করছেন।
কিডিচ খেলার মৌসুম শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মত হ্যারি মাছ খেলবে। তার এক সপ্তাহ অনুশীলন শেষ। শনিবার হ্যারি প্রথমবারের মত ম্যাচ খেলবে। গ্রিফিল্ডর বনাম স্লিদারিন। হ্যারির কিডিচ খেলাটা গোপনই রাখা হয়েছে, এটা উডই চেয়েছিল। কেউ তেমন তাকে খেলতে দেখেনি। উড চেয়েছে হ্যারি হবে তাদের গোপন অস্ত্র, তার বিষয়ে অন্য কাউকে জানানো হবে না। কিন্তু যে করেই হোক সে যে সিকার হিসেবে খেলবে অন্যরা এটা জেনে গেছে এবং এই বিষয় নিয়ে কথাবার্তাও হচ্ছে। কেউ বলছে ও খুব ভাল করবে আবার কেউ কেউ বলছে ওর জন্য ম্যাট্রেস নিয়ে আসতে হবে। কারণ সে ধপাস করে পড়ে যাবে।
আসলে খুবই ভাল হয়েছে যে হ্যারি ও হারমিওন, ওরা এখন বন্ধু। হ্যারি চিন্তাই করতে পারে না হারমিওনের সাহায্য ছাড়া কিভাবে সে তার এত হোমওয়ার্ক করবে। হারমিওন হ্যারিকে কিডিচ থ্রু এইজেস নামে একটা চমৎকার বই পড়ার জন্য ধার দিয়েছে। হ্যারি বইটা থেকে জেনেছে কিডিচ খেলায় সাতশ ধরনের ফাউল হয় এবং ১৪৭৩ সালের বিশ্বকাপে এর সব ধরনের ফাউলই হয়েছিল।
জন্তুটির ঘটনার পর থেকে হারমিওন এবং রন আইন–কানুন মেনে চলার ব্যাপারে একটু শিথিল। হ্যারির প্রথম কিডিচ খেলার আগের দিন, ক্লাসের অবসরে তারা তিনজন স্কুলের প্রাঙ্গণে যায়। শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হারমিওন জাদু করে উজ্জ্বল নীল আগুনের সৃষ্টি করলো, যা একটা জ্যামের বোতলে করেও বহন করা যায়। তারা আগুনের দিকে পেছন ফিরে শরীরটাকে গরম করছিল। স্নেইপ তাদের কাছ দিয়েই খোঁড়াতে খোঁড়াতে যাচ্ছিলেন। আগুন জ্বালাটা নিয়মসিদ্ধ নয়। তিনি যেন আগুন না দেখতে পান সে জন্য তারা তাদের পেছন দিয়ে আগুন আড়াল করে রাখলো। ওদের মুখ ও ভাবসাব দেখে স্নেইপের সন্দেহ হয়েছে। নিশ্চয়ই কিছু গলদ আছে। তিনি আবার ফিরে এসে ওদের দিকে ভালভাবে তাকালেন। কিন্তু তিনি কোন আগুন দেখতে পাননি। কিছু না পেয়ে একটা অজুহাত তিনি খুঁজতে লাগলেন।
তোমার হাতে কি, মি. পটার?
এটা কিডিচ থ্রু এইজেস, হ্যারি বইটি দেখাল।
লাইব্রেরির বই স্কুলের বাইরে নেয়া নিষেধ। বইটা আমাকে দাও। গ্রিফিল্ডরের পাঁচ পয়েন্ট কাটা গেল।
স্নেইপ খোঁড়াতে খোঁড়াতে চলে গেলে হ্যারি রেগে গিয়ে বলল, এই নিয়ম খেয়ালখুশি মতো তার তৈরি। তাঁর পায়ে কী হয়েছে?
জানি না, তবে তাঁর পায়ের তীব্র ব্যথায় তিনি কষ্ট পেলে খুশি হবো, রন তিক্তস্বরে বলল।
সেদিন সন্ধ্যায় গ্রিফিল্ডরের কমনরুমে বেশ শোরগোল হচ্ছিল। হ্যারি, রন ও হারমিওন একটি জানালার কাছের টেবিলে বসলো। হারমিওন হ্যারি ও রনের বশীকরণ বিদ্যার হোমওয়ার্ক দেখে দিচ্ছিল। হারমিওন কখনো তার খাতা থেকে ওদের ঢুকতে দেয় না, বলতো এতে তোমরা কিছু শিখবে না। হারমিওন ওদের হোমওয়ার্ক পড়ে সংশোধন করে দিত এবং এর ফলে তাদের উত্তর সঠিক হতো।
হ্যারি কিডিচ থ্রু এইজেস বইটা ফিরে পাবার জন্য অস্থির হয়ে পড়লো। স্নেইপকে এত ভয় পাওয়ার কি আছে। সে যাবে তার কাছে এবং সোজাসুজি বলবে বইটা তার দরকার। হারমিওন ও রনকে বলল ওই কথাটা। তারা দুজনেই বলল, তুমিই যাও। আমরা না। সে শিক্ষকদের কামরায় গিয়ে দরজায় টোকা দিল। কোন শব্দ নেই। আবার দিল। কেউ নেই। স্নেইপতো বইটা ওখানে রেখেও যেতে পারেন। দেখা যাক ভাগ্য পরীক্ষা করে। সে দরোজাটা ধাক্কা দিয়ে ফাঁক করলো এবং এক অভাবনীয় দৃশ্য দেখল।
স্নেইপ ও ফিলচ ভেতরে, মাত্র ওরা দুজন। স্নেইপের আলখেল্লা তার হাটুর ওপর তোলা, এক পা রক্তাক্ত ও আঘাতপ্রাপ্ত। আর ফিলচ তার পায়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিচ্ছে।
স্নেইপ বলছিলেন, কিভাবে একজন লোক তিন মাথার চোখের প্রতি লক্ষ্য রাখতে পারে?
হ্যারি সন্তর্পণে ভেতরে প্রবেশ করে দরোজা সাবধানে বন্ধ করতে যাচ্ছিল।
পটার।
স্নেইপ বিরক্তিতে তার মুখ বাঁকালেন এবং দ্রুত তার আলখেল্লা টেনে পা ঢেকে দিলেন।
আমি কি আমার বইটা ফেরত পেতে পারি।
বেরিয়ে যাও। বের হয়ে যাও।
হ্যারি দ্রুত বের হয়ে গেল যেন স্নেইপ আবার কোন পয়েন্ট কাটার সময় না পান। সে দৌড়ে ওপরে চলে গেল। খুবই সাবধানে ফিস ফিস করে রন ও হারমিওনকে সব কথা খুলে বলল।
এর অর্থ বুঝতে পারছো? কোন শ্বাস না নিয়েই সে বলল। স্নেইপ হ্যালোইনের রাতে তিন মাথা কুকুরকে পাশ কাটিয়ে ভেতরে যেতে চেয়েছিলেন। সেদিনই, যে সময় আমরা ওঁকে দেখেছিলাম ওইদিকে যাচ্ছিলেন। তিন মাথা কুকুর যা পাহারা দিচ্ছে সেটার প্রতি নজর তার। সেদিন ট্রল নামক পাহাড়ি জন্তুটিকে তিনি ছেড়ে দিয়ে সবার দৃষ্টি ওইদিকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।
হারমিওনের চোখ বড় হলো।
না–তিনি এটা করবেন না। যদিও তিনি খুব একটা ভাল লোক নন, কিন্তু ডাম্বলডোরের জিনিস চুরি করবেন বা চুরির চেষ্টা করবেন, তা হতে পারে না।
তুমি মনে করতে পারো সব শিক্ষক একেবারে দেবতা। আমার হ্যারির কথাই সঠিক মনে হচ্ছে। রন বলল।
পরেরদিন সকালটা ছিল উজ্জ্বল এবং শীতল। গ্রেট হল সসেজ ভাজার গন্ধে ম ম করছে এবং সবাই খেলাটা কেমন হবে–সেই আলোচনায় ব্যস্ত।
তোমার কিছু নাস্তা খেয়ে নেয়া দরকার।
না আমি কিছু খাব না।
কমপক্ষে টোস্ট নাও। হারমিওন বলল।
আমার কোন ক্ষিদে নাই।
হ্যারির সেদিনের খেলার চিন্তায় ক্ষুধা উধাও। সিমাস অনুরোধ করল, হ্যারি তোমাকে খেতে হবে। খেলার জন্য তোমার শক্তির দরকার।
হ্যারি সিমাসের দিকে তাকাল, দেখল, সে সসেজের ওপর কেচাপ ঢালছে, বলল ধন্যবাদ সিমাস।
সকাল এগারটার মধ্যে সবাই স্কুল মাঠে চলে এসেছে। কিডিচ পিচের চারদিকে বসার স্থানে জায়গা করে নিচ্ছে। অনেক ছাত্রের হাতে বায়নোকুলার। বসার স্থান যদিও ধাপে ধাপে ওপরের দিকে উঠেছে তবুও অনেক সময় দেখা যায় না ঠিক কি ঘটছে।
নেভিল, সিমাস ও ওয়েস্ট হামের ডীন বসেছিল একেবারে ওপরের সারিতে। রন ও হারমিওনও তাদের সাথে যোগ দিল যেন সেখান থেকে তাদের দলকে সাপোর্ট করা যায়। হ্যারি অবাকই হলো, ওদের বড় বড় ব্যানারের মধ্যে একটি নষ্ট হয়ে গেছে। ওতে লেখা আছে পটার ফর প্রেসিডেন্ট এবং লেখাটার নিচে গ্রিফিল্ডারের প্রতীক সিংহ এঁকেছে ভীন। ডীন একজন ভাল আঁকিয়ে। এরপর হারমিওন ব্যানারগুলো যাদু করে নানা রঙে ভরে দিল।
হ্যারি প্রসাধন কক্ষে অন্য খেলোয়াড়দের সাথে জার্সি পরে নিল। তাদের জার্সির রঙ লাল, আর স্লিদারিন হাউজের জার্সির রঙ সবুজ।
উড গলা পরিষ্কার করে সবাইকে নীরব থাকতে বলল।
তারপর সে খেলোয়াড়দের উদ্দেশে প্রশ্ন করল–তোমরা সবাই প্রস্তুত তো?
মেয়েরা তোমরা তো প্রস্তুত। চেজার মিস অ্যাঞ্জেলিনা জনসন জানতে চাইল।
আমার মনে হয় মেয়েরাও প্রস্তুত। উড় মন্তব্য করল।
সেই বড় একজন। ফ্রেড উইসলি বলল।
সেই একজনের জন্য আমরা সবাই প্রতীক্ষা করছি। জর্জ বলল।
অলিভারের ভাষণ আমাদের মুখস্থ হয়ে গেছে। হ্যারির উদ্দেশ্যে ফ্রেড বলল। গত বছর আমরা দলে ছিলাম।
তোমরা দুজন চুপ করো। উড ধমক দিল।
গুডলাক। উড খেলোয়াড়দের উদ্দেশে বলল।
খেলার প্রস্তুতি নিয়ে হ্যারি, ফ্রেড ও জর্জের অনুসরণ করল। হ্যারির মনে আশংকা ছিল–খেলার সময় তার হাঁটু তার জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। মাদাম তুচ হলেন এ খেলার রেফারি। তিনি ঝাড়ু হাতে নিয়ে মাঠে উপস্থিত হলেন। তার দুদিকে দুদল দাঁড়াল।
তিনি খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বললেন–আমি তোমাদের কাছ থেকে একটি স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন খেলা দেখতে চাই।
মাদাম হুচ খেলার সূচনা করলেন–তোমরা তোমাদের ঝাড়ুর ওপর উঠে পড়ো।
হ্যারি নিম্বাস ২০০০ ঝাড়ুর ওপর উঠল।
মাদাম হুচ তার রূপালী বাঁশি বাজালেন।
পনেরটা ঝাড়ুকে ওপরে উঠতে দেখা গেল।
গ্রিফিল্ডর হাউজের অ্যাঞ্জেলিনা জনসনের হাতে কুয়াফল।
দেখতে সুন্দর এই মেয়েটি ভাল ধাওয়া করতে পারে…
উইসলি যমজ ভাইদের একজন লী জর্ডান খেলার ধারা বিবরণী দিচ্ছিল।
জর্ডান?
তার ওপর সবসময় নজর রাখছিলেন অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল।
দুঃখিত প্রফেসর।
এবার পরিষ্কার পাস দেয়া হলো এলিসিয়াস্পিনেটকে। সে উডের প্রিয় ছাত্রী। গত বছর সে রিজার্ভে ছিল। বল আবার জনসনের কাছে। না না। এবার বল স্লিদারিন হাউজের দখলে। বলটা চলে গেছে ওদের অধিনায়ক মার্কাস ফ্রিন্টের কাছে। ঈগলের মত উড়ে চলেছে সে। এই বুঝি সে স্কোর করবে। না হলো না। গ্রিফিল্ডর হাউজের কিপার উড় ঝাঁপ দিয়ে বলটি ধরে ফেলেছে। চেজার কেটি বেল এগিয়ে যাচ্ছে। বল অবার অ্যাঞ্জেলিনার হাতে। স্লিদারিন হাউজের কিপার ব্লেচলি ঝাঁপ দিল। না বলটি সে ধরতে পারেনি। গ্রিফিল্ডর হাউজ স্কোরটি করল।
চারদিকে বিপুল হর্ষধ্বনি।
আনন্দে হ্যাগ্রিড রন ও হারমিওনকে জড়িয়ে ধরলেন।
অ্যাঞ্জেলিনা স্কোর করার পর থেকেই হ্যারি মিচের ওপর নজর রাখছিল। হ্যারি বল নিয়ে তীরবেগে এগোচ্ছে। একজন ব্লুজার বাধা হয়ে পঁড়ালেও মাথা নত করে হ্যারি তা এড়িয়ে গেল। কেউ তাকে রুখতে পারছে না। কি করবে চেজারও বুঝে উঠতে পারছে না।
ওরা মাঝ শূন্যে উড়ছে।
হ্যারি অবশ্য হিগসের চেয়েও দ্রুতগামী।
বল এবার গোলার মত ছুটে আসছে।
ধাম।
গ্রিফিল্ডর হাউজ চিৎকার করে উঠল—ফাউল।
মাদাম হুচ শটের নির্দেশ দিলেন।
স্নিচ আবার অদৃশ্য হয়ে গেল। গ্যালারির মধ্য থেকে টমাস চিৎকার করে উঠল–তাকে লাল কার্ড দেখানো হোক।
রন বলল-এটা তো ফুটবল খেলা নয়। এখানে লালকার্ডের কোন নিয়ম নেই।
হ্যাগ্রিড বললেন–খেলার তো কিছু নিয়ম–কানুন আছে। ফ্লিন্ট হ্যারিকে আকাশে ধাক্কা দিয়েছে। লি জর্ডান বলল-এটা খুব খারাপ। এক ধরনের ধোকাবাজি।
ম্যাকগোনাগল জর্ডানকে ধমক দিলেন।
জর্ডান বলল–ওটা তো ফাউল ছিল। তিনি নিরপেক্ষ হতে পারছিলেন না।
অধ্যাপক ম্যাকগোনাগল বললেন–জর্ডান, আমি তোমাকে আবার হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি।
খেলা জমে উঠল। হ্যারি একজন ব্লুজারকে কাটিয়ে গেল। ঝাড়ুর আঘাত থেকে রুজারের মাথাটা কোনভাবে বেঁচে গেল। হ্যারিও কিছুটা আঘাত পেয়েছে। এই রকম ঘটনা আবারও ঘটল। হ্যারির ঝাড়ু নিম্বাস ২০০০ খুব স্বাভাবিকভাবেই আকাশে উড়ছে। এবার বল গ্রিফিল্ডারদের গোলপোস্টে। হ্যারি কিপার উডকে সতর্ক করে দিল। ওরা একটু আঁকা বাকাভাবে উড়ছে। দারুন শব্দ হচ্ছে।
জর্ডান খেলার ধারাভাষ্য বর্ণনা করে চলেছে।
খেলার ভেতর কেউ লক্ষ্য করল না যে, হ্যারির ঝাড়ু অদ্ভুত আচরণ করছে। ঝাড়ুটা তাকে ধীরে ধীরে খেলার বাইরে ওপর দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
ঠিক বুঝতে পারছি না, হ্যারি কী করছে। বাইনোকুলার দিয়ে খেলা দেখতে দেখতে হ্যাগ্রিড এই মন্তব্য করলেন।
হ্যাগ্রিড বলে চললেন–আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে হ্যারি ঝড়ির ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু এটা তো কখনোই হতে পারে না। একমাত্র শক্তিশালী জাদু ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটানো সম্ভব নয়।
এবার সবার নজর হ্যারির ওপর পড়ল। দেখা গেল তার ঝাড়ু কোন কাজ করছে না। মাঝে মাঝে ঝাঁকুনিতে হ্যারির ঝাড়ুর শলা পড়ে যাচ্ছে। সে কোনমতে একহাতে ঝাড়ুটা ধরে রেখেছে।
কোন কিছু কি ঘটেছে? সিমাস প্রশ্ন করল।
হারমিওন হ্যাগ্রিডের কাছ থেকে বাইনোকুলারটি নিয়ে খেলা দেখতে লাগল। তার দৃষ্টি হ্যারির ওপর না পড়ে পড়ল জনতার ওপর। হতাশ কণ্ঠে রন জিজ্ঞেস করল–তুমি এখন কী করতে চাচেছা?
আমি জানি এটা স্নেইপের কারসাজি।
রন বাইনোকুলার হাতে নিয়ে দেখল, তারা যেখানে বসেছিল ঠিক তার বিপরীত দিকে অধ্যাপক স্নেইপ দাঁড়িয়ে আছেন। আর তার দৃষ্টি হ্যারির ওপর নিবদ্ধ। তিনি অনর্গল কথা বলে চলেছেন।
সে ঝাড়ুর ওপর জাদুবিদ্যা খাটাচ্ছে। আমরা এখন কী করব? হারমিওন বলে উঠল।
আমরা তাহলে কী করতে পারি।
সেটা আমার হাতে ছেড়ে দাও।
রন কিছু বলার আগেই হারমিওন অদৃশ্য হয়ে গেল। রন বাইনোকুলার নিয়ে আবার হ্যারির দিকে তাকাল। তার ঝুড়িটা এত কাপছিল যে এটার ওপর বসা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। উইসলি যমজভাই ওপরে উড়ে গিয়ে হ্যারিকে নিরাপদে ঝড়ির ওপর আনার চেষ্টা করছিল। কিন্তু এতে কোন ফল হয়নি। যতবারই তারা হ্যারির কাছাকাছি গেছে ততবারই ঝাড়ু ওপরে উঠে তাদের কাছ থেকে দূরে চলে গেছে। তারা নিচে নেমে চারদিকে প্রদক্ষিণ করতে লাগল। তাদের প্রত্যাশা ছিল হ্যারি নিচে নামলে তারা তাকে ধরে ফেলবে। এই সুযোগে মার্কাস ফ্লিন্ট কুয়াফলটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সবার অলক্ষ্যে পাঁচ বার স্কোর করে ফেলল।
হারমিওন, এখানে চলে এসো। রন বেপরোয়া হয়ে তাকে ডাকল। স্নেইপ যেখানে দাঁড়িয়েছিলেন হারমিওন দৌড়ে গিয়ে তার পেছনের সারিতে দাঁড়াল। স্নেইপের কাছে গিয়ে সে তার জাদুদ বের করল, কয়েকটা নির্বাচিত শব্দ উচ্চারণ করল, উজ্জ্বল নীল শিখা তার জাদুদণ্ড থেকে বেরিয়ে স্নেইপের পোশাক স্পর্শ করল।
সমস্ত ঘটনা ঘটতে তিরিশ সেকেন্ডের বেশি সময় নিল না। সেই বুঝতে পারলেন তার জামায় আগুন লেগেছে। তিনি চিৎকার করে সাহায্য চাইলেন। হারমিওন আবার জাদুদণ্ডে ফুঁ দিল। পকেট থেকে একটা ছোট পাত্র বের করে সব আগুন পাত্রের ভেতর ঢোকাল। পাত্রটি নিয়ে সে এমনভাবে উধাও হল যে, তাকে খুঁজে বের করা স্নেইপের পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব হলো না। এতক্ষণে শূন্যে হ্যারি নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে। ঝাড়ুর ওপর তার নিয়ন্ত্রণ ফিরে এল।
নেভিল এবার তাকিয়ে দেখ। রন বলল। নেতি প্রায় পাঁচ মিনিট ধরে হাগ্রিডের জ্যাকেটে মুখ রেখে কাঁদছিল।
হ্যারি এবার দ্রুতগতিতে ভূমির দিকে এগোচ্ছে।
দর্শকরা দেখল–হ্যারি তার দুহাত মুখের ওপর রাখল। মনে হলো সে অসুস্থ। সে চারদিকে আঘাত করল। এরপর কাশল। সোনা জাতীয় একটা বস্তু তার হাতে এসে পড়ল।
আমি এবার স্নিচকে হাতে পেয়েছি। বস্তুটা মাথার ওপর তুলে হ্যারি চিৎকার করে উঠল। খেলাটা বিভ্রান্তির ভেতর দিয়ে শেষ হলো।
সে তো এটা লুফে নেয়নি। সে তা বলতে গেলে এটা গিলে ফেলেছে। বিশ মিনিট ধরে ফ্লিন্ট এ নিয়ে খুব হইচই করল। এতে কোন ফল হলো না। কারণ হ্যারি কোন নিয়ম ভঙ্গ করেনি। আর লী জর্ডানও তার ধারাভাষ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। খেলাশেষে গ্রিফিল্ডর হাউজ পেল ১৭০ পয়েন্ট আর স্লিদারিন হাউজ পেল মাত্র আট পয়েন্ট। হ্যারি এসবের কোন খবর পায়নি।
বিকেল বেলা হ্যাগ্রিড, হ্যারি, রন আর হারমিওনকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করলেন।
রন বলল-এসব কিছুর জন্য স্নেইপই দায়ী। হারমিওন আর আমি দেখলাম তিনি তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছেন আর তাঁর দৃষ্টি তোমার ওপর নিবদ্ধ।
যতসব বাজে কথা। হ্যাগ্রিড বললেন।
হ্যারি, রন ও হারমিওন একে অপরের দিকে তাকিয়ে ভাবছিল তারা স্নেইপ সম্পর্কে কী বলবে। হ্যারি সত্য কথা বলাটাই ঠিক মনে করল আমি তাঁর সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছি। হ্যারি হাগ্রিডের উদ্দেশে বলল–তিনি হ্যালোইনে তিন মাথাওয়ালা কুকুরটাকে অতিক্রম করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু কুকুরটা তাকে কামড় দেয়। আমার ধারণা তিনি সবকিছুই চুরি করতে চেয়েছিলেন যা কুকুরটা পাহারা দিচ্ছিল।
হ্যাগ্রিড হ্যারিকে প্রশ্ন করলেন–তুমি কি ফ্লাফি সম্পর্কে কিছু জানো?
ফ্লাফি? হ্যারি অবাক হয়ে হ্যাগ্রিডের দিকে তাকিয়ে।
ফ্লাফি হল সেই কুকুরটার নাম। আমি এ কুকুরটা একজন গ্রীক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে ডাম্বলডোরকে দিয়েছি।
তারপর? হ্যারি জানতে চাইল।
আর জিজ্ঞেস করো না। এটা অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়।
এবার হারমিওন চিৎকার করে জানতে চাইল–তাহলে তিনি কেন হ্যারিকে খুন করতে চাইবেন?
হ্যাগ্রিড রেগে গিয়ে বললেন–তোমরা ভুল করছ। আমি জানি না, হ্যারির ঝাড়ু কেন এমন করল। কিন্তু স্নেইপ কখনোই তার একজন ছাত্রকে খুন করবেন না। তোমরা তিনজনের এমন ভাবাই উচিত নয়। তোমরা কুকুরটার কথা ভুলে যাও। কুকুরটা কী পাহারা দিচ্ছে সেটা নিয়ে তোমাদের মাথাব্যথার কোন কারণ নেই। এটা ডাম্বলডোর আর নিকোলাস ফ্লামেলের ব্যাপার। ওহ তাই হ্যারি বলল। তাহলে নিকোলাস ফ্লামেল নামক কেউ এর সঙ্গে যুক্ত আছেন।
এখানে ফ্লামেল নামে কেউ আছেন কি? হ্যাগ্রিডের মুখ রাগে লাল হয়ে ওঠল।