ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ
হিন্দু পাড়ায় শ্যামসুন্দরের বাড়িতে দুপুররাত্রে পাড়ার সব হিন্দু সমবেত হয়েছেন–পুরুষ নারী উভয়েই। আজ কয়েকদিন হইতে রোজই তারা এমন করেন।
নগেন ঘোষ বলিল–“যাই বল, এবার যে গ্রামে থাকতে পারবো এরূপ মনে হয় না। যে গুজব শুনে আসছি তা একেবারে ভিত্তিশূন্যতা বোধ হয় না। জালালপুরে যে ব্যাপার হয়ে গিয়েছে তার খবর তো সকলেই রাখ। এই আগুন বঙ্গের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে। মোসলমানেরা একেবারে ক্ষেপে গিয়েছে। তারা আর আমাদিগকে রাখবে না। এই বেলা পালিয়ে স্ত্রী-কন্যার সম্মান রক্ষা করা চাই। নইলে কী যে বিপদ হবে তা ঠিক করে বোঝা যাচ্ছে না। আর দেরি করা নয়। সেদিন খোরশেদ যে গিরিবালাকে মেরেছে এটা সামান্য কথা মনে করো না। এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু জাত আছে। ওরা সহজে ছাড়বে বলে মনে করো না।এই সামান্য ঘটনা হতে বুঝতে পার তাদের জেদ ও দেমাক কত বেড়ে গিয়েছে। যার যার মতো সরে পড়ো।”
গিরিবালার বাবা শ্যামনসুন্দর বলিলেন–“মেয়েকে মেরেছে তাতে দোষ নাই। এরপর আরও যদি কিছু হয় তা হলে জাত থাকবে না। নতুন গুজবের সত্য-মিথ্যা আমাদের গুপ্তচরদের দ্বারা দেখা যাউক কিছু জানা যায় কিনা। খোরশেদের বাড়িতে একশ লেঠেল এসে লুটের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে, এইটিই হচ্ছে বড় কথা। ভাই, এতদিনের পর স্ত্রী কন্যাকে হারাতে হল।’ এই বলিয়া শ্যামসুন্দর অশ্রু বিসর্জন করিতে লাগিলেন।
প্রায় পঞ্চাশজন স্ত্রীলোকে সেখানে বসিয়াছিলেন; তারাও অশ্রু বিসর্জন করিতে লাগিলেন।
নগেন ঘোষ বলিলেন–“চুপ চুপ, আস্তে। হরিদয়াল আর ভজহরি ফিরে এলেই বোঝা যাবে আজকার নতুন গুজবের অর্থ কী। সত্য-মিথ্যা টের পাওয়া যাবে। কিন্তু বড় দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি বলি, রমেশও যাক।”
রমেশ বলিল–“কোনোও রকমে তারা যদি বুঝতে পারে, আমি গোয়েন্দাগিরি করতে গিয়েছি, তা হলে তারা আমায় আস্ত কেটে ফেলবে। তবুও আপনারা যদি বলেন, সকলের মঙ্গলের জন্য আমি প্রাণ দিতে রাজি আছি। কিন্তু এই বেশে আমি যেতে পারবো না।”
রমেশের মা বলিলেন–“বাবা আমাদিগকে রক্ষা করো। তুই ফকিরের বেশ নিয়ে যা।” সকলেই রমেশের মার বুদ্ধির প্রশংসা করিল।
তারপর সকলে মিলিয় রমেশের মাথায় একটা পাগড়ি পরাইয়া দিল। গ্রামের সখের যাত্রার দল ছিল–তাহাদের সাহায্যে বৃদ্ধ ফকিরের কৃত্রিম শুষ্ক শ্মশ্রু সংগ্রহ করিতে বিশেষ বেগ পাইতে হইল না।
রমেশ মুসলমান ফকির সাজিয়া আল্লাহর নাম না লইয়া হিন্দু মতোই মনে মনে কৃষ্ণ নাম উচ্চারণ করিতে লাগিল। কালবিলম্ব না করিয়া সেই বেশে মিত্রদের পুকুরপাড় দিয়ে সে রাস্তায় আসিয়া উপস্থিত হইল। জোছনার আলোক বলিয়া সে একাকী এই দুঃসাহসিক কর্মে লিপ্ত হইবার সাহস সংগ্রহ করিয়াছিল।
ভয় যে তাহার মোটেই হইয়াছিল না তাহা বলিতে পারি না। মনে মনে সে পুনঃ পুনঃ হিন্দু দেবতার নাম লইতেছিল। ভয়, পাছে তাহার চতুরী ধরা পড়ে।
হিন্দুপাড়ায় গুজব উঠিয়াছিল, মুসলমানেরা বহু লাটিয়াল লইয়া হিন্দুদের বাড়ি-ঘর লুঠ করিবে। তাহাদের স্ত্রী-কন্যার সম্মান নষ্ট করা হইবে। ফলে হিন্দু পাড়ার ভদ্র-অভদ্র, যুবক যুবতী, প্রৌঢ়পুরুষ-রমণী এবং বৃদ্ধদের দারুণ আশঙ্কা উপস্থিত হইয়াছিল। এরই গুজবের মূল, ভিন্নদেশে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে দাঙ্গা।
গিরিবালার বাবা শ্যামসুন্দরের বাড়িতে সমস্ত হিন্দু সমবেত হইয়াছিল। তাহাদের ধারণা কোনো সময়ে মোসলামানেরা আসিয়া তাদের উপর পড়ে তাহার কোনো ঠিকানা নাই। সঠিক সংবাদ জানিবার জন্য রোজই যেমন পাঠান হয় আজও তেমনি গুপ্তচররূপে দুইজন যুবককে মোসলমান পাড়ার অবস্থা জানিবার জন্য পাঠান হইয়াছিল। তাহাদের বিলম্ব হইতেছে দেখিয়া সকলে রমেশকে ছদ্মবেশে পাঠাইলেন। হরদয়াল ও ভজহরি কীভাবে গিয়াছিল তাহা আমরা জানি না। আজ তাহারা একটা নূতন গুজব শুনিয়া বেশি রকম আশঙ্কিত হইয়া পড়িয়াছেন। রমেশ যদি অত ভীত না হইয়া একটু মনের বল সংগ্রহ করিয়া লইত তাহা হইলে তাহার ভাগ্যে এমন দুর্ঘটনা ঘটিত না। এই ভীতিই হইয়াছিল তাহার শত্রু।
রমেশ দেখিল, দূর হইতে দুইজন মুসলমান কৃষক তাহার দিকে আসিতেছে। সে তখন হিন্দুপাড়া ছাড়িয়া একেবারে মুসলমান পাড়ার মধ্যে আসিয়া পড়িয়াছে।
আবদুল করিম এব সেতাবুদ্দীন বন্ধু হেলালের বাড়ি হইতে দাওয়াত খাইয়া গৃহে ফিরিতেছিল। কৃষক হইলেও তাহাদের যথেষ্ট ধর্মভাব বিদ্যমান ছিল এবং ধর্মবিষয়ক অনেক কথাও তাহারা জানিত।
আবদুল করিমের সাংসারিক অবস্থা কিছু দিন হইতে ভালো হইয়া উঠিয়াছে। তার ইচ্ছা একবার সে মক্কাশরীফে ও বায়তুল মোকাদ্দসে যায়। ফকির-দরবেশকে সে খুবই ভক্তি করে।
রাস্তার ধার দিয়া রমেশ যাইতেছিল। তাহার বিপরীত পার্শ্ব দিয়া আবদুল করিমও সেতাবদ্দীন পশ্চাৎ হইয়া আসিতেছিল।
দিনের আলোর মতো জোছনায় আবদুল করিম চোখ তুলিয়া দেখিল একজন মুসলমান দরবেশ আপন মনে চলিয়া যাইতেছেন হাতে তসবীহ।
আবদুল আকস্মাৎ ভক্তিপ্রাণ হৃদয়ে সেতাবদ্দীনকে অপেক্ষা করিতে বলিয়া ছদ্মবেশী
রমেশের সম্মুখে যাইয়া উপস্থিত হইল। দেখিল, সত্যই তিনি একজন দরবেশ। সে
তাড়াতাড়ি রমেশের পদধূলি লইয়া ভক্তি বচনে কহিল, “হুজুর, আপনাকে দেখে নিজকে ধন্য মনে করছি। আমার নসীব আজ বড়ই বুলন্দ।”
অতঃপর সেতাবদ্দীন আসিয়া রমেশের পদচুম্বন করিল।
রমেশ কথা কহিতে পারিতেছিল না।–কৃষ্ণ! একি বিপদ?–মা কালী, দুর্গে! যে ভক্তিলাভ করিবার জন্য মানুষ কত যুগ ধরিয়া সাধনা করে, আজ এই সঙ্কটময় মুহূর্তে সেই ভক্তি লাভ করিয়া রমেশ বড়ই বিপন্ন।
আবদুল কহিল–”হুজুর,দয়া করিয়া আমার গৃহে পদার্পণ করুন। বান্দা আপনার চরণ পূজা করতে পারলে নিজকে অত্যন্ত ভাগ্যবান মনে করবে। হুজুর কোথা হতে আসছেন?”
রমেশ কি কহিবে অথচ একটা উত্তর না দিলেও নয়। সে কহিল, ‘বিসমিল্লা-বোমানা রিম-কাল্লা সালে আলেকুম।”
বিস্ময়ে নির্বাক হইয়া আবদুল রমেশের শ্বেত শুশ্রুশোভিত মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। এ যে তার বিশ্বাস ও ভক্তির প্রতি একটা ভায়ানক পরিহাস গোছের হইয়া চলিল। সংশয়ে আবদুল জিজ্ঞাসা করিল–“আপনি কোথা হইতে আসছেন?”
রমেশ শক্তির সহিত তসবী টিপিয়া বলিল–“সুবান আল্লা-সুবান আল্লা। আমি দরবেশ-মোক্কা হইতে আসছি। বিসমুল্লা আলেকুম।”
লোকটি কি পাগল! তাই হবে–কিন্তু পাগল হলেও সে আরবি কথা এত ভুল ও বিকৃত করিয়া উচ্চারণ করিবে কেন? পাগল কি গতজীবনে এত সহজ জানা কথাগুলিও বিকৃত করিয়া বলে?
আবদুল বিরক্ত হইয়া কহিল–“দরবেশ বলিয়া কোনো কথা নাই।”
রমেশ ক্রোধে অধীর হইয়া কম্পিত স্বরে বলিল–নেড়ে, কাফের।
ভক্তির বিনিময়ে কিছুই লাভ না করিয়া আবদুলের মনটা কেমন হইয়া উঠিয়াছিল। তাহার উপর নেড়ে উপাধি লাভ করিয়া সে যুগপৎ বিস্মিত ও স্তম্ভিত হইয়া কহিল–“আপনি কোথাকার ভণ্ড! মুসলমান হয়ে মুসলমানকে নেড়ে বলেন! আপনি মুসলমান নন। আমার সন্দেহ হচ্ছে। এর মধ্যে খুব রহস্য আছে।”
রমেশ –বটে, আমি মুসলমান নই! আমি দরবেশ, মোক্কা শরীফ হইতে আসিয়াছি। পথ ছাড়িয়া দাও। সুবান আল্লা।
আবদুল –আপনি নিশ্বয়ই মুসলমান নন। আমার খুব সন্দেহ হচ্ছে দরবেশ, কথাটি মোক্কা শরীফ হতে আসে না। আসে মক্কাশরীফ হতে। আচ্ছা, বলুন তো, মুসলমানের ধর্মে বিশ্বাস কি? কলেমাগুলি পাঠ করুন দেখি।
বেগতিক দেখিয়া রমেশ থতমত খাইয়া গেল। অনেকক্ষণ হইতে সে প্রবল চেষ্টায় মনের বল ঠিক রাখিয়াছিল। এখন তাহার কণ্ঠ শুকাইয়া উঠিল। আর উপায় নাই।
অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সহিত রমেশ দৌড়াইয়া রাস্তার পার্শ্বে আম্রকাননের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িল। পলায়মান রমেশের পশ্চাৎ পশ্চাৎ আবদুলও ছুটিল।
সেতাবদ্দীন দাঁড়াইয়া রহিল না।
কিছুদূর দৌড়াইয়া তাহারা রমেশের গলা ধরিয়া ফেলিল। কিন্তু একি? হস্তের আকর্ষণে লোকটির মাথার উপর হইতে কি খসিয়া আসিল! চাঁদের আলোকে সরিয়া আসিয়া আবদুল দেখিল সেটা একটা পরচুলা। কী বিস্ময়!
ঘাড় ধরিয়া দুই একটা নাড়া দিতেই রমেশের শুশ্রু খসিয়া পড়িল। ওমা, এ যে বলাই ঘোষের পুত রমেশ!
অবদুল ও সেতাব রমেশকে খুব করিয়া আপমানসূচক গালি দিল, তা ছাড়া ভয়ানক প্রহারও করিল। আরও কহিল–হিন্দুদের এত বড় স্পর্ধা! মুসলমানের ধর্ম লইয়া এত বড় তামাসা! দরবেশ-ফকির কি ঠাট্টার জিনিস? শুধু রমেশকে নয়, সমস্ত হিন্দুকে এবার জব্দ করবো। ক্রোধে আবদুলের কণ্ঠস্বর রোধ হইয়া আসিতেছিল।
তাহার পর তাহারা রাস্তা ধরিয়া মুসলমান পাড়ার দিকে চলিয়া গেল। রমেশ অত্যন্ত যাতনায় রাস্তার ধারে পড়িয়া রহিল।
রায়হান যখন মিলাদ পাঠ করিতেছিলেন খোরশেদদের বাড়ির পাশে কচুবনের ভিতর দুইটি হিন্দু যুবক নিঃশব্দে বসিয়াছিল। মশা তাহাদিগেকে অত্যন্ত উতলা করিতেছিল। কিন্তু তবুও তাহারা স্থির ও উৎকর্ণ হইয়া অপেক্ষা করিতেছিল।
আহার-শেষে মেয়েরা কথা কহিয়া বাড়ির পথে যখন অগ্রসর হইবার উদ্যোগ করিতেছিলেন তখন হরিদয়াল ও ভজহরি উধ্বশ্বাসে হাঁপাইতে হাঁপাইতে দৌড়াইয়া শ্যামসুন্দরের বাড়িতে আসিয়া মূৰ্ছিত হইয়া পড়িল।
চোখে-মুখে জলের ঝাঁপটা দিয়া সকলে যুবকদ্বয়ের চৈতন্য সম্পাদন করিলেন। তখন একটু প্রকৃতিস্থ হইয়া হরিদয়াল কহিল–“আর রক্ষা নাই। বহু লাঠিয়াল খোরশেদদের বাড়িতে সমবেত হয়েছে। কানে শুনলাম, আজই রাত্রে তারা হিন্দুপল্লী আক্রমণ করিবে। তাদিগকে বাহির হতে দেখে এসেছি।”
আর কথা নাই–মুহূর্তমাত্র বিলম্ব না করিয়া সমস্ত হিন্দু যে যেমন করিয়া পারিল গ্রাম ছাড়িয়া পলায়ন করিল। থাকিল কেবলমাত্র কয়েকজন পুরুষ।
.
সপ্তম পরিচ্ছেদ
স্টেশন হইতে রায়হান যখন ফিরিয়া আসিলেন তখন ফরসা হইয়া গিয়াছে। বিশ্রামের সময় ছিল না। অতঃপর নামাজ পড়িয়া সেলাইয়ের কল লইয়া একটা জামা সেলাই করিলেন।
বেলা যখর নয়টা তখন থানার বড় দারোগা সাহেব কয়েকজন সি: লইয়া তাহার দোকানে আসিয়া উপস্থিত।
হরিবাবু বড় দারোগার বয়স ষাট বছরের কম হইবে না। তিন বৎসর হইল তিনি ওমেদপুর থানায় আসিয়াছেন। এই দীর্ঘ তিন বৎসরে একদিনের জন্যও রায়হানের সহিত তাহার আলাপ হয় নাই।
পুলিশকে সকলে ঘৃণা ও ভয় করিলেও রায়হান পুলিশর লোক দেখিয়া বিশেষ ভীত হইতেন না,। সুযোগ ও সুবিধা হইলে তিনি তাহাদের সহিত বন্ধুরূপে আলাপ করিতেন। দুঃখের বিষয়, এই ভদ্রলোকের সহিত তাহার কোনো পরিচয় হয় নাই।
থানার বড় দারোগাকে সম্মুখে দেখিয়া রায়হান একটু বিস্মিত না হইয়া পারিলেন না। স্মিত মুখে রায়হান দারোগ বাবুকে সম্মুখস্থ চেয়ারে উপবেশন করিতে অনুরোধ করিলেন।
হরিবাবু অত্যন্ত ভদ্রতার সহিত রায়হানকে নমস্কার করিয়া চেয়ারে উপবেশন করিলেন। রায়হান হাতের কাজ বন্ধ করিয়া দারোগা বাবুর আগমনোদ্দেশ্য জিজ্ঞাসা করিলেন।
দোকানের সম্মুখে দেখিতে শয়তানের মতো কয়জন সিপাই দাঁড়াইয়াছিল। রায়হান তাহাদিগকে আসন গ্রহণ করিতে বলিলেন। বাধা দিয়ে হরিবাবু তাহাদিগকে একটু দূরে সরে যাইতে বলিলেন।
অনেকক্ষণ নিস্তব্ধ থাকিয়া হরিবাবু কহিলেন–“দেখুন, রায়হান সাহেব! আমি আমার সন্দেহভঞ্জন করতে এসেছি। আপনার উপর আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা আছে।”
রায়–আপনি আমার নাম জানলেন কী করে? আমার উপর আপনার শ্রদ্ধার ভাব জেগেছে কেমন করে? আমার প্রশ্নে কোনো রূঢ়তা নাই জানবেন। আপনার সঙ্গে আমার কোনদিন তো পরিচয় হয় নাই।
হরি–আমরা পুলিশের লোক–কোথায় কে কি করে, সে খবর না রাখলে আমাদের কর্তব্য সম্পাদিত হয় না। না থামিয়াই ভাবাবেগে হরিবাবু কহিতে লাগিলেন–পুলিশের লোকেরা কথা কেউ বিশ্বাস করে না–কিন্তু তবুও আমরা একেবারে পশু নহি। বহুলোক ক্ষমতার অপব্যবহার করে। ভদ্রতা রক্ষা না করে ভদ্র ও অভদ্রের উপর তারা তাদের দুরন্ত ব্যবহারের পরিচয় দেয়। আমাকে তা মনে করবেন না। আমি মনুষ্যত্বকে আদর করতে জানি। দেশের মানুষকে আমি ঘৃণা না করে শ্রদ্ধা করি ও ভালবাসি। আমি তাদের বন্ধু হতে ইচ্ছা করি। যে দুরাত্মা সে নিজের আত্মীয়ই হোক আর বিদেশীই হোক তাকে শাস্তি দেওয়া। কর্তব্য। কোনো উত্তরের অপেক্ষা না করিয়া হরিবাবু আবার কহিলেন–চিত্তের স্বাধীনতা নষ্ট না করে আপনি ব্যবসা করছেন ইহা খুব ভালো কথা। একটা নিস্তব্ধ থাকিয়া উৎসাহের সহিত পুনঃ কহিলেন আপনি মানুষের মঙ্গল করতে পারলে পশ্চাৎপদ হন না,এ সংবাদ আমি রাখি। দেশের মানুষকে ভালো করা প্রত্যেক গভর্নমেরন্টের কাজ। আপনি তাই করে থাকেন। চাকরি না করেও সরকার ও আমাদের উদ্দেশ্যকে সার্থক করছেন–বড় ভালো কথা। মানুষের দুঃখ দূর করা, তাদের সুখ ও শান্তির ব্যবস্থা করাই আমাদের কাজ। সর্বত্র ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা করা আমাদের উদ্দেশ্য, আপনারও সেই ব্রত, বড় ভালো–বড় ভালো।
রায়–ক্ষমা করবেন। আপনার অতিরিক্ত প্রশংসায় আমি নিজেকে বিপন্ন মনে করছি। বহু কর্মচারীর সঙ্গে আলাপ হয়েছে। কিন্তু ক্ষমা করবেন আপনার ন্যায় মহানুভব ব্যক্তির সন্ধান কোথায়ও পাই নাই।
হরি-আপনার নিকট কেন এই বেশে এসেছি তার কারণ এখনও বলি নাই। শীঘ্রই গ্রামের সকলকে এখানে ডাকব। কিন্তু তার আগে অপনার মহত্ত্ব ও সত্যপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি।
রায়–করুন। যা জানি বলবো। তাতে নিজের ক্ষতিই হোক বা আমার আত্মীয় স্বজনের ক্ষতিই হোক গ্রাহ্য করবো না।
হরি–আমার কাছে খবর গিয়েছে আপনি গ্রামস্থ হিন্দু ভদ্রলোকদের অত্যাচার করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। শ্যামসুন্দর বাবু থানায় এজাহার দিয়েছেন–রাত্রি তিনটার সময় নাকি আপনি বহু লেঠেল নিয়ে তার বাড়িতে পড়ে রমেশকে প্রহার করেছেন। আপনার ইচ্ছা ছিল সমস্ত হিন্দুপল্লী লুট করা। কিন্তু প্রভাত হয়ে যাওয়াতে সে উদ্দেশ্য সিদ্ধ হয় নাই। আপনি কিছু মনে করবেন না। আপনার উপর আমার যথেষ্ট শ্রদ্ধা থাকলেও আইন মেনে আমাদিগকে কাজ করতে হয়। বলুন এখন আপনার উত্তর।
রয়হান একেবারে স্তম্ভিত হইয়া গেলেন। তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ! যে হিন্দু প্রীতির জন্য রায়হানকে অনেক সময়-অনেক সহধর্মীর কাছে উপহাস লাভ করিতে হইয়াছে, তার ফল এই! এক দেশে বাস করিয়া সে কখনও কোনো কাজে হিন্দুকে বাদ দিতে চায় নাই। বিশেষ করিয়া শ্যামসুন্দর কেমন করিয়া তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনয়ন করিলেন! সে যে তার কাকা। চিরকালই সে তাকে কত শ্রদ্ধায় কাকা বলিয়া ডাকিয়া আসিয়াছে। তার মেয়ে গিরিবালাকে রায়হান কত স্নেহের চোখে দেখে। তবে কি হিন্দু-প্রীতির কোনো মূল্য নাই? তাহার সহধর্মীরা যেমন বলিয়া থাকেন হিন্দুর ভালবাসা শুধু মুখে। মুসলমানকে তাহারা কখনও ভালবাসে না। এসব অভিযোগ কি সত্য?
রায়হান অত্যন্ত বিস্ময়ে কহিলেন–“আমি রাত্রে তিনটার অনেক আগে খোরশেদকে নিয়ে স্টেশনে গিয়েছিলাম।”
“বাস, আর কিছু দরকার নেই”–বলিয়া দারোগা বাবু সিপাই হরিসিংকে ডাক দিলেন।
হরি সিং লগুড়হস্তে উপস্থিত হইয়া ভাবিল রায়হানকে বুঝি বাঁধিবার হুকুম দেওয়া হইবে। সে একবার তাহার রক্ত চক্ষু শোণিত পিপাসু শার্দুলের ন্যায় রায়হানের উপর নিক্ষেপ করিল। কিন্তু দারোগা বাবু হুকুম দিলেন”গ্রামের সকল ভদ্রলোককে এখানে ডেকে আন। কোনো অভদ্রতার পরিচয় দিস না যেন।” হরিসিং সেলাম করিয়া প্রস্থান করিল।
এমন সময় শ্যামসুন্দর ও নগেন ঘোষ আসিয়া উপস্থিত হইলেন। শ্যামসুন্দরের মাথায় একখানা ভিজা গামছা জড়ান ছিল।
রায়হান সম্ভ্রমে শ্যামসুন্দরকে বসিতে অনুরোধ করিলেন।
দারোগা বাবু রায়হানের আশ্চর্য ব্যবহারে মনে মনে চমৎকৃত হইতেছিলেন। ভাবিলেন, এমন ব্যক্তি তো কখনও দেখি নাই।!
শ্যামসুন্দরের মনে যাহাই থাকুক, অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয়, তিনি রায়হানের কুশল, জিজ্ঞাসা করিতে ভুলিলেন না। নগেন ঘোষ চুপ করিয়া রহিল।
অধিক বিলম্ব হইল না। বিরক্ত ও বিস্ময়ে গ্রামের সব ভদ্রলোক আসিয়া উপস্থিত হইলেন।
রায়হান, দারোগা বাবু ও অন্যান্য ভদ্রলোকদিগকে বসিবার সুবিধা করিয়া দিয়া যৌন হইয়া এক পার্শ্বে দাঁড়াইয়া রহিলেন।
আলোচনায় প্রমাণ হইল–যে সময়ের কথা উল্লেখ করিয়া রায়হান ও খোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনয়ন করা হইয়াছে তখন তাহারা স্টেশনে উপস্থিত ছিলেন।
খোরশেদের বাড়িতে গত রাত্রে মিলাদ পাঠ হইয়াছিল। সেখানে যাহারা সমবেত হইয়াছিলেন তাঁহারা অবলা সরলা নারী মাত্র। তাহারা রক্তচক্ষু লাঠিয়াল নহে। তাহাদিগকে ভয় করিয়া গ্রাম ছাড়িয়া কাহারো পলায়ন করিবার দরকার ছিল না।
দারোগাবাবু বুঝিলেন,ব্যাপারের মূলে কিছুই নাই। কিন্তু তাহার মনে প্রশ্ন হইতে লাগিল রমেশের দাঁত ও নাক কে ভাঙ্গিয়া দিয়েছে? মিথ্যা মোকদ্দমা সৃষ্টি করিবার জন্য ইহা কি তার বাপেরই একটা কারসাজি?
দারোগা অনেকক্ষণ অবাক হইয়া থাকিয়া খেলো ঘটনাকে অধিক ফেনাইয়া না তুলিবার ইচ্ছায় রায়হন ও অন্যান্য ভদ্রলোকদের সহিত অমায়িকভাবে করমর্দন করিয়া সেখান হইতে অশ্বপৃষ্টে প্রস্থান করিলেন।
শ্যামসুন্দর মৌন হইয়া বসিয়া থাকিয়া রহিলেন। সকলে মিলিয়া তাহাকে ঘিরিয়া বিদ্রূপ বাণ বর্ষণ করিতে লাগিলেন। হিন্দুরা খেয়ালের বশবর্তী হইয়া মুসলমান
ভদ্রলোকদিগকে অপ্রস্তুত করিবার জঘন্য চেষ্টা কেন করিতেছেন, ইহাও কেহ কেহ প্রশ্ন করিলেন। ক্রমশ তাহাদের স্বর উত্তেজিত ও রুক্ষ্ম হইয়া উঠিল।
ব্যাপার খারাপ হইতে পারে বিবেচনা করিয়া রায়হান শ্যামসুন্দরকে প্রস্থান করিতে ইঙ্গিত করিয়া সকলকে মৃদুভাবে কহিলেন—”বিপদে পড়িলে মানুষ নানা ভুল করে বসে। হিন্দুদের ব্যবহারের আমাদের ক্ষুণ্ণ হওয়া উচিত নয়। গোলযোগ যে এইখানেই শেষ হল, এতে সকলেরই আনন্দ প্রকাশ করা উচিত। শ্যামসুন্দর বাবু ও অন্যান্য হিন্দুরা এইভাবে শঙ্কিত হবার যথেষ্ট কারণ ছিল।”
রায়হানের নিকট হইতে হরিবাবু স্টেশনে যাইয়া স্টেশন-মাস্টারের নিকট জানিলেন–গত রাত্রি ২টা হইতে সকাল পর্যন্ত রায়হানের সহিত তাহার ব্যবসা সম্বন্ধে আলাপ হইয়াছে। দারোগা হাসিয়া থানায় প্রস্থান করিলেন।
.
অষ্টম পরিচ্ছেদ
গিরিবালাকে প্রহার করিবার পর প্রায় সাতদিন ধরিয়া খোরশেদ স্কুলে যায় নাই। প্রথম তিনদিন বিনা কারণে সে কামাই করিয়াছিল। শেষ পাঁচদিন তাহাকে সাংসারিক কাজে টাউনে কাটাইতে হইয়াছিল।
মনটা একটু ভার করিয়াই সেদিন খোরশেদ ক্লাসের ভিতর বসিয়াছিল।
শিক্ষক যাহা বুঝাইতেছিলেন সেদিকে তাহার আদৌ মন ছিল না এমন সময় হঠাৎ দপ্তরি আসিয়া ক্লাসের শিক্ষক মহাশয়েকে বলিল–“হেড মাস্টার সাহেব খোরশেদ মিঞাকে ডাকছেন।”
গত সাতদিন খোরশেদ স্কুলে আসে নাই। তাহার মন বিনা কারণে আতঙ্কিত হইয়া উঠিল। শিক্ষকের অনুমতি লইয়া সে বাহিরে আসিল।
লাইব্রেরি ঘরে তখন আর কেহ ছিল না, শুধু প্রধান শিক্ষক বিনয় বাবু চেয়ারে বসিয়া একখানা চিঠি লিখিতেছিলেন।
খোরশেদ নিঃশব্দে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিয়া বিনয় বাবুকে আদাব করিল। তিনি কথা কহিলেন না, শুধু একটু মাথা ঝুঁকাইয়া দপ্তরিকে বাহির যাইতে আদেশ দিলেন।
খোরশেদ দুর্দান্ত হইলেও শিক্ষকদের সম্মুখে সর্বদাই সে নম্র ও ভদ্র হইয়া থাকিত। তার ভিতরে যে কতখানি দুর্জয় ভাব নিহিত ছিল একথা কোনো শিক্ষক জানিতেন না।
অত্যন্ত ভয়ে খোরশেদ বিনয় বাবুর আজ্ঞার অপেক্ষা করিয়া মাথা নত করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল। বুক তাহার দুরু দুরু করিতেছিল। কোনো দিন তো এমনভাবে হেডমাস্টার মহাশয় তাহাকে ডাকেন নাই। কেহ কি তাহার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনয়ন করিয়াছে? যে একটু ঘটনা হইয়াছিল তাহা তো এক রকম মিটিয়া গিয়াছে।
একটা উদ্বেগশূন্য দীর্ঘনিশ্বাস টনিয়া লইয়া খোরশেদ সোজা হইয়া দাঁড়াইল।
বিনয় বাবু এইবার মাথা তুলিয়া কহিলেন–“খোরশেদ! তোমার বিরুদ্ধে এক গুরুতর অভিযোগ আছে। হয় তোমার স্কুল পরিত্যাগ করতে হবে নইলে অতি কঠিন দণ্ড গ্রহণ করতে হবে।”
খোরশেদ অত্যন্ত বিস্ময়ে ও অত্যন্ত ভয়ে কহিল–“কী গুরুতর অভিযোগ মহাশয়? যদি অপরাধ করে থাকি তবে তার জন্য শাস্তিভোগ করতেই হবে। আমি যে কোনো অপরাধ করেছি এরূপ তো আমার মনে পড়ে না।”
বিনয় বাবু সহানুভূতি বর্জিত কঠিন কণ্ঠে বলিলেন–“তুমি শ্যামসুন্দর বাবুর কন্যা শ্রীমতি গিরিবালাকে মেরেছিলে?”
খোরশেদ তৎক্ষনাৎ কী উত্তর দিতে যাইতেছিল, কিন্তু কী কারণে সে চুপ করিয়া রহিল। প্রধান শিক্ষক মহাশয় আবার বলিলেন–“কেমন এই অভিযোগ সত্য?”
“সত্য।কিন্তু কেন অপমান করেছিলাম তা আপনি জানেন?”
“সে কারণ আমি জানতে চাই না। তুমি যে তাকে মেরেছ–এইটা ঠিক?”
“ঠিক–কিন্তু কারণ আমাকে বলতে হবে। আপনি না শুনলেও আমি বলবো। সে আমাকে অশ্লীল ভাষায় গাল দিয়েছিল কেন? সে তো অনেক দূরেই দাঁড়িয়েছিলো–তবু কেন বল্লে–জল নষ্ট হয়ে গিয়েছে। জল যে কোনো রকমেই নষ্ট হয় নাই এই কথাই তাকে ভালো করে জানিয়ে দিয়েছিলাম।”
“তোমার ভয়ানক অপরাধ হয়েছে। বিদ্যালয়ের ছেলেদের পক্ষে পথের মাঝে বাজে লোকের সঙ্গে বচসা করা আইন বিরুদ্ধ। তুমি কোন সাহসে অসঙ্কোচে একটা যুবতী মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে সাহস করেছিলে?”
“আমি কথা বলি নি।”
“তুমি কথা বল নাই?”
“সেই আমাকে প্রথমে অতি জঘন্য অপমানজনক কথা বলেছিল।”
“কথাটা কি?”
“এই যেমন মুসলমানেরা আপনাদিগকে গোলাম, উঁটা বা কাফের বলে ঠিক সেই ধরনের কথা।”
“যাক, শুনতে চাই না। তোমাকে গালি দিয়েছিলো–তুমি তার বাবাকে কেন বলে দিলে না?”
“এই মিষ্টিমধুর কথাগুলি হিন্দু ছেলেমেয়েরা তাদের মা-বাবার কাছেই শেখে; সুতরাং তাদের কাছে নালিশ করা আর নিজকে বেশি করে অপদস্থ করা একই কথা। ক্ষমা করবেন, এরূপ উপদেশ আর আমাকে দিবেন না।”
বিনয় বাবু বিরক্ত হইয়া বলিলেন–“তুমি তো বড় পাজি হে। তুমি কোন কালে শুনেছো কোনো হিন্দু তার পুত্র-কন্যাকে এইসব কথা শিখাচ্ছে?”
“পাজি হতে পারি, কিন্তু এটা সত্য কথা!”
“তুমি শ্যামসুন্দর বাবুর মেয়েকে মেরেছিলে–কেমন?”
“মেরেছিলাম। শুধু তাকে নয়, রমেশকেও এ একই কারণে অপমান করেছি।”
“বটে, তোমার এত সাহস?”
“সাহস না হয়ে উপায় কি! হিন্দুর এই রোগের ঔষধ কর্ণ মর্দন ছাড়া আর কিছুই নয়। আজ যে হিন্দু আমায় অপমানসূচক গালি দিতে সঙ্কোচ বোধ করে না–কালই সে বিপদে পড়লে ভগবানের অংশ বা দেবতা বলে আমাকে নমস্কার করবে।”
ক্রোধের মাথায় কথাগুলি বলিয়া ফেলিয়া খোরশেদ থতমত খাইয়া গেল। বিনয় বাবু অগ্নিশর্মা হইয়া “দপ্তরি দপ্তরি” বলিয়া চিৎকার করিতে লাগিলেন।
দপ্তরি আসিতেই বিনয়বাবু হুকুম দিলেন–“এই ছেলেটিকে কান ধরে বের করে দাও।”
কিন্তু তাহার পূর্বেই দুঃখে ও ভয়ে খোরশেদ লাইব্রেরি পরিত্যাগ করিয়াছিল।
এক ঘণ্টার মধ্যে দপ্তরি সার ক্লাসে নোটিশ দিয়া আসিল–“অদ্য খোরশেদ মিঞার মাথায় স্কুলের ছুটির পর সর্বসমক্ষে গাধার টুপি পরান হইবে।”
.
নবম পরিচ্ছেদ
সেইদিন হইতে কয়েক মাস খোরশেদ স্কুলে যায় না। বাড়িতেই সে থাকে। মাঠের জমি দেখিয়া এবং বাপের কালের প্রজাদের নিকট হইতে খাজনা আদায় করিয়া তার দিনগুলি কাটিয়া যায়।
মিত্রপুকুরের বাঁধানো ঘাটে তখন আঁধার জমিয়া উঠিয়াছিল। ঘাট হইতে সেই অল্প আঁধারকে সরাইয়া ফেলিয়া একটা যুবতী উপরে উঠিলেন।
যুবতী দেখিলেন, ওমা একি? তার সম্মুখে খোরশেদ। খোরশেদ আড়ষ্ঠকণ্ঠে বলিল,–“গিরি, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি। অনেক দিন থেকে সুযোগ খুঁজছি, কিন্তু পাই নাই।”
রূপময়ী গিরিবালা দেখিল–সুঠাম সুগোল-দেহ খোরশেদ পোষমানা ব্যাঘের মতো তাহার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। গিরিবালার সে চপলতা আর এখন নাই। সংসারের অনেক কথাই সে ভাবিতে শিখিয়াছে। সে দেখিল–বিনয়াবনত খোরশেদের মুখে একটা তরল মহিমার দীপ্তি ফুটিয়া উঠিয়াছে। দুর্দান্ত খোরশেদ যে কাহাকেও ভয় করে না সে আজ তাহার সম্মুখে বিনয়ে নম্র। কী বিস্ময়!
পুলক ও গৌরবে গিরিবালার মন ভরিয়া উঠিল। সে নম্র-মধুরকণ্ঠে কহিল–“ক্ষমা, কীসের ক্ষমা খোরশেদ? আমি কিছু মনে করি নাই।”
খোরশেদ আবগভরা কণ্ঠে বলিল–“গিরি, তোমার মন এত বড়! তুমি কি দেবী? তুমি আমার মতো নরপিশাচকে এত সহজে ক্ষমা করলে? ওঃ তুমি বড় মহৎ–আমি তোমায়। ভালবাসি।”
জীবনের যে সময় কোনো অজ্ঞাত অনুভূতির লালসায় মানুষের মন অজ্ঞাত সারে উন্মুখ হইয়া থাকে, তখন কেউ যেন এই অতি মধু অথচ ভয়ানক কথাটি কাহাকেও না শুনায়।
গিরির গণ্ড সহসা স্বেদসিক্ত হইয়া গেল। তাহার কাকাল হইতে কলসিটি পড়িয়া একেবারে বেঁকা হইয়া শব্দের সহিত জলের ভিতর পড়িয়া গেল।
দূর হইতে একটি প্রদীপ লইয়া কে একজন ডাকিয়া উঠিলেন–গিরি, এত দেরি হচ্ছে কেন? তোর বাবা যে জলের জন্য বসে আছেন।”
মুহূর্তের মধ্যে গিরি ব্যস্ত হইয়া উঠিল। অন্ধকারাচ্ছন্ন সন্ধ্যাকালে সে কাহার সহিত কথা বলিতেছে?
গিরি চিৎকার করিয়া বলিল–“মা,আমায় এগিয়ে নিতে এসেছ! আমি ডরিয়ে মরছিলাম। ভাগ্যে এই ছেলেটা এসে ঘাট থেকে আমায় টেনে তুলেছে।
গিরির মা বিনোদিনী বিস্ময় ও ভয়ে বলিলেন–“মা, এই বাড়ি-এর মধ্যে কি এসেছে?”
বিনোদিনী মেয়ের সম্মুখে আসিয়া দেখিলেন–গিরির কাপড় ভিজে।
“ওমা,কি কথা?”–বলিয়া খোরশেদের দিকে ফিরিয়া বিনোদিনী জিজ্ঞাসা করিলেন কে বাবা তুমি? তুমি কি আমাদের গ্রামের ছেলে?”
একটা দমকা বাতাস আসিয়া বিনোদিনীর হাতের প্রদীপটি নিবিয়া গেল।
খোরশেদ বলিল–“আমি খোরশেদ, গিরি জলের পার্শ্বে সিঁড়ির উপর পড়ে ওমা, ওমা বলে আর্তস্বর চিৎকার কচ্ছিলো–আমি দৌড়ে এসে টেনে তুল্লাম।
বিনোদিনী চোখের জল ফেলিয়া বলিলেন–“বাছা! তুমি খোরশেদ–আহা, আর জন্মে তুমি আমার ছেলে ছিলে! তুমি এ পথ দিয়ে না গেলে যে মেয়ে আমার ডুবে মরে যেত।“
উদ্বেগ,ব্যগ্রতায় বিনোদিনী ভয়ের কারণ জিজ্ঞাসা করিতে ভুলিয়া গিয়াছিলেন। এইবার মেয়ের দিকে ফিরিয়া উৎকণ্ঠা-আশঙ্কায় জিজ্ঞাসা করিলেন–“কী হয়েছিল মা?”
গিরি বলিল–“কী যেন আমার পায়ের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল। একে বারে উপুড় হয়ে পড়ে গড়াতে জলের ভিতর, যেয়ে পড়ছিলাম। গলা আমার বন্ধ হয়ে এসেছিল। ভাগ্যে খোরশেদ বাবু এসেছিলেন।“
খোরশেদ বলিল–“আমি বাবু নই–আমি মিঞা।”
তাহার পর ”আসি” বলিয়া সে পিছন ফিরাইয়া দাঁড়াইল।
বিনোদিনী ব্যস্তভাবে অগ্রসর হইয়া খোরশেদের হাত ধরিয়া কহিলেন : ‘তুমি আজ বাড়ি যেতে পারবে না। এস আমাদের বাড়ি। তোমাকে নিজ হাতে খাওয়াব।”
খোরশেদ আপত্তি তুলিল না। বিনোদিনী অগ্রে, গিরি মধ্যে এবং পশ্চাতে খোরশেদ চলিল।
শ্যামসুন্দর যখন আনুপূৰ্কি ঘটনা শুনিলেন তখন কৃতজ্ঞহৃদয়ে বলিলেন, বাবা খোরশেদ! তুমি আমাদের পর নও। আজ থেকে তোমাকে আমি অধিক করে ভালবাসবো।”
খোরশেদ। আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আমি কী করেছি?”এর চেয়ে বড় কাজ কে কত্তে পারে?”
তারপর কথায় ও প্রশংসায় ঘণ্টা খানেক কাটিবার পর বিনোদিনী একটা পাকা পেঁপে, দুখানা সন্দেশ এবং খানিক দুধ লইয়া আসিয়া কহিলেন–“মা গিরি, এইগুলি ধর দেখিন, খোরশেদকে দাওয়ায় বসিয়ে নিজ হাতে খাওয়াব। পেঁপেটা বাক্স থেকে ছুরি এনে কেটে দাও। আর জন্মে ও হিন্দু ছিল।”
গিরি, “আনি” বলিয়া পেঁপে ও সন্দেশের ডালা ও দুধ-খানিক গ্রহণ করিল।
আর আপত্তি করিলে লাভ হইবে না ভাবিয়া খোরশেদ কোনো কথা না বলিয়া আসনে বসিয়া পড়িল।
শ্যামসুন্দর অন্ধকারে ঘরের ভিতর তামাক খাইতে লাগিলেন।
বিনোদিনী কহিলেন”তুমি সঙ্কোচ বোধ করো না খোরশেদ। নিজের বাড়ির মতো বসে খাও। এঠো আমি নিজেই পঙ্কিস্কার করবো, তাতে আমায় স্নান করতে হবে না।
.
দশম পরিচ্ছেদ
এই দুঃখ ভরা সংসারে শান্তির আনন্দ কোথায়?–পরের উপকার করিয়া যে দীন ও নিরাশ্রয়কে তাহার হাত ধরিয়া-মূর্খকে জ্ঞানের আলো দিয়াছে।
স্নিগ্ধ রজনীর অঞ্চল উড়াইয়া ধীর সমীরণ করিমার মুখে আসিয়া লাগিতেছিল। করিমা অস্ফুট স্বরে কহিল–“পথহীনকে পথ দেখাইয়া-মূর্খকে জ্ঞান দান করিয়া।”
সে জানে তার জীবন শুষ্ক ও মরুময়। কোথায়ও একটু আনন্দ নাই। পিতা পুনরায় বিবাহ দিবার জন্য তাহাকে তৃতীয় ব্যক্তির দ্বারা অনুরোধ করিয়াছিলেন। করিমা সন্দেহ ও অবিশ্বাসে কিছু বলে নাই।
জীবনের এই শুষ্কতার ভিতর প্রাণের এই ভয়াবহ নির্জনতার প্রতিদান কি শুধু এই পুরাতন সংসারের স্থবির দিনগুলি একই রকম খেলা, কথা ও কাজ?
তার জীবনের উদ্দেশ্য কী? শুধু বাঁচিয়া থাকা। জীবন কি তার শুধু বিড়ম্বনাময়-নিরর্থক!
সেদিন জ্যোছনালোকে সে একটা অতীতের স্বপ্ন দেখিয়াছিল। কিন্তু তাহা ভাবতে সে সাহস পায় নাই। সেই যুবকের প্রশান্ত সৌম্য মূর্তির মধ্যে একটা অতীত স্বর্গ আবেগের বন্যা তাহার মনের উপর দিয়া খেলিয়া গিয়াছিল। নিজের মনে অবাক হইয়া সে বলিয়াছিল ”তওবা”।
একটা কিছু করা চাই। এমনি করিয়া ছেলেখেলার মধ্যে মানুষের মনটাকে কিছুতেই ডুবাইয়া রাখা যায় না। আত্মার স্বভাবজাত অতৃপ্তির সম্মুখে ইন্ধন যোগান চাই। নহিলে সে। বাঁচে না।
করিমা ভাবিল, দুঃখী ও অন্ধ মানুষকে ভালবাসিয়া সে তাত্ত্বিক আনন্দ সংগ্রহ করিবে। মানুষের শিশুকে বুকে লইয়া সে সুখী হইবে।
করিমা আবার ভাবিতেছিল–সেই সে ভিখারির মেয়েটা সেদিন এসেছিল। চারবার তার নিকে হয়েছিল,তবুও সে বিধবা। দ্বিতীয় ও চতুর্থ স্বামী তালাক দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সে কাল, এই তার অপরাধ। কী করে তার চলবে? মেয়ে মানুষের জন্য সংসারে কাজ আছে? শুধু মানুষের উপর নির্ভর করে কি বেঁচে থাকা যায়? অনেক দিন হইতে সে নিজেকে প্রশ্ন করিয়া আসিতেছে–মেয়ে মানুষকে যদি একটা অর্থকরী কাজ শিখিয়ে দেওয়া যায়–তা হলে সে নিজেই অন্ন সংগ্রহ করবার ক্ষমতা পেতে পারে। এটা সম্ভব কী?
সেই হতভগিনী মেয়েটি সম্বন্ধে আবার তাহার চিন্তা আসিল। আহা, মেয়েটি কাল হলেও তার চেহারায় একটা স্বর্গীয় লালিত্য ফুটে উঠেছে। মাত্র তার বয়স পঁচিশ। মরতে। এখনও বহু বৎসর বাকি। কী করে সে এতকাল বেঁচে থাকবে? খোদার দেওয়া আত্মার প্রতি এত অবহেলা কী সহ্য হয়?
প্রতি শুক্রবারে কত ভিখারিনী এসে দরজায় হাঁক ছাড়ে। কার ঘরেই বা কত চাল পয়সা আছে? এই সহস্র হতভাগিনীদের দুঃখ বেদনার জন্য কে দায়ী? কে তাহাদিগকে এমন করেছে? তারা ছোটলোক–এখানে ওখানে যেতে পারে। ভিক্ষেই হোক আর যাই হোক বাচবার জন্য তারা কিছু চেষ্টা করতে পারে। অসহায় ভালোমানুষের ঘরের মেয়েরা কী করবে? তারা কী করে বাঁচবে? মেয়ে মানুষের জীবন কি দুঃখময়! তা ছাড়া মূল্যহীন জীবনের আদর স্বামীর ঘরেও হয় কি? ন্যায্য দাবি না থাকলে কে কাকে মানে? তাদের জন্য সে কি তার ক্ষুদ্র শক্তি ব্যয় করিয়া কিছু করতে পারে না? সত্য রকমে তাদের জন্য তার। মতো সামান্য নারী কী করতে পারে?
করিমা-আকাশ-পাতাল ভাবিল, কিন্তু কোনো মীমাংসা হইল না।
করিমা আবার ভাবিল–মানুষ লেখা-পড়া না শিখলে পশু হয়–সে কিছু বুঝতে পারে।মেয়ে মানুষের বোঝবার যদি ক্ষমতা থাকতো তা হলে তারা তাদের অবস্থার কথা ভেবে, না কেঁদে থাকতে পারতো না। বাপের যদি একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হয়। পিতা পুত্রের মঙ্গলের জন্য দশ হাজার টাকা ব্যয় করেন। মেয়েকে অন্ধ ও মূর্খ করে বিয়ের নামে তাকে জন্মের মতো তাড়িয়ে দেন। ডেপুটি ইন্সপেক্টর মৌলবী এমদাদ আলীর হঠাৎ মৃত্যুর পর আহা! তার প্রৌঢ়া বৌটির কী দূরবস্থাই না হয়েছিল! এমন ভদ্রঘরের মেয়ে সারা জীবনটা তার দুঃখে দুঃখে কেটে গেছে। আহ্ কি বেদনা–কি যাতনা! এর মীমাংসা কী? সব সময়ে সব অবস্থায়ই দ্বিতীয় বিয়ে সম্ভব? সহসা উফুল্লা হইয়া করিমা বলিয়া উঠিল–দৃষ্টি সম্পন্ন চিন্তাশীল পরোপকারী রায়হানকে এই সব কথা বল্লে সে কি বলে জানা যাবে। আমার মনের এই বেদনার কিছু মূল্য আছে কিনা তার কাছে শুনে দেখলে হয়। সে তো অনেক কথা ভাবে-হৃদয় তার মমতাভরা, এই গুরুতর কথাটা কি তাকে কোনোদিন। আঘাত করে নাই? কিন্তু সহসা করিমা ঈষৎ শিহরিয়া উঠিয়া ভাবিল–কোনো কারণে হয়তো তার সঙ্গে আমার কথা না বলাই ভালো।
পরক্ষণেই লজ্জিত হইয়া করিমা আবার ভাবিল–রায়হান বড় সুন্দর ও মহৎ। আমার প্রাণের ভিতরে তার মহত্ত্বের কথা ঘুরে ঘুরে বেড়াতে চায় সত্য–কিন্তু তার সঙ্গে আমার কথা না বলাই ভালো হবে কেন? বড় কর্তব্যের সামনে মনের এই অতি মূল্যহীন খেয়ালকে স্থান দেওয়া ছেলেমি। ওটা কিছু নয়। নারীর বেদনা ও দৈন্য আকাশ-পাতাল কাঁপিয়ে। দিচ্ছে। একদিকে সে মুখ, অন্যদিকে সে সম্পূর্ণ নিঃসহায়; জীবন তার আবর্জনাবিশেষ। নিঃস্ব, পরাধীন, মূল্য ও শক্তিহীন বিধবা দ্বিতীয় স্বামী গ্রহণ করলেও তার অসম্মান ছাড়া সুখ হয় না। নারীর হাতে অর্থ এবং বুকে বল চাই। রুক্ষকেশা শুক্ল বস্ত্রপরিহিতা নিরাভরণা। করিমা আকাশের দিকে চাহিয়া কেবলই চিন্তা করিয়া যাইতেছিল। উজ্জ্বল লোহিত ললাট তার স্বেদ সিক্ত হইয়া উঠিল। কোমল করুণাভরা বিভ্রান্ত দৃষ্টি কাঁপিয়া কাপিয়া উঠিতেছিল। ভাব ও বেদনাবোধে তার রক্ত চিবুক থাকিয়া থাকিয়া স্ফূরিত হইয়া পড়িতেছিল। করিমার মূর্তি খানি কী পবিত্র! কী সুন্দর! কেবল শুভ্রগন্ধ ও সুষমার একখানা উজ্জ্বল মোহন ছবি।
দরজায় ধাক্কা দিয়া এমন সময় খোরশেদ মুখ বাড়াইয়া জিজ্ঞাসা করিল–“হামিদ এখানে আছে?”
করিমা উঠিয়া দাঁড়াইয়া কহিলেন–“কে, খোরশেদ নাকি? টাউনে গিয়াছে, তুমি জান না?”
“জানি” বলিয়া খোরশেদ কহিল–“মনে ছিল না।”
খোরশেদ আবার দাঁড়াইয়া থাকিয়াই বলিল–“যাই এখন বুবু!”
করিমা কহিল–“কেন, এত তাড়াতাড়ি কীসের? এসেছ যখন, তখন বসো।”
“চাচি কই?”
”রান্না ঘরে।”
“এখনও ঘরে প্রদীপ দেওয়া হয় নাই যে?”
“কেন, অন্ধকারে বসে থাকলে দোষ কী?”
দোষ নাই–জিজ্ঞাসা করালাম আর কী।”
এমন সময় করিমার ছোট ভাইটি আসিয়া তাহার বুবুকে জড়াইয়া ধরিল। করিমা প্রদীপ জ্বাললেন।
খোরশেদ একখানা চেয়ার টানিয়া উপবেশন করিল। করিমা কহিলেন–“খোরশেদ, তুমি পড়া ছেড়ে দিলে কেন?”
“প্রতিজ্ঞা করেছি, হিন্দুর স্কুলে আর পড়বে না।”
“কেন?”
“হিন্দুর স্পর্শে আসা মুসলমানের পক্ষে পাপ।”
করিমা হাসিয়া কহিল–“বেশ খেয়াল তোমরা মাথায় চেপেছে।”
খোরশেদ কথা কহিল না, অন্যমনস্ক হইয়া বসিয়া রহিল। করিমা বিছানার উপর বসিয়া খোকাকে লইয়া আদর করিতেছিল।
খোরশেদ কম্পিত-কণ্ঠে কহিল–“করিমা তোমার একখানা চিঠি আছে।”
করিমা হাত বাড়াইয়া বিস্ময়ে কহিল–“দেখি, কোথা হতে এসেছে? পিওন তো বিকেল বেলাও এসেছিল।”
খোরশেদ কথা বলিল না। পকেট হইতে একখানা খাম বাহির করিয়া করিমার তুষারশুভ্র হাতের উপর রাখিল এবং মুহূর্তের মধ্যে কাহাকেও কিছু না বলিয়া সে নিষ্ক্রান্ত হইয়া গেল।
খামের উপরে লেখা ”প্রাণের করিমা” আর কিছু নয়।
করিমার হাতখানি কাঁপিয়া উঠিল। কী বিস্ময়! চিঠিখানি সে দূরে ফেলিয়া দিতে চাহিতেছিল, কিন্তু ভুলও তো হইতে পারে।
ধা করিয়া খামের মুখটা ফাড়িয়া সে যাহা দেখিল তাহাতে তাহার কাছে যেন সমস্ত ধরণীটা অগ্নিময় হইয়া উঠিল। যাহা স্বতীত, যাহা কল্পনায় আসে না–তাহা করিয়া চোখের সম্মুখে দেখিল। তাহাও আবার খোরশেদের নিকট হইতে! ধিক্ তাহার অদৃষ্টকে!
ঘৃণায় চিঠিখানা কুটি কুটি করিয়া পায়ের নিচে দলাইয়া সেগুলি বাহিরে ফেলিয়া দিল। ঘৃণিত সংসার! মানুষের মন কী বিচিত্র!