০৫. সাহিত্য-জীবন
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর সাহিত্য-জীবন শুরু হয় স্কুলের ছাত্র থাকার সময়েই। রুদ্র শুধু কবি তথা সাহিত্যিক ছিলেন না। সাহিত্য-জীবনের পাশাপাশি প্রবাহিত হয়েছে তার সংস্কৃতি-জীবন। রুদ্র যখন দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়েন, তখন তার বয়স আট বছর। সে-সময় ইসমাঈল মেমোরিয়াল হাইস্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় কবিতা আবৃত্তি করে প্রথম স্থান অধিকার করেন। কিন্তু তার বাবা ছিলেন ঐ স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি। তাই বাবা নিজের পুত্রকে প্রথম পুরস্কারটি না-দিয়ে অন্যকে দিলেন। এই বঞ্চনা শিশু-রুদ্রের মনে দারুণভাবে প্রভাব ফেলে। অবশ্য বাবা তাকে পুরস্কার বাবদ অনেক বই কিনে দেন। কিন্তু শিশু-রুদ্র তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বছর দুয়েক পরে রুদ্র ভর্তি হন মংলার সেন্ট পলস হাইস্কুলে। সেখানে প্রতিটি আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় রুদ্র প্রথম স্থান অধিকার করেন। রুদ্রের বয়স যখন এগারোয় পড়েছে, চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার সময়ে পাঠ্যবইয়ের সমস্ত কবিতাই রুদ্রের মুখস্ত হয়ে যায়। সে সময় বুদ্ধদেব বসুর কবিতার অনুকরণে একটি কবিতা-রচনা করেন। সেই ১৯৬৬ সালে রুদ্রের কবিতা রচনার হাতেখড়ি। কবিতাটি অবশ্য আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। এরপর রুদ্র নিয়মিত কবিতা লিখতেন। কবিতার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলা এবং নাটক করার দিকেও রুদ্র ঝুঁকেছিলেন সেই কিশোর বয়সেই। কিন্তু খেলাধুলার প্রতি বাবার নিষেধাজ্ঞার কারণে রুদ্র আর খেলার দিকে মন দেন নি।
১৯৬৮ সালে রুদ্র তখন যষ্ঠ শ্রেণীতে পড়েন, তখন মামাতো ভাইদের সঙ্গে নিয়ে নানির ট্রাংক থেকে কিছু টাকা চুরি করেন। সকলে বলেছিল সে-টাকা দিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। কিন্তু রুদ্রের সিদ্ধান্তে সেই টাকায় বেশকিছু বই কিনে একটি লাইব্রেরি গঠন করা হয়। এর নাম দেয়া হয় ‘বনফুল লাইব্রেরি’। ১৯৭০ সালে রুদ্র যখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়েন, তখন মামাতো ভাইবোনদের সঙ্গে নিয়ে অর্থাৎ বনফুল লাইব্রেরির সদস্যদের নিয়ে একটি নাটক মঞ্চায়ন করেন। নাটকের নাম ‘কালো টাইয়ের ফাঁস’। এ-নাটকে রুদ্র ছাড়াও অভিনয় করেন মুহম্মদ সাইফুল্লাহ, সাব্বির হাসান রুমি, মাহমুদ হাসান মনি, আছিয়া খাতুন ও আবু জগলুল মঞ্জু। ইতোমধ্যে রুদ্র নিজের লেখা কবিতায় একটি পুরো খাতা ভরে ফেলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাড়ির অনেক কিছুর সঙ্গে সেই খাতাটিও পুড়ে যায়।
রুদ্রের প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয় ১৯৭৩ সালে দৈনিক ‘আজাদ’ পত্রিকায়। রুদ্র তখন ওয়েস্ট এন্ড হাইস্কুলে দশম শ্রেণীর ছাত্র। মজার ব্যাপার হচ্ছে, কবিতাটিতে কবির নাম ছাপা হয় নি। কবিতার নাম ছিল ‘আমি ঈশ্বর আমি শয়তান’। প্রথম লেখায় স্বাভাবিকভাবেই অপরিপক্কতার ছাপ রয়েছে। কিন্তু তাঁর জীবনদর্শনের ছায়াপাত ঘটেছে প্রথম কবিতায়ই। রুদ্র এটিকে তার কোনো বইয়ে স্থান না দিলেও প্রথম প্রকাশিত রচনা হিসেবে এর মূল্য রয়েছে–
আমি ঈশ্বর আমি শয়তান
আমায় যদি তুমি বলো ঈশ্বর,
আমি বলব, হ্যাঁ আমি তাই।
আমায় যদি বলো পাপী শয়তান,
আমি বলব, হ্যাঁ আমি তাই-ই।
–কারণ আমার মাঝে যাদের অস্তিত্ব
তার একজন ঈশ্বর; অপরজন শয়তান।
তাই যখন শয়তানের ছবিটি ভাসে।
আমার মানব অবয়বে–তখন আমি পাপী।
আর যখন সত্যের পূর্ণতায় আমি–
মানবের কল্যাণে আমার কর্ম
ঠিক তখনই আমি ঈশ্বর; কারণ
সত্য, পুণ্য আর মানবতাই ঈশ্বর।
এরপর রুদ্রের ‘দুর্বিনীত’ নামের একটি কবিতা প্রকাশিত হয় ‘দুর্বিনীত’ নামের একটি সংকলনে। ১৯৭৩ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এ-সংকলনে কবির নাম ছাপা হয় ‘মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’। এর পরে থেকে কবি তার নামের আগে ‘রুদ্র’ শব্দটি যোগ করেন। স্কুলের মাধ্যমিক পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনেও এ-নামটি ব্যবহৃত হয়। এ-নাম সম্পর্কে কবি কামাল চৌধুরী জানিয়েছেন–
এই নামে পরিচিত হতে সে ভালবাসতো। আমরা মাঝেমধ্যে মজা করে শহিদুল্লাহ,বলে ডাকলে সে মনোক্ষুণ্ণ হতো। বস্তুত তখন থেকেই এই নামটি তার জীবনযাপনের সাথে যথার্থই খাপ খেয়ে গিয়েছিলো। এই নাম নিয়েও তাকে কম সংগ্রাম করতে হয় নি। কাব্যভুবনেও অনেকের অপছন্দ ছিলো এই ‘রুদ্র’-সংযোগ। দৈনিক কিংবা সাপ্তাহিক পত্রিকার বেশ ক’জন সাহিত্য-সম্পাদক এই নামের জন্য প্রথমদিকে তার কবিতা ছাপেন নি। তারা নামটি বদলাতে বলেছিলেন। রুদ্র রাজি হয় নি। অবশ্য পরে রুদ্র নাম বহাল রেখেই সবাই তার কবিতা ছেপেছিলেন। কলেজে ভর্তি হওয়ার আগেই রুদ্রের দুতিনটি কবিতা দৈনিক আজাদে ছাপা হয়েছিলো।(১৯)
সুলতানের অমর চিত্রকর্ম ‘চরদখল’। বিশাল ক্যানভাসের এই ছবিটি আমাদের আবহমানের জীবনকে কবিতার সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল।
রুদ্রের জীবন ও আকাক্ষার অতিঘনিষ্ঠ চেতনার ফসল ‘রাখাল’ খুব বেশিদিন অব্যাহত থাকে নি। কিন্তু আমার স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, রাখালের কয়েকমাসের কর্মকাণ্ড আর একটি অনুষ্ঠান, আমরা যারা সদ্য সাহিত্য-পিপাসু ছিলাম, আমাদের সতর্ক করেছে। আমরা যেন কোনোক্রমেই তথাকথিত নান্দনিক বোধের চর্চায় ডুবে সাহিত্যে মানুষের জীবনকে অঘনিষ্ঠ করে না-রাখি-রাখাল আমাদের সে-শিক্ষা দিয়েছিল। লিখবার জন্য দেখবার অনেক কিছু আছে, কবিতা শুধু রাতের প্রেরণা নয়, দিনের প্রকাশ্য আলোয় আমার দেশকে ভালোবাসার মাধ্যম, সে অনুপ্রেরণা আমাদের দিয়েছে রাখাল আর রুদ্র।(২০)
এ-সময় রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ, আলী রীয়াজ, জাফর ওয়াজেদ, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, কামাল চৌধুরী এবং বদরুল হুদা সেলিম মিলে ‘নক্ষত্রবীথি’ নামে একটি কবিতাপত্র প্রকাশ করেন। কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়ে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। এর কোনো কপি উদ্ধার করা যায় নি।
১৯৭৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রছাত্রী সংসদের নির্বাচনে রুদ্র বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের মনোনয়নে সাহিত্য-সম্পাদক পদপ্রার্থী। একই পদের জন্যে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হন আলী রীয়াজ এবং কামাল চৌধুরী। বিজয়ী হন আলী রীয়াজ। তবু তিনবন্ধুর সম্পর্ক অটুট ছিল। এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও যেন তাদের সাহিত্যচর্চারই অংশ।
১৯৮৯ সালে রুদ্রের কবিতার প্রথম বই ‘উপদ্রুত উপকূল’ প্রকাশিত হয় বুক সোসাইটি থেকে। এ-বইটি সম্পর্কে কামাল চৌধুরী লিখেছেন–
প্রকাশক ছিলেন কবি আহমদ ছফা। প্রথম গ্রন্থেই রুদ্র সচেতন পাঠকের দৃষ্টি কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছিলো। এই গ্রন্থভুক্ত কবিতাগুলোর মধ্যে সবচে’ বেশি জনপ্রিয় হয়েছিলো ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’ কবিতাটি। এটি সে ‘সমকাল পত্রিকার জন্য অনিরুদ্ধ হয়ে লিখেছিলো। এই কবিতার কয়েকটি পংক্তি–’জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন’ কিংবা ‘ধর্ষিতা বোনের শাড়ি ওই আমার রক্তাক্ত জাতির পতাকা’ প্রবল আলোড়ন তুলেছিলো পাঠকসমাজে। প্রথম গ্রন্থেই রুদ্র নিজেকে আখ্যায়িত করেছিলো ‘শব্দশ্রমিক’ হিসাবে। বলেছিলো ‘আমি কবি নই–শব্দশ্রমিক/শব্দের লাল হাতুড়ি পেটাই ভুল বোধে ভুল চেতনায়।’(২১)
এ-বইটির জন্যে রুদ্র ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতি সংসদ প্রবর্তিত মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন।
১৯৮০ সালে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় ‘দ্রাবিড়’ নামের একটি প্রকাশনা সংস্থা। রুদ্র দ্রাবিড়ের সক্রিয় কর্মী হয়ে পড়েন। এসময় কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার বাসায় রুদ্র থাকতেন। ১৯৮১ সালে ‘দ্রাবিড়’ থেকে প্রকাশিত হয় রুদ্রের কবিতার দ্বিতীয় বই ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম’। এই বইটির জন্যেও রুদ্র মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার দ্বিতীয়বার লাভ করেন। এসময় মুহম্মদ নূরুল হুদার তত্ত্বাবধানে এবং রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর তৎপরতায় দ্রাবিড় থেকে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। কামাল চৌধুরীর ‘মিছিলের সমান বয়সী’ (কবিতা), ইসহাক খানের ‘নগ্ন নাটমন্দির’ (ছোটগল্প), খালিকজ্জামান ইলিয়াসের ‘রাসোমন’ (অনুবাদ), বশীর আল হেলালের ‘ক্ষুধার দেশের রাজা’ (ছোটগল্প) প্রভৃতি ছিলে দ্রাবিড়ের উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা।
রুদ্রের দ্বিতীয় গ্রন্থ বেশ আলোচিত ও জনপ্রিয় হয়। এ-গ্রন্থের প্রথম সমালোচনা প্রকাশিত হয় সাপ্তাহিত ‘সন্ধানী’তে। সমালোচক হাসান ফেরদৌস লেখেন–
তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রামে’ রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ চোখ ফিরিয়েছেন বিশাল বাংলার দিকে, যার প্রতিটি পরদায় ইতিহাস হয়ে মিশে আছে তার অস্তিত্ব ও ঠিকানা। যে অস্থির ও প্রলোভিত সময়ে রুদ্রের বাস, তার দিকে অনায়াস সাহসে তিনি তাকাতে পারেন। ‘উপদ্রুত-উপকূলে’ই (কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ) সে-সংবাদ আমরা জেনেছিলাম। অস্তিত্বের ঠিকুজি এষণায় ব্যস্ত তার পরিশ্রমী চোখ এই নতুন কাব্যগ্রন্থে আরো তীর্যক হয়ে উঠেছে, আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে সময়ের নাড়ির সাথে। সম্ভবত এই ঘনিষ্ঠ সহবাসের প্রেরণাতেই তার কণ্ঠস্বরও হয়েছে আলোকমুখী–‘বনভূমি, বৃক্ষময় হাত তবে প্রসারিত করো/ মেঘের জরায়ু ছিঁড়ে নামুক জলের শিশু/জন্মের চিৎকারে ভরে দিক অজন্মাভুবন।’ অপহৃত স্বর্ণগ্রাম, যার মড়া খুঁটির দাগ এখনো মাটিতে লেগে, বাউলী ব্যাকুল জিজ্ঞাসায় তাকেই অন্বেষণ করে ফেরেন তিনি।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর স্বভাবগত আড়ম্বরহীনতা তার কবিতাতেও নিরাভরণ উচ্ছলতা নিয়ে এসেছে। সম্ভবত সে–কারণেও এই গ্রন্থের এককুড়ি সাতটি কবিতাকে দ্রুত নিশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। শব্দের বাহাদুরী ব্যবহার, অক্ষরবৃত্তের ওস্তাদি কারুকাজ, লোকজ চিত্রের প্রয়োগ–রুদ্রের কবিতার এসব পরিচিত উপসর্গ এ গ্রন্থটিকেও অলঙ্কৃত করেছে।(২২)
এর দিনকয়েক পরে ‘সিম্ফনী’ পত্রিকায় সুবিনয় রেজা ছদ্মনামে প্রাবন্ধিক রেজা সেলিম এই বইটির আলোচনায় বলেন,
তরুণ কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র দ্বিতীয় কবিতাগ্রন্থ ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম।’ ‘স্বর্নগ্রাম হচ্ছে আমাদের ইতিহাস, জাতিসত্তা আর প্রেরনাময় ঐতিহ্যের প্রতীক। স্বর্নগ্রাম বাঙালির আত্মার নাম, রক্তের নাম’–রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র বর্তমান গ্রন্থের কাব্যাদর্শ এই উদ্ধৃতিতে স্পষ্ট (উদ্ধৃতি : ভূমিকা)।
বাঙলা কবিতা’র সাম্প্রতিক ধারায়, বাঙালি’র ‘প্রেরনাময় ঐতিহ্যে শিকড় বিস্তার’ এর লক্ষ্য, এই প্রথম স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় প্রকাশ পেলো, আত্মানুসন্ধান ও স্বরূপ অন্বেষণের অন্ততাগিদ ও মর্মপীড়াসমূহ রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ উপস্থাপিত করেছেন নতুন আঙ্গিক ও পরীক্ষামূলক ভাষারীতির মাধ্যমে। বেশ কিছু অচলিত ও লৌকিক শব্দ তার কবিতার বিষয় অনুসারে নতুন করে প্রাণ পেয়েছে, এবং প্রায় প্রতিটি কবিতার ক্ষেত্রেই, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ এক নতুন কাব্য- জগত সৃষ্টির প্রয়াস পেয়েছেন, যাতে আবহমান বাঙলা ও বাঙালি জীবন ঘরোয়া পরিধি থেকে উন্মোচিত হয়েছে সাহিত্যের বিশাল প্রান্তরে। অবশ্য রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আর কোনো উপায় ছিলো না। এই স্থির আত্মানুসন্ধানী অস্তিত্বের, নিজের প্রেরণাময় ইতিহাস, অর্থাৎ ‘স্বর্নগ্রাম’-এর মানচিত্র অন্বেষণ ব্যতীত ভুল আদর্শের নির্মাণ কি সম্ভব?(২৩)
কাছাকাছি সময়ে সাপ্তাহিক বিচিত্রা’-য় নূরউল করিম খসরু লেখেন–
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লার দ্বিতীয় কবিতার বই ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রামে’ ২৯টি কবিতা সংকলিত হয়েছে। ভূমিকায় কবি বলেছেন : ‘বৃক্ষের বিকাশের জন্যে যেমন মাটিতে শিকড় বিস্তার করা প্রয়োজন। একটি জাতির বিকাশের জন্যেও তেমনি প্রয়োজন তার মাটিতে আর ইতিহাসে, সাহিত্যে, শিল্পে, দর্শনে, বিজ্ঞানে তার প্রেরনাময় ঐতিহ্যে শিকড় বিস্তার করা। বইয়ের কবিতাগুলিতে সেই ঐতিহ্য অন্বেষণের আকাক্ষা লক্ষ করা যায়। যেমন : মুহূর্তের চূর্ন পরমানু ডেকে বলে : ওই দ্যাখরে অবোধ/ওই তোর হারানো অতীত, ওই তোর পরানের ভূমি।/ কিছু তুই চাষাবাদ শেখ, শিখে রাখ জমিনের ভাষা/গভিনী রমনী তোর এই ক্ষেতে বুনেছিল ফসলের বীজ/এই ক্ষেতে রমনীর তামাটে শরীর আর সুকল্যান বাহু/একদিন শস্যের সুগন্ধ মেখে ফিরে গেছে। অঙ্গনের নীড়ে। (নিখিলের অনন্ত অঙ্গন] সেজন্যই, হয়তো পরবর্তীতে তার নিভৃত মনোলোকের একান্ত ইচ্ছাটি বাণীবন্ধ হয়েছে এরকম : সত্যের লাঙল চিরে এই পোড়া বুকের জমিন/আমিও ফসল হবো, আমি শস্যভরা ক্ষেত/ সোনালি আঘনে তুমি আঁটি আঁটি ধান তুলে নিও।/[ঐ]।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর কবিতায় আবেগ, প্রেম, নস্টালজিয়া ও ঐতিহ্য অহংকার উপজীব্য হলেও বারবার উঁকি দেয় মানুষ, সেই মানুষ পোড়-খাওয়া, তামাটে এবং গ্রামীণ। যাদের সারা জনম কাটে শস্য ফলনে, অথচ : তেজি কজ্জায় জমি চষে আমি ঘরে তুলে নেই ব্যথা,/ঘরে তুলে নেই হাহাকারে ভরা অনাহারী দিনমান। [গহিন গাঙের জল] মূলত সামাজিক দায়িত্ব সম্পাদনের চেতনা তার কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে উজ্জ্বল। তাছাড়া ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টির জীবন কবিতায় চিত্রিত হয়েছে বেশি। তার জীবন-উপলরির সহজিয়া প্রকাশভঙ্গিটিও উল্লেখযোগ্যতার দাবি রাখে : ১। উদোম জীবন উল্টে রয়েছে মাঠে কাছিমের মতো [হাড়েরও ঘরখানি] ২। অরন্য জীবন নেই আজ আছে জীবনে অরন্য/ পশুরা গিয়েছে বনে সে ভূমিকা নিয়েছে মানুষ। [খামার] উপলব্ধির এই তীক্ষ্ণ উৎকর্ষ তাঁর কবিতার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রেম এবং রোমান্টিক উচ্চারণেও তিনি সংহত আবেগ ও নিষ্ঠার পরিচয় রেখেছেন। যেমন: শিথানে আমার ধূপে চন্দনে পাপ/রক্তে আমার কাল সময়ের ক্লেদ/নষ্ট চাঁদের পুন্নিমাহীন নিষ্ফলা প্রান্তর/নষ্ট জীবন তোমাকে দেব না প্রিয় পরাজিত প্রেম]।
অবশ্য রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কবিতার বিষয়বস্তু নির্বাচন ও বক্তব্য উপস্থাপনে যতটুকু একাগ্র ও সংযমী, কবিতার নির্মাণশৈলী ও শব্দ-ব্যবহারে ততটুকু সচেতন বলে মনে হয় না। বিষয় ও মেজাজের পুনরাবৃত্তিও প্রায় কবিতায় লক্ষ করা যায়। ‘নগরীর রুখো গ্রাস থেকে সেই গ্রামখানি মোর/দুধভাত, মিঠে, রূপশালি ধান সেই গ্রামখানি/ কেড়ে নিতে চাই/ কেড়ে নিতে চাই/ কেড়ে নিতে চাই কিঁচের গেলাশে উপচানো মদ]। আসলে, কবি-চৈতন্যের এই সবুজ শুভ্র আকাঙ্ক্ষাটি এই গ্রন্থে বিভিন্নভাবে বিধৃত হয়েছে। তবে ভাষা ও কণ্ঠস্বরের পৃথকতা অর্জনের জন্যে তার আরো সচেষ্ট হওয়া যেন প্রয়োজন।
অন্যদিকে, তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই একটি বিতর্কের সূত্রপাত করেছেন বইটিতে। তার নিজের ভাষায় : ‘দুটি ন-এর পরিবর্তে এই গ্রন্থে শুধু দন্ত্য ন ব্যবহার করেছি। ভাষাবিজ্ঞানের ওপর তার এরকম স্বপ্রণোদিত স্বেচ্ছাচার কতটুকু বিজ্ঞানসম্মত ও গ্রহণযোগ্য সে-সম্পর্কে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ হয়েছে। তবু রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম’ আমাদের কবিতায় একটি বিশিষ্ট সংযোজন।(২৪)
এই দ্বিতীয় গ্রন্থে রুদ্র যেমন সমালোচকদের দৃষ্টি কাড়েন, তেমনি তার পাঠকপ্রিয়তাও হয়ে পড়ে ঈর্ষণীয়। তিন বছর পরে প্রকাশিত হয় সাড়াজাগানো গ্রন্থ ‘মানুষের মানচিত্র’ (১৯৮৪)। এর মধ্যে ১৯৮২ সালের মধ্য-ফেব্রুয়ারিতে স্বৈরাচারী-বিরোধী আন্দোলনে দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা একজোট হয়ে রাজপথে নামে, তখন ৪২টি সাংস্কৃতিক সংগঠন মিলে গঠিত হয় সংগ্রামী সাংস্কৃতিক জোট’। রুদ্র ছিলেন এই জোটের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। এই জোট পরবর্তীকালে সুসংহতভাবে ‘সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট’ নামে অগ্রসর হয় এবং এখনো এর তৎপরতা অব্যাহত।
১৯৮৬ সালে তার চতুর্থ কাব্য ‘ছোবল’ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে স্বৈরাচারী সরকারের। উদ্যোগে ‘এশীয় কবিতা উৎসবের আয়োজন করা হয়, যেখানে প্রতিক্রিয়াশীল এবং সুবিধাবাদী কবিরাই ছিলেন অগ্রণী। এর প্রতিবাদে উদযাপিত হয় ‘জাতীয় কবিতা উৎসব’। প্রথম জাতীয় কবিতা উৎসব আয়োজনে রুদ্র প্রধান ভূমিকা পালন করেন এবং উৎসব কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক নির্বাচিত হন। দ্বিতীয় জাতীয় কবিতা উৎসবেও রুদ্রের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। কিন্তু তৃতীয় জাতীয় কবিতা উৎসবে রুদ্রের সঙ্গে কয়েকজন কবির মতানৈক্য হয়। মঞ্চে কবিতাপড়ার সময় রুদ্র বলেন, ‘আমার কবিতা স্বৈরাচারী সরকার এবং কবিতা পরিষদের ভেতরে সকল প্রকার স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে। তার এই সৎ ও সাহসী বক্তব্য। অনেকেই মেনে নিতে পারেন নি। তাকে শারীরিকভাবে আক্রমণের হুমকি দেয়া হয়। রুদ্র প্রচণ্ড অভিমানে নিজের গড়া সংগঠন থেকে নীরবে সরে পড়েন।
১৯৮৮ সালে নিজ গ্রামে গড়ে তোলেন ‘অন্তর বাজাও’ নামের একটি সংস্কৃতি সংগঠন বিশিষ্ট শিল্পী গোলাম মহম্মদের তত্ত্বাবধানে এখনো রুদ্রের রচিত গানগুলো তারা পরিবেশন করে চলছে। ইতোমধ্যে বেরিয়ে গেছে তার পঞ্চম কাব্য ‘গল্প’ (১৯৮৭) এবং ষষ্ঠ কাব্য ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’ (১৯৮৮)। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত হয় তার সপ্তম এবং জীবদ্দশায় প্রকাশিত শেষকাব্য মৌলিক মুখোশ’। এটিও প্রশংসাধন্য হয় সর্বমহলের। বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক সমালোচক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লেখেন—
মানুষ ও মনুষ্যত্বের কাছে রুদ্র ছিল অঙ্গীকারবদ্ধ। তার কবিতার বই পড়লে মনে হয় সমাজকে আমূল বদলে ফেলতে, মানুষকে তার স্বপ্নের সমান করে গড়ে তুলতে, কবিতাকে জীবনের প্রধান চালিকাশক্তিতে পরিণত করতে তার ছিল সারাজীবনের অঙ্গীকার।
‘মৌলিক মুখোশ’-এ এসে রুদ্র অনেক সংহত হয়েছে। তার প্রকাশ সুষম এবং সংযত হয়েছে বহুগুণ। আগে যেখানে অস্থিরতা এবং উচ্ছ্বাস তাকে বহু কথা বলিয়ে নিয়েছে, যার অনেকটা চলে গেছে অতিকথনের পর্যায়ে। ‘দিয়েছিলে সকল আকাশ’-এর নমিত সুর, আত্মমগ্ন কবিতাগুলো এক ভিন্ন রুদ্রকে প্রতিষ্ঠা করেছিল। যে রুদ্র দিনের আলোর নিচে অন্ধকার ছায়াকেও দেখতে জানে, যার বিপ্লবের বারুদ ও ধোয়া আড়াল করে না ভালোবাসার শব্দকে। রুদ্র তার নিজস্ব একটি ভাষা নির্মাণ করছিল ক্রমাগত, যে ভাষা, আমার বিশ্বাস, অনেক বেশি আত্মকেন্দ্রিক–যদিও বরাবরের উচ্চকিত প্রকাশ তাতে পর্যাপ্তভাবেই ঘটেছে।
রুদ্রের একটি সমস্যা ছিল, আমার কাছে মনে হয়েছে সে খুব উচ্ছ্বসিত বোধের প্রকাশ ঘটাত কবিতায় এবং ভাষাকে সেইভাবে গড়িয়ে যেতে দিয়েছে। এজন্য অনেক কবিতায় চিন্তা, চিত্রকল্প এবং ছন্দের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। মাঝেমধ্যে সে বুঝতে পারতো এই পৌনঃপুনিকতা, এই formalization-এর বিষয়, তাই অনেক কবিতায় বেরিয়েও এসেছে, ‘মানুষের মানচিত্র’ তেমন একটি নতুন প্রয়াস; অনেক চমৎকার বিষয় জড় হয়েছে এই বইটিতে।
বাংলাদেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে তার অনেক চিন্তা ছিল, ক্রোধ এবং হতাশা ছিল, কিন্তু এই প্রত্যাশাও তার কবিতায় ছিল যে সময়ের সঙ্গে সমান্তরাল যদি মানুষের পদযাত্রা এগিয়ে যায়, সে মানুষ ইতিহাসের কাছে পরাস্ত হয় না। তার কবিতায় ইতিহাস কোনো মিথ্যা পাঠ দেয় না, ভবিষ্যৎ সৃষ্টি করে না কোনো অলীক মোহ–অত্যন্ত নির্মোহভাবে বর্তমানের সকল ভূমিকে পর্যবেক্ষণ করেছে সে, তার ভবিষ্যতে আশাবাদ বাস্তবের ঐ ভূমিতে শিকড় মেলেছে। রুদ্রের কবিতার প্রধান কালটি বর্তমান, প্রধান শক্তিটি সংগ্রামের, সংঘাতের; প্রধান পুলকটি ঐ সংগ্রাম ও সংঘাতের পর বিরল কোনো অর্জনের।
তার কবিতা একান্তই নিজের সঙ্গে ব্যক্তিগত কোনো বোঝাঁপড়া, বিবাদ, কলহ অথবা অভিমান। ‘মানুষের মানচিত্র’-র ভেতরের সাদা পাতায় সে আমাকে জানাচ্ছে, এই ব্রহ্মান্ডের ভেতর একটি বিন্দুর মতো আমি একা শুধু একা?’ এটি তার একটি কবিতা থেকে উদ্ধৃতি। সকল কবিতার পরোক্ষে ঐ একাকী নির্জন কবির আনাগোনা। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, এই একাকীত্ব সত্ত্বেও রুদ্রের কবিতার ক্যানভাস যতটা আবীল, ততটা কোলাহলে পূর্ণ। তার কবিতায় শুধুই মানুষ, শুধুই পরিকীর্ণ নিসর্গ, শুধু উচ্ছ্বাস, দ্রোহ, কলরোল।(২৫)
এছাড়া রুদ্র ‘বিষ বিরিক্ষের বীজ’ নামে একটি নাট্যকাব্য লিখেছিলেন, যা তার মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়। ‘খুঁটিনাটি খুনসুটি’ শিরোনামে ১৭টি কবিতা লিখেছেন। মোট ৩২টি লিখে বই করার পরিকল্পনা ছিল।
শেষদিকে রুদ্র স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেছিলেন। জড়িয়ে পড়েছিলেন সঙ্গীত পরিষদের কর্মকাণ্ডে। বাংলাদেশ সঙ্গীত পরিষদের কার্যনির্বাহী পরিষদ ১৯৯১-’৯৩-এর প্রকাশনা সচিব নির্বাচিত হন। এই পরিষদের সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক সমর দাস এবং মহাসচিব ছিলেন মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। পরিষদের পক্ষে থেকে মানুষের জন্যে মানুষ’ শীর্ষক একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয় রুদ্রের সম্পাদনায়। রুদ্র তখন মনে-প্রাণে গান নিয়ে ব্যস্ত। প্রচুর গান লিখেছেন, সুর করেছেন। ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠীর কাসেটসহ বিভিন্ন কাসেটে তাঁর রচিত গান অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। একদিন কবি সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলালকে বলেছিলেন, ‘দুলাল, কবিরা গান লিখলে গানের গুণগত মান এবং ধারার পরিবর্তন হবে।’(২৬) রেডিও এবং টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত গীতিকার হওয়ার চেষ্টাও তিনি করেছিলেন। কবি নাসির আহমেদ তার স্মৃতিচারণায় এ-সম্পর্কে লিখেছেন–
…রুদ্র বললো যে, সে রেডিও-টিভির অন্তর্ভুক্ত হতে চায়; পাণ্ডুলিপি তৈরি আছে, আমি যেন পাণ্ডুলিপিটা দেখে সংশ্লিষ্ট জনৈক কর্মকর্তার মাধ্যমে তালিকাভুক্তিটা দ্রুত করিয়ে দিই। সে সময় এরশাদ-বিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। রুদ্রও হঠাৎ ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কথামতো রুদ্র তার সেই পাণ্ডুপিলি আমাকে আর পৌঁছাতে পারে নি।(২৭)
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ বেশকিছু ছোটগল্পও লিখেছিলেন। এ-যাবৎ ছয়টি গল্পের সন্ধান পাওয়া গেছে। রুদ্র তার সাহিত্য-জীবনে প্রায় প্রতিটি জেলায় গেছেন কবিতা পড়তে। কখনো কবিতা পরিষদের কাজে, কখনো স্বতন্ত্র সাহিত্য-অনুষ্ঠানে। একবার গিয়েছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। প্রাবন্ধিক শান্তনু কায়সার জানিয়েছেন–
আশির দশকের শুরুতে, রুদ্র তখন ছাত্র, হুদা ও রুদ্র কবিতা পড়তে এলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া। আমাদের সংস্থা ‘ঋত্বিক’ তখন ইবনে সিনা, কার্ল মার্কস এবং আইনস্টাইনের উপর অনুষ্ঠান করে সাড়া জাগিয়েছে। স্থানীয় তরুণেরা দুজনের কবিতাই পড়েছে। ওদের মনে নানা জিজ্ঞাসা। স্বভাবতই রুদ্রকেও ওরা বিভিন্ন প্রশ্ন। করলো। রুদ্র কিছুটা বিব্রত বোধ করেছিলেন। কিন্তু আমরা উৎসাহ দিলাম। উদাহরণ সহযোগে সঙ্গীতের আলোচনা বলতে যা বোঝায়, সেদিন কবিতা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে,রুদ্র তা-ই করেছিলেন। যে সমাজ-বাস্তবতা সাধারণভাবে অনুবাদিত হয় তার পঙক্তিমালায়, সেদিনও তাই ঘটায়। তরুণদের ওর কবিতা পড়া টেনেছিল খুব।(২৮)
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ জীবদ্দশায়ই তাঁর কাব্যকীর্তির স্বীকৃতি পেয়েছেন। তার সময়ের আর কোনো কবি এতটা আলোচিত এবং নন্দিত হন নি।