০২. পরিবার-পরিচিতি
সাহেবের মেঠের শেখ পরিবারের খ্যাতি রয়েছে এলাকাজুড়ে। বিশেষত রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তি রয়েছেন। শেখ খান। জাহান আলীর মুরিদ হিসেবে রুদ্রের দাদুর দাদু ধোনাই খা এবং তাঁর পুত্র শেখ মঙ্গল হাজী এলাকায় বিখ্যাত। তাঁর পুত্র শেখ মুহম্মদ ইউসুফকে অঢেল সম্পত্তির মালিক হিসেবে এলাকার সকলে একনামে চেনে। তাঁর পুত্র অর্থাৎ রুদ্রের পিতা শেখ ওয়ালীউল্লাহ একজন চিকিৎসক হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। শেখ ওয়ালীউল্লাহর পিতার দুই বিয়ে। তিনি প্রথম পক্ষের সন্তান। প্রথম পক্ষে তিন ভাই ও এক বোন। রুদ্রের বড়কাকার নাম শেখ নূর মুহম্মদ। প্রথম পক্ষের মেজকাকা (ক্রমানুসারে পঞ্চম) শেখ আবদুল জলিল রুদ্রের কাকাদের মধ্যে একমাত্র জীবিত ব্যক্তি। রুদ্রের বাবা ছিলেন ভাইবোনদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। রুদ্রের একমাত্র ফুপুর নাম জোবেদা খাতুন। পরবর্তীকালে এই ফুপুর সঙ্গে রুদ্রের বড়মামা শেখ আবু বকর সিদ্দিকের বিয়ে হয়। সে হিসেবে রুদ্রের ফুপুই তার বড়মামি। শেষ, পক্ষের তিন কাকা হচ্ছেন শেখ আহম্মদ আলী, শেখ আবুল হাসেম এবং শেখ হাবিবুর রহমান। রুদ্রের সেজকাকার মেজছেলে সাব্বির হাসান একজন চিকিৎসক। এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে এখন আমেরিকা প্রবাসী।
রুদ্রের নানা শেখ মহম্মদ ইসমাঈল ছিলেন মংলা এলাকার অন্যতম বিখ্যাত ব্যক্তি। তিনি একসময় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং পরবর্তীকালে গভর্নর ছিলেন। শেষদিকে মিঠেখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বয়সের ভারে এই দায়িত্ব পালন করতে অসুবিধা হলে তার বড়ছেলে অর্থাৎ রুদ্রের বড়মামা আলহাজ্ব শেখ আবু বকর সিদ্দিক ঐ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচনে প্রার্থী হন এবং জয়লাভ করেন। তিনি একাধিকবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার গৌরব লাভ করেন। এলাকায় শিক্ষাবিস্তারেও তাঁর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। রামপাল ও মংলা থানার বেশ কয়েকটি স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠায় তার ব্যাপক অবদান এলাকাবাসী শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। এই বড়মামাই রুদ্রের একমাত্র ফুপা। শেখ আবু বকর সিদ্দিক ছাড়াও রুদ্রের নানার চারটি ছেলে এবং তিনটি মেয়ে। অর্থাৎ রুদ্রের পাঁচ মামা এবং তিন খালা। দুই মামা এবং দুই খালা শৈশবেই মৃত্যুবরণ করেন। রুদ্রের মেজমামা শেখ আবু তাহের ছিলেন নাট্যামোদী। জানা যায়, তিনি কলকাতার একটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছিলেন। চলচ্চিত্রের নামটি অবশ্য জানা যায় নি। এই মামার ছেলে আবু জগলুল মঞ্জু রুদ্র-প্রতিষ্ঠিত ‘অন্তর বাজাও’ সঙ্গীত সংগঠনের অন্যতম শিল্পী। রুদ্রের সেজমামা আলহাজ্ব শেখ তৈয়বুর রহমান ১৯৫৪ সালে রামপাল-দাকোপ-বটিয়াঘাটা এলাকায় যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে এমএলএ নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেজমামার ছেলে মাহমুদ হাসান (মনি) মিঠেখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এঁর সঙ্গে রুদ্রের বোন বীথিকা শারমিনের বিয়ে হয়। রুদ্রের ছোটমামার নাম শেখ আজিজুর রহমান। রুদ্রের মায়ের দাদার মামা বাসের শাহ-ও ছিলেন এলাকার নামজাদা ‘পির’। রুদ্রের বাবা ডা. শেখ ওয়ালীউল্লাহ নিজের শ্বশুরের নামানুসারে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘ইসমাঈল মেমোরিয়াল হাইস্কুল’। আমৃত্যু তিনি ঐ স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।
রুদ্ররা দশ ভাইবোন। রুদ্রই সকলের বড়। দ্বিতীয় বীথিকা শারমিন উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ালেখা করে এখন গৃহিণী। বীথিকা শারমিন নামটি রুদ্রের দেয়া। তাঁর অন্য নাম শরিফুন হাসান। তৃতীয় ডাক্তার মুহম্মদ সাইফুল্লাহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে এখন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হিসেবে কর্মরত। তার স্ত্রী ডাক্তার নীলুফার ইয়াসমীন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে চিকিৎসাকেই পেশা হিসেবে নিয়েছেন। চতুর্থ সোফিয়া। শারমিন (সাফি) উচ্চমাধ্যমিক পাস করে গৃহিণী। তার স্বামী গাজী আহসান হাবীব বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত। পঞ্চম মেরী শারমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় এমএ পাশ করে গৃহিণী। তার স্বামী শরিফুল ইসলাম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন মেজর। যষ্ঠ আবীর আবদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে এমকম পাস করে ‘দৃক আলোকচিত্র গ্যালারি’তে কর্মরত। সপ্তম সুবীর ওবায়েদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেরিন সায়েন্সে এমএসসি পাস করেছেন। তাঁর স্ত্রী ফওজিয়া খানমও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসসি। অষ্টম ইরা শারমিন বিএ পাস করেছেন। নবম সুমেল সারাফাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাইন্যান্স বিভাগে বিকম (অনার্স) তৃতীয় বর্ষের এবং দশম হিমেল বরকত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে বিএ (অনার্স) প্রথম বর্ষের ছাত্র। ভাইবোনদের মধ্যে আবীর আবদুল্লাহ এবং হিমেল বরকত লেখালেখি করেন। আবীর আবদুল্লাহ ভালো ছড়াকার এবং দক্ষ আলোকচিত্রশিল্পী হিসেবে পরিচিত। হিমেল বরকতের লেখা বেশ কিছু গান ‘অন্তর বাজাও’ সংগঠনের শিল্পীরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশন করে।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর পিতৃদত্ত নাম হচ্ছে মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ছোটবেলায় এই নামেই তিনি পরিচিত ছিলেন। কিন্তু লেখালেখি করতে এসে এই নামটি তার পছন্দ হয় নি। পিতৃদত্ত নামটি তিনি বদলে ফেলেন। নামের শুরুতে ‘রুদ্র’ শব্দটি যোগ করা ছাড়াও ‘মোহাম্মদ’কে ‘মুহম্মদ’ এবং ‘শহীদুল্লাহ’কে ‘শহিদুল্লাহ’ করেছেন। লেখক-নাম হিসেবেই তিনি এই নাম গ্রহণ করেছেন, তা নয়। প্রকৃত নাম হিসেবে পরীক্ষার সনদপত্রেও এই নাম ব্যবহার করেছেন।