বাবাও সন্ন্যাসী, ছেলেও সন্ন্যাসী : একনজরে বিশ্বনাথ দত্ত
১৮৩৫ বিশ্বনাথ দত্তের জন্ম। পিতা দুর্গাপ্রসাদ, মাতা শ্যামাসুন্দরী (ঘোষ)।
১৮৩৬ পিতা দুর্গাপ্রসাদের ২২ বছর বয়সে গৃহত্যাগ ও সন্ন্যাস গ্রহণ।
? শিক্ষা, গৌরমোহন আঢ্যের বিদ্যালয়, পরবর্তীকালে যার নাম ওরিয়েন্টাল সেমিনারি।
? কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৮৪১ ভাবী-পত্নী ভূবনেশ্বরী বসুর জন্ম। (পিতা নন্দলাল বসু, মাতা রঘুমণি।)।
১৮৫১ বিবাহ ভুবনেশ্বরী (বসু)-স্ত্রীর বয়স ১০।
? প্রথম পুত্রের জন্ম (শৈশবে মৃত)
? প্রথম কন্যার জন্ম (শৈশবে মৃত)
১৮৫৬ কন্যা হারামণির জন্ম (এঁর মৃত্যু ২২ বছরে, মতান্তরে ২৬ বছরে)।
১৮৫৯ অ্যাটর্নি চার্লস এফ পিটারের অধীনে আর্টিকেল্ড ক্লার্ক।
১৮৬০ চার্লস পিটারের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ।
১৮৬১ অ্যাটর্নি হেনরি জর্জ টেম্পলের অধীনে আর্টিকেল্ড ক্লার্কশিপ। এই অফিসে তার সহকর্মী দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের পিতা ভুবনমোহন দাশ।
১৮৬৩ পুত্র নরেন্দ্রনাথের (ভবিষ্যৎ স্বামী বিবেকানন্দ) জন্ম। (স্বামীজির মহাসমাধি ১৯০২)। ভুমিষ্ঠ হবার পরে দুর্গাপ্রসাদের ভগ্নী বলেন, “সেই চেহারা, সেই সবই, দুর্গাপ্রসাদ কি আবার ফিরে এল?” আনন্দিত বিশ্বনাথ নিজের পরিধেয় বস্ত্রটি পর্যন্ত দান করেন।
১৮৬৪ অ্যাটর্নি হেনরি জর্জ টেম্পল-এর সঙ্গে সম্পর্ক শেষ।
১৮৬৫ ব্যারিস্টার ডবলু সি বনার্জির পিতা গিরিশচন্দ্র বনার্জি ও দিগম্বর মিটারের কাছ থেকে চরিত্র সার্টিফিকেট।
১৮৬৬ অ্যাটর্নি ও প্রক্টর হিসেবে নথিভুক্ত হবার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে আবেদন ও অনুমতি লাভ।
১৮৬৭ কাকা কালীপ্রসাদের মৃত্যু। অন্য মতে কালীপ্রসাদের মৃত্যু ১৮৬৯, মৃত্যুশয্যায় শাস্ত্রপাঠ করেন তরুণ নরেন্দ্রনাথ। এঁর স্ত্রী বিশ্বেশ্বরী, পুত্র কেদারনাথ ও তারকনাথ। বিশ্বেশ্বরীর মৃত্যু ৯৭ বছর বয়সে ১৫ ডিসেম্বর ১৯১২।
১৮৬৮ অ্যাটর্নি আশুতোষ ধরের সঙ্গে পার্টনারশিপে ‘ধর অ্যান্ড দত্ত’ অ্যাটর্নি ব্যবসার শুরু।
১৮৬৯ পুত্র মহেন্দ্রনাথের জন্ম (এঁর মৃত্যু ১৯৫৬)।
১৮৭১ দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে কলকাতার বাইরে ভাগ্যসন্ধানে যাত্রা।
১৮৭২ ওকালতি লখনৌ (বার লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠায় উল্লেযোগ্য ভূমিকা)
১৮৭৬ ওকালতি লাহোর, সেখানে বঙ্গীয় সমাজে প্রথম ঘটে দুর্গাপূজা।
১৮৭৭ তখনকার সেন্ট্রাল প্রভিন্সেস পরে মধ্যপ্রদেশ রায়পুরে ভাগ্যসন্ধানে এলেন বিশ্বনাথ, ১৪ বছরের পুত্র নরেন্দ্রনাথ তখন থার্ড ক্লাশের ছাত্র।
ভূবনেশ্বরী, পুত্র নরেন্দ্রনাথ, মহেন্দ্রনাথ ও কন্যা যোগীন্দ্রবালার রায়পুরে যোগদান কয়েকমাস পরে। কলকাতা থেকে নাগপুর ৭১০ মাইল। নাগপুর থেকে গোরুর গাড়িতে রায়পুরপথে বিস্তীর্ণ জঙ্গল, সেখানে ডাকাত ও বাঘের উপদ্রব। এঁদের সহযাত্রী পরবর্তীকালে বিখ্যাত হরিনাথ দে’র পিতা রায়পুরের উকিল রায়বাহাদুর ভূতনাথ দে। তাঁর স্ত্রী এলোকেশী। একই বছরে ভূবনেশ্বরী দুই আত্মীয়াকে ৫০০ টাকা করে দিয়ে বিধবা বামাসুন্দরী ও বিন্দুবাসিনীর কাছ থেকে গৌরমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের ভিটেবাড়ির এক আনা ছ গণ্ডা দু’কড়া দু ক্রান্তি ভাগ কিনলেন।
পরবর্তীকালে অভিযোগ, ভিটেবাড়িতে বিধবা বামাসুন্দরী ও বিন্দুবাসিনীর শেয়ার ভূবনেশ্বরীর বেনামে কেনেন বিশ্বনাথের খুড়তুতো ভাই তারকনাথ।
১৮৭৯ সপরিবারে কলকাতার যৌথপরিবারে প্রত্যাবর্তন। নরেন্দ্রনাথ ঐ বছরেই প্রবেশিকা পরীক্ষা দিলেন এবং প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে বাবার কাছ থেকে রুপোর ঘড়ি পেলেন। পুত্র নরেন্দ্রনাথ প্রেসিডেন্সি কলেজে এফ এ ক্লাশে ভর্তি হলেন।
১৮৮০ ৪ঠা সেপ্টেম্বর কনিষ্ঠপুত্ৰ ভূপেন্দ্রনাথের জন্ম (মৃত্যু ২৫ ডিসেম্বর ১৯৬১)।
গৌরমোহন দত্তের দৌহিত্রী শচীমণি দাসীর যৌথ সম্পত্তি বিভাজনের জন্য হাইকোর্টে মামলা।
১৯৮১ স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে পুত্র নরেন্দ্রনাথ দ্বিতীয় বিভাগে এফ এ পাশ করলেন।
নভেম্বর : ভক্ত সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাড়িতে পুত্র নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম সাক্ষাৎ।
১৮৮২ ১৫ জানুয়ারি দক্ষিণেশ্বরে নরেন ও শ্রীরামকৃষ্ণের সাক্ষাৎ।
এপ্রিল : সুলোচনা উপন্যাসের প্রকাশ; লেখকের জায়গায় জ্ঞতিকাকা গোপালচন্দ্র দত্তের নাম।
৮ই অক্টোবর কন্যা হারামণির মৃত্যু ২৬ বছরে (মতান্তরে ২২ বছর)
১৮৮৩ বাস্তুভিটা ছেড়ে পৃথক অন্ন ও ৭ ভৈরব বিশ্বাস লেনে বাড়িভাড়া।
বি এ পাশ করার আগেই নরেনকে বি. এল পড়ার জন্য কলেজে ভর্তি ও চাঁদনি থেকে কোটপ্যান্টের অর্ডার। বন্ধু অ্যাটর্নি নিমাই বসুর অফিসে নরেন্দ্রনাথের শিক্ষানবিশি শুরু।
১৮৮৪ ৩০ জানুয়ারি নরেন্দ্রনাথের বি.এ পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হল। ২৩ ফেব্রুয়ারি সাতকড়ি মৈত্রের বরাহনগর বাসভবনে নরেন্দ্রনাথ গানবাজনার পরে সবে শয্যাগ্রহণ করেছেন, এমন সময় বন্ধু ‘হেমালী’ রাত্রি প্রায় দুইটার সময় খবর দিল, পিতা বিশ্বনাথ অকস্মাৎ ইহলোক ছেড়ে চলে গেছে। নরেন্দ্রনাথ যখন বাড়ি ফিরে এলেন তখন বিশ্বনাথের মরদেহ একটি ঘরে শায়িত। অন্য মতে, নরেন্দ্রনাথ সোজা নিমতলা ঘাটে চলে আসেন। এইসময় মহেন্দ্রনাথের বয়স পনেরো। কর্পোরেশন ডেথ রেজিস্টারে নরেন্দ্রনাথের সই রয়েছে। মৃত্যুর কারণ : ডায়াবিটিস।
১৮৮৫ শরিকী বিরোধে স্বামীর ভিটেবাড়ির পরিবেশ বসবাসের
অযোগ্য হয়ে ওঠায় ভূবনেশ্বরী ছেলেমেয়েদের নিয়ে ৭ রামতনু বসু লেনে নিজের মায়ের কাছে চলে গেলেন। কিন্তু কয়েক মাস পরে আবার গৌরমোহন মুখার্জি স্ট্রিটে ফিরে এসে দেখেন পরলোকগত স্বামীর খুড়তুতো ভাই উকিল তারকনাথ দত্ত একটি পাকা ঘর তৈরি শুরু করেছেন। মায়ের নির্দেশে, তারকনাথের বেআইনি কাজ নিয়ে নরেন্দ্রনাথের সঙ্গে উত্তেজনাময় বচসা।
মার্চ : নরেন্দ্রনাথের গৃহত্যাগের সঙ্কল্প।
ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের প্রথম অসুখ, তাকে শ্যামপুকুরে আনা হল।
১৮৮৬ ২৫শে ফেব্রুয়ারি উকিল তারকনাথের মৃত্যু ৪৮ বছর বয়সে। ১৫ জুলাই তারকনাথের বিধবা জ্ঞানদাসুন্দরী দাসী হাইকোর্টে ভূবনেশ্বরী দাসীর বিরুদ্ধে মামলা করলেন, অভিযোগ গৌরমোহন মুখার্জি স্ট্রিটের বাড়ির কিছু অংশ ভূবনেশ্বরীর বেনামে তার স্বামীই কিনেছিলেন।
১১ আগস্ট হাইকোর্টে ভূবনেশ্বরীর আবেদন : প্রয়াত স্বামীর মক্কেলদের কাছ থেকে অনাদায়ী টাকা আদায়ের ছাড়পত্রের জন্য। মায়ের বাংলা সই সনাক্ত করলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত।
১২ আগস্ট হাইকোর্টে ভূবনেশ্বরীর আবেদন মঞ্জুর–আদালত থেকে বেরিয়েই নরেন্দ্রনাথ ছুটলেন কাশীপুর উদ্যানবাটীতে–গলায় ক্যানসার রোগে ঠাকুর সেখানে মৃত্যুশয্যায়।
১৬ আগস্ট কাশীপুর উদ্যানবাটীতে রাত্রি ১টা ২ মিনিটে ঠাকুর শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের মর্তলীলার অবসান।
২৮ নভেম্বর জ্ঞানদাসুন্দরী ভিটেবাড়ির মালিকানা নিয়ে যে মামলা দায়ের করেছেন অ্যাটর্নি নিমাই বসুর মাধ্যমে ভূবনেশ্বরী ও নরেন্দ্রনাথ তার বিস্তারিত জবাব দিলেন।
১৮৮৭ কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি উইলিয়ম ম্যাকফারলেনের কক্ষে বিচার শুরু। দু’পক্ষের সাক্ষীসাবুদ অনেক। এঁদের মধ্যে আছেন প্রতিবেশী ডাক্তার চন্দ্রনাথ ঘোষ ও দত্ত বাড়ির পুরোহিত সারদাপ্রসাদ মজুমদার।
৮মার্চ স্বয়ং নরেন্দ্রনাথ হাইকোর্টে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ালেন। তাকে জেরা করলেন বিখ্যাত ইংরেজ ব্যারিস্টার পিউ সায়েব। পেশা কি এই প্রশ্নের উত্তরে নরেন্দ্রনাথ বললেন, আমি বেকার।
১৪ মার্চ হাইকোর্টের রায়–জ্ঞানদাসুন্দরী অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন, মামলার সব ব্যয়ভার তাকেই বহন করতে হবে। জ্ঞানদাসুন্দরী হাইকোর্টে আপীল ফাঁইল করলেন।
১৫ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি আর্থার উইলসন ও বিচারপতি রিচার্ড টটেনহ্যাম পূর্বতন রায় বহাল রাখলেন, জয় বিশ্বনাথ পত্নী নরেন্দ্ৰজননী ভূবনেশ্বরীর।
১৮৮৮ ২০ জানুয়ারি সম্পত্তি বিভাজনের জন্য শচীমণির মামলা আদালতের এক স্থগিতাদেশে এতোদিন ঝুলে ছিল। পূর্বতন বাঁটোয়ারা রায় কার্যকরী করার জন্যে ভুবনেশ্বরীর পক্ষে আদালতে আবেদন। আদালতের হস্তক্ষেপে ভূবনেশ্বরী তার অংশ বুঝে পেলেন।