০৩. আগ্রা ফোর্ট স্টেশন থেকে বান্দিকুইয়ের ট্রেন

॥ ৩ ॥

আমরা আধ ঘন্টা হল আগ্রা ফোর্ট স্টেশন থেকে বান্দিকুইয়ের ট্রেনে চেপেছি। আগ্রায় হাতে তিন ঘন্টা সময় ছিল। সেই ফাঁকে দশ বছর বাদে আরেকবার তাজমহলটা দেখে নিলাম, আর ফেলুদাও আমাকে তাজের জিয়োমেট্রি সম্পর্কে একটা ছোটখাটো লেকচার দিয়ে দিল।

গতকাল কলকাতা ছাড়ার আগে একটা জরুরি কাজ সেরে নিয়েছিলাম—সেটার কথা এখানে বলে রাখি। তুফান এক্সপ্রেস ছাড়বে সকাল সাড়ে নটায়, তাই আমরা ঘুম থেকে উঠেছিলাম খুব ভোরে। ছটা নাগাত চা খাবার পর ফেলুদা বলল, ‘একবার তোর সিধু জ্যাঠার ওখানে ঢুঁ মারতে হচ্ছে। ভদ্রলোকের কাছ থেকে কিছু তথ্য জোগাড় করতে পারলে সুবিধে হবে।’

সিধু জ্যাঠা থাকেন সর্দার শঙ্কর রোডে। আমাদের তারা রোড থেকে হেঁটে যেতে লাগে পাঁচ মিনিট। এখানে বলে রাখি, সিধু জ্যাঠা জীবনে নানারকম ব্যবসা করে অনেক টাকা রোজগারও করেছেন, আবার অনেক টাকা খুইয়েছেন। আজকাল আর কাজকর্ম করেন না। বইয়ের ভীষণ শখ, তাই গুচ্ছের বই কেনেন, কিছুটা সময় সেগুলো পড়েন, বাকি সময়টা একা একা বই দেখে দাবা খেলেন, আর খাওয়া নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করেন। এক্সপেরিমেন্টটা হচ্ছে এক খাবারের সঙ্গে আরেক খাবার মিশিয়ে খাওয়া। উনি বলেন দইয়ের সঙ্গে অমলেট মেখে খেতে নাকি অমৃতের মতো লাগে। আসলে সম্পর্কে আমাদের কিছুই হন না উনি। আমাদের যে পৈতৃক গ্রাম (আমি যাইনি কক্ষনও) উনি সে গ্রামেরই লোক, আর আমাদের বাড়ির পাশেই ওঁর বাড়ি ছিল। উনি তাই আমার বাবার দাদা আর আমার জ্যাঠামশাই।

ওঁর বাড়িতে পৌঁছে দেখি সিধু জ্যাঠা দরজার ঠিক মুখটায় একটা মোড়ার উপর বসে নাপিতকে দিয়ে চুল ছাঁটাচ্ছেন, যদিও মাথার পিছন দিকে ছাড়া আর কোথাও চুল নেই তাঁর। আমাদের দেখে মোড়াটা পাশ করে বললেন, ‘বোসো। নারায়ণকে হাঁক দিয়ে বলো চা দেবে।’

একটা তক্তপোশ, দুটো চেয়ার, আর ইয়া বড় বড় তিনটে বইয়ের আলমারি ছাড়া ঘরে আর কিছু নেই। তক্তপোশটারও অর্ধেকটা বইয়ে বোঝাই। আমরা জানতাম ওই খালি জায়গাটাই সিধু জ্যাঠার জায়গা, তাই আমরা চেয়ার দুটোতে বসলাম। ফেলুদা তার ধারকরা মলাট দেওয়া বইটা সঙ্গে এনেছিল, সেটা একটা আলমারির একটা তাকের ফাঁকে গুঁজে দিল।

চুল কাটতে কাটতেই সিধু জ্যাঠা বললেন, ‘ফেলু যে গোয়েন্দাগিরি করছ, ক্রিমিন্যাল ইনভেস্টিগেশনের ইতিহাসটা একবার ভাল করে পড়ে নিয়েছ তো? যে কাজেই স্পেশালাইজ করো না কেন, তার ইতিহাসটা জানা থাকলে কাজে আনন্দ আর কনফিডেন্স দুটোই পাবে বেশি।’

ফেলুদা নরম সুরে বলল, ‘আজ্ঞে হ্যা, তা তো বটেই।’

‘এই যে আঙুলের ছাপ দেখে ক্রিমিন্যাল ধরার পদ্ধতি, এটার আবিষ্কর্তা কে জানো?’

ফেলুদা আমার দিকে চোখ টিপে বলল, ‘ঠিক মনে পড়ছে না; পড়েছিলাম বোধহয়।’

আমি বুঝলাম ফেলুদার দিব্যি মনে আছে, কিন্তু সে সিধু জ্যাঠাকে খুশি করার জন্য ভুলে যাওয়ার ভান করছে।

‘হুঁ! জিজ্ঞেস করলে অনেকেই দেখবে ফস করে বলে বসবে আলফোঁস বোর্তিয়োঁ। কিন্তু সেটা ভুল। কারেক্ট নামটা হচ্ছে হুয়ান ভুকেটিচ। মনে রেখো। আর্জেন্টিনার লোক। বুড়ো আঙুলের ছাপের ওপর ইনিই প্রথম জোরটা দেন। আর সে ছাপকে চারটে ক্যাটেগরিতে ভাগ করেন উনিই। অবিশ্যি তার কয়েক বছর পরে ইংল্যান্ডের হেনরি সাহেব আরও মজবুত করেন এই সিস্টেমকে।’

ফেলুদা আর বেশি সময় নষ্ট না করে ঘড়ি দেখে বলল, ‘আপনি ডক্টর হেমাঙ্গ হাজরার নাম শুনেছেন বোধহয়। যিনি প্যারাসাইকলজি নিয়ে—’

‘পাড়া-ছাই-চলো-যাই?’

এটা সিধু জ্যাঠার একটা বাতিক। একেকটা ইংরিজি কথাকে উনি এইভাবেই বেঁকিয়ে বাংলা করে বলেন। Exhibition হল ইস্‌-কী ভীষণ, Impossible হল আম-পচে-বেল, Dictionary হল দ্যাখস-নাড়ী, Governor হল গোবর-নাড়ু—এই রকম আর কী।

‘শুনেছি বইকী!’ বললেন সিধু জ্যাঠা। ‘এই তো সেদিনও কাগজে নাম দেখলাম ওর। কেন—তাকে নিয়ে আবার কী? কিছু গোলমাল করেছে নাকি? ও তো গোলমাল করার লোক নয়। বরং উলটো। অন্যদের বুজরুকি ধরে দিয়েছে ও।’

‘তাই বুঝি?’ ফেলুদা বুঝেছে যে একটা ইন্টারেস্টিং খবরের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

‘সে জানো না বুঝি? বছর চারেক আগের ব্যাপার। কাগজে বেরিয়েছিল তো। শিকাগোতে এক বাঙালি ভদ্রলোক—ভদ্র আর বলি কী করে, চরম ছোটলোক—এক আধ্যাত্মিক চিকিৎসালয় খুলে বসেছিল। খাস শিকাগো শহরে। তরতর করে আমেরিকান খদ্দের জুটে যায়, বুঝেছ। হুজুগে জাত তো, আর পয়সা অঢেল। হিপ্‌নটিজম অ্যাপ্লাই করে দুরারোগ্য ব্যাধি সারিয়ে দেব বলে ক্লেম করেছিল। এইটিনথ্‌ সেঞ্চুরিতে ইউরোপে আনটন মেসমার যা করে। এর বেলা দু-একটা ছুটছাট লেগেও গিয়েছিল বোধ হয়—যেমন হয় আর কী। সেই সময় হাজরা শিকাগোতে বক্তৃতা দিয়ে যায়। সে জানতে পেরে ব্যাপারটা চাক্ষুষ করতে যায়; গিয়ে ভণ্ডামি ধরে ফেলে। সে এক স্ক্যান্ডাল। শেষ পর্যন্ত লোকটাকে দেশছাড়া করে ছেড়েছিল আমেরিকান সরকার। হ্যাঁ হ্যাঁ—নাম নিয়েছিল ভবানন্দ।…হাজরা খুব সলিড লোক। অন্তত লেখাটেখা পড়ে তো তাই মনে হয়। খান দুয়েক লেখা তো আমার কাছেই রয়েছে। বাঁদিকের আলমারির তলার তাকে ডান কোণে দেখো তো। প্যারাসাইকলজিক্যাল সোসাইটির তিনখানা জার্নাল পাবে…’

ফেলুদা ম্যাগাজিন তিনটে ধার করে নেয়। এখন ট্রেনে বসে ও সেগুলোই উলটে-পালটে দেখছে। আমি জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখছি। উত্তরপ্রদেশ পেরিয়ে রাজস্থানে ঢুকেছি কিছুক্ষণ আগেই।

‘এখানে রোদের তেজই আলাদা। সাধে কি আর লোকগুলো এত পাওয়ারফুল!’

কথাটা এল আমাদের সামনের বেঞ্চি থেকে। ফোর-বার্থ কম্পার্টমেন্ট, আর যাত্রীও আছি সবসুদ্ধ চারজন। যিনি কথাটা বললেন তিনি দেখতে অত্যন্ত নিরীহ, রীতিমতো রোগা, আর হাইটে নির্ঘাত আমার চেয়েও অন্তত দু ইঞ্চি কম। আমার তো তাও বয়স মাত্র পনেরো, তাই বাড়ার বয়স যায়নি। ইনি কমপক্ষে পঁয়ত্রিশ, কাজেই যেমন আছেন তেমনই থাকবেন। ইনি যে বাঙালি সেটা এতক্ষণ বুঝতে পারিনি, কারণ বুশ শার্ট আর প্যান্ট থেকে বোঝা খুব শক্ত। ভদ্রলোক ফেলুদার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললেন, ‘অনেকক্ষণ থেকে আপনাদের কথা শুনচি। দূর দেশে এসে জাতভাইয়ের সাক্ষাৎ পাওয়া কি কম সৌভাগ্যের কথা? আমি তো ধরেই নিয়েছিলুম এই একটা মাস মাতৃভাষাটাকে একরকম বাধ্য হয়েই বয়কট করতে হবে।’

ফেলুদা হয়তো খানিকটা ভদ্রতার খাতিরেই জিজ্ঞেস করল, ‘কদূর যাবেন?’

‘যোধপুরটা তো পৌঁছই, তারপর দেখা যাবে। আপনারা?’

‘আমরাও আপাতত যোধপুর।’

‘বাঃ—চমৎকার হল। আপনিও কি লেখেন-টেখেন নাকি?’

‘আজ্ঞে না।’ ফেলুদা হাসল। ‘আমি পড়ি। আপনি লেখেন?’

‘জটায়ু নামটা চেনা চেনা লাগছে কি?’

জটায়ু? সেই যে সব রোমহর্ষক অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস লেখেন? আমি তো পড়েওছি তার দু-একটা বই—‘সাহারায় শিহরণ’, ‘দুর্ধর্ষ দুষমণ’—আমাদের স্কুলের লাইব্রেরি থেকে নিয়ে।

‘আপনিই জটায়ু?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।

‘আজ্ঞে হ্যাঁ’—ভদ্রলোকের দাঁত বেরিয়ে গেল, ঘাড় নুয়ে পড়ল—‘এই অধমের ছদ্মনামই জটায়ু। নমস্কার।’

‘নমস্কার। আমার নাম প্রদোষ মিত্তির। ইনি শ্রীমান তপেশরঞ্জন।’

ফেলুদা হাসি চেপে রেখেছে কী করে? আমার তো সেই যাকে বলে পেট থেকে ভসভসিয়ে সোড়ার মতো হাসি গলা অবধি উঠে এসেছে। ইনিই জটায়ু! আর আমি ভাবতাম, যে রকম গল্প লেখে, চেহারা নিশ্চয়ই হবে একেবারে জেমস্‌ বন্ডের বাবা।

‘আমার আসল নাম লালমোহন গাঙ্গুলী। অবিশ্যি বলবেন না কাউকে। ছদ্মনামটা, মানে, ছদ্মবেশের মতোই—ধরা পড়ে গেলে তার আর কোনও ইয়ে থাকে না।’

আমরা আগ্রা থেকে কিছু গুলাবি রেউড়ি নিয়ে এসেছিলাম, ফেলুদা ঠোঙাটা ভদ্রলোকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, ‘আপনি তো বেশ কিছু দিন থেকেই ঘুরছেন বলে মনে হচ্ছে।’

ভদ্রলোক ‘হ্যাঁ, তা—’ বলে একটা রেউড়ি তুলে নিয়েই কেমন যেন থতমত খেয়ে গেলেন। ফেলুদার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে বললেন, ‘আপনি জানলেন কী করে?’

ফেলুদা হেসে বললেন, ‘আপনার ঘড়ির ব্যান্ডের তলা দিয়ে আপনার গায়ের চামড়ার রোদে-না-পোড়া আসল রংটা মাঝে মাঝে বেরিয়ে পড়ছে।’

ভদ্রলোক চোখ গোল গোল করে বললেন, ‘ওরেব্বাস্‌রে, আপনার তো ভয়ংকর অবজারভেশন মশাই। ঠিকই ধরেছেন। দিল্লি, আগ্রা, ফতেপুর সিক্রি—এই সব একটু ঘুরে দেখলুম আর কী। দিন দশেক হল বেরিয়েচি। অ্যাদ্দিন স্রেফ বাড়িতে বসে বসে দেশ-বিদেশের গপ্পো লিখিচি। থাকি ভদ্রেশ্বরে। এবার তাই ভাবলুম—একটু ঘুরে দেখা যাক, লেখার সুবিধে হবে। আর অ্যাডভেঞ্চারের গপ্পো এই সব দিকেই জমে ভাল, বলুন! দেখুন না কী রকম সব রুক্ষ পাহাড়, বাইসেপ-ট্রাইসেপের মতো ফুলে ফুলে রয়েছে! বাংলাদেশের—এক হিমালয় ছাড়া—মাস্‌ল নেই মশাই। সমতলভূমিতে কি অ্যাডভেঞ্চার জমে?’

আমরা তিনজনে রেউড়ি খেতে লাগলাম। জটায়ু দেখি মাঝে মাঝে আড়চোখে ফেলুদার দিকে দেখছেন। শেষটায় বললেন, ‘আপনার হাইট কত মশাই? কিছু মনে করবেন না।’

‘প্রায় ছয়,’ ফেলুদা বলল।

‘ওঃ, দারুণ হাইট। আমার হিরোকেও আমি ছয় করিচি। প্রখর রুদ্র—জানেন তো? রাশিয়ান নাম—প্রখর, কিন্তু বাঙালিকেও কী রকম মানিয়ে গেছে বলুন! আসলে নিজে যা হতে পারলুম না, বুঝেছেন, হিরোদের মধ্যে দিয়ে সেই সব আশ মিটিয়ে নিচ্চি। কম চেষ্টা করিচি মশাই হবার জন্যে? সেই কলেজে থাকতে চার্লস অ্যাটলাসের বিজ্ঞাপন দেখতুম বিলিতি ম্যাগাজিনে। বুক চিতিয়ে মাস্‌ল ফুলিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কী হাতের গুলি, কী বুকের ছাতি, কোমরখানা একেবারে সিংহের মতো। চর্বি নেই এক ফোঁটা সারা শরীরে। মাথা থেকে পা অবধি ঢেউ খেলে গেছে মাস্‌লের। বলছে—এক মাসের মধ্যে আমার মতো চেহারা হয়ে যাবে, আমার সিস্টেম ফলো করে। ওদের দেশে হতে পারে মশাই। বাংলাদেশে ইমপসিবল্‌। বাপের পয়সা ছিল, কিছু নষ্ট করলুম, লেসন আনালুম, ফলো করলুম—কিস্যু হল না। যেই কে সেই। মামা বললেন—পর্দার রড ধরে ঝুলবি রোজ, দেখবি একমাসের মধ্যে হাইট বেড়ে যাবে। কোথায় একমাস! ঝুলতে ঝুলতে একদিন মশাই রড সুদ্ধ খসে মাটিতে পড়ে হাঁটুর হাড় ডিসলোকেট হয়ে গেল, অথচ আমি সেই পাঁচ সাড়ে তিন—সেই পাঁচ সাড়ে তিনই রয়ে গেলাম। বুঝলুম, টাগ অফ ওয়ারের দড়ির বদলে আমাকে ধরে টানলেও লম্বা আমি হব না। শেষটায় ভাবলুম—দুত্তোরি, গায়ের মাস্‌লের কথা আর ভাবব না, তার চেয়ে ব্রেনের মাস্‌লের দিকে অ্যাটেনশন দেওয়া যাক। আর মেনটাল হাইট। শুরু করলাম রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখা। লালমোহন গাঙ্গুলী নাম তো আর চলে না, তাই নিলুম ছদ্মনাম—জটায়ু। ফাইটার। কী ফাইটটা দিয়েছিল রাবণকে বলুন তো!’

ট্রেনটাকে ফাস্ট প্যাসেঞ্জার বললেও কাছাকাছির মধ্যে এত স্টেশন পড়ছে যে পনেরো-কুড়ি মিনিটের বেশি একটানা গাড়ি চলতেই পারছে না। ফেলুদা প্যারাসাইকলজিক্যাল পত্রিকা ছেড়ে এখন রাজস্থানের বিষয় একটা বই পড়তে শুরু করেছে। রাজস্থানের কেল্লার সব ছবি রয়েছে এ বইতে। সেগুলো সে খুব খুঁটিয়ে দেখছে আর মন দিয়ে তাদের বর্ণনা পড়ছে। আমাদের সামনে আপার বার্থে আরেকজন ভদ্রলোক রয়েছেন, তার গোঁফ আর পোশাক দেখলেই বোঝা যায় তিনি বাঙালি নন। ভদ্রলোক একটার পর একটা কমলালেবু খেয়ে চলেছেন, আর তার খোসা আর ছিবড়ে ফেলছেন সামনে পাতা একটা উর্দু খবরের কাগজের উপর।

ফেলুদা পকেট থেকে একটা নীল পেনসিল বার করে হাতের বইটাতে দাগ দিচ্ছিল, এমন সময় লালমোহনবাবু বললেন, ‘কিছু মনে করবেন না—আপনি কি মশাই গোয়েন্দা জাতীয় কিছু?’

‘কেন বলুন তো?’

‘না, মানে, যেভাবে ফস করে তখন আমার ব্যাপারটা বলে দিলেন…’

‘আমার ও ব্যাপারে ইন্টারেস্ট আছে।’

‘বাঃ! তা আপনারাও তো যোধপুরেই যাচ্ছেন বলে বললেন।’

‘আপাতত।’

‘কোনও রহস্য আছে নাকি? যদি থাকে তো আমি কিন্তু আপনাদের সঙ্গে ঝুলে পড়ব—ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড। এমন সুযোগ আর আসবে না।’

‘আপনার উটের পিঠে চড়তে আপত্তি নেই তো?’

‘আরেব্বাস, উট!’ ভদ্রলোকের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। ‘শিপ অফ দি ডেজার্ট! এ তো আমার স্বপ্ন মশাই। আমার ‘আরক্ত আরব’ উপন্যাসে আমি বেদুইনের কথা লিখেছি যে! তা ছাড়া ‘সাহারায় শিহরণ’-এও আছে। অদ্ভুত জীব। নিজের ওয়াটার সাপ্লাই নিজের পাকস্থলীর মধ্যে নিয়ে বালির সমুদ্র দিয়ে সার বেঁধে চলেছে। কী রোমান্টিক—ওঃ!’

ফেলুদা বলল, ‘পাকস্থলীর ব্যাপারটা কি আপনার বইয়ে লিখেছেন নাকি?’

লালমোহনবাবু থতমত খেয়ে বললেন, ‘ওটা ঠিক নয় বুঝি?’

ফেলুদা মাথা নেড়ে বলল, ‘জল আসে উটের কুঁজ থেকে। কুঁজটা আসলে চর্বি। ওই চর্বিকে অক্সিডাইজ করে উট জল করে নেয়। এক নাগাড়ে দশ পনেরো দিন ওই চর্বির জোরে জল না খেয়ে থাকতে পারে। অবিশ্যি একবার জলের সন্ধান পেলে দশ মিনিটে পঁচিশ গ্যালনও খেয়ে নেয় বলে শোনা গেছে।’

লালমোহনবাবু বললেন, ‘ভাগ্যিস বললেন। নেক্সট এডিশনে ওটা কারেক্ট করে দেব।’

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *