প্রথম খণ্ড : লৌকিক ধর্ম-উৎসব ও অনুষ্ঠান । চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : ব্রত অনুষ্ঠান – হরির চরণ
বৈশাখ মাসকে এক কথায় বলা যায় পুণ্য মাস। এই মাসে যে কত রকমের ব্রত নিয়মের কথা শুনতে পাওয়া যায় তার আর ইয়াত্তা নেই। অঞ্চল ভেদে একই ব্রত বিভিন্ন নামে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রচলিত রয়েছে। অনেকগুলি ব্রত আছে যেগুলি পূর্ব ও পশ্চিমবঙ্গে উভয় স্থানেই প্রচলিত, ছড়ার ভিতরকার পার্থক্যও খুব সামান্যই দেখা যায়। ‘হরির চরণ’ ব্রতটি সেই শ্রেণীর। এতেও ঠিক বৈশাখ মাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, কুমারী মেয়েদের দেখা যায় পিতলের থালায় বা বাটায় চন্দন দিয়ে এক জোড়া পা আঁকতে। এই পদযুগলই হল শ্রীহরির পাদপদ্ম। বালিকারা সেই থালার উপর একটি করে ফুল ফেলে দিয়ে মন্ত্র পড়তে থাকে :—
হরির চরণ, হরির পা, হরি বলেন ‘মা গো মা,’
কোন্ ভাগ্যবতী পূজে মা?
সে ভাগ্যবতী কী চায়?
আপনাকে সুন্দর চায়, রাজ রাজেশ্বর স্বামী চায়,
গিরিরাজ বাপ চায়, দশরথের মত শ্বশুর চায়,
মেনকার মত মা চায়, দুর্গার মত আদর চায়,
বসুমতীর মত ক্ষমা চায়, দরবার আলো বেটা চায়।
পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিতগণ নিশ্চয় বলবেন, শিশুদের মনে প্রথম থেকেই শ্বশুর, শ্বাশুড়ী ও শ্বশুরবাড়ির কথা ঢুকিয়ে দেওয়া কেন? আমরা এ কথার জবাবে শুধু বলব, বাঙালী সব সময়েই তাদের মেয়েদের দেখাতে চেয়েছে কল্যাণময়ী মাতৃরূপে। তাই শিশু বয়স থেকেই তাদের প্রার্থনা করতে শেখায় :—
হবে পুত্র মরবে না,
পৃথিবীতে এক ফোঁটা চোখের জল পড়বে না।
পুত্র দিয়ে স্বামীর কোলে, মরণ যেন হয় গঙ্গার জলে।