প্রথম খণ্ড : লৌকিক ধর্ম-উৎসব ও অনুষ্ঠান । চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : ব্রত অনুষ্ঠান – গো-ক্ষুর ব্রত
‘গো-ক্ষুর’ ব্রত—কোনো কোনো জায়গায় বলে গোরুর ব্রত। কৃষিপ্রধান ভারতে গো-জাতির স্থান অতি উচ্চে। তার কাছে মানব সমাজের ঋণ অনেক। তাই তাকেও দেবতা জ্ঞান পূজা করতে তাদের বাধেনি। পৌষ মাসের শুক্লা তৃতীয়ায় (অথবা অন্য কোনো দিন) দেখা যায় বাড়ির গিন্নীরা অতি ভোরে উঠে বাড়ির গোহালঘর নিকোয়, তারপর গাভীগুলির (স-বৎসা হলে তো কথাই নেই) শিং-এ তেল মাখায়, কপালে সিন্দুরের টিপ দেয়, দেয় চন্দন কুম্কুমের ফোঁটা, তারপর গলায় পরিয়ে দেয় মোটা একছড়া ফুলের মালা। এরপর বাড়ির এবং পড়শী মেয়ে বৌরা সবাই এগিয়ে আসে ব্রত করতে। প্রথম গোরুর ক্ষুরে দেয় জল—তারপর তার মুখের কাছে ধরে দেয় আলোচাল, ফল প্রভৃতি দিয়ে সাজানো নৈবেদ্যের থালা। ব্রতীরা ধূপ দীপ জ্বালিয়ে প্রকৃতপক্ষে দেব মূর্তিকে পূজা করার ভঙ্গিতেই গলবস্ত্র হয়ে গাভীর উদ্দেশ্যে বলতে থাকে :
গো গোবিন্দ সুরধুনী,
চার ক্ষুরে দিয়ে পানী।
মাথায় নৈবেদ্য মুখে ঘাস,
বর্তীরা গ্যাল স্বর্গ বাস।
এই দিন গাভীকে আর বাঁধা হয় না, সে নিজের ইচ্ছামত চরে বেড়ায়। সন্ধার দিকে গোহালে ফিরলে আবার তার সুমুখে ধূপ দীপ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়, আর দেওয়া হয় এক আঁটি করে নতুন ঘাস।