১.১৪.১৫ পাঁচড়া পূজা

প্রথম খণ্ড : লৌকিক ধর্ম-উৎসব ও অনুষ্ঠান । চতুর্দশ পরিচ্ছেদ : ব্রত অনুষ্ঠান – পাঁচড়া পূজা

পশ্চিমবঙ্গে যেমনি ঘেঁটু,যশোহর-খুলনা জেলায় যেমনি বনদুর্গার পূজা, তেমনি পূর্ববঙ্গের কোনো কোনো অঞ্চলে বিশেষ করে ফরিদপুর জেলায় দেখা যায় ‘পাঁচড়া’ পূজার ধুম। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে দেশে যখন খুব ফোঁড়া-পাঁচড়ার ধুম লেগে যায় তখন দেয়া যায় গাঁয়ের মেয়ে বৌদের এ ব্রত করতে। এর আয়োজন বিশেষ কিছু নেই—পুরুত তো দূরের কথা! গাঁয়ের ভিতর সব চাইতে যে পুরান হিজল গাছটা থাকে সেখানেই এসে জড়ো হয় গাঁয়ের মেয়ে বৌরা। এখানে আসবার আগে তারা একটা ভাঙ্গা কুলায় করে নিয়ে এসেছে পাঁচড়া দেবীর পূজার উপকরণ, যথা—বইন্যা গাছের ফুল, কুমড়ার ফুল, ধুতুরার ফুল, ইঁদুদের মাটি, বাসী উনুনের ছাই। প্রভৃতি। এই সব উপকরণ সাজিয়ে নিয়ে হিজল গাছের তলায় বসে পাঁচড়া দেবতার উদ্দেশ্যে বলতে থাকে :—

হ্যাচড়া মাগীর প্যাঁচরা চুল,
তাইতে লাগে বইন্যার ফুল।
বইন্যার ফুল না তো ধুতুরার ফুল,
ধুতুরার ফুল না লো কুমড়ার ফুল,
কুমড়াড় ফূল না লো লাউয়ের ফুল,
লাউয়ের ফুল না লো বাসী আঁখার ছাই,
বাসী আঁখার ছাই না লো ইন্দুরের মাটি,
ইন্দুরের মাটি না লো ভাঙ্গা চাড়া
হিজল গাছে দিয়া সাড়া,
পাঁচড়া মাগীরে কর গেরাম ছাড়া।

এইভাবে কদিন ধরে পাঁচড়া পূজা করবার পর শেষ দিন তারা প্রত্যেকে নিম হলুদ দিয়ে স্নান করতঃ—যারা ব্রত অনুষ্ঠান শুনএ আসে না—বিশেষ করে পুরুষরা তাদেরও কপালে এই পূজার নিম হলুদ একটু ছুঁইয়ে দেয় যাতে তারাও পাঁচড়া চুলকানীর হাত থেকে রক্ষা পায়।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *