স্তব্ধ এল এম জি

স্তব্ধ এল এম জি

সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর রহমান বীরশ্রেষ্ঠ

বাড়ি ছেড়ে যাবার আগে মাকে বলে গিয়েছিলেন, ‘ঈদে খরচ পাঠাব। কোনো চিন্তা কোরো না।’

মা কোনো জবাব দেননি। কিন্তু চিন্তায় কপালে ভাঁজ ঠিকই পড়েছিল। দু’মাসও হয়নি ছেলে মিলিটারিতে ভর্তি হয়েছে, এরই মধ্যে এমনভাবে একরাতের জন্য বাড়ি এল কেন? আর এলই যদি, তাহলে এমনভাবে চুপিচুপি ভোররাতে আবার চলেই বা যাচ্ছে কেন? ছেলের চেহারায় এমন উদভ্রান্ত ভাব কেন? ওর মিলিটারির খাকি পোশাক গায়ে নেই কেন? একটা পুরোনো লুঙি আর সার্ট পরে বাড়ি এসেছে। মিলিটারির চাকুরি পেলে সংসারের দুঃখ ঘুচবে, ভাই-বোনদের গায়ে নতুন জামা-কাপড় উঠবে, ঘরের পুরনো চালে নতুন ছন দেওয়া হবে—তা সেই সচ্ছলতার এই কি নমুনা?

কায়সুন্নেসা বয়ঃপ্রাপ্ত চাকুরে ছেলেকে এসব প্রশ্নের একটাও করতে পারেননি। মনের উদ্বেগ মনেই রেখে দোয়া পড়ে ছেলের মাথায় ফুঁ দিয়ে তাকে বিদায় দিয়েছিলেন।

সেই ছেলের টাকাও আসেনি সে বছর ঈদের সময়, সেই ছেলের কোনো খবরও আসেনি সে বছর স্বাধীনতার পর।

ছেলে বিদায় নেবার কিছুদিনের মধ্যেই অবশ্য মা-বাবা টের পেয়েছিলেন দেশে সর্বনাশা যুদ্ধ বেঁধেছে, তাঁর ছেলে কোথাও হয়তো যুদ্ধ করছে। দেশ স্বাধীন হবার পর বহুদিন আশায় আশায় থেকেছেন— ছেলে ফিরে আসবে। কিন্ত ছেলে আর ফেরেনি। বেশ কয়েকমাস পর সেনাবাহিনীর একটি চিঠিতে জানতে পারেন, তাঁদের ভবিষ্যতের আশা-ভরসার খুঁটি, তাঁদের জ্যেষ্ঠ সন্তান হামিদুর রহমান আর নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বীরের মৃত্যুবরণ করেছেন।

দারিদ্র্য এবং কঠোর জীবনসংগ্রামে পর্যুদস্ত পিতামাতার জ্যেষ্ঠ পুত্র ছিলেন হামিদুর রহমান। পিতা আক্কাস আলী মণ্ডল ও মাতা মোসাম্মৎ কায়সুন্নেসা তাঁদের জীবনে দু-বার দুটি স্বাধীনতার পতাকা দেখেছেন। দু-বারই নিঃস্ব হয়েছেন। প্রথমবার ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি ও পাকিস্তানের অভ্যূদয়ের সময়। এ সময়ে তাঁরা তাদের পৈতৃক ভিটা ফেলে প্রায় এক কাপড়ে চলে আসতে বাধ্য হন সীমান্তের এপারে।

আক্কাস আলীর পৈতৃক ভিটা ভারত বিভাগের সময় পড়ে যায় ভারতে। পশ্চিমবঙ্গের ২৪ পরগনা জেলার চাপড়া থানার ডুমুরিয়া গ্রাম থেকে অনেক আশা নিয়ে তাঁরা এলেন যশোর জেলার সীমান্তবর্তী খোরদা খালিশপুরে। এসে দেখলেন, আশা এবং বাস্তবে কোনো মিল নাই। ভূমিহীন, সহায়-সম্বলহীন আক্কাস আলী এবং মোসাম্মৎ কায়সুন্নেসা অন্যের ভিটায় বাসা বাঁধলেন। সততাকে সঞ্চয় করে পরিশ্রমী হাতকে কাজে লাগালেন। একেবারে গোড়া থেকে শুরু করলেন উৎপাটিত জীবনকে নতুন মাটিতে আবার প্রতিষ্ঠিত করতে।

এই কঠোর জীবন-সংগ্রামের সংসারেই জন্মগ্রহণ করলেন হামিদুর রহমান, ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। আর্থিক টানাপোড়েনের সংসারে প্রথম সন্তানের মুখ দেখলেন আক্কাস আলী। প্রথম সন্তান ছেলে বলে অনেক দুঃখের মাঝেও হাসি ফুটেছিল বাবা-মার মুখে। পাশে দাঁড়ানোর মতো, বৃদ্ধ বয়সে সংসারের হাল ধরার মতো একজনকে তো পাওয়া গেল।

কখনও পেটপুরে, কখনও আধ-পেটা খেয়েই বড় হয়েছিলেন হামিদ। কিন্তু শত দারিদ্র্য আর বঞ্চনার মাঝেও দুর্লভ সততার অধিকারী হয়েছিলেন হামিদ। পিতা আক্কাস আলী ভালো ঘর বাঁধতে পারতেন। কাজের অভাব ছিল না তাই। পিতার সঙ্গে সাহায্যকারী ‘যোগালীর’ কাজ করতেন হামিদ ছোটবেলা থেকেই। আক্কাস আলীর পরিবার তিনজনেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্রমে বেড়েছে আরো দুটি ছেলে, তিনটি মেয়ে। সংসারে মুখ যেমন বেড়েছে, চাহিদাও বেড়েছে। জীবনযাপনের সংগ্রামও হয়েছে তীব্রতর।

জীবন-বাঁচানোর এই সংগ্রামে সংসারের টানাপোড়েন ছিল নিত্যসঙ্গী। লেখাপড়ার অদম্য আকাঙ্ক্ষা সত্ত্বেও তেমন অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। ভর্তি হয়েছিলেন খালিশপুরের প্রাইমারি স্কুলে। অভাবের তাড়নাতেই স্কুল ছেড়ে কাজ নিতে বাধ্য হয়েছিলেন অন্যের বাড়িতে মজুর খাটার। দুই ভাই ও পিতা মিলে অন্যের বাড়িতে মজুর খেটে মাথাগোঁজার একটি ভিটাও কিনেছিলেন। এরই মাঝে আবার নাইটস্কুলেও পড়েছেন। ভিটা কেনা হলেও হামিদ বেশিদিন বাস করেননি এই ভিটায়।

১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারী তিনি যোগদান করেন সেনাবাহিনীতে। সে-সময় স্বাধিকার আন্দোলনের দাবিতে সারা দেশ টলমল করছে। তিনি জানতেন না জীবনের এক মাহেন্দ্রক্ষণ তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। সিপাহী হামিদুর রহমানের প্রথম ( এবং শেষও ) ইউনিট ছিল ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট। সেনাবাহিনীতে ভর্তি হবার পর প্রশিক্ষণের জন্য তাঁকে পাঠানো হয় চট্টগ্রামে ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে। ২৫ মার্চ রাত্রে চট্টগ্রামের ১ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট ওখানকার আরো কয়েকটি ইউনিটের সঙ্গে একত্রিত হয়ে তৎকালীন পাকিস্তানবাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে সামিল হয়। সিপাহী হামিদুর রহমানও তাঁর সততা এবং কর্তব্যনিষ্ঠা নিয়ে অংশগ্রহণ করেন মুক্তিযুদ্ধে।

শেষবারের মতো মা’র সঙ্গে দেখা করতে যান ২৫ মার্চের রাত্রে।

সিপাহী হামিদুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের পর তাঁর কোম্পানির সঙ্গে সিলেট সীমান্তে যুদ্ধ করেন। মাতৃভূমি উদ্ধারের জন্য এই পবিত্র যুদ্ধে জীবন বাজি রেখে অসীম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন হামিদ এবং একপর্যায়ে প্রয়োজনে ‘সে-জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছিলেন।

.

সিলেট জেলার শ্রীমংগল থানার আনুমানিক দশমাইল দক্ষিণপূর্বে ধলই। ভারতীয় সীমান্তের একেবারে পাশেই বলা যায়, দূরত্ব মাত্র চার’শ গজ। এখানে একটা চা-বাগান আছে, বাগানের পূর্বদিকে ধলই বর্ডার আউটপোস্ট। সামরিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান। যে করেই হোক, মুক্তিবাহিনীকে দখল করতেই হবে এই সীমান্তঘাঁটি। গুরুত্বপূর্ণ বলে শত্রুসেনাদের শক্তিও ছিল সেইরকম। দায়িত্ব দেওয়া হল ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি-কোম্পানিকে। প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট তখন মেজর (পরে লে. জেনারেল ও অবসরপ্রাপ্ত এবং বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট) জিয়াউর রহমানের জেড-ফোর্সের একটি ইউনিট। এই ইউনিটেরই সি-কোম্পানির একজন সৈনিক সিপাহী হামিদুর রহমান। সৈনিকজীবনে প্রথমবারের মতো এ-ধরনের একটি সুযোগ লাভ অন্যান্যদের মতো তাঁকেও উদ্বেলিত করেছিল। এ-ধরনের দায়িত্ব সৈনিকদের জন্য গর্বের ও সম্মানের।

আক্রমণের দিনক্ষণ নির্ধারিত হল ২৮ অক্টোবর ভোররাত। সেই হিসাবে যাত্রা শুরু হয় ২৭ অক্টোবর রাত দশটায়। ভোর চারটার সময় লক্ষ্যবস্তুর নিকট পৌঁছে বিওপির উপর চূড়ান্ত আক্রমণ করা হবে। পৌঁছানোও গেল ঠিকমতো। কিন্তু ঘন কুয়াশা আর নিবিড় অন্ধকারে চারদিক আচ্ছন্ন। মাত্র ২০/২৫ গজ দূরের কোনোকিছুও দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় আক্রমণ করা সম্ভব নয়। অপেক্ষা করতে হবে ভোরের আলো ফুটে ওঠার জন্য। আক্রমণের পরিকল্পনা অনুযায়ী কৌশলগত কারণে অধিনায়ক দুই প্লাটুন সামনে এবং এক প্লাটুন পিছনে অনুসরণকারী হিসাবে থাকার জন্য নির্দেশ দিলেন। অন্ধকার একসময় ফিকে হয়ে এল। লে. কাইয়ুম, হাবিলদার (বর্তমানে নায়েক সুবেদার) মকবুলকে নির্দেশ দিলেন শত্রুর অলক্ষ্যে গাছে উঠে তাদের অবস্থান পর্যবেক্ষণ করার জন্য। হাবিলদার মকবুল পর্যবেক্ষণ-শেষে গাছ থেকে নামার সঙ্গেসঙ্গেই শত্রু বিওপি থেকে কোম্পানির উপর গুলিবর্ষণ শুরু হয়। অর্থাৎ শত্রুও কোম্পানির অবস্থান ঠিক পেয়ে গেছে। চূড়ান্ত যুদ্ধ আসন্ন। কিন্তু আক্রমণের আগেই পালটা আক্ৰমণ! তাই লে. কাইয়ুম বেতারে গোলন্দাজবাহিনীর সাহায্য চাইলেন শত্রুর উপর গোলাবর্ষণের জন্য। উদ্দেশ্য, শত্রুর গুলিবর্ষণের মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে এইফাঁকে তাদের উপর আক্রমণ করা।

গোলন্দাজবাহিনীর গোলাবর্ষণে সীমান্ত-ঘাঁটির এক অংশে আগুন ধরে গেল। শত্রুপক্ষ এই আকস্মিক আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল না। তারা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গুলিবর্ষণ বন্ধ করে আগুন নেভাতে ব্যস্ত হল। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ-ধারায় ৭নং প্লাটুন ডানে, ৯ নম্বর প্লাটুন বাঁয়ে এবং ৮নং প্লাটুন ছিল পিছনে। শত্রুর গুলি বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চূড়ান্ত আক্রমণের নির্দেশ এল এবং শুরু হল আক্রমণ। শত্রুরাও শুরু করল প্রচণ্ড গুলিবর্ষণ। শত্রুর সুবিধাজনক অবস্থানের জন্যই আক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে হতাহত হয় কিছু মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু মুক্তিবাহিনীর লক্ষ্য সীমান্ত-ঘাঁটি দখল।

কোনো কিছুতেই পিছু হটা চলবে না সৈনিকদের। হতাহতদের পিছনে ফেলে অক্ষত সৈনিকেরা এগিয়ে চলে। একসময় তারা পৌঁছেও যায় সীমান্ত-ঘাঁটির কাছে।

কিন্তু সেখানেও বাধা

মাটির নিচে শত্রুরা পেতে রেখেছে মাইন। মাইন ফেটে হতাহত হল আরো কিছু মুক্তিযোদ্ধা। তীব্রতর হল শত্রুর গুলিবর্ষণও। তারাও মরিয়া।

একপর্যায়ে হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে যায়। তখন মাটিতে শুয়ে পড়লেন মুক্তিসেনারা। লে. কাইয়ুম বেতারে অধিনায়ক মেজর জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে সর্বশেষ পরিস্থিতি জানালেন। মেজর জিয়া আদেশ দিলেন ক্ষতির পরিমাণ চিন্তা না করে ধলই সীমান্ত-ঘাঁটি দখল করতে।

দখল করতেই হবে।

অধিনায়কের আদেশ— দখল করতেই হবে। সৈনিকের জীবনে এখানে চূড়ান্ত পরীক্ষা। আক্রমণকারীরা আবার অগ্রসর হলেন। লক্ষ্যবস্তুর একেবারে নিকটে পৌঁছে গেছেন তাঁরা, তবু দখল করে নেওয়া যাচ্ছে না ঘাঁটি।

বিওপির দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের একটি এলএমজি-ই এর প্রধান অন্তরায়। সেই আগ্নেয়াস্ত্র থেকে মুহুর্মুহু বিচ্ছুরিত হচ্ছে কঠিন সীসার মৃত্যুবাণ।

গাছপালার ঘন আবরণের জন্য মুক্তিসেনারা নিজেদের মেশিনগানও ফলপ্রসূভাবে চালাতে পারছেন না। শত্রুর এলএমজি-টা নিষ্ক্রিয় করতেই হবে। এ ছাড়া কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না এগুনো। লে. কাইয়ুম সহযোদ্ধা হামিদুর রহমানকে আদেশ দিলেন শত্রুর এলএমজি-টি নিষ্ক্রিয় করার জন্য।

সৈনিকজীবনের সবচেয়ে বড় দায়িত্বটি পেলেন সিপাহী হামিদুর রহমান।

সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হলেন তিনি। কালক্ষেপণের অবকাশ নেই।

প্রতিটি মুহূর্ত তখন মূল্যবান। একদিকে নিজের জীবন, পিতা-মাঙা, ভাই-বোনদের ভবিষ্যত আশা-ভরসা; অন্যদিকে সহযোদ্ধাদের জীবন ও চূড়ান্ত লক্ষ্য শত্রুঘাঁটি দখল করা—মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের একটি মাইলফলক গেঁথে দেওয়া।

তরুণ সৈনিক সে মাইলফলক গেঁথে দেবেই।

সাবধানে বুকে হেঁটে শত্রুর অজান্তে এলএমজি পোস্টের কাছে এগিয়ে গেলেন সিপাহী হামিদুর রহমান। বুকের নিচে কঠিন মাটি; সামনে-পিছনে, ডাইনে-বাঁয়ে-উপরে চলছে সমানে গুলি। উভয়পক্ষের আগ্নেয়াস্ত্র গর্জে উঠছে প্রতিটি নিমে।ে সবকিছু উপেক্ষা করে, এমনকি নিশ্চিত মৃত্যুকেও অবহেলা করে সিপাহী হামিদুর রহমান ঝাঁপিয়ে পড়লেন শত্রুর এলএমজি পোস্টের উপর। এলএমজি চালনায় নিয়োজিত দুই শত্রুসেনার সঙ্গে শুরু করলেন ধস্তাধস্তি।

একসময় নিস্তব্ধ হল শত্রুর এলএমজি।
অধিকৃত হল ধলই বর্ডার আউটপোস্ট।

.

বিজয়ী মুক্তিসেনারা এলএমজি পোস্টের কাছে দৌড়ে এসে পেলেন শহীদ হামিদুর রহমানের লাশ। আর তার সাথে নির্জীব আহত দুই শত্রুসেনা। সিপাহী হামিদুর রহমান জেনে যেতে পারলেন না তাঁর জন্যই দখল করা সম্ভব হয়েছে ধলই সীমান্ত-ঘাঁটি।

শোকাহত মুক্তিসেনারা তাঁদের বীর সহযোদ্ধাকে কাছেই আমবাসা গ্রামের মাটিতে চিরনিদ্রায় শায়িত করেন।

কায়সুন-আক্কাসের ছেলে আমবাসাতে মাটির কোলে শুয়ে আছে—এ কথা তাঁরা জানতে পারেন স্বাধীনতা লাভের অনেক পরে। সেনাবাহিনীর একটি চিঠিতে তাঁদেকে জানানো হয়—ধলই সীমান্তে শহীদ হয়েছেন তাঁদের ছেলে। কায়সুননেসার হিরের টুকরো ছেলে এখন সমগ্র জাতির গর্ব।

.

কায়সুননেসা এখনো স্মৃতিচারণ করেন কেমন ছিল তাঁর ছেলে। ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব পরিশ্রমী এবং সাহসী ছিলেন হামিদুর রহমান। ছিলেন সৎ। ভালো হাডুডু খেলতে পারতেন। সমাজসেবামূলক কাজেও ছিলেন উৎসাহী। গ্রামে কেউ মারা গেলে দাফনের কাজে হামিদকেই দেখা যেত সকলের আগে। সেইসঙ্গে জীবনের শৃঙ্খলাও মানতেন সৈনিক হবার অনেক আগে থেকেই। যে-বয়সে মাঠে-ঘাটে দৌড়াদৌড়ি করে খেলে বেড়াবার কথা, সেই বয়সে পিতার সঙ্গে কাজে যেতেন সংসারের দুঃখ লাঘব করার জন্য। নামাজ-রোজার দিকেও যত্নবান ছিলেন। এক ওয়াক্ত নামাজও কাজা করতেন না।

.

স্বাধীনতার কথাও ভাবতেন। মনে করতেন দেশ স্বাধীন হলে দেশের পরিশ্রমী দুঃখীরা দু-মুঠো ভাত পাবেন। এই আশাতেই জীবন বাজি রেখে তা উৎসর্গ করেছেন তিনি। আর এজন্যই আক্কাস আলী ও কায়সুননেসার বীরশ্রেষ্ঠ সন্তান হামিদ গেঁথে দিয়েছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধের মাইলফলকটি।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *