সোনালি

সোনালি

এক ছিল বুড়ো। একদিন তার বউ গেল মরে। বুড়ো থাকে তার মা-মরা মেয়েকে নিয়ে। এইভাবে দিন যায়। একদিন কথা নেই বার্তা নেই বুড়ো আবার বিয়ে করে বসল। নতুন বউয়ের কোলে হল এক মেয়ে। সৎমা দু’চক্ষে দেখতে পারে না আগের পক্ষের মেয়েকে। সারাদিন বুড়োকে গঞ্জনা দেয় আর বলে— ‘দে না ওটাকে বাড়ি থেকে দূর করে।’ প্রথম প্রথম বুড়ো কথাটা কানেই তুলত না। কিন্তু এত গঞ্জনা কি আর সয়? সারাদিন খিটিমিটি, বকাবকি, ঝগড়া। বুড়ি যে থামতে জানে না। বুড়োর প্রাণে আর সয় না। শেষকালে তিতিবিরক্ত হয়ে বুড়ো একদিন বললে, ‘দে বানিয়ে দে একটা ভাল গোল রুটি। মেয়েটাকে নিয়ে যাব ওই গভীর বনে। রুটি দেব গড়িয়ে আর বলব—

‘যা দৌড়ে দৌড়

রুটি আন রুটি আন

সেই ফাঁকে আমি দেব

বাড়িপানে পিটটান।’

উঠব এসে সোজা বাড়ির দাওয়ায়। আর মেয়েটার কপালে যা আছে তাই হবে।’

হিংসুটে সৎমা তো ভারী খুশি। তক্ষুনি ময়দার সঙ্গে ছাই মিশিয়ে বানিয়ে দিলে একটা গোল মোটা রুটি। তারপর একটা থলেতে রুটিটা পুরে বুড়োকে বললে, ‘এই নে।’ বুড়ো মেয়ের হাত ধরে রুটির থলে কাঁধে ঝুলিয়ে চলল বনের দিকে। সে কী গভীর বন। পথ চলে সময় চলে। গ্রাম পেরিয়ে চড়াই ভেঙে তারা উঠল একটা টিলার উপর। বুড়ো এবার আস্তে আস্তে থলি থেকে সেই রুটিটা বের করলে। তারপর দিল সেটাকে গড়িয়ে।

‘ওই যাঃ, গেল গেল রুটিটা গড়িয়ে গেল। যা যা ছোট ছোট রুটিটা কুড়িয়ে আন তো মা। নয় তো খাবি কী?’ বুড়ো মেয়েকে বলে। বুড়োর মেয়ে তো আর কিছু জানে না। সে ছুটল রুটির পিছন পিছন। রুটি ঢাল বেয়ে গড়ায় আর মেয়েটি দৌড়োয়। আর বুড়ো এদিকে দে চম্পট। সোজা এসে উঠল বাড়ির দাওয়ায়।

একটু পরেই রুটিটা নিয়ে মেয়েটি ফিরে এল। বাবা বাবা বলে কত ডাকলে। কিন্তু কোথায় কে? সন্ধ্যা পর্যন্ত মেয়েটি কেঁদে কেঁদে সারা বন বাবাকে কত খুঁজলে। কিন্তু কিছুতেই পেল না। সেই বনেই থাকত এক বুড়ি তার ছোট্ট কুঁড়েঘরে। বুড়ির কানে গেল কে যেন কাঁদছে আর ডাকছে। সাতব্যাঁকা লাঠিটায় ভর দিয়ে বুড়ি এসে দাঁড়াল চৌকাঠের উপর। তারপর এদিক ওদিক তাকিয়ে বললে, ‘কে গো মেয়ে নাকি? মেয়ে হলে বাছা ঘরে আয়। আর যদি ছেলে হোস তো দূর হ।’

উত্তর এল, ‘ওগো আমি মেয়ে গো।’

‘মেয়ে তো, ভাল হল। আয় বাবা ঘরে আয়।’ মেয়েটি এসে বুড়ির কুঁড়েঘরে ঢুকল। বুড়ি তাকে নাওয়াল, খাওয়াল, বিছানা করে শোয়াল, তারপর পাশে ঘুম পাড়াল।

পরদিন ভোর হয়েছে কি হয়নি, আকাশে রং ধরেছে কি ধরেনি মেয়েটি উঠে পড়ল। বিছানা মাদুর গুছিয়ে রাখল। কুঁড়েঘরটি ঝাঁটপাট দিয়ে তকতক ঝকঝক করে ফেলল। বুড়ি কিন্তু তখনও ঘুমোচ্ছে। একটু পরে বুড়ি উঠল। হাতমুখ ধুয়ে, জামাকাপড় ছেড়ে চলল বনে ব্যাঙের ছাতা কুড়োতে। বুড়ির বাড়িতে তার পুষ্যি ছিল নানা। হরেকরকম জীবজন্তু। সবাই তাদের ভয় পায়। সাপ, গিরগিটি, বাদুড়, প্যাঁচা, কচ্ছপ, ব্যাং আরও কত কী। বনে যাবার আগে বুড়ি ওই মেয়েটিকে বলে গেল, দেখ ‘কাসা’* তৈরি করে ওদের খাওয়াবি। ভয় নেই। কামড়াবে না। ওরা ভারী লক্ষ্মী।’ মেয়েটি কাসা বানালে। মস্ত একটা পাত্রে ঢেলে দিল জুড়োতে। তারপর বুড়ির পুষ্যিদের পেট পুরে খাওয়াল। মেয়েটির গলায় একটা মণিমুক্তোর হার ছিল। সেই এক-একটা পাথর খুলে খুলে ছোট ছোট অনেকগুলি মালা করে বুড়ির পুষ্যিদের গলায় পরিয়ে দিল।

বুড়ি বাড়ি ফিরতেই অমনি তার পুষ্যির দল একবাক্যে সেই মেয়েটির কত প্রশংসাই না করল। তারপর গয়না দেখায় আর বলে, ‘দেখো বুড়িমা কেমন হার দিয়েছে। দেখো দেখো কেমন বাহার, কী সুন্দর।’

‘বাঃ বাঃ খাসা দেখাচ্ছে তো।’ বুড়ি বলে। ‘আমিও ওই মেয়েটাকে ভাল কিছু উপহার দেব। দেখি কী দিই।’

বুড়ির কুঁড়েঘরের অদূরে বয়ে চলেছে ছোট একটা নদী। দুপুরে খাওয়াদাওয়া সেরে বুড়ি মেয়েটিকে নিয়ে গেল নদীতে। নদীর ধারে বুড়ি পা ছড়িয়ে আরাম করে বসলে। মেয়েটিকে বলে, ‘দে তো বাছা আমার মাথাটা বেছে।’

মেয়েটি বুড়ির মাথার পাকাচুল বাছতে লাগল। বুড়ি বলে, ‘আমার ঢুলুনি আসছে। হয়তো ঘুমিয়েই পড়ব। দেখো বাছা নদীর জল কিন্তু একটু পরে লাল হয়ে যাবে। খবরদার তখন কিন্তু আমার ঘুম ভাঙিয়ো না। তারপর জল গাঢ় নীল হবে। তারপর কালো। আর তারপর সোনালি। যেই সোনালি জল দেখবে অমনি আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেবে। দেখো সাবধান, আগেও নয় পরেও নয়।’ এই বলে তো বুড়ি ঘুমিয়ে পড়ল।

নদীর জল লাল হল,

লাল জল বয়ে গেল।

নদীর জল নীল হল,

নীল জল বয়ে গেল।

নদীর জল কালো হল,

কালো জল বয়ে গেল।

সব শেষে নদীর জল ধরল সোনার রং।

মেয়েটি অমনি ‘বুড়িমা ওঠো ওঠো’ বলে চিৎকার করে দিল বুড়িমার ঘুম ভাঙিয়ে। ঘুম ভেঙেই বুড়ি মেয়েটির চুলের মুঠি ধরে দিল ওকে ছুড়ে নদীর জলে ফেলে। তারপর চেঁচিয়ে বলল,

‘যা পড়বে হাতে,

তুলবি সাথে সাথে।’

একবার, দু’বার দশবার বললে। মেয়েটির হাতে যা ঠেকল সে ধরল সেটা চেপে। তারপর বুড়ি আর সেই মেয়েটি মিলে বোঝাটা হেঁইয়ো মারি জোয়ান মারি বলে ডাঙায় টেনে তুললে।

মেয়ের হাতে পেটি ধরা

তাতে আছে মোহর ভরা।

বুড়ি এবার মেয়েটিকে এগিয়ে দিলে বনের ধার পর্যন্ত। বাড়ি ফেরার পথ দেখিয়ে দিলে। তারপর? তারপর—

দু’জনায় ছাড়াছাড়ি

পেটি মাথায় সোনার মেয়ে

চলল বাড়ি তাড়াতাড়ি।

মেয়েকে বাড়ি ফিরতে দেখে বুড়ো-বুড়ি তো তাজ্জব বনে গেল। নিজেদের চোখকেই বিশ্বাস হয় না। কী অপরূপ রূপের ডালি কন্যা। সোনা দিয়ে ধোওয়া গায়ের রং। মেয়েটি এবার পেটিটা বাবার হাতে তুলে দিল। সোনার মোহর বোঝাই পেটি। আর সৎমা? তার মনে কোনও শান্তি নেই। একদণ্ড স্থির থাকতে পারে না। হিংসেয় মরে। দাঁত কড়মড় করে। বুড়ি বুড়োকে আড়ালে ডেকে বলে, ‘যাও তো বাপু, এখুনি আমার মেয়েটাকেও গভীর বনে রেখে এসো। বড় সাধ আমার মেয়েটারও যেন অমন আলোয় ধোয়া রূপ হয়। যাও, যাও, আর দেরি কোরো না।’ সৎমা বলেই চলে।

বুড়ো আর কী করে রাজি হয়ে গেল।

সৎমা বসে গেল এবার ভাল করে রুটি বানাতে। সাদা সাদা ময়দা দিয়ে, ঘি চপচপে রুটি বানালে। তারপর পরিষ্কার গামছায় বেঁধে বুড়োকে দিলে।

এক হাতে সৎমেয়ে অন্য হাতে গামছায় মুড়ে রুটি নিয়ে বুড়ো চলল গভীর বনে। গ্রাম পেরিয়ে উঠল এসে সেই টিলার উপর। রাস্তাটা ঠিক যেখানটাতে বেঁকে গেছে ঠিক সেইখানটিতে দিল রুটিটা গড়িয়ে। সৎমেয়েকে পাঠালে রুটি কুড়িয়ে আনতে আর নিজে দে চম্পট। সোজা এসে উঠল বাড়ির দাওয়ায়। মেয়েটি রুটি নিয়ে ফিরে এসে কত ডাকল। কত কাঁদল। কত খুঁজল। তারপর কাঁদতে কাঁদতে চলল যেদিকে দু’চোখ যায় সেদিকে। বিদ্যুৎ চমকায়। সেই বুড়ি শোনে বাজ-বিদ্যুতের রাতে কে যেন কাঁদছে। হেঁকে বললে, ‘কে গো কে কাঁদে? মেয়ে যদি হোস তবে ঘরে আয়। আর যদি ছেলে হোস তবে দূর হ।’

‘না গো আমি মেয়ে।’

‘মেয়ে তো ভাল হল। আয় বাছা ঘরে আয়।’

মেয়েটি বুড়ির ঘরেই ঠাঁই নিলে। বুড়ি তাকে নাওয়াল খাওয়াল বিছানা করে শুতে দিল। পাশে বসে ঘুম পাড়াল।

সকাল হল। বুড়ি উঠল। তবে উঠল সৎমেয়ে। না গোছাল বিছানা মাদুর, না দিলে ঝাঁটপাট। বুড়ি হাতমুখ ধুল, জামাকাপড় ছাড়ল তারপর চলল বনে ব্যাঙের ছাতা কুড়োতে। যাবার আগে মেয়েটিকে ডেকে বলে গেল, ‘এই রইল আমার পুষ্যির দল। কাসা বানিয়ে সক্কলকে খাওয়াবি। ভয়ের কিছু নেই। ওরা কামড়ায় না।’ মেয়েটি বুড়ির কথামতো কাসা তৈরি করল। জুড়োতে না দিয়েই সক্কলকে ধরে গিলিয়ে গিলিয়ে খাইয়ে দিল। বুড়ির পুষ্যিদের জিব ঠোঁট পুড়ে একসা কাণ্ড।

বুড়ি বাড়ি ফেরার সঙ্গে সঙ্গে তার পুষ্যির দল একসঙ্গে নালিশ করল। ‘দেখো, দেখো, তোমার ওই মেয়ে আমাদের কী দশাই না করেছে। জ্বলে পুড়ে আর কিছু নেই।’

‘তাই নাকি? তবে তো কোনওদিন বেটি আমাকেও পুড়িয়ে মারবে।’ বুড়ি মনে মনে বলে। দুপুরবেলা খাওয়াদাওয়া চুকলে মেয়েটিকে সঙ্গে করে বুড়ি গেল নদীর ধারে। নদীর ধারে পা মেলে বসে বুড়ি মাথা পেতে চুল এলিয়ে দিল। বলল, ‘নে মাথাটা একটু বেছে দে দেখি। কেমন যেন ঢুলুনি আসছে। হয়তো সত্যি সত্যিই আমি ঘুমিয়ে পড়ব। নদীর জল একটু পরেই লাল হয়ে যাবে। তখন যেন আমার ঘুম ভাঙাস না। তারপর সবুজ জল বইবে। তখনও আমার ঘুম ভাঙাস না। তারপর সোনালি জল বইবে, তখনও না। তারপর যখন কালো জল বইবে তখন আমার ঘুম ভাঙিয়ে দিবি। খবরদার আগেও না পরেও না।’ এই বলে বুড়ি তো ঘুমিয়ে পড়ল। এদিকে—

নদীর জল লাল হল,

লাল জল বয়ে গেল।

নদীর জল সবুজ হল,

সবুজ জল বয়ে গেল।

নদীর জল সোনা হল

সোনালি জল বয়ে গেল।

এবার নদীর জল কালো হল— আর সৎমার মেয়েটি ধাক্কা মেরে দিল বুড়ির ঘুম ভাঙিয়ে। ঘুম ভাঙতেই বুড়ি সৎমায়ের মেয়ের চুল ধরে দিল ছুড়ে জলে ফেলে। আর চেঁচিয়ে বলতে লাগল,

‘যা পড়বে হাতে

তুলবি সাথে সাথে।’

মেয়েটির হাতে ঠেকল একটা পেটি। টেনে তুলল ডাঙায়। খুলে দেখে,

‘ওমা এ কী

(এ যে) সাপ ব্যাঙ বিছে দেখি!’

শুধু কি তাই? গিরগিটি, টিকটিকি, কিছু বাদ নেই। তারপর বুড়ি মেয়েটির মাথায় পেটি চাপিয়ে দিল। তারপর তাকে বনের ধার পর্যন্ত এগিয়ে বাড়ি ফেরার রাস্তা বাতলে দিল। তারপর নিজে ফিরে এল নিজের কুঁড়েতে। মেয়েকে দেখে সৎমায়ের তো হাঁটু কাঁপে থরথর, মাথা করে টনটন— এ কী গো মেয়ে যে পোড়া কাঠ! অনেক আশা করে মা তাড়াতাড়ি পেটি খোলে। হায় হায় এ যে সাপ ব্যাং বিছেতে ভরা! সৎমা গলা সপ্তমে তুলে চেঁচাতে থাকে বুড়োর উদ্দেশে। ‘কোথাকার আহাম্মক জুটেছে। আমার মেয়েটাকে কোথায় দিয়ে এসেছিলি হতভাগা!’ আরও কত বিশেষণ।

থতমত খেয়ে বুড়ো বলে, ‘আমি আর কোথায় দিয়ে আসব। প্রথমটিকে যেখানে রেখে এসেছিলাম তোরটিকেও তো সেখানেই রেখে এলাম। তারপর তারা কোথায় গেল, কী হল, কেমন করে হল সেসব কথা আমি জানিনে বাপু।’

এরপর থেকে সুন্দরী সোনালি সৎমেয়ে তো সৎমায়ের আরও চক্ষুশূল হল। সৎমায়ের এক চিন্তা কী করে মেয়েকে দূর করে দেবে। এদিকে তো সোনালি বড় হল। পাড়ার লোকে আদর করে সোনালি বলেই ডাকে। যেমন রূপ তেমনি মিষ্টি কথাবার্তা। বিয়ের বয়স হল। সোনালির রূপ আরও বাড়তে লাগল। সোনালির রূপের কথা জারের ছেলে যুবরাজের কানে পৌঁছোল। যুবরাজ জেদ ধরে বসল ওই মেয়েকেই বিয়ে করবে। এমন সুন্দরী মেয়ে মেলা ভার। দেশজোড়া তার রূপগুণের সুখ্যাতি। বরের বাড়ির লোকজন এল সুন্দরী সোনালির খোঁজে। এদিকে সৎমা করেছে কী সোনালিকে সিন্দুকের তলায় লুকিয়ে রেখে কালো ভুষোর মতো তার নিজের মেয়েকে সাজিয়ে-গুছিয়ে ওড়নার তলায় লুকিয়ে সভায় আনল। আর মেয়েকে বলে দিল, ‘সাবধান, ওড়নার তলা দিয়ে কেবল আঙুলের ডগাটুকু বের করবি। খবরদার আর কিচ্ছুটি না।’

বিয়ের কথা পাকা হল। বিয়ে শাদি হয়ে গেল। এবার বরের বাড়ির লোকজন নতুন বউ নিয়ে ঘরে যাবে। আয়োজন সারা। নতুন বউ চলল শ্বশুরবাড়ি।

আর মোরগ হেঁকে বলে কী—

‘কোঁকর কোঁকর কোঁ

কোঁকর কোঁকর কোঁ

সোনার মেয়ে রইল বসে সিন্দুকটার তলে,

কালো মেয়ে পালকি চড়ে শ্বশুরবাড়ি চলে।’

শ্বশুরবাড়ির লোকজন কথাটা শুনলে। ফিরে তাকাল। কিন্তু গ্রাহ্য করলে না। বরকনে নিয়ে তারা এগিয়ে চলল।

মোরগ আবার হেঁকে বললে,

‘কোঁক্কোর… কোঁ…কোঁক্কর…কোঁ…

সোনার মেয়ে রইল বসে

সিন্দুকটার তলে,

(আর) কালো মেয়ে পালকি চড়ে

শ্বশুরবাড়ি চলে।’

শ্বশুরবাড়ির লোকজন এবার আরও অবাক হল। ভাবলে কিন্তু থামলে না। মোরগ বারবার তিনবার হাঁকলে—

‘কোঁক্কর… কোঁ… কোঁক্কোর কোঁ…

সোনার মেয়ে রইল পড়ে

সিন্দুকটার তলে

আর কালো মেয়ে পালকি চড়ে

শ্বশুরবাড়ি চলে।’

এইবার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হুঁশ হল। তারা নতুন বউয়ের ঘোমটা খুলে দেখে— ওমা… এ যে এক কালো কুচ্ছিত মেয়ে। তারা তক্ষুনি পালকি, বেহারা, বর, বরকন্দাজ সব ঘুরিয়ে ফিরে এল বুড়োর বাড়িতে। তারপর তন্নতন্ন করে খুঁজতে লাগল সুন্দরী সোনালিকে। খুঁজতে খুঁজতে দেখে সত্যিই তো সিন্দুকের তলে বসে আছে চোরাকুঠুরিতে অপরূপ এক সোনালি কন্যা। তাড়াতাড়ি তাকে বের করে, নতুন জামাকাপড় এনে সাজালে তারপর পালকিতে চাপালে। এবার চলল সিধে নিজেদের রাজ্যে। দেশে ফিরে সে যা বিয়ের ধুম কী বলব। সবাই তো মহাখুশি। এমন অপূর্ব বিয়ে আগে কেউ কোনওদিন দেখেনি। যাক শেষ পর্যন্ত জারের ছেলের সঙ্গে সোনালির বিয়ে হল। আর হিংসুটে সৎমায়ের কালো মেয়ে বাড়িতে বসে রইল।

আর উঁচু গাছের ডালে বসে মোরগভায়া হাঁক দিলে,

‘আরে কোঁকর কোঁকর কীহে?

জারের ছেলের সঙ্গে হল

সোনার মেয়ের বিয়ে,

(আর) কালো মেয়ে গোমড়া মুখে

বসল ঘরে গিয়ে।

আরে কোঁকর কোঁকর কীহে?’

* পরিজ

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *