সোনার ঠাকুর মাটির পা

সোনার ঠাকুর মাটির পা

সভাভঙ্গের পর হল থেকে বেরিয়ে আসছি, হঠাৎ আমার পিঠের উপর ছোট্ট একটি কিল। ভাবি ভিড়ের চাপে কারও হাত ঠেকে গেছে। তাই কিল খেয়ে কিল চুরি করি। ট্রামে বাসে অমন তো কত হয়। কিন্তু কিলের পর চড় পড়তেই আমার হুঁশ হয়।

পেছন ফিরে দেখি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের নবকলেবর। তেমনি শীর্ণ ঋজু দেহযষ্টি। কাঁচা-পাকা একমুখ দাড়ি-গোঁফ। চোখের দুষ্টু হাসি। হ্যাঁ, তেমনি কিল চড় আদরের পদ্ধতি। সে কি জীবনে ভোলা যায়!

‘কী রে, চিনতে পারছিসনে! হা হা হা হা হা!’ জড়িয়ে ধরে বলেন নব প্রফুল্ল। হাসিটা কিন্তু আচার্যদেবের নয়।

‘চিনতে পারছি বই কী, কিন্তু নামটি তো মনে আসছে না।’ আমি সংকোচের সঙ্গে বলি, ইদানীং আমার স্মরণশক্তি দুর্বল হয়েছে। নামগুলোই ভুলে যাই, মুখগুলো মনে থাকে।

‘হাসালি। হা হা হা হা হা! বদনদাকে এর মধ্যেই ভুলে গেলি? আউট অফ সাইট আউট অফ মাইণ্ড’। তিনি আরও গুটিকয়েক কিল চড় মারেন।

‘আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের প্রিয় শিষ্য না হলে অমন সুমধুর করস্পর্শ আর কার হবে। কিন্তু বাইশ বছর বাদে হঠাৎ রিপ ভ্যান উইঙ্কলের মতো তুমি উদয় হলে কোন বনান্ত থেকে? আমি তো জানতুম তুমি পাকিস্তানে বাস করছ।’ আমি চিনতে পারি ও দুই হাত ধরে নাড়ি।

‘কেন, পাকিস্তানে যাব কোন দুঃখে? আমার বাড়ি যদিও ওপারে, আশ্রম তো এপারে—বালুরঘাট মহকুমায়। তবে আশ্রম ছেড়ে কোথাও বড়ো-একটা যাওয়া হয় না। চার-পাঁচ বছর অন্তর একবার কলকাতা ঘুরে যাই, পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করি। তোর সঙ্গে দেখা হয় না তার কারণ তুই শান্তিনিকেতনে থাকিস।’ তিনি আমার সঙ্গে চলতে চলতে বলেন।

‘এখন কিছুদিন থেকে কলকাতায়। কেউ তোমাকে জানায়নি?’ আমি বিস্মিত হই।

‘না। এমনি খবরের কাগজে দেখলুম আজ তোর বক্তৃতা আছে। তাই তো দেখা পেলুম। যাক, তুই আমাকে ভুলে যাসনি তাহলে।’ বলে তিনি আবার আদর করেন।

‘কী যে বল, বদনদা! পঞ্চাশ বছরের বন্ধুতা কি ভোলা যায়? চলো, আমার সঙ্গে চলো।’ এই বলে ওঁকে আমার জন্যে আনা গাড়িতে তুলি।

বদনদা খদ্দরের ঝোলাসমেত গাড়িতে উঠে বসেন।

‘সত্যি, পঞ্চাশ বছর এমন কিছু বেশি সময় নয়। এই তো সেদিনকার কথা। তোর সঙ্গে যেদিন প্রথম আলাপ পুরীর জগন্নাথের মন্দিরে। তোর ঠাকুমার সঙ্গে তুই, আমার জ্যাঠাইমার সঙ্গে আমি। চার জনে মিলে মহাপ্রসাদ ভাগাভাগি করে সেবা করি। মন্দিরের চত্বরে রোজ আমাদের দেখা ও সেবা হত। ধর্মে মতি ছিল না মহাপ্রসাদে রুচি ছিল বলা শক্ত। তারপর কলকাতা ফিরে এসে বিজ্ঞান কলেজে ভরতি হই। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্রের সংস্পর্শে আসি। ওসব পুজোআর্চা আর ভালো লাগে না। এবার থেকে দরিদ্রনারায়ণই আমার দেবতা। মহাপ্রসাদ হচ্ছে তাঁরই সেবার অন্ন। তার থেকে তিনি দয়া করে যা দেন সেইটুকুই আমার ভোজ্য।’ গাড়িতে বসে বলে যান বদনদা।

‘তারপর তোমাকে আবার দেখি চার বছর বাদে পাটনায়।’ আমার মনে পড়ে যায়।

‘সেই চার বছরের ভিতরেই আমি অন্য মানুষ হয়ে যাই। গান্ধীজির ডাকে অসহযোগে ঝাঁপ দিতে গিয়ে কলেজ ছাড়ি, বিজ্ঞান ছাড়ি, আচার্যদেবকেও ছাড়ি। খদ্দরের ব্রত নিয়ে গ্রামে গ্রামে ঘুরি। সারা উত্তরভারত পরিক্রমা করি। হ্যাঁ, ইতিমধ্যে জেলেও যেতে হয়। সেটা আমার অগ্নিমন্ত্রে দীক্ষা। শুধু গঠনের কাজ তো লক্ষ্য নয়, লক্ষ্য স্বাধীনতা। তারজন্যে সত্যাগ্রহ। আমিও একজন সৈনিক।’ বদনদা রোমন্থন করেন।

গুজরাতে গান্ধীজির সঙ্গে সবরমতী আশ্রমে মাস কয়েক কাটিয়ে সেই যে প্রব্রজ্যা নেন তার সমাপ্তি ঘটে অসমে। তারপর গান্ধীজিরই আদেশে তিনি আশ্রম স্থাপন করে সেইখানেই স্থির হয়ে বসেন। উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর জেলায়। তাঁর বাড়ির খুব কাছে। সেখানে তিনি কেবল খাদি তৈরি করেন তা নয়, সঙ্গে করেন টিনের কাজ। টিন কেটে লণ্ঠন, ল্যাম্প, কুপি। তার সঙ্গে যোগ দেয় লোহার কাজ—লাঙলের ফাল, দা, কাটারি, ছুরি, কাস্তে, কোদাল। কাঠের কাজও সঙ্গে সঙ্গে চলে।

‘তৈরি করা তত কঠিন নয়, বিক্রি করা যত কঠিন। হাটে হাটে পাঠাতুম, জলের দরে ছাড়তুম। ঘর থেকেই লোকসানের কড়ি জোগাতে হত। বাবা ছিলেন পৃষ্ঠপোষক। স্বদেশি যুগে উনিও রকমারি পরীক্ষানিরীক্ষা করে বিস্তর টাকা জলে দিয়েছিলেন।’ দাদা বলেন।

‘আমার মনে আছে তোমার আশ্রমের লণ্ঠন আমি রোহনপুরের হাটে কিনেছিলুম। তোমার সঙ্গেও দেখা হয় তার কিছুদিন বাদে। তুমি তখন সত্যাগ্রহ করে বেড়াচ্ছ—বেআইনি নুন তৈরি। তোমাকে গ্রেপ্তার করতে বলেছিল, করিনি। তুমিও আমাকে বিব্রত করবে না বলে অন্যত্র ধরা পড়েছিলে।’ কবেকার সব কথা মনে পড়ে আমার।

‘গ্রেপ্তার হলে তোর হাতে না হওয়াই ভালো। আমার তখন অর্জুনবিষাদ। তোরও তাই। ইংরেজের সঙ্গে ভারতীয়ের সংগ্রাম যেন তোর সঙ্গে আমার সংগ্রাম না হয়।’ বদনদা আর একবার হেসে ওঠেন। হা হা হা হা হা।

‘হ্যাঁ, তোমার ট্রায়াল হত আমারও ট্রায়াল। তোমার ভাগ্যে নুন অন্য জায়গায় পাওয়া গেল। আমারও ভাগ্যে বলতে পারি।’ আসলে নুন নয়, নোনামাটি।

আরও কতক্ষণ স্মৃতিচারণের পর বদনদা হঠাৎ চিন্তার মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে বলেন, ‘কিন্তু এত কান্ড করে শেষটা কী লাভ হল রে? সে সব অঞ্চল তো এখন পাকিস্তানে।’

দুজনেই চুপ করে থাকি। মোটর ততক্ষণে চৌরঙ্গি দিয়ে ছুটেছে।

‘হা হা হা হা হা। তুই-না আমাকে বলেছিলি স্বাধীনতার দিন যে আমাদের নতুন রাজত্ব দুশো বছর টিকবে। বাইশ বছর যেতে-না-যেতে এ কী দেখছি! চতুর্দিকে ফাটল, চতুর্দিকে ভাঙন, যেন মোগল রাজত্বের শেষ দশা। যে রেটে জল ঢুকছে জাহাজ ডুবতে কতক্ষণ! জোর দশ বছর।’ বদনদার গলা কাঁপে।

‘ও কী বলছ বদনদা!’ আমি ওঁর নৈরাশ্য সহ্য করতে পারিনে।

‘না না, হাসির কথা নয়। আমি বড়ো দুঃখেই হাসছি রে। গান্ধীকে খুন করে তাঁর গুণ গাওয়া হচ্ছে ইনিয়েবিনিয়ে। একজনও মানুষ বিশ্বাস করে না যে এ স্বাধীনতা মিলিটারি ভিন্ন আর কেউ রক্ষা করতে পারে। অথচ বাপু বেঁচে থাকলে সবাই বিশ্বাস করত যে মিলিটারি নয়, তিনিই পারতেন রক্ষা করতে।’ বদনদা আদ্রকন্ঠে বলেন।

আমরা ফিরছিলুম গান্ধী শতবার্ষিকী সভায় যোগ দিয়ে। বদনদার কলকাতা আসার উদ্দেশ্যও তাই। প্রবীণ গান্ধীবাদীরা দেশের নানা স্থান থেকে এসে জড়ো হন। দেখেন দেশের লোক চলে যাচ্ছে তাঁদের আয়ত্তের বাইরে। তাঁরা মুষলপর্বের অর্জুনের মতো অসহায় দর্শক। দস্যুদের বিরুদ্ধে গান্ডীব তুলবেন যে, গান্ডীবই তাঁদের চেয়ে ভারী।

‘মস্ত ভুল করেছি বিয়ে করে।’ বদনদা হারানো খেই হাতে নিয়ে বলেন। ‘বাপুর বারণ ছিল, স্বরাজ না হওয়া তক বিয়ে কোরো না। তার মানে কি এই যে, স্বরাজ হতে না হতেই বিয়ে করতে পার? তোর সঙ্গে শেষ দেখার পর চটপট বিয়ে করে ফেলি। মেয়েটি আমার জন্যে পার্বতীর মতো তপস্যা করছিল। আমারও দরকার ছিল আশ্রমের জন্যে একজন লেডি ডাক্তার। বিয়ের পরেও অসিধার করতে যাচ্ছিলুম, কিন্তু বিনতাকে তার মাতৃত্বের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত হত না, অধর্ম হত। তেমনি সুনুকেও জন্মলাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অন্যায় হত। সুনু—সুবিনয়, আমাদের একমাত্র সন্তান। কলকাতায় ওর এমএ পড়ার একটা কিনারা করে দিতে পারিস?’

ভাগ্যিস গাড়ির ড্রাইভার ছিল হিন্দুস্থানি, নইলে শুনে কী মনে করত!

‘বিয়ে করে তুমি ভুল করেছ কেন ভাবছ? ব্রহ্মচর্যের পর গার্হস্থ্য, এইরকমই তো শাস্ত্রে লেখে। বয়সটা অবশ্য বানপ্রস্থের। ‘‘ভুল’’ বলছ সেইজন্যেই কি?’ আমি শুধাই।

‘সেটাও একটা কথা বই কী। কিন্তু সেইজন্যে নয়। বিয়ে যতদিন করিনি ততদিন দেশের ভবিষ্যৎ ছাড়া আর কারও ভবিষ্যৎ ভাবিনি। বিয়ের পরে বাপ হয়ে অবধি ছেলের ভবিষ্যৎই ভেবেছি, দেশের ভবিষ্যৎ নয়। তোর কাছে গোপন করে কী হবে, ছেলেকেই আমি আশ্রমের ট্রাস্টি করে যেতে চেয়েছিলুম। আশ্রমটা যে আমারই ব্যক্তিগত অর্থে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত তা বোধহয় জানিস।’ বদনদা খুলে বলেন।

‘ভালোই তো। সুনুরও একটা জীবিকা জোটে।’ আমি মন্তব্য করি।

‘সুনু কী বলে শুনবি? বলে, আমার ওতে বিশ্বাস নেই। অহিংসাতেও না। ওর মতে মহাত্মা তাঁর কাজ যা, তা চুকিয়ে দিয়ে গেছেন, আর কারও জন্যে বাকি রেখে যাননি।’ বদনদা কাঁদো কাঁদো ভাবে বলেন।

‘তাই নাকি? তা হলে সুনুর ভবিষ্যৎ কোন পথে?’ আমি জিজ্ঞাসু হই।

‘পাস, চাকরি, বিয়ে—গতানুগতিক পথে। নয়তো ছাত্র রাজনীতি, তার থেকে কমিউনিজম, তার থেকে নকশালপন্থা। তোরা পাঁচজনে ওকে সৎপরামর্শ না-দিলে ও যে একদিন বোমা ছুড়বে না তাই-বা কী করে জানব? হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী। সুনু কি দুনিয়ার বার!’ বদনদা আমার হাতে হাত রেখে থরথর করে কাঁপেন।

দুই

আমার কুকুর বিন্দি আমাকে অভ্যর্থনা করতে ছুটে আসে। বদনদাকে দেখে তাঁকেও চার পা তুলে সংবর্ধনা জানায়। তিনি ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দেন। বলেন, ‘আমারও এরকম একটি পাহাড়ি কুকুর আছে। একটুও হিংস্র নয়।’

‘কই, আমার বোনটিকে দেখছিনে কেন?’ দাদা আসন নিয়ে বলেন।

‘তিনি অনেক দিন বাদে বাপের বাড়ি গেছেন। থাকলে কত খুশি হতেন তোমাকে দেখে।’ এরপর আমি তাঁকে চা অফার করি।

‘দিলে ‘‘না’’ বলব না। আশ্রম থেকে ও-পাপ বিদায় করতে পারিনি। আমার বউ তো দিনে সাত-আট কাপ খায়। লেডি ডাক্তার কিনা, চাঙ্গা হওয়া চাই। তবে সুনুকেও সমান চাতাল করে তুলেছে। এখন ও কলকাতায় এসে চায়ের দোকানে বা কফি হাউসে আড্ডা দেবে তো। চা-বাগানের কুলির রক্ত চুষবে।’ দাদা বিমর্ষ হন।

‘চা থেকে কত বিদেশি মুদ্রা আসে খবর রাখ, বদনদা? অত বড়ো একটা ইণ্ডাস্ট্রি উঠে যায় এই কি তোমার মনের ইচ্ছা?’ আমি তর্ক করি।

‘ওই বিদেশি মুদ্রাই তোরা বুঝিস। শুনতে পাই বাঁদর চালান দিয়েও বিদেশি মুদ্রা লুটছিস। এর একটা নৈতিক দিক আছে সেটা কেউ দেখবে না। দেখবে শুধু ভৌতিক দিকটাই। অমনি করেই নাকি দেশ ধনবান হবে, বলবান হবে।’ দাদা ফুৎকার করেন।

আমি চা ঢেলে দিই। বিস্কুট এগিয়ে দিই।

‘আবার বিস্কুট, কেন মুড়ি ঘরে নেই? আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র মুড়ি খেতেন ও খাওয়াতেন। খেয়েছিস ওঁর সঙ্গে আত্রাইতে। মনে নেই।’ দাদা মনে করিয়ে দেন।

‘কিন্তু বিস্কুট তো এখন আমরাই তৈরি করছি।’ আমি আবার তর্ক করি।

‘মদও তো আজকাল আমরাই চোলাই করছি। মৈশুরে আঙুর ফলছে। কিন্তু গরিব দেশবাসীকে বিস্কুট ধরিয়ে ওদের মাথা খাওয়া কি পাপ নয়? এরপরে মদও ধরাব তো। একবার যদি ও-রসের স্বাদ পায় তবে বঙ্গোপসাগর হবে মদ্যোপসাগর। সাগর শুষে ফেলবে অগস্ত্য ঋষির বংশধর আমাদের তৃষ্ণার্ত দেশবাসী।’ দাদা শিউরে ওঠেন।

মুড়িও ছিল বাড়িতে। দাদা বিস্কুট ঠেলে দিয়ে মুড়ি নিয়ে বসেন। বলেন, ‘আমার সবচেয়ে ভালো লাগে মোটা চালের ভাত, তার পরেই মুড়ি। পেটও ভরে, মনও ভরে।’

আমরা দুজনে ছাদে যাই। আরামকেদারা নিয়ে বসি। দিকে দিকে তেতলা চার-তলা বাড়ি। সাত-তলা আট-তলাও দেখা যায়। দাদা চোখ বুজে বলেন, ‘এ তোরা করছিস কী? এ যে সোনার ঠাকুর মাটির পা।’

কথাটা এককালে আইরিশ কবি জর্জ রাসেলের বইয়ে পড়েছিলুম। যাঁর ছদ্মনাম এ ই। দাদা মনে পড়িয়ে দিলেন।

‘তোদের সভ্যতা, তোদের সংস্কৃতি, তোদের রাষ্ট্র, তোদের সমাজ এই বাইশ বছরে সোনার ঠাকুরের আকৃতি নিয়েছে। কিন্তু পা দুটি তো মাটির। সেই শ্রমিক আর সেই কৃষক। তাদের না আছে পুঁজি, না আছে জমি। গ্রামে গেলে দেখবি চড়া সুদে কর্জ করছে, যেটুকু আছে সেটুকুও বিকিয়ে যাচ্ছে। ধনী আরও ধনী হচ্ছে, গরিব আরও গরিব হচ্ছে। সোনার ঠাকুর একদিন দেখবেন যে তাঁর মাটির পা আর বইতে পারছে না। এমন মাথাভারী ব্যবস্থা কেউ কি পারে বইতে? তখন কী হবে জানিস? না কি আমাকে মুখ ফুটে বলতে হবে?’ দাদা আমাকে হাতের কাছে পেয়ে ভয় দেখান।

‘সেইজন্যেই তো সোশ্যালিজমের কথা উঠেছে।’ আমি কাটান দিই।

‘ওর মানে কী, রজত? আমার অল্পবিদ্যায় এই বুঝি যে, রাষ্ট্রই হবে সমস্ত অর্থের মালিক, যেমন সমস্ত অস্ত্রের মালিক। এক হাতে অস্ত্রের মনোপলি আর অন্য হাতে অর্থের মনোপলি নিয়ে রাষ্ট্রই হবে হিরের ঠাকুর। কিন্তু মাটির পা তো যেমনকে তেমন রয়ে যাবে। না কি পাথরের পা হয়ে যাবে?’ বদনদা সংশয়ের স্বরে বলেন।

‘কে জানে। আমরা তো হাতে-কলমে পরখ করে দেখিনি।’ আমি পাশ কাটাই।

‘আমার ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বলে যে অস্ত্র ও অর্থ কেন্দ্রীভূত হওয়া বাঞ্ছনীয় নয়। তার চেয়ে সর্বাধিক বিকেন্দ্রীকরণ শ্রেয়। কিন্তু সে যে কতদিনে হবে, তা আমার জ্ঞানগম্য নয়। মহাত্মা বেঁচে থাকলে তিনিই আলো দিতেন। তাঁর অভাব প্রত্যেক দিনই অনুভব করছি। বরং আরও বেশি করে।’ দাদা বিলাপ করেন।

‘কেন, তিনিই কি বলে যাননি আত্মদীপো ভব?’ আমি সান্ত্বনা দিতে যাই।

‘আত্মদীপ হতে চাইলেও পারছি কোথায়?’ দাদা দাড়িতে হাত বুলোতে বুলোতে বলেন, ‘এই দ্যাখ-না, কালের হাওয়া আমার আশ্রমেও বইছে। কর্মীরা ধর্মঘটের হুমকি দিচ্ছে। ভাগচাষিরাও রায়তি সত্ব দাবি করছে, না দিলে জমি জবরদখল করবে। আমার কি সহানুভূতি নেই? কিন্তু আমি হলুম প্র্যাকটিকাল মানুষ। মজুরি বা মাইনে বাড়ালে বাড়তি দাম খদ্দের দেবে না, অগত্যা সরকারের কাছেই হাত পাততে হবে। তা কি পারি কখনো? আর জমিতে ভাগচাষির রায়তি সত্ব স্বীকার করার পর ও-জমি আর আশ্রমের থাকে না। তাহলে আশ্রমের চলে কী করে?’

‘তাহলে তুমি এক কাজ করো, বদনদা। ওদের সবাইকে পার্টনার করে নাও। ওরা জানুক যে আশ্রমটা ওদেরই।’ আমি পরামর্শ দিই।

‘ও-কথা যে কখনো মাথায় আসেনি তা নয় রজত। কিন্তু দক্ষ কর্মীরা যে যেখানে দু-পয়সা বেশি পাবে সেখানেই চলে যাবে। এই ওদের রীতি। অদক্ষ কর্মীদের স্থিতিও কি সুনিশ্চিত? স্বাধীনতার পূর্বে যাদের পেয়েছি তারা আমাকে ছাড়েনি। সুখে-দুঃখে আমার সঙ্গেই থেকেছে। তাদের অনেকেই মৃত। অনেকে আবার পাকিস্তানে চলে গেছে। নতুন লোক নিয়ে ভাঙা হাট চালিয়ে যাচ্ছি রে। এরা কি অংশীদার হতে চায়, না অংশীদারি পেলে টিকবে?’ বদনদা দাড়ি ছেড়ে মাথায় হাত দেন।

ভাবনার কথা বই কী। আমি চুপ করে থাকি। কিছুদিন আগে আর এক বন্ধুর আশ্রম দেখতে গিয়ে দুঃখিত হয়েছিলুম। হাতিশালে হাতি আছে, ঘোড়াশালে ঘোড়া। লোক আছে লশকর আছে। তবু রাজপুরী খাঁ খাঁ করছে—ঘুমন্ত পুরী। কারণ বন্ধুটি নেই।

এ কাহিনি শুনে বদনদা বলেন, ‘একে একে নিবিছে দেউটি। আমিই-বা আর কদ্দিন! আমার পরে আমারটিও ঘুমন্তপুরী হবে। তাতে প্রাণসঞ্চার করবে কে? বিনতা আমার সহধর্মিণী। তারই তো এ ভার বহন করার কথা। কিন্তু ও কী বলে শুনবি?’

আমি কান পেতে রই। বিন্দি আমার পায়ের কাছে শুয়ে।

‘বিনতা বলে, তোমরা এটার নাম রেখেছ সত্যাগ্রহাশ্রম। এটা তো সেবাশ্রম নয় যে আমিও চালাতে পারব। সত্যাগ্রহাশ্রম করেছ সাবরমতীর অনুসরণে। সেখানকার নিয়ম ছিল শান্তির সময় সংগঠন, সংগ্রামের সময় সত্যাগ্রহ। এখানকার নিয়মও যদি তাই হয় তবে একদিন সত্যাগ্রহের ডাক আসতে পারে। তুমি থাকলে সত্যাগ্রহে নামবে, দ্বিধা করবে না। কিন্তু আমি কি তা পারি? আমার হাতে সবসময়ই একরাশ প্রসূতি ও শিশু। শুনলি তো? আমার নামকরণেই আমি জব্দ। তখন কি ছাই জানতুম যে সত্যাগ্রহের পাট উঠে যাবে?’ বদনদা আক্ষেপ করেন।

‘সত্যি উঠে গেছে না কি?’ আমি প্রশ্ন করি।

‘মেকি সত্যাগ্রহ এখানে-ওখানে হচ্ছে। যারা করছে তারা কেউ গান্ধীবাদী নয়। খাঁটি সত্যাগ্রহ এখন খাঁটি গব্য ঘৃতের চেয়েও দুর্লভ।’ বদনদা হাসেন। কিন্তু হা হা করেন না। করলে হয়তো হাহাকারের মতো শোনাত।

আরও কিছুক্ষণ গল্পসল্প করে আমরা দুজনে ছাদ থেকে নেমে আসি। নৈশভোজনের সময় হয়েছিল। আমি বদনদার জন্যেও রাঁধতে বলে দিয়েছিলুম কিন্তু তার অনুমতি নিইনি। এবার অনুমতি চাই।

‘সে কী! আমি যে আমার শালিপতির অতিথি। ওঁরা যে আমার জন্যে অভুক্ত বসে থাকবেন। অ্যাঁ, করেছ কী রজত!’ তিনি কৃত্রিম কোপ প্রকাশ করেন।

‘সেই যে মহাপ্রসাদ সেবা, এটা তারই একটা অক্ষম অনুকরণ বদনদা। তোমার যেটুকু ইচ্ছা খেয়ো। ওঁদের ওখানকার জন্যে পেটে জায়গা রেখে দিয়ো।’ আমি প্রস্তাব করি।

‘না না, তা কি হয়? তোর সঙ্গে বাইশ বছর বাদে খাচ্ছি। পেট ভরেই খাব। ওঁরা কিছু মনে করবেন না।’ তিনি ঠাণ্ডা হন।

তিন

আহার করতে বসে বদনদা কিছুক্ষণ প্রার্থনা করেন। আশ্চর্য প্রার্থনা। কখনো কারও মুখে ওরকম প্রার্থনা শুনিনি। ঠিক যেন খ্রিস্টানদের গ্রেস বিফোর মিট। আমিও মনে মনে উচ্চারণ করি। মুখ ফুটে বলতে চক্ষুলজ্জা।

‘এই যে দুটি খেতে পাচ্ছি এরজন্যে আমি কৃতজ্ঞ। এই-বা কজন পাচ্ছে? এই বা ক-দিন পাব? আমার অন্নদাতাদের যেন আমি না ভুলি। যেন ওদের শ্রমের মূল্য দিই ওদেরই মতো শ্রমে আর স্বেদে। আর ওদের যেন সেবা করি অহেতুক প্রেমে।’

বদনদার এই প্রার্থনা কার উদ্দেশ্যে নিবেদিত তা জানিনে। হয়তো ঈশ্বরের, হয়তো মানবের। হয়তো ওটা প্রার্থনাই নয়, একটা সংকল্পবাক্য। অভিভূত হয়ে শুনি। তারপর আহার শুরু হলে জিজ্ঞাসা করি, ‘এটা কি খ্রিস্টানদের মতো গ্রেস বিফোর মিট?’

‘যা বলেছিস। আমাদের হিন্দুদের প্রথা হচ্ছে ভগবানকে অর্পণ করে প্রসাদ সেবা করা। ওদের প্রথা হচ্ছে ভগবানকে ধন্যবাদ জানিয়ে খাওয়া। আমিও ধন্যবাদ জানিয়ে খাই। কিন্তু কাকে? ঈশ্বরকে? না ভাই, তাঁকে নয়। তিনি তো ঐশ্বর্যময়। আমার ঐশ্বর্যে কাজ কী। আমি চিনি দরিদ্রনারায়ণকে। ভুখা নারায়ণকে। নাঙ্গা নারায়ণকে। যিনি লাঙল ধরে মাঠে মাঠে ফসল ফলান। যিনি তাঁত ধরে ঘরে ঘরে লজ্জা নিবারণ করেন।’ বদনদা যেন তাঁকে প্রত্যক্ষ দেখতে পাচ্ছেন।

আমি এটা প্রত্যাশা করিনি। বলি, ‘বেশ তো, কিন্তু এর মানে কী? ‘‘এই-বা ক-দিন পাব?’’।’

‘দ্যাখ রজত, আমার এ প্রার্থনা আজকের নয়। এটা আমি অন্তর থেকে পাই পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময়। তখন আমি জেলে নয়, আণ্ডারগ্রাউণ্ডে। চোখের সামনে দেখি হাজার হাজার মহাপ্রাণী না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছে। আমিই-বা কে যে দু-বেলা দু-মুঠো অবধারিতরূপে দিনের পর দিন পাব। মন্বন্তরটা কীভাবে হল তোর মনে আছে নিশ্চয়। কলকাতার ব্যবসায়ী আর সরকারের ঠিকাদার গাঁয়ে গাঁয়ে লোক পাঠিয়ে যেকোনো দামে চাল কিনে আনে। চাল তো নয়, মুখের গ্রাস। কেনা তো নয়, কাগজের নোট ধরিয়ে দিয়ে লুট। দেখে আমার গা জ্বলে যায়। জীবনে অমন কনফিডেন্স ট্রিক দেখিনি। সেদিন থেকেই আমার মন উঠে গেছে তোদের এই সভ্যতার ওপর থেকে। শুধু ইংরেজ রাজত্বের ওপর থেকেই নয়। এটা একটা কনফিডেন্স ট্রিক। এই যে টাকা দিয়ে চাল কেনা, যা তোরা প্রতিদিন করছিস। কেন, শ্রম দিয়ে কিনিসনে কেন? স্বেদ দিয়ে কিনিসনে কেন? প্রেম দিয়ে প্রতিদান হিসেবে নিসনে কেন?’ বলতে বলতে দাদা উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।

আমি কেমন করে তাঁকে বোঝাব যে টাকা-পয়সার উদ্ভব হয়েছে বিনিময়ের সুবিধার জন্যে। তাতে সকলেরই সুবিধা। চাষিদের কি কিছু কম! ওই একটি বার ওরা ঠকেছিল। পরে ওরাও চালাক হয়ে গেছে।

বদনদা খেতে খেতে বলেন, ‘দুনিয়া জুড়ে যে ইনফ্লেশন চলেছে তার থেকে চাষিরও কিছু ফায়দা হচ্ছে, তা ঠিক। কিন্তু ওই কনফিডেন্স ট্রিক আবার মন্বন্তর ডেকে আনবে। আর সে-বারকার মতো গ্রামের লোকরাই লাখে লাখে মরবে, এ আমি প্রত্যক্ষ দেখতে পাচ্ছি রজত। আমি কেন পাপের ভাগী হতে যাই। আমি চাই সময় থাকতে এর প্রতিবিধান। কিন্তু কার কাছে গেলে প্রতিবিধান হবে? সকলেই তো পাপের ভাগী। এই কনফিডেন্স ট্রিক থেকে সকলেই তো লাভবান হচ্ছে। কেউ কম, কেউ বেশি। তা সত্ত্বেও আমি জানি এ খেলা চিরকাল চলতে পারে না। এর কুফল ফলবেই।’ দাদা ওয়ার্নিং দেন।

আদি খ্রিস্টানদের মতো তিনি ব্যাকুলভাবে বলেন, ‘যাও, খেটে খাও। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে খাও। মাটির সঙ্গে আত্মীয়তা ফিরে পাও।’

এরপরে দাদা আবার হা হা হা হা হা করে হেসে ওঠেন। বলেন, ‘নিজের ছেলেকেই বোঝাতে পারলুম না। যে আমার নিজের হাতে-গড়া। আমার সহকর্মীদের এক জনও যদি শুনত আমার কথা। সকলেই বোঝে টাকা, আরও টাকা। মজুরি আরও বাড়াও। মাইনে আরও বাড়াও। আমার কি ছাই নাসিকের মতো একটা ছাপাখানা আছে যে যত খুশি ছেপে বিলিয়ে দেব? আর মেকি দৌলতের নহর বয়ে যাবে। অসত্যমেব জয়তে হা হা হা হা হা!’

‘তবে এবার তোদের আমি সাবধান করে দিচ্ছি রজত। লোকে এবার পড়ে পড়ে মরবে না। মারবে ও মরবে। বিপ্লব, গৃহযুদ্ধ যা হবার তা হবে।’ দাদার দু-চোখ জ্বলতে থাকে। তারপর আবার স্নিগ্ধ হয়।

‘দেশকে তুমি অহিংস রাখতে পারবে না?’ আমি অশান্ত বোধ করি।

‘আমি কেন, স্বয়ং মহাদেবও পারবেন না।’ তারপর কী ভেবে বলেন, ‘কে জানে পারতুম হয়তো। যদি ব্রহ্মচর্য ভঙ্গ না করতুম। বেশিদিনের জন্যে নয় যদিও।’

‘ব্রহ্মচর্য! ব্রহ্মচর্য দিয়ে কখনো বিপ্লব রুখতে পারা যায়!’ আমি তো অবাক। বদনদার কি ভীমরতি হয়েছে? বাহাত্তরের আর কত দেরি!

‘অহিংসা দিয়ে পারা যায়, যদি অহিংসার সঙ্গে থাকে ব্রহ্মচর্য। তেমন দু-চার জন সাধক এখনও রয়েছেন। সেইজন্যেই তো আশা হয় যে আমরা সে ফাঁড়া কাটিয়ে উঠতে পারব। কিন্তু তাঁরাই-বা আর কদ্দিন? আমাদের জেনারেশনটাই মরে ঝরে যাচ্ছে। একে একে নিবিছে দেউটি।’ বদনদা করুণ স্বরে বলেন। বিলাপের মতো শোনায়।

নীরবে আহারপর্ব সারা হয়। একজনের বিশ্বাসের সঙ্গে তর্ক করে কী হবে?

আমি অন্য প্রসঙ্গ পাড়তে গেলে বদনদা আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলেন, ‘রুশ বিপ্লবের সময় অভিজাত ঘরের অঙ্গনাদের দেখা গেল রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে। এক টুকরো হিরের বিনিময়ে এক টুকরো রুটির সন্ধানে। তাহলেই বুঝতে পারছিস কোনটার চেয়ে কোনটার মূল্য বেশি। তোদের মূল্যবোধ যদি এখন থেকেই শোধরাত তাহলে বিপ্লব কোনোদিন ঘটতই না। বিপ্লবকে অহিংসা দিয়ে রোধ করার প্রশ্নও উঠত না।’

তর্ক করব না বলে মুখ বুজে থাকি। দাদা বলে যান, ‘তা ছাড়া সবাই তো একরকম সুনিশ্চিত যে অহিংসার যুগ ফুরিয়েছে। তার আর কোনো ভূমিকা নেই ইতিহাসে। তাই যদি হয় তবে বিপ্লবের দিন অহিংসার কাছে অত বড়ো একটা দাবি পূরণ করবেই-বা কে, যদি বহুকালের ও বহুজনের প্রস্তুতি না থাকে।’

দাদা একটা লবঙ্গ মুখে দিয়ে বলেন, ‘মাটির পা দুটি গলে গেলে সোনার ঠাকুরটি টলে পড়বেন, এর মধ্যে এমন এক ভবিতব্যতা আছে যে আমরা কজন অহিংসক এর খন্ডন করতে পারিনে। তা বলে কি আমাদের কর্তব্য নেই? আমরা সাক্ষীগোপাল?’

আমারও তো সেই একই জিজ্ঞাসা। ‘আমরাও কি সাক্ষীগোপাল?’

দাদা বাল্যকালে ফিরে যান। বলেন, ‘কাসাবিয়াঙ্কার কাহিনি মনে পড়ে?’ ‘The boy stood on the burning deck.’ আমি আবৃত্তি করতে শুরু করি।

‘আমিও সেইরকম একটা জ্বলন্ত ডেকের উপর দাঁড়িয়ে। জাহাজের গায়ে গোলা পড়ছে। জাহাজের প্রতি অঙ্গে আগুন। অবধারিত মরণ। সকলেই পালাচ্ছে। আমাকেও বলছে পালাতে। আমি কিন্তু আমার পদতলভূমি থেকে ভ্রষ্ট হব না। একচুলও নড়ব না। বাপুজির আদেশ, আমাকে স্বস্থানে স্থির থাকতে হবে। কাসাবিয়াঙ্কাকে যখন বলা হয় তোমার পিতা নিহত, বেঁচে থাকলে আদেশ ফিরিয়ে নিতেন, সে তা বিশ্বাস করে না। বলে, পিতার আদেশ আমাকে এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। হ্যাঁ, আমাকেও এইখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। বাপুজির আজ্ঞা।’ দাদা দুই চোখ মোছেন।

‘তার মানে কি ভূগোলের বিশেষ একটি স্থানে?’ আমি প্রশ্ন করি।

‘তার মানে, জীবনের বিশেষ একটি পোজিশনে। আমরা বরাবরই গঠনের ও সংঘাতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। শান্তির সময় পাটাতন পরিষ্কার করি, সংগ্রামের সময় আগুনের সঙ্গে মোকাবিলা করি। দগ্ধ হবার ভাগ্য থেকে তো কেউ আমাদের বঞ্চিত করতে পারে না। ওই দগ্ধ হওয়াটাই আমাদের ঐতিহাসিক ভূমিকা।’

বদনদার বদনে অপূর্ব আভা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *