নিমন্ত্রণ

নিমন্ত্রণ

প্রিয় নির্মল,

নিমন্ত্রণের জন্যে বহু ধন্যবাদ। কিন্তু একটা কথা পরিষ্কার করে নেওয়া দরকার। একা আসতে হবে না সস্ত্রীক? ওটা কি পুরুষদের পার্টি না mixed?

 ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় সোমনাথ,

তুমি জানতে চাও সস্ত্রীক আসবে না পরস্ত্রীক। এর উত্তর দিতে আমি অক্ষম। তবে এটা পুরুষদেরই পার্টি, কাপুরুষদের নয়।

ইতি। তোমার

নির্মল

প্রিয় নির্মল,

রসিকতা রাখো। কাজের কথা হোক। যদি পুরুষদের পার্টি হয় তবে আমার স্ত্রী কী করে শুনলেন যে অন্য কোনো কোনো মহিলা যাচ্ছেন।

 ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় সোমনাথ,

তোমার স্ত্রী ঠিকই শুনেছেন। মহিলাদের জন্যে স্বতন্ত্র জায়গা হচ্ছে। তোমার স্ত্রীকেও নিমন্ত্রণ করা হবে।

ইতি। তোমার

নির্মল

দুই

প্রিয় ঝরণা,

শুক্রবার

তোমার নিমন্ত্রণের প্রতীক্ষায় বসে থাকলে দেখছি প্রস্তুত হবার সময় পাব না। এক লাইন লিখে জানিয়ো তোমার মনে কী আছে।

ইতি। তোমার

 হৈমন্তী

প্রিয় হৈমন্তী,

তুমি আমার নিমন্ত্রণলিপি পাওনি শুনে অবাক। তবে কি আমি নিমন্ত্রণ করিনি? তুমি কিন্তু এসো নিশ্চয়। তুমি না-এলে এত খাবার খাবে কে!

 ইতি। তোমার

 ঝরণা

প্রিয় ঝরণা,

আমি বুঝি কত খাবার খাই! অমনধারা চিঠি লিখলে আমি যাব না।

 ইতি। তোমার

 হৈমন্তী

প্রিয় হৈমন্তী,

রাগ করলে তো? আমি জানতুম তুমি রাগী মানুষ। কিন্তু যাই হও, এতটা ছোটোলোক হবে না যে নিমন্ত্রণ পেয়ে উপেক্ষা করবে।

 ইতি। তোমার

 ঝরণা

প্রিয় ঝরণা,

ছোটোলোক কারা? যারা স্বামীকে ডাকলে স্ত্রীকে ডাকতে ভুলে যায়, ডাকলে বলে এত খাবে। আমরা কেয়ার করিনে। বুঝলে?

ইতি। তোমার

 হৈমন্তী

প্রিয় সোমনাথ,

নিমন্ত্রণ ক্যানসেল করতে বাধ্য হচ্ছি। কিছু মনে কোরো না।

 ইতি। তোমার

 নির্মল

প্রিয় নির্মল,

আমার স্ত্রীর কাছে লেখা তোমার স্ত্রীর চিঠি পড়তে দিচ্ছি। পড়ে ফেরত দিয়ো। দোষটা এ পক্ষের নয়।

ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় সোমনাথ,

আমার তো দশটি নয়, পাঁচটি নয়, একটি মাত্র স্ত্রী। দোষ যদি করেই থাকে তবু My wife—right or wrong!

ইতি। তোমার

 নির্মল

তিন

প্রিয় নরেশ,

শনিবার

এই চিঠিগুলি পড়ে ফেরত দিতে ভুলো না। দেখলে তো কীরকম অযাচিত অপমান। তোমরা যদি ওবাড়িতে নিমন্ত্রণ খাও তবে বুঝব তোমরা আমাদের বন্ধু নও।

ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় সোমনাথ,

ব্যাপারটা সত্যি শোচনীয়। কিন্তু আমরা নিমন্ত্রণ রক্ষা না করলে ওরা ঠাওরাবে তোমরাই আমাদের উসকে দিয়েছ। তারচেয়ে এক কাজ করলে কেমন হয়? আমরা গিয়ে নির্মল ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে মিটমাটের চেষ্টা করি।

 ইতি। তোমার

 নরেশ

প্রিয় নরেশ,

তোমরা গিয়ে মিটমাটের চেষ্টা করলে ওরা ঠাওরাবে আমরাই তোমাদের পাঠিয়েছি। আমরা তো দোষ করিনি, আমরা কেন দূত পাঠাব? তবে কি তোমার মতে আমরাই দোষী?

ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় সোমনাথ,

আরে না না। দোষী কেউ নয়। ওটা একটা misunderstanding। অমন কত হয়। আমরা চললুম বোঝাপড়া করতে।

 ইতি। তোমার

 নরেশ

পুনশ্চ। দুঃখের বিষয় বোঝাপড়া হল না। ওদের ধারণা ওদের ছোটোলোক বলে অপমান করা হয়েছে। ওরা ক্ষমাপ্রার্থনা প্রত্যাশা করে। চিঠিগুলি ফেরত পাঠাচ্ছি।

 নরেশ

প্রিয় ডাক্তার সেন,

এই চিঠিগুলি দয়া করে পড়ে দেখবেন। আপনি যদি আমাদের সহায় না হন তবে আমরা এখানকার সমাজে সুবিচার পাব না। অগত্যা আপনার ক্লাব থেকে ইস্তফা দিতে হবে। কেমন আছেন? নমস্কার।

ইতি। আপনার

 সোমনাথ বটব্যাল

প্রিয় মি. বটব্যাল,

চিঠিগুলি পড়ে দেখলুম। আমি তো এসব মানসিক অসুখের treatment জানিনে। কলকাতা গেলে ডাক্তার গিরীন বোসের সঙ্গে কনসাল্ট করে আসব। আপনি এই ক-টা দিন সবুর করুন। নমস্কার। আশা করি শারীরিক কুশল।

 ইতি। আপনার

 পুরন্দর সেন

প্রিয় ডা. সেন,

আমার পদত্যাগপত্র প্রেরণ করলুম। অনুগ্রহ করে ক্লাবের ওয়ার্কিং কমিটিতে পেশ করবেন। কাল নির্মলের ওখানে পার্টি। সেখানে ক্লাবের অন্য সকল সদস্য থাকবেন, থাকব না শুধু আমি, এ দৃশ্য অসহ্য। নমস্কার।

ইতি। আপনার

 সোমনাথ বটব্যাল

প্রিয় মি. বটব্যাল,

রবিবার

কী দুর্ভাগ্য! পার্টি তো ক্লাবে নয়। একজন সদস্যের বাড়িতে। আচ্ছা, আপনি আমার সঙ্গে আসবেন, আপনার গৃহিণী আমার গৃহিণীর সঙ্গে। আপনাদের জন্যে এক জোড়া নিমন্ত্রণপত্র ইতিমধ্যে সংগ্রহ করেছি। বিকেলে তৈরি থাকবেন। আমরা তুলে নিয়ে যাব।

ইতি। আপনার

পুরন্দর সেন

প্রিয় ডা. সেন,

অসংখ্য ধন্যবাদ। আমরা প্রস্তুত থাকব।

ইতি। আপনার

 সোমনাথ বটব্যাল

চার

প্রিয় সোমনাথ,

সোমবার

কাল যখন পার্টির মাঝখানে ডাক্তার সেনের call এল তখন তিনি উঠে যেতে বাধ্য হলেন। তখন তুমি কেন উঠে গেলে? অন্দরে তোমার স্ত্রীও উঠলেন কেন? ওটা কোন দেশি ভদ্রতা?

ইতি। তোমার

 নির্মল

প্রিয় নির্মল,

কাল আমি তোমার বন্ধু হিসেবে যাইনি, গেছলুম ডাক্তার সেনের বন্ধু হিসেবে। তিনি যখন উঠলেন আমাকেও উঠতে হল। অন্দরে আমার স্ত্রীকেও। আর কোনো কারণ না থাকলেও এটা বোঝো যে আমরা ডাক্তারের গাড়িতে গেছলুম, তাঁর গাড়ি না পেলে কার গাড়িতে ফিরতুম?

ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় সোমনাথ,

তোমার ও যুক্তি খোঁড়া। ডাক্তারের গৃহিণী যেভাবে ফিরলেন তোমরাও সেইভাবে ফিরতে। অর্থাৎ আমার গাড়িতে। তোমাদের ব্যবহার দেখে সবাই হেসেছে। খেতে বসে খাবার ফেলে ডাক্তারের সঙ্গে চোঁচা দৌড়! যেন তোমাদেরই বাড়িতে কোনো অ্যাক্সিডেন্ট।

 ইতি। তোমার

 নির্মল

প্রিয় নির্মল,

তুমি তো আমার বেশ শুভাকাঙ্ক্ষী বন্ধু! অ্যাক্সিডেন্ট কামনা করছ? যদি কোনো অমঙ্গল ঘটে তবে তোমারই কুচিন্তায়।

 ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় ডাক্তার সেন,

মঙ্গলবার

এই চিঠিগুলি পড়ে দেখবেন। আপনি যদি এর বিহিত না করেন তবে আমি কোনো উকিলের পরামর্শ নেব। অপমানের ওপর অপমান।

 ইতি আপনার

 নির্মলচন্দ্র কাঞ্জিলাল

প্রিয় মি. কাঞ্জিলাল,

আপনি কিছুদিন সবুর করলে আমি কলকাতা গিয়ে ডাক্তার গিরীন বোসের সঙ্গে কনসাল্ট করে আসতে পারি। ‘সস্ত্রীক’, ‘পরস্ত্রীক’, ‘দশটি নয় পাঁচটি নয়, একটিমাত্র স্ত্রী’—এসব যদি আদালতে যায় তবে খবরের কাগজের খোরাক জুটবে।

ইতি। আপনার

 পুরন্দর সেন

প্রিয় ডা. সেন,

এসব আপনি কোথায় পেলেন? তবে কি সোমনাথ আপনাকে আমার চিঠিগুলি দেখিয়েছে? তা যদি করে থাকে তবে দেখছি সমস্ত প্রকাশ করতে হবে। বিয়ের আগে সে যেসব কেলেঙ্কারি করেছে সেসব যদি শোনেন তবে লোকটাকে ক্লাবে ঢুকতে দিয়েছেন বলে অনুতাপ করবেন।

ইতি। আপনার

 নির্মলচন্দ্র কাঞ্জিলাল

প্রিয় মি. কাঞ্জিলাল,

আসুন আমার বাড়িতে চা খেতে আপনারা চারজনে। আমি মিটিয়ে ফেলি এই অরুচিকর ব্যাপার।

ইতি। আপনার

 পুরন্দর সেন

প্রিয় ডা. সেন,

সোমনাথের জন্যেই আমাকে দু-দুটো আলাদা পার্টি করতে হয়। ওকে মহিলাদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া নিরাপদ নয়। আমার স্ত্রী তো ওর ভয়ে ক্লাবে পর্যন্ত যান না।

ইতি। আপনার

 নির্মলচন্দ্র কাঞ্জিলাল

প্রিয় মি. কাঞ্জিলাল,

তা হলে আমার কিছু করবার নেই, আপনি উকিলের পরামর্শ নিন। কিন্তু তার আগে দু-বার ভেবে দেখবেন।

ইতি। আপনার

 পুরন্দর সেন

প্রিয় ডা. সেন,

আমার ইস্তফাপত্র প্রেরণ করছি। ক্লাবের সদস্য থাকা আমার পক্ষে দুঃসাধ্য।

ইতি। আপনার

 নির্মলচন্দ্র কাঞ্জিলাল

প্রিয় মি. কাঞ্জিলাল,

আপনারা সবাই সমান ছেলেমানুষ। ক্লাবের কী অপরাধ! আপনার ইস্তফাপত্র নিয়ে যখন আলোচনা শুরু হবে তখন আমি সমস্ত খুলে বলতে বাধ্য হব। তার চেয়ে আসুন আজ বিকেলে আমার সঙ্গে চা খেতে। মি বটব্যালকেও আসতে লিখছি। মহিলাদের না আনলেও চলবে।

ইতি। আপনার

 পুরন্দর সেন

পাঁচ

প্রিয় নির্মল,

বুধবার

কাল ডাক্তারের ওখানে অনেকক্ষণ বসেছিলুম। তুমি এলে না। শুনলুম আমার চরিত্র সম্বন্ধে এখনও তোমার মনে অবিশ্বাস আছে। কী করলে অবিশ্বাস দূর হবে বলতে পার?

ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় সোমনাথ,

ঠিকই শুনেছ। অবিশ্বাস দূর হবে কী করলে, বলব? যদি তুমি বিদ্যাসাগরী ধরনে মাথার চুল ছেঁটে চার্লি চ্যাপলিনের মতো তিন ভাগ গোঁফ কামাতে পার, যদি তুমি মাদ্রাজিদের মতো ধুতি কিংবা লুঙ্গি পরে টাই কলার আঁটতে পার, তাহলেই বিশ্বাস করে তোমাকে ঘরে ডাকব।

ইতি। তোমার

 নির্মল

প্রিয় নির্মল,

এই চিঠির সঙ্গে আলাদা একটি মোড়কে কামানো গোঁফ ও ছাঁটা চুল পাঠালুম। বিশ্বাস না হয় সশরীরে হাজির হতে রাজি।

ইতি। তোমার

 সোমনাথ

প্রিয় সোমনাথ,

অ্যাঁ, এসো, এসো, আজকেই বিকেলে।

ইতি। তোমার

 নির্মল

ছয়

প্রিয় সোমনাথদা,

বৃহস্পতিবার

কাল তোমাকে দেখে এত খারাপ লাগল। কেন তুমি অমন করে সং সাজতে গেলে? এ চিঠি ছিঁড়ে ফেলো।

ইতি। তোমার নয়

 ঝরণা

ঝরণা, ঝরণা, সুন্দরী ঝরণা,

কেন তা কি তুমি বুঝতে পারনি? পাঁচ বছর তোমাকে চোখে দেখিনি, এক বছর এক শহরে থেকেও না। দেখে সুখী হয়েছি। তেমনি ঝরণাই আছ। থেকো। এ চিঠি রেখো না।

ইতি শুভানুধ্যায়ী

 সোমনাথদা

সোমনাথদা,

তুমি এখন বিবাহিত। হৈমর প্রতি তোমার কর্তব্য রয়েছে। তার মনে না জানি কত কষ্টই হচ্ছে তোমার ওই বিদ্ঘুটে চেহারা দেখে। তুমি আর এসো না। চিঠি ছিঁড়ে ফেলো।

ইতি। হিতৈষিণী

 ঝরণা

ঝুনু,

হৈম সমস্ত জানে। আমার চেহারা দেখে তোমার খুব খারাপ লাগবে, এই আনন্দেই সে আমাকে বাঁদর সাজিয়েছিল। বলেছে, আবার যদি আমি তোমাকে দেখতে যাই তাহলে আমার মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে দেবে। সুতরাং আর যাব না।

ইতি। তোমার কল্যাণার্থী

 সোমনাথদা

সাত

প্রিয় সোমনাথ,

শনিবার

কাল আমার এখানে আবার পার্টি। এবার mixed। এবার আমি আপনি গিয়ে তোমাদের নিয়ে আসব আমার মোটরে। বিকেলে তৈরি থেকো।

 ইতি। তোমার

 নির্মল

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *