সুব্রত অথবা ‘সুরবোতো’ অথবা ‘খোকাবাবু’
আমাদের বড় সাধের বাঘ সত্যি সত্যিই সুব্রতর অ্যাকাউন্টেই জমা পড়েছিল দিন পনেরোর মধ্যে। সে গল্প আনন্দ পাবলিশার্স—এর ‘বনজ্যোৎস্নায়, সবুজ অন্ধকারে’ প্রথম পর্বে সবিস্তারে আছে। তাই পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। তবে গোপাল কলকাতায় চলে আসার আগের দিন নাজিম সাহেব, গোপাল সেন এবং সুব্রত চ্যাটার্জি ওই আমগাছেই মাচা বেঁধে এবং নীচে কাঁড়া বেঁধে বসেছিল এবং বাঘ অন্ধকার হওয়ার পরে পরেই এসে ওরা কিছু বোঝার আগেই কাঁড়াকে পটকে দিয়ে তার টুঁটি চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে তাকে মেরে এবং ঘাড় মটকে যখন মনোযোগ সহকারে খেতে শুরু করেছে, নাজিম সাহেবের ফোকাস করা টর্চের আলোতে গোপাল বাঘের বাঁ কাঁধ লক্ষ্য করে গুলি করে ‘রোটাক্স বল দিয়ে। দুর্ভাগ্যক্রমে ওর বুলেটটি আমগাছের একটি পাতলা ডালে ছুঁয়ে যাওয়াতে লক্ষ্যচ্যুত হয়। শিকারি মাত্রই জানেন যে এমন হতেই পারে, বিশেষ করে রাতের বেলা।
গোপালের হাত খুব ভাল ছিল কিন্তু বিগ—গেমস এ যে টেম্পারমেন্টের দরকার হয় তাতে তার ঘাটতি ছিল। জীবনের অন্য সব ব্যাপারে এবং পাখি শিকারের বেলাতেও যে অতি ধীর স্থির সেই বিগ—গেমস—এর বেলাতে দেখেছি চিরদিন নাজিম সাহেবের ভাষাতে যাকে বলে ”হড়বড়িয়া— খড়খড়িয়া” ছিল। তবে গুলি ডিফ্লেক্টেড হয়ে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যর ব্যাপার। তাতে গোপালের কোনও দোষ ছিল না।
গুলি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাঘ নিরুদ্দেশ হয়ে গেল। অত বড় জানোয়ার, সে এল, কাঁড়াটার ঘাড় মটকাল, তাকে খেতে লাগল, আর খাওয়ার শব্দ ছাড়া কোনওরকম শব্দই শোনা গেল না। সত্যিই কোনওরকম শব্দই নয়। বাঘের সঙ্গে যারা কখনও লেনাদেনা করেছেন তাঁরাই এ কথা বলেন। বড় বাঘের হরকৎই আলাদা। আমরা তখন ছেলেমানুষ, অনভিজ্ঞ, অভিজ্ঞতার পরিমাণের চেয়ে উৎসাহ—উদ্দীপনার পরিমাণ অনেকই বেশি। পরবর্তী জীবনে অনেক বাঘের মোকাবিলা করে একটু একটু অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছি যদিও, তবু বাঘ এমনই এক জানোয়ার যে সে দুর্জ্ঞেয়ই রয়ে গেছে, ঈশ্বরেরই মতো।
সুব্রতর বাবা সীতাগড়ার আনাচে—কানাচে পুলিশ দিয়ে খবর পাঠিয়ে ছিলেন যে যেখানেই বাঘ ”কিল” করবে তা কাঁড়া—ভইষই হোক, কী মানুষ, সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ সাহেবের বাংলোতে যেন খবর পৌঁছয়। খবর দিলেই হাতে হাতে গরমাগরম পাঁচ টাকা ইনাম মিলবে। তখন পাঁচ টাকার দাম ছিল। জঙ্গল পাহাড়ের গরিব মানুষদের কাছে তো ছিলই।
প্রত্যাশা পুরণ হল। কিল হওয়ার খবর পেয়ে সুব্রত টুটিলাওয়ার জমিদার ভাল শিকারি ইজাহার হককে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে দেখল বাঘ গোরুটাকে একটা নালার পাশে টেনে নিয়ে গিয়ে কিছুটা খেয়ে ফেলে রেখে গেছে একটা সাদা বড় বাছুরকে। ওরা বিকেল বিকেল এসে বসল কাছাকাছি মাচা বেঁধে। মাচাটা বাঁধা হয়েছিল একটি ‘রিকেটি’ শাল গাছে। কাছাকাছি কোনও বড় এবং শক্ত গাছ ছিল না।
সুব্রতর বক্তব্য অনুযায়ী একটা পেল্লায় হলুদ—রঙা রামছাগল এসে বিদায়ী সূর্যের কনে—দেখা আলোতে তার গম্ভীর এবং ভয়াবহ মুখটি দেখাল এক ঝলক এবং মুখটি দেখামাত্র সুব্রত মেসোমশায়ের পয়েন্ট ফোর নট ফাইভ অ্যামেরিকান উইনচেস্টার আন্ডারলিভার রাইফেল দিয়ে গুলি করল। গুলি করার সঙ্গে সঙ্গে বাঘ অদৃশ্য হয়ে গেল। তার কয়েক মিনিট পরে ভাল বাংলাতে যাকে বলে ”প্রলয় উপস্থিত হইল” তাই হল। বাঘটা হাড়—কাঁপানো গর্জন করতে করতে তাদের মাচার দিকে লাফিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে লাগল। একবার বাঘের ওই ভারী শরীরের ধাক্কাতে মাচাটা সজোরে দুলেও উঠল—ওদের মধ্যে একজন অথবা দুজনই পড়েও যেতে পারত নীচে। বাঘ যত গর্জন করে আর লাফায় ওরাও তত গুলি করে বাপ বেটার মতোই প্রায় ”সুব্রত মারিস ইজাহার মারিস, ইজাহার মারিস—সুব্রত মারিস” এই ভাবে। যতক্ষণ না দুজনের রাইফেলের ম্যাগাজিন খালি না হয় ততক্ষণ গুলি চলতে লাগল। সাজে—পোশাকে, গাড়িতে— বন্দুক—রাইফেলে অত্যন্ত শৌখিন। ইজাহারুল হক—এর হাতে ছিল ডাবল ব্যারেল হল্যান্ড অ্যান্ড হল্যান্ডের থ্রি সেভেন্টি—ফাইভ রাইফেল—রাজা রাইফেল। যে রাইফেলে দু ব্যারেলে দুটি গুলি নেয়, ফুটে গেলে আবার ভরতে হয় কিন্তু মেসোমশাই—এর ফোর নট ফাইভ একনলা রাইফেলের ম্যাগাজিনে পাঁচটা আর চেম্বারে একটা গুলি যেত। তবে সেমি অটোমেটিক নয় ফলে প্রতিবারই গুলি ফোটার পরে ব্যারেলের নীচের লিভার ধরে টানতে হত। টানবার সময়ে শব্দ হত না কিন্তু লিভারটা বন্ধ করার সময়ে ঘটাং করে একটা বিতিকিচ্ছিরি শব্দ হত। এবং সেই শব্দে বাঘ, লেপার্ড, ভাল্লুক, গাউর, বুনো মোষ অথবা হাতির মতো বিপজ্জনক জানোয়ার শিকারির অবস্থান নির্ভুলভাবে বুঝে নিত এবং অনেক সময়ে শিকারিকে আক্রমণও করত। আমার বাবারও একটা ওই রাইফেল ছিল এবং আমিও ব্যবহার করেছি বলে জানি।
গুলি যখন সব শেষ দু জনেরই, বাঘের তর্জন—গর্জনও তখন শেষ। কিন্তু শেষবার লাফ দিয়ে বাঘটা যে কোনখানে গিয়ে আড়াল নিল, না মরেই গেল তা ওদের কেউই বুঝতে পারল না। ততক্ষণে অন্ধকারও হয়ে গেছে।
ঠায় রাত দশটা অবধি গাছে বসে থেকে, দুজনের গুলিহীন রাইফেল সম্বল করে প্রাণ হাতে করে গাছ থেকে নেমে বড় রাস্তাতে, যেখানে জিপ ছিল, সেখানে এসে পৌঁছল।
আগেই বোধহয় বলেছি যে বিখ্যাত ব্যারিস্টার ও শিকারি কুমুদনাথ চৌধুরি তাঁর বইয়ে বার বার করে লিখে গেছিলেন যে মাচা থেকে বাঘকে গুলি করে, বাঘ যদি মরে না গিয়ে থাকে তবে একেবারেই নীচে নামা চলবে না। লিখেছিলেন বটে কিন্তু তিনি নিজেই ওড়িশার কালাহান্ডিতে দিনের বেলাতে হাঁকা শিকারে বাঘ বেরুলে তাকে গুলি করে আহত করে গাছ থেকে নেমেছিলেন তাকে শেষ করতে কিন্তু বাঘই তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল। গুড অ্যাডভাইস ব্যাড এগজাম্পল—এর এ এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
টাইগার—লাক বলে একটা কথা আছে শিকারি মহলে তো বটেই, বন—বিলাসী পর্যটকদের মধ্যেও। এমন অনেক মানুষ আছেন যাঁরা সারা জীবন জঙ্গলে কাটিয়েও একটি বাঘও নিজের চোখে দেখতে পাননি। অনেক শিকারিও আছেন যাঁরা সারা জীবন শিকার করেও একটিও বাঘ মারতে পারেননি।
সুব্রত যখন সীতাগড়ার মানুষখেকোটি মারল ইজাহারের সঙ্গে তখনও ওর নিজের কোনও বন্দুক—রাইফেল ছিল না। হেভি রাইফেল দিয়ে পাখি মারা যায় না বলে মেসোমশায়ের পয়েন্ট ফোর নট ফাইভ উইনচেস্টার রাইফেল দিয়ে কোনও পাখিও মারেনি। সে অ্যাকাউন্ট ওপেন করল মানুষখেকো বাঘ দিয়ে। এবং বাঘ বলে বাঘ! ”ওভার দ্যা কার্ডস” দশ ফিট দু ইঞ্চি বাঘ। অত বড় বাঘ সচরাচর দেখা যায় না।
তার অনেক বছর পরে, তখন সুব্রত গুমিয়ার ইন্ডিয়ান এক্সপ্লোসিভ কোম্পানির বড় অফিসার, গুমিয়া রাইফেল ক্লাব এর প্রতিষ্ঠাতা— কোম্পানির লাল—মুখো সাহেবদের কাছে স্পোর্টসম্যান হিসেবে খ্যাত— তখন তার নিজস্ব বন্দুক, রাইফেল এবং পিস্তলও হয়েছে। বিয়ে করেছে। একটি ছেলে হয়েছে। তার নাম রেখেছে ঋজুদা কাহিনির নায়কের নামানুসারে ঋজু। তখন ঋজু নাম অপ্রচলিত ছিল। ঋজুদা—কাহিনিগুলির সুবাদে এখন বাংলার প্রতি দ্বিতীয় ঘরে একজন করে ঋজু আছে।
অনেকদিন সুব্রতর খবর পাই না। তাই অনুযোগ করে একটি চিঠি লিখেছিলাম ওর নীরবতার জবাবদিহি চেয়ে। ও উত্তরে লিখল, দুটি খবর দেওয়ার আছে। প্রথম, আমার একটি মেয়ে হয়েছে। দ্বিতীয়, আমি একটি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার মেরেছি।
ওর সেই বাঘ মারার গল্পও আনন্দ পাবলিশার্স—এর ‘বনজ্যোৎস্নায় সবুজ অন্ধকারে’র প্রথম পর্বে সবিস্তারে লেখা আছে।
এক্সপ্লোসিভ—এর উঁচু পাঁচিল এবং কাঁটাতার দেওয়া সীমানা পেরিয়ে কী করে একটি বড় বাঘ যে তার মধ্যে ঢুকে পড়েছিল এবং তিতির খরগোশ খেয়ে কিছুদিন বেঁচে থেকে শীর্ণ হয়ে পড়েছিল তা জানলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হয় না। এক্সপ্লোসিভ—এর কারখানার এক একটি প্লান্ট এক একটি টিলার আড়ালে তৈরি করেছিলেন সাহেবরা যাতে বিস্ফোরণ ঘটলে পুরো কারখানা উড়ে না যায়। তাই কারখানার মধ্যে হেভি রাইফেল ছোড়ার অনেক ঝুঁকি ছিল। সুব্রত যেহেতু শিকারি এবং ওই কারখানারই অফিসার, তাই সাহেবরা ওকে ছুটি দিয়ে ওই বাঘ মারার কাজে নিয়োগ করলেন। এক প্ল্যান্ট থেকে অন্য প্ল্যান্ট—এ যেতে নাইট—ডিউটিতে থাকা কর্মীরা কিছুদিন হল বাঘ দেখতে পাচ্ছিল। প্রথম প্রথম ওরা নেশা করেছে বা স্বপ্ন দেখছে বলে অন্যরা হাসি—ঠাট্টা করত। তারপর সত্যি সত্যিই বাঘ ঢুকেছে কারখানার মধ্যে সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার পরে ওই ব্যবস্থা নিলেন কর্তৃপক্ষ। সুব্রতকে একটি জিপ এবং সাহসী ড্রাইভার দেওয়া হল। সুব্রত হাজারিবাগ থেকে নাজিম মিঞাকে আনিয়ে নিল স্পট—লাইটসুদ্ধ। এবং কয়েক রাত খোঁজাখুঁজির পরে সেই ব্যর্থ প্রেমিক বা আত্মহত্যাকামী বাঘ সুব্রতর হাতে শহিদ হল।
এরকম ঘটনা আর কোথাওই ঘটেছে বলে আমার জানা নেই। সেই সময়ের গুমিয়ার ইন্ডিয়ান এক্সপ্লোসিভস কারখানার (আই. ই. এল.) লালমুখো ও কালো সাহেবরা এখনও সুব্রতর বাঘ নিয়ে আলোচনা করেন। আই. সি. আই—এর মিস্টার টড হান্টার ছিলেন ওই কারখানার পত্তনকারী। তাঁর নামে একটি বড় টিলা আছে কারখানার মধ্যে। ওই টিলার নীচেই মেরেছিল বাঘটিকে সুব্রত।
সুব্রতর বিয়ে হল মজফফরপুরের মেয়ে অলকার সঙ্গে। বরযাত্রী যেতে পারিনি কিন্তু বউভাতে গিয়েছিলাম। ওরা তখন কানহারী হিল রোডের উপর সারি দেওয়া ইউক্যালিপটাস গাছেদের মাঝে একটি বাড়ি কিনে থিতু হয়েছে মেসোমশায়ের অবসর নেওয়ার পরে। সেই বাড়ির প্রকাণ্ড হাতাতে উত্তর ভারতীয় রীতিতে সার সার তাঁবু ফেলে বউ—ভাতের প্যান্ডেল হয়েছিল। সেই অনুষ্ঠানেই নাজিম সাহেবের স্ত্রীকে প্রথমবার দেখি। কত বড় রসিক মানুষ হলে যে ওই রকম কুশ্রী স্ত্রীকে নিয়ে অমন নিরন্তর রোম্যান্টিকতা করা যায় তা সেই প্রথম জেনেছিলাম। শুনেছিলাম প্রেম শারীরিক সৌন্দর্য—নির্ভর নয়, সেটা পুরোপুরি মনেরই ব্যাপার। সেদিন রাতে সে কথা হৃদয়ঙ্গম করেছিলাম।
নাজিম সাহেব তাঁর বিয়ের রাতের কথা দুই অবিবাহিত তরুণকে যখন স্মৃতিমেদুর হয়ে বলতেন তখন আমরা বিয়ে ব্যাপারটা যে কী দারুণ একটা রহস্য ও প্রেমের ব্যাপার তাইই কল্পনা করে রোমাঞ্চিত হতাম। নাজিম সাহেব সুর করে গান গাওয়ার মতো করে আওড়াতেন :
”কিয়া হ্যায় তুমকো,
মুরিদ য্যাইসা
না জানে ক্যাইসা
দিখাকে আঁচল।”
নাজিম সাহেবের স্ত্রীকে দেখে খুব ধাক্কা খেয়েছিলাম সুব্রতর বউভাতে কিন্তু নাজিম সাহেবের প্রতি এক নতুন ধরনের শ্রদ্ধাতেও অবনত হয়েছিলাম সেই রাতে।
সুব্রতর ছোট ভাই—এর নাম ছিল মুকুল। ও এম.এসসি. পাস করে চাকরির অপেক্ষাতে বসে ছিল। খুবই সরল ছেলে। কথায়—বার্তায় মানসিকতাতে সে পুরোপুরি বিহারী ছিল। অ্যাফেক্টেড উচ্চচারণে বাংলা বলত। ও বন্দুকে শিকার করত এবং বন্দুক তুলেই দ্রুত গুলি করত নির্ভুল লক্ষ্যে। ওদের একটি কালো অ্যালসেশিয়ান ছিল, তার নাম ছিল বুলেট। বুলেট আর মাসিমার সঙ্গে ওর সময় কাটত। পুলিশ—সাহেব রাশভারী মেসোমশাই তখন কানে কম শুনতেন। নস্যি নিতেন। এবং একা একা বসে সন্ধের পরে পেসেন্স খেলতেন। ক্বচিৎ হাজারিবাগ ক্লাবে যেতেন বিশেষ করে যখন গোপালের বাবা পূর্বাচলে আসতেন।
আমার অনেক সুন্দর দিন কেটেছে মুকুলের সঙ্গে এবং মাসিমার স্নেহে। মাসিমা চমৎকার রান্না করতেন। রান্নাঘরে বসে গীতবিতান খুলে মাসিমাকে একটার পর একটা গান শোনাতাম আর মাসিমা রান্না করতে করতে শুনতেন। রান্নাঘর থেকে একদিকে কানহারী পাহাড় দেখা যেত আর অন্য দিকে লাল মাটির বিস্তীর্ণ টাঁড় ও খোয়াই যা গড়িয়ে গিয়ে মিশেছিল বরহি রোডের গায়ে। মাঝে মাঝে বাস ও ট্রাক যেত বরহি রোড দিয়ে—’দ্যা ইউক্যালটা’ থেকে দেখা যেত কিন্তু অত দূরে বলে আওয়াজ শোনা যেত না কোনও। সেই বড়হি রোডেরই নাম হয়েছে এখন গয়া রোড।
আজ পেছন ফিরে চাইলে মন বড় মেদুর হয়ে ওঠে। আমার মা ও বাবা, সুব্রত ও গোপালের মা ও বাবা এবং সুব্রত ও গোপাল কেউই নেই। এই লেখার একটি অংশ যখন পুজোর সময়ে ‘আজকাল’—এ প্রকাশিত হয়েছিল তখনও এ.বি. কাকু ছিলেন। এ. বি. কাকুও গত মাসে চলে গেলেন।
অনেকদিন আগে, দু হাজার সনে কটকের ফুটুদার মৃত্যুর পরে চাঁদুবাবু আমাকে একটি চিঠিতে একটি ওড়িয়া কহবৎ লিখে পাঠিয়ে ছিলেন। সেটি এরকম :
”কেহি রহি নাই
রহির নাই
রহিব না এটি।
এই ভব রঙ্গ।
ভূমিতলে
সর্বে নিজ নিজ
অভিনয় সারি
বাহরিবে কালবেলে।।”
মানে হল, কেউ থাকবে না, থাকার জন্যে আসে না, এখানে থাকবে না, এই রঙ্গ মর্ত্যভূমির সবাই নিজ নিজ অভিনয় সেরে সময় হলে চলে যাবে।