সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি

সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি (রচনা ২০০৪-০৬। প্রকাশ ২০০৭)

অবিনাশ

অমা এ রাতের মাঝখানে এক সরুপথ
 আঁকাবাঁকা হয়ে মিলিয়ে গিয়েছে বহুদূর
ক্ষতের চিহ্ন ছুঁয়ে ছুঁয়ে ঠিক সেখানেই
 খুঁজতে গিয়েছি তোমাকে, তোমার অশরীর

গাছপালাঘেরা নির্জনে কোনো সাড়া নেই
নিজেরই কেবল প্রশ্বাসটুকু শোনা যায়
ঘুমের ভিতরে সম্মোহিতের পদপাত
 খুঁজতে গিয়েছে তোমাকে, তোমার অবকাশ

মনে পড়ে শুধু ফেলে আসা যত অপঘাত
কীভাবে এখনও গোপন দুর্গ ভেঙে দেয়
কীভাবে এখনও রক্তপাতের ইশারায়
 মনে পড়ে শুধু তোমাকেই, তুমি অবিরাম

আমারও দুহাতে দিতে চেয়েছিলে শত দায়
সে-আমি এখানে এতদূরে এসে দেখি আজ
শব হয়ে পাশে শুয়ে আছে যত বনচর
কাঠের শরীরে, তুমি অশরীর, অমলিন

ফিরে আসবার পথে পা বাড়াই, ওঠে ঝড়
নিমেষে নিরালা শব্দে শব্দে ভরে যায়
তড়িৎ চমকে দেখি সব গাছই শমীগাছ
আড়মোড়া ভাঙে শুয়ে ছিল যারা এতকাল

তখনই তোমাকে দেখি আজও তুমি অবিনাশ

*

যাবার সময়ে বলেছিলেন

অন্ত নিয়ে এতটা ভেবো না
 মৃত্যুপথে যেতে দাও মানুষের মতো মর্যাদায়– শুধু
তোমরা সকলে ভালো থেকো।
 কিন্তু কাকে বলে ভালো থাকা? জানো?
কতদিন তোমাকে বলেছি স্বর উঁচু করে কথা বলো আবেগে ভাসিয়ে দাও দেশ
ভিখারি মনের এই দেশ
পাহাড়ের চুড়ো থেকে সাগরের কিনারা অবধি
ফেটে যাওয়া খেত যত অগম জঙ্গল আর মজে যাওয়া নদী
ভেসে যাক সেই স্বরে। অবসাদে ঘেরা
নষ্ট হয়ে আছে সবুজেরা
কে তাকে ফেরাবে আর তোমরা যদি কিছু না-ই বলো?
 যেদিকেই যাও শুধু প্রাচীনের ভস্ম ঝরে পড়ে
মাথার উপরে
 বন্ধ হয়ে আসে সব চোখ
ভুলে গেছি কে দেয় কে দিতে পারে কেই-বা প্রাপক
এই মহা ক্রান্তিকালে।
 ক্রান্তিকাল? তোমরাও কি ভাবো ক্রান্তিকাল?
 তোমাদের জীবনমুদ্রায় কোনো চিহ্ন নেই তার।
 কেন? কেন নেই?
 এসো এই মুমূর্ষুর বুকে রাখো হাত
এর ক্ষীণ রক্ত থেকে তোমার রক্তের দিকে বয়ে যাক দাহ
ঘটুক সংঘাত
 দেখো তার মধ্য থেকে ভিন্ন কিছু জেগে ওঠে কি না।
 অন্ত নিয়ে এতটা ভেবো না
রাখো এ প্রবাহ
শেষ বিশ্বাসের সামনে কথা দাও তুমি দেশ তুমিই এ প্রসারিত দেশ
তোমারই স্নায়ুর মধ্যে বহমান কাল–
 যাবার মুহূর্তে আমি আজ শুধু নিয়ে যাব এইটুকু রক্তিম প্রবাল।

*

‘তুমি বলেছিলে জয় হবে জয় হবে’

তুমি বলেছিলে জয় হবে জয় হবে
এ-রকমই দিন থাকবে না চিরদিন
তা শুনে কত-না ধামাকায় মেতে গিয়ে
কী আশ্চর্য নেচেছি অন্তহীন।

উৎসবে ভরা উৎকট দেখে দেখে
 স্বাভাবিককেই ভেবেছি বিসদৃশ।
অকুণ্ঠ মনে- তুমি হাতে তুলে দিলে-
 পান করে গেছি যে-কোনো তীব্র বিষও।

তুমি বলেছিলে দল হবে দল হবে
 দলের বাইরে থাকবে না কিছু আর
অনুগত হলে সহজে পেরিয়ে যাবে
দুর্গম গিরি দুস্তর পারাবার।

ঝুরে ঝুরে পড়ে ভূমণ্ডলের মাটি
আমরা যে-কোনো গর্তের মুখে বাঁচি
বন্ধুবিষাদ ভরে আছে বুকে বুকে
আসিনি তবুও কেউ কারো কাছাকাছি।

তুমি বলেছিলে যার হবে তার হবে
তোমারই মোহরে চলমান সংসার-
 এই অবেলায় কখনো ভাবিনি আগে
জয়ের ভিতরে এত দুর্বার হার!

*

একটি গাথা

ঘুম ছুটে যায়, গ্রাস ওঠে না মুখে
রাস্তা জুড়ে স্পন্দ জাগায় পা
চলছি ওদের সামনে যাব বলে
আমরা সবাই মনোরমার মা
কিছুই এখন নেই হারাবার আর
আমরা সবাই উলঙ্গিনী আজ
মশাল হয়ে উড়ছে কেবল চুল
এই আমাদের শেষের রণসাজ
আসছি ছুটে সমস্ত দিক থেকে
উজাড় শহর বাজার উজাড় গাঁ
আমরা সবাই মনোরমার মা
সবাই আমরা মনোরমার মা

ওইখানে ওই প্রকাণ্ড রৌরবে
ডাক দিয়েছে আমার মেয়ের হাড়
যাক উড়ে যাক অঙ্গবসন যাক
এবার থেকে মানছি না আর হার
যাক পুড়ে যাক হলকা লেগে ছাই
 যাদের ওপর পড়ছে এ নিশ্বাস
স্পষ্ট তারা চক্ষু খুলে রাখ
দেখ রে চেয়ে লক্ষ ঈডিপাস
 তারপরে যা অন্ধ হয়ে যা
এই চলা আর কোথাও থামার না
আমরা সবাই মনোরমার মা
সবাই আমরা মনোরমার মা

খাড়াই পথে খাদের খাঁজে খাঁজে
লুটোয় কেবল খুবলে খাওয়া শরীর
এই পৃথিবী ঘুরছে তবু রোজই
 টিক টিক টিক ঘুরছে কাঁটা ঘড়ির
ঘুরুক, তবু আসবি কে আর আয়
আয় আমাদের সবাইকে ধর ঘিরে
ভয় নেই তোর লজ্জারও লেশ নেই
চিনবে না কেউ লক্ষ লোকের ভিড়ে
 আয় আমাদের শরীর ছিঁড়ে ছিঁড়ে
 রক্তমাংস যা পাস সবই খা
 তবু আমরা মনোরমার মা
 আমরা তবু মনোরমার মা

চলছি সবাই মনোরমার মা
সবাই আমরা মনোরমার মা

*

বদল

এখন আর আমাদের কোনো অশান্তি নেই
 কেননা আমরা দল বদল করেছি
 হয়ে গেছি ওরা।
 সেদিন সারারাত জুড়ে চলছিল সেই বদলের উৎসব
পালটে যাচ্ছিল ধ্বজা
থমথমে উল্লাসে ভরে যাচ্ছিল প্রাঙ্গণ
আর গান আর হুল্লোড় আর জয়ধ্বনি আসছিল ভেসে
 আর ভোজের সুবাস।
 কোনো অশান্তি ছিল না আর, কেবল
আগুনের হলকার পাশে
 তখনও তোমার মুখে গতজন্মের ছায়া দুলতে দেখে
তোমাকে নিঃশব্দ দেখে
আমরা এগিয়ে এসে বলেছি : ভয় কী,
এই তো ভালো হলো
আমরা এখন হয়ে গেছি ওরা
আর কোনো অশান্তি রইল না আমাদের
দেখো কেমন চমৎকার কেটে যাচ্ছে আমাদের কৃমিকীট জীবন।

*

মন্দ

ভিতর থেকেই ভালোবাসব ভেবে
গিয়েছিলাম সেদিন তোমার কাছে
কিন্তু এ কী আরেকরকম মুখ
জেগে উঠল দহনবেলার আঁচে।

শরীরমনকে জরিপ করে নিয়ে
 চাইছিলে সব সন্দেহভঞ্জন
আলতো টানে চোখের সীমানাতে
 হিংস্রতাকে করছিলে অঞ্জন

দিন বা রাতে গলিতে রাজপথে
ঝুলিয়ে দিয়ে রক্তঝরা ঝালর
দেখছিলে ঠিক করে হিসেবমতো
 তফাত করি মন্দ এবং ভালোর

বাঁধছিলে খুব শক্ত আলিঙ্গনে
না হই যাতে পিছলপথগামী
সবটা যদি তোমার মতো না হই
অবশ্যই মন্দ তবে আমি–

মন্দ তবে অবশ্যই আমি।

*

হাসপাতালের সামনে একটা পাগল

হাসপাতালের সামনে একটা পাগল
 রাত্রিবেলার প্রার্থনা করছিল
 দিনের যত হল্লা আমার মাথায়
তখনও তার সামান্য ঘোর ছিল
ভাবছি যে তাই ভুল শুনলাম না কি
ওর কথাটায় শেষ কিছুটা বাকি
বিড়বিড়িয়ে বলছিল ‘ও পাথর
এই বাড়িটার সবাই যেন বাঁচে!’
 শুনশান সব পথঘাট চারদিকে
ঈশ্বরও কেউ ছিল না তার কাছে
 জপের শেষে পথ পেরোতে গিয়ে
 উলটে গেল উলকামুখী বাসে
হাসপাতালের সামনে একটা পাগল
মরে রইল নিজেরই অভ্যাসে!

*

বিভূতি

করেছ তো জানি অনেক কিছুই
পেয়েছও সেইমতো
ভাবোনি কখনো কোন্ দেশগাঁয়ে
কারা হলো বিক্ষত!

সব তৃষ্ণার জল শুষে নিয়ে
পেয়েছ আপন জল
সকলেরই কাছে সেকথা এখন
 নিতান্ত প্রাঞ্জল।

উঁচু থেকে আরো উঁচুতে তুলেছ
শুধু ঝলমলে চুড়ো
 খিলানে খিলানে শ্বাস রেখে যায়
 কত ছেলে কত বুড়ো!

তুমি কি কেবলই নষ্ট ফসল?
কেবলই কি আততায়ী?
 এবারে তোমার নিজেরই কীর্তি
 ভাঙার সাহস চাই।

জনাদর যদি ভুলে যেতে পারো
ছেড়ে দিতে কিসে ভয়?
তোমার জপের কেন্দ্র তো শুধু
 ক্ষমতাশীর্ষ নয়!

*

খবর

আধখোলা দরজা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ছে খবর
 জানলার কোনায় কোনায় টুপ টুপ করে ঝরে পড়ছে খবর
এদিকওদিক সরে যাচ্ছি কিন্তু কেবলই আমাকে চেপে ধরছে খবর
দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসি বাইরে
দৌড়োত থাকি প্রাণপণ
 কিন্তু আমার সামনে পিছনে ডাইনে বাঁয়ে খবর, খবরের ঘূর্ণি
উপুড় হয়ে পড়ে যাই পথে
 আমার ওপর স্তূপ হয়ে জমতে থাকে খবর
বন্ধ হয়ে আসে নিশ্বাস
 আমার মৃত শরীরের ওপর আহ্লাদে নাচতে থাকে
 নাচতেই থাকে শুধু জলজ্যান্ত খবরের পর খবরের পর খবর

*

যা ঘটবার ঘটতে থাকে

আমরা কথা বলি
আমরা কথা বলি আর প্রতিবাদ করি
 প্রতিবাদ করতে করতে কথা বলি
 কথা বলতে বলতে প্রতিবাদ করি
আর যা ঘটবার তা ঘটতে থাকে
আর আমাদের প্রতিবাদগুলি তাকে ঘিরে খেলা করে
 রং ছোঁড়ে, নাচে
আর ঘটনাগুলি ঘটতে থাকে
 আর আমাদের প্রতিবাদগুলি খেলা করে
আমরা গুমরোই, গান গাই
 আমরা কথা বলি, পিঁপড়ে হয়ে এগোই
 যা ঘটবার তা ঘটতে থাকে
 আমরা প্রতিবাদ করি
করতে করতে ঘুমোই
ঘুমোতে ঘুমোতে কথা বলি
 যা ঘটবার ঘটতে থাকে
 ঘটতে থাকে

*

শবসাধনা

বুঝি তোমার চাউনি বুঝি
থাকবে না আর গলিঘুঁজি
থাকবে না আর ছাউনি আমার কোথাও
ও প্রোমোটার, ও প্রোমোটার
তোমার হাতে সব ক্ষমতার
দিচ্ছি চাবি, ওঠাও আমায় ওঠাও।

তুমিই চিরনমস্য, তাই
তোমার পায়ে রত্ন জোটাই
তোমার পায়েই বিলিয়ে দিই শরীর-
 যাঁর যা খুশি করুন তিনি
করবে তুমি কল্লোলিনী
ভরসা কেবল কলসি এবং দড়ির।

আমার বলে রইল শুধু
বুকের মধ্যে মস্ত ধু ধু
দিয়েছি সব যেটুক ছিল দেবার
 ঘর ছেড়ে আজ বাইরে আসি
আমরা কজন অন্তেবাসী
শবসাধনায় রাত কাটাব এবার।

*

বাজার

ভেবেছিলাম সঙ্গ পাব একটা কোনো বেলা
 গলির মুখে একলা দুহাত মিলবে এসে হাতে
 এক লহমার চোখের চাওয়ায় ভাসিয়ে নেবে আমায়
 টান দেবে কোন্ দশ লহরের গঙ্গাযমুনাতে।

বাইরে এলে চোখ পুড়ে যায়, এদিকওদিক জুড়ে
 বিশ্বলোকের চরকি ঘোরায় যাকিছু জমকালো
যেদিকে চাই সমস্তটাই উৎসবে-ঝংকারে
রূপের উপর রূপ ঢেলে দেয়, আলোর উপর আলো।

ঝলসানো সেই আলোয় দেখি তুমি কোথাও নেই
 চিহ্ন কেবল ছড়িয়ে আছে আদ্যোপান্ত সাজার–
 গমক ধুলো কাপাসতুলো হাড়কাঁকরের পাশে
 আমি শয়ান পথে আমার বুকের উপর বাজার ।

*

ধুলো

হাতে তার ছিল না কিছুই
তবু সে এসেছে এতদূর
শুধু অবিরাম অপঘাতে
অধোমুখ হয়েছে বিধুর।

এখন শুয়েছে ধুলো মেখে
পাড়ের ঢালুর কাছে এসে
 ভুলে গেছে সব প্রতিবেশ
ভুলে গেছে কোথায় সে, কে সে!

মুছে গেছে যত প্রিয় গান
আকুল শ্রবণস্মৃতি থেকে
চোখে আজ সব নিরাকার
 ইশারাবিহীন অভিলেখে।

মিলের ভিতরে ঢেকে রাখা
কত না অমিল অধিকার
দুহাত বাড়িয়ে দেখেছে সে
আজ কেউ কাছে নেই তার।

*

বিদায়ফলক

সবকটা তার শব্দ এখন ছড়িয়ে থাকা নুড়ি
হা হা করে উড়ছে কেবল বালি
ঘুমের মধ্যে হাত বাড়ানো, কিচ্ছু কোথাও নেই
সমস্ত ঘর খালি।

বাতাস থেকে ঝরে পড়ছে একটি-দুটি চড়ুই
শুকোচ্ছে সব সঙ্গহারা প্রাণ
কেউ জানে না কোনখানে কোন্ ছোট্ট একটা থাবায়
সমস্ত দিন হয়েছে খান্ খান্!

*

কষ্ট

তুমি বলে গেলে : তোমাতে আমার কোনো মন নেই আর।
 মৃৎনির্মাণের মতো বসে আছি।
 সামনে দিঘির জল সে-রকমই টলটল করে
 সে-রকমই হাওয়া বয়ে যায়।
 আর কোনো চিহ্ন পড়ে নেই
আমারও মনের মধ্যে কোনো নীল রেখাপাত নেই। শুধু
 তোমার কথাতে কোনো কষ্টের আঘাত পাইনি দেখে
অবিরাম কষ্ট হতে থাকে।

*

এত ছোটো হাত

‘nobody, not even the rain, has such small hands’–Cummings

আবহাওয়া ছিল খানিকটা ভারী কিছুটা ভিজে
আমিও ছিলাম মন্থর ওই মেঘের মতো
 শুনেছি এখনও যাওয়া-আসা করো, দেখিনি নিজে
দু-একটি শুধু স্বর ভেসে আছে ইতস্তত।
 অথচ সেদিন ঝরে গেছে পাশে কত প্রপাত
 বারে বারে কত হারিয়ে ফেলেছি কথার খেই
বলেছি কেবল হাতে তুলে নিয়ে ও-দুটো হাত
বৃষ্টিরও নেই এত ছোটো হাত কারোই নেই!

এ যদি না হয় আবহমানের অস্তিভার
তবে কাকে বলে সত্যি? বলো তো কাকে বলি?
শুনেছি এখনও যাওয়া-আসা করো, কিন্তু তার
পরিণাম নেই, কথার উপরে জমে পলি।
 সেই ছুঁয়ে থাকা সত্যি হোক বা মিথ্যে হোক
সরে যেতে যেতে মুছে যায় কবে অলক্ষ্যেই
জেগে থাকে মনে একটাই শুধু অমোঘ শ্লোক
 বৃষ্টিরও নেই এত ছোটো হাত কারোই নেই!

*

পালক সবকিছু মুছে নেওয়া এই রাত্রি তোমার সমান
 সমস্ত ক্ষতের মুখে পলি পড়ে। কখনো কখনো
কাছে দূরে জ্বরে ওঠে ফসফরাস। কিছুরই কোথাও
ক্ষান্তি নেই। প্রবাহ চলেছে শুধু তোমারই মতন
একা একা, তোমারই মতন এত বিকারবিহীন।
 যখনই তোমার কথা ভাবি তবু, সমস্ত আঘাত
পালকের মতো এসে বুকের উপরে হাত রাখে
যদিও জানি যে তুমি কোনোদিনই চাওনি আমাকে।