শুক্লপক্ষের তারা – ৬০-৮১

৬১.

সেই শূন্য জায়গাতেই তোমাকে বারবার খুঁজতে যাই যেখানে তুমি নেই,
নিঃশ্বাসের বাতাস ভারি হয়ে আসে —
সেই শুন্য জায়গাতেই গিয়ে নিঃশ্বাস ফেলি অসীম শূন্যতায়।

৬২.

জ্যোতিষী হাওলাদারকে একবার হাত দেখিয়েছিলাম,
সে বলেছিল নীলা পাথর নিতে, নীলা নাকি রক্তমুখী।
আমি যাকে ভালোবেসেছিলাম,তার নামও ছিল নীলা,
                                                              কিন্তু সে ছিল পোড়ামূখী। 
এক যুবকের হাত ধরে সেই যে চলে গেল,
তারপর আর আমার মুখো হয়নি।

৬৩. 

কাল রাতে তারা’রা ছিল অনেক আলোকবর্ষ দূরে
তারও দূরে তুমি চলে যেতে চেয়েছিলে-
কিন্তু পেরেছিলে কি ?

সারারাত জুড়ে তুমি ছিলে  আমারই প্রাণের 
সুরে সুরে,
তারই কিছু রং যেন লেগেছিল তোমার চোখে 
মুখে অন্তরে।

৬৪.

এই শহর থেকে বিদায় নিয়ে গেল শীত —
এখন সকাল  হলেই বসন্ত বাতাসে উড়ে ধুলো 
মন হয়ে যায় উতলা অগোছালো, 
সন্ধ্যায় তুমি এস, চায়ের সাথে চলবে রবীন্দ্র সংগীত।

৬৫.

আমার নিজের ভিতরেই এক মহাবিশ্ব আছে। আর সেই মহাবিশ্বের নির্জন গভীরে মগ্নচারী হতে চাই। সেখানেই খুঁজব অনন্ত সুখ, সেখানেই হয়ত পাব এক আনন্দময় স্থিতি। 

৬৬.       

ভালো লাগে 
ঝগড়া করে চলে গিয়ে 
ফিরে এসে যখন সরি বলো,
ভালো লাগে আরও বেশি 
সরি বলেই যখন জড়িয়ে ধরো..

৬৭.

কেউ জেগে আছে কেউ ঘুমিয়ে আছে কেউ আছে রোগে শোকে,
এই আঁধার রাত ঠিক শেষ হয়ে যাবে ভোরের উজ্জ্বল আলোকে।

৬৮.

আবার কে যেন মায়া দিতে চায়। আলো জ্বালাতে চায়। 

দরকার নেই —
আমার আঙ্গিনায় এখন থৈথৈ করছে মায়াবী পূর্ণিমা রাত্রি। এই রাত্রির মধুরিমায় ভালোই আছি।

 
৬৯.

কখনও আর হবে না দেখা 
কখনও আর মিলব না 
দুজন দুজনে,
আমাদের ভালোবাসা ছিল ভুল অঙ্কে ভরা 
ভুল যোগ বিয়োগ বিভাজনে,
তাই আজ দুজন দুদিকে 
ভুল অঙ্ক মেলাবার অন্বেষণে।

৭০.

আমার সমস্ত তৃপ্তি অতৃপ্তি, আমার প্রেম অপ্রেম, অপূর্ণ সুখ, আমার তৃষ্ণা, আমার  সমস্ত উম্মাদনা তোমাকে ঘিরে। তুমি আমার চৈতন্যে অবচৈতন‍্যে। তোমাকে ছেড়ে আমি খুব বেশি দূরে কখনই যাব না।

৭১.      

বিষাদ ভারাক্রান্ত কোনও জানালায়
যদি কখনও তুমি মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে থাকো
যদি অনুভব করো আমার প্রেম 
যদি ভ্রু বাঁকিয়ে ডাক দাও আমাকে
যদি তুমি দানশীল হও ভোগের ,
বিস্মরণের সময় যদি বিমূর্ত থাকো পিকাসোর ছবির মতো ভাবলেশহীন —
তখনই সময় হয় আমার ভালোবাসবার।

৭২.

আকাশ কালো করে মেঘেরা আসে, 
তবু আমরা বসে থাকি যমুনা ঘাটে।
আমরা নদীর জলেও ভিজি, 
বৃষ্টির জলেও ভিজি-

‘একি লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, প্রাণেশ হে।’

৭৩.      

তুমি নেই জীবনে,
অথচ তুমি আছ ছায়ার মতোন মায়ার মতোন আমার জীবনে জীবনে।

৭৪.

যেদিন জ্যোৎস্নার রাত থাকে 
সেদিন কোনও দুঃখ থাকে না আমার। তুমি জ্যোৎস্না থেকে আমার দুঃখগুলো তোমার দু’হাতের আজলায় ভরে তোমারই চোখে মুখে মেখে ফেলো –
কিন্তু আরেক অন্ধকার রাতে সব দুঃখগুলো এসে আমার হৃদয় বেদনায় পূর্ণ করে তোলে।

৭৫.

তোমার চোখে স্বপ্ন ছিল
পূর্ণিমা রাতের ছায়া ছিল
সন্ধ্যা মালতীর শুভ্রতা ছিল
সারারাত শিশির ঝরে এখানে
এখানেই যত ক্ষেদ
জীবনের যত গল্প বলাও এইখানে  মৃত্যুর ছায়াও এই চোখে দেখতে পাই।

৭৬.

আমি আমার শরীরের সকল নিয়ম কানুন মেনে চলি, তারপরও কি আমাকে যেতে হবে?
যদি অচিন কেউ এসে আমাকে নিয়ে যেতে চায়, 
যাবে কি তুমি আমার সাথে ?
সেদিন তুমি আমায় কানে কানে বলেছিলে —
‘আমার সময় হয় নাই, সময় হয় নাই।’

৭৭.

তার প্রাণের কথা, 
তার মায়াবী কাজল চোখ , 
বহুদিনের চেনা দেহগন্ধ, 
বালিশে লেগে থাকা সুগন্ধি, 
গল্প বলা অজস্র রাত্রি, 
অস্পষ্ট করে মনে পড়ে কত ডাক নাম আরও কত কিছু আষ্টেপৃষ্টে করে 
মনে জাগে , 
কত ভাবে যে প্রাণে জড়াতে চায় সারাক্ষণ। 

৭৮.

তুমি যদি প্রেমহীন হয়ে থাকো,
মেঘদূতের সম্ভোগের শ্লোক পড়েও যদি 
নির্বিকার থেকে যাও, 
যদি না থাকে তোমার রাগ-অনুরাগ-
কস্তরী-নাভি-তল যদি বিহব্বল না হয়ে ওঠে  
রক্তে শোনিতে যদি না ভেজে 
তোমার পরনবাস, 
তাহলে তুমি আমার কবিতা পড়ো না।

৭৯.   

পথ কখনই সমান্তরাল নয়,
পথের বাঁক আছে। নদীও সমান্তরাল নয়,নদীরও বাঁক আছে। 
জীবনটা এমনই পথ ও নদীর বাঁকের মতো। 
আমার পথ চলায় এমনি এক পথের বাঁকে দাঁড়িয়ে আছি। যেন মিশে যাচ্ছি নদীর মতোই অন‍্য বাঁকে, 
অন‍্য মোহনায়।

৮০.

কালো মেঘের মতো চুল ঢেকে দিয়েছিল তোমার গোল্লাছুট খেলার পিঠ, 
অর্ধেক এসে ঢেকেছিল উপত্যকার টিলায়
ঈশাণে জমে থাকা মেঘ জল হয়ে গিরিপথ বেয়ে অতল খাদে পড়তে থাকে,
আর সেই খাদে ফুটে থাকে লক্ষ লক্ষ বুঁনো জলপদ্ম।

৮১.

কিছুটা সম্পূর্ণ  কিছুটা অসম্পূর্ণ একটি আকাশ
কয়েক’শ কোটি তারার আয়োজনে 
আসে একটি মাত্র রাত।

তোমাকে ভালোবাসি এই আকাশ তলে 
আমরা মেঘ হবো, নীল মেঘ, খয়েরী মেঘ, রঙবেরঙের মেঘ।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *