শুক্লপক্ষের তারা – ২১-৪০

২১.

চন্দনের গন্ধ নিতে যেয়ে বুকের গন্ধ পেয়েছি
এইরকম আরো কত কিছু ভুল করে নিয়েছি
চন্দন নেব না তোর থেকে আবীর দে
ভালোবাসা জমেছে যত সবই লুটিয়ে নে।

২২.

আজ আর কোনও সুশীতল বাতাস নেই
মেঘের কাছে কোনও শুভাশীষ চাওয়া নেই
আজ চারিদিকে তপ্ত নিঃশ্বাসের লু হাওয়া —
আজ দূরে মেঘের ছায়ায়
শূন্যতার ঘুড়ি উড়িয়ে দেই।

২৩.

কেউই তার জন্ম মুহূর্তের কথা মনে করতে পারেনা। কেমন করে সে চিৎকার করেছিল এই পৃথিবীতে না আসার জন্য। যখন সে বুঝতে পারে পৃথিবী অনেক সুন্দর, তখন থেকে তার সমস্ত স্মৃতি সাজিয়ে রাখতে শুরু করে হৃদয়ের গহীনে।

স্মৃতিও ভেঙ্গে খান খান হয় অন্তরের মর্মরে। কে কোথায় ছিলাম, কে কোথায় ছিল — কিছুই মনে করতে পারিনা কখনও। তখনি মনে হয়, এ বুঝি অন্ধকার কোনও ছায়াপথের যাত্রার লগ্ন এল।

নয়নে নয়ন মেলে কতকিছু দেখা হয়নি আজও। এই সায়াহ্নবেলা মিথ্যা হোক।

২৪.

আর একবার জন্ম নিতে সাধ হয়।
স্কুল ফেরা পথে ধু-ধু প্রান্তরে সেই আমগাছটির জন্য । তার শীতল ছায়ার জন্য। গাব ফুল কুড়ানো আকুল করা ভোরের জন্য। বর্ষার পাট শুকানো গন্ধের দুপুরের জন্য।

জন্ম কী হবে আবার!
শুধু আর একবার…

২৫.

চোখের বৃত্তে চারপাশে লুকিয়ে থাকা কালো দাগের নীচে শত বিনিদ্র রজনীর গল্প। তুমি জানতেও পারোনি সেই সব গল্পের মূল চরিত্র হচ্ছো তুমি।

২৬.

কেউ বলেনি আমাদের কথা
কোনও উপাখ্যানেও নেই আমাদের কাহিনি
আমরা হতে পারিনি কোনও কিংবদন্তী –
এই শহরও জানে না কোনও কথা
শুধু জীবনের পাতাগুলো ছিঁড়ে গেছে ।

হেমন্ত ভোরে শিউলি ঝরে যায়
চুমোগুলো উড়ে যায়
বসন্তে বাতাসে শুনব গান পথে পথে।

২৭.

হঠাৎই কখনও আমার মুখের উপর ছায়া ফেলে প্রতিবিম্বতে দেখো তোমার মুখ।
আর আমি দেখি, শত ঝরনার জল —
যা করুণাধারায় তোমার চোখ থেকে ঝরে পড়ে।

২৮.

মাঝে মাঝে ভালো লাগে না কিছুই,
উদাস কাঙ্গাল মন শ্রাবণের মেঘে মেঘে
দূরে চলে যেতে চায় কোথাও।

২৯.

যেখানে যাও যত দূরে যাও, জ্বলুক আলোর রোশনাই
তুমিই আছ অন্তরে মম, সে কথা তুমি জানো নাই।

৩০.

অন্ধকার সরিয়ে তুমি আলো জ্বালালে,
আর তুমি কিনা বলছ — ঘুমিয়ে পড়বে।

৩১.

নিভিয়ে দিও না দীপ
আঁধার করো না এই মণিময় পৃথিবী!

তুমি চলে গেলে কোথায় পাব মণিরত্নম!
কেমনে আঁকব তোমার মুখের জলছবি,
সেই আবির কোথায়?
আমাকে স্বপ্ন দেখাতে পারে, সেই ঘুমও আসবে না যে আর।

৩২.

রাজপথের জনারণ্য থেকে যাকে পেয়ে রেখে দিয়েছিলাম বুকের ভিতরে
সেই একদিন হারিয়ে গেল হেমন্তের আকাশে
অনেক তারার অন্তঃপুরে।

৩৩.

আমার শুধু আকুল করে ধরব
তোমার হাত
কিন্তু ধরতে দাওনি হাত তোমার
রেখেছ দূরে অহর্নিশ —

ছুঁয়েছি বিরহ সকাল সন্ধ্যা রাত
এই জীবনে কিছুই না পাই তোমার জন্য
রইল আমার শুভাশিস।

৩৪.

তুমি আসলে দখিণা বাতাস থেমে যায়
দরজা বন্ধ হয়ে যায় অকস্মাৎ
সারারাত মদিরায় আকুল হই।

তোমার লেখা পুরানো চিঠিগুলো জীর্ণ।
                                                        আবছা দেখি অক্ষর, ঝাপসা হয় চোখ
কাল সারারাত ছিল পুরানো চিঠির।

৩৫.

তোমাদের জন্য লিখেছি অনেক গল্প কবিতা।
এখন বেলা শেষ হয়ে এসেছে।
ওগো বন্ধু —
আর চেয়ো না, আর যদি কিছু দিতে না পারি।

বীণায় অস্তমিত সন্ধ্যার সুর বাজছে
আমাকে সেই সুর শুনতে দাও।

৩৬. 

প্রথম দিন কবে ছিল, পথম সেই রাত?  
                                                          কখন থেকে ঠাঁই করে নিয়েছিলে তুমি ? 
আগুন জ্বেলে জ্বেলে আসছিলে তুমি 
কবে থেকে কাছে? 
তোমাকে ছুঁয়েছি কখনও বৃষ্টিস্নাত বিকেলেে
আবার কখনও মধ্য নিশীথের চাঁদের আলো ছায়ায়
শরীর ছুঁয়ে অনুভব করেছি অস্তিত্ব
আদরে আদরে তুমি গলে মোম হয়েছ
ক্লান্ত হওনি কখনও ভালোবাসায়—

আদিগন্ত জ্যোৎস্না কখনোই শেষ হতো না
কবেই ছিল সেই প্রথম দিন প্রথম রাত ।

৩৭.      

দূরে বহুদূরে চঞ্চল মেঘের মাঝে আকাশ ছাড়িয়ে 
ভেসে যাও। ব্যাপ্তিও ছড়াও ঐ দূরালোকে। 
আমি গভীর গহনে আবর্তিত হই একাকী ভূবন মাঝে। তুমি যতদূরেই যাও, আমার ভূবনেই তুমি ব্যাপ্ত হয়ে আছো।

৩৮.     

মেয়ে তুমি ভুল প্রেমিকের প্রেমে পড়েছ। 
পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আকাশ ছুঁতে গিয়ে 
এখন তুমি গিরিখাদে। 
মেয়ে তুমি মৃত্তিকার উপর দাঁড়াও, প্রেমিকা হও ঘাসের, আর বুনোফুলের।

৩৯.

তোমাকে সাথে নিয়ে 
যে সন্ধ্যা দেখি
যে রাত দেখি 
বিমুগ্ধ প্রণয়ের যে কাতরতা দেখি
চোখের উপর চোখ রেখে বুঝতে পারি —
এই ক্লান্তির শহরে আমাদের সব প্রেমই অম্লান।

৪০.

যদি চলতে চলতে পথ শেষ হয়ে যায়
যদি থেমে যাই 
যদি ক্লান্তি আসে পায়ে
যদি সুর না বাজে পৃথিবীর কোনও গানে।

যদি চোখের মণিরত্নম হারিয়ে ফেলি
যদি আর দেখতে  না পাই —-
তুমি চন্দ্রতারাগ্রহনক্ষত্র থেকে আলো কুড়িয়ে এনে
প্রদীপ জ্বেলে রেখ।

আজ তোমার জন্মদিন। আজ থেকেই জ্বলুক তোমার সেই আলোর শিখা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *