1 of 2

রাজসিংহ – ৬.১

ষষ্ঠ খণ্ড
অগ্নির উৎপাদন
প্রথম পরিচ্ছেদ : অরণিকাষ্ঠ–উর্‍বশী

রাজসিংহ যে তীব্রঘাতী পত্র ঔরঙ্গজেবকে লিখিয়াছিলেন, তৎপ্রেরণ হইতে এই অগ্ন্যুৎপাদন খণ্ড আরম্ভ করিতে হইবে। সেই পত্র ঔরঙ্গজেবের কাছে কে লইয়া যাইবে, তাহার মীমাংসা কঠিন হইল। কেন না, যদিও দূত অবধ্য, তথাপি পাপে কুণ্ঠাশূন্য ঔরঙ্গজেব অনেক দূত বধ করিয়াছিলেন ইহা প্রসিদ্ধ। অতএব প্রাণের শঙ্কা রাখে, অন্তত: এমন সুচতুর নয় যে, আপনার প্রাণ বাঁচাইতে পারে, এমন লোককে পাঠাইতে রাজসিংহ ইচ্ছুক হইলেন না। তখন মাণিকলাল আসিয়া প্রার্থনা করিল যে, আমাকে এই কার্‍যে নিযুক্ত করা হউক। রাজসিংহ উপযুক্ত পাত্র পাইয়া তাহাকেই এই কার্‍যে নিযুক্ত করিলেন।
এ সংবাদ শুনিয়া চঞ্চলকুমারী, নির্‍মলকুমারীকে ডাকিলেন। বলিলেন, “তুমিও কেন তোমার স্বামীর সঙ্গে যাও না?”
নির্‍মল বিস্মিত হইয়া বলিল, “কোথায় যাব? দিল্লী? কেন?”
চ। একবার বাদশাহের বঙ‍মহালটা বেড়াইয়া আসিবে।
নি । শুনিয়াছি, সে না কি নরক।
চ। নরকে কি কখন তোমায় যাইতে হইবে না? তুমি গরিব বেচারা মাণিকলালের উপর যে দৌরাত্ম্য কর, তাহাতে তোমার নরক হইতে নিস্তার নাই।
নি । কেন, সুন্দর দেখে বিয়ে করেছিল কেন?
চ। সে বুঝি তোমায় গাছতলায় মরিয়া পড়িয়া থাকিতে সাধিয়াছিল?
নি । আমি ত আর তাকে ডাকি নাই। এখন সে ভূতের বোঝা বহিয়া দিল্লী গিয়া কি করিব বলিয়া দাও।
চ। উদিপুরীকে নিমন্ত্রণ-পত্র দিয়া আসিতে হইবে।
নি । কিসের?
চ। তামাকু সাজার।
নি । বটে, কথাটা মনে ছিল না। পৃথিবীশ্বরী তোমার পরিচর্‍যা না করিলে, তোমারও ভূতের বোঝা মিলিবে না।
চ। দূর হ পাপিষ্ঠা! আমিই এখন ভূতের বোঝা। হয়, বাদশাহের বেগম আমার দাসী হইবে–নহিলে আমাকে বিষ খাইতে হইবে। গণকের ত এই গণনা।
নি । তা, পত্র দ্বারা নিমন্ত্রণ করিলেই কি বেগম আসিবে?
চ। না। আমার উদ্দেশ্য বিবাদ বাধান। আমার বিশ্বাস, বিবাদ বাধিলেই মহারাণার জয় হইবে। আর বেগম বাঁদী হইবে। আর উদ্দেশ্য, তুমি বেগমদিগকে চিনিয়া আসিবে।
নি । তা কি প্রকারে এ কাজ পারিব, বলিয়া দাও।
চ। আমি বলিয়া দিতেছি। তুমি জান যে, যোধপুরী বেগমের পাঞ্জাটা আমার কাছে আছে। সেই পাঞ্জা তুমি লইয়া যাও। তাহার গুণে তুমি রঙ‍মহালে প্রবেশ করিতে পারিবে। এবং তাহার গুণে তুমি যোধপুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে পারিবে। তাঁহাকে সবিশেষ বৃত্তান্ত বলিবে। উদিপুরীর নামে যে পত্র দিতেছি, তাহা তাঁহাকে দেখাইবে। তিনি ঐ পত্র কোন প্রকারে, উদিপুরীর কাছে পাঠাইয়া দিবেন। যেখানে নিজের বুদ্ধিতে কুলাইবে না, সেখানে স্বামীর বুদ্ধি হইতে কিছু ধার লইও।
নি । ই:! আমি যাই মেয়ে, তাই তার সংসার চলে।
হাসিতে হাসিতে নির্‍মলও পত্র লইয়া চলিয়া গেল। এবং যথাকালে স্বামীর সঙ্গে, উপযুক্ত লোকজন সমভিব্যাহারে দিল্লীযাত্রার উদ্যোগ করিতে লাগিল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *