1 of 2

রাজসিংহ – ৫.৫

পঞ্চম পরিচ্ছেদ : সে প্রয়োজন কি?

নির্‍মল শিবিকারোহণে দাস-দাসী সঙ্গে লইয়া রাণার অন্ত:পুরাভিমুখে চলিতেছেন। পথিমধ্যে বড় চক বা চৌক। তাহার একটা বাড়ীতে বড় লোকের ভিড়। নির্‍মলের দোলা বহুমূল্য বস্ত্রে আবৃত ছিল। কিন্তু জনমর্‍দের শব্দে তিনি কৌতূহলাক্রান্ত হইয়া, আবরণ উদ্ঘাটিত করিয়া দেখিলেন। একজন পরিচারিকাকে ইঙ্গিত করিয়া ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি এ?” শুনিলেন, একজন বিখ্যাত “জ্যোতিষী” এই বাড়ীতে থাকে। সহস্র সহস্র লোক তাহার কাছে প্রত্যহ গণনা করাইতে আসে। যাহারা গণাইতে আসিয়াছে, তাহারাই ভিড় করিয়াছে। নির্‍মল আরও শুনিলেন, “এই জ্যোতিষী সকল প্রকার প্রশ্ন গণাইতে পারে। এবং যাহা বলিয়া দিয়াছে, তাহা ঠিক ফলিয়াছে |” নির্‍মল তখন দাসীদিগকে বলিলেন, “সঙ্গের পাইকদিগের বল, লোক সকল সরাইয়া দেয়। আমি ভিতরে গিয়া গণনা করাইব। কিন্তু আমার পরিচয় দিবার প্রয়োজন নাই |”
পাইকদিগের বল্লমের গুঁতায় লোক সকল সরিল– নির্‍মলের শিবিকা জ্যোতিষীর গৃহ মধ্যে প্রবেশ করিল | যে গণাইতে বসিয়াছিল– সে উঠিয়া গেলে নির্‍মল গিয়া প্রশ্নকর্তার আসনে বসিল | জ্যোতিষীকে প্রমাণ করিয়া কিঞ্চিৎ দর্শনী অগ্রিম দিল | জ্যোতিষী জিজ্ঞাসা করিলেন, “মা , তুমি কি গুণাইবে ? ”
নির্‍মল বলিল, “আমি যাহা জিজ্ঞাসা করিব, তাহা গণিয়া বলিয়া দিন |”
জ্যোতিষী। প্রশ্ন। ভাল, বল।
নির্‍মল বলিল, “আমার এক প্রিয়সখী আছেন |”
জ্যোতিষী একটু কি লিখিল। বলিল, “তার পর?”
নির্‍মল বলিল, “তিনি অবিবাহিতা |”
জ্যোতিষী আবার লিখিল। বলিল, “তার পর?”
নির্‍মল । তাঁর কবে বিবাহ হইবে?
জ্যোতিষী আবার লিখিল। পরে খড়ি পাতিতে লাগিল। লগ্নসারণী দেখিল। শঙ্কুপট্ট দেখিল। নির্‍মল কে অনেক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিল। অনেক অঙ্ক কষিল। অনেক পুথি খুলিয়া পড়িল। শেষে নির্‍মলের দিকে চাহিয়া ঘাড় নাড়িল।
নির্‍মল বলিল, “বিবাহ হইবে না?”
জ্যোতিষী। প্রায় সেইরূপ উত্তর শাস্ত্রে লেখে।
নির্‍মল । প্রায় কেন?
জ্যোতিষী। যদি সসাগরা পৃথিবীপতির মহিষী আসিয়া কখন তোমার সখীর পরিচর্য্যা করে, তখন বিবাহ হইবে। নহিলে হইবে না। তাহা অসম্ভব বলিয়াই বলিতেছি, বিবাহ হইবে না।
“অসম্ভব বটে!” বলিয়া নির্‍মল জ্যোতিষীকে আরও কিছু দিয়া চলিয়া গেল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *