রবিন হুড – ১১

এগারো  

আগের ঘটনার কিছুদিন পরে, একদিন রবিন হুড ছদ্মবেশ ধরে শিকারের উদ্দেশ্যে বেরোলেন। সকাল। চারদিক চুপচাপ, কেমন যেন একটা শান্তির ভাব। তাঁর সেই অতীত শৈশবের কথা মনে পড়ে গেল। ম্যারিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে এইসব পথে তিনি কতবার চলেছেন। সেদিন কি আর ফিরে আসবে? ম্যারিয়ানকে কি আর কখনও দেখতে পাবেন? এলান-আ-ডেলের বিয়ের এবং উইল স্কারলেট তাঁর দলভুক্ত হওয়ার পর থেকেই, ম্যারিয়ানের কথা সবসময়ই তাঁর মনে হত। সেদিনও তাঁর মন খারাপ হয়ে গেল, মাথা নীচু করে ভাবতে-ভাবতে চলতে লাগলেন।

হঠাৎ সামনের খোলা ময়দানে একটি হরিণ এসে হাজির! কোথায় বা গেল রবিনের চিন্তা, কোথায় বা গেল ম্যারিয়ানের স্মৃতি— চোখের নিমেষে ধনুকে তির জুড়ে ছাড়বেন, এমন সময় দেখলেন, হরিণটা হঠাৎ অপর কোনও ব্যক্তির তিরবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে গেল এবং সঙ্গে-সঙ্গে একটি সুন্দর বালক চাকর, বনের ভেতর থেকে বার হয়ে হরিণটার দিকে ছুটে আসল। হাতে তার ধনুক, পাশে তলোয়ার, বয়স খুব কম। তাকে দেখেই রবিন হুড বুঝতে পারলেন যে, এই বালকই হরিণটাকে মেরেছে।

রবিন হুড তখন হরিণটার কাছে এসে, কর্কশ স্বরে বালককে বললেন,–’কে হে তুমি, রাজার হরিণ মারলে যে? তোমার সাহস তো কম নয়।’

বালক বলল,–’তুমি জিজ্ঞাসা করবার কে? হরিণ মারবার অধিকার রাজার যেমন আছে, আমারও ঠিক তেমনই আছে।’

বালকের গলা শুনে রবিনের মন তোলপাড় হয়ে উঠল। তখন একটু ভদ্রভাবে জিজ্ঞাসা করলেন,–’তুমি কে হে ছোকরা?’

বালক বলল,–’আমাকে ছোকরা-ছোকরা করতে হবে না, আমার নামে তোমার দরকার কী? ‘

রবিন বললেন,—’চটে যাও কেন, বালক মহাশয়! তোমাকে দেখছি একটু আদবকায়দা শেখানো দরকার।’

রবিন হুডের কথা শুনে বালকটি তার তলোয়ার খুলে বলল, ‘বটে! বনজঙ্গলে থাকো, তোমার এতবড় আস্পর্ধা, যে আমায় আদবকায়দা শেখাবে? খোলো তোমার তলোয়ার, দেখি কে কাকে আদবকায়দা শেখায়।

রবিন হুড দেখলেন বেগতিক, তলোয়ার খোলা ছাড়া অন্য উপায় নেই। বালকটি তাঁকে আক্রমণ করল—হাত একেবারে কাঁচা নয়, খেলার নানারকমের কায়দাও তার জানা আছে। বালকের ওপর রবিন আর কী খেলা দেখাবেন, তিনি শুধু আত্মরক্ষারই চেষ্টা করতে লাগলেন। মিনিট পনেরো পরেই বালক ক্লান্ত হয়ে পড়ল, তার মুখ লাল হয়ে উঠল।

তার অবস্থা দেখে, রবিন হুড যুদ্ধ থামিয়ে দেওয়ার জন্য ইচ্ছা করেই একটু অসতর্ক হলেন। তখন বালকের একটি আঘাত তাঁর হাতে পড়ে সামান্য একটু কেটে গেল।

ক্ষতস্থান থেকে রক্ত পড়তে দেখে বালক জিজ্ঞাসা করল, ‘কেমন, এখন হয়েছে তো?’

রবিন বললেন,–’তা হয়েছে। আচ্ছা, এখন তোমার নামটি কী বলো তো?’

বালক বলল,–’আমার নাম রিচার্ড পার্টিংটন, আমি রানি ইলিনরের চাকর!’

বালকের স্বর শুনে রবিন হুডের মনটা আবার যেন কেমন করে উঠল। তিনি জিগ্যেস করলেন,–তুমি একলা সারউড বনে কেন এসেছ মাস্টার পার্টিংটন?’

পকেট থেকে লেস-দেওয়া রুমাল বের করে, তলোয়ার মুছতে মুছতে বালক উত্তর করল,—’ ‘দ্যাখো। তুমি রাজার লোক হও আর না হও, তাতে কিছু আসে যায় না—রবিন হুড নামে একজন দস্যু আছে, তাকে আমি খুঁজছি; রানির কাছ থেকে তার জন্য ক্ষমা-পত্ৰ নিয়ে এসেছি। তার খবর আমায় বলতে পার কী?’ রবিন হুডের উত্তরের প্রতীক্ষা করে বালক যখন তার রুমাল শার্টের মধ্যে গুঁজছিল, তখন রবিন হঠাৎ সার্টের ভেতরে একটা চকচকে সোনার জিনিস দেখতে পেয়ে, আহ্লাদে চিৎকার করে বালকের দিকে অগ্রসর হলেন। এবং বললেন,—’ হাঁ। এখন তোমাকে চিনতে পেরেছি। ওই সোনার তিরটি দেখে ধরে ফেলেছি। শেরিফের টুর্নামেন্টে ওই তির পুরস্কার পেয়ে, আমি তোমাকে দিয়েছিলাম—তুমি নিশ্চয় ম্যারিয়ান।’

বালক বলল,—’কী? তাহলে তুমিই রবিন হুড?

রবিন বললেন,–’হাঁ, আমিই রবিন হুড!

এটা শুনে ম্যারিয়ান যেমন বিস্ময়ে অবাক হলেন, তেমনই তাঁর আহ্লাদেরও সীমা রইল না!

তখন তিনি বললেন,—’—তাই তো রবিন! আমি তোমাকে তো একেবারেই চিনতে পারিনি। না জেনে বড়ই অভদ্র ব্যবহার করেছি, তোমাকে আঘাত পর্যন্ত করেছি।’

এই বলে ম্যারিয়ান তাড়াতাড়ি রুমাল বের করে রবিনের ক্ষতস্থান বেঁধে দিয়ে বললেন,–’যাও, এবারে নিশ্চয় সেরে যাবে।’ রবিন হুডও বুঝতে পারলেন যে, তাঁর আঘাত শিগগির সেরে যাবে। এতদিন পরে রবিন হুডের সঙ্গে দেখা হওয়ায়, ম্যারিয়ানের মনে খুবই আহ্লাদ হয়েছিল বটে, কিন্তু কেমন যেন একটু লজ্জাও হচ্ছিল।

রবিন হুড প্রথমে লজ্জার কারণ কিছুই বুঝতে পারলেন না। তারপর হঠাৎ তার মনে হল, ম্যারিয়ান বালকের পোশাক পরে আছেন। তখন হাসতে-হাসতে তাঁর ছিন্নবিচ্ছিন্ন লম্বা কোটটি ম্যারিয়ানকে পরতে দিলেন–লজ্জায় ম্যারিয়ানের মুখ লাল হয়ে উঠল; ধীরে-ধীরে রবিন হুডের হাত থেকে কোটটি নিয়ে পরলেন। তারপর দুজনে মিলে মনের আনন্দে কত দিনের কত ঘটনা, কত কথা বলতে লাগলেন, তা আর ফুরোয় না। গল্প করতে-করতে বেলা প্রায় শেষ হয়ে এল, তাদের খেয়ালই নেই।

হঠাৎ রবিন হুডের সংবিত ফিরে এল। বললেন,—’ তাই তো ম্যারিয়ান! আমার তো বড় অন্যায় হয়েছে। আমার উচিত আদরযত্ন করে তোমাকে আমার বাড়ি নিয়ে যাওয়া, আর আমি কি না সে কথা একেবারে ভুলে গেছি।’

ম্যারিয়ান বলল,–’আমারও বড় অন্যায় হয়েছে রবিন! আমি যে রিচার্ড পার্টিংটন ইলিনরের কাছ থেকে তোমার জন্য খবর এনেছি, সে কথা আমি একেবারে ভুলে গেছি।’

এর পর রবিন হুড ম্যারিয়ানকে নিয়ে আড্ডায় রওনা হলেন। পথে যেতে-যেতে ম্যারিয়ান বলতে লাগলেন,–’তোমার সব কথা ইলিনরের কানে পৌঁছেছে। রানি ইলিনর তোমাকে দেখতে চান। তোমার আশ্চর্য তির চালানো তিনি স্বচক্ষে দেখবেন। রাজা হেনরি আগামী সপ্তাহে একটি টুর্নামেন্টের বন্দোবস্ত করবেন; সেখানে তাঁর প্রসিদ্ধ তিরন্দাজ তিরের খেলা দেখাবে। রানি জানতে চেয়েছেন, তুমি তোমার ভালো-ভালো চারজন তিরন্দাজ নিয়ে সেই টুর্নামেন্টে যেতে পারবে কি না? তোমাদের কোনও ভয় নাই, তিনি অভয় দিয়েছেন কোনও মুশকিলে পড়তে হবে না।’

আমি যখন শুনতে পেলাম রানি নিজে তোমাদের দেখতে চান, তখন রানিকে বললাম,—’ আমাকে ছুটি দিন, আমি গিয়ে রবিন হুডকে নিয়ে আসব। এক সময়ে তাঁর সঙ্গে আমার বেশ জানাশোনা ছিল।’ রানি খুব খুশি হয়ে আমাকে আসতে বললেন, আর তাঁর হাতের এই আংটিটি দিয়েছেন, এটি সঙ্গে থাকলে তোমাদের কোনওরকম বিপদ হবে না।’

রবিন হুড ম্যারিয়ানের হাত থেকে আংটি নিয়ে চুম্বন করলেন এবং মাথা নীচু করে রানির উদ্দেশে সম্মান জানালেন।

কথা বলতে-বলতে তাঁরা রবিনের বাসস্থানে এসে পৌঁছলেন। তখন ম্যারিয়ানকে দলের সবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলে, দস্যুরা সকলেই তাঁকে খুব সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা করল। অনেক দিন পর শৈশবের সেই পুরোনো বন্ধুকে দেখে উইল স্কারলেট তো মহা খুশি। এদিকে এলান-আ-ডেল ও তার স্ত্রী, তাদের ছোট কুঁড়ে ঘরটিকে ম্যারিয়ানের বাসের উপযোগী করবার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল।

রাত্রে খুব খাওয়াদাওয়া! মাচ্চ স্বয়ং বাবুর্চি! ম্যারিয়ান যে হরিণটি মেরেছিলেন, সেটিই রান্না হল। খাওয়াদাওয়া পর এলান-আ-ডেলের সুমধুর গান শুনে ম্যারিয়ান মুগ্ধ হয়ে গেলেন। খানিকক্ষণ আমোদ আহ্লাদের পর রবিন হুড, রানির পাঠানো খবর সকলের সাক্ষাতে বলবার জন্য ম্যারিয়ানকে অনুরোধ করলেন।

ম্যারিয়ান গম্ভীরভাবে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত বিষয় বর্ণনা করার পর, রবিন হুড দস্যুদলকে সম্বোধন করে বললেন,–’রানি যে আমাদের ডেকে পাঠিয়েছেন, তা তো তোমরা শুনলে। এখন চারজন ভালো তিরন্দাজকে আমার সঙ্গে যেতে হবে! আমার মনে হয়, লিটল জন, উইল স্টাটলি, আমার ভাই উইল স্কারলেট আর আমার গায়ক এলান-আ-ডেল এই চার জন গেলেই সবচেয়ে ভালো হয়। মিসেস এলানও অবশ্য তাঁর স্বামীর সঙ্গেই যাবেন। আমরা তাহলে খুব ভোরে রওনা হব। এখন যাওয়ার বন্দোবস্ত করা উচিত। শুধু যে ভালো কাপড়চোপড় পরলেই হবে তা নয়, তোমাদের অস্ত্রশস্ত্রগুলিও যেন খুব চকচকে ঝকঝকে হয়। আমরা রানির লোক হয়ে যাচ্ছি, তাঁর যাতে ইজ্জত বজায় থাকে, আর সঙ্গে-সঙ্গে আমাদের সারউড বনের কোনওরকম নিন্দা না হয়, এটা দেখা দরকার। আর আমরা ফিরে না আসা পর্যন্ত মাচ্চ, উইল, লেস্টার ও জন এই চারজন দলের লোকদের দেখবে শুনবে। ফ্রায়ার টাক প্রতি রবিবারে তোমাদের নিয়ে ভগবানের নাম করবেন।’

রবিন হুডের এই প্রস্তাব শুনে দলের সকলে আনন্দে জয়ধ্বনি করে উঠল। তারপর যাত্রার আয়োজন শেষ করে, রাত অনেক হওয়ায়, সকলে শুতে গেলেন।

পরদিন সকাল বেলা রবিন হুড়েরা সাত জন রওনা হলেন। রবিন হুডের পোশাক টুকটুকে লাল, আর সকলের পরনে লিঙ্কন গ্রিন। প্রত্যেকের মাথায় কালো টুপি, তাতে ধপধপে সাদা পালক গোঁজা–তাঁদেরকে বড় সুন্দর দেখাচ্ছিল।

গোটা পথ তাঁরা নির্বিঘ্নেই অতিক্রম করলেন। রবিন হুডের কাছে রানির সেই আংটি! ভয়ই বা কাকে? লন্ডনে পৌঁছবার পর, শহরের দরজায় আংটিটা দেখালে প্রহরী পথ ছেড়ে দিল। ম্যারিয়ান তাঁদেরকে রানির প্রাসাদে নিয়ে গেলেন।

লন্ডন শহরের কাছেই একটি ময়দানে টুর্নামেন্ট হবে। টুর্নামেন্টের কেমন বন্দোবস্ত হয়েছে তা দেখবার জন্য রাজা স্বয়ং সেদিন ময়দানে গিয়েছিলেন। শুধু টুর্নামেন্টের বন্দোবস্ত দেখাই রাজার উদ্দেশ ছিল না। তাঁর কয়েকজন তিরন্দাজকেও দেখবেন। তিরন্দাজ কটি রাজার বড়ই প্রিয়। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, যে, টুর্নামেন্টে তাঁর তিরন্দাজেরাই জয়লাভ করবে। সকলের কাছে রাজা খুব অহংকার করে সে কথা বলতেনও!

রাজার এরকম অহঙ্কার রানির ভালো লাগত না। তিনি গোপনে ঠিক করেছিলেন যে রাজার সঙ্গে বাজি রাখবেন এবং তাঁকে তিরন্দাজিতে হারিয়ে বাজি জিতে নেবেন। রানি শুনেছিলেন, রবিন হুড এবং তাঁর দলের লোকেরা তির-খেলায় অদ্বিতীয়। তার ওপর ম্যারিয়ানও রানির কাছে দস্যুদলের অনেক সুখ্যাতি করায়, তাদেরকে এনে বাজি জিততে রানির ইচ্ছা হয়। ম্যারিয়ান তাদেরকে আনতে পারেন শুনে, রানি তাঁকে সারউড বনে পাঠিয়েছিলেন।

রবিন হুডেরা যখন লন্ডনে রানির প্রাসাদে এলেন, তখন রানি তাঁর দরবারে বসে সহচরীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলছিলেন। হঠাৎ ম্যারিয়ান এসে সেখানে উপস্থিত হলেন। এখন তাঁর সহচরীর বেশ, তিনি ‘রানিকে নমস্কার করে দাঁড়ালেন।

সুমিষ্ট হাসি হেসে রানি জিগ্যেস করলেন,–’কে গো! এ কি আমার সখী ম্যারিয়ান, না আমার পেজ রিচার্ড পার্টিংটন?’

‘আজ্ঞে, আমি রিচার্ড পার্টিংটন এবং ম্যারিয়ান দুজনেই। আপনি যাঁর জন্য পাঠিয়েছিলেন, রিচার্ড পার্টিংটন বেশে তাঁকে খুঁজে ধরেছি, আর ম্যারিয়ানের বেশে তাঁকে নিয়ে এসেছি।’

রানি বললেন,–’সত্যি? কোথায় এনেছ?’

আজ্ঞে, এই আপনাদের প্রসাদেই এনেছি। আপনার সঙ্গে দেখা করবার আদেশের জন্য রবিন হুড ও তাঁর দলের অন্য চারজন লোক এই প্রসাদেই অপেক্ষা করছেন। তাঁদের সঙ্গে একজন মহিলাও আছেন, তাঁর বিয়ের গল্পটা বড় মজার। আপনাকে এক সময় বলব।’

রানি বললেন,–’ম্যারিয়ান! তাদের এখনই আমার কাছে আনো।’ রানির হুকুম পেয়ে ম্যারিয়ান তখনই একজন লোক পাঠিয়ে দিলেন। একটু পরেই সে ব্যক্তি, রবিন হুড ও তাঁর সঙ্গীদেরকে এনে রানির কাছে হাজির করল।

রানি মনে করেছিলেন, রবিন হুডেরা বনের দস্যু, তাহাদের চেহারাও বুনো, অদ্ভুত হবে। কিন্তু দস্যুদেরকে স্বচক্ষে দেখে তাঁহার সে ভুল দূর হল। তিনি হঠাৎ চমকে উঠলেন। কেবল রানি নয়, হাজির সহচরীরা সকলেই রবিন হুডদের সৌন্দর্য এবং পোশাকের পারিপাট্য দেখে অবাক হয়ে গেলেন। টুকটুকে লাল ভেলভেটের জামাতে রবিন হুডকে বেশ মানিয়েছিল। রাজদরবারে তাঁর চেয়ে সুপুরুষ কেউ ছিলেন কি না সন্দেহ! উইল স্কারলেটকে তো আমরা আগেই দেখেছি, ইচ্ছা করলেই সে কেমন ফুটফুটে বাবুটির মতো সাজত। এলান-আ-ডেলও কম সুন্দর ছিল না। লিটল জনের অসুরের মতো বিশাল দেহ, উইল স্টাটলিরও বীরপুরুষের মতোই চেহারা। তাঁদের পোশাকের তেমন বাহার না থাকলেও চেহারাতে সব মানিয়ে গেল। এলানের স্ত্রীও খুবই সুন্দরী ছিলেন। আর রানির সাক্ষাতে এসে তাঁকে যেন আরও সুন্দর দেখাতে লাগল।

রবিন হুড সসম্ভ্রমে হাঁটু মুড়ে, রানিকে নমস্কার করে বললেন, —’রানি! আমিই রবিন হুড, চারজন লোক নিয়ে আপনার হুকুমে এসেছি। আপনার আংটি আমার কাছেই আছে।’

রানি বললেন,—’লকলি! আমার কথায় তুমি এসেছ দেখে আমি বড় খুশি হয়েছি।’

তারপর রবিন একে একে সকলকেই রানির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। মিসেস ডেলকে রানি আদর করে চুম্বন করলেন এবং যতদিন তিনি শহরে থাকবেন, ততদিন প্রাসাদেই তাঁর সহচরীদের সঙ্গে বাস করতে অনুরোধ করলেন।

তারপর সকলে বিশ্রাম করলে, রানি টুর্নামেন্টের কথা উল্লেখ করে রবিন হুডকে বললেন,—’ ‘আমার ইচ্ছা, তোমরা আমার হয়ে এই টুর্নামেন্টের রাজার লোকদের সঙ্গে তিরের খেলা দেখাও। কিন্তু টুর্নামেন্টের আগে, খবরদার! কেউ যেন তোমাদের কথা জানতে না পারে।’

এরপর রানি এবং তাঁর সহচরীদের অনুরোধে, রবিন তাঁদেরকে কয়েকটি সাহস এবং বীরত্বপূর্ণ কৌতুকজনক গল্প শোনালেন। দস্যুদলের কাহিনি রানি ইলিনর এর আগেই কিছু শুনতে পেয়েছিলেন; এখন রবিনের মুখে সেই সমস্ত ঘটনা শুনে তিনি খুব সন্তুষ্ট হলেন। তখন ম্যারিয়ান প্লিম্পটন গির্জায় এলানের স্ত্রীর সেই বিয়ের ঘটনা এমন রসিয়ে বর্ণনা করলেন যে তা শুনে হাসতে হাসতে রানি ইলিনরের বুকে ব্যথা ধরে গেল।

এরপর রানি এলান-আ-ডেলের দিকে চেয়ে বললেন, এই বুঝি সেই গায়ক? এর কথা যেন আগেও শুনেছি বলে মনে হয়। আচ্ছা, তুমি আমাদের একটা গান শোনাবে কি?’

তখন বীণা আনানো হল। এলান রানিকে নমস্কার করে বীণা বাজিয়ে গান ধরল। কী মিষ্টি গলা, কী মিষ্টি গান। এলানের সংগীতে প্রাসাদ সুরময় উঠল। রানি এবং তাঁর সহচরীরা মুগ্ধ হয়ে গেলেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *